সময়োচিত কিছু কথা

লেখক
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

বাঙালীর সবচেয়ে বড়ো উৎসব শারদোৎসবের আর একমাস বাকি নেই৷ প্রকৃতি তার নিয়মানুযায়ী সেজে উঠেছে৷ চতুর্দিকে কাশফুলের সমারোহ দেখতে পাচ্ছি৷ শিউলি, শালুক, পদ্ম ও ফুটছে৷ কিন্তু বাঙালীর মন ভারাক্রান্ত৷ উৎসবের  আনন্দে মেতে ওঠার মত পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি৷ করোনাসুর যেভাবে থাবা বসিয়েছে বিশ্বের অন্যান্য জায়গার সাথে এই বাংলাতেও তাতে বাঙালীর মন ভালো থাকার কথাও নয়৷ কবে আবার সবাই স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়  ফিরে আসতে পারবে সেই চিন্তায় ছোট থেকে  বড়ো সকলেই উদ্গ্রীব হয়ে রয়েছে৷ অথচ বাঙালীর প্রাণের এই উৎসবের মধ্যে জড়িয়ে আছে আবেগ, আনন্দ ও অর্থনীতি৷ রাজ্যের বা দেশের বাইরে কর্মরত বাঙালীরা সারা  বছর অপেক্ষা করে থাকে এইসময় ঘরে ফেরার জন্য৷ কিন্তু যা পরিস্থিতি তাতে সবাই এবছর বাড়ি ফিরতে পারবে কিনা সন্দেহ! অবশ্য কর্মচ্যুত হয়ে ভিন রাজ্য থেকে ইতিমধ্যে  অনেকেই রাজ্যে ফিরে এসেছেন৷ তাদের কাছে আবার এবছরের শারদোৎসব জৌলুস হীন, নিরানন্দ৷ পারিবারিক পুজোয় পরিবারের সকল সদস্যই প্রায় উপস্থিত থেকে শারদোৎসবের আনন্দ চুটিয়ে উপভোগ করেন৷ এবছর পারিবারিক পুজোগুলোও পরিবারের সকলকে ছাড়াই হয়তো হবে, সেখানেও আগের মতো আনন্দের পরিবেশ থাকবে না৷ নিয়ম রক্ষা হবে৷ আর বারোয়ারি পুজোগুলিতে যে ছবি প্রত্যেক বছর  দেখে থাকি সেই ভিড়, সেই আড্ডা এবার দেখা যাবে না৷ সারা বছর বাঙালী অপেক্ষা  করে থাকে শারদোৎসবের ক’দিন চুটিয়ে আনন্দ উপভোগ করা জন্য৷ কিন্তু  এবার সবাইকে রীতিমতো দুশ্চিন্তায়  ফেলেছে কোভিড---১৯ নামক মহামারী৷ ইংরেজী বছরের তৃতীয় মাস থেকে শুরু হয়ে নবম মাসে এসেও সংক্রমণ কমা তো দূরের কথা বরং বেড়েই চলেছে৷ বাঙালীর মন তাই খুব খারাপ৷ কারও বাড়িতে আনন্দ নেই৷ গৃহবন্দী জীবন কাটাতে কাটাতে সকলেই প্রায় হাঁপিয়ে উঠেছে৷ ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা যারা পুজোয় নতুন জামাকাপড় ও জুতো কিনে দেওয়ার জন্য বায়না করে, তারাও এবার কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে৷ তাদের ও কোন বায়না নেই, নেই কোনো আনন্দ৷

দোকান বাজারে বেচা কেনা নেই তেমন৷ এইসময় দোকানগুলোতে যেমন ভিড় থাকার কথা তার এক সিকিও নেই৷ ব্যবসায়ীরা চিন্তিত৷ উপার্জনহীন মানুষের সংখ্যা দিন দিন  বেড়েই চলেছে৷ যা হোক করে কিছু রোজগার করত যারা, তারাও অসহায় অবস্থার মধ্যে আছে৷ টেলারিং ব্যবসার সাথে যুক্ত যারা তারাও এ বছর ভীষণভাবে মার খেয়েছে৷ ঢাকি থেকে মৃৎশিল্পী, ডেকোরেটর থেকে মাইক ব্যবসায়ী---কারও কাছে তেমন অর্ডার নেই৷ তারাও চিন্তিত কীভাবে চলবে তাদের? খাবারের দোকানগুলো অনেকদিন থেকেই মার খাচ্ছে৷ বাস কিংবা ট্রেন ঠিক মতো এখনও চলা শুরু হয়নি৷ ফলে বেসরকারি বাসের চালক, হেল্পার কন্ডাক্টর ছাড়াও মেকানিক, হকার কারও হাতে টাকা নেই৷ সবাই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে৷

শারদোৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পেশার মানুষই কিছু না কিছু রোজগার  করে থাকেন৷ নামী-অনামী শিল্পীরা পুজোয় সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান করে দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি কিছু রোজগারও  করে থাকেন৷ এবছর তাও বন্ধ৷ ভ্রমণ পিপাসু বাঙালী এবার কতটা  বাইরে বেড়াতে যাবে তা নিয়ে চিন্তিত পর্যটন ব্যবসার সাথে যুক্ত সকলেই৷ এমনিতেই এবছর পর্যটন ব্যবসা ভীষণভাবে মার খেয়েছে৷ সব দিক দিয়েই অবস্থা বেশ করুণ৷ উৎসব প্রিয় আপামর বাঙালীর মন ভালো নেই৷ তাই শারদোৎসবের আনন্দ উপভোগ করার মত পরিস্থিতি কী বাঙালী আদৌ এবছর পাবে? এখনও দেখে তা মনে হচ্ছে না কারও৷