দায়িত্বজ্ঞান, কর্তব্যবোধ ও নব্যমানবতাবাদ

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিন্হা

দায়িত্ব ও কর্তব্য এই দুইটি ছোট শব্দ ব্যষ্টি জীবন, সমাজজীবন রাষ্ট্র তথা বিশ্বের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ এই দুটি ভাব জাগ্রত থাকলে ব্যষ্টি বা সমষ্টি যে কোন পর্যায়েই চরম উন্নতি সাধন সম্ভব, আবার এগুলির অভাবে ভয়ঙ্কর পরিণামও অনিবার্য৷ পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশের ঘটনাপ্রবাহ, এমনকি সমগ্র বিশ্বের অশান্ত পরিস্থিতির জন্যেও এই দুইটি বিষয়ের প্রতি অবহেলা বা অবমাননা বহুলাংশে দায়ী৷

জুন মাসের প্রথমার্ধে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (এন.আর.এস.) একজন রোগীর মৃত্যু, জুনিয়র ডাক্তার নিগ্রহ ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ জনিত জটিলতাকে কেন্দ্র করে সপ্তাহাধিক কাল ধরে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের চরম বিশৃঙ্খলা, রোগীদের আর্তনাদ, বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যু, এমনকি সারা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এর সামগ্রিক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে৷ কারণ যা-ই হোক, চিকিৎসা বিভাগের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি কোন যুক্তিতেই কাম্য নয়৷ সরকারী হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যাপারে যাঁরা যান, তাঁরা সকলেই কম-বেশী প্রতিটি হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যাধিক্য, বিভিন্ন পরিকাঠামোগত অসুবিধা, পদে পদে স্বাস্থ্যকর্মীবৃন্দসহ্ জুনিয়র বা সিনিয়র ডাক্তারবাবুদের ব্যবহারজনিত অস্বাচ্ছন্দ্য (ব্যতিক্রমী মানবিক ও দরদী চিকিৎসক অল্প সংখ্যায় হলেও আছেন) ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন৷ আর এই সমস্ত অব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে রোগীর আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে জুনিয়র বা সিনিয়র ডাক্তার অথবা বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মীদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে৷

এই ঘটনাগুলি যে শুধুমাত্র সরকারী হাসপাতালে ঘটে তা-ই নয়, বেসরকারী নার্সিং হোম বা হাসপাতাল যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে যারা চিকিৎসা করাতে যান তাদেরও মাঝে মাঝে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়৷ ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন হাসপাতাল, নার্র্সিংহোমগুলিতে ভাঙচুর, মারামারি সহ অবাঞ্ছিত ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হয়৷ স্বাস্থ্য বিভাগে যারা কর্মরত তারাও মানুষ৷ রোগীর সংখ্যাধিক্য, পরিকাঠামোগত অসুবিধা, স্বাস্থ্যকর্মীর (ডাক্তার, নার্র্স ও অন্যান্য) অপ্রতুলতা ইত্যাদি কারণে তাদের অনেক সময় ধৈর্য্যচূ্যতি হয় ও অনভিপ্রেত ঘটনাগুলি ঘটে যায়৷ কিন্তু তাদেরকে মনে রাখতে হবে তাঁদের বিপরীতে যাঁরা আছেন তাঁরা অসহায় আর্ত ও তাঁদেরই মুখাপেক্ষী৷ আর ডাক্তারবাবুদের মানবিক আচরণ ও মিষ্টি কথা রোগীদের যন্ত্রণার অনেকটাই উপশম করতে পারে৷ এছাড়া চিকিৎসকগণ এই পেশা বা ব্রতটাকে যখন বেছে নিয়েছেন (তাঁরা স্বাস্থ্য বিভাগের এই পরিস্থিতি ভালভাবে জেনে নিয়েই এই পেশায় এসেছেন)  তখন তাঁদের ধৈর্য্যের মাত্রাকে বাড়ানোর চেষ্টা করে যেতেই হবে৷ নচেৎ তাঁদের শুভ ভাবনাগুলো এক মুহূর্ত্তে বিনষ্ট হয়ে যাবে৷ একই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স, ডাক্তারবাবুদের সুরক্ষা, উপযুক্ত পরিকাঠামো, চিকিৎসার পরিবেশ ইত্যাদি পাওয়ার অধিকার অবশ্যই রয়েছে আর সেগুলি প্রদান করার দায়িত্ব প্রশাসনের৷ প্রথমতঃ স্থানীয় হাসপাতাল কতৃপক্ষকে সর্বদাই এ বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে, নতুবা পরিস্থিতিকে উপেক্ষা বা অবহেলা করার চড়া মাশুল গুণতে হবে৷ দ্বিতীয়তঃ রাজ্য বা কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে হাসপাতালগুলির প্রয়োজন সমূহের যথোপযুক্ত সমাধানে তৎপর হতে হবে ও সামগ্রিক সুরক্ষার ব্যবস্থা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হবে৷

সাম্প্রতিক স্বাস্থ্য সংকটের সময় একদিকে চিকিৎসকবৃৃন্দ ও অপরদিকে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ নিজ অবস্থানে ছিলেন অনড়---আর এর মাঝে পড়ে লক্ষ লক্ষ আর্ত, পীড়িত, রোগী ও তাঁদের অসহায় আত্মীয়-পরিজন অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করেছেন, যথাযথ চিকিৎসার অভাবে অনেক রোগীকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে, সঙ্কটাপন্ন রোগীকে নিয়ে বেসরকারী হাসপাতাল-নার্সিংহোমের দোরে দোরে ছুটতে হয়েছে৷ আর এই পরিস্থিতির সুবাদে অর্থলোভীরা দু’পয়সা কামিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে৷ সত্যিই কি এই পরিস্থিতির প্রয়োজন ছিল? যে সেবা বা পেশার জন্যে চিকিৎসকগণের এত সুনাম, সম্মান, রোজগার, সামাজিক মর্যাদা---সেই সেবার মনোভাবের প্রতি কি তাঁরা সুবিচার করেছেন? শেষ পর্যন্ত আশার কথা এই যে, সমস্যার সাময়িক সমাধান হয়েছে৷ সাময়িক এই কারণেই বলতে হচ্ছে, যদি আবার সেই গয়ংগচ্ছ ভাবকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, সমস্যাগুলির পূর্ণ সমাধান না হয়, তবে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যে হবে না তার কোন নিশ্চিততা নেই৷ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যমে বলা হচ্ছে, এই ঘটনাপ্রবাহে জয় হয়েছে চিকিৎসক মহলের---আবার কেউ বলছেন, জয় হয়েছে প্রশাসনের৷ প্রকৃতপক্ষে জয় কোন পক্ষেরই হয়নি---পরাজয় হয়েছে দায়বদ্ধতার, দায়িত্বজ্ঞানের ও কর্তব্যবোধের৷ চিকিৎসক মহলও তাঁদের সেবাসম্পৃক্ত পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা, নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য যেমন পালন করেননি---একইভাবে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ দায়বদ্ধতা, দায়িত্বজ্ঞান, কর্তব্যনিষ্ঠা প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছেন---আর যাদের জন্যে তাঁরা (উভয়পক্ষ), সেই সাধারণ মানুষ দিনের পর দিন কষ্টভোগ করেছে৷ এই পরিস্থিতি গোড়ার দিকে সামলানো গেলে সাধারণ মানুষ ও রোগীদেরকে অমানবিক অবস্থার শিকার হতে হ’ত না৷

বিগত লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে ও পরে পশ্চিমবঙ্গ সহ সমগ্র দেশে যে অশান্তির বাতাবরণ, হিংসা সন্ত্রাস, খুন, জখম, বিভাজন ও অসহিষ্ণুতার পরিবেশ ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও ভারতবর্ষের মত শান্তি, সম্প্রীতি ও মিলনের ঐতিহ্যসমৃদ্ধ দেশে কোনওভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়৷ নির্বাচনের পূর্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ শুধুমাত্র ভোটের রাজনীতির স্বার্থে গোষ্ঠী-সম্প্রদায়ে, ধর্মমত-জাতিভেদে বিভাজনকে প্রশ্রয় দিয়ে মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব, বিদ্বেষ ও ধর্মমতগত অসহিষ্ণুতা উস্কে দিতে প্রবৃত্ত হয়েছেন৷ ফলে বিভিন্ন গোষ্ঠী সম্প্রদায় ও দলের মধ্যে হিংসা, হানাহানি ভীষণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ নির্বাচনের পরেও এই পরিবেশ বজায় রয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গেই সন্দেশখালি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিভিন্ন অংশ বিশেষতঃ কাঁকিনাড়া, ভাটপাড়া অঞ্চলে সাম্প্রতিক হিংসা ও সন্ত্রাসের ঘটনাক্রম অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে৷ প্রশাসনিক প্রচেষ্টা ও সাধারণ মানুষের আকুতির ফলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও অশান্তির আগুন সর্বত্র ধিকি ধিকি  জ্বলছে৷ বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত সংবাদে প্রকাশ, এসব গুলির কারণ হিসেবে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্বার্থসিদ্ধির জঘন্য চক্রান্ত৷ তাঁদেরই প্ররোচনা ও প্রশ্রয়ে চলেছে ধর্মমত, বর্ণ ও গোষ্ঠীগত বিভাজন, পরমত অসহিষ্ণুতার কদর্য আস্ফালন, বিকৃত শক্তি প্রদর্শনের নগ্ণ বহিঃপ্রকাশ৷ শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতবর্ষই নয়, বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই চলছে বিকৃত মানসিকতা প্রসূত দম্ভ ও আসুরিক ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রবণতা৷ যার ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে যুদ্ধ-বিগ্রহ, সমরাস্ত্রের হুঙ্কার, জাতি বিদ্বেষ---আর এগুলির পরিণামে অসহায় মানুষেরা একটুখানি শান্তি ও নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের খোঁজে পাড়ি দিচ্ছে এক দেশ থেকে দেশান্তরে৷ নেতৃত্বের আসনে যারা বসে আছে(ছোট বড় মাঝারি যে স্তরের নেতাই হোক না কেন) তাদের মৌরসীপাট্টা অক্ষতই থাকছে---ভুগছে ও মরছে শুধু সাধারণ নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষ৷ একশ্রেণীর অশুভ মানসিকতা সম্পন্ন নেতৃত্বের উচ্চাকাঙ্খা ও অহঙ্কারের পরিণামে যুদ্ধ-বিগ্রহ, পারমাণবিক-রাসায়নিক সমরাস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে দূষণের মাত্রা অসহনীয় পরিমানে বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে৷ এর ফলে পরিবেশগত ভারসাম্য, জীব-বৈচিত্র্যগত সন্তুলন, মাত্রাতিরিক্ত উষ্ণায়ন, পাহাড়-পর্বতের হিমবাহের প্রকৃতিগত পরিবর্তন, ভৌগোলিক ভূ-প্রকৃতির ভারসাম্যে বিচূ্যতি সহ বিভিন্ন অস্বাভাবিক ও অপ্রাকৃতিক ঘটনাগুলি ঘটে চলেছে৷ মানুষের বসতির প্রয়োজনে ও অন্যান্য কারণে বনাঞ্চল ধবংস করে অনিয়ন্ত্রিত নগরায়নের ফলে বৃষ্টিপাত  হয়েছে অনিয়মিত, নদনদীগুলির বক্ষে জমেছে পলির পাহাড় আর জলধারণের ক্ষমতা গিয়েছে কমে৷ ভূগর্ভস্থ জল অত্যধিক পরিমাণে উত্তোলিত হওয়ায় সেই জলের উৎসও প্রায় শেষের মুখে৷ ভারতবর্ষ সহ সমগ্র বিশ্বেই নেমে আসছে তীব্র জলসংকটের করাল ছায়া৷ শোনা যাচ্ছে, আগামী এক বছরের মধ্যে দিল্লী, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ ইত্যাদি শহরের ভূগর্ভস্থ জল ফুরিয়ে যাবে ও ২০৩০ সালের মধ্যে পানীয় জলের অভাবে ভুগবে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ৷ ইতোমধ্যেই চেন্নাই, বেঙ্গালুরু ইত্যাদি শহরে চরম জলসংকট শুরু হয়েছে৷ পানীয় জল পেতে মানুষকে প্রচুর কষ্ট ও অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে৷ এই অবস্থা হয়তো দশ-কুড়ি বছরের মধ্যে সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়বে৷ বহির্ভারতের বিভিন্ন দেশও এই অবস্থার সম্মুখীন৷ নদনদীগুলির গভীরতা নষ্ট হওয়ার ফলে ও ভূগর্ভস্থ উৎস প্রায় শুকিয়ে যাওয়ার কারণে খরাগ্রস্ত অঞ্চল বৃদ্ধি পাচ্ছে, চাষের জমিতে জলসেচ করা যাচ্ছে না, পানীয় জলের অভাব দেখা দিচ্ছে৷

গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এই সমস্ত সমস্যার মূলে রয়েছে সেই একই দায়িত্বজ্ঞান ও কর্তব্যবোধের অভাব৷ দেশের সরকার ( কেন্দ্র, রাজ্য উভয়ই) যদি সচেতন ও যত্নশীল হয়ে সঙ্কটগুলি নিরসনে যথোচিত স্বল্প মেয়াদী ও দীর্র্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে উদ্যোগী হন তবে অবস্থার অবশ্যই উন্নতি সম্ভব৷ এই উদ্দেশ্যে সমস্ত মজা নদনদীগুলির সংস্কার, বিভিন্ন নদনদীগুলিকে পরিকল্পনামাফিক আন্তর্নদী সংযুক্তিকরণ, ড্রেজিং করে নদীর গভীরতা ও জলধারণ ক্ষমতার বৃদ্ধি, পুষ্করিণী, জলাশয় ও সায়র খনন করে বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থা, ব্যাপক বনসর্জন ও বৃক্ষরোপন, ভূগর্ভস্থ দল সংরক্ষণ ও উত্তোলন বন্ধ করার ব্যবস্থা ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে নদীগর্ভ ও ভূ-গর্ভস্থ জলের যথোচিত ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন৷ অপরপক্ষে প্রতিটি নাগরিক যদি তার সুনাগরিকসুলভ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আন্তরিকভাবে তৎপর হয় তাহলেই সমস্যার অনেকটাই সমাধান সম্ভব৷ আমরা অপ্রয়োজনে জল অপচয় করি, প্লাস্টিক, পলিথিন যত্রতত্র ফেলে দিই, সবুজায়নের প্রতি লক্ষ্য রাখি না ইত্যাদি বহুবিধ দৈনন্দিন কাজকর্মে আমরা সচেতন হলে সমস্যার মাত্রা ও তীব্রতা কমানো যায়৷ আমাদের চোখের সামনে বহুবিধ অন্যায় ও অপকর্ম সংঘটিত হয় যা আমরা দেখেও দেখি না, অথচ ওই ধরণের ঘটনা আমাদের ক্ষেত্রে ঘটলে পারিপার্শ্বক মানুষজনকে দোষারোপ করি, প্রশাসনকে গালমন্দ করি৷ অন্যায়, দুর্নীতি রোধে আমরা প্রত্যেকেই যদি সচেতন হই, এগিয়ে আসি, ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগ করি তবে এই ধরণের সামাজিক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়৷ মানুষকে পরিবেশ সচেতন করার জন্যে ৫ই জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ পালন করা হয়৷ বিভিন্ন পরিবেশ যাত্রা, সভা-সমাবেশ, বৃক্ষরোপন ইত্যাদি কর্মসূচীও গ্রহণ করা হয়৷ এই সমস্ত শুভ উদ্যোগের দ্বারা মানুষ কিছুটা হলেও সচেতন হয়---তবে পরিবেশ বাঁচাতে হলে মূল উৎসে যেতে হবে৷ পরিবেশ নষ্ট করছে কে? না,মানুষ৷ তাই আসল রোগটা রয়েছে মানুষের মধ্যে,মানুষের মনে৷ মানুষের সীমাহীন লোভ, ভৌতিক সম্পদ কুক্ষিগত করার অনন্ত আকাঙ্খা, অপরের ক্ষতিসাধন করেও নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার প্রবনতায় ক্ষতি হয় বৃহত্তর সমাজের৷ আর্থিক মুনাফা ও সম্পদের লোভে যে কোনও দুর্নীতি ও অন্যায়ের পথে অগ্রসর হতে মানুষ পিছপা হয় না৷ নেতা-নেত্রী, পুঁঁজিপতি, শিল্পপতি, সাধারণ মানুষ কেউই এর বাইরে নেই৷ তাই প্রকৃত দূষণ হয় মানুষের মনে আর পৃথিবী থেকে সমস্ত রকম দূষণ দূর করতে হলে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ ও সত্যিকারের দায়িত্বজ্ঞান তথা কর্তব্যবোধ অবশ্যই জাগ্রত করতে হবে৷ আর এখানেই রয়েছে নব্যমানবতাবাদের ভূমিকা৷

প্রথমেই জানা দরকার নব্যমানবতাবাদ কী! মানুষ বিশ্বস্রষ্টার সর্বোত্তম সৃষ্টি৷ সৃষ্টিধারার ক্রমবিবর্তনের পথ বেয়ে এককোষী, বহুকোষী জীবের পর কালক্রমে অবিকশিত জীব, উদ্ভিদ ও মনুষ্যেতর প্রাণীর স্তর পেরিয়ে সবশেষে এসেছে মানুষ৷ মানুষের মধ্যে রয়েছে মান ও হুঁশ৷ প্রথম যে মানুষটি পৃথিবীর বুকে পা রেখেছিলেন, তার সঙ্গে আজকের মানুষের রয়েছে শারীরিক ও মানসিক সংরচনাগত বিস্তর প্রভেদ৷ বিচারবুদ্ধি, বিবেচনাবোধ ও বিবেকের দিক দিয়ে মানুষ আজ যথেষ্ট উন্নত৷ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মানুষ ছাড়াও রয়েছে কোটি প্রকারের জীব-জড়, ও উদ্ভিদ শ্রেণী৷ বিচারশীল ও বিবেকবান মানুষের তাই অন্যান্য মনুষ্যেতর জীব, উদ্ভিদরাজি ও জড় পদার্থগুলির প্রতি রয়েছে অনেক বেশী দায়িত্ব ও কর্তব্য৷ বিশ্বচরাচরের সমস্ত সৃষ্টিরই জনক বিশ্বপিতা পরমপুরুষ, পরমব্রহ্ম৷ তাই পরমপিতার সন্তান রূপে বিশ্বের সমস্ত সৃষ্ট সত্তাকে গ্রহণ করে তাদের সঙ্গে যথোচিত ব্যবহার ও সর্বাত্মক উন্নতির প্রতি যত্নশীল হওয়ার জন্যে যে দায়িত্বজ্ঞান ও কর্তব্যবোধ---তারই নাম নব্যমানবতাবাদ৷ এই নব্যমানবতাবাদের আদর্শে আধ্যাত্মিকতার পথ ধরে মানুষ যদি এগিয়ে চলতে পারে, একমাত্র তখনই আজকের পৃথিবীর সমস্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব৷ আর তখনই দুর্নীতিমুক্ত, শোষণহীন, সুন্দর নোতুন পৃথিবী রচিত হবে যেখানে জীব, জড়, উদ্ভিদ, মানুষ সকলে আনন্দময় পরিবেশে বসবাস করার সুযোগ পাবে৷