কড়ি ঃ কড়ির জন্যে সংস্কৃতে অনেক শব্দ থাকলেও কটিকা ও ক্বথিকা---এই দুটো শব্দই বেশী প্রচলিত৷ প্রাচীনকালে হাটে ৰাজারে লেনদেনে কড়িই বেশী চলত৷ তাম্রমুদ্রা অচল ছিল না৷ তবে ৰাজার-চালু তাম্রমুদ্রার সংখ্যা বা পরিমাণ ছিল কম৷ কড়ি তৈরীর জন্যে টংকশালার (টাকশাল) দরকার পড়েনা৷ তাই লেনদেনে ছিল অবাধ ব্যবহার৷ খুৰ বেশী দামী জিনিসের লেনদেনে টংকক (টাকা) বা রৌপ্যকম (রূপেয়া) ব্যবহার করা হত৷ এই টংকক বা রৌপ্যকমের সঙ্গে সাধারণ মানুষের বিশেষ যোগাযোগ ছিল না৷ এমনকি সাধারণ মানুষ অনেক সময় কড়ির ব্যবহার না করে অদলৰদল প্রথায় কাজ চালাত৷ এই ‘অদল ৰদল’ শব্দটি আমাদের ছোটবেলায় রাঢ়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হত৷ ছোটবেলাতে তাই দেখেছি এক কুনকে চালের বিনিময়ে শাক-মাছ-তরকারি-পোস্ত -নুন-তেল নানান জিনিস কেনা চলত৷ বীরভূমের খয়রাসোল থানায় দেখেছি ছুতোর কাঠের পিলশুজ তৈরী করে হাটে বসে চালের বিনিময়ে তা বেচছে৷ আধুনিক যুগের বার্টার ব্যবসায় প্রথাও কতকটা এই ধরণের৷
তাই যা হোক রূপোর টাকার ব্যবহার খুৰ অল্পই ছিল৷ মুদ্রা মানে সোণাই চলত৷ কিন্তু বাজারে সাধারণ লেনদেনে সোণা বা স্বর্ণমুদ্রার (সীনক) ব্যবহার ছিলনা৷ সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে তাই কড়ি অচ্ছেদ্যভাবে জড়িত থাকত৷ আগেকার দিনে মেয়েরা যে লক্ষ্মীপুজো করতেন তাতে লক্ষ্মীর ঝাপিতে অবশ্যই কড়ি থাকত৷ আমাদের ছোটবেলায় কলকাতায় দেখতুম বিয়েতে ৰরণের সময় ৰরকে ৰলা হত ঃ
‘‘কড়ি দিয়ে কিনলুম, দড়ি দিয়ে ৰাঁধলুম,
হাতে দিলুম মাকু একবার ভ্যা করতো বাপু’’৷
জানিনা কোন কোন ৰোকা ৰর সত্যিসত্যি ভ্যা করত কিনা৷ এখনও আমরা ব্যবহারের ভাষায় টাকাকড়ি,পয়সাকড়ি, মাইনেকড়ি ৰলে থাকি৷ যদিও কড়ি ৰড় একটা চোখে দেখিনা৷
যে সব মায়েদের মৃতবৎসা রোগ ছিল তারা সন্তান যাতে না মরে সেইজন্য ভূমিষ্ট হবার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানকে ধাই (দাই---midwife, সংস্কৃতে ‘ধাত্রী’)---কে দান করত৷ তারপর যেন অন্যের ছেলেকে কিনছে এই রকম ভাণ করে সেই ধাইয়ের কাছ থেকে একটা কড়ি, তিনটে কড়ি, সাতটা কড়ি বা ন’টা কড়ি দিয়ে কিনে নিত৷ আর সন্তানেরও নাম ঠিক তেমনি রাখা হত৷ সেকালে কড়ি নিয়ে বেচাকেনা চলত ৰলেই ছাত্রদের অঙ্ক শিখবার সময় কড়া-ক্রান্তি শিখতে হত৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)