২১শে ফেব্রুয়ারী কলকাতায় আমরা বাঙালীর মাতৃভাষা দিবস উদযাপন

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা ঃ ১৯৫আমরা বাঙ্গালীর মিছিল২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারী ঊর্দু সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্যে বর্তমান বাঙলাদেশের (পূর্ব বাংলা) পাঁচ তরুণ প্রাণ দিয়েছিলেন৷ তাঁদের সংগ্রামের ফলে বাংলা ভাষা আজ বিশ্বের দরবারে শ্রেষ্ঠ সুমধুর ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ও রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক এই ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে মান্যতা লাভ করেছে৷

তাই ২১শে ফেব্রুয়ারী আমরা বাঙালীর পক্ষ থেকে সর্বত্র মহাসমারোহে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয় ও ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী যে পাঁচজন ভাষা শহীদ (রফিক বরকত, আব্দুল জববার, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান) মাতৃভাষার জন্যে আত্মদান করেছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে অসমের শিলচরেও ১৯৬১ সালের ১৯শে মে যাঁরা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্যে প্রাণ দেন ---সমস্ত ভাষা-শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়৷

এই উদ্দেশ্যে কলকাতায় আমরা বাঙালীর কর্মী ও সমর্থকেরা উত্তর কলকাতার ‘সমাজ ভবন’ থেকে ভাষা শহীদদের প্রতিকৃতি সহ সুসজ্জিত ট্যাবলো নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন রাস্তা পরিক্রমা করেন৷ তাঁরা শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় হয়ে বিধান সরণী ধরে হাতিবাগানে এসে পৌঁছলে এখানে আমরা বাঙালীর নেতা শুভেন্দু ঘোষ ভাষা শহীদ দিবসের ওপর বক্তব্য রাখেন৷ তিনি ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীর ভাষা শহীদ ও শিলচরের ১৯৬১ সালের ১৯শে মে-র ভাষা শহীদদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন৷ তিনি বলেন---মাতৃভাষা মাতৃদুগ্দের সমান৷ তাই মাতৃভাষাকে ভালোবাসা ও মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করা প্রতিটি বাঙালীর কর্তব্য৷ দুঃখের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি এখনও পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত সরকারী কাজকর্মে ও আদালতে খুব সামান্যই বাংলা ভাষার ব্যবহার আছে৷ বেশীর ভাগ ইংরেজী বা হিন্দিতেই হয়৷ এটা মাতৃভাষার অবমাননা৷ তিনি বলেন ‘আমরা বাঙালী’র দাবী পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত সরকারী ও বেসরকারী কাজকর্ম বাংলা ভাষাতে করতে হবে, যাতে জনসাধারণের পক্ষেও কোন অসুবিধা না হয়৷ সবরকমের সরকারী নির্দেশাবলী, উত্তর ও মন্তব্য বাংলায় লিখতে হবে৷ অধিকাংশ সরকারী কাগজপত্র বাংলায় ছাপতে হবে৷ দেওয়ানি ও ফৌজদারী আদালতের শুনানী কার্য ও রায়দান পর্ব বাংলাতে করতে হবে .....ইত্যাদি৷

হাতিবাগান থেকে মিছিল আবার এগিয়ে হেদুয়া পার্কের নিকটে এসে পৌঁছলে এখানে বক্তব্য রাখেন আমরা বাঙালী সচিব বকুল চন্দ্র রায়৷ তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, কেবল পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারতের সমস্ত বাঙালী অধ্যুষিত এলাকায় যেমন ঝাড়খণ্ডে, অসমের বরাক উপত্যকা, লামডিং, ধুবড়ি প্রভৃতি সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী এলাকার বাঙালীদের মাতৃভাষা বাংলা থেকে বঞ্চিত করা চলবে না৷ সম্প্রতি অসমের নাগরিকপঞ্জী থেকে বহু বাঙালীর নাম বাদ দিয়ে তাদের ভাসমান জনগোষ্ঠীতে পরিণত করার চেষ্টা চলছে৷ বাঙালীদের ওপর শোষক শ্রেণীর এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সমস্ত বাঙালীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে৷ মাতৃভাষা যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে মধুরতম ভাষা হিসেবে রাষ্ট্র সংঘ কর্তৃক স্বীকৃত সেই মাতৃভাষার অবমাননা সহ্য করা হবে না৷..... এরপর আমরা বাঙালীর মিছিল আরও এগিয়ে চলে৷ এইভাবে কলেজ স্কোয়ার হয়ে মিছিল শ্রদ্ধানন্দ পার্কে পৌঁছায়৷ কলেজ স্কোয়ার ও শ্রদ্ধানন্দ পার্কে ও আমরা বাঙালীর পক্ষে জয়ন্ত দাশ, উজ্জ্বল ঘোষ, সুনীল চক্রবর্ত্তী, জ্যোতিবিকাশ সিন্হা, গোপা শীল প্রমুখ  বক্তব্য রাখেন৷ তাঁরা ভারতবর্ষের সমস্ত বাঙালী অধূ্যষিত এলাকায় বাংলা ভাষা ও বাঙালীদের ওপর যারা অবদমন চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সমস্ত বাঙালীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান৷