গাজনের গপ্পো

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

শিব নাকি শ্রাবণ মাসে জন্মেছিলেন৷ আর বিয়ে করেছিলেন চৈত্রমাসের শেষে৷ তাই তো চৈত্রমাসের শেষে হিন্দুনারীরা উপোস করে৷ তারা বলেন নীলের উপোস৷ আর তার সঙ্গে শুরু হয় গাজন উৎসব৷ শিবের বিয়ে উপলক্ষ্যে সন্ন্যাসীরা ছিলেন বরযাত্রী৷ বরযাত্রীরা মাঝে মাঝে গর্জন করতেন৷ সেই গর্জন থেকে গাজন শব্দের উৎপত্তি৷

আবার কেউ কেউ বলেন অন্যকথা৷ গাজনের শেষদিনে হয় চড়ক৷ মাটিতে চড়কের গাছ পুঁতে তার মাথায় আড়ভাবে একটা বাঁশ এমনভাবে বাঁধা হয় যাতে পাক খাওয়া যায়৷ আগে সন্ন্যাসীরা পিঠে লোহার বড় বঁড়শি বিধিয়ে বাঁশের শেষ অংশ থেকে ঝুলে পাক খেতো৷ এই নৃশংস প্রথাটিকে ইংরেজ সরকার ১৮৬৫ সালের ১৫ই মার্চ আইন করে বন্ধ করে দেন৷ তখন থেকে সন্ন্যাসিনীরা বুকে গামছা বা কাপড় বেঁধে চড়ক গাছে ঘুরপাক খেতে আরম্ভ করেন৷ চড়কের গাছটি হওয়া চাই শক্ত৷ নচেৎ ভেঙে পড়তে পারে৷ তাই শাল বা গজারি বা গর্জন গাছের একটি খুঁটি বছর খানেক পুকুরের জলে ডুবিয়ে রাখা হয়৷ গাজনের আগের দিন ভক্তরা সেই খুঁটি জল থেকে তুলে বেশ করে তেল মাখিয়ে মাটিতে পোঁতে৷ একে বলে গাছ জাগানো৷ এই গর্জন গাছের  সাহায্যে অনুষ্ঠান হয় বলেই হয়তো উৎসবের নাম গাজন৷

আবার বর্তমানকালের পণ্ডিতগণ বলেন, সার্বজনীন ভাবনা থেকে গাজন শব্দের উৎপত্তি৷ গ্রামের সকলে মিলে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতো বলে এই উৎসবের নাম গাজন৷ গ্রা+জন= গ+জন= ‘গাজন’৷

তবে এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি তাঁর নমঃ শিবায় শান্তায় গ্রন্থে বলেছেন---‘‘সারা বছর ধরে নানান জনের সঙ্গে নানান কথাই তো বলছি---জাগতিক কাজ করছি, ধান চালের কথা বলছি, পটোলের দর, বেগুনের দর নিয়ে চর্চা করছি৷ অন্ততঃ একদিন প্রাণভরে চিৎকার করে শিবের নামে গর্জন করি, ‘শিবহে’ বলে মানুষকে আহ্বান করি৷ গর্জন প্রাকৃতে গজ্জন/ বর্তমান বাংলায় গাজন৷