স্মৃতির অন্তরালে কবি মানকুমারী বসু

লেখক
কণিকা দেবনাথ

বর্তমান বাংলাদেশের, অবিভক্ত বাঙলার যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে দত্ত পরিবারে কবি মান কুমারী বসুর জন্ম ১৮৬৩ সালের ২৫শে জানুয়ারী৷ পিতা আনন্দমোহন দত্ত মাতা শান্তমণি দেবী৷ এই দত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন বাংলা সাহিত্য জগতের আর এক  দিকপাল মাইকেল মধুসূদন দত্ত৷ তৎকালীন সমাজের বাল্যবিবাহ প্রথার  বলি মানকুমারী বসুর বিবাহ হয় মাত্র ১০ বৎসর বয়সে ১৮৭৩ সালে ডাক্তারি পাঠরত খুলনার বিধু-শঙ্কর বসুর সাথে৷ কিন্তু তাঁহার দাম্পত্য জীবন স্থায়ী হয়েছিল মাত্র নয় বছর৷ ১৮৮২ সালে স্ত্রী ও এক কন্যা রেখে বিধূশঙ্কর পরলোক গমন করেন৷ মাত্র ১৯ বৎসর বয়সে মানকুমারী বসু বিধবা হন৷

বৈধব্য জীবনের  যন্ত্রণা ও স্বামীর বিয়োগ ব্যাথা দুরে সরিয়ে রেখে মানকুমারী বসু সাহিত্যচর্র্চ শুরু করেন৷ স্বামীর মৃত্যুর দুই বৎসর পরে ১৮৮৪ সালে মানকুমারী বসুর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রিয় প্রসঙ্গ’ প্রকাশিত হয়৷ গ্রন্থটি তৎকালিন সাহিত্য সমাজে খ্যাতিলাভ করে৷ সম্পর্কে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ভাইঝি মানকুমারী বসুর স্বাভাবিক সাহিত্য প্রতিভা ছিলই৷ এরপর তিনি সমগ্র জীবন সাহিত্য সাধনায় মনোনিবেশ করেন৷ কবিতা, গল্প  প্রবন্ধ ছাড়াও তৎকালীন সমাজের দুর্নীতিও কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও তিনি কলম ধরেছিলেন৷ কবিতা ছাড়াও তাঁর রচিত বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ গল্প পাঠক সমাজে আদৃত হয়৷

রাজলক্ষ্মী, শোভা, অদৃষ্টচক্র গল্পের জন্যে ‘কুন্তলীন’ পুরস্কার লাভ করেন,এছাড়া কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভুবন মোহনী সুবর্ণ পদক (১৯৩৯) ও জগত্তারিনী সুবর্ণপদক (১৯৪১) লাভ করেন৷ ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে কাব্য সাহিত্য শাখার সভাপতি হয়েছিলেন৷ ১৯৪৩ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর মানকুমারী বসু পরলোক গমন করেন৷

তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ--- ‘প্রিয় প্রসঙ্গ’ ‘বিভূতি’ ‘শুভ সাধনা’, ‘কাব্যকুসুমাঞ্জলি’ ‘পুরাতন ছবি’ বাঙালী রমনীদের গৃহকর্ম, ‘বিবাহিতা স্ত্রীলোকের কর্তব্য’৷