যান্ত্রিক প্রগতির সঙ্গে সঙ্গে দেশকালের ওপর মানুষের আধিপত্য ক্রমশই বেড়ে যেতে থাকে আর তাই একটি বিশ্বরাষ্ট্রের প্রয়োজনও মানুষ মর্মে মর্মে অনুভব করবে ৷ ক্রমশ মানুষকে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে বেশী পরিমাণ মেলামেশা করতে হবে ও এই মেলা-মেশার খাতিরে একে-অন্যকে ভালভাবে বুঝবার চেষ্টাও করতে হবে ৷ মানুষজাতের অজস্র ভাষা৷ প্রতিটিই আমাদের ভাষা---আমাদের সকলকার ভাষা৷ এখানে আমার ভাষা---তোমার ভাষা বা দেশী-ভাষা বিদেশীভাষা --- এ জাতীয় মনোভাব অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ৷ এতটুকু মাত্র বলা যেতে পারে যে আমাদের অনেকগুলি ভাষা আছে, তবে তার মধ্যে মাত্র একটি বা কয়েকটি ভাষায় আমি নিজেকে ব্যক্ত করতে পারি৷
মর্যাদাগত বিচারে বিশ্বের প্রতিটি ভাষা সমান হলেও, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকেদের মধ্যে পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের সুবিধার জন্য মানুষকে একটি সাধারণ ভাষা নির্বাচন করে নিতে হবে সম্পূর্ণ খোলা মন নিয়ে৷ বিশ্বের সর্বত্রই যে ভাষাটির প্রচার রয়েছে, তেমনি একটি ভাষাকেই বিশ্ব-ভাষা রূপে গ্রহণ করতে হবে৷
যতদিন বিশ্ব-রাষ্ট্র সমগ্র বিশ্বের ওপর পুরো রাষ্ট্রিক অধিকার না পাচ্ছে ততদিন বিশ্বের বিভিন্ন অংশের স্থানীয় রাষ্ট্রগুলি নিজেদের সুবিধামত ওই বিশ্ব-ভাষাটা অথবা কোনো স্থানীয় ভাষাকে নিজেদের সরকারী ভাষা রূপে গ্রহণ করতে পারে ৷ যে রাষ্ট্র সরকারী ভাষা রূপে যে ভাষাকেই গ্রহণ করুক না কেন বিশ্ব-ভাষার পঠন-পাঠনে কোথাও কোনোরূপ শৈথিল্য প্রদর্শণ করা উচিত হবে না৷ আমরা কিছুতেই অবশিষ্ট দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছেঁটে ফেলে দিয়ে কূপমণ্ডুক হয়ে সে থাকতে পারি না, জাতীয়তাবাদের(nationalism) নাম করে বিশ্বের অবশিষ্ট ভাই-বোনদের থেকে দূরে থেকে অন্ধকারে মাথা খুঁড়ে মরতে পারিনা ৷
বর্তমান কালে ইংরেজী বিশ্ব-ভাষা হলেও সকল ভাষারই জন্ম ও মৃত্যু আছে৷ সুতরাং অনন্ত কালের জন্যে ইংরেজীই যে বিশ্বভাষা রূপে প্রতিষ্ঠিত থাকবে একথা বলা চলে না৷ যে যুগে বিশ্বজনের মধ্যে যে ভাষার প্রচার দেখা যাবে সে যুগের সেই ভাষাকেই বিশ্ব-ভাষা বলে মেনে নিতে হবে৷
আজকের সমস্যা বই থেকে