মনে পড়ে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার

লেখক
পথিক বর

 ১৭ই ডিসেম্বর দিনটি আজ আর কেউ মনে রাখেনি৷  কিন্তু ১৯৪২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ভারত বর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন৷ পরাধীন ভারতবর্ষে মেদিনীপুর নামটাই কাঁপন ধরাতো সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের বুকে৷ মেদিনীপুরকে  বাদ দিয়ে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে৷ সেই মেদিনীপুরে তমলুক, প্রাচীন তাম্রলিপ্ত শহরও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে স্বর্ণোজ্জ্বল ভূমিকা নিয়েছিল৷ সেই ১৯০৫ সালে বঙ্গ-ভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে অসহযোগ আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন সবেতেই পুরোভাগে তাম্রলিপ্ত শহর৷

১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে গোটা দেশ যখন উত্তাল, পিছিয়ে থাকলো না গণআন্দোলনের পিঠস্থান তমলুক, শুধু  তমলুকই নয় গোটা মেদিনীপুরই সেদিন গর্জে উঠেছিল সাম্রাজ্যবাদী শাসকের বিরুদ্ধে৷ ৭৩ বছরের বৃদ্ধ মাতঙ্গিনী হাজরা  বুকে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ল৷ তবু দমানো যায় নে  মেদিনীপুরকে, তমলুককে৷ সাম্রাজ্যবাদী শাসকের অত্যাচার যত নৃশংস হয়েছে বিদ্রোহের মাত্রা ততই বেড়েছে৷ তমলুক থেকে ছড়িয়ে পড়েছে, পাঁশকুড়া মহিষাদল, নন্দীগ্রাম, কেশপুর, পটাশপুর....৷

হিটলারের ইহুদি নির্যাতনের কথা ইতিহাসে ফলাও করে পড়ানো হয়৷ কিন্তু মেদিনীপুরে সেদিন ব্রিটিশ বর্বরতা হিটলারকেও ম্লান করে দিয়েছিল৷ ব্রিটিশ লুকিয়ে দিতে চেয়েছিল সেই ইতিহাস, ভারত সরকারও কোনো দিন প্রয়োজন মনে করে নি নব প্রজন্মকে সেই ইতিহাস জানানোর৷

শুরু হয়েছিল ২২ সেপ্ঢেম্বর---শত অত্যাচার নির্যাতন করেও সেদিন স্তব্ধ করতে পারেনি মেদিনীপুরকে--- তমলুককে৷ অবশেষে ১৭ই ডিসেম্বর ১৯৪২ সালে তমলুকে প্রতিষ্ঠিত হল স্বাধীন তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার৷ শিক্ষা, স্বরাষ্ট্র, চিকিৎসা, কারাবিভাগ, পোষ্ট অফিস, জেল খানা, নির্দিষ্ট সেনাবাহিনী একটা সরকারের অধীনে যা যা থাকা দরকাব৷ সবই ছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের৷