ফল গাছ রোপণে জোর দিতে হবে

লেখক
বিশ্বদেব  মুখোপাধ্যায়

 অবধূতিকা আনন্দ অরুন্ধতী দিদি আমাকে জানিয়েছিলেন আমাদের দেশে ফলের গাছ বেশি করে লাগালে দেশের বাচ্চারা নানান ধরনের প্যাকেটজাত খাবার ছেড়ে অধিক পরিমানে ফল খাবে ও এতে তাদের পুষ্টি হবে । তিনি আমাকে এই বিষয়টা জানিয়েছিলেন আম্পান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কী কী ধরনের গাছ লাগানো উচিত, এ সম্বন্ধে আমার পূর্বেকার লেখার পরিপ্রেক্ষিতে । দিদির এই প্রস্তাবে আমি সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করি । আমাদের দেশে শিশু থেকে বৃদ্ধ -এক বিরাট সংখ্যক মানুষ অপুষ্টির শিকার । ফল থেকে বেশিরভাগই শতহস্ত দূরে । তার অন্যতম  একটা প্রধান কারণ হল ফলের অতিরিক্ত মূল্য । কৃষিপ্রধান আমাদের এই রাজ্য তথা দেশের মাটি এতটাই উর্বর যে এখানে নানান ধরণের ফল ও ফসল সহজেই উৎপন্ন হয় । কিন্তু জানিনা কোন্ অদৃশ্য কারণে আমাদের সরকারী ব্যবস্থা ফলকে সাধারণের নাগালের মধ্যে আনার চেষ্টা করছে না ? যে খাবারগুলো কেবলমাত্র মুখরোচক, পুষ্টিগুণ তেমন নেই বললেই চলে,সেই সব খাদ্য যেভাবে প্রচার পায়, সেইদিক থেকে ফল খাওয়ার উপকারিতা, প্রয়োজনীয়তা ও পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে প্রচার বা আলোচনা চোখে পড়ে না বা শুনি না । বেশিরভাগ মানুষ মনে করে অসুস্থ হলেই বুঝি ফল খেতে হয় । সোজা কথায় সাধারণ মানুষকে ফল খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করার কোন ও প্রচেষ্টাই লক্ষ্য করা যায় না ।

আমাদের দেশে প্রতি বছর ই ঘটা করে বৃক্ষ রোপন উৎসব পালিত হয় । নানান ধরণের গাছের সাথে ফলের গাছ ও যে লাগানো হয় না, তা নয়, সেগুলি সাধারণের নাগালের বাইরেই থেকে গেছে । ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে রাজ্য তথা দেশের সকল মানুষের জন্য ফলের ব্যবস্থা করা কী খুব কঠিন কাজ ?  আমাদের রাজ্যে আম, জাম, কাঁটাল, কলা, পেয়ারা, পেঁপে, লিচু, বেল, তরমুজ, আনারস, নারকেল, তাল, সবেদা, জামরুল, বাতাবি ইত্যাদি কী হয় না ?  এর মধ্যে দু একটি বাদ দিলে বাকি ফল রাজ্যের প্রায় সব জেলায় কমবেশি হয় । এই ফলগুলিকে সাধারণের নাগালের মধ্যে আনতে হলে ব্যাপকভাবে ফলের গাছ রোপন করতে হবে ।

গ্রামে বা আধাশহর গুলিতে রাস্তার দুপাশে, খালের বা বিভিন্ন জলাশয়ের পাড়গুলিতে ব্যাপক হারে পেয়ারা, কলা, আম, জাম, কাঁটাল, পেঁপে,  বেল, নারকেল, তাল ইত্যাদি ফলের গাছ লাগানো যেতেই পারে । এছাড়া যাদের ফাঁকা জায়গা আছে কিংবা সরকারী পতিত জমি আছে সেই জায়গাগুলিতেও আগামী দু -তিন বছর পরিকল্প না করে ফলের গাছ রোপন করা যেতে পারে । তবে শুধু গাছ লাগিয়ে দিলেই চলবে না,সেগুলিকে বাঁচিয়ে রাখা ও বড়ো করে তোলার ও দায়িত্ব নিতে হবে । আর এই কাজে সাফল্য পেতে হলে স্থানীয় মানুষের সক্রিয় অংশ গ্রহণ ও জরুরী । আর এই উদ্যোগ প্রশাসনকেই নিতে হবে । সরকারের পাশাপাশি একাজে স্বেচ্ছা সেবী সংস্থাগুলিকেও এগিয়ে আসতে হবে । বিশেষ করে যারা পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করে চলেছে । ব্যষ্টিগত উদ্যোগেও কিছু কিছু এলাকায় ফলের গাছ লাগানো এমন কিছু অসম্ভব ব্যাপার নয় । বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের মাধ্য মে তাদের বাড়িতেও লাগানো যেতে পারে । আসলে যত বেশি সংখ্যক মানুষকে এই মহতী কাজে সামিল করা যাবে ততবেশি সাফল্য আসবে ।

আশা করা যায় এই ভাবে পরিকল্প না মাফিক এগোলে সাধারণের নাগালের মধ্যে ফল আসবে । শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই যাতে বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ধরণের ফল খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করতে পারে সেই দিকে লক্ষ্য রেখে এখন থেকেই  পরিকল্প না নেওয়া উচিত ।