জি.এস.টিতে রাজ্যের স্বার্থ বিপন্ন হবে

লেখক
মুসাফির

গত ৩০ শে জুন মধ্যরাত থেকে সারা ভারতে চালু হয়ে গেল নোতুন কর ব্যবস্থা গুডস্ সার্ভিস ট্রাকস (জিএস.টি) এটিকে সরকার এর মতে একদেশ এক কর ব্যবস্থা৷ চলতি বছরের ২৭শে মার্চ বিজেপি সরকারের অর্থমন্ত্রী শ্রী অরুন জেটলি সংসদে  দুকক্ষেই এই জিএস.টি  বিল পাশ নেন৷ আজকের প্রধানমন্ত্রী শ্রীযুক্ত মোদি-যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এর  দরকার নেই৷ কিন্তু তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে গভীর রাতে আড়ম্বরের মধ্য দিয়ে সেই জিএসটি চালু করলেন৷ অনেক বিরোধীদল এই আড়ম্বরপূর্ণ অনষ্ঠান বয়কট করেন৷ বিশেষ করে কংগ্রেস৷ সারা ভারতের অনেক  রাজ্যের ছোট মাঝারি মাপের ব্যবসাদারগন দোকান বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখান ৷ বিজেপি শাসিত রাজ্যও এর প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়৷

এদিকে আবার স্বপ্ল সঞ্চয়ের সুদের হার কমিয়ে দিল৷ প্রবীণ নাগরিকদের মাথায় হাত৷ এদিকে সূর্যকান্ত মিশ্র সিপিএম এর রাজ্য সম্পাদক মন্তব্য  করেন যে  শ্রীমোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বিরোধিতা করে--- এখন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জিএসটি চালু করলেন৷ তাঁর মতে বড় বড় কর্র্পেরেট ছাড় পাবে আর সাধারণ মানুষের উপর বোঝা চাপবে৷ পশ্চিম বাংলার  মুখ্যমন্ত্রী বলেন--- ৩০শে জুন মধ্যরাতে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র গভীর সংকটে৷ পার্থ চট্যোপাধ্যাায়  বলেন--- জিএসটি চালু হওয়াতেই ইন্সপেক্টর রাজ চালু হবে৷

কথাপ্রসঙ্গে এসে যায় বেশ কিছু বছর  আগে তো ভ্যাট চালু হলো৷ হঠাৎ কি হলো ভ্যাট বাদ দিয়ে বিজেপি জিএসটি চালু করল৷ অনেক বছর  আগে এই ধরণের কর চালুর কথা বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং, অটল বিহারী বাজপায়ী বলেন৷  পশ্চিম বাংলার বামফন্ট্রের অর্থমন্ত্রী উদ্যোগ নেন এই ব্যাপাবে--- যাঁর নাম অসীম দাশগুপ্ত ৷ভ্যাটের রূপকার হলেন এই দাশগুপ্ত মশাই৷ ভ্যাট কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ ভান্ডারপূর্ণ করতে সক্ষম নয়? তাই কি ভ্যাটকে বিদায়  নিয়ে জি এস টির আগমন? পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই বলে যে জিএসটির আইন হবে কঠোর এতে ইনসপেকটরেরা কর ফাঁকির ব্যাপারে গ্রেফতার করার অধিকার পাচ্ছে৷ভ্যাটের ক্ষেত্রে সেটা ছিল না৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সরকারের নজরে লাখ রেজিস্টার্ড কোম্পানী যারা করফাঁকির সাথে যুক্ত৷ কর ফাঁকি যারা দেয় তারা সবই উপর মহলের লোক৷ 

 তিন বছরে নোতুন কিছু করার নামে নোতুন সরকার কতটা কি করেছেন আন্তরিকতার সঙ্গে ভাবুন৷ স্বচ্ছ ভারত  কি তৈরী হয়েছে? যদি হতো তা হলে নগরে ও শহরে কর্র্পেরেশন ও মিউনিসিপ্যালগুলিতে প্রয়োজন মতো শৌচাগারও নেই কেননানা ঘটনায় জানা যাচ্ছে অনেকেই ভুক্তভোগী৷

 সরকারের স্মরণে আছে বড়ো নোট ১০০০ টাকা ৫০০ টাকার বাজেয়াপ্ত করার ফলে, ভারতের যে জাতীয় আয় কমেছে তা সরকার অদ্যাবধি পূরণ করতে পারেনি৷ ডিমনিটাইজেশন-এ লক্ষ লক্ষ মানুষ ছোট মাঝারি বহু কলকারখানা বন্ধ হওয়াতে জীবিকা নির্র্বহে  ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা কাজ হারিয়েছে ৷  যে সুদের হার ছিল একসময়ে ১%সেই সুদের হার কমে হয়েছে ৭.২%,৬.৫%এতে যখন টাকার মূল্য তলানিতে৷ সরকার  আর অনেক রাজ্য সরকার সেই অনুপাতে রাজ্যসরকারী কর্মচারীদের  ডিএ ও অন্যান্য  সুবিধা দিতে অক্ষম হচ্ছেন ৷ তাতে বৈষম্য দরুণ বাড়ছে দেশে৷

এতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ ক্রেতারা জানতেই পারলোনা কোন জিনিসের কি দাম, যে যেমন পারবে জিএসটি নামে বাজারে জিনিস বিক্রি করবে৷ জনগণ একটা আতঙ্কের মধ্যেই থাকবে৷ সবচেয়ে দুঃখের কথা রেশনিং ব্যবস্থাটা ঝুলে গেছে৷  কেবল আয়ের উৎস সন্ধানে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে বোঝা চাপিয়ে গণতন্ত্রেরই সর্বনাশ কি করা হচ্ছে না?

মনে রাখা দরকার  সরকারের --- কি কেন্দ্র আর কি রাজ্যের --- সচেষ্ট হওয়া উচিত যাতে করে জনগণের করের বোঝা হ্রাস করা যায় আর সবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা৷ এদিকে তো কারোরই নজর নেই ৷

মনে রাখা দরকার সরকারকে  কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উৎপাদন ঘটাতে হবে৷ আমদানী কম, রপ্তানী করতে হবে বেশী৷ সমবায়কে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্লকস্তর থেকে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে৷ জনগণকে স্বনির্ভবশীল করে গড়ে তুলে তাদের উপযুক্ত নাগরিক করে গড়ে তোলার দিকে  দৃষ্টি দিতে হবে৷