দার্জিলিংয়ে বাঙালী বিতাড়ন ও বাঙালীদের সম্পত্তি জবরদখল

লেখক
বিশেষ প্রতিবেদক

পূর্ববঙ্গের ‘শত্রুর সম্পত্তি’, পরবর্তীতে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ আইনে কীভাবে বাঙালীদের সম্পত্তি জবর দখল করে নেওয়া হয়েছে ইসলামিষ্টদের দ্বারা, আমরা জানি৷ কিন্তু দার্জিলিংয়ে কীভাবে বাঙালী বিতাড়ন ও বাঙালীদের সম্পত্তি দখল হয়েছে, তার কোনও পূর্ণাঙ্গ ক্ষতিয়ান আজও লেখা হয়নি, তার একটা খণ্ড চিত্র পাচ্ছি৷

‘‘পাহাড়ের শিক্ষক-ছাত্র-ডাক্তার,-সরকারী চাকুরে, হোটেল মালিক ও অন্য ব্যবসায়ীদের অন্তত ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ছিল বাঙালীরই৷ দার্জিলিংয়ের এই আদি বাঙালী বাসিন্দারা---যারা প্রকৃতপক্ষে দার্জিলিং শহরের স্থপতি....বহিরাগত নেপালীদের সংঘটিত হিংসাত্মক আগ্রাসনের কবলে পড়ে নিজ ভূমে পরবাসী হয়ে পড়লেন ও ক্রমশঃ ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকলেন৷

সুপরিকল্পিত বাঙালী বিদ্বেষী প্রচারাভিযানের অনিবার্য ফলস্বরূপ গোর্খা লীগের নেতৃত্বে ১৯৭০-এ দার্জিলিংয়ে একেবারে পুরোপুরি বাঙালী বিরোধী দাঙ্গা শুরু হ’ল৷’’

নিঃসন্দেহে বলা যায় বাঙালীদের এথনিক ক্লিনজিং হয়েছে দার্জিলিংয়ে৷ দশকের পর দশক ধরে রাজ্যের কলকাতা কেন্দ্রিক শাসক দল তা সে কংগ্রেস ও বাম যেই হোক না কেন, তাদের চোখের সামনে বাঙালীদের যে সম্পত্তি দখল করা হয়েছে তার একটা আংশিক তালিকাঃ

‘‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর গবেষণাগার (দার্জিলিংয়ের) ও তৎসংলগ্ণ প্রশস্ত কম্পাউণ্ড, চিত্তরঞ্জন দাসের বাড়ী, বাসন্তী এনেক্স ও তাঁর বিশাল জমি, কোচবিহার মহারাজের সুরম্য গৃহ ও ক্যাপিট্যাল হল ও তাঁর লালকুঠি (এটা সুবাস ঘিসিংদের ডি.জি.এইচ.সি.) কার্যালয় হয়েছিল৷’’

‘‘বর্ধমান হাউজ ও তৎসংলগ্ণ স্টেট, ভিক্টোরিয়া ফলসের ব্রীজের নীচে বিশাল জমি যেখানে বীরেন ঘোষের নার্সারি ছিল, ফলসের ওপরে ও বাঁদিকের জমি জুড়ে থাকা কুশারীদের বাড়ী, মহারাণী গার্লস্ স্কুল, রামকৃষ্ণ শিক্ষা পরিষদ, স্বামী অভেদানন্দ প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ বেদান্ত আশ্রম ও তৎসংলগ্ণ বিরাট স্কুলবাড়ী৷’’

‘‘লুই জুবিলি সেনিটোরিয়ামই হোক বা রেল ষ্টেশন সর্বত্রই অফিসার ও কর্মীদের অধিকাংশই ছিলেন বাঙালী৷ একই চিত্র দেখা যেত চা-বাগানেও৷ সেখানেও ম্যানেজার, টেকনিক্যাল কর্মী ও করণিকদের প্রায় সকলেই ছিলেন বাঙালী৷ দার্জিলিং শহরের কাছে সোনাদায় এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ডেয়ারী ফার্মও ছিল বাঙালীদের, ফার্মের মালিক ছিলেন গাঙ্গুলীরা৷ ভগিনী নিবেদিতার স্মৃতিধন্য বাড়ীটি আজ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার লেঠেল বাহিনী জি.এল.পি.-র হস্তগত, জে জি.এল.পি আজকের দার্জিলিংয়ে সমান্তরাল বা বলা ভাল প্রকৃত অর্থে পুলিশ বাহিনী৷ বেহাত হয়ে যাওয়া বাঙালী সম্পত্তির এই তালিকার কোনও শেষ নেই৷’’

তথ্যসূত্র ঃ উত্তরবঙ্গের গোর্খায়ন---এক জাতীয় সংকট---দেবপ্রসাদ ধর (শশধর প্রকাশনী, কলকাতা ২০১৩)৷