হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের শোষণ বজায় রাখতে বিধায়কের মুখে বাঙলা ভাগের বুলি

লেখক
নিরপেক্ষ

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অখণ্ড বাঙলার যে দাবী ছিল সেই দাবীকে অগ্রাহ্য করে চতুর সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ অখণ্ড ভারতবর্ষকে তিন টুকরো করে ভারতবর্ষের দু’টো ডানা মুসলীমলীগের দাবী মেনে পাকিস্তান আর মধ্যভাগে রাখে ভারতযুক্তরাষ্ট্রকে৷ স্বাধীনতা লাভের পূর্বে কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এই বলে যে বাংলাকে তার সীমান্তবর্তী রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত অংশগুলি  বাংলাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে৷ কংগ্রেস শাসন ক্ষমতা পেয়ে সেটা করেনি কারণ একটাই তা হলো যদি বাংলা অসমে, বিহারে ও উড়িষ্যায় যে এলাকা বাংলার যুক্ত হয় তা ফেরত পেলে রাজ্য আকারে পশ্চিমবঙ্গ  অনেক বড়ো হবে৷  আর নির্বাচনে এমপি  ও এম.এল.এদের  সংখ্যা বেশী হবে তাতে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীদের অসুবিধা হবে৷ এইভেবে কংগ্রেস সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি৷ অন্য দিকে বাঙলার যে অংশ অসমকে দেওয়া হয় বিশেষ করে বাঙালী অধ্যুষিত বরাক উপতক্যা সেখানে স্বাধীনতার পর থেকেই বাঙালীকে বিদেশী বানাবার চক্রান্ত শুরু হয়৷ আর বর্তমানে ভূমিপুত্র বাঙালী নারী পুরুষ ও তাদের ছেলে মেয়েদের  ওপার বাংলার বলে নাগরিকত্বহীন ঘোষণা করে বন্দী করে আটক রাখছে অসমের মাটিতে৷ তার কারণ সংখ্যা লঘু অসমীয়াদের সংখ্যাগরিষ্ঠ করে দেখাতে! এটাই  হলো এদেশের বাঙালী বিদ্বেষী নোংরা রাজনীতি গণতন্ত্রের নামে৷ পশ্চিম বাংলাটাতো নাম মাত্র একটুকরো জমি! সেটাও এদেশের   রাজনৈতিক নেতারা ভাগ করার ষড়যন্ত্র  করছেন৷  মনে পড়ে  সিপিএম রাজ্যে শাসনভার নিয়ে  বাম আমলে তারাও  নেপালের গোর্র্খদের  গোর্খাল্যাণ্ড আন্দোলন ‘বুকের রক্ত দিয়ে রুখবো ‘‘শ্লোগান দেয় কিন্তু ঘিসিংকে দাঁড় করিয়ে গোর্র্খ পার্বত্য পরিষদ ঘটন করে৷ তখন জনতা দলের প্রধানমন্ত্রী গোর্খাদের বাড়াবাড়ি দেখে দার্জিলিং গিয়ে বলেছিলেন  মাননীয় মোরারজী দেশাই যে তারা নেপাল গিয়ে গোর্খাল্যাণ্ডে আন্দোলন করুক এখানে নয়৷ ইন্দিরাজীও এটা পছন্দ করতেন না, কিন্তু জ্যোতি বসু  গোর্খাদের তুষ্ট করতে পার্বত্য পরিষদ করে সর্বনাশ  করে যান৷ শেষে  ঘিসিং  বিদায় হয় কিন্তু  পরেও আন্দোলন  চলে  তার সাকরেদদের চেষ্টায়৷ মমতাজী এক ধাপ এগিয়ে জি.টি.এ দেন সেটা আরো উন্নত ধরণের৷ এবার দেখা যাচ্ছে তারা বিধানসভায় দিল্লীর বিজেপির ইনধনে  সেই  এক খণ্ড পশ্চিমবাঙলাকে ভাগ করার ঢেঁকুর তুলছে আর তাদের মদৎ দিচ্ছে সেই তৃণমূলের দলত্যাগী বিজেপি এম.এল.এরা৷ এটা যে  কতটা বিপদজনক সেটা তারা  বুঝছে না৷ কারণ এটা তো সেই মীরজাফরের দেশ৷ যারা দেশকে  ইংরেজের হাতে তুলে দেয় বিশ্বাসঘাতক হিসাবে ! তাই বাজেট আলোচনাতে রাজ্যবিধান  সভায় সেদিকে  ভালোটা চোখে  দেখতে না পাওয়ার ভান করে একটু করে পশ্চিমবাঙলাকে ভাগ করে দিল্লি বিজেপি সরকারকে  উপঢৌকন দিয়ে সেই মীরজাফরই হতে চায়! ধিক এই নোংরা রাজনীতি৷ এটা এই রাজ্যের কলঙ্ক৷ বাঙলার সচেতন জনগণকে ধন্যবাদ তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংকীর্ণতাবাদী চিনে নিয়ে  এক খণ্ড বাঙলাকে ভারত যুক্তরাষ্ট্রে রক্ষা করেছেন গত বিধানসভা নির্বাচনে৷ এর  তীব্র প্রতিবাদ করেছেন দিনহাটার উদয়ন গুহ ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন বিজেপি বারবার পশ্চিমবাঙলা ভাগের কথাই বলে৷  বাঙলার গরিমা ও ঐতিহ্য সম্বন্ধে তাদের কোন ধারণাই নেই৷ নির্বাচন আসলেই তারা একথাই বলে কারণ এই সচেতন বাঙলাকে টুকরো করতে পারলেই রাজ্যে ও কেন্দ্রে তারা (বাংলা) দুর্বল হয়ে যাবে তাতে সারা ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা শোষণ চালাবে একথা সারা বাঙলার সচেতন নাগরিকগণ মনে করেন৷ এতে বাঙলার বিরোধী দলের একটা বিদ্বেষই প্রকাশ পায়৷ আমরা বাঙালী দলের পক্ষ থেকে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী দাবীকে তীব্রভাবে প্রতিবাদ করে৷ বাঙলায় প্রতিটি জেলাকেই আর্থিক উন্নয়নে বাজেট অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনা সত্ত্বেও৷ তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী উত্তর বঙ্গের উপর অধিক নজর রাখেন তাঁর সহানুভূতিশীল মানসিকতা নিয়ে৷ সেখানে যে যথেষ্ট ব্লক ও পঞ্চায়েতগুলিতে  আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে রাজ্য সাহায্য দেন সেটা কি বিরোধীরা ভুলে গেছেন? তাই বিধানসভার মর্যাদা রক্ষা করাটাও তাঁদের কাজ৷ এই ধরনের প্রার্থীদের  বিধানসভায় পাঠানোটা মোটেই কাম্য নয় রাজ্যের ৷ তাই বোটারগন সচেতন হোন৷