দেশকে সাম্প্রদায়িক দলবাজী থেকে বাঁচাতে আজ সৎ নীতিবাদী তরুণ-তরুণীদের সমাজ সেবায় এগিয়ে আসতেই হবে

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতবর্ষের বুকে সাম্প্রদায়িকতাকে উষ্কে দিয়ে দেশভাগের মানসিকতাকে হাতিয়ার করেই ১৯৪৭ সালে ইংরেজ সরকার নিছক রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়ে যায় দেশকে৷ তারপর যা ঘটে চলেছে তার করুণ ইতিবৃত্তের সাক্ষী দেশবাসী! সেই কুফলের জ্বলন্ত নিদর্শন হলো ৩৭০ ধারার বিলুপ্তি৷ এতো বছর লেগে  গেল হতভাগ্য দেশের৷ সেদিন  বেশ কিছু রাজনৈতিক দল নিছক দলীয়  স্বার্থে এই দেশভাগকে সমর্থন করে৷ তারও পরিণতি দেখেছে  দেশবাসী৷

এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছে ভারতবর্ষের সংখ্যাগরিষ্ট অমুসলমান জনগণ৷ রক্তের বন্যা বহিয়ে দিয়েছে স্বার্র্থন্বেষীরা৷ আজও এন.আর.সি-র মতো কালাকানুন হতভাগ্য মানুষের কাছে অভিশাপ স্বরূপ৷ মানবতাকে অস্বীকার করে অকালে মহামূল্যবান বহু নরনারী ও শিশু নির্বিশেষে  প্রাণহাণী ঘটাচ্ছে এক দানবীয় শক্তি৷ বর্ত্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কর্ণধারগণ  সেই দানবীয় শক্তিরই ধারক ও বাহক৷

সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ প্রাণের দায়ে যে দেশে যাবে  সেই দেশের আইন মোতাবেক  সে নাগরিক  হয়ে থাকতে পারে যদি সে অন্য কোন  রাষ্ট্রের না হয়৷ স্থায়ী হয়ে থাকতে হবে তাদের৷ এটা ইউএনও এর নির্দেশ৷

প্রসঙ্গত বলি যে দেশভাগের  প্রাকমূহুর্ত্তে ও পরে  মারাত্মক  সাম্প্রদায়িক আক্রমণে পূর্ববাংলা থেকে অসহায় অমুসলমান বিশেষ করে হিন্দু  বিতাড়িত  হয়৷ তারা বাধ্য হয় পূর্ব ভারতে আশ্রয় নেয়৷ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু  ঘোষণা করেন---উদ্বাস্তুরা এদেশে আশ্রয় নিতে পারে তাদের জন্যে ভারতের দ্বার খোলা আছে৷ সব কিছু ছেড়ে এমনকি পরবর্তীকালেও সেই মারাত্মক সাম্প্রদায়িক আক্রমণে এক নাগাড়ে লক্ষ লক্ষ লক্ষ মানুষ এদেশে নিস্ব, রিক্ত হয়ে এসেছে৷ ভারত বাধ্য হয়ে তাদের আশ্রয় দিয়েছে৷ আজ তাদের বিতাড়ণের আইন হয়েছে৷ বর্তমান বাঙলাদেশ বলছে তাদের দেশের কোনও লোকই ভারতে নেই৷ এদিকে অসমে এই কালাকানুন মোতাবেক ৪০ লক্ষের বেশী হতভাগ্য বাঙালী  বিদেশী হয়ে যাবে৷ মানবতার খাতিরে বলা যায় তারা যাবে কোথায়? এই আইনসঙ্গত প্রশ্ণের জবাব কে দেবে? তারা কি ডি-ভোটার হয়ে এদেশের ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক থাকবে সারা জীবন! না তাদের অন্য গ্রহে পাঠানো হবে৷ তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শাসককে তো সহানুভূতিশীল হতে হবে৷ এমনকি পাঁচ/দশ বছর আগেও যারা এসেছে  প্রাণের দায়ে তাদের এই মাটিতে কি স্থান দিতে হবে না? এরা তো সবাই সেই অখণ্ড ভারতবর্ষেরই বংশধর৷ অন্য রাষ্ট্রের কথা ছেড়ে দিয়েও এই কথা বলা যায় এত বাঙালী বিদ্বেষ কেন? যে বাঙালী জনগোষ্ঠী স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছে তারাই আজ পথে বসেছে দেশ ভাগের কারণে৷ নেতাজী তাই অখণ্ড ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রাম করেছিলেন৷ সেটাকে মান্যতা না দিয়ে তাকে মিথ্যা ভাবে কলঙ্কিত করা হয়েছে৷ অত্যন্ত দুঃখের কথা যারা আজ শাসনে বসেছে তাদের গায়ে তো কোন হাত পড়েনি, তাই সামান্য কালির খোঁচায় ওই সব হতভাগ্য জীবন নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে৷ ভারতবর্ষ আজ অত্যন্ত বিপন্ন! এদেশে আজ মানবতা পথে পড়ে কাঁদছে! এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো সংকীর্ণ স্বার্থে দলাদলি করছে ও দেশের ও দশের কল্যাণকে পায়ে দলে এক মারাত্মক কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে৷ কী করে মানুষ তাড়ানো যায়! দীর্ঘ ৭২ বছরে এরা দেশের জনগণের জন্যে কোনও উন্নতি ঘাটাতে পারেনি৷ শুধু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি চলেছে, আর লোককেও ব্যতিব্যস্ত করতে নানাভাবে সমস্যা সৃষ্টি করে জীবন সংকটের মধ্যে ফেলছে৷ রাজনৈতিক দলগুলো দলবদলের খেলায় মেতে উঠেছে৷ দলীয় তথা ব্যষ্টি স্বার্থে তারা এমন সব কাজ করছে যা দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তুলছে৷ কর্মসংস্থানের দিকে নজর নেই৷ ধর্ম নয় ধর্মমত নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে ধর্মমতকে নিয়ে তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দলবাজি করছে৷ মনে রাখা উচিত সকল মানুষেরই ধর্ম এক---সেটা মানবধর্ম৷ মানব সমাজ এক ও অবিভাজ্য৷ বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখাই লক্ষ্য হওয়া উচিত৷

‘‘জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে

যে জাতির নাম মানুষ জাতি৷’’

একই পৃথিবীর স্তন্যে লালিত

একই রবিশশী মোদের সাথী৷’’

এসব ভুলে মিথ্যা দলবাজী করে এরা মানবতাকে আর মহান স্রষ্টাকে অস্বীকার করছে৷ বহু ভাষাভাষীর ও ধর্মমতের দেশ এই ভারতযুক্তরাষ্ট্র৷ এদেশের শাসকদের অবশ্যই মানবতাবোধে জাগ্রত হয়ে দেশসেবা করতে হবে৷ নিছক দলবাজি নয়, তাই অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার পর মনে হয় দলহীন গণতন্ত্রকে অগ্রাধিকার দিতে হবে৷ কারণ দলীয় প্রবণতাটাই অত্যন্ত ক্ষতিকারক৷ এই দলতন্ত্রই দুর্নীতির আখরা হয়ে দেখা দিচ্ছে৷

বহু দলীয় গণতন্ত্র আজ দেশে এক ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনৈক্য সৃষ্টি করেছে৷ সেই সুযোগে ধনী ব্যবসাদারগণ দেশকে লুটেপুটে খায়৷ আর দলগুলো  ওই ধনী ব্যবসাদারদের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে৷

গণতন্ত্রে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে শাসকদের মধ্যে স্বৈরাচারী মনোভাব ফুটে ওঠে৷ ভারতের বুকে সেটাই আজ প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে৷ এই ভয়ঙ্কর সময় তরুণ-তরুণীদের দুর্নীতির জোয়ারে না ভেসে সৎ, নীতিবাদী, দেশসেবক হয়ে দেশের সার্বিক কল্যাণে এগিয়ে আসতেই হবে৷ তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে৷ আজ দেশের স্বার্থে সৎমানুষের বড়ই প্রয়োজন৷

আজকের শাসকগণ শিক্ষা ব্যবস্থায় দলীয় চিন্তাভাবনাকে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে পবিত্র শিক্ষা ব্যবস্থার অনুশীলনকেই ধবংস করে ছাড়ছে৷ যারা শাসনে আসছে তারাই শিক্ষাক্ষেত্রে দলীয় প্রভাব বিস্তারে চেষ্টা করে প্রকৃত শিক্ষাকে দূরে সরিয়ে৷ তারই পরিণতিতে শিক্ষাক্ষেত্রে চরম অরাজগতা দেখা দিয়েছে৷

আজ নিরপেক্ষভাবে দেশসেবায় মন না দিয়ে  পাইয়ে দেবার রাজনীতিটা  প্রবল হয়েছে৷ শিক্ষার্থীদের নিয়ে দলগুলো কাড়াকাড়ি করছে শিক্ষাক্ষেত্রে দলীয় প্রভাব বিস্তার করতে৷ ফলে  শিক্ষাক্ষেত্র হয়ে উঠেছে দলবাজীর আখড়া৷

রাজনৈতিক দলগুলোই শিক্ষার্থীদের ধ্যান-জ্ঞান৷ দলের প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে হানাহানি, অশান্তি ও উশৃঙ্খলতা চলছে পুরোদমে৷ আজ দলীয় রাজনীতিকরণটা গণতন্ত্রে একটা অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এর হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে আজ সচেতন, যুক্তিবাদী অভিভাবকদের জাগরণ আবশ্যিক৷

সৎ ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে যাতে ছাত্র সমাজ আর বিপথে না যায়৷ ছাত্রসমাজই ভবিষ্যত ভারতের কর্ণধার হবে৷ তাদের নিয়ে এই দলবাজির রাজনীতি দেশকে আরও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবে৷