পেগাসাস মানবতা বিরোধী গণতন্ত্রের শত্রু স্বেচ্ছাচারিদের হাতিয়ার

লেখক
পবিত্র সরকার

আজ দেশ ৭৫ বছরের স্বাধীনতা প্রাপ্ত একটি বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ বলেই এই পৃথিবীতে পরিচিত৷ এই দেশে প্রায় ১৩৫কোটি মানুষ বাস করেন৷ তাঁরা নানা ভাষাভাষীর  ও নানা ধর্মমতের৷ ভারতের সংবিধান হলো পৃথিবীতে বৃহত্তম সংবিধান৷ ভারতকে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসাবেই  প্রণেতারা ঘোষণা করেছেন৷ নির্বাচনে বিজয়ীগণ এই দেশের শাসন ভার বহন করেন দেশ সেবক হিসাবেই৷ তাঁরা সংবিধানের নামে শপথ নেন এই বলে যে দেশের জনগণের  কল্যাণে শাসকগণ শাসন ভারবহন করবেন দেশ সেবক হিসাবে৷ বর্ত্তমানে যাঁরা কেন্দ্রের শাসনে আছেন তাঁরা হলেন বিজেপি দলের সমর্থকগণ৷ সেই দলের প্রধানমন্ত্রী হলেন মাননীয় নরেন্দ্রমোদি৷ পেগাসাস কিনেছেন মোদিই৷ নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে এই দুর্ভাগ্যজনক সংবাদ সম্প্রতি প্রকাশিত  হয়েছে৷ তিনি ফোনে আড়ি পাততে পেগাসস কিনতে ইজরাইলে গিয়ে চুক্তি করেন৷ এই অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ অদ্যাবধি এই অভিযোগ সম্বন্ধে মোদিজী কোন জবাব দেননি৷ যদিও ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ভারত ও ইজরাইলের সমুদ্র সৈকতে দুই প্রধানমন্ত্রীর গল্পের ছবি প্রকাশিত হয় সেটার ছবি ভিডিও সংবাদ মাধ্যমে সবাই দেখেন৷ দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনায় সমঝোতা সাক্ষরিত হয়৷ তার মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও অস্ত্র সংক্রান্ত৷ চার বছর পর ফাঁস হলো আসল তথ্য৷ ১৫ হাজার কোটি টাকার এই প্রতিরক্ষার অন্যতম ছিল পেগাসস স্পাইওয়্যার ইজরাইলের সঙ্গে চুক্তি করে এন.এস. ও সংস্থার তৈরী স্মার্টফোনে আড়িপাতার  বিশেষ সফট কিনেছিলেন আর কেউ নয় খোদ মোদি সরকার৷ সেটা ব্যবহার করে এদেশের বিরোধী নেতা থেকে সাংবাদিক, বিচারপতি থেকে মন্ত্রী, অন্তত ৩০০ নাগরিকের ফোনে চলছিল চরবৃত্তি৷ তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী ছিলেন তালিকায়৷ এ ব্যাপারে লাগাতার প্রশ্ণের কোন স্পষ্ট জবাব দেননি মোদি সরকার দায় এড়িয়ে নানাবিধ বিবৃতি দিয়ে সন্দেহ বাড়ানো হয়৷ শেষে খোদ সুপ্রিমকোর্ট এই ইস্যুতে তদন্ত কমিটি ঘটন করেন৷ এর মধ্যে বোমা ফাটিয়েছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম৷ পেগাসস নিয়ে এক দীর্ঘ তদন্ত  শেষে তাঁরা জানতেই পারেন ২০১৭ সালে মোদি  ইজরায়েল সফরেই চূড়ান্ত হয়েছিল ডিল৷  বিস্ময়ের ও বিপদের কথা হলো যে পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রই আড়িপাতা নিয়ে বিশেষ করে চরবৃত্তি নিয়ে অভিযোগ করে চলেছে ও তীব্র প্রতিবাদ হচ্ছে৷ এদিকে কেন্দ্র সরকার সংসদে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রকও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী জানান যাবতীয় অভিযোগ ভুয়ো৷ সুপ্রিমকোর্টকে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে জানানো হয় হলফ নামা দেওয়া যাবে না নিরাপত্তার কারণে৷ মহামান্য আদালত তা অগ্রাহ্য করেন৷ সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের এর মন্তব্য---

রাষ্ট্রীয় নজরদারী--- পি.এম মোদীর ওই ছোট্ট সিক্রেট এখন প্রকাশ্যে মোদি সরকার তো জনগণের গোপনীয়তার অধিকারকেই অস্বীকার করছে৷ এব্যাপারে সুব্রমন্য স্বামী বিজেপি সাংসদ--- বলেন মোদি সরকারের উচিত এই রিপোর্ট খণ্ডন করা৷ বলা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকায় ইজরায়েলি এন.এস ও সংস্থার থেকে পেগাসস স্পাইওয়্যার কিনেছিল কেন্দ্র৷ গোটাটাই কর দাতাদের টাকায়৷ এ থেকে  প্রাথমিকভাবে বোঝা যায় সুপ্রিম কোর্ট ও সংসদে বিভ্রান্ত করেছে আমাদের সরকার৷--- রাহুল গান্ধী, কংগ্রেস সাংসদ বলেন--- সরকারী আধিকারিক, বিরোধী নেতা, সশস্ত্র বাহিনী আদালত--- ফোনে আড়ি পেতে নিশানা করা হয়েছে সবাইকে৷ এটা বিশ্বাসঘাতকতা৷ মোদি সরকার দেশ দ্রোহিতা করেছে৷

এই ধরনের কাজ করাটা যদি হয়ে থাকে তা হলে বলতেই হয় এ দেশে গণতন্ত্র নেই৷ আর যারা এই কাজ যদি করে থাকে তা হলে তাদের পদত্যাগ করাটাই বিধেয়৷ তবে আমরা প্রবীন  নাগরিকরা প্রথম থেকে দেখে আসছি যে এদেশে যেটাকে বলা হয় গণতন্ত্র সেটা কিন্তু যারা, শাসন করে  তাদের অধিকাংশই জনগণের কল্যাণ করেই না, দলীয় স্বার্থেই তারা সদাব্যস্ত৷ তাদের অনেকেই নোংরা দলবাজি করে নিছক  গদী আঁকড়ে থাকতে চায় আর অধিকাংশই নেতা সাম্প্রদায়িক ও স্বেচ্ছাচারী৷ এদের সম্বন্ধে সৎনীতিবাদী নাগরিকদের সচেতন হওয়াটা জরুরী৷ নতুবা বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে পড়বে৷ এই মুহূর্তে দেশে যেভাবে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে প্রশাসন, গণমাধ্যম গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভগুলিকে শাসকদলের প্রভাবে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে তাতে দেশে জরুরী কালীন অবস্থার চেয়েও ভয়ঙ্কর পরিবেশ তৈরী হয়েছে৷ গণতন্ত্রের নামাবলী গায়ে এই স্বৈরাচারীতাকে বেশীদিন চলতে দিলে  বিশ্বের দরবারে ভারতবর্ষের গর্ব খর্ব হবে৷