কীভাবে আমরা বিশ্বমানের ফুটবলার গড়ে তুলব?

সংবাদদাতা
ক্রীড়া সংবাদদাতা
সময়

সারা দেশ জুড়েই প্রতিভাধর ফুটবলারদের অনুসন্ধান করছে ভারতের বিভিন্ন ক্লাব৷ সেই সব ক্লাবগুলি নিজেদের অ্যাকাডেমিতে ফুটবলারদের নানান সুযোগ সুবিধা দিয়ে, আবাসিক ক্যাম্প করে, ভাল দেশী-বিদেশী কোচ দিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছেন৷ উদাহরণ হিসেবে কলকাতার মোহনবাগান, ইষ্টবেঙ্গল, গোয়ার কিছু ক্লাব চেষ্টা চালাচ্ছেন ভাল ফুটবলার তৈরী করার৷ উদ্দেশ্য অদূর ভবিষ্যতে ভাল মানের ফুটবলার ভারত উপহার দেবে বিশ্বকে৷ উদ্দেশ্য মহৎ কিন্তু বেশ কয়েক বছরের প্রচেষ্টাতেও ভারত এখনও পর্যন্ত এমন একটি ভারতীয় ফুটবল দল উপহার দিতে পারেনি যা অন্তত এশিয়ার বুকে পারফরমেন্সের বিচারে এক থেকে পাঁচের মধ্যে থাকতে পারে৷

কেন ভারত ফুটবলার তৈরী হচ্ছে না? ভারতে কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন এমন বিদেশী কোচেরা বলছেন---শারীরিক শক্তির বিচারে ভারতীয়রা খানিকটা পিছিয়ে থাকলেও প্রতিভার অভাব ভারতে নেই---একথা বলা যায়৷ তাঁরা এও বলছেন---ভারতের কোন কোন প্রান্তের ছেলেরা শারীরিকভাবে যথেষ্ট সুগঠিত৷ বিশেষ করে পাহাড়ী অঞ্চলের ছেলেরা ফুটবল খেলার পক্ষে বেশ উপযোগী৷ তবে ভারতের গড় উচ্চতা খুব ভাল নয়৷ তবে পাঁচ-ছয় বছর বয়স থেকে ঠিকভাবে প্রশিক্ষণের মধ্যে রাখলে ভারতীয়দের মধ্যে থেকে  ভাল ফুটবলার অবশ্যই তৈরী হবে৷ তাছাড়া অতীতে অনেক ভারতীয় ফুটবল মাঠে দাপিয়ে খেলেছে৷ চুনী, মহাবীর প্রসাদ, সত্যেন, পি কে ব্যানার্জী, মহম্মদ হাবিব, সাবিবর আলি, ভেঙ্কটেশ প্রমুখ অনেক ভারতীয় ফুটবলার বিশ্বমানের ফুটবল উপহার দিয়েছে৷ তাহলে বিগত পাঁচ-দশ বছরের মধ্যে একঝাঁক ভাল ফুটবলার ভারত তুলে আনতে পারছে না কেন? ক্রিকেটে তো ভারত বিশ্বসেরাদের সারিতে সবসময় থাকে৷

আসলে আপাতদৃষ্টিতে যে প্রচেষ্টা চোখে পড়ছে তা আদৌ বিশ্বমানের ফুটবলার তৈরী হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়৷ আর এ্যাকাদেমী থেকে একটা সময় পার হয়ে গেলে চলে আসতে হয়৷ তখন ভাল ক্লাবে খেলে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়৷ সেখানে রুজি-রোজগারের ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হয়৷ কোনও কারণে চোট-আঘাতের সমস্যা এসে গেলে জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের চিন্তাভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়৷ দু-এক বছর ভাল ফুটবল খেলে যা রোজগার হবে তাতে এমন কিছু রোজগার হবে না যে চোট-আঘাত বা পারিবারিক কোনও সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধানের জন্যে আর্থিক ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা দেখা দেবে না৷ তাই যতক্ষণ ভাল খেলা ততক্ষণ যা রোজগার তাতে সংশ্লিষ্ট ফুটবলার ও তার পরিবার মোটামুটিভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারে৷ খেলা বন্ধ মানেই আর্থিক সমস্যা৷ তখন জন মজুরও খাটতে হতে পারে৷ আমাদের পরিকাঠামোটাই এমন৷

যাইহোক এখন সরকার কিছু কিছু ব্যবস্থা নেবার কথা ভাবছেন যাতে ফুটবলারদের ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর, সমস্যাহীন থাকার নিশ্চয়তা থাকবে৷ তবে গ্রাম-গঞ্জের খুদেদের মাঠে দাপাদাপি দেখে এখনও ভাবতে পারছি না যে অদূর ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে থেকে ভাল ফুটবলার উঠে আসবে৷ কারণ ভারতীয় ফুটবলার  তৈরীর পরিকাঠামো এখনও তেমন ভাবে গড়ে ওঠেনি যাতে ক্রিকেটারের মত ভাল ফুটবলার তৈরী হবে৷