দেশ ভাগের বলি বাঙালী, দেশ ভাগের পরিণতি কশ্মীর

লেখক
মনোতোষ দেব

ক্ষমতালোভী নেতাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চতুর ব্রিটিশ তথাকথিত স্বাধীনতার নামে দেশ ভাগ করে দিয়ে চলে যায়৷ পরিণাম দুই প্রান্তে, দুই সীমান্তে---উত্তরে কশ্মীর ও পূর্বে বাংলায় আজও জ্বলছে আগুন৷ উত্তরে নেহেরু সরকারের দুর্বলতার ও বুদ্ধিহীনতার নাকি চাতুরীর পরিণাম অগ্ণিগর্ভ কশ্মীর৷ স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে কশ্মীরের রাজা হরি সিং ঘোষণা করেন--- কশ্মীর ভারতের সঙ্গেই থাকবে৷ স্বাধীনতার শর্ত অনুসারে হরি সিংহের ঘোষণায় কশ্মীরের ভারতে অন্তর্ভুক্তি সন্দেহাতীত হয়ে গেল৷ কিন্তু তারপরও পাক সৈন্য কশ্মীর প্রবেশ করে৷ সেই দিনই পাকিস্তানকে মার দিয়ে কশ্মীরকে মুক্ত করার ক্ষমতা ছিল ভারতীয় সেনার যার নেতৃত্বে ছিলেন বাঙালী সেনা অফিসার জেনারেল জয়ন্ত চৌধুরী৷ কিন্তু অর্ধেক কশ্মীর মুক্ত করার পর অজ্ঞাত কারণে নেহেরুর নির্দেশে সেনা অভিযান বন্ধ হয়ে যায়৷ সমস্যার শুরু সেদিন থেকেই৷ সেদিনই উচিত ছিল পুরো কশ্মীর মুক্ত করে  পাকিস্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া আর পাকপন্থী মুষ্টিমেয় কশ্মীরীদের বুঝিয়ে দেওয়া কশ্মীরে থাকতে হলে ভারতীয় হয়েই থাকতে হবে৷  নতুবা অন্য পথ দেখ৷ সেই সঙ্গে উচিত ছিল হিমাচল প্রদেশকে কশ্মীরের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া৷ তাহলে অঙ্কুরেই কশ্মীর সমস্যার সমাধান হয়ে যেত৷ কশ্মীরের আজকের পরিণতি দেখে মনে হচ্ছে রাজনীতির অন্য খেলায় কশ্মীর সমস্যার প্রয়োজন আছে ভারতীয় নেতাদের৷ তাই যখন বহিরাগত শত্রুর বিরুদ্ধে নির্দ্বিধায় লড়াই প্রয়োজন ছিল তখন কিন্তু তা করা হ’ল না৷ সমস্যাকে জিইয়ে রাখা হ’ল৷

ভারতীয় নেতা মন্ত্রীদের চরিত্রও আচরণ বোঝা মুশকিল৷ এক, সীমান্ত প্রদেশ কশ্মীরকে সত্তর বছর ধরে বিশেষ সুবিধা দেওয়া, তোষামোদ করেও যার বৃহদংশকে আজও ভারতীয় করা গেল না৷ ভারতের খেয়ে পাকিস্তানের গান গায়৷ তবুও সব সুযোগ সুবিধা ওরাই পায়৷

আর এক প্রান্তে দেখুন, বাংলা ও বাঙালীর দশা! দেশ ভাগের লি হয়ে যারা এপারে এসে আজ মনে প্রাণে ভারতীয়, তাদের পেছনে বিদেশী তকমা দিতে ভারত সরকার মরিয়া৷ নেহেরু থেকে নরেন্দ্র মোদি এব্যাপারে এক৷ গত পাঁচবছরে মোদি সরকার পূবের সীমান্ত রাজ্যগুলিতে এন.আর.সি নিয়ে ভারতীয় বাঙালীকে বিদেশী বানাতে যতটা নজর দিয়েছে, যত সময় ও অর্থ ব্যয় করেছে, তার দশভাগ যদি কশ্মীর সীমান্তে করতো তাহলে হয়তো এত বড় ঘটনা ঘটত না৷

একদিকে ভারত বিদ্বেষীদের তোষামোদ, অপরদিকে মনে প্রাণে ভারতীয় বাঙালীদের বিদেশী আখ্যা দিয়ে তাড়ানোর উদ্যোগ! ভারত সরকারের এই দ্বিধাচারিতা আর কত দিন?