পশ্চিমবঙ্গ কারো অবদান নয়, সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের ফল

লেখক
পথিক বর

পশ্চিমবঙ্গের কিছু উঠতি নেতা শ্যামাপ্রসাদকে নিয়ে  জঘন্য রাজনীতি করছে তাঁরা শ্রদ্ধার নামে শ্যামাপ্রসাদকে অশ্রদ্ধা ও অসম্মান করছে৷ ইতিহাসকে বিকৃত করে প্রচার করছে, পশ্চিমবঙ্গ শ্যামাপ্রসাদের অবদান৷ বাস্তব তা নয়৷ একথা সবাই জানে, বঙ্গভঙ্গের চক্রান্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের৷ ১৯০৫ সালে প্রথম ব্রিটিশ শাসক বাঙলাকে ভাগ করেছিল৷ কিন্তু  বাঙালীর ঐক্যবদ্ধ গণ আন্দোলনের সামনে মাথা নত করতে বাধ্য হয় ব্রিটিশ শাসক৷ তাই সেদিন বঙ্গভঙ্গের চক্রান্ত ব্যর্থ হয়৷ কিন্তু বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা থেকে সরে আসেনি৷

কংগ্রেসের ভেতরে গান্ধী সুভাষ বিরোধ ও ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেই বিরোধ চরম আকার ধারণ করে৷ সুভাষচন্দ্র সভাপতি নির্বাচনে জয়ী হয়েও পদত্যাগ করতে বাধ্য হন৷ কংগ্রেসের এই আভ্যন্তরীণ বিবাদ ব্রিটিশকে নতুন করে বঙ্গভঙ্গের সুযোগ করে দেয়৷ গান্ধী অনুগামী নেহেরু পটেল রাজা গোপালাচারীর মত নেতাদের সুভাষ বিরোধিতা বাঙালী বিরোধিতায় রূপ নেয়৷ ব্রিটিশ চতুরভাবে এই বিরোধিতাকে কাজে লাগায়৷ বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনায় নেহেরু-পটেল ও মুসলিম লিগ নেতা জিন্নাকে পাশে পায় ব্রিটিশ শাসক৷ জিন্নাকে দিয়ে পাকিস্তানের দাবী তোলা, ৪৬ এর ভয়াবহ দাঙ্গা সবই সেই পরিকল্পনার অঙ্গ ছিল৷

দেশ ভাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা তথা ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় শরৎচন্দ্র বোস ও আরও কয়েকজন নেতা (যাঁরা দেশ ভাগের বিরোধী ছিলেন) চেয়েছিলেন, দেশ যখন ভাগই হচ্ছে তখন তিনভাগ হোক অর্থাৎ ভারত-পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে অখণ্ড বাঙলা আলাদা রাষ্ট্র হোক৷ তখনই হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ৪৬-এর দাঙ্গার দৃষ্টান্ত সামনে রেখে অখণ্ড বাঙলার বিরোধিতা করলেন হিন্দু স্বার্থের কথা বলে৷ হাতে চাঁদ পেল ব্রিটিশ শাসক লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন, নতুন করে প্রাণ ফিরে পেল জিন্না-নেহেরু-পটেল৷ তাঁরা শ্যামাপ্রসাদকে হাতিয়ার করে নতুন করে বাঙলার ভাঙার কাজে নেবে পড়ে৷ ব্যর্থ হয় শরৎচন্দ্র বোস, ফজরুল হক প্রভৃতি নেতাদের পরিকল্পনা৷ স্বার্থক রূপ পেল মাউন্ট ব্যাটেনের বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা জিন্না, নেহেরু প্রভৃতি নেতাদের সম্মতিতে৷ শ্যামপ্রসাদ সেখানে ঘটকের কাজ করেছে৷

আজ এমনভাবে প্রচার হচ্ছে যেন শ্যামাপ্রসাদই বাঙলা ভাগ করে পশ্চিমবঙ্গ গড়েছেন৷ শ্যামাপ্রসাদের ভাবনা অর্থাৎ হিন্দু  বাঙালীর স্বার্থ ভারতে কতটা রক্ষিত হয়েছে, সে প্রসঙ্গ দীর্ঘ আলোচনার বিষয়, কিন্তু ১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস---রক্তরঞ্জিত ঢাকার রাজপথ প্রমাণ করেছে বাংলা ভাষা সাহিত্য-সংসৃকতি পূর্ববঙ্গের মুসলিম বাঙালীদের হাতে বিপন্ন নয়৷

আজ যারা রাজনৈতিক স্বার্থে শ্যামাপ্রসাদকে ব্যবহার করছে তারা কিন্তু ভুলেও শ্যামাপ্রসাদের  কাশ্মীরে রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে নীরব৷ একসময়ে এরা দাবী তুলেছিল মৃত্যু রহস্যের তদন্তের জন্য৷ দীর্ঘ ৬ বছর অতিক্রান্ত এরা ক্ষমতায় বসে আছে, কিন্তু শ্যামপ্রসাদের মৃত্যু নিয়ে একদম নীরব৷ শ্যামাপ্রসাদের নামে মিথ্যা প্রচার ও ভোটের স্বার্থে শ্যামাপ্রসাদ আবেগকে ব্যবহারের ঘৃণ্য রাজনীতি অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার৷