জাতীয় নাগরিকপঞ্জি ও  নাগরিকত্ব সংশোধনী  আইন প্রকৃতপক্ষে বিজেপির বিভাজন নীতি

লেখক
আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূ্ত

সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণ ঃ

মহান্ দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন,‘‘মানব সমাজ এক ও অবিভাজ্য৷ কিন্তু আজ কুসংস্কার, ভাবজড়তা, সংকীর্ণতা, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও বিভিন্ন ইজ্মের কবলে পড়ে মানব সমাজ  ধবংস হতে বসেছে৷ এই অবস্থায় মানবসমাজকে  এক ও অখণ্ডরূপে গড়ে তুলতে গেলে  সেবা ও কল্যাণের মনোভঙ্গী নিয়ে সংশ্লেষণের পথটি বেছে নেওয়া  দরকার৷ সমাজকে সর্র্বঙ্গসুন্দর  করে গড়ে তোলার  জন্যে কেউ সংশ্লেষণের পথ, আবার কেউ বা  ভ্রান্তিবশতঃ  অথবা স্বার্থ প্রণোদিত হয়ে জ্ঞাতসারে  বিশ্লেষণের পথটি  বেছে নিতে পারে৷ তবে প্রথমেই  বলা প্রয়োজন  বিশ্লেষণের মাধ্যমে  কোন ব্যষ্টির স্বার্থ হয়তো সিদ্ধ হতে পারে অথবা  সাময়িকভাবে  কোন ব্যষ্টি-স্বার্থ কিছুদিনের জন্যে পূর্ণ-হতে পারে৷ কিন্তু  তা স্থায়ীভাবে ও সার্বিকভাবে  মানুষের কল্যাণ করতে পারে না৷  মানব সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের  জন্যে একান্তভাবেই দরকার  সংশ্লেষণের পথটি৷’’

এখন এখানে সংশ্লেষণ  ও  বিশ্লেষণ বলতে কী বলা হচ্ছে৷ সংশ্লেষণ মানে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যকে দেখা৷ বিশ্লেষণ মানে ঠিক তার উল্টো৷ একের মধ্যে  অনেক দেখা ৷ যেমন, এক মানবসমাজের  নানান্ জাত-পাত সম্প্রদায়ে  বিভক্ত করে দেখা৷

দেশের বা সমাজের সর্র্বঙ্গীন উন্নতি করতে হলে সংশ্লেষণের পথ বেছে নিতে হবে৷ কোনো বিভেদ ভাব না রেখে সবার কল্যাণ করা, সমস্ত দেশের উন্নয়ণ৷ একতাই  উন্নয়নের প্রথম শর্ত৷ বিভেদকে, বিভিন্নতাকে  প্রশ্রয় দিলে  পারস্পরিক  ঘৃণা-বিদ্বেষ সংঘর্ষের  সৃষ্টি হয়৷ তখন সমাজের উন্নয়নের পরিবর্তে অবনয়ন হয়৷ সমাজ ধবংসের পথে এগিয়ে যায়৷

নাগরিকত্ব সংশোধনী  আইনের প্রতিক্রিয়া

বর্তমানে ভারতবর্ষের  কেন্দ্রীয়  সরকার নাগরিকত্ব  সংশোধনী আইন  (সি-এ-এ) পাশ করানোতে তার প্রতিক্রিয়ায় সারা দেশে আগুণ জ্বলছে৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার বার দৃপ্তকন্ঠে ঘোষণা  করছেন সারাদেশে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এন.আর.সি) ও নাগরিকত্ব সংশোধনী  আইন (সি.এ.এ)  কার্যকর করবেনই৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী  আইনে  বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর  পর্যন্ত  পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান  থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, খ্রিষ্টান, পার্সি সম্প্রদায়ের  অনুগামীদের  ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, কিন্তু  দেওয়া হবে না শুধু  মুসলিমদের৷

বিজেপি সরকারের মুসলীম বিরোধী নীতি দেশের  মুসলীম সমাজকে  আগে থেকেই ভীত সন্ত্রস্ত  করে তুলেছিল৷ কশ্মীরে ৩৭০ ধারা  প্রত্যাহার , অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ বিতর্কে সুপ্রিম কোর্টে হিন্দুদের  জয় ও বিতর্কিত  স্থানে রামমন্দির প্রতিষ্ঠার  প্রস্তুতি  প্রভৃতি বিভিন্ন  ব্যাপারে  মুসলীমরা ভিতরে  ভিতরে  প্রচণ্ডভাবে ক্ষুদ্ধ ছিল৷ কিন্তু সেই ক্ষোভের  প্রকাশ করার ঠিক যুক্তিপূর্ণ সুযোগ পাচ্ছিল না, এখন নাগরিক সংশোধনী আইন পাশের  পর  মুসলীমরা যুক্তিসঙ্গত সুযোগ পেয়ে  বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে৷ সমস্ত বিরোধী দল, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কেন্দ্রের এন.আর.সি ও নাগরিকত্ত্ব সংশোধনী আইনের কার্যকরী করার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন ৷ অন্যান্য বিজেপি শাসিত  ও অবিজেপি  শাসিত সবরাজ্যের  আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে সারা ভারতবর্ষ৷ উত্তরপ্রদেশ বিজেপি শাসিত৷ এখানেও  নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে  সারা  রাজ্যই আন্দোলনে উত্তাল,২১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত সংবাদ এই আন্দোলনের  জেরে  এখানে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ সারা দেশেই প্রবল আন্দোলন  চলছে৷  আন্দোলনকারীরা থানা, পুলিশ, ষ্টেশন, বাস, ট্রেন প্রভৃতিতেও  অগ্ণি সংযোগ করছে৷

মোদি-শাহ জুটির গুপ্ত এজেণ্ডা

২০১৯-এ বিজেপি  পুনর্বার কেন্দ্রে ক্ষমতায়  আসার পর  বিজয়গর্বে মোদি-শাহ জুটি  আর এস.এস-এর , হিন্দু -হিন্দি , হিন্দুস্তান’ নীতিকে বাস্তবায়িত  করতে উঠে পড়ে লেগেছে৷ সংসদে  বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়ে মোদি-শাহ্ জুটির  ধারণা  জন্মেছে ভারতের  জনগণ বেশির  ভাগ তাঁদেরই পেছনে রয়েছে৷ তাই  সমস্ত  রাজ্যেই বিধানসভা  নির্বাচনে  জেতা ও সমস্ত রাজ্যগুলি  দখল করা  মোদি-শাহ জুটির দিনরাত্রির স্বপ্ণ ছিল৷  আর তাই তাঁরা  সংকীর্ণ হিন্দুত্ববাদের  সেন্টিমেন্ট দিয়ে ছলে-বলে-কৌশলে সংখ্যাগুরু হিন্দু-জনগোষ্ঠীর মন জয় করার  নেশায় উন্মাদ হয়ে উঠেছে৷

এই গুপ্ত এজেণ্ডাকে সামনে রেখেই মোদি-শাহ জুটি সারা দেশে জাতীয়  নাগরিকপঞ্জি ও নাগরিক সংশোধনী  আইন পাশ কার্যকরী করতে বেজায় উদ্গ্রীব  হয়ে উঠেছিল৷

সি.ই.ই.ও  এন.আর.সির  ঃ পর্যালোচনা

বর্তমানে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের  বিরুদ্ধে  এই যে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ --- কেন?

প্রথমত ঃ ভারতবর্ষের  চিরাচরিত  আদর্শ সংশ্লেষণের  আদর্শ--- বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার আদর্শ৷ ভারতের সংবিধানেও ধর্মমত  নিরপেক্ষতাকে  সংবিধানের  ভিত্তিস্তম্ভ করা হয়েছে৷  দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশরা  মুসলীম নেতো জিন্নাকে উস্কে দিয়ে  ভারতভাগ  করেছে জিন্না পাকিস্তানকে  ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত  করেছে৷ কিন্তু ভারতের সংবিধান প্রণেতারা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করেন নি, বরং পরিস্কারভাবে  সেকুলারিজম ধর্মমত-নিরপেক্ষতাকে সংবিধানের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে৷

অর্থাৎ এখানে বিভিন্ন ধর্মমতের (রিলিজিয়ন)  মানুষের  প্রতি সমদৃষ্টি সম্পন্ন  হওয়ারই  প্রতিশ্রুতি  রয়েছে৷ এটাই  আজকের  দুনিয়ার  স্বীকৃত  আদর্শ৷ বিজেপি সেখানে  ভারতবর্ষের  এই চিরন্তন আদর্শের বিরুদ্ধ পথে চলতে চায়, যা শিক্ষিত  সচেতন মানুষেরা কেউই  মেনে নিতে পারছেন না৷

সরকার এন.আর.সির মাধ্যমে  একদিকে  ১৯৭১-এর ২৫ শে  ডিসেম্ববরের পরে যারা বাংলাদেশ  বা পাকিস্তান  থেকে ভারতে  এসেছেন , তাঁদের  বিদেশী বলে ঘোষণা করতে চেয়েছে৷ আর নাগরিক সংশোধনী  আইনে বলা হচ্ছে,  ২০১৪ সালের  ৩১ শে ডিসেম্বর  পর্যন্ত  অমুসলীম  যারা ভারত-বাংলাদেশ থেকে এসেছে  তাদের ভারতের  নাগরিকত্ব দেওয়া হবে৷ এখানে হিন্দু  মুসলীম বিভাজন  করাকে  বিরোধীরা , মুসলীমরা  ও উদারপন্থী হিন্দুরা কেউই মেনে নিতে পারছেন না৷  সরকারের এই নীতি হিন্দু-মুসলীম  বিদ্বেষকে বাড়িয়ে  তুলবে, এতে  হিন্দু-মুসলীম দাঙ্গা বাধার  সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে৷ যা দেশের শান্তির পরিস্থিতিকে নষ্ট করে দেবে ও  সামাজিক  ঐক্যের আবহ নষ্ট হয়ে যাবে৷ গোঁড়া মুসলমানদের দ্বারা  মুসলীম  সম্প্রদায়েরই আহামদিয়া গোষ্ঠী ও অত্যাচারিত হয়ে, সিয়া-সুন্নি বিবাদ ও  সংঘর্ষের  আবহে  অনেক মুসলীম উদার মতাবলম্বী ভারতবর্ষে  চলে আসতে পারে, তাদেরও  কিন্তু  ভারত সরকার পাকিস্তান বা বাংলাদেশে  ঠেলে দেবে ৷  পাকিস্তান  বা বাংলাদেশ তো এদের কাউকে -হিন্দু বা মুসলীম যেই হোক  না কেন--- এদের তাদের দেশে নেবে না  বলে দিয়েছে৷  এ অবস্থায় তাহলে তারা কী  করবে?

বাস্তবে চিত্রটা দেখা যাক্ ঃ

এন.আর.সি’র  ফলে অসমে ১৯ লক্ষ  বাঙালী নাগরিকত্ব হারাতে  চলেছে৷ এখনও  বিজেপি  সরকার বলছে, হিন্দু বাঙালীদের  নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, তাহলে প্রায় ৬ লক্ষ মুসলীম  নাগরিক জাতীয় নাগরিকপঞ্জি থেকে যাদের নাম বাদ গেছে তারা কী করবে? তারা কি জেলে  পচে মরবে? এটা  তো মেনে নেওয়া যায় না৷

দ্বিতীয়ত ঃ সরকার সুপ্রিমকোর্টের  নির্দেশের  দোহাই দিয়ে অসমে জাতীয়  নাগরিকপঞ্জিতে  নাম উঠানোর উদ্যোগ শুরু করল৷ তাতে কিন্তু দেখা গেল, বহু মানুষ  স্বাধীনতার আগে থেকেই অসমের  বাসিন্দা বা অনেকে  ১৯৭১ সালের  অনেক আগেই  সরকারী  অফিসেও কাজ করেছে,  বোটার Voter) আই.ডি সহ বিভিন্ন নথিপত্র দেখিয়েছে, তবুও  বোটারলিষ্টে  নাম ভুল আছে, বা , বাবা-মা’র নাম ভুল আছে--- এমনি নানান্ অজুহাতে  নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়েছেন৷ একটা  উদাহরণ নেওয়া যাক্৷  অসমের দলগাঁও-এর একজন  অবসরপ্রাপ্ত  শিক্ষক ও আইনজীবী নীরদ বরণ দাসের ১৯৫১ সালের  অসমের বাসিন্দা হিসেবে নথিপত্র  থাকা সত্ত্বেও  এন.আর.সির  তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ  পড়ে৷ এটা এ্যাকসিড্যান্ট নয়৷  কারণ নীরোদ বাবু  তাঁর বৈধ নথিপত্র নিয়ে  এন.আর.সি অফিস থেকে শুরু করে আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন৷ দিনের পর দিন এইভাবে সরকারী অফিস ও আদালতে  ঘোরাঘুরি  করেও  কোনো কাজ না হওয়ায় মানসিক চাপে গত বছর আত্মহত্যা করেছেন৷  এমনি করে অসমে  ৩০ জন বাঙালী  আত্মহত্যা  করেছে৷ আসলে  অসমে  এন.আর.সির  লাগু করার  পেছনে  ছিল  অসমীয়া  জাতিসত্তাভিমানী  গোঁড়া ‘আসু’ ও ‘অগপ’ নেতাদের  চাপ৷ আর   তাদেরই চাপে  এন.আর.সি’কে  সামনে রেখে অসম থেকে বাঙালী তাড়ানোর  এটা একটা কৌশলী প্রয়াস৷

তৃতীয়ত ঃ হিন্দু হোক, মুসলমান  হোক, ৫০ বছর  আগেকার  বৈধ নথিপত্র  বহু গরীব মানুষের  পক্ষে  পেশ করা  সম্ভব নয়৷ বন্যায় যখন ঘর-দোর  ভেসে গেছে --- তখন তো সবকিছু  ছেড়ে ছুড়ে  প্রাণের  দায়ে আশ্রয় সন্ধান করেছে৷  এইসব পরিবাররা  ৫০ বছর  আগেকার  পুরোনো  নথিপত্র  দেখাবে কেমন করে?

তাহলে যে মুসলীম  ভাইরা  পুরুষানুক্রমে  ভারতের  এই এলাকারই বাসিন্দা, ৫০ বছর আগেকার  নথিপত্র  দেখাতে না পারলে তাদের  বিদেশী বলে চিহ্ণিত  করা হবে  তাদের  তাড়িয়ে  দেওয়া হবে?  অন্য কোনো রাষ্ট্র তো  তাদের দায়িত্ব নেবে না৷ তাহলে এটা কীভাবে মানা যাবে?

চতুর্থতঃ একটা সাংবিধানিক প্রশ্ণ , সরকার যাদের বিদেশী বলে চিহ্ণিত করবেন, উদাহরণ নেওয়া যাক,  অসমে  ওই ১৯ লক্ষ এন.আর.সি’ থেকে বাদ পড়া  মানুষ--- তারা যদি বিদেশী হয় তাহলে  তাদের  বোট  Vote) -এ যারা নির্বাচিত হয়ে বিধায়ক সাংসদ, মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তারাও তো অবৈধ৷ তাহলে  সেই সমস্ত অবৈধ মন্ত্রী মন্ডলীর  তৈরী আইন কী করে বৈধ হতে পারে?

পঞ্চমত ঃ বিজেপি বন্ধুরা  বলছেন, পাকিস্তান  বা বাংলাদেশ  থেকে সেই শুরু থেকে অত্যাচারিত  হয়ে যে সব হিন্দুরা  শরণার্থী হয়ে ভারতে এসেছেন, মোদি সরকার নাগরিকত্ত্ব সংশোধনী আইনের  মাধ্যমে তাদের নাগরিকত্ব দিচ্ছেন, আপনারা  (বিরোধীরা)  কী চান না  তারা নাগরিকত্ত্ব পাক্৷ এই কথা বলে বিজেপির পক্ষ থেকে  জনসাধারণের সহানুভূতি  অর্জন করার চেষ্টা চলছে, বলা হচ্ছে, এর মাধ্যমে  তো বরং  মোদির  ভূয়সী প্রশংসা করা উচিত৷

এর সোজা ও সহজ উত্তর  হ’ল ২০১৪ সালের ৩১শে জানুয়ারী  পর্যন্ত যে সব হিন্দুরা  ভারতে  এসেছে, মোদির সরকার তাদের  নাগরিকত্বের  মর্যাদা দিচ্ছে বলে বলা হচ্ছে৷

কিন্তু  এখন তারা  এদেশের নাগরিক নয়, এটাই বা কে বলেছে৷ তারা তো  এদেশের একশ শতাংশ নাগরিক, তারা নাগরিক হিসেবে  রেশন কার্ড পেয়েছে, বোটার লিষ্ট V oter list) -এ তাদের  নাম উঠেছে, আধার কার্ডও পেয়েছে বা পেতে বাধা নেই৷ তাহলে  তারা নাগরিক নয়--- কে বলল, শুধু  ২০১৪ কেন তারপরও যে সমস্ত উদ্বাস্তু  বাঙালীরা  ধর্মীয় অত্যাচারের  কারণে ভারতে এসেছে  তারা ভারতের বৈধ নাগরিক৷ ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ, প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু সবাই এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নেহেরুর দেওয়া জাতীয় প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়েছে  ‘Whenever the minorities of East Bengal will come across the border will be welcome’’৷  এরা তো  এদেশের  বৈধ নাগরিক৷ বরং বর্তমান বিজেপি সরকারই  এন.আর.সির  নামক  খোলা তলোয়ার তুলে বলছে, তোমরা  বিদেশী, তোমরা  যে এদেশের  নাগরিক নথি দেখাও৷

কীসের নথি ? এই বাঙালীরাই তো  দলে দলে অকাতরে  বুকের রক্ত ঢেলে ইংরেজদের এদেশ  থেকে তাড়িয়েছে৷ ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকি,  বাঘা যতীন, সূর্যসেন --- এমনি কত প্রাণ  স্বাধীনতার  জন্যে আত্মবলিদান দিয়েছেন, আর সেই মহান  স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বা তাদের  উত্তর  পুরুষদের বলছ --- তোমরা যে এদেশের নাগরিক--- প্রমাণ কর৷ কাদের কাছে পরীক্ষা দিতে হবে? যাদের  ভারতের স্বাধীনতার  জন্যে কোনো অবদান নেই--- তাদের কাছে? বিজেপি’র নেতা-নেত্রী বা বন্ধুরা এর কি সদুত্তর দিতে পারবেন?

প্রথমে এন.আর.সির ধাক্কা দিয়ে অগাধ  জলে ফেলে দিয়ে নাগরিকত্ত্ব সংশোধনী আইনের দড়ি  দিয়ে টেনে  তোলার  কী মানে আছে? তারপর  তো মুসলীম ধর্মাবলম্বী হলে এদেশের  বহুকাল ধরে স্থায়ী  বাসিন্দা  হলেও  তাকে জেল থেকে তোলা হবে না৷

সর্বশেষে ঃ

এই  ক্ষুদ্র নিবন্ধে  কেবল তর্কজাল বিস্তার না করে বলতে চাই, আমরা দেশের  সমস্ত  মানুষেরা  মিলে নির্বাচনে  বোট  Vote) দিয়ে  রাজ্যে  বা কেন্দ্রে  যে সরকারকে নির্বাচিত  করে বসিয়েছি, সেই সরকারের  প্রধান  কাজ হ’ল দেশের  দারিদ্র্য ও বেকার সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান , দেশের মানুষের  সার্বিক  উন্নয়ন৷ আমাদের নাগরিকত্ত্বের  বৈধতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করা নয়৷ ২০১৪ সালে কেন্দ্রের  এন.ডিএ সরকার নির্বাচিত  হওয়ার পর প্রতিশ্রুতি  দিয়েছিলেন , দেশের  এই মৌলিক  সমস্যাগুলির সমাধান  করবেন, উন্নয়ণই  হবে প্রধান লক্ষ্য, কিন্তু বর্তমানে  সংসদেরই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, দেশে  বেকারত্বের হার বর্তমানে  গত ৪৫ বছরের  মধ্যে সর্র্বেচ্চ৷ ২০১৩-১৪ সালে বা ২০১৫-১৬ সালে যেখানে এই বেকারত্বের হার ছিল  যথাক্রমে ৩.৪ শতাংশ. ও ৩.৭ শতাংশ , বর্তমানে  তার হার হয়েছে  ৬ শতাংশ৷  আবার প্রায় ৪ বছর  পর কর্ষক আত্মহত্যা  সংক্রান্ত  তথ্য প্রকাশ  করল ন্যাশন্যাল  ক্রাইম  রেকর্ডস  ব্যুরো৷ সেই তথ্য উদ্ধৃত করে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, ২০১৬ সালে ১১,৩৭৯ জন কর্ষক  আত্মহত্যা করেছে৷  যারা দেশের ১৩০ কোটি মানুষের খাদ্য উৎপাদন করছে  সেই কর্ষককুল  ঋণের দায়ে হতাশায়  আত্মহত্যা করে চলেছে৷ এইসব দিকে তাকানোই কি সরকারের প্রধান কর্তব্য নয়? দেশের মৌলিক সামাজিক -অর্থনৈতিক  সমস্যার  সমাধানের  দিকে সরকার নজর দিন৷  জাত-পাত সম্প্রদায় ভেদ -ভুলে দেশের সমস্ত  মানুষের কল্যাণে দেশের সার্বিক উন্নয়ণের দিকে নজর  দিন৷ নাহলে জনগণ  আপনাদের ক্ষমা করবে না৷ মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়ের পর  হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও সব শেষে  ঝাড়খণ্ডের জনমতের  প্রতিফলন  দেখে  এখনও কি ঘুম ভাঙ্গছে  না?