নারীর মর্যাদা রক্ষার চিন্তায় একটি ব্যানার

লেখক
এইচ.এন.মাহাত

কয়েকদিন আগে শ্যামবাজার পাঁচ মাথায় রাস্তার ধারে টাঙানো একটি ব্যানার নিয়ে আমাদের সুসভ্য আধুনিক নারী সমাজের গেল গেল রব উঠতে শুরু করেছে৷ আধুনিকতার ছোঁয়া লাগা অত্যাধুনিক কিছু নারী স্বাধীনতা চায়৷ সেটা কোন স্বাধীনতা, যাদের হাবভাবে শুধুমাত্র বেলেল্লাপনা ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না৷ এটা ভুললে চলবে না, মেয়েরা প্রথমে মায়ের জাত, প্রতিটি মুহূর্ত্ত একটি মা যেমন তার শিশুকে বুকে আগলে রাখে ও তার মৃত্যুর প্রাক্ মুহূর্ত্ত পর্যন্ত তাকে রক্ষা করে৷ তেমনি বোনের আদর  ভালবাসা উজাড় করে ভাইকে একটি লক্ষ্যে পৌঁছুতে সাহায্য করে৷ এরপর সেই মায়ের আর একটি দিক তার জীবনে মনের মানুষের খোঁজ৷  এ সম্পর্কে আমি অবশ্য একটু ভিন্নমত পোষণ করতে পারি৷ মানুষ মাত্রেই সে নারী হোক বা পুরুষ বৈচিত্র্যময় চরিত্রের অধিকারী৷ বুদ্ধিমান মানুষ তার চাওয়া বা পাওয়ায় সবাই এক হবে এমনটি নয়৷ কিশোর বয়সে একটি উপন্যাস পড়ছিলাম তার সারমর্ম অনেকটা এমন --- কোন একজন নারীকে বা পুরুষকে লক্ষ্যে পৌঁছতে একে অপরকে সাহায্যে এগিয়ে চলে৷ সেখানে তা কখনোই ভোগের উপাদান হয় না৷আজ আমরা ছাত্র বা ছাত্রা (ছাত্রী), শিক্ষক বা শিক্ষিকাগণ এমন কিছু ভাব করেন যাহা লোক চক্ষুর সামনে এসে যায়, যাহাকে সামাজিকভাবে আমরা বলতে বাধ্য হই অসামাজিক৷ কিন্তু কেন? আমরা এর জন্যে দায়ী বা দোষী ব্যষ্টিদের কারণ খোঁজার চেষ্টা করি কী?আমাদের স্বাভাবগতভাবে কিছু বকাঝকা করে ছেড়ে দিই৷ পরিণতি আজকের সমাজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে৷ বিশেষ করে সেই সব বাচ্চাদের যারা কিশোর বা কিশোরী বয়সে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়৷ এখন প্রশ্ণ হ’ল এক শ্রেণীর অভুক্ত কামুক নেশা হয়তো বা চেপে  রাখল৷ কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে তার বৃত্তিগুলোকে সময় সুযোগ বুঝে সদ্ব্যবহার করতে চেষ্টা করবেই৷ সেটা একটা ছোট্ট শিশু হোক বা বয়স্ক মহিলা যেই হোক না কেন সেখানে থাকে না কোন বোধ-বুদ্ধি৷ সংবাদপত্র খুললেই আমরা এইসব কেচ্ছা যাহা দেখি তাহাতে মনে হয় না কি আমরা কোন মানুষের সমাজে বাস করছি৷

এবার আসা যাক ব্যানার বা পোস্টারের সম্পর্কে ওখানে বলা হয়েছে---‘নারীদেহ প্রদশর্নকারী উত্তেজক পোষাকের বিপনন বন্ধ করতে হবে---’বাঙালী মহিলা সমাজ৷ এর বিরুদ্ধে অন্য একটি হাতে লেখা পোষ্টার---‘মধ্যযুগীয় হাম্বা’ পোশাক ধর্ষণের কারণ নয়৷’ কে-বা কারা এটা লিখেছেন তা অবগত নয়৷ আমার মনে হয় মধ্যযুগীয়  পোশাক ধর্ষণের কারণ নয়৷ এটা বলার উদ্দেশ্য হ’ল যারা লিখেছেন তারা এখনও মধ্যযুগে পড়ে আছেন৷ বাঙালী মহিলা সমাজ বলতে চাইছে---নারীর পোশাকে নগ্ণতা দেখিয়ে বাজারে পণ্যদ্রব্য সমগ্রীর বিক্রয় বন্ধ হোক৷ এর বিরুদ্ধে যারা পাল্টা ব্যানার ঝুলিয়েছে তারা ভারতে বাঙালী সংস্কৃতি ভুলে গেছে৷ যেখানে দেবীর রূপে মায়ের পূজায় মাথা নত হয়, আর সেই মা’কে পর্ণগ্রাফী নামে বাজারে বিক্রয়ের কাজে ব্যবহার করছি৷ ধিক্ তাদের যারা  নিজেরাই ধর্ষণের কথা লিখেছেন৷ বাঙলায় একটি প্রবাদ আছে---যেমনটি দেখবে তেমনটি করবে, আর যেমনটি শুনবে তেমনটিই বলবে৷ এতেই প্রমাণ হয় যে বা যারা মধ্যযুগীয় শব্দের প্রয়োগ করেছে তারাই বিকৃতিমনা৷ দার্শনিকের ভাষায় কোন শিল্পকলা সাহিত্য সংস্কৃতিতে ভাষার ব্যবহারে  অবশ্যই যেন মানুষের কল্যাণ ও নব্যমানবতার আদর্শ অনুসরণ করে হয়৷

বর্তমানে তেলেঙ্গানা রাজ্যের একটি ধর্ষণের ঘটনায় সারা ভারতে বহুল প্রচার স্থান পেয়েছে৷ আমার মনে হয় সারা ভারতে কয়েকটি এই ধরণের ঘটনা আমরা জানতে পারি৷ অনেকটাই অন্ধকারে থেকে যায়৷ সারা পৃথিবীতে এই ধরণের ঘটনার কথা জানতে পারি, কিন্তু কেন? তা নিয়ে আমরা বিশ্লেষণ করি না, ঘটনা ঘটে গেলে কয়েকদিন মোমবাতি জ্বালিয়ে নীরবতা পালন করে সেই ব্যষ্টিদের চরম দণ্ড দেওয়ার জন্যে চিৎকার করে কিছু দিন পর আবার ভুলে যাই৷ কিন্তু মুল সমস্যায় যাওয়ার চেষ্টা করি না৷ আমার মনে হয় মানুষের মধ্যে রয়েছে তিনটি দিক৷ যথাক্রমে শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক৷ শারীরিক ও মানসিক অতৃপ্ত বাসনার পরিবর্তন আনতে হলে দরকার শারীরিক মানসিক বিস্তারের৷

সেই জন্যে শিশু বয়স থেকেই ছেলেমেয়েদের শারীরিক-মানসিক ভাবে গড়ে তোলার দিকে মন দিতে হবে৷ তার খাদ্যাভ্যস, আচার-আচরণ,  চলনে-বলনে যেন একটা উচ্চ আদর্শের বোধ থাকে৷ সবসময় ভালবাসার সঙ্গে সঙ্গে বড় বড় মনীষীদের জীবনী শোনানো, খাদ্যাখাদ্যের বিচার করা, মনকে ঈশ্বর চিন্তায় মগ্ণ রাখা ও সমস্ত কু-অভ্যাস থেকে দূরে রাখা৷ একটু বড় হলে আসন ও যোগের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক পথে চলার প্রেরণা দিতে হবে৷ বিকেলে কিছু না কিছু খেলাধূলার ব্যবস্থা করা৷ এর ফলে তার হর্মোন কখনই বিপজ্জনক হবে না৷ ছোটবেলা থেকেই তার খাওয়া, দেখা ও শোনার তরঙ্গকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আনা৷