সদ্‌ গুরুর মহিমা

লেখক
সুভাষ প্রকাশ পাল

সারা বিশ্বে করোনার বিজয়রথ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে, কেউ তার গতিরোধ করতে সক্ষম হয়নি, ভারতবর্ষও তার ব্যতিক্রম নয়৷ আক্রান্ত দেশ যেমন ব্রাজিল, কানাডা, আমেরিকা, ইতালি প্রভৃতি দেশ থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ভারতবর্ষও তার দেশে লকডাউন পর্ব শুরু করল ২২শে মার্চ থেকে৷ তার আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঘোষনা করেছে ১৫ই মার্চ থেকে সমস্ত সুকল-কলেজ (শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান) বন্ধ থাকবে, বাস, ট্রাম, ট্রেন, বিমান ইত্যাদি সর্বপ্রকার যানবাহন বন্ধ৷ আমরা সাধারণতঃ একদিন বা দুদিনের  বন্ধ দেখেছি, কিন্তু বিগত পঞ্চাশ বছরে ইতিহাসে একটানা মাসাধিক কাল একটা দেশের হাটবাজার,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,যানবাহন, ব্যবসা বানিজ্য সবকিছু বন্ধ আছে---এরকম অভিজ্ঞতা কারো হয়েছে বলে মনে হয় না৷ যাঁরা রোজ সকালে দশটা-পাঁচটা অফিস করেন, সুকল-কলেজ, কল-কারখানা বা বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তাঁরা সবাই হঠাৎ করে কাজ বন্ধ হওয়ার বাড়ীতে থাকছেন, তাও আবার সরকারী নির্দেশনায়,ছাত্র-ছাত্রারাও নিজ নিজ বাড়িতে এযেন পি.সি. সরকারের ম্যাজিক৷ ম্যাজিকম্যান একটা হুইসেল বাজালেন---সমস্ত দেশ অচল হল৷ আবার যেদিন হুইসেলের আওয়াজ শোনা যাবে, তখন সবকিছু সচল হবে, এইরকম একটা অস্বাভাবিক পরিবেশে মানুষের জীবনচর্যাও এলোমেলো হয়ে যেতে থাকল যাঁরা রবিবার  বা ছুটির দিনগুলিতে একটু বেশীক্ষণ ঘুমিয়ে আরাম উপভোগ করতে  পছন্দ করেন, তাঁরা ঘুমের মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন, কিন্তু কতক্ষণ আর ঘুমাবেন! ৭/৮ ঘন্টার বেশী ঘুমান সম্ভব হচ্ছে না, হাতে কোনও কাজও নেই৷ সময় যেন কাটতেই চায় না, একটা অসহনীয় পরিবেশ৷ কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় আনন্দমার্গীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এই লক-ডাউন তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারল না, আনন্দমার্গীদের  সময় তো বেশী হচ্ছেই না, বরং কম হয়ে যাচ্ছে৷ জগদগুরু তারকব্রহ্ম আনন্দমূর্ত্তিজী তাঁর শিষ্যদের  এমনভাবে তৈরী করেছেন যে তাঁরা এই বিপদের দিনেও ঈশ্বরকে স্মরণে রেখে তাঁদের দৈনন্দিন কাজকর্ম সূচারুরূপে করে চলেছেন৷ এটাই সদ্‌গুরুর মহিমা৷

আনন্দমূর্ত্তিজী তাঁর শিষ্যদের মঙ্গলার্থে সারাদিনের কর্মসূচী এমনভাবে তৈরী করে দিয়েছেন যে একজন মার্গী অতিসহজে ২৪ ঘন্টার সদুপযোগ গ্রহণ করতে পারে৷ তিনি মার্গীদের জন্য দিয়েছেন ‘পাঞ্চজন্য’বিধি৷ ভোর পাঁচটাতেই পাঞ্চজন্য শুরু হবে৷ সময়সূচীটি হল--- ভোর ৫টা থেকে ৫-০৫ পর্যন্ত প্রভাত সঙ্গীত, ৫-০৫ থেকে ৫-২০ পর্যন্ত কীর্ত্তন, ও  ৫-২০ থেকে কমপক্ষে ১০মিনিট সাধনা৷

মার্গীরা পৃথিবীর যে যেখানেই থাকুক না কেন তিনি তাঁর স্থানীয় সময় অনুযায়ী ভোর পাঁচটাতেই পাঞ্চজন্য শুরু করবেন৷ মজার ব্যাপার হল কাউকে পাঞ্চজন্যের সময় ঘুম থেকে উঠতে হলে তাঁকে রাত্রি সাড়ে ১০ থেকে ১১টার মধেও ঘুমোতেই হবে, অর্থাৎ ঘুমাতে  যাওয়ার সময় এবং ঘুম থেকে ওঠার  সময় -দুটোই নির্দিষ্ট হয়ে গেল, এরপর মার্গীদের জন্য গুরুদেব দুবেলা সাধনা করার নির্দেশ দিয়েছেন৷ অফিস যাওয়া বা অন্য কোন কাজে তাড়া না থাকলে সাধনাতে প্রতিবার ১ঘন্টা সময় লেগে যাবেই৷ সাধনার পরে আসন ও শরীরচর্র্চ, গুরুদেব তাঁর শিষ্যদের জন্য আসন আবশ্যিক করে দিয়েছেন৷ মার্গীরা তাঁদের শরীরের পক্ষে  উপযোগী আসনগুলি আচার্যের নিকট থেকে শিখে নেন এবং তা নিয়মিতরূপে কমপক্ষে একবেলা অভ্যাস করেন, এর সঙ্গে খালি হাতের ব্যায়াম তো থাকছেই৷ অফিস যাওয়ার তাড়া থাকলে আসন বা শরীরচর্চা করার সময় বেশী থাকে না, কিন্তু লকডাউন চলাকালীন হাতে অনেক সময় থাকায় মার্গীরা নিজের ইচ্ছামত বেশী সময় শরীরচর্র্চ করছেন৷ এরপর স্বাধ্যায় অর্থাৎ অর্থ বুঝে সৎগ্রন্থপাঠ, মার্গী বা মার্গী নয় সকলেরই দিনের যে কোন সময় কিছুক্ষণের জন্য হলেও সদ্‌গ্রন্থ পাঠ করা উচিত৷ আমাদের বাবা-ঠাকুরদারাও তাই করতেন৷ তাঁরা রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, কোরাণ, বাইবেল ইত্যাদি গ্রন্থ নিয়মিত পাঠ করতেন, সদ্‌গ্রন্থপাঠে সৎসঙ্গের ফল পাওয়া যায় ‘সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ৷ স্বাধ্যায়ের পর প্রাতরাশ অর্থাৎ জলযোগপর্ব, যে যার রুচিমত বা সামর্থমত টিফিন করবেন৷ দুপুরে  স্নানাহারের আগে পর্যন্ত যে সময় সে সময়টা বাড়ির কাজ লেখা জোকা বা সেবামূলক কার্যে ব্যয় হবে, আনন্দমার্গীদের জীবনের সেবামূলক কর্মের মূল্য অপরিসীম, গুরুর কথায়--- ‘কর্মই মানুষকে মহান করে তোলে, সাধনার দ্বারা, সেবার দ্বারা ও ত্যাগের দ্বারা মহান হও৷ সারা দেশে লকডাউনের ফলে মানুষ নানা অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন,সেই অসহায় বিপন্ন মানুষদের পাশে দাঁড়ান মার্গীদের অবশ্য করণীয় কর্ম, বিকালেও মার্গীরা সেবামূলক কর্মে অংশ নেবেন৷ করোনা একটি নেগেটিভ বা ঋনাত্মক বাইরাস৷ এই বাইরাসকে প্রতিহত করতে হলে পজিটিভ বা ধনাত্মক মাইক্রোবাইটার মাত্রাকে বাড়িয়ে দিতে হয়৷ সেজন্য এই উদ্দেশ্যে সারা বিশ্বজুড়ে প্রতিমার্গীর বাড়িতে একঘন্টা বা তার বেশী সময় ধরে ‘াা নাম কেবলম্‌’ নাম সংকীর্তন হয়ে চলেছে৷ এই মহা উপকারী কীর্ত্তনের পরেই মিলিত সাধনা, রাত্রির  আহার রাত্রি ৯টার মধ্যেই সমাধান করতে বলা হয়েছে৷ ফলে একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যাঁরা প্রকৃত মার্গী তাঁদের জীবনে বাড়তি সময় বা  তাস বা পাশা খেলে অপচয় করার কোন ফুরসৎ নাই, এটাই সদ্‌গুরু হিসাবে আনন্দমূর্ত্তিজীর সবিশেষ কৃতিত্ব৷