মানালী ভ্রমণ

লেখক
আশীষ দত্ত রায়

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

আজ বৃষ্টির দিন৷ মধ্যরাতেই তার আভাস পাওয়া গিয়েছিল৷ সামনের ঘর গুলোর টিনের ছাদে তার আগমনী সঙ্গীতের তান৷

এমনিতেই রচনাকারের দূরদৃষ্টির অভাব আছে৷ পরিজন ও আত্মীয়দের এ অটল ধারণাতে সে বিশ্বাস আরো সম্পৃক্ত ও গভীর হয়েছে৷ ভোরবেলায় তা আরও নিশ্চিততা এনে দিলো যে শুধু দূর নয় নিকট দৃষ্টিরও অভাব আছে৷ স্থূল চোখে ১৫ ফুট দূরের  রাস্তাটাও অদৃশ্য৷ অবশ্য মাঝে মধ্যে  তার অবস্থান জানান দিচ্ছিলো মেঘের  অপসারণে৷ কিন্তু  নদী, গিরিশ্রেণী, তার বিভিন্ন খাত সেই যে অস্পষ্ট, অদৃশ্য হলো প্রভাত ছেড়ে বেলা বাড়তে তার সামান্য আভাসে জানা গেল তারা যথাস্থানেই আছে৷ মাঝে কেবল মেঘের আড়াল৷

এর মধ্যেই নানা গোল দেখা দিলো৷ সে বিবরণ অবকাশে দেওয়া যাবে৷ আপাততঃ অন্য গোলের অবতারণা করি৷ তা হলো ভূগোল৷

এই বশিষ্ঠ গ্রামটি প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সমুদ্রতল থেকে ২০০০ মিটারের বেশী উঁচুতে৷ না, কোন ব্যষ্টি কিভাবে মেপে জানিয়েছেন সেটা জানা নেই৷ নতুন মানালি জনপদ থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে৷ আয়তনে ছোট লোকালয়৷  সামান্য সংখ্যক স্থানীয়দের বাস৷ বেশির ভাগ বাড়ি পর্যটকদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত৷ তার মান ও  মাশুল বিভিন্ন৷ উঁচুতে বা নিচুতে সেগুলির অবস্থান৷ মূল রাস্তার দুপাশেই বিপনী বর্ণনা আগের কোনো পর্বে দেওয়া হয়েছে৷ তবে উষ্ণকুণ্ডের রাস্তার দুপাশের বেশির ভাগ আলয়ই পরিবর্তিত হয়েছে পান্থশালায়৷ যুগের প্রয়োজনেই৷ স্থানীয় কুন্ডটি ভূমধ্যস্ত গন্ধকের কারণে উষ্ণ জলধারায় খ্যাত৷ সে কারণেই নাকি ত্বক সংক্রান্ত রোগ দূর করে৷ অন্য রোগ নিরাময়েও এ জলের যশোগাথা শোনা যায়৷ ভবনগুলির নিচের দিকে বা পিছনের দিকে বৃক্ষসারিতে কিছু কিছু স্থানীয় ফলের গাছ দেখা গেল৷ আর যেটা মন মুগ্দ করে তা হলো পরিচিত বিহঙ্গের সাথে নানা রং বেরংয়ের অপরিচিতরও অবস্থিতি৷ তাদের সঙ্গীত মূর্ছনায় প্রভাত ও সন্ধ্যায় নগর জীবনের অনুপপত্তির আক্ষেপ ভুলিয়ে দেয়৷

গ্রামের কিছুটা দূরেই যোগিনী জলপ্রপাত৷ খাড়া পাথরের মধ্যে থেকে প্রায় ১৫০ ফুট উপর থেকে সশব্দে আছড়ে পড়ছে নীচে৷ ও ছোট একটা জলধারায় তা বিয়াস এ গিয়ে মিশে যাচ্ছে৷ আছড়ে যেখানে পড়ছে  তার পাশেই যোগিণী মাতার মন্দির৷ মূলতঃ স্থানীয়রা সেখানে পুজো দিতে ও মস্তক মুন্ডন করতে যায়৷ জলপ্রপাতের যাত্রাপথ খুব দুর্গম নয়৷ তবে নির্জন৷ কয়েকটি স্থানীয় বাসগৃহের দেখা পাওয়া যায় বটে তবে কোনো বিপনী নেই৷ আপেল বাগান ও পাইন ছাড়াও অন্য কিছু গাছের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ি পথ৷ পথ নাকি দুটি৷ একটি স্থানীয়রা ব্যবহার করে একটু দুর্গম ও দূরত্ব কম, দ্রুত পৌঁছানো যায়৷ অপরটি একটু সুগম ও দূরত্ব বেশি৷ সময় লাগে বেশি৷

এবার লোক ইতিহাস৷

জানা যায় এই গ্রামটি বশিষ্ঠ ঋষির বাসস্থান ও তপোভূমি ছিল৷ বহুযুগ ধরে তারই বংশধরদের নাকি বাসছিল এ অঞ্চলে৷ মোগল আমলেই নাকি এই মন্দির সহ জনপদটি তাদের হাতছাড়া হয়৷ আকবরের রাজসভায় জ্ঞানীগুনী জনেদের সঙ্গে ওনার বংশধরেরও স্থান হয়েছিলো৷ স্থান ত্যাগের বিনিময়ে সে সময়ের অনুপাতে বিশাল অঙ্কের মাসোহারাও তারা পেতেন৷ যা নাকি জাহাঙ্গীরের আমলে বন্ধ হয়ে যায় পাঞ্জাব বা হরিয়ানায় কোনো ভূমিবিনিময়ের  মাধ্যমে৷

কয়েকটি বেশি গোল হয়ে গেল কি? (ক্রমশঃ)