ভারত কী শ্রীলঙ্কার পথে

ভারতের মতন খনিজ, কৃষিজ, বনজ ও নদীবহুল সম্পদশালী দেশ কি শেষে! অকর্মণ্য দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের দূর্বুদ্ধির কবলে পড়ে অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়ে শ্রীলঙ্কার  পথে হাঁটতে চলেছে৷ তাই যদি হয় তবে এরজন্য বর্তমান কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার দায়ী হবে ও কেউই সেই ভয়ঙ্কর পরিণতি থেকে পার পাবে না৷

ভারত সহ পৃথিবীর  প্রায় সকল দেশেই দেশীয় বা বিদেশী পুঁজিবাদীদের হাতে দেশের লাভজনক,অলাভজনক অর্থনৈতিক শিল্প কারখানা গুলোকে কমদামে বিক্রি করে চলেছে৷ এর ফলে  সেই দেশটি অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়ছে৷ যেমন ভারতের  লাভজনক সংস্থা এলআইসি, ইসকো, সেল, ভেল ইত্যাদি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রয়ের নামে পুঁজিপতিদের হাতে স্থানান্তরণ হলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজটা কী? কেন্দ্রীয় সরকারের ঘরে যে পরিমাণ সোনা আছে তার কথা না ভেবে বেহিসাবি অঙ্কে টাকা ছাপিয়ে দেশটাকে পঙ্গু করে চলেছে, আর ভাবছে আমরা তো পরের নির্বাচনে নাও জিততে পারি৷ যারা সরকারে আসবে তারাই চিন্তা করবে৷ আমরা ঋণ করে ঘী খেয়ে বিদেশ ভ্রমণ করে আয়াস করে যাই৷ এই হলো গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে মন্ত্রী এমএল.এ বা এমপিদের কোন জবাবদিহি করতে হয় না তাদের কাছে যাঁদের  ভোটে উনারা ওই জায়গায়  পৌঁছেছেন৷ এই মন্ত্রী এমএলএ ও এমপিরা সরকারের পুকুরচুরির টাকাকড়ি নয় ছয় করে পার পেয়ে যান৷ অথচ যাদের ভোটে  ওই জায়গায় পৌঁচেছেন সেই দারিদ্র সাধারণ মানুষ তার ছেলে মেয়েদের পেটের অন্ন যোগান দিতে গিয়ে কোন মনিবের কয়েক কিলো চাল চুরি করলে বিচার হয়, কিন্তু যেই হতভাগা চোরটির  ছেলেমেয়ে পরিবারকে কেউ দেখে না৷ হায়রে বিচারক ও তাদের বিচার ব্যবস্থা৷ সেখানেই মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তার বিচার ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছেন বিচারককে বাদী বিবাদীর কথা শোনবার পর নিজের প্রতিনিধির মাধ্যমে জানতে চেষ্টা করবে কি কারণে সে অপরাধটি করেছে ও ওই ব্যষ্টির জেল হলে সেই পরিবারটি কোন প্রকারে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় ও সেই পরিবারকে দৈনিক খরচের ব্যবস্থা কোর্টকেই করতে হবে৷ সেটাই  হোলো আসল বিচারক ও বিচার ব্যবস্থা৷

ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কোন কালেই ভারসাম্য ছিলো না৷ আমি দেখেছি গ্রাম্যজীবনে দারিদ্র্যতা থাকলেও সেখানকার দরিদ্র মানুস বিভিন্ন জঙ্গলের শাল পাতা বা বড় বড় পাতা বাড়িতে এনে থালা বাটি বা নানারকমের  উপকরণ বানিয়ে  বাজারে বিক্রি করে দারিদ্রতার সঙ্গে সংসার প্রতিপালন করতেন৷ সেটা রাজস্থানের প্রত্যান্ত গ্রাম বা পশ্চিমবঙ্গের, ত্রিপুরা বা অসমের যোগাযোগ বিহীন গ্রাম হোক তাদের ভাষা খাদ্য এক নয়৷ কিন্তু বেঁচে থাকার মানসিক উপকরণের রূপ এক৷ তাইতো তারা ভারতীয়৷

এদের নিয়ে মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তার চিন্তাধারায় বলেছেন কৃষিকে শিল্পের মর্যাদা দিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিকে মজবুত করতে হলে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা থেকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা খুবই জরুরী৷ তাই তিনি কৃষিকে শিল্পের মর্যাদা দেওয়ার সাথে সাথে কৃষিকে শিল্পে পরিণত করতে গিয়ে প্রাউটের দৃষ্টিতে শিল্পপ্রকার ভেদে তিন ধরনের কথা বললেন---১) ঘরে ঘরে কুটির শিল্প---ঘরে বসেই বাড়ীর পুরুষ মহিলা ও কর্মক্ষম ব্যষ্টি সকলেই অন্যান্য কাজের ফাঁকে অন্য শিল্পকে ছোটো  ছোটো নাট বল্টুর মত যন্ত্র তৈরী করে সাহায্য করবে অথবা মুড়ি বিড়ি, ঝুড়ি ইত্যাদি নানা ধরণের  হাতের শিল্প গড়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে একে অপরের উপর থেকে  নির্ভরতা কমানো৷ এই শিল্পটি মূলত ব্যষ্টির কেন্দ্রীক ২) মাঝারি শিল্প--- এই শিল্পের সঙ্গে সমবায় সমিতি তৈরী হলে গ্রামীন কৃষি ও শিল্প দুই উপকৃত  হওয়া অসম্ভব নয়৷ গ্রামীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মূলত কৃষি ও কর্ষক কেন্দ্রীক৷ আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় গ্রাম্যজীবনের মানুষকে জীবিকার তাগিদে শহর মুখী হতে হয় অথবা স্বল্প দামে কৃষিপণ্যকে  ফড়েদের হাতে তুলে দিতে হয়৷ দুটোই সাধারণ মানুষের কাছে বেদনাদায়ক৷ সেখানেই মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তার প্রাউট দর্শনে শিল্প ও কৃষি সম্পর্কে বলেছেন কৃষি পণ্যকে যতদিন না শিল্পজাত করার ভাবনা স্থানীয় মানুষ অথবা সরকারের চিন্তায় আসছে যথা সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি ও শিল্পের সমন্বয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সামাজিক পরিবেশ তৈরী করছে ততদিন গ্রামীণ অর্থনীতি মাথা উচু করে করে দাঁড়াতে পারবে না৷ শ্রম নিবিড় শিল্প অর্থাৎ মাঝারি শিল্পই গ্রাম শহর কেন্দ্রীক মানব সমাজকে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে দিতে পারে তবে মানুষ আর রাজনৈতিক দলদাসে পরিণত হবে না৷ এরপর মাননীয়া শ্রীসরকার বলেছেন স্থানীয় কাঁচামালই স্থানীয় মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের উৎস, তাকে রপ্তানি না করে সামবায়িক শিল্প স্থাপন গড়ে তুললে গ্রাম্যজীবন শহরে জীবনে পরিণত হতে বাধ্য৷ ৩) স্থানীয় সরকার  পরিচালিত বৃহৎ শিল্প৷ এই শিল্প বড় বড় স্টিল প্ল্যান্ট ও ভারি ইঞ্জিন ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে যেখানে বড় ইঞ্জিন চলবে কিন্তু শ্রমনিবিড় নয়, ট্যাকনিক্যাল কিছু মানুষ বুদ্ধি খরচ করে মেশিন চালাবে৷ উপাদান বৃদ্ধি পাবে ও মূল্যও কম হবে৷ সেখানে শ্রমনিবিড় হলে উৎপাদন বাড়বে না খরচ বেড়ে যাবে৷