কেন্দ্রীয় সরকার সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনে মন দিক

লেখক
এইচ.এন. মাহাতো
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদীজী বাঙলা জয়ের নেশায় দীর্ঘ আট দফার ম্যারাথন নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দিল্লী কোলকাতা ডেইলি যাত্রী ও প্রচারের কাজে  হাজার করোনার রুগীকে বাঙলায় এনে যে করোনার বিষ বপন করেছেন তা আজ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে৷ ভারতের করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে৷ মোদী সরকার  করোনা সংক্রমণ রোধে কাজের কাজ কিছুই করছে না৷ সমগ্র পৃথিবীর সঙ্গে ভারত এর প্রকোপে জর্জরিত৷ বিভিন্ন দেশ অনুমতি সাপেক্ষ এই রোগের প্রতিষেধক টিকা তৈরী করছে৷ ভারতের তৈরী নিজস্ব টিকার নাম কোভাক্সিন৷ ভারত বায়োটেকে এর প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে৷ অপর দিকে আর একটি টিকা পুনে থেকে কোভিশিল্ড সিরাম ইনস্টিটিউট তৈরী করছে তাহাও প্রয়োগ শুরু হয়েছে যাহা অক্সফোর্ড এর ফর্মুলায়৷ এই টিকাটি ভারতে অন্য কোথাও তৈরী করতে হলে পারমিশন লাগবে অক্সফোর্ডের৷ তাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কিছু পরিমাণ পাঠাতে হবে ইংল্যাণ্ডে৷ এখন প্রশ্ণ হলো ভারতে টিকার সরবরাহ প্রয়োজন অনুপাতে খুবই কম৷ তার উপর ভারতের বেনিয়া কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার বৈদেশিক মুদ্রা আমদানি করতে কয়েকটি দেশে টিকাকে বিক্রয় ও দান করতে গিয়ে ভারতের জনগণকে টিকা থেকে বঞ্চিত করছে৷ সেই দিকেও তাদের সঠিকভাবে নজর নেই৷ গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রী করোনার টিকা, স্যানিটাইজার ঔষধ ও বিভিন্ন  প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উপর অতিরিক্ত কর বসিয়ে কেন্দ্রের তহবিল তৈরী করতে উঠে পড়ে লেগেছে৷ এই মহামারী থেকে কে বাঁচবে কে মরবে তার দিকে নজর না দিয়ে ব্যবসা করতে শুরু করেছে৷ কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার দুঃস্থ মানুষের দিকে সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে লাভ ক্ষতির চিন্তা করছে৷ ভারতে এই মুহূর্তে প্রায় ছোট বড় ৩৫০০ টি ঔষধ প্রস্তুতকারী সংস্থাকে জরুরী ভিত্তিতে অনুমোদন দিয়ে কাঁচামাল সরবরাহের মাধ্যমে টিকার তৈরীর বরাদ্দ দিলে ভারতের  টিকার দামও কম হোতো ও চাহিদা যেমন মিটত তেমনি বিদেশে টিকা পাঠিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও উপার্জন করতে পারতো৷ এই টিকা তৈরী করতে কোন বহিরাগত সংস্থার অনুমতির প্রয়োজন হতো না৷ ভারতের বর্তমান কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার বহুজাতিক সংস্থার কাছে নিজেকে বিক্রি করে মেরুদণ্ড হীন ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে৷ পুঁজিবাদী বহুজাতিক সংস্থার ইসারা ছাড়া তাদের আর কিছু করার নেই৷ কেননা প্রতিটি নির্বাচন বৈতরণী পার হতে কোটি কোটি টাকা তাদের কাছ থেকে নিয়ে নির্বাচনের তহবিল তৈরী করে ভোটে জিততে টাকার ফোয়ারা ছুটিয়েছে৷ করোনা পরিণতি নিয়ে তারা চিন্তা করেনি৷ নাগরিক সুরক্ষা আইন অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিম বাঙলার সরকারের একটি ১৯৯৬ সালের কেসের রায় অনুযায়ী বলা হয়েছে সকল নাগরিককে টিকাকরণ (সামাজিক টিকাকরণ যেমন---পোলিও, কলেরা, ট্রাইফয়েট ইত্যাদি) কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে ও রাজ্য সরকারকে দিয়ে নাগরিকদের  বিনা খরচে পরিষেবা প্রদান করবেন৷ করোনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোকে চাপ সৃষ্টি করে চলেছে তাহা নাগরিক সুরক্ষা আইনের পরিপন্থী৷ বর্তমান কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার দায়সারা গোছে পরিকল্পনা বিহীনভাবে কাজ করার ফলে অপর একটি প্রশ্ণ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তৈরী হয়েছে৷  সরকারের বেনিয়া মানসিকতার জন্য নিম্নবর্গের ও নিম্নমধ্যবিত্ত নাগরিকগণের করোনার টিকা নেওয়া বাজারে অসাধ্য হয়ে পড়বে৷ কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারগুলোকে বলেছে আপনারা দেশীয় বা বিদেশী ভেকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছ থেকে সরাসরি কিনতে পারেন তার উপযুক্ত জিএসটি (কর) দিয়ে৷ পাশাপাশি  বলেছেন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল বা সংস্থা তারাও টিকা কিনে অর্থের বিনিময়ে সাধারণ মানুষকে দিতে পারেন৷ বাজারে এর পরিণতি কী হতে পারে তার দায়বদ্ধতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকলো না৷ কালোবাজারীদের হাতে টিকা কেনা-বেচা মুক্ত করে দিলেন৷ বর্তমানে অক্সিজেন সিলিণ্ডার খোলা বাজারে থাকার ফলে মুক্ত বাজারে সিলিণ্ডারের আকাশ ছোঁয়া বা লাগাম ছাড়া দাম করে দেওয়া হলো৷ ফলে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণে আর থাকছে না৷ তদরূপভাবে পুঁজিপতিরা টিকাকে নিজেদের ইচ্ছে মত দাম নির্ধারণ করবে, দরকার হলে টিকাকে অপচয় করবে, পরিণতি সাধারণ নাগরিক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে৷ কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের উচিত সাধারণ মানুষের দায়বদ্ধতার কথা আগে জরুরী ভিত্তিতে বিবেচনা করে স্থানীয় ঔষধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোকে ঔষধ প্রস্তুত করতে অনুমতি দেওয়া ও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সকল রকমের কর প্রত্যাহার করে সাধারণ নাগরিকের জীবন রক্ষা করে সামাজিক দায়বদ্ধতা পুরণ করা৷ কিন্তু মোদি সরকার সে পথে হাঁটবে কি?