প্রভাতী

নাছোড়বান্দা চাটুকার

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

পৃথিবীর সব দেশেই, এমনকি সব শহরেই কিছু সংখ্যক খুশামুদে ও উন্নত মানের অনারারী

          মুসাহিৰ আছে৷ মাইনে পাওয়া মুসাহিৰদের চেয়েও অনারারী মুসাহিৰেরা আরও ৰেশী মুসাহিৰী করে থাকে৷ একটা গল্প বলি শোনো–

সে আজ প্রায় ৪০–৪৫ বছর আগেকার কথা৷ আমাদের শহরে একজন নামজাদা ডাক্তার ছিলেন৷ ধরো, তাঁর নাম অরুণ বাঁড় জ্জে৷ ডাঃ বাঁড় জ্জের যেমন ছিল হাত–যশ, তেমনি ছিল পসার৷ রোজগার করতেন দু’হাতে, দান–ধ্যানও করতেন দু’হাতে৷ এই অমায়িক পরোপকারী মানুষটির দরজা থেকে কোনো অভাবী মানুষকেই কখনও নিরাশ হয়ে ফিরতে হত না৷ স্বাভাবিক নিয়মেই তাঁকে ঘিরে তৈরী হয়েছিল একটি খুশামুদে–চক্র৷ তিনি পসন্দ না করলেও এই খুশামুদেদের মধ্যেও কয়েকজন ৰেশ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও দক্ষ মুসাহিৰ ছিলেন৷

ডাঃ বাঁড় জ্জে ছিলেন খুবই মাতৃভক্ত৷ শিশুপুত্রকে নিয়ে বিধবা হয়ে তাঁর মা কায়ক্লেশে পুত্রকে মানুষ করে তুলেছিলেন৷ একথা ডাঃ বাঁড় জ্জে সবাইকে বলতেন৷

ডাঃ বাঁড় জ্জের মায়ের বাড়াবাড়ি অসুখ৷ ডাক্তারেরা জৰাব দিয়ে গেছেন৷ তাঁরা বলেছেন–রোগিণী ৰড় জোর আর দিন দু’য়েক বাঁচতে পারেন৷ ডাঃ বাঁড় জ্জে সেবা–যত্নের কোনো ত্রুটি করছেন না৷

কাগে–কোকিলে মুসাহিৰদের কানে খবরটা তুলে দিলে৷ তারা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়তে দৌড়তে ডাঃ বাঁড় জ্জের বাড়ী ঘিরে ভীড় জমাতে লাগল৷ কেউ বললে–মাসীমা এমন ভাবে আমাদের ফেলে চলে যাবেন এ আমরা স্বপ্ণেও ভাবিনি৷ কেউ বললে–মাসীমা আমাদের মায়া কাটিয়ে চলে যাচ্ছেন এ যে দুর্বিষহ৷ ডাঃ বাঁড় জ্জে আস্তে আস্তে বললেন–আমার মা’কে আগে মরতে দিন৷ কেউ বা কোমরে গামছা ৰেঁধে, হাতে বাঁশ–কাটারি–দড়ি নিয়ে উপস্থিত হয়ে বললে–মাসীমা ছিলেন সত্যিই পুণ্যশ্লোকা৷ এরকম মহীয়সী মহিলার কথা আমরা কোনো বইয়েই পড়িনি, আর কখনও কারো মুখেও শুনিনি৷ ডাঃ বাঁড় জ্জে আবার আস্তে আস্তে বললেন–আমার মা’কে আগে মরতে দিন৷ যেসব মুসাহিৰ একটু পেছিয়ে পড়েছিল অর্থাৎ একটু বিলম্বে খবর পেয়েছিল তারা তাদের আফশোষ পুরো করে নিতে কসুর করলে না৷ কেউ বললে– মাসীমা যেমন ছিলেন তাতে তাঁর গতি শিবলোকেই হবে৷ কেউ কেউ উৎসাহের আধিক্যে বলে ফেললে–গত মাসের ৪০টা দিনই আমি তাঁকে একাদশী করতে দেখেছি৷ কেউ বা বললে–তাঁর গতি অবশ্যই বৈকুণ্ঠে৷ শিবলোকে গিয়ে তিনি হৰিষ্যি খেতে যাবেন কোন্ দুঃখে! বৈকুণ্ঠে গিয়ে পোলাও–কালিয়া খাবেন৷ কেউ বা বললে–একজন জ্যোতিষী আমাকে বলেছিলেন, মাসীমার জন্যে গোলোকধামে একটা স্থান নির্দিষ্ট করে রাখা আছে৷

ডাঃ বাঁড়ুজ্জে আর সহ্য করতে পারছিলেন না৷ তিনি বললেন–আপনারা কথাবার্ত্তা বলুন, আমি এক্ষুনি আসছি৷ মুসাহিৰদের দল হাঁ হাঁ করে উঠে বললে–সে কী কথা! সে কী কথা! আপনি কোথায় যাবেন! যাবার জন্যে তো আমরা তৈরী হয়েই এসেছি৷ ডাক্তারবাবু ওদের কবল থেকে উদ্ধার পাবার জন্যে বললেন–আপনারা কথাবার্ত্তা বলুন, আমি একটু বাথরুম থেকে আসছি৷ মুসাহিৰের দল সমস্বরে বলে উঠল–সে কী কথা! সে কী কথা! আপনার এখন মাতৃদায়– মাতৃশোক৷ আপনি কোথায় যাবেন! বাথরুমে যেতে হয় আমরা যাব, আমরা যাচ্ছি৷

ডাঃ বাঁড়ুজ্জে হতাশ হয়ে ধপাস করে বসে পড়লেন৷ তখন তাঁর আর করবার কিছুই রইল না৷

মাতৃভাষার মানরক্ষা

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

যখনকার কথা আমি বলছি তখন আমাদের দেশ পরাধীন লোকের মুখে তখনো স্বদেশিকতার উন্মেষ ঘটেনি৷ শিক্ষিত, বাঙালীমাত্রই ইংরেজ-ভক্ত হয়ে উঠতেন৷ বাংলাভাষাকে তারা ভাষা বলেই জ্ঞান করতেন না ইংরেজদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং ইংরেজী ভাষার প্রতি অন্ধ আনুগত্য দেখানো এবং তাদের চালচলন, হাবভাবের চাটুকারিতাসুলভ অনুকরণে অনেক বাঙালী সেদিন গর্ব অনুভব করতেন৷ স্বদেশের ভাষা, সভ্যতা, শিক্ষা, ঐতিহ্যকে তাঁরা হেয় জ্ঞান করতেন৷

তাঁদেরই মধ্যে কয়েকজন বাঙালী সেদিন বিভিন্নভাবে রুগণ্‌ বঙ্গজননীর সেবাশ্রশ্রূষায় ছিলেন অতন্দ্র৷ বাংলার অনাদৃত অবহেলিত সম্পদ্‌ তাঁরা অতল গহ্বর থেকে উদ্ধার করার কাজে ছিলেন ব্রতী৷ ‘বাংলার সম্মান প্রতিষ্ঠায় ছিলেন একনিষ্ঠ প্রয়াসী ৷ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাদেরই একজন৷

বাংলাভাষাকে তিনি ভালবেসেছিলেন শুধু মুখের কথাতেই নয় ভালবেসেছিলেন অন্তর দিয়ে--হৃদয়ের অকৃত্রিম দরদ দিয়ে৷ তিনি যথার্থ বুঝেছিলেন, বাংলা বাঙালীর মাতৃভাষা৷ মাতৃভাষাকে মর্যাদা দেওয়া প্রতিটি বাঙালীর অবশ্য কর্তব্য৷ পরের ভাষায় জ্ঞানের বিকাশ সম্পূর্ণ এবং সহজ হয় না৷ প্রত্যেক জাতির পক্ষে তার মাতৃভাষাই অগ্রগতির সহায়ক৷

একদিন দুপুরবেলা খাওয়া দাওয়ার পর দেবেন্দ্রনাথ বৈঠকখানায় বসে বিশ্রাম করছেন এমন সময় পিওন এসে একটা চিঠি দিয়ে গেল৷ চিঠিটা ছিল তাঁর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের৷ চিঠিটা হাতে পেয়েই কিন্ত তার মুখ হয়ে গেল গম্ভীর ৷ বিরক্তি আর রাগে কপালের চামড়ায় ভাঁজ পড়লো৷’’

ব্যাপারটা কি? তোমরা হয়তো ভাবছো কোন মৃত্যুসংবাদ---তাই না? না, আসলে তা নয়৷ আত্মীয়টি তাঁকে ইংরেজীতে চিঠি লিখেছেন৷

কেন, বাংলায় লিখলে কি মান যেতো ? নীরব গর্জন করলেন দেবেন্দ্রনাথ সঙ্গে সঙ্গে চিঠিটা না পড়েই ফেরত পাঠিয়ে দিলেন আত্মীয়ের কাছে৷ লিখে দিলেন আমি বাঙালী, আপনিও বাঙালী---

অতএব উচিত ছিল বাংলাতেই চিঠি লেখা৷

পঞ্চ দধীচি স্মরণে

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

সেদিনও হয়েছিল সূর্যোদয়,

 নির্মেঘ বসন্তের গগন৷

ঈশান কোণে অপ্রত্যাশিত মেঘ

বুঝতে পারেনি আসন্ন মহারণ৷

 

 পাঁচই মার্চ, মহাবেদনার স্মৃতি,

বিক্ষত করে নিবিড় ভ্রাতৃ-প্রীতি৷

 ধর্মের তরে পঞ্চ দধীচি যারা

আজও অম্লান প্রাতঃস্মরনীয় তারা৷

 

দূরাচারীর অস্ত্র যখন

 নিঠুর খেলায় মাতে,

সাধু জনের পরিত্রাণে আসেন

 পরমপিতা সাথে৷

জড়বাদী মন মানেনা কখনো

 তাই পাপাচারে লিপ্ত,

কোন বিরোধীতা শুৃনিতে নারাজ

 শুনিলেই হয় ক্ষিপ্ত৷

 

নিজ সঙ্কল্প রূপায়ণে দধীচিরা আসে ভূবনে,

হাসিমুখে তাঁদের মরণ বরণ

আপন কর্তব্য সাধনে৷

ক্ষমতাবৃত্তে দিশাহারা হয়ে

 দুঃশাসনের বংশ,

অত্যাচারের অস্ত্র বানায়

 শিশুপাল আর কংস!

 

অহংবোধের উন্মাদনায়

 লঙ্ঘিত মহামানবের বাণী,

 ষড়যন্ত্রীর চক্র রচিছে

 নিভৃতে চক্রপাণি!

 

আজ সেই কুখ্যাত দিন----

ব্যাথিত হদয়ে স্মরণ করি

 কেমনে শুধিব ঋণ!

তাঁদের দেখানো পথ অনুসরণে

 সুদৃঢ় করি মন,

কল্যাণকর কর্ম রূপায়ণে

 হোক মানবিক জাগরণ৷

‘না তাকাইঁ’

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

রাঢ়ের মানুষ একদিকে যেমন দার্শনিক চিন্তা করেছে, অন্যদিকে তেমনি হালকা মেজাজে হাসি–তামাসা–নৃত্য–গী উচ্ছল হয়ে উঠেছে৷ রাঢ়ের মানুষ মজলিশী, মিশুক ও খোসমেজাজী৷ দারিদ্র্যভারে জীর্ণ হলেও সে মানুষকে ডেকে খাওয়ায়–খাওয়ায় তা–ই যা সে নিজে খায়–ভাত, কলাইয়ের ডাল (রাঢ়ী বাংলায় ‘বিরি’), বড়ি–পোস্ত আর কুমড়োর তরকারি (রাঢ়ী বাংলায় ‘ডিঙ্লা’)৷ তার আচরণে–ব্যবহারে কোনো দারিদ্র্যগত সংকোচ নেই৷ বিনা কষ্টেই সে স্পষ্ট কথা বলে থাকে৷ রাঢ়ের মানুষের সরলতার একটি নিদর্শন ঃ

জনৈক সরলৰুদ্ধি অশিক্ষিত রাঢ়ী কর্ষককে এক বিচারক নাকি জিজ্ঞাসা করেছিলেন–‘‘হাঁ রে, তু যে বলছিস জমিনটা তুর তা তু বলত্যে পারিস জমিনটাতে ক’টা আল আছে’’ অশিক্ষিত কর্ষক সে প্রশ্ণের উত্তর দিতে পারলে না৷ সে আকাশ পানে চেয়ে রইল৷ বিচারক শুধোলেন–‘‘কী ভালছিস (দেখছিস) বটেক’’ কর্ষক তখন শুধোলে–‘‘হাঁ রে সাহেব, তু যে ই ঘরটাতে অনেকদিন ধরে ম্যাজিসটারি করছিস তা তু উপরদিকে না তাকাইঁ বল না কেনে ঘরে ক’টা কড়ি–বরগা আছে৷’’ তখন বিচারক শুধোলেন–‘‘তু যে ই কথাগুলান বললি ইটা তুকে কে শিখাইঁ দিইছিল’’ কর্ষক বললে–‘‘কেউ শিখাইঁ নাই, মু লিজেই বললম, বাকী কথাগুলান উকিলবাবু শিখাইঁ দিইছিল৷ মু ল্যাজ্য কথা বললম, তু ল্যাজ্য বিচার কর্৷’’

রাঢ়ের মানুষ এমনই সহজ সরল৷ তাই রাঢ়ের গ্রাম্যজীবনে যেমন উৎসবের অন্ত নেই, তেমনি আমোদ–প্রমোদের উপকরণেরও অন্ত নেই৷ সস্তা ও সাধারণ বিলাস–ব্যসন রাঢ়ের মজ্জাগত৷ তবে তাকে কিছুতেই রাঢ়ের সহজ সরল জীবনের পরিপন্থী হতে দেওয়া হয়নি৷

১৷ ‘কৃষক’ শব্দটি বৈয়াকরণিক বিচারে অশুদ্ধ৷

২৷ ঘটনাটি সম্ভবতঃ জামতাড়া আদালতে ঘটেছিল৷

আমি কেমন সেয়ানা মেয়ে

প্রাচীনকাল থেকেই ভাশুর শ্বশুরের তুল্য পূজ্য রূপেই গণ্য হয়ে এসেছে৷ তাই ভাশুরের সম্ৰোধনসূচক সাম্মানিক শব্দ হচ্ছে ৰড় ঠাকুর/বট্ঠাকুর৷ কিন্তু প্রাচীনকালে সামাজিক বিধি ছিল এই যে ভাশুরকে ছোঁয়া চলে না৷ এ সম্পর্কে একটা গল্প আছে৷ ঘটনাটি ঘটেছিল মানাদে (মহানাদ)*৷ তাড়াতাড়ি বলছি শোনো৷

বউ–(স্বগত) চোর এসেছে...........বাড়ির চারপাশে সিঁদকাঠি নিয়ে ঘোরাফেরা করছে.......সব ৰুঝছি, মুখটি খুলছি না............আমি কেমন সেয়ানা মেয়ে.........দেখি কী হয়!

..........চোর সিঁধ কাটছে.......... শব্দ শুনছি, চোখটি বুজে পড়ে আছি, মুখটি খুলছি না.......আমি কেমন সেয়ানা মেয়ে.........দেখি কী হয়!

..........সিঁধ কেটে চোর ঘরে ঢুকল........পাশ ফিরে শুলুম......... চোখ খুললুম না........... আমি কেমন সেয়ানা মেয়ে.......দেখি কী হয়!

...........চোর জিনিসপত্র সব জড়ো করলে............পুঁটলিতে ৰাঁধল.......পুঁটলিটা প্রকাণ্ড হল............সিঁধের গর্ত্ত দিয়ে তা গলানো যাবে না............আমি কেমন সেয়ানা মেয়ে...........সব দেখে চলেছি, ‘রা’–টি কাড়ছি না !

.........কিন্তু এইবার পুঁটলিটা নিয়ে চোর যাবে কোথায়! ........ডানে আস্তাকুড়, বাঁয়ে বট্ঠাকুর, দু’য়ের কাউকেই ছুঁতে নেই, ছুঁলেই চান করতে হয়......! .....চোর, যাবি কোথায়....... ডানে আস্তাকুড়, বাঁয়ে বট্ঠাকুর..........এই বার.......৷

*হুগলী জেলার অন্তর্ভুক্ত মহানাদ স্থানটি ৰৌদ্ধ যুগে বাঙলার অন্যতম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল৷ স্থানটি অল্প দিনের জন্যে রাঢ়ের রাজধানীও ছিল৷ পরে বন্যার বালিচাপা পড়ে যাওয়ায় রাজধানী পাণ্ডুয়ায় (হুগলী জেলা) স্থানান্তরিত হয়৷ পাঠান যুগের মাঝামাঝি সময়ে পাণ্ডুয়া বিধ্বস্ত হয়৷ পাণ্ডুয়ার মিনারটি (পেঁড়োর পীর) কমৰেশী সেই সময়কারই৷

দধীচি মুনির কথা

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

প্রতিবছর ৫ই মার্চ আমরা ‘দধীচি দিবস’ হিসাবে পালন করে থাকি৷ কিন্তু কে ছিলেন এই দধীচি? তিনি ছিলেন পুরাণে বর্ণিত একজন বিখ্যাত মুনি৷ বেদমতে তিনি ছিলেন অথর্বমুনির পুত্র৷ কিন্তু পুরাণমতে তিনি মহর্ষি ভৃগু বা চ্যবনের পুত্র৷ তাঁর মায়ের নাম শান্তি৷

একবার তাঁর কঠোর তপস্যায় ভীত হয়ে দেবরাজ ইন্দ্র তাঁর তপোভঙ্গের উদ্দেশ্যে অলম্বুষা নামে এক অপসরাকে পাঠিয়েছিলেন৷ দধীচি ছিলেন পরম শিবভক্ত৷ তিনিই নন্দীকে শিবমন্ত্রে দীক্ষিত করেন৷ পরবর্ত্তীকালে এই নন্দীই শিবের পার্শ্বচরপদ লাভ করে৷ দক্ষ প্রজাপতিকে তিনি শিবহীন যজ্ঞ করতে নিষেধ করেছিলেন৷ দক্ষ তাঁর নিষেধ অমান্য করায় তিনি দক্ষযজ্ঞ পরিত্যাগ করেন৷

এদিকে বৃত্র ছিলেন একজন অসুর৷ শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন --- ‘‘...প্রাচীনকালে অসুরেরা শিবের সাধনা করে শিবের বরে শক্তি লাভ করেছিল৷ (লঘু নিরুক্ত) তেমনি বৃত্রাসুর ও শিবের তপস্যা করে শিবের বরে যুদ্ধে অজেয়ত্ব লাভ করে৷ অর্থাৎ যুদ্ধে তাকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না৷ শিবের বরে বলীয়ান হয়ে বৃত্রাসুর স্বর্গরাজ্য আক্রমণ করে৷ স্বর্গ থেকে দেবতারা বিতাড়িত হন৷ যুদ্ধে দেবতাদের পর্যুদস্ত করে বৃত্রাসুর দেবলোকে অসুর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে৷

ইন্দ্র অতঃপর স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্যান্য দেবতাদের সাথে নিয়ে ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলেন৷ সব বৃত্তান্ত শুণে ব্রহ্মা উপদেশ দেন ---একমাত্র দধীচিমুনির অস্থির দ্বারা বজ্রাস্ত্র নির্মাণ করলে সেই অস্ত্রেই বৃত্রাসুর কে বধ করা যাবে৷ যেহেতু ইন্দ্র একবার দধীচির তপোভঙ্গ করেছিলেন তাই মনে একটু দ্বিধা নিয়ে তিনি তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন৷ কিন্তু ইন্দ্রের কাছে সব ঘটনা শুণে দধীচি তৎক্ষণাৎ অকুন্ঠিত চিত্তে পরোপকারার্থে আত্মজীবন দানে রাজী হয়ে গেলেন৷ তিনি বললেন, আমার এই দেহ তো নশ্বর৷ দেহের অস্থিপঞ্জর দেবতাদের হিতার্থে দান করা তো সৌভাগ্যের বিষয়৷ এই কথা বলে তিনি যোগ সাধনায় বসে দেহত্যাগ করলেন৷ অতঃপর বিশ্বকর্মা তাঁর অস্থি দিয়ে বজ্রাস্ত্র নির্মাণ করলেন৷ সেই বজ্রাস্ত্র দিয়েই ইন্দ্র বৃত্রাসুরকে বধ করলেন৷

বাংলাসাহিত্যে হেমচন্দ্র বন্দ্যো পাধ্যায় রচিত ‘বৃত্রাসংহার’ একটি জনপ্রিয় আখ্যান কাব্য৷ বৃত্রাসুরের স্বর্গজয়, তারপর দধীচির দ্বারা নির্মিত বজ্রপ্রয়োগ করে ইন্দ্রের বৃত্রাসুর বধ--- এই কাব্যের মূল বিষয়৷ কাব্যটি বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে৷

সব কথার শেষ কথা---দধীচির নামের মধ্যেই তাঁর স্বভাব বিধৃত আছে৷ দধ্‌ ইচি দধীচি৷ দধ্‌ শব্দের অর্থ দান করা৷ দেবতাদের হিতার্থে তিনি তার দেহদান করে নামের সার্থকতা প্রতিপন্ন করেছেন৷

বসন্তে-প্রকৃতি

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

কাঁপন ধরা মাঘের শেষে

 বসন্তের আগমন,

চেয়ে নীহারিকা আকাশের রাকা

 মুখরিত উপবন৷

 

কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়া

 মেতেছে আজ রঙের খেলায়,

অজ্ঞাত কার কোমল ছোঁয়ায়

 সুপ্তি ভাঙ্গল দূর অবেলায়!

 

সম্ভাবনাময় কুঁড়ি গুলি চায়

 পূর্ণ প্রস্ফুটন,

বসন্তের একান্ত অভিপ্রায়

 হোক রূপায়ণ৷

 

করবী-কামিনী নয় অভিমানী

 বসন্তে তারা হাসে,

আজ মধুমাসে ফাগুন হাওয়ায়

 ফুলের সুরভী ভাসে৷

 

অশোকে-পলাশে কি উচ্ছ্বাসে

 রঞ্জিত করে বন,

কাঞ্চন বনে কোকিলের গানে

 আবিষ্ট তনু মন৷

 

নব কিশলয় সবুজ ভূষণে

 উজ্জীবিত উদ্যান,

পাতা ঝরে যাওয়া শীতের তরু

 ভুলে গেছে অভিমান!

 

অলি-প্রজাপতি বাসন্তী অতিথি

 বকুলের আবাহনে,

সৌরভ তার মৃদু সমীরণে

 বয়ে আনে বাতায়নে৷

 

মাধবীলতার গোপন কথা

 শুনিতে আসে ভ্রমর,

শিমুল-পারুল স্বাগত জানাতে

 খুলিয়া রেখেছে দোর৷

 

রঙের খেলায় ফুলের মেলায়

 পূর্ণিমা চাঁদ হাসে,

মধুপ-গুঞ্জরণ পুলকিত মন

 মহুয়া ফুলের বাসে৷

 

আম্রমুকুলে ঢেকেছে রসাল

 জগৎ জোড়া সুনাম,

বৈভবে ভরা ঋতুরঙ্গে ধরা

 স্রষ্টাকে জানাই প্রনাম৷

জলটান

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

সংস্কৃত ‘মদ’ ধাতুর একটি অর্থ হল যা শুষে আরাম পাওয়া যায় (ভাবারূঢ়ার্থ), যোগারূঢ়ার্থে জল, সরবৎ, পানা, ফলের রস ও যে কোন তরল বস্তু যা পানীয় পর্র্যয়ভুক্ত৷ উপরি-উক্ত যে বস্তু খেলে জলটান হয় অর্র্থৎ যে আহার গ্রহণের পর বারৰার জলতেষ্টা পায় সেই বস্তুকে ম+ড= ‘ম’ নামে আখ্যাত করা হয়ে থাকে৷ যেমন কম জলে ছাতু গুলে খেলেও বার বার জলতেষ্টা পায়৷ এই ধরনের জলতেষ্টাকে ‘জলটান’ ৰলা হয়৷

তোমরা সেই ৰলাগড়ের ব্রজবল্লভ ৰসাকের জলটানের গল্প শুণেছ তো! যদি না শুণে থাক তো একবার ৰলি৷ ব্রজবল্লভ ৰসাক থাকতেন ৰলাগড়ে--- তাঁর পৈতৃক ভদ্রাসনে৷

কিন্তু ব্রজবল্লভ ৰসাকের অন্তরঙ্গ বন্ধুরা ৰেশ কিছুটা দূরে থাকতেন ৰন-হুগলীতে, অপর অন্তরঙ্গ বন্ধু বিজিত বসু থাকতেন ৰাজেশিবপুরে৷ বিজিত ৰাঁরুজ্জের ছেলেটি লেখাপড়া সমাপ্ত করে সদ্য সেই যে কী যে একটা সরকারী বিভাগ আছে যেখানে খাদ্যশস্য ওজন করে দাম দিয়ে গুদামজাত করা হয় সেই বিভাগটিতে অল্পদিন হল কাজ পেয়েছে৷ আর বিজিত বসুর ছেলেটি এম.এ. পাশ করেছে, হুগলীর কোন একটি কলেজে তার পেপেচুরির চাকরি হলো-হলো৷

একদিন প্রাতর্ভ্রমণ সেরে ব্রজবল্লভ বসাক বাড়ী ফিরে আসতেই তাঁর স্ত্রী সেয়ানাসুন্দরী বললেন, ‘‘ওগো শোন, তোমার বন্ধু বিজিতৰাৰু এইমাত্র খৰর পাঠিয়েছেন, আজ রাত্তিরে ওঁর ছেলের ৰউ-ভাত৷ তোমাকে নেমতন্ন রক্ষা করতে যেতেই হৰে৷ নইলে উনি মনে ভারী দুঃখু পাৰেন৷ কাজকর্মে অত্যধিক ব্যস্ত থাকায় নিজে আসতে পারলেন না৷ নইলে তিনি নিজেই এসে তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন’’৷

ব্রজবল্লভ বসাক সেয়ানা সুন্দরীকে শুধোলেন---‘‘কোন জায়গাটার নাম করেছে ৰল তো--- ৰনহুগলীর না ৰাজেশিবপুরের’’৷

সেয়ানাসুন্দরী ৰললেন---‘‘অত তো জিজ্ঞেস করিনি৷ কারণ যে লোকটি এসেছিল সে ৰললে বিজিতৰাৰু ব্রজৰাৰুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ৷ নাম নিলেই ৰুঝতে পারৰেন’’৷

ব্রজবল্লভ বসাক বললে---‘‘তাও তো জিজ্ঞেস করিনি কারণ লোকটি বললে, নেমতন্নকারীর নাম শুণলেই ব্রজৰাবু বুঝতে পারবেন, বেশী বলার দরকার পড়বে না’’৷

ব্রজবল্লভ মহাফাঁপরে পড়লেন৷ তিনি এবার বাস্তব বুদ্ধি প্রয়োগ করলেন৷ বিজিত বাঁডুজ্জের ছেলেটি চাকরী করে৷ সুতরাং চাকরী পাওয়ার পরে নিশ্চয় তার বিয়ের ঘটকালি শুরু হয়েছিল৷ তাই তার বিয়েই বেশীই সম্ভব৷ বিজিত বসুর ছেলেটি পেপেচুরির কাজ পাৰে, তারপরে পাত্রীর সন্ধান হবে, তারপরে দেনাপাওনার কথা হবে, ঠিকুজী গোষ্ঠী বিচার করে তারপরে পাকা দেখা হবে৷ তারপরে না বিয়ে! শতকরা ৯৯.৯ ভাগ সম্ভাবনা বিজিত বাঁড়ুজ্জের ছেলের বিয়ে৷

বলাগড় থেকে ৰাজেশিবপুর যেতে গেলে সোজা ট্রেনে যাওয়া যাবে না৷ গঙ্গা পার হতে হবে৷ কিন্তু বনহুগলী যেতে গঙ্গা পার হতে হয় না৷ কিন্তু ৰনহগলী যেতে গঙ্গা পার হতে হয় না৷ ব্রজবল্লভ বসাক কী করৰেন! ঘনিষ্ঠ বন্ধু তো৷ আত্মীয়ের চেয়ে বন্ধুর টান বেশী৷ তাই তিনি যেভাবেই হোক বনহুগলীতে গিয়ে পৌঁছুলেন সন্ধ্যে একটু আগেই৷ বন্ধুর ছেলের বিয়ে...... একেবারে ৰাইরের লোকের মত এসেই হাতটি ধুয়ে পাতে ৰসে পড়া যায় না৷ দরকার পড়লে ময়দা মাখতে হৰে, নুচি ৰেলতে হৰে, এমনকি কোমরে গামছা জড়িয়ে নুচি ভাজতে হৰে কিংবা ৰাঁ হাতে ডালের ৰালতি, ডান হাতে হাতা নিয়ে পরিবেশন করতে হবে৷ ঘাম মোছবার জন্য কাঁধে একটি গামছাও রাখতে হবে৷ তাই একটু আগেই যাওয়া দরকার৷

বনহুগলীতে পৌঁছলেন ব্রজবল্লভ বসাক৷ কিন্তু এ কি! বিজিত বাঁড়ুজ্জের বাড়ী দেখে বিয়ে বাড়ী ৰলে তো মনেই হচ্ছে না৷ বাইরের দিকে একটা আলোও জ্বলছে না৷ সামনে বৈঠকখানায় একটা কম পাওয়ারের আলো টিমটিম করে জ্বলছে৷ কড়া নেড়ে দরজা খোলাতে হল৷

বিজিত বাঁড়ুজ্জে বললেন--- ‘‘এসো এসো, ব্রজ, তোমার যে আজকাল টিকিই দেখতে পাই না৷

ব্রজবল্লভ ঘরে ঢুকে যা দেখলেন তাতে তার মনে নেৰে এল সন্দেহের কালো ছায়া৷ এ ৰাড়ী তো বিয়ে-ৰাড়ী নয়৷ পরিস্থিতি সামলাবার জন্যে বিজিত বাঁড়ুজ্জের সঙ্গে তিনি দু’চারটি কুশল সংবাদের আদান প্রদান করলেন ৷ বিজিত বাঁড়ুজ্জের চোখ মুখ দেখে মনে হল তার ঘুম আসছে৷ তখন রাত্রি পৌনে ন’টা৷ বিজিত বাঁড়ুজ্জে হাঁই তুূলতে তুলতে ৰললেন, ‘‘একটু সকাল সকাল খাই কী না আর বোঝ তো বয়স হয়েছে--- বিশেষ কিছু সহ্য হয় না৷ রাত্তিরে খই দুধ খেয়ে শুয়ে পড়ি৷ ওটা একটু হাল্কা জিনিস তো৷’’

ব্রজবল্লভ বসাক ৰললেন, হ্যাঁ, আমিও অনেকক্ষণ ধরে উঠৰ উঠৰ করছিলাম৷ অনেকদিন পরে তোমাকে দেখে এত আনন্দ হচ্ছে যে কী ৰলৰ৷ ......আচ্ছা চলি৷ তা তোমার ছেলেটি এখন কী করছ? তার বিয়ে-থার কী হল?’’

বিজিত বাঁড়ুজ্জে বললেন,---‘‘পাত্রীর খোঁজ তো চলছে, তবে পাত্রী পছন্দ হচ্ছে তো দেনা-পাওনায় মিলছে না, আবার দেন-পাওনা মিলছে তো পাত্রী পছন্দ হচ্ছে না৷ তবে আশা করি সামনের মাঘ মাসে বিয়ের ব্যবস্থা হৰে৷ সে  খবর তো তুমি আগেই পেয়ে যাৰে’’৷

ব্রজবল্লভ বসাক বাড়ীতে ফিরে এলেন৷ কড়া নাড়তেই সেয়ানা-সুন্দরী দরজা খুলে দিলে৷ ঘরে ঢুকেই ব্রজবল্লভ স্ত্রীর দিকে একটু বিষণ্ণ্ মুখে তাকালেন৷

স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন---বিয়েবাড়ীতে কেমন খাওয়া-দাওয়া হ’ল?

ব্রজবল্লভ বসাক বললেন---‘‘আগে এক গেলাস ঠাণ্ডা জল দাও দিকি’’৷

ব্রজবল্লভ ধপাস্‌ করে চেয়ারে ৰসে হাতটা রাখলেন ডানগালের নীচে৷ জোরে একটা        দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন৷ মনে মনে বললেন, নুচি-পোলাও দুই-ই৷ সেয়ানাসুন্দরী জল নিয়ে এলো৷ ব্রজবল্লভ বসাককে বললে,---‘‘কী খেয়েছো তোমাকে আর বলতে হবে না, আমি ৰুঝে নিয়েছি’’৷

ব্রজবল্লভ বসাক ৰললেন---‘কী খেয়েছি ৰল দেখি’?

সেয়ানাসুন্দরী বললে,---‘নিশ্চয়ই পোলাও’৷

ব্রজবল্লভ শুধোলেন--- ‘কী করে ৰুঝলে’?

সেয়ানাসুন্দরী ৰললে---‘ওটুকু আমি জানি গো জানি, পোলাও খেলে দারুণ জলটান হয়’৷

একেলা পথে

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

আমার ডাকে সাড়া দিতে

  ভুলেছো কি দয়াময়,

হাজার কাজে ব্যস্ত রয়েছো

  পাওনি বুঝি সময়!

ফুল ফোটানো ধরা জাগানো

   ভোরের সূর্যোদয় ,

শেফালীর সাথে কথোপকথনে

    সুষমা কি কথা কয়?

ঝর্ণাধারায় নদী বয়ে যায়

    সুমধুর কলতানে,

সুখ-দুঃখের কাহিনী শোনাতে

    ছুটে সাগরের পানে!

নিশা অবসানে রবির কিরণে

    প্রভাতী পাখির গানে,

কালবৈশাখীর অকাল বৃষ্টি

    চাতকের অভিমানে !

 

আজও হিমালয় স্বমহিমায়

      মহৎ অঙ্গীকারে,

বালুকাবেলায় মরু সাহারায়

     খর বায়ু বহিবারে৷

ঘটনা বহুল বসুন্ধরায়

   সুখ-দুঃখের সংসার,

নিত্য নিয়মে বেলা বয়ে যায়

  তোমারি কি দায়ভার!

তোমার আমার এত ব্যবধান

জমা অভিমান পাহাড় প্রমান,

কর্মব্যস্ততার অছিলা দেখাও

   শিশু ভুলানোর ছলে!

বেলা বয়ে যায় সন্ধ্যা ঘনায়

   তিলে তিলে পলে পলে,

বিষাদ-হৃদয় আর নাহি সয়

    কেন দূরে, যাও বলে৷

আমি কেন তবে এসেছি জগতে

কোথায় যাব এলেম কোথা হতে,

   অজ্ঞ, বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ সবাই

     ব্যর্থ জবাব দিতে,

কাউকে চিনিনা জানিনা মানিনা

    তোমা পেতে চাই সাথে৷

থেকো নাকো দূরে হাত দুটি ধরে

     নিয়ে চল তব পথে,

সৃষ্টি-শ্রষ্টা অটুট বাঁধন

     প্রলেপ হৃদয়-ক্ষতে৷

নব অভিযান

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

বিষাক্ত কন্টকপথে পণ করে’ প্রাণ

শুরু হলো আমাদের নব অভিযান৷

মান নেই, খ্যাতি নেই,

নেই সমর্থন---আছে জ্বালা,

আছে ব্যঙ্গ ---সহস্র বন্ধন৷

শুভ কাজে যত শুনি তিক্ত অপবাদ

অট্ট হেসে তত পাই রোমাঞ্চের স্বাদ!

ড্রাগনেরা ঘিরে আছে প্রগতির পথ

সংগ্রামে প্রস্তুত আছি---নিলাম শপথঃ

জীবন-সংকটে কভু হটবোনা পিছে,

পেয়েছি অভ্রান্ত পথ মৃত্যুভয় মিছে!

মাঝপথে যদি নামে দুর্র্যেগের রাতি,

যদি ওঠে ক্ষুব্ধ ঝঞ্ঝা নাহি রয় সাথী

আমাদের অভিযান থামবে না তবু---

তিলে তিলে দেবো প্রাণ

দমবো না কভু৷৷

রূপসী বাংলা

লেখক
সাক্ষীগোপাল দেব

ধন্য আমি জন্ম আমার

          শস্য শ্যামল বঙ্গে,

ছয়টি ঋতু খেলে হেথায়

          নানা মধুর রঙ্গে৷

গ্রীষ্ম আসে রুদ্র যেন

          পোড়ায় জরাজীর্ণ

যত আছে সব পুরাতন

          অর্দ্ধমৃত শীর্ণ৷

বর্ষা যেন মঙ্গল ঘট

          ছড়ায় শীতল বারি,

ধরায় নব সৃষ্টি শুরু

          বার্র্ত যেন তারি৷

শরৎ এলো মেঘের ভেলায়

          কাশফুলেদের সাথে,

নবীন ঘাসের গালচে পাতা

          জ্যোৎস্না হাসে রাতে৷

হেমন্তেরই স্নিগ্দ সকাল

          ঘাসে শিশির বিন্দু,

শিউলি ফুলের মিষ্টি সুবাস

          রাতের শোভা ইন্দু৷

শীতের সাথে হিমেল হাওয়া

          আনে নূতন স্বাদ,

নলেন গুড়ের পিঠে ছাড়া

          জীবনটাই বরবাদ৷

বসন্ত যে ঋতুর রাজা

          রং বে-রং এর হোলি,

বঙ্গমায়ের চরণে দেয়

          প্রাণের অঞ্জলি৷