আমার সন্তান যেন থাকে  দুধে ভাতে

লেখক
একর্ষি

পূর্ব প্রকাশিতের পর,

এই উদ্দেশ্যে বিশ্বকে কে কতগুলো অর্থনৈতিক মহাদেশ বা ‘মহাভাগ’-এ (ভৌগোলিক বা প্রাকৃতিক মহাদেশের বদলে) ভাগ করা যায়৷---বিশিষ্টার্থে অর্থশাস্ত্রের পরিভাষায় যার নাম দেয়া হয়েছে ‘সেক্টব্‌’ (আর্থ-স্বনির্ভর বৃহত্তর অঞ্চল)৷ বিশ্বকে সেক্টর ভিত্তিক বিভাজনের  ক্ষেত্রে বিচার্য্য হচ্ছে--- একই ধরণের ধন সম্পদ ও সম্ভাবনা, ‘জন্মগত সাদৃশ্য’, সাধারণ ভৌগোলিক চরিত্র,  সাধারণ সামাজিক অর্থনৈতিক বন্ধন, ও ভাষাগত নৈকট্য৷ এই সূত্র অনুসারে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা নিরিখে বিশ্বকে ৯টি সেক্টরে ভাগ করা যায়৷ যথা--- ‘নিউইয়ার্ক  সেক্টর (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী নিউইয়র্ককে কেন্দ্র করে), জর্জটাউন সেক্টর (দক্ষিণ আমেরিকার গুয়ানার রাজধানী জর্জটাউনকে কেন্দ্র করে), কায়রো সেক্টর(আফ্রিকার মিশরের রাজধানী কাইরোকে কেন্দ্র করে), হংকং সেক্টর (এশিয়ার হংকং, কেন্দ্র করে),ম্যানিলা সেক্টর (এশিয়ার ফিলিপিন্‌সের রাজধানী ম্যানিলাকে কেন্দ্র করে, বার্লিন সেক্টর (ইউরোপের জার্র্মনির রাজধানী বার্লিনকে কেন্দ্র করে), ও সুবা সেক্টর (ওশিয়ানিয়ার ফিজি দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী সুবাকে কেন্দ্র করে)৷ একই পদ্ধতিতে সেক্টরকে (অর্থাৎ সেক্টরগুলোর ঠিক নীচের ধাপ) সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চল বা সমাজ-এ ভাগ করা যায়৷

কিন্তু এখানে মাথায় রাখতে হবে যে---১) পৃথিবীর প্রথাগত রাজনৈতিক পরিয়ে সাতটি মহাদেশে ১৯৫টি দেশ বা রাষ্ট্র আছে৷ যথা---এশিয়ায় ৪৮টি, ইউরোপে-৪৪টি আফ্রিকায় ৫৪টি উত্তর আমেরিকায় ২টি, দক্ষিণ আমেরিকায় ৩৩টি, ও ওয়াশেনিয়ার ১৪টি দেশ আছে---একথা আগেই বলা হয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ দেশই অর্থনৈতিক দিক থেকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না৷ ২) এক একটি দেশের বা রাষ্ট্রের মধ্যে একাধিক জনগোষ্ঠী (এথ্‌নিক্‌ গ্রুপ্‌) স্বতন্ত্র ভাষা-সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক  স্বার্থ ও সামাজিক ঐতিহ্য নিয়ে বাস করে ৷ অর্থাৎ সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চল বা সমাজ এলাকা তৈরী করা নিয়ম অনুযায়ী একটি রাষ্ট্রের মধ্যে একাধিক সামাজিক  অর্থনৈতিক অঞ্চল থাকতে পারে৷ যেমন ভারতে ৪৪টি (প্রধান জনগোষ্ঠীর) সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চল আছে৷ তার মানে যে প্রতি সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চল পিছু এক একটা  আলাদা রাষ্ট্র বা রাজ্য ঘটন করতে হবে৷ সোজা কথাটা হচ্ছে--- শোষণ- বঞ্চনা -  অত্যাচার - অবিচার-অবদমন-এর বিষবৃক্ষটাকে নির্মূল করে এবং স্বনির্ভরতার ও শোষণ মুক্তির  শর্তগুলো অটুট রেখে সামূহিক স্বার্থে, ইচ্ছায় ও  আধ্যাত্মিকতায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বয়ম্ভর অর্থনৈতিক এলাকাগুলোর পরিধিকে বাড়াতে বাড়াতে মেলাতে মেলাতে সমগ্র বিশ্বকেই একদিন সমগ্র  মানব জাতির বৃহত্তম স্বয়ম্ভর অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত করা৷ আর এই লক্ষ্য নিয়ে রাষ্ট্র বা দেশগুলোকে অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতার নিরিখে সামাজিক -অর্থনৈতিক -অঞ্চল হিসেবে পুনর্বিন্যাস-পুর্ঘটন দরকার৷ এইভাবে বিশ্বে ২৫০ এরও বেশী সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘটন করা যেতে পারে৷ এ ক্ষেত্রেও সীমানা নির্ধারণের নির্দেশিকা---নদী, জলবায়ু, ভাষা,অর্থনীতি, জন্মগত সাদৃশ্য, ও ভৌগোলিক কাঠামোগত সামগ্রিক বিচার বিশ্লেষণ৷ রাষ্ট্রের অধীনস্থ রাজ্যের বা প্রদেশের, কিংবা কোন রাষ্ট্র ও প্রদেশ অভিন্ন হলেও রাজনৈতিক বিভাগের মূলে থাকে প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গী৷ শাসনতান্ত্রিক বা প্রশাসনিক দিক দিয়ে রাজ্য বা প্রদেশকে কতগুলো জেলায় ভাঙা হয়ে থাকে, আর জেলাকে ব্লকে, ব্লককে পঞ্চায়েতে, পঞ্চায়েত ঘটন করা হয় কতগুলো গ্রামকে নিয়ে৷ কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক মানচিত্রে স্বয়ম্ভরতার দিকে দৃষ্টি রেকে সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চলকে (আপাত প্রদেশ বা রাজ্যকে) কতগুলো ডায়োসিস হিসেবে ভাগ করা হয়৷ প্রতিটি ডায়োসিস ভাঙা হয় ডিট-এ ৷ এরপর বিশ্বের অর্থনৈতিক মাণচিত্রের ক্ষুদ্রতম একক হচ্ছে ব্লক৷ অর্থাৎ কতগুলো ব্লক নিয়ে তৈরী হবে ডিট (ডিষ্ট্রিক্ট্‌)৷ তবে রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক ব্লক ও অর্থনৈতিক ব্লক এক নাও হতে পারে৷ সে  ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতার লক্ষ্যে৷ ব্লকগুলো পুনর্ঘটনের  প্রয়োজন হতে পারে৷ তবে সব গ্রামে প্রাকৃতিক সম্পদের ভিত্তিতে স্বয়ম্ভরতার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা রচনা সম্ভব নাও হতে পারে৷ তাই ব্লকই হচ্ছে স্বয়ম্ভর অর্থনীতির বা বিকেন্দ্রিত অর্থনীতির কাঠামোর ক্ষুদ্রতম একক (ইউনিট) বা পাদবিন্দু  বা ভিত্তি৷ ব্যাপারটাকে একটু ঘুরিয়ে বা অন্যভাবে বললে দাঁড়ায়---স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিটি জীবকোষ (তা অস্থি-পেশী-মেদ-মজ্জা-স্নায়ুর অঙ্গ, উপাঙ্গের ---যাইহোক না কেন) যেমন জীবের দেহতন্ত্র ঘটনে আবশ্যিক  ভূমিকা নিয়ে  থাকে, অথচ  নিজের কৌষিক বিশেষত্ব-স্বয়ম্ভরতাও এমনকি পৃথিবীর একদিন একটি মাত্র স্বয়ম্ভর অর্থনৈতিক একক বা ইয়ূনিটে রূপান্তরিত হলেও কোনকালে তা বিঘ্নিত হতে দেওয়া যাবে না৷ বিঘ্নিত হওয়ার অর্থ---জীবকোষ স্বধর্ম হারালে যেমন দেহমন্ত্র  বিকল হয়ে যায় তেমনি বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক পরিকাঠামোও ধবংস হয়ে যাবে৷                  (ক্রমশঃ)