দেবব্রত দত্ত স্মরণে

সংবাদদাতা
মৃদুল মজুমদার
সময়

আগরতলা ঃ ২৫ জানুয়ারী রাজ্যের সাহিত্য তথা সংসৃকতি প্রতিবাদী লেখকের জগতে ইন্দ্রপতন৷ চলে গেলেন ত্রিপুরা রাজ্যের অন্যতম বরিষ্ঠ লেখক, সাহিত্যিক, স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা প্রাউটিষ্ট দেবব্রত গুপ্ত৷ তাঁর ক্ষুরধার লেখনী রাজ্যের পাঠকদের অনুপ্রাণিত করেছে৷ জীবন সায়াহ্ণে তার লেখনী ও চিন্তাধারা প্রাউট প্রচারকে ত্বরান্বিত করেছে৷ আজ সকালে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ সবদিকে ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে আসে তার পাঠক ও অনুগামীদের মধ্যে৷ রাজ্য হারালো এক তেজদীপ্ত ব্যষ্টিকে৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর৷ ১৯২৭ সালে বাঙলাদেশের কালীগুচ্ছ গ্রামে তাঁর জন্ম৷ ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পড়েন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন৷ দেশভাগের পর চলে আসেন হিন্দুস্থানে৷ ষাটের দশকের গোড়ায় তিনি প্রাউট দর্শনে আকৃষ্ট হয়ে নিজেকে ক্রমশঃ একজন প্রাউট তাত্ত্বিক হিসেবে গড়ে তোলেন৷

তাঁর তথ্যভিত্তিক সুমধুর বক্তব্য রাজ্যের প্রাউট অনুগামীদের মধ্যে বিশেষ প্রভাব রেখে গেছে৷ সাদাসিধে জীবনকেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন৷ একসময় বিশেষ করে সত্তরের দশকের শেষে ও আশির দশকের গোড়ায় ‘আমরা বাঙালী’ দলের আন্দোলনে তিনি দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন৷ তৎকালীন সময়ে ‘আমরা বাঙালী’র সেই তুমুল আন্দোলনে তাঁর সহকর্মী ছিলেন প্রাক্তন দিক্পাল জননেতা প্রয়াত ভূবনবিজয় মজুমদার৷ সেই সময় প্রয়াত জননেতা ভূবনবিজয় মজুমদার ও দেবব্রত দত্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিলেন৷ বিশেষতঃ ত্রিপুরা স্বশাসিত জেলা পরিষদ ঘটনের সময় সামনে থেকে তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন দু’জনেই৷ ছাত্রাবস্থায়ও তাঁর সহকর্মী ছিলেন প্রয়াত ভূবনবিজয় মজুমদার৷  ছাত্রাবস্থায় প্রথম দেবব্রত দত্ত নেতাজীর তৈরী করা বেঙ্গল ভলেণ্টিয়ার্সের সদস্য ছিলেন৷ আনন্দমার্গ তথা প্রাউট দর্শনে যুক্ত হওয়ার আগে তিনি বর্তমানে অবলুপ্ত ত্রিপুরা প্রজা সোস্যালিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করে গেছেন৷ জরুরী অবস্থার সময় তিনি নাসা আইনে আটক হয়ে ভেলোর জেলে একমাস সাতাশ দিন বন্দী ছিলেন৷ তাছাড়া ‘আমরা বাঙালী’ আন্দোলনে যুক্ত হয়ে তিনি একচল্লিশ বার কারাবরণ করেছিলেন৷ ‘আমরা বাঙালী’ দলের হয়ে তিনি ১৯৮৩ সালে কল্যাণপুর ও ১৯৯৩ সালে খোয়াই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ও মর্যাদাপূর্ণ ভোট পেয়েছিলেন৷ রাজনীতির পাশাপাশি সাংবাদিকতা ও সমাজসেবায় নিজেকে তিনি যুক্ত রেখেছিলেন৷ তিনি দীর্ঘদিন ‘জাগরণ’ পত্রিকার সম্পাদনারও কাজ করে গেছেন৷ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে তাঁর চিন্তাধারার সাথে অনেকে সহমত পোষণ করেছিলেন৷

তাঁর প্রয়াণে একটি রাজনীতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল৷ রাজ্যের লেখালেখির ক্ষেত্রে একটি প্রতিবাদী কণ্ঠেরও অবসান হ’ল৷ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর জ্বালাময়ী প্রতিবাদী লেখা প্রকাশিত হ’ত৷ গুরুতর অসুস্থতাও তাঁর লেখনী স্তব্ধ করে দিতে পারেনি৷ ‘নোতুন পৃথিবী’ পত্রিকাতেও তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রবন্ধ লিখতেন৷