স্বাস্থ্য বিজ্ঞান

শাক

মানুষ যে সকল সহজলভ্য খাদ্য খেয়ে থাকে তার অন্যতম হচ্ছে শাক৷ শব্দটাই বলে দিচ্ছে শাক মানে তাই–ই যা শক্তি জোগায়৷ তোমরা জান অধিকাংশ শাকেই যথেষ্ট পরিমাণ লোহা থাকে যা রক্ত বৃদ্ধির সহায়ক৷ কেবল শাক খেয়েও বেঁচে থাকা যায়৷ তবে শাকের পুষ্টি মূল্য আয়তনের তুলনায় কম৷ বাংলায় ‘শাক’ শব্দটি অত্যন্ত সীমিত অর্থে চলে৷ আমরা শাক বলতে ৰুঝি পালং শাক, নটে শাক, শুশুনি শাক প্রভৃতিকে৷ কিন্তু আসলে cereal বা মূল ভোজ্যের পাশে যা কিছু পার্শ্বভোজ্য (রন্ধনের পদ বা রেস্তোরাঁর মেনু) আছে সবাই শাক পর্যায়ভুক্ত৷ অর্থাৎ শাক মানে যে কেবল ‘সাগ’ [হিন্দিতে] তাই নয়, সব রকমের শাক–সব্জীও শাক৷ অর্থাৎ যে বস্তু মোটামুটি বিচারে vegetable পর্যায়

মানুষ, প্রকৃতি ও ঔষধ

ভেষজ প্রলেপ

কিন্তু মানুষের ও জীবের ঔষধের সন্ধান এই উপবাস, সূর্য্যালোক, জল, বায়ু বা মৃত্তিকাতে সীমিত থাকেনি৷ প্রাথমিক স্তরে মানুষ যে ঔষধের আবিষ্কার করেছিল তা ছিল বিভিন্ন গাছ–গাছড়া ও তাদের ছাল–মূলের বহিঃপ্রয়োগ৷ সেকালের মানুষ ওই সক্ষ জিনিসকে দাঁতে চিক্ষিয়ে রোগাক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিত বা ঘষত৷ এই প্রলেপ ছিল মানুষের আবিষ্কৃত প্রথম ঔষধ৷

ভেষজ দ্রব্যের অভ্যন্তরীণ প্রয়োগ ঃ এই প্রলেপ যেখানে বাইরে কাজ করত না, তখন তাকে শরীরের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার দরকার হ’ত৷ মানুষ তা চর্বন করে বা গলাধঃকরণ করে ঔষধরূপে ব্যবহার করত৷ এটাই ছিল মানুষের ইতিহাসে ঔষধ ব্যবহারের দ্বিতীয় চরণ৷

বাসক ও রাম বাসক

বাসক ও রাম বাসক গাছ পূর্ব ভারতে ভালই জন্মায়৷ রাম বাসক উচ্চতায় তেমন ৰড় হয় না৷ অনেক সময় গাছ একটু ৰড় হলে শুয়ে পড়ে৷ রাম বাসকের সঙ্গে শেয়ালের ন্যাজের কেমন যেন একটা সুদূর সম্পর্ক রয়ে গেছে৷ তাই রাম বাসককে ক্ষলা হয় ক্রোষ্টুপুচ্ছী, ক্রোষ্টুপুচ্ছিকা, ক্রোষ্টুকপুচ্ছী, ক্রোষ্টুকপুচ্ছিকা৷

 বাসক গাছও উচ্চতায় তেমন ৰড় হয় না, কিন্তু ডালপালা শক্ত থাকে৷ এর পাতা ঘন সবুজ ও লম্বা৷ এর সবচেয়ে বেশী গুণ পাতায়৷

বাসক পাতার বা বাসক রসের গুণ কফ মুক্তিতে ও জ্বর প্রতিরোধে৷ সর্দির ক্ষাড়াক্ষাড়িতে ও পালাজ্বরের আক্রমণে বাসকের জুড়ি মেলা ভার৷

                ‘‘বাসি মুখে বাসকের রস খেও মধু সাথে

হৃদরোগীদের জন্যে গাজর

প্রতিদিন গাজর খেলে হৃদরোগের ভয় কমে যায়৷ দীর্ঘ গবেষণার পর জানা গেছে যে গাজরের খাদ্য মূল্য অত্যন্ত অধিক৷ গাজরে আছে বিটা–ক্যারোটিন যা হৃদরোগের আক্রমণ থেকে অনেকাংশে বাঁচায়৷ একটি সমীক্ষায় জানা গেছে যাঁরা নিয়মিত গাজর তরকারি করে খান তাঁদের হৃদরোগের সম্ভাবনা ৬৮ শতাংশ কমে যায়৷ সুতরাং প্রতিদিন একটি করে গাজর খেলে হৃদরোগে ভয় অনেকটাই কমে যায়৷

মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করতে নিম পাতা চিবিয়ে খান

নিম পাতা আমাদের বিশেষ উপকারী সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ তবে মানসিক দুশ্চিন্তা দূরে রাখতে নিম পাতা যে সাহায্য করে তা হয়ত অনেকেই জানেন না৷ দুশ্চিন্তা দূর করতে প্রতিদিন কয়েকটি তাজা নিম পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন৷ তাজা নিমপাতা চিবিয়ে খেলে চর্মরোগ দূরে পালিয়ে যায়, দাঁতের অসুখ সেরে যায়, রক্তে শর্করা ও উচ্চচাপ দূরে পালিয়ে যায়৷ এছাড়া নিদ্রাহীনতার রোগও পালিয়ে যায়৷ অম্বল হলে নিম গাছের ছাল এক কাপ গরম জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে খালি পেটে খেলে উপকার পাওয়া যায়৷ রোজ সকালে খালি পেটে নিমছাল ও নিমপাতা বেটে তার বড়ি করে খেলে কৃমি রোগ সেরে যায়৷

নটে শাক

নটে বা ‘তন্ডুলেরক’ (বিহারে শাকটিকে ‘গেণ্হারী’ ক্ষলে) রুচিৰর্দ্ধক ও মলক্ষৃদ্ধিকারক৷ শাকটিতে লোহা যথেষ্ট আছে৷ নটের নানান প্রজাতি৷ যে নটেতে লোহার শতাংশ বেশী তা কিছুটা মিষ্ট স্বাদী হয়৷ চাল ধোয়া জল পচে গেলে সেই স্থানে নটে শাক নিজে থেকেই জন্মায়৷ নটে শাক বিষ্টম্ভিনী, অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে৷ যাদের পেট পরিষ্কার হয় না, তারা নিয়মিত না হোক, মধ্যে মধ্যে নটে শাক খেলে পেট পরিষ্কার হবেই৷ পেট পরিষ্কার থাকা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ৷ পেট পরিষ্কার থাকলে চর্মরোগ হয় না৷ শাক কেটে ধোয়া উচিত নয়৷ ভাল করে ধুয়ে কাটতে হয়, কারণ কেটে ধুলে জলের সঙ্গে শাকের মূল্যবান রস বেরিয়ে যাবে৷ কাঁটা নটের কাঁটা [অন্য একটি প্রজাতি Amara

ঘি–করলা

পরিচয় ও প্রজাতি ঃ আমাদের পরিচিত শাক–সব্জীর মধ্যে ঘি–করলা অন্যতম৷ নির্দোষ সব্জী বলতে অনেকে যেমন পটোলকে বোঝেন আর সে কথাটা যেমন সত্যি, ঠিক তেমনি আর একটি নির্দোষ সব্জী হচ্ছে ঘি–করলা৷ ঘি–করলার খাদ্যমূল্য পটোলের চেয়ে অল্প একটু বেশী৷ স্বাদও অল্প একটু বেশী৷ ঘি–করলার দু’টি প্রজাতি রয়েছে–বৃহৎ ও ক্ষুদ্র৷ ঘি–করলার লতা দীর্ঘ হয়৷ ঘি–করলা রােে মুখ্যতঃ ঘি–করলা নামে পরিচিত৷ বাগড়ীতে (সমতটে) কাকরোল বলা হয়ে থাকে৷ কোলকাতার বাজারে ঘি–করলা ও কাকরোল দু’টি নামই প্রচলিত৷

লিবার, অর্শ, কোষ্ঠকাঠিন্য, কিডনীর রোগে ঃ লিবারের অসুখে, কিডনীর অসুখে, অর্শে ও কোষ্ঠকাঠিন্যে ঘি–করলা (সব্জী হিসেবে খেলে) ভাল কাজ করে৷

ডুমুর

ডুমুর একটি পুষ্পশাক৷ অন্য পুষ্প বাইরের দিকে প্রস্ফুটিত থাকে.....এরা (ডুমুরের ফুল) থাকে অন্তর্মুখী৷ লিবারের পক্ষে, অগ্ণ্যাশয়ের পক্ষে খুবই ভাল৷ যে দীর্ঘকাল ধরে উদরাময়ে ভোগে বা যার উদরাময়ের প্রবণতা রয়েছে, তার পক্ষে ডুমুরের হলুদ ঝোল বিশেষ কল্যাণকর৷ কাঁচকলার মত ডুমুরে লোহার ভাগ বেশী৷ তাই কষ বেশী৷ কাঁচকলা বা ডুমুরের কষ অগ্ণ্যাশয়ের পক্ষে আদৌ ক্ষতিকর নয়৷ ডুমুর অর্শ ও ৰহুমূত্র রোগে বিশেষ উপকারী৷ ঙ্ম ডুমুরের ছোট প্রজাতিটিই সাধারণতঃ তরকারীতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷ ৰড় ডুমুর পাকলে তা ফল হিসেবে লিবারের পক্ষে ভাল৷ ৰড় পাকা ডুমুর শুকিয়ে মেওয়া ফল হিসেবেও ব্যবহার করা হয়৷ তারও গুণ একই রকমের ৷

বকফুল

পরিচয় ও প্রজাতি ঃ বকফুল (গাছের) অনেক প্রজাতি রয়েছে৷ তবে মুখ্যতঃ দু’টি প্রজাতি নজরে পড়ে৷ একটিকে বলতে পারি কিছুটা হ্রস্ব, অপরটি হচ্ছে দীর্ঘ৷ হ্রস্ব প্রজাতির বকফুল (মোটামুটি) উঁচু হয় আর দীর্ঘ প্রজাতিটি আট মানুষের চেয়েও বেশী উঁচু হয়৷ হ্রস্ব–দীর্ঘ নির্বিশেষে বকফুল গাছ ৰাড়ে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে৷ ফুলের আকার ও আকৃতির বিচারে বকফুল শাদা, গোলাপী, লাল ও পঞ্চমুখী জাতের হয়ে থাকে৷

স্বাস্থ্য ও কৌশিকী নৃত্য

মানুষের অস্তিত্ব ত্রি–স্তরীয় অর্থাৎ এর তিনটে স্তর ত্রব্ধব্জ্ত্রব্ধব্ভপ্প রয়েছে– শারীরিক (Physical), মানসিক (Mental) ও আধ্যাত্মিক (Spiritual)৷ এই যে তিনটে স্তর এদের কোনটিকেই অবজ্ঞা করা যায় না৷ শারীরিক স্তরের চেয়ে মানসিক স্তরের মহত্ত্ব অধিক, কিন্তু তাই বলে শারীরিক স্তরটাকেও (Physical stratum)  উপেক্ষা করা যায় না৷ ঠিক তেমনি মানসিক স্তর (Psychic stratum)  অপেক্ষা আধ্যাত্মিক স্তরের (Spiritual stratum) গুরুত্ব বেশী কিন্তু মানসিক স্তরটাও (Physical stratum)  অবহেলার জিনিস নয়৷ তাই তারও চর্চা আবশ্যক৷ তেমনি যারা আধ্যাত্মিক চর্চা করে না, কেবল শরীর ও মনেরই চর্চা করে তারা দেখতে মানুষের মত হলেও তাদের মানস