প্রভাতী

সেকালের সরস্বতী পুজো

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

সরস্বতীর মূর্ত্তি পুজো বেশিদিনের ঘটনা নয়৷ এমনিতেই অন্যান্য দেবদেবীর তুলনায় সরস্বতীর রূপকল্পনা হয়েছে অনেক পরে৷ ষষ্ঠ কিংবা সপ্তম শতাব্দী থেকে তার শুরু৷ এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি বলেছেন---এই যে সর্বশুল্কা সরস্বতী পৌরাণিক দেবী, এঁর পুজোও কিন্তু ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল না৷ এমনকি পাঠান যুগেও ছিল না, এমনকি মোগলযুগেও ছিল না৷’’ (নমঃ শিবায় শান্তায়)৷

পশ্চিমবঙ্গে চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগে বই মাটির দোয়াত, শরের কলম, তালপাতার তাড়া, কাগজ ইত্যাদি পুজো হতো৷ পুজোর জন্য নিবেদিত হত বাংলা বা সংস্কৃত বই, ইংরেজি নয়৷ কারণ ইংরেজি ম্লেচ্ছভাষারূপে বিবেচিত হত৷ শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি বলেছেন--- ‘মোগলযুগে, পাঠান যুগে লোকে এই সর্বশুক্লা সরস্বতীর পুজো করতে গেলে বইয়ের পুজো করত, পুস্তকের পুজো করত৷ (নমঃ শিবায় শান্তায়)৷

‘সরস’ শব্দের আদিম অর্থ জ্যোতি৷ ‘সরস’ থেকে সরস্বান (সূর্য), তেমনি সরস্বতী, সরস্বতী জ্যোতির্ময়ী৷ আনন্দমূর্ত্তিজী বলেছেন---‘সরস্‌’ শব্দের মানে সাদারঙের আলো,শুভ্র জ্যোতিঃ৷....সরস্বতী মানে যার মধ্যে শাদারঙের জ্যোতিঃ আছে...৷’

আর দেবীর পুজোতেও তাই দেওয়া হয় শাদা চন্দন, শাদা ধান, শাদা ফুল ইত্যাদি৷ সবই শ্বেত উপচার৷ প্রসাদ ও শাদা৷ দই, খৈ, তিলে খাজা,খোয়াক্ষীর মাখন,নারকেল কুল ইত্যাদি৷ এছাড়া দেবীর শ্বেতপদ্মে অধিষ্ঠান,শ্বেতবস্ত্র পরিধান৷

বইয়ের মাধ্যমে সরস্বতী পুজো প্রসঙ্গে আনন্দমূর্ত্তিজী আরো বলেছেন---‘‘এখন ইংরেজ আমলের গোড়ার দিকে সাহেবরা সাহেবরা বললে--- টোমাডের এ্যাটো ডেবডেবী আছে, আর তোমরা সরস্বতী পূজা বুক দিয়ে কেন করো? Why books why not a Devi, why not a goddess)? এখন ওই ইংরেজ আমলের সর্বশুভ্রা সরস্বতীর মূর্ত্তি গড়ে পূজো করবার রীবাজ শুরু হলো এই কলকাতা শহরেই৷ ...মূর্ত্তি গড়ে পূজো করছে লোকে এই ইংরেজ যুগে৷ তার আগে এ পূজোটা ছিল ও না৷’’          (নমঃ শিবায় শান্তায়)

নোতুন পৃথিবী

লেখক
সাক্ষীগোপাল দেব

বজ্রমুঠি গৈরিক বেশ

হাতে নিশান স্বস্তিক,

আসছে ওরা অযুত নিযুত

নাস্তিক নয় আস্তিক,

সুদর্শনে কাটছে ওরা

ধনতন্ত্র, জড়বাদ,

পাপীর ষড়যন্ত্র ওরা

করছে হেলায় বরবাদ!

আনল প্রাউট মুক্তি আলো

ব্যথীর বুকে আশ্বাস

ধার্মিকেরা নেবে আবার

দু’-বুক ভরে নিশ্বাস৷

হাসবে আবার গাছ গাছালি

হাসবে যত নিঃস্ব,

হাসবে আবার নোতুন করে

তোমার আমার বিশ্ব৷

পিপিলিকা

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

তিন জোড়া পা আর

 এক জোড়া ডানা,

সর্বাঙ্গ কাজে লাগিয়ে

 দানা পানি খানা৷

অপরের রক্ত পানে

 যত করি মানা,

 এতই অবাধ্য, কোনো

 কথাতো শোনেনা!

 

পিপীলিকার আছে জানি

 তিন জোড়া চরণ,

চায়না কখনো ডানা

 গজালেই মরণ!

তাই তারা দশ মাস

 কাজ করে যায়,

শীতকালে দুই মাস

 বসে বসে খায়৷

নব অভিযান

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

বিষাক্ত কন্টক-পথে পণ করে’ প্রাণ

শুরু হলো আমাদের নব অভিযান৷

মান নেই, খ্যাতি নেই, নেই সমর্থন---

আছে জ্বালা,

আছে ব্যঙ্গ---সহস্র বন্ধন৷

শুভ কাজে যত শুনি তিক্ত অপবাদ

অট্ট হেসে তত পাই

রোমাঞ্চের স্বাদ!

ড্রাগনেরা ঘিরে আছে প্রগতির পথ

সংগ্রামে প্রস্তুত আছি--- নিলাম শপথ

জীবন সংকটে কভু হটবো না পিছে,

পেয়েছি অভ্রান্ত পথ মৃত্যুভয় মিছে!

মাঝ পথে যদি নামে দুর্র্যেগের রাতি,

যদি ওঠে ক্ষুব্ধ ঝঞ্ঝা নাহি রয় সাথী

আমাদের অভিযান থামবে না তবু---

তিলে তিলে দেবো প্রাণ

দমবো না কভু৷৷

নেতাজী প্রণাম

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিন্‌হা

নেতাজী, নেতাজী,

আজাদ হিন্দ্‌ বাহিনীর নেতাজী

নেতাজী, নেতাজী,

সকলের আদরের নেতাজী

বাঙলার মহান সন্তান তুমি,

ভারতের গৌরব বিশ্বনিখিলে সততঃ স্পন্দিত তোমার স্বদেশপ্রেমের সৌরভ

শতাব্দীর ধ্রুবতারা তুমি,

যুগপুরুষ মহাবিপ্লবী

ত্যাগ-মন্ত্র বলে ভারতবাসীর বুকে এঁকেছিলে দেশাত্মবোধের ছবি

আসমুদ্র হিমাচল হয়েছে উত্তাল

তোমারই অমোঘ আহ্বানে

লক্ষ লক্ষ বীর সৈনিক জেগেছে

 ‘জয় হিন্দ্‌’ গানে

বিদেশী শাসকের অমানুষিক

নিপীড়ন আর পৈশাচিক অট্টহাস

কলঙ্কিত করেছে পৃথিবী

ও সভ্য মানুষের ইতিহাস৷

অন্ধঘোর নিশীথের বক্ষ চিরে

রক্তিম পূবের আকাশ

উদ্‌ভাসিত করলে যুগ সন্ধিক্ষণে,

তুমি, সুভাষ৷

পুষ্পশোভিত নিঃশঙ্ক

জীবনের হাতছানি দিয়েছ বিসর্জন

কণ্টকাকীর্ণ রক্তাক্ত দুর্গম পথ

হাসিমুখে করেছ বরণ৷

গগনভেদী হুঙ্কারে ভেঙেছে

অত্যাচারীর পাষাণ কারাগার

কেঁপেছে শার্দূল-শয়তান,

দুর্বার শক্তিতে তোমার

লালচক্ষু-ভ্রূকূটি অবহেলে,

ধূর্ত শ্যেন দৃষ্টি দিয়েছ ফাঁকি

অভ্রংলেহী মদমত্ত বোঝেনি,

তুমি বিধাতার এক অপূর্ব সৃষ্টি৷

তরুণ সমাজের আদর্শ তুমি,

চির উন্নত শাশ্বত মৃত্যুঞ্জয়

যুব-মানসে যুগে যুগে সঞ্চার’

পৌরুষ অমর অক্ষয়৷

শুভ জন্মদিনে স্মরণে-বরণে

জানাই শতকোটি প্রণাম আজি

নেতাজী, নেতাজী,

অফুরন্ত যৌবনের অগ্রদূত নেতাজী

নেতাজী, নেতাজী,

আপামর দেশবাসীর গর্বের নেতাজী৷৷

কবরেজ মশায় ৰাঁচিয়ে দিলেন

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

সত্যিকারের ক্লান্তিচ্ছেদ করতে গেলে খুব সতর্ক হয়ে কথা ৰলতে হয়৷ মনে করো কোন একটি ছেলে পরীক্ষায় ফেল করেছে৷ কারও সঙ্গে কথা ৰলছে না৷ তিন মুণ্ডু এক করে ৰসে আছে (দু’হাটু আর মুণ্ডু তিনে নিয়ে তিন মুণ্ডু) খেতে চাইছে না, শুতে চাইছে না৷ ৰাড়ীর লোকের ভয় ছেলেটা হয়তো পুকুরে ডুবৰে .....হয়ত বা রেলে গলা দেৰে৷ গ্রামের ৰুড়ো কবরেজ মশায় খবর শুণে ছুটে এলেন৷ আহা! ছেলেটা যদি মরে ৰড় দুঃখের হৰে৷ এই সতর ৰছর বয়সে সীতার ভূমিকায় যা অভিনয় করে তা এককথায় অনবদ্য৷ কৰরেজ মশায় রামভক্ত, তাই সীতা মরে যাবে ভেবে তার প্রাণটা খাঁ খাঁ করে উঠল৷ আৰার কিছুদিন আগে কেষ্টযাত্রায় রাধিকার ভূমিকায় ছেলেটা এমন প্রাণ সঞ্চার করেছিল যে বৃন্দাবন কেন, টুণ্ডুলা ইষ্টিশানও কেঁপে উঠেছিল......যমুনার জল সরে নীচেরটা একেৰারে ফুটিফাটা হয়ে গেছল৷

কৰরেজ মশায় পরম বৈষ্ণব৷ তিনি সীতাকেও মরতে দিতে পারেন না.....রাধিকাকেও মরতে দিতে পারেন না৷ তাই তিনি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন৷ ডান পায়ের খড়মটা ঠিকই ছিল, বাঁ পায়ের খড়মটা বাঁশঝাড়ে আটকে সেখানেই পড়ে রইল৷ তিনি এসে ছেলেটাকে শুধোলেন–‘‘হাঁ রে, ওই রকম তিন মুণ্ডু হয়ে ৰসে আছিস ক্যানে এবার তোদের যা অভিনয় হইয়েছিল যারা দেখেছে তারা জীবনেও ভুলৰ্যে না৷ এখন কোন নাটকের রিহার্সাল দিচিস’’

ছেলেটার মনমেজাজ তখন ভীষণ খারাপ৷ সে মুখ ওপরে না তুলে ৰললে, ‘‘ওই নাটক করতে গিয়েই তো এই দশা হয়েছে৷ আর নাটক–টাটক নয়’’৷

কৰরেজ মশায় শুধোলেন–‘‘এখন এই ইস্কুলে পড়বি না অন্য ইস্কুলে যাব্যি’’

সে কান্নায় ফুঁপিয়ে উঠে ৰললে, ‘‘এবার যমের ইস্কুলে পড়তে যাৰ’’৷

কৰরেজ মশায় ৰললেন, ‘‘তুই কতবার ফেল্ করেছিস’’

ছেলেটা ৰললে–‘‘এই নিয়ে পাঁচবার’’৷

কৰরেজ মশায় ৰললেন–তবে ওতো আমার কাছে নস্যি রে৷ আমি প্রতিটি ক্লাসে একবার ফেল করেছি, পরের বার পাশ করেছি৷ আর ক্লাস টেনে রগড়েছি আট বার৷ ন–ৰারের ৰেলায় একেৰারে ফার্ষ্ট ডিবিশনে সংস্কৃতে লেটার পেয়ে পাশ করেছি৷ আজ দেখ আমি একজন নামজাদা কৰরেজ৷ বদ্দমান জেলার মানকড়ের, শ্রীখণ্ডের, কোগ্রামের (কুমুদগ্রাম) সব জায়গার তাগড়া তাগড়া বদ্যিরা আমাকে ডাকসাইটে বদ্যি ৰলে সম্মান করে৷ নাড়ি ছোঁবার আগেই নিদান দিয়ে দি’৷ আর তুই তিন মুণ্ডু হয়ে দামী সময় নষ্ট করছিস্৷ এখ্খুনি উঠে পড়ত্যে ৰোস৷ এই ইস্কুলেই পড়বি, কারণ এই ইস্কুলের শিক্ষকদের ঘাঁত–ঘোঁত সৰই তোর জানা৷ হাঁ, হাঁ, আমিই একটা ভুল করনুম৷ আগে চাট্টি গুড় মুড়ি খেয়ে নে, তারপরে পড়ত্যে ৰোস৷ হ্যাঁ, এর পর যে নাটকটার রির্হার্স্যাল দিৰি আমাকে আগে থাকতে জানাৰি৷ অভিনয়ের দিন আমিও গ্রীণরুমে গিয়ে ৰসে থাকৰ’’৷

এটাই হ’ল সত্যিকারের ক্লান্তিচ্ছেদ...........ৰুঝলে৷

(শব্দ চয়নিকা, ১১/২১৪)

দুরন্ত ছেলে

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

প্রথম দিন স্কুলে যাবে সুবি৷ সারদা ঝি সুবির হাত ধরে ঘোড়ার গাড়িতে তুলে দিতে যাচ্ছে৷ দুয়ারে গাড়ি দেখেই সুবি অতর্কিতে সারদার হাত ছাড়িয়ে দে ছুট৷ ছুটে গাড়িতে উঠতে গিয়ে পা পিছলে গেল পড়ে৷ অমনি চারদিক থেকে চিৎকার---যা! পড়ে গেল, পড়ে গেল৷ ধর ধর, তোল তোল৷ গাড়ির সামনে মানুষের জটলা৷ কে একজন বললো, আহারে, বাচ্চা ছেলে, মাথাটা গেছে ফেটে৷ রক্ত ঝরছে৷ ডাক্তার ডাকো, শিগগির ডাক্তার ডাকো৷

হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন সুবির মা প্রভাবতী৷ মুখে তাঁর উদ্বেগ৷ কী হলো ছেলের৷ সারদা ঝি কেঁদে কেঁদে বললো, সুবি পড়ে গিয়েছে মা৷

পড়ে গেছে? আতঙ্কিত হলেন প্রভাবতী৷ পাঁচ বছরের ছেলে৷ আজ প্রথম দিন স্কুলে যাচ্ছে৷ তুই ও কে ধরে রাখতে পারলি না?

ও যে হাত ছেড়ে পালিয়ে যাবে কি করে বুঝবো?

‘মাত্র পাঁচ বছরের ছেলে কে তুই ধরে রাখতে পারলি না? জানিস তো দুরন্ত ছেলে৷ হাত চেপে ধরে গাড়িতে তুলে দিতে পারলি না?

প্রতিবেশীরা চ্যাংদোলা করে ঘরে নিয়ে এলো সুবিকে৷ ডাক্তার এলেন৷ মাথা ফেঁটে গিয়েছে৷ রক্ত ঝরছে৷ ডাক্তার বললেন, তেমন কিছু নয়৷ ব্যাণ্ডেজ করে দিচ্ছি ওষুধ লাগিয়ে ঠিক হয়ে যাবে৷

বৈঠকখানায় বসে জানকীনাথ আদালতের কাগজপত্র গোছগাছ করছিলেন৷ এমন সময় সরকার এসে খবর দিল, সুবিবাবু পড়ে গেছেন৷ মাথা ফেটে গেছে৷

আদালতের নথিপত্র থেকে মাথা তুলে জানকীনাথ বললেন, ওর-না আজ প্রথম স্কুলের যাওয়ার দিন৷ পড়ে গেছে, মাথা ফেটে গেছে? মাথায় চোট৷ তার মানে তো কার্য-সিদ্ধি৷ তা সারদা কি করছিল?

প্রভাবতী বললেন, সারদা তো হাত ধরেই রেখেছিল, গাড়ি দেখে সারদার হাত ছিনিয়ে একা একাই গাড়িতে উঠতে গিয়েছিল৷ আর অমনি পা হড়কে পড়ে গেছে৷

জানকীনাথ ধ্যানস্থ হওয়ার মতন কিছুক্ষণ স্থির হয়ে রইলেন৷ তারপর আপন মনে বললেন, দুরন্ত ছেলে! ও কি কারো হাত ধরে চলার মতো ছেলে? ওর হাত ধরেই একদিন সারা দেশ জেগে উঠবে৷ ওর হাত ধরে চলবার জন্য একদিন সারা দেশ ওর দিকে হাত বাড়াবে৷

হ্যাঁ, সত্যিই তাই৷ জানকীনাথের এ-ভবিষ্যদ্বানী একদিন ঐতিহাসিক সত্যরূপে দেখা গিয়েছিল৷

এবার বলতো কে এই দুরন্ত সুবি? এই সুবিই হলেন সুভাষ৷ সুভাষচন্দ্র বসু৷ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু৷ ১৯৪২ খ্রীষ্টাব্দে তিনি গোপনে ভারত ত্যাগ করেন৷ প্রথমে যান কাবুলে৷ সেখান থেকে মস্কোর পথে যান বার্লিন৷ পরে জাপানে গিয়ে আজাদ হিন্দ গভর্নমেন্টের প্রতিষ্ঠা করেন৷ তাঁর বাহিনী কোহিমা পর্যন্ত এসে ভারতের মাটিতে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন৷

নিঃস্বার্থ দেশ প্রেমের জন্য শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, সুভাষচন্দ্র বসুকে বরাবর ভালবেসে এসেছিলেন৷ তাই তিনি তার ‘দেশ প্রেমিকের প্রতি’ পুস্তকটি আদরের সুভাষচন্দ্র বসুর নামে উৎসর্গ করেছেন৷

নেতাজী সুভাষ করে মনে বাস

লেখক
শিবরাম চক্রবর্তী

নেতাজী সুভাষ   তোমার সুবাস

ভারত তথা বিশ্ব,

পাওয়ার পরে    সবার ঘরে

পায় আনন্দের দৃশ্য৷

নেতাজী সুভাষ   তোমায় সাবাশ

দেশপ্রেমিকরা দেবে

বিশেষ ভাবে     বাঙালী সবে

তোমায় স্মরণ নেবে৷

নেতাজী সুভাষ   স্বামীজীর শ্বাস

তব ভাবনায় ভরা

থাকার ফলে     আত্মিক বলে

(তোমার) জীবন ছিল গড়া৷

নেতাজী সুভাষ   আই.সি.এস. পাশ

করেও ব্রিটিশের অধীন

চাকরী ছেড়ে     দেশের তরে

তুমি ছিলে স্বাধীন

নেতাজী সুভাষ   বিদেশীর গ্রাস

দেখেই হলে রাগী

বিদেশ গেলে    বন্ধু পেলে

লড়লে দেশের লাগি৷

নেতাজী সুভাষ   তেজেতে গ্রাস

করে তোমায় যখন

সৈনিক বেশে    খুব সাহসে

প্যারেড কর তখন৷

নেতাজী সুভাষ   তুমি কারো দাস

না হয়ে একেবারে,

শশাগড়া ইংরেজ ভরা

তাদের চাপলে ঘাড়ে৷

নেতাজী সুভাষ   নিয়ে ফুসফাস

করে’ যা তা বোলে

স্বার্থের কোলে   পড়ে ঢলে

আবার তোমারই কোলে!

নেতাজী সুভাষ (অলক্ষ্যে)         তোমার আশ্বাস

পেয়ে নূতন সমাজ

গড়ার তরে       ঈশ্বরের বরে

করে অনেক কাজ৷

নেতাজী সুভাষ   তোমার প্রয়াস

অনেকে না চায়,

স্বার্থান্বেষী        নয় বিদেশী

দেশের লোকই হয়৷

নেতাজী সুভাষ   মরণে বিশ্বাস

‘ওরা’ করতে পারে,

মুখার্জী কমিশন  বিমানে মরণ

তার মনে না ধরে৷

নেতাজী সুভাষ   চক্রান্তের ফাঁস

একদিন তো হবেই,

তখন তোমায়    পাগলের ন্যায়

তোমার আদর্শ নেবেই৷

ধরা আর সরা

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

 

দেশজ শব্দে ‘ট’ যথাযথভাবেই বজায় থাকে৷ আর ‘ড’ বা ‘ড়’ মৌলিক শব্দ হিসেবেই থেকে যায়৷ যেমন, আজ ভুলোর সঙ্গে ভোঁদার আড়ি হয়ে গেল৷ ওরা বলছে, ওরা আর একসঙ্গে মার্ৰেল খেলবে না, একটা পেয়ারাও আর কামড়াকামড়ি করে খাবে না৷ গোপনে কান পেতে শোনাকেও আড়িপাতা বলে৷ এটিও বাংলা দেশজ শব্দ৷

সেই যে একজন মহিলা আহ্লাদে আটখানা হয়ে তার এক ৰন্ধুকে বলেছিল–তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ায় আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে তা ভাষায় বলতে পারছি না৷ ৰন্ধু বলেছিল, তোমার যে কী আনন্দ হচ্ছে তার একটু আভাস আমায় দাও৷ মহিলাটি বলেছিল, আহ্লাদের আতিশয্যে আমার এখন ধরাকে সরা মনে হচ্ছে৷ সেই সময় হয়েছে কী, একজন চাষীর গোরু হারিয়ে গেছে৷ সে গোরু খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত হয়ে যে বাড়ির বারান্দায় বসেছে সেই বাড়িরই ঘরের ভেতর ওই মহিলাটি বলছে– আমি আনন্দের আতিশয্যে ধরাকে সরা মনে করছি৷ চাষী আড়ি পেতে কথাটা শুনে নিলে৷ এবার সেও আনন্দের আতিশয্যে ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে ঘরের বাইরে থেকে ওই মহিলাটিকে গড় করে বললে–মা লক্ষ্মী, এই বিরাট ধরাটা যখন তোমার কাছে সরা হয়ে গেছে তখন দয়া করে বলে দাও, ওই সরার কোন্খানটিতে আমার গোরুটা রয়েছে৷

নেতাজী সুভাষ করে মনে বাস

লেখক
শিবরাম চক্রবর্তী

নেতাজী সুভাষ   তোমার সুবাস

ভারত তথা বিশ্ব,

পাওয়ার পরে    সবার ঘরে

পায় আনন্দের দৃশ্য৷

নেতাজী সুভাষ   তোমায় সাবাশ

দেশপ্রেমিকরা দেবে

বিশেষ ভাবে     বাঙালী সবে

তোমায় স্মরণ নেবে৷

নেতাজী সুভাষ   স্বামীজীর শ্বাস

তব ভাবনায় ভরা

থাকার ফলে     আত্মিক বলে

(তোমার) জীবন ছিল গড়া৷

নেতাজী সুভাষ   আই.সি.এস. পাশ

করেও ব্রিটিশের অধীন

চাকরী ছেড়ে     দেশের তরে

তুমি ছিলে স্বাধীন

নেতাজী সুভাষ   বিদেশীর গ্রাস

দেখেই হলে রাগী

বিদেশ গেলে    বন্ধু পেলে

লড়লে দেশের লাগি৷

নেতাজী সুভাষ   তেজেতে গ্রাস

করে তোমায় যখন

সৈনিক বেশে    খুব সাহসে

প্যারেড কর তখন৷

নেতাজী সুভাষ   তুমি কারো দাস

না হয়ে একেবারে,

শশাগড়া ইংরেজ ভরা

তাদের চাপলে ঘাড়ে৷

নেতাজী সুভাষ   নিয়ে ফুসফাস

করে’ যা তা বোলে

স্বার্থের কোলে   পড়ে ঢলে

আবার তোমারই কোলে!

নেতাজী সুভাষ (অলক্ষ্যে)         তোমার আশ্বাস

পেয়ে নূতন সমাজ

গড়ার তরে       ঈশ্বরের বরে

করে অনেক কাজ৷

নেতাজী সুভাষ   তোমার প্রয়াস

অনেকে না চায়,

স্বার্থান্বেষী        নয় বিদেশী

দেশের লোকই হয়৷

নেতাজী সুভাষ   মরণে বিশ্বাস

‘ওরা’ করতে পারে,

মুখার্জী কমিশন  বিমানে মরণ

তার মনে না ধরে৷

নেতাজী সুভাষ   চক্রান্তের ফাঁস

একদিন তো হবেই,

তখন তোমায়    পাগলের ন্যায়

তোমার আদর্শ নেবেই৷