একটি ঐতিহাসিক তথ্য

লেখক
পত্রিকা প্রতিনিধি

(এক সংবাদ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া পরম শ্রদ্ধেয় শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকারের ব্যতিক্রমী একমাত্র সাক্ষাৎকার৷ মাধব বসাক কর্তৃক সংগৃহীত ও ইংরেজী থেকে বাংলায় অনূদিত৷)

গত শতাব্দীর সাতের দশকে জরুরী অবস্থার সময় শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকারকে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের ষড়যন্ত্রে  দীর্ঘদিন জেলে কারারুদ্ধ থাকতে হয়৷ জরুরী অবস্থার অবসানের পর ১৯৭৮ সালের ২রা আগষ্টতিনি পাটনা জেল থেকে ছাড়া পান৷ তিনি বরাবরই নিজেকে বাইরের জগৎ থেকে আড়াল করে রেখে সংঘটনের কাজে ব্যস্ত থাকতেন৷ কিন্তু তার জীবনকালে সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া একমাত্র সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল সর্বভারতীয় এক পাক্ষিক পত্রিকা ইন্ডিয়া টুডেতে ১৯৭৮ সালের ১-১৫ই আগষ্টে প্রকাশিত সংখ্যায়৷  এই ব্যতিক্রমী সাক্ষাৎকারটি ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করা হচ্ছে৷ সংবাদটির শিরোনাম ছিল The Mystery Man৷ শ্রী সরকারের ব্যষ্টিগত সহকারীকে ‘ইন্ডিয়া টুডে’র পক্ষ থেকে দেওয়া প্রশ্ণমালার উত্তর তিনি তাঁর ব্যষ্টিগত সহকারী মারফৎ পত্রিকাকে দেন জেল থেকে মুক্‌তি পাবার আগের দিন৷

প্রশ্ণ ঃ   উচ্চ আদালতের রায়ে আপনার মতামত কী? সারা পৃথিবী জুড়ে আপনার অনুগামীরা যখন এই দিনটিকে ‘ধর্মের জয়’ বলে উদ্‌যাপন করছেন তখন আপনি কোনও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেননি৷ আপনার এক অনুগামীর মতে আপনি জেল মুক্তির খবর শুনে পুরোপুরি নির্বিকার ছিলেন৷ এটা কি এই জন্য যে কোনও কিছুতেই আপনার কোনও প্রতিক্রিয়া হয় না? যদি তাই হয় তবে কেন?

উত্তর ঃ ধর্মের জয় একটি স্বাভাবিক ঘটনা৷ যা কিছুই স্বাভাবিক তাই স্বাভাবিক শীতলতার সঙ্গে(coolness) গ্রহণ করা উচিত৷

প্রশ্ণ ঃ   আপনার সমর্থকদের অভিযোগ যে আপনি  ও আপনার সংস্থা সুপরিকল্পিতভাবে জঘন্য অপপ্রচারের শিকার আর এটা কিছু এজেন্সি আপনার সংস্থাকে ধবংস করার অভিপ্রায়েই করেছে৷ বিশেষ ভাবে তারা বিগত সাত বছরে আপনার জেলে থাকা অবস্থায় আপনার সংস্থার ক্ষতি হয়েছে বিপুলভাবে৷ এখন সমস্তভিযোগ থেকে আপনি মুক্ত৷ এক্ষেত্রে জনসাধারণের মনে আপনাদের সম্বন্ধে যে ভুল ধারণা আছে তা দূর করে সংস্থাকে আবার দাঁড় করবারকী পরিকল্পনা আছে?

উত্তর ঃ আমরা আমাদের মানবিক কর্তব্য ‘পরাগতির সঙ্গে জাগতিক ক্ষেত্রে সন্তুলন(Subjective approach and objective adjustment) বজায় রেখে এগিয়ে চলতে থাকব৷

প্রশ্ণ ঃ যোগাযোগের অভাবের জন্য অতীতে জনসাধারণের মনে আপনাদের সম্বন্ধে প্রচুর ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে৷ জনসাধারণের মন থেকে এই ভুল ধারণা দূর করবার জন্য আপনার কি মনে হয় যে এবার আপনার জনসংযোগ করা দরকার? আপনি অতীতে কেন সকলের আড়ালে থেকে জীবন কাটাতেন?

উত্তর ঃ জনসাধারণের সামনে এসে ব্যষ্টিগত ভাবে আমার জনসংযোগ রাখার প্রয়োজন নেই কারণ প্রকৃত সেবামূলক কাজ করছে সংস্থার কর্মীরা৷ আমি শুধু তাদের সাহায্য করি৷

প্রশ্ণ ঃ   যে গতিতে আনন্দমার্গ বর্হিভারতে ছড়িয়ে গেছে আর বিপুল সংখ্যক লোককে আকর্ষণ করেছে তা অনেকের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে যে এটা বিদেশী সাহায্য ও অনুদানেই সম্ভব৷ তাছাড়া আপনারা অতীতে কেজিবি বা সিবিআইয়ের নাম করে আক্রমণ করলেও সিআইয়ের নাম তেমন ভাবে উল্লেখ করেননি৷ এই অভিযোগের কী জবাব দেবেন?

উত্তর ঃ   সিআইএ আনন্দ মার্গের কোনও ক্ষতি করেছে কিনা আমার জানা নেই৷ কেউ যদি এ বিষয়ে আমায় যথেষ্ট প্রমাণ দিতে পারেন তবে আমি নিশ্চয়ই তাদের নিন্দা করব৷ আমার কোনও সংস্থার প্রতি দুর্বলতা নেই৷ ভালো লোকের সঙ্গে সহযোগিতা করা ও মন্দ লোককে দ্বর্থহীন ভাষায় নিন্দা করাই উচিত৷

 প্রশ্ণ ঃ  এটা বলা হয় যে আপনি রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে পৃথিবীতে ‘সদ্‌বিপ্ররাজ’ প্রতিষ্ঠা করতে চান৷ যদিও সন্দেহ নেই যে তা আদালতে  অপ্রমাণিত৷ কিন্তু একই সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়ার সময় আপনার লেখা একটি বই আদাতকে দেখানো হয় ও তাাতে আপনি লিখেছেন ‘শক্তি প্রয়োগ জীবনের সারমর্ম’ Violence is the essence of life)৷ এ বিষয়ে আপনার মত কী?

উত্তর ঃ   আদালতে আমি যা বলেছি সেটাই শেষ কথা৷ আমি যে শব্দবন্ধ বলেছিলাম তা হ’ল ‘সদ্‌বিপ্র সমাজ’---‘সদ্‌বিপ্ররাজ’ নয়৷ ‘রাজ’(rule)

 

সমাজের(society) একটি  ক্ষুদ্র ভগ্ণাংশ মাত্র৷ শক্তিপ্রয়োগ সম্বন্ধে আমার মত ইতোমধ্যে ব্যাখ্যা করেছি৷ শক্তি প্রয়োগ সবসময় হিংসা নয় বলেই মনে করি৷ আমার মতামত হ’ল শক্তি প্রয়োগ ও অহিংসা পাশাপাশি চলতে পারে৷

প্রশ্ণ ঃ   আপনার কি কোনও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে? দুর্নীতিমুক্ত সমাজ হ’লেই আপনার পছন্দের সমাজ হবে৷ কিন্তু সেরকম সমাজ কী ভাবে প্রতিষ্ঠিত  করবেন? রাজনীতিতে অংশ না নিলে কি সেটা সম্ভব?

উত্তর ঃ   আমার কোনও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই৷ সমাজের উন্নতির জন্যই প্রাউট তত্ত্ব তৈরী করেছি৷ যারা এই তত্ত্বকে ভালোবাসে তারাই এর প্রতিষ্ঠা করবে৷

 প্রশ্ণ ঃ  গণতন্ত্র সম্বন্ধে আপনার মতামত কী?

উত্তর ঃ   গণতন্ত্র সার্থক হবে তখনই যখন অন্ততঃ পক্ষে শতকরা ৫১ জন ভোটারের নৈতিকতা, শিক্ষা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক- রাজনৈতিক বিচারশীলতা থাকবে৷ নাহ’লে গণতন্ত্র সমাজকে বোকা বানানোর যন্ত্র হয়েই থাকবে৷