দলতন্ত্রের সংকীর্ণবাদী সরকার দেশের গণতন্ত্রকেই ধবংস করছে!

লেখক
প্রভাত খাঁ

এ দেশের নির্বাচন ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা দেশের শাসন নির্ধারিত হয়৷ এই নির্বাচন পদ্ধতি একদিকে যেমন বিরাট ও বিশাল ঠিক তেমনই এতে যাঁরা নির্বাচিত হয়ে আসেন তাঁদের কিন্তু বোটারগণ সরাসরি কোন বিষয় তুলে কৈফিয়ৎ তলব করতে পারেন না৷ তবে হ্যাঁ পরবর্তীকালে যদি  তিনি নির্বাচনে দাঁড়ান তখন বোটারগণ মনে করলে বোট দিতে পারেন আবার নাও দিতে পারেন৷ অন্যান্য দেশে বোটারগণ তাঁদের ‘রি -কল’ করতে পারেন, এখানে তা হয় না৷

এই নির্বাচন পদ্ধতিটি চলে আসছে নিম্নতম স্তর থেকে উচ্চতম স্থান পর্যন্ত৷ গ্রাম স্তর থেকে দীর্ঘতম স্থান কেন্দ্র পর্যন্ত৷ এমনকি এন.জি.ও.স্তরেও এটা প্রচলিত৷ বোট দান করাটা বোটারদের নৈতিক দায়িত্ব তবে যদি কেউ না বোট দান করেন তাতে কিছু এসে যায় না৷ এটি বাধ্যতামূলক নয়, বর্তমানে ১৮ বছর বয়স হলেই বোটার হতে পারেন দেশের স্থায়ী বাসিন্দারা৷ তাঁদের কোন গুণগত মান-এর দরকার হয় না৷ ব্যালট পেপারে প্রার্থী ও তাঁর প্রতীক চিহ্ণের পাশে দাগ দিয়ে গোপন ব্যালেটে বোটদান হয় কোন নির্ধারিত দিনে সকাল থেকেপ্রায় সন্ধ্যা পর্য্যন্ত৷ এছাড়া অন্য কোনভাবে সাধারণ বোটারগণ বোটদান  করতে পারেন না৷ জয়ের জন্য এদেশে কোন বিশেষ নূ্যনতম সংখ্যা নেই যা বোটারদের পেতে হবেই৷ বোটার নিজের বোট আর সমর্থকদের কিছু বোট যদি পান আর যদি বোট কেউ নাও দেন তাহলেই তিনি বিজয়ী ঘোষিত হন৷ তবে  প্রতিদ্বন্দ্বি যদি না থাকেন তাহলে বোটে প্রশ্ণ নেই৷ তিনি বিজয়ী হিসাবে ঘোষিত হন৷ অন্যদেশে নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে বুথে ব্যালট বক্সে সংখ্যাধিক্য বোট অন্ততঃ একটি বেশী বোট পেতে হয়৷ দেখা গেছে প্রদত্ত বোট অন্তত ৫১ শতাংশ মোট বোটারদের বোট দান করতে হয় কোথাও কোথাও৷ এখানে তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই৷ যে কোন নির্বাচন কেন্দ্রে একাধিক বোটার নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন নূন্যতম বিধিকে মান্যতা দিয়ে৷ বোট পদ্ধতি হয়তো খুবই সুন্দর ও ত্রুটিমুক্ত কিন্তু এরপরও দেখা যায় নির্বাচনে  জয়ী হয়ে যারা তাঁদের অনেকেই দেখা যায় তাঁদের কাজে কর্মে আসেন অনেক অনিয়ম তখন কিন্তু বোটারগণের কোন কিছুই প্রতিবাদ করার সুযোগ নেই৷ তাঁরা স্বেচ্ছাস্বাধীন হয়েই কাজ করেন৷ যে তবে দলের প্রার্থী সেইদল তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন৷  প্রার্থী যে প্রতীকে জনসমর্থন পেয়ে দাঁড়িয়েছেন সেই প্রতীকে দাড়ানোটা ও সেই দল ও দলের নিয়মকানুন মান্যতা দান আবশ্যিক৷ এই বিধান ছিল বহুবছর আগে পর্যন্ত৷ কিন্তু দেখা গেল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর শাসনে মাননীয় রাজীব গান্ধীর আমলে লোক সভায় আইন পাশ হলো যদি কোন বিরোধী দলের  বেশী সংখ্যক ঐক্যবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে গিয়ে অন্যদলে যোগদান করে সেটাকে আইন সিদ্ধ করা হয়৷ এতে গণতন্ত্রে দেখা দেয় এক মারাত্মক জটিলতা ও অন্যায়৷ যে প্রতীকে বোটারগণ প্রার্থীকে বোট দান করে বিজয়ী করেছেন সেটিকে অস্বীকার করে তারা অন্য দলে চলে গেলেন! এতে বোটারদের কী অস্বীকার করা হলো না? তবে যদি কোনদলের নির্বাচিত জন প্রতিনিধিগণ বাহির থেকে বা কোন সংখ্যালঘু দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সংখ্যাগরিষ্ট হয়ে শাসনে যায় তাতে কোন অন্যায় হয় না৷ সেই সরকার হয় মিলিজুলি সরকার৷ যেটা যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কাম্য৷ কারণ একদলীয় সরকার এর প্রবণতা থাকে স্বৈরাচারিতা করার৷ যেটা এদেশে দেখা যায়৷ এক দলীয় সরকার  অনেক সময় সংখ্যার জোরে সংবিধান সংশোধন করে থাকে৷ যেটা হয়তো গণতন্ত্র বিরোধী হয়ে যায়৷ ঘনঘন সংবিধান এর ধারা পরিবর্ত্তনে ক্ষতি বই ভালো হয় না৷ এদেশের গণতন্ত্রে আমরা প্রত্যক্ষ করছি সংখ্যাগরিষ্ট দল সংখ্যাধিক্যের উপর বেশী জোর দিয়ে থাকে৷ এমনও দেখা যায় বিরোধীদের বক্তব্যকে মোটেই আমল দেওয়া হয়না৷  বিরোধীদের অগ্রাহ্য করে আইন পাশ করানো হয়৷ এমনকি  এমনও দেখা যায় রাজ্যের বিরোধী সরকার যদি  কোন আইন বিধান সভায় সংখ্যাধিক্যে গ্রহণ করেন কেন্দ্র সরকার বিরোধী রাজ্যের আইন কে কেন্দ্র করে সরকার তার মনোনীত রাজ্যপালদের দ্বারা পাশ করাতে কালহরণ করে থাকে৷ এটা গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত কুৎসীত ব্যাপার ! জটিলতা সৃষ্টি  করার  প্রবণতাটা বেশী বাড়ছে এদেশে৷ অত্যন্ত লজ্জার  দুঃখের কথা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কেন্দ্রের সরকার সংবিধানের মূলনীতিটাকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছে যেটা অসাংবিধানিক৷ মনে পড়ে এই পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস আমলে ডাঃ বিধান রায় কমিউনিষ্ট বিরোধী নেতা জ্যোতি বসুকে  কিছু বলতে অনুরোধ  করতে৷ তাঁর বক্তব্য যদি তিনি না উপলব্ধি করতে পারতো তাঁর ঘরে গিয়ে তাঁকে সেটি ব্যাখ্যা করতে বলতেন তার সঠিক কারণ বুঝতে৷ আজ সেটা একেবারে উহ্য হয়ে গেছে৷ তাই গণতন্ত্র বাঁচাতে এদেশে সকল বিরোধী দলের উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য কাজ করা৷ বিরোধীরা যাতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে মনে হয় সেই কারণে কেন্দ্র সরকার নানা কৌশল অবলম্বন করে চলেছে যাতে তারা মাথা চাড়া  না দিতে পারে৷ এটি বিরোধী দলগুলির অভিযোগ ৷ অতীতে আমরা লক্ষ্য করেছি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী  ইন্দিরা গান্ধী দেশে লোকসভাকে না জানিয়ে দলীয় স্বার্থে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফকিরুদ্দিনকে দিয়ে স্বাক্ষর করে দেশে জরুরী অবস্থা জারি করে দেশকে কারাগারে পরিণত করেন৷ তবে জনতা সরকার কেন্দ্রে এসে দেশে সেইভাবে জরুরী অবস্থা জারি করা যাবে না বলেই  নাকি আইন করে যায়৷ অনেকে তাই অভিযোগ করছে যে বর্ত্তমান সরকার সিবি আই ও ইডিকে দিয়ে বিরোধী  রাজ্যগুলিকে ধবংস করতে  অতি সক্রিয়তা দেখাচ্ছে সেই রাজ্যগুলিতে যাতে রাজ্যগুলি বিরোধী শুন্য হয় যায়৷ এমন কি  বিরোধী দলের রাজ্যগুলিতে দলভাঙ্গাতে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা দিয়ে দল ভাংগীয়ে দলগুলোকে কব্জায় করছে কেন্দ্র৷ কিন্তু  খোদ কেন্দ্র সরকারের পরিচালিত রাজ্যগুলিতে যেসব কাণ্ড ঘটছে সেখানে কেন্দ্র সিবিআইকে  দিয়ে তদন্ত  করছে না৷ তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও৷ পশ্চিমবঙ্গের  মুখ্যমন্ত্রী তাই ক্ষতি সক্রিয়তার সিবিআই এর  কথা উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ এতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রের সমদর্শিতার অভাব নাকি দেখা  যাচ্ছে এটাই  তাঁর বক্তব্য৷

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন করাটাই আইন সিদ্ধ৷ কিন্তু গুণ্ডামী করে সরকারী সম্পত্তি ধবংস ও জনগণের সম্পত্তি নষ্ট করাটা আইন সিদ্ধ নয়৷ এই ধরণের কাজ সম্প্রতি বিজেপি রাজ্যকমিটি ঘটিয়েছে বিরোধী দল শাসিত রাজ্যে৷ তারা আন্দোলনে আধলা ইটের খণ্ড ছুঁড়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়ে চরম অশান্তি ও অরাজকতাকেই প্রশ্রয় দিয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে৷ এই উস্কানী নাকি দেওয়া হয়েছে দলকে উপর মহল থেকেই৷ এটা চালিয়ে যাওয়ার সংবাদও নাকি পাওয়া গেছে এইসব ঘটনার প্রেক্ষিতে৷ এটাতে রাজ্যের জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে! এতে তো সারা দেশে এক অশান্তি চরমভাবেই প্রকাশ পাবে না কী? এর ফলে দেশের প্রবীন নাগরিকগণ অত্যন্ত ক্ষুদ্ধই হবেন রাজনৈতিক দলগুলির নোংরামীতে! তাই বোট দানে অনেকেই বিরত থাকেন৷ সাধারণ মানুষের কষ্টের শেষ নেই! চরম দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ও বেকার সমস্যায় জনগণ একেবারে ক্লান্ত! ধনীরা ও রাজনৈতিক শাসকদলই সুখে আছেন৷ ধনীদের শ্রীবৃদ্ধির হয়েই চলেছে৷ তাই পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনীব্যষ্টিই ভারতের বাসিন্দা৷ দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে দেশে৷ মহামান্য সুপ্রিমকোর্টের উপদেশ হলো কেন্দ্রের সিবিআই ও ইডি এবং অন্যান্য তদন্ত সংস্থাগুলিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে না রেখে তাদের স্বাধীন সংস্থা হিসাবে কাজ করার অধিকার দিলে তবেই তারা সেই খাঁচায়, বন্দী পাখীর দশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশকে প্রকৃত দুর্নীতিমুক্ত করতে কিছুটা সক্ষম হবে৷ শুধু বিরোধী রাজ্যে হানা দিলে মনে হয় এটি সংকীর্ণ বিশেষে রাজনৈতিক দলের শাসকদের অঙ্গুলি হেলনে উঠছে আর বসছে সিবিআই৷ যেটি সেই ইন্দিরার আমলে অতীতে হয়েছিল৷ তাই তাঁকে কিছুটা গদি হারিয়ে শিক্ষা পেতে  হয়৷ নোংরা দলবাজির জন্যই শাসকদলের প্রতি জনগণ বিশ্বাস হারাচ্ছেন৷ বোট দানের সংখ্যা কমছে৷ তাই দলবাজি ছেড়ে শাসকদলকে জন সেবায় মন দিতে হবে তাঁদের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা ফেরাতে৷ মনে রাখতে হবে রাজা অর্থাৎ শাসকের নীতি রাজনীতি নয়৷ নীতি রাজাই হলো রাজনীতি যাকে রাজধর্ম পালন করা বলে কারণ শাসক হলেন সকলেরই রক্ষক৷ শাসককে তাই ন্যায় ও নীতির পথ ধরে এগুতেই হবে৷ তাকেই বলে রাজধর্ম৷ কল্যাণার্থে যা প্রয়োজন তাই করতে হবে শাসককে৷ সেখানে দলীয় স্বার্থ সিদ্ধি করাটা অপরাধ নয় কী?