প্রভাতী

জলটান

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

সংস্কৃত ‘মদ’ ধাতুর একটি অর্থ হল যা শুষে আরাম পাওয়া যায় (ভাবারূঢ়ার্থ), যোগারূঢ়ার্থে জল, সরবৎ, পানা, ফলের রস ও যে কোন তরল বস্তু যা পানীয় পর্র্যয়ভুক্ত৷ উপরি-উক্ত যে বস্তু খেলে জলটান হয় অর্র্থৎ যে আহার গ্রহণের পর বারৰার  জলতেষ্টা পায় সেই বস্তুকে ম+ড= ‘ম’ নামে আখ্যাত করা হয়ে থাকে৷ যেমন কম জলে  ছাতু গুলে খেলেও বার বার জলতেষ্টা পায়৷ এই ধরনের জলতেষ্টাকে ‘জলটান’ ৰলা হয়৷

তোমরা সেই ৰলাগড়ের ব্রজবল্লভ ৰসাকের জলটানের  গল্প শুণেছ তো! যদি না শুণে থাক তো একবার ৰলি৷ ব্রজবল্লভ ৰসাক থাকতেন ৰলাগড়ে--- তাঁর পৈতৃক ভদ্রাসনে৷

কিন্তু ব্রজবল্লভ  ৰসাকের  অন্তরঙ্গ  বন্ধুরা ৰেশ কিছুটা দূরে থাকতেন ৰন-হুগলীতে, অপর অন্তরঙ্গ বন্ধু বিজিত বসু  থাকতেন  ৰাজেশিবপুরে৷ বিজিত ৰাঁরুজ্জের  ছেলেটি লেখাপড়া সমাপ্ত করে সদ্য সেই যে কী যে একটা সরকারী বিভাগ আছে যেখানে খাদ্যশস্য ওজন করে দাম দিয়ে গুদামজাত করা হয় সেই বিভাগটিতে অল্পদিন হল কাজ পেয়েছে৷ আর বিজিত বসুর  ছেলেটি এম.এ. পাশ করেছে, হুগলীর কোন একটি কলেজে  তার পেপেচুরির চাকরি হলো-হলো৷

একদিন প্রাতর্ভ্রমণ সেরে ব্রজবল্লভ বসাক বাড়ী ফিরে আসতেই তাঁর স্ত্রী সেয়ানাসুন্দরী বললেন, ‘‘ওগো শোন, তোমার বন্ধু বিজিতৰাৰু এইমাত্র খৰর পাঠিয়েছেন, আজ রাত্তিরে ওঁর ছেলের ৰউ-ভাত৷ তোমাকে নেমতন্ন রক্ষা করতে যেতেই হৰে৷ নইলে উনি মনে ভারী দুঃখু পাৰেন৷ কাজকর্মে অত্যধিক ব্যস্ত থাকায় নিজে আসতে পারলেন না৷ নইলে তিনি নিজেই এসে তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন’’৷

ব্রজবল্লভ বসাক সেয়ানা সুন্দরীকে শুধোলেন---‘‘কোন জায়গাটার  নাম করেছে ৰল তো--- ৰনহুগলীর না ৰাজেশিবপুরের’’৷

সেয়ানাসুন্দরী ৰললেন---‘‘অত তো জিজ্ঞেস করিনি৷ কারণ যে লোকটি এসেছিল সে ৰললে  বিজিতৰাৰু ব্রজৰাৰুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ৷ নাম নিলেই ৰুঝতে পারৰেন’’৷

ব্রজবল্লভ বসাক বললে---‘‘তাও তো জিজ্ঞেস করিনি কারণ লোকটি বললে, নেমতন্নকারীর নাম শুণলেই ব্রজৰাবু  বুঝতে পারবেন, বেশী বলার দরকার  পড়বে না’’৷

ব্রজবল্লভ মহাফাঁপরে পড়লেন৷ তিনি এবার বাস্তব বুদ্ধি প্রয়োগ করলেন৷ বিজিত বাঁডুজ্জের ছেলেটি চাকরী করে৷ সুতরাং চাকরী পাওয়ার পরে নিশ্চয় তার বিয়ের ঘটকালি শুরু হয়েছিল৷ তাই তার বিয়েই বেশীই সম্ভব৷ বিজিত বসুর ছেলেটি পেপেচুরির কাজ পাৰে, তারপরে পাত্রীর সন্ধান হবে, তারপরে দেনাপাওনার কথা হবে, ঠিকুজী গোষ্ঠী বিচার করে তারপরে পাকা দেখা হবে৷ তারপরে না বিয়ে! শতকরা ৯৯.৯ ভাগ সম্ভাবনা বিজিত বাঁড়ুজ্জের ছেলের বিয়ে৷

বলাগড় থেকে ৰাজেশিবপুর যেতে গেলে সোজা ট্রেনে  যাওয়া যাবে না৷ গঙ্গা পার হতে হবে৷  কিন্তু বনহুগলী যেতে গঙ্গা পার হতে হয় না৷ কিন্তু ৰনহগলী যেতে গঙ্গা পার হতে হয় না৷ ব্রজবল্লভ বসাক কী করৰেন! ঘনিষ্ঠ বন্ধু তো৷ আত্মীয়ের  চেয়ে বন্ধুর টান বেশী৷ তাই তিনি যেভাবেই হোক বনহুগলীতে গিয়ে পৌঁছুলেন সন্ধ্যে একটু আগেই৷ বন্ধুর ছেলের বিয়ে...... একেবারে ৰাইরের লোকের মত এসেই হাতটি ধুয়ে পাতে ৰসে  পড়া যায় না৷  দরকার পড়লে ময়দা মাখতে হৰে, নুচি ৰেলতে হৰে, এমনকি  কোমরে গামছা জড়িয়ে নুচি ভাজতে হৰে কিংবা ৰাঁ হাতে ডালের ৰালতি,ডান হাতে হাতা নিয়ে  পরিবেশন করতে হবে৷ ঘাম মোছবার জন্য কাঁধে একটি গামছাও রাখতে হবে৷ তাই একটু আগেই  যাওয়া দরকার৷

বনহুগলীতে পৌঁছলেন ব্রজবল্লভ বসাক৷ কিন্তু এ কি! বিজিত বাঁড়ুজ্জের বাড়ী দেখে বিয়ে বাড়ী ৰলে তো মনেই হচ্ছে না৷  বাইরের দিকে একটা আলোও জ্বলছে না৷ সামনে বৈঠকখানায় একটা কম পাওয়ারের আলো টিমটিম করে জ্বলছে৷ কড়া নেড়ে দরজা খোলাতে হল৷

বিজিত বাঁড়ুজ্জে বললেন--- ‘‘এসো এসো, ব্রজ, তোমার যে আজকাল টিকিই দেখতে পাই না৷

ব্রজবল্লভ ঘরে ঢুকে যা দেখলেন তাতে তার মনে নেৰে  এল সন্দেহের  কালো ছায়া৷ এ ৰাড়ী তো বিয়ে-ৰাড়ী নয়৷ পরিস্থিতি সামলাবার জন্যে বিজিত বাঁড়ুজ্জের সঙ্গে তিনি দু’চারটি কুশল সংবাদের আদান প্রদান করলেন ৷ বিজিত বাঁড়ুজ্জের চোখ মুখ দেখে মনে হল তার ঘুম আসছে৷ তখন রাত্রি পৌনে ন’টা৷ বিজিত বাঁড়ুজ্জে হাঁই তুূলতে তুলতে ৰললেন, ‘‘একটু সকাল সকাল খাই কী না  আর  বোঝ তো বয়স হয়েছে--- বিশেষ কিছু সহ্য হয় না৷ রাত্তিরে খই দুধ খেয়ে শুয়ে পড়ি৷ ওটা একটু হাল্কা জিনিস তো৷’’

ব্রজবল্লভ বসাক ৰললেন, হ্যাঁ, আমিও অনেকক্ষণ ধরে উঠৰ উঠৰ করছিলাম৷ অনেকদিন পরে তোমাকে দেখে এত আনন্দ হচ্ছে যে কী ৰলৰ৷ ......আচ্ছা চলি৷ তা তোমার  ছেলেটি এখন কী করছ? তার বিয়ে-থার কী হল?’’

বিজিত বাঁড়ুজ্জে বললেন,---‘‘পাত্রীর খোঁজ তো চলছে, তবে পাত্রী পছন্দ হচ্ছে তো দেনা-পাওনায় মিলছে না, আবার দেন-পাওনা মিলছে তো পাত্রী পছন্দ হচ্ছে না৷ তবে আশা করি সামনের  মাঘ মাসে বিয়ের ব্যবস্থা হৰে৷ সে   খবর তো তুমি আগেই  পেয়ে যাৰে’’৷

ব্রজবল্লভ বসাক বাড়ীতে ফিরে এলেন৷ কড়া নাড়তেই সেয়ানা-সুন্দরী দরজা খুলে দিলে৷ ঘরে ঢুকেই  ব্রজবল্লভ স্ত্রীর দিকে একটু বিষণ্ণ্ মুখে তাকালেন৷

স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন---বিয়েবাড়ীতে কেমন খাওয়া-দাওয়া হ’ল?

ব্রজবল্লভ বসাক বললেন---‘‘আগে এক গেলাস ঠাণ্ডা জল দাও দিকি’’৷

ব্রজবল্লভ ধপাস্‌ করে চেয়ারে ৰসে হাতটা রাখলেন ডানগালের নীচে৷ জোরে একটা               দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন৷ মনে মনে বললেন, নুচি-পোলাও দুই-ই৷ সেয়ানাসুন্দরী জল নিয়ে এলো৷ ব্রজবল্লভ বসাককে বললে,---‘‘কী খেয়েছো তোমাকে আর বলতে হবে না, আমি  ৰুঝে নিয়েছি’’৷

ব্রজবল্লভ বসাক ৰললেন---‘কী খেয়েছি ৰল  দেখি’?

সেয়ানাসুন্দরী বললে,---‘নিশ্চয়ই পোলাও’৷

ব্রজবল্লভ শুধোলেন--- ‘কী করে ৰুঝলে’?

সেয়ানাসুন্দরী ৰললে---‘ওটুকু আমি জানি গো জানি, পোলাও খেলে দারুণ জলটান হয়’৷

নোতুন ব্যাখ্যায় মনটা জুড়ায়

লেখক
শিবরাম চক্রবর্তী

জাতের নামে বজ্জাতি ভাই

এসব বিভেদ মেনো না

এক সে মানব জাতি সবাই

থাকা চাই এই ভাবনা৷

 

হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান

ধর্মমতের বিভেদ নাই

মানব ধর্মের সারকথা

মানুষ-মানুষ ভাই-ভাই!

 

ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা

হেন কথায় মন যদি ধায়,

জগৎ তখন হলে যা তা

মরব মোরা গোলক ধাঁধায়৷

 

মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে কি

সত্য কভু জানা যাবে!

আমিই যদি মিথ্যা হলাম

বিচারও আমার মিথ্যা হবে৷

শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি

যুক্তির দ্বারা বলেন এবার

ব্রহ্ম সত্য ঠিকই কিন্তু

আপেক্ষিক সত্য জগৎ সংসার৷

এই কথা আজ শোনার পরে

জগতকে আর যাবে না ভুলে,

এ বিশ্বকে আপন করে

থাকে সবাই মাথা তুলে৷

নজরুল

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

স্বাদেশিকতার  উদ্দীপনায়

                জাগিয়ে গিয়েছো জাতিরে,

প্রভাতীর গানে মুখর করেছো

                আধার-সুপ্ত রাতিরে৷

অত্যাচারীর মারণের গান

                লিখেছো সাহস-দীপ্ত,

লাঞ্ছিত যত উৎপীড়িতের

                হৃদয় করলে ক্ষিপ্ত৷

চারণ-গীতির সুরের আগুনে

                বাঙালীর প্রাণ যাঁতালে

‘অগ্ণিবীণা’র উন্মাদনায়

                রক্তের স্বাদে মাতালে৷

বিপ্লবী তুমি, সৈনিক তুমি

                বিদ্রোহী দুর্দান্ত!

ব্রিটিশের শত দমন-পীড়নে

                হওনি কখনো ক্ষান্ত৷

ডেণ্টিষ্টের দোকানে

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

যোগারূঢ়ার্থে ‘গঙ্গাক্ষেত্র’ বলতে সেই স্থানকে বোঝায় যে স্থান থেকে পদব্রজে এক অহোরাত্রের মধ্যে গঙ্গাতীরে পৌঁছানো যায়৷ বৌদ্ধোত্তর যুগে ভারতে যখন গঙ্গামহিমা প্রবল, অন্যান্য দেব–দেবীর মত গঙ্গাও একটি প্রতিপত্তিশালিনী দেবী, সেই সময় মানুষের গঙ্গাক্ষেত্রে বসবাস করাকে শ্লাঘার জিনিস বলে মনে করত৷ তাদের মনে একটা নিশ্চিততা থাকত যে মৃত্যুর পরে তাদের চিতাভস্ম গঙ্গানীরে একীভূত হয়ে থাকবে৷ সেই সময় একটা অলিখিত নিয়ম তৈরী হয়েছিল যে যারা গঙ্গাক্ষেত্রের অধিবাসী তাদের মধ্যে যারা সঙ্গতিসম্পন্ন তাদের দাহক্রিয়া গঙ্গাতীরে হবে ও তাদের চিতাভস্ম কলসোৎক্রান্ত জলে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হবে৷ অস্থি হরিদ্বারে, প্রয়াগ সঙ্গমে বা গঙ্গাসাগরে বিসর্জন দিতে হবে৷ যাঁরা গঙ্গাক্ষেত্রের বাইরে থাকতেন তাঁদের ক্ষেত্রে দাহক্রিয়া যে কোন জলাশয়ে করা যেতে পারে কিন্তু তৎপূর্বে মন্ত্রদ্বারা সেই জলাশয়ের জলকে গঙ্গা অথবা গোদাবরীর (দক্ষিণ গঙ্গা) জলের মত পবিত্র করে নেওয়া হবে ও দাহান্তে অস্থি প্রয়াগ বা হরিদ্বার বা গঙ্গাসাগরে বিসর্জন করা হবে৷ কখনও কখনও এমনও দেখা যেত যে কিঞ্চিৎ অবস্থাপন্ন মানুষেরা বার্দ্ধক্যে উপনীত হবার আগেই নিজের বাস্তুভিটা ত্যাগ করে অথবা বাস্তুভিটার দায়িত্ব পুত্রাদির হস্তে সমর্পণ করে নিজেরা গঙ্গাতীরে এসে বসবাস করতেন৷ যেমন বসবাস করেছিলেন ডাকার অ্যারিয়ল খাঁ থেকে আসা বনমালী ওঝা নদীয়ায় ফুলিয়ার গঙ্গার তীরে৷ এই বনমালী ওঝার পুত্র ছিলেন নামজাদা কবি কৃত্তিবাস ওঝা (মুখোপাধ্যায়) যিনি বাংলা রামায়ণ লিখেছিলেন৷ শ্রীহট্ট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমার ডাকা–দক্ষিণগ্রাম থেকে নবদ্বীপে এসে বসবাস শুরু করেন জগন্নাথ মিশ্র৷ তাঁর পুত্র বিশ্বম্ভর মিশ্র পরবর্ত্তীকালে মহাপ্রভু চৈতন্যদেব নামে বিশ্ববিখ্যাত হয়েছিলেন৷ তোমরা লক্ষ্য করবে তুলনামূলক বিচারে বাংলার অন্যান্য জায়গার চেয়ে হাওড়া–হুগলী–বর্দ্ধম্ ও মুর্শিদাবাদের গঙ্গার তীরগুলোতে শিক্ষিত ব্রাহ্মণ–কায়স্থের বাস বেশী৷ তার কারণও ওই একটাই৷ চব্বিশ পরগণা জেলার দক্ষিণাংশে এই ধরণের সারস্বত মণ্ডলী সেকালে দেখা যায় নি৷ তার কারণ দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় চলেছিল তখনও গঙ্গা বদ্বীপে ভাঙ্গনের লীলাখেলা৷

তোমরা নিশ্চয়ই নজর দিয়েছ এইভাবে গড়ে উঠেছিল বালি, বেলুড়, উত্তরপাড়া, কোন্নগর, শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটী, ভদ্রেশ্বর, চন্দননগর, চুচঁড়ো, বাঁশবেড়ে, জীরাট, গুপ্তিপাড়া, কালনা, পূর্বস্থলী, নবদ্বীপ, অগ্রদ্বীপ, দাঁইহাট, কাটোয়া, উদ্ধরণপুর, গঙ্গাটিকরী, ঝামটপুর প্রভৃতি বর্দ্ধিষ্ণু সারস্বত স্থানগুলো৷ ভাঙ্গনের প্রাচুর্য্য থাকায় পূর্বদিকে নামজাদা কয়েকটি স্থান ভাটপাড়া, নবহট্ট (নৈহাটী), কাঞ্চনপল্লী, (কাঁচড়াপাড়া), গৌরীপুর (গরফে), কুমারহট্ট (হালিশহর) বাদে তেমন কোন বড় শহর গড়ে ওঠেনি৷ তাই মানুষের মুখে মুখে কথা উঠেছিল–রাঢ়ের গঙ্গাতীর কাশীর সমান৷ ‘‘গঙ্গার পশ্চিমকূল বারাণসী সমতুল’’৷ স্বামী বিবেকানন্দও সেইজন্যে রাঢ়েতেই তাঁর প্রধান কেন্দ্র স্থাপন করতে চেয়ে ছিলেন৷ সেকালে গঙ্গাক্ষেত্রে বসবাস করার জন্যে মানুষ রাঢ়ের গঙ্গাতীর (ভাগীরথী তীর) বাছত তো বটেই, যাঁরা একটু অবস্থাপন্ন তাঁরা বার্দ্ধক্যে পুত্র–পুত্রবধূর হাতে সংসারের ভার দিয়ে কাশীতে চলে যেতেন৷ অর্থাৎ তাঁরা গঙ্গাক্ষেত্রে বসবাসের জন্যে কাশীবাস করতেন৷ এই ভাবে গত প্রায় দেড় হাজার বছর ধরেই বাঙলার অনেক ব্রাহ্মণ ও কায়স্থ পরিবার কাশীতে গিয়ে বসবাস করে এসেছেন ও আজও করছেন৷ ভাষা ও সংস্কৃতিতে তাঁরা বাঙলার সকল প্রথাকেই মেনে চললেও ভূমিগত দূরত্বের জন্যে যোগাযোগ কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছল৷ এজন্যে তাঁরা একটা কাশীয়াল ব্রাহ্মণ সমাজ গড়ে নিয়েছিলেন৷ এতে রাঢ়ী–বারেন্দ্র বৈদিক সব শ্রেণীর ব্রাহ্মণরাই ছিলেন৷ এই কাশীয়াল ব্রাহ্মণরা আজ ছিন্ন–বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন৷ এখন তাঁদের সামাজিক আদান–প্রদান বাঙলার ব্রাহ্মণের সঙ্গেই হয়৷

আমার এক পরিচিত মানুষ ছিলেন৷ নাম কৃষ্ণগোপাল সান্ন্যাল৷ মেয়ের বিয়ের জন্যে তিনি তখন ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছেন৷ একদিন বাজারে বেল কিনতে গিয়ে দেখি পাশেই দাঁড়িয়ে সান্ন্যাল মশাই ..... তিনিও বেলের খরিদ্দার৷

পরের দিন শিবচতুর্দ্দশী কি না সান্ন্যাল মশায় আমাকে বললেন–অণিমার এবার একটা হিল্লে হ’ল৷ অনেক খুঁজে পেতে একটা পাত্র পেয়েছি৷ ছেলের বাড়ী কাশীতে৷ লক্ষ্ণৌয়ের ইঞ্জিনিয়ার৷

আমি বললুম–খুব ভাল কথা, খুব ভাল কথা৷

সান্ন্যাল মশায় বললেন–আসছে রবিবার দিন স্থির হয়েছে৷

পরের দিন সকালে আকন্দ ফুলের দোকানে আবার সান্ন্যাল মশাইয়ের সঙ্গে দেখা৷ তাঁর তখন ম্লান মুখ বিষাদে বিরস৷

আমি বললুম–এ কী হ’ল৷ কালকের পূর্ণিমার পর রাত কাটতে না কাটতে অমাবস্যা একেবারে দিনের বেলায় অমাবস্যা৷ হলটা কী

সান্ন্যাল মশায় বললেন–বিয়ে কেঁচে গেল৷

আমি বললুম–সে কী কথা পাত্রপক্ষের কি খাঁই বেড়ে গেছে, না কোন দুষ্ট মানুষ ভাংচি দিয়েছে?

সান্ন্যাল মশায় বললেন–খাঁইও বাড়েনি, ভাঁংচিও দেয়নি৷ পাকা দেখা মানে আশীর্বাদ তো হয়েই গেছল৷

আমি বললুম–তবে?

সান্ন্যাল মশায় বললেন–ওরা কেশেল বামুণ, ওদের ঘরে মেয়ে দি কী করে

সান্ন্যাল মশায়ের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল তার পনের বছর পরে একটা দাঁত বাঁধানোর দোকানে৷ দেখলুম সান্ন্যাল মশায় ও তাঁর সঙ্গে বসে আছে অণিমা৷

আমি বললুম–কী ব্যাপার

সান্ন্যাল মশায় বললেন–অণিমার সামনের দুটো দাঁত পড়ে গেছে৷ না বাঁধালে চলে না৷ পাত্রপক্ষ দেখলেই বলবে–পাত্রী থুরথুরী বুড়ি আমাদের পাত্রের দিদিমা৷

আমি বললুম–দাঁত তো বাঁধাতেই হবে তবে অণিমার বয়স আর কতই বা হ’ল৷

সান্ন্যাল মশায় বললেন–এমন কিছু নয়৷ এই সবে পঁয়ত্রিশে পা দিয়েছে৷

যাই হোক আমাদের সামাজিক কুসংস্কার আর সেকালের কেশেল ব্রাহ্মণদের সম্বন্ধে নদীয়ার ব্রাহ্মণদের অনীহার গল্প শুণলে তো এই ফলটা কী ভাল হয়েছিল?

(শব্দ চয়নিকা, ১য়/১০৫)

তোমার আবির্ভাব দিনে

লেখক
আচার্য গুরুদত্তানন্দ অবধূত

আঁধারের বুক চিরে তুমি এলে

জাগল রং পূবাকাশে,

তরুশাখে  বিহগ গাহে গীতি

হাসল নদীর জল রঙে রঙে

ফুটল কুসুম পাহাড়ী বনে৷

বাজল সবে আবাহনী তান...

হ’ল আলোক স্নান জীবনে,

নেচে উঠল প্রাণ সর্বত্র,

সঞ্জীবিত হল  এ ধরা

বাড়ল  শোভাতব আগমনে৷

আলোক উজ্জ্বল রথে তুমি এলে

সরে গেল আঁধারি কালো

হ’ল ভাস্বর এ চরাচর,

বিস্তারিলে তুমি প্রাণ,

রঞ্জিত হ’ল ধরা,

হাসলে তুমি আড়ালে, আনমনে৷

ঊণিশের আহ্বান

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিন্‌হা

এসো সদা সচেতন বাংলা ভাষী যত নরনারী

আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা বাঙলা মায়ের সন্তান

হাতে রাখো হাত, মান-অভিমান ছাড়ি,

ওই শোন, অমর ঊণিশের দৃপ্ত আহ্বান

বাঁচাতে বাঙালীর মর্যাদা, বাংলা ভাষার সম্মান৷

বেইমান, শয়তান, হীনচক্রী হেনেছে আঘাত

বাঙলার বুকে, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি দিয়েছে নির্বাসন

ঢাকা-শিলচরে বাঙালীর গর্বিত প্রতিবাদ

পুলিশ-দুর্বৃত্তের গুলিবর্ষণে সঁপেছে জীবন

বাঁচাতে বাঙালীর মর্যাদা, বাংলা ভাষার সম্মান৷

ঢাকার একুশে ফেব্রুয়ারী, শিলচরের ঊণিশে মে

বঙ্গভাষা-সংগ্রামের ইতিহাস মিলে-মিশে একাকার

বাঙালীর কণ্ঠরোধে শাসকের অত্যাচার এসেছে নেমে

তবু থামেনি ওরা, চিরবিপ্লবী, নির্ভয়, দুর্জয়-দুর্নিবার

বাঁচাতে বাঙালীর মর্যাদা, বাংলা ভাষার সম্মান৷

এসো বাংলা ভাষাভাষী ভাই-বোন সব

ডাকে একাদশ শহীদের রক্তে লেখা উজ্জ্বল নিশান

ধর্ম-বর্ণ-জাতের বিভেদ ভুলে প্রতিটি বাঙালী নিই শপথ---

গড়বই বাঙালীজাতির স্বদেশ, শ্রেষ্ঠ বাঙালীস্তান

বাঁচাতে বাঙালীর মর্যাদা, বাংলা ভাষার সম্মান৷

ছাঁয়া এঁকে

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

সেবার পুজোর ছুটিতে সময়টা নিরিবিলি কাটাব বলে রাঁচিতে এসে একটা হোটেলে আস্তানা নিয়েছিলুম৷ জিনিসপত্র গুছিয়ে গাছিয়ে রেখে স্নানটা সেরে নিতে বাথরুমে এসে দেখি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ৷ বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি এমন সময় সেই হোটেলের আরো দুজন বোর্র্ডর স্নান করতে এসে সেখানে দাঁড়ালেন৷

দু’চারজন লোক এক জায়গায় জড়ো হলেই গল্পগুজব আলাপ পরিচয় শুরু হয়৷ তাই আমরা পরস্পরের সঙ্গে কর্থাবার্তা বলতে লাগলুম৷ তাঁরা যখন আমার পরিচয় পেলেন, বিস্ময়ে ফেটে পড়ে একজন বললেন, আপনার মত একজন লোকই ম্যানেজার খুঁজছেন৷ চলুন এখনি দেখা করবেন৷ কাজটা  বড়ই জরুরী৷ এই বলে তিনি আমাকে ম্যানেজারের কাছে নিয়ে গেলেন৷

ম্যানেজার আমার পরিচয় পেয়ে বিস্মিত হয়ে বললেন, আপনিই বিখ্যাত গোয়েন্দা বিকাশবাবু! আমাদের এ বিপদে রক্ষা করতেই হবে৷ এই বলে ম্যানেজার তখন তাঁর বিপদের কথা খুলে বললেন৷ রোজই বোর্ডারদের কারো না কারো জিনিস হারাচ্ছে৷ তাঁরা এসে আমার উপর তম্বি করে যাচ্ছেন৷ হোটেলের বদনাম হতে শুরু হয়েছে৷ এইভাবে আর কিছুদিন চললে হোটেল আমার শিকেয় উঠবে৷ ছেলেমেয়ে নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে৷ এই বলে ম্যানেজার আকুল হয়ে আমার দু’হাত জড়িয়ে ধরলেন৷ তাঁর অনুরোধ এড়াতে  না পেরে তাঁকে সাহস দিয়ে বলি, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন৷ ম্যানেজারকে তো মুখে আশ্বাস দিলুম কিন্তু কি উপায়ে  যে কোন কিনারা হবে তার কোন সূত্র না পেয়ে দিশাহার হয়ে পড়লুম৷ শেষে মাথায় একটা বুদ্ধি এল৷

সেদিন রাতে শুতে যাবার আগে আমার টাকা পয়সা সব বার করে শব্দ করে করে ঘরে যে হোটেলের টেবিলটা ছিল তার টানায় রাখতে লাগলাম৷ তারপর টেবিলের উপর টেবিল ল্যাম্পটা জ্বেলে শুয়ে পড়লুম৷ শুয়ে পড়বার আগে দরজাটা খুলেই দেখি চশমা-পরা একটা লোক দাঁড়িয়ে৷ আমায় দেখেই সে সরে পড়ল৷

মাঝরাতে খুট করে একটা শব্দ হতে চেয়ে দেখি দেয়ালে একটা ছায়া পড়েছে৷ বুঝতে পারলুম টেবিল ল্যাম্পটা আড়াল করে যে দাঁড়িয়েছে এটা তারই ছায়া৷ আর সেই লোকটাই যে সকলের জিনিস সরায় সেটা বুঝতেও দেরি হল না৷

আমি ভাবলুম লোকটাকে ধরতে গেলে যদি সে পালায় তাহলে তাকে চোর বলে সনাক্ত করলেও প্রমাণ অভাবে তার অপরাধ গণ্য হবে না৷ আমার মাথার বালিশের নীচে একটা পেন্সিল ছিল৷ তাই সেই পেন্সিলটা দিয়ে ছায়ার মাপে তার সব ধারে  দাগ কেটে দিলুম৷ একটা মানুষের মাপ আঁকা হয়ে গেল৷ এত নিঃশব্দে উঠেছিলুম যে সে টের পেলে যখন ছায়া আঁকাটা শেষ করে তাকে ধরতে গেলুম৷ আমার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে সে তক্ষুনি পালিয়ে গেল৷

তার পরদিন সকালে ম্যানেজারকে ডেকে পাঠিয়ে বললুম, আপনার হোটেলের বিপদের একটা কিনারা করেছি৷ এখনি চোরকে ধরে দেব৷ হোটেলের সব লোককে এই ঘরে ডেকে  পাঠিয়ে বললুম, আপনার হোটেলের বিপদের একটা  কিনারা করেছি৷ এখনি চোরকে ধরে দেব৷ হোটেলের  সব লোককে এই ঘরে ডেকে আনুন৷

ম্যানেজারের আদেশে সকলেই এসে ঘরের বাইরে ভিড় করে দাঁড়াল৷ আমার ঘরের সব জানালা বন্ধ৷ ভেতরটা অন্ধকার৷ টেবিলের উপর ল্যাম্পটা জ্বলছে৷ একজন করে এসে টেবিলের সামনে দাঁড়ায়, আমি দেওয়ালের দিকে ফিরে বলি, এ নয়৷

সব শেষে গত রাতের সেই লোকটি টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াতে আমি বলে উঠলাম, এই লোকটাই আসামী৷ এর কাছেই সব কিছু পাবেন৷

ম্যানেজার বিস্মিত হয়ে বললেন, এই লোকটা আমাদের  সব থেকে বিশ্বাসী কর্মচারী৷

তখন ম্যানেজারকে রাত্রের সব ঘটনা খুলে বলি৷ তারপর দেওয়ালের দিকে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেখাই লোকটার  ছায়ার সঙ্গে আমার পেন্সিলের দাগ হুবুহু মিলে গেছে৷

এই বলে বিকাশদা থামলেন৷ গল্পটি তিনি আমাদের তাঁর কলকাতার বাড়িতে বসে বলছিলেন৷ আমাদের মধ্যে সুকান্তর ছিল একটু খুঁতখুঁতে মন৷ সে বললে, বিকাশদা, যখন তুমি লোকটার ছায়ারছবি আঁকছিলে তখন সে কোন শব্দ শুনে সাবধান হয়নি এ কথা কি বিশ্বাসযোগ্য? বিকাশদা গভীরভাবে বললেন, লোকটা কালা ছিল যে৷

আদর্শানুরাগ

লেখক
আচার্য গুরুদত্তানন্দ অবধূত

আদর্শেতে অনড় অটুট

কোন মতেই টলবনা,

হিতের কাজেই থাকবো রত

নিজেকে কভু ছলবনা৷

অসীম অপার প্রীতির ধারা

বহিছে ওই নিরন্তর,

সকল কাজেই গুরুত্ব দিই

তাই তো মনে নেইকো ডর৷

উদার চিতের ভালবাসায়

নাশি যত তামস কালো,

আলোয় আলোয় ভরা ভুবন

আত্মীয়তায় সবই ভাল৷

কাজের মাঝেই বাঁচবো ধরায়

থাকবো না আর অবনত,

মাথার প’রে হাসেন যেজন

তাঁরই ভাবে থাকবো রত!

রবীন্দ্র স্মরণে

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

তোমার শুভ্র সমুজ্জ্বল জীবন পরিক্রমা

সূর্যের মতো সমস্ত আঙিনাকে স্পর্শ করে,

তোমার চিন্তার মূল্যায়ণ নীলিমার মতো

বিশ্বচেতনাকে উন্মুক্ত করে৷

শৈশব থেকে উদার ও

শিল্পসম্মত ঈশ্বর চেতনা,

ব্রাহ্ম সমাজের

আচার বিচার মুক্ত সংঘবদ্ধতা

পৌত্তলিকতার অবমাননা

তোমার সমস্ত জীবন দর্শন

রয়েছে তোমার কবিতায়,

সেই সম্পদ আহরণে চলি

তব কবিতার পাতায়৷

কাব্যচর্চার নাই পরিসীমা

উপকূলহীন বিস্তার,

পূর্ণ রয়েছে মুক্ত ও মণি, পান্না ও চুনি

নাই বুঝি আর শেষ তার৷

হে রূপদক্ষ---

রূপসাগরে ডুব দিয়ে তুমি

যা করিয়াছ আহরণ

নন্দন তত্ত্বের মাপকাঠিতে তাহা

সুগন্ধ করিছে বিতরণ৷

স্বদেশী আন্দোলনের ভাবাবেগ তোমায়

আন্দোলিত করেছিল বারে বারে,

সে কোন যুগাবতার, মহাসাধক

এসেছিল আমাদের মাঝারে!

তুমি ভেবেছিলে ভারতে প্রথম

গণশিক্ষার প্রয়োজন

নিজ মহিমায় গৌরবান্বিত

তোমার শান্তিনিকেতন৷

ব্যক্তি স্বাধীনতা,গ্রামীন ভাবনা,

বিশ্বভাবনায় তব স্বতন্ত্রতা,

সে এক নিজস্ব ধারা,

সে ধারায় আজও অম্লান জনমত্ততা৷

বস্তুজগতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে

চেতনাকে দিয়েছো সমাধি

সৌন্দর্য আনন্দোপলদ্ধি আলম্ব

পরমব্রহ্ম ছিল নিরবধি৷

আকাঙ্খা

লেখক
দেবলীনা নাথ (অষ্টম শ্রেণী) (ত্রিপুরা)

একটি ছোট্ট ছেলে সৈকত৷ সে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র৷ সে সরকারী চাকুরে বাবা মার একমাত্র সন্তান৷ তা সত্ত্বেও তার মা-বাবার তার দিকে নজর দেওয়া সম্ভব হত না৷ তারা যার যার কাজে ব্যস্ত সে সবসময় নিজের ঘরে বন্ধ থেকে সারা দিন কাঁদত, কখনোও বাইরে যেত না৷ একবার গিয়ে আসা যাক কিন্তু স্কুলের রাস্তা ছাড়া আর কোন রাস্তাই সে চিনত না৷ তবু ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা হাঁটতে থাকে ও অজানা পথে হারিয়ে যায়৷ যখন  রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না৷ তখন এক গাছের নিচে বসে কাঁদতে থাকে৷ দেখতে দেখতে রাত ঘনিয়ে আসে৷

ততক্ষণে তার মা বাবা বাড়ীতে এসে সৈকতের জন্য চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠে৷ সৈকতও তখন খুব দুশ্চিন্তায় ভুগছিল৷ কি হবে৷ কোথায় যাবে? ভেবে আকুল৷ হঠাৎ তার নজর পড়ল একটা আবছা আলোর দিকে৷ সে ভয়ে কাঁপছিল৷ আলোটা ধীরে ধীরে তার দিকে আসছিল৷ হঠাৎ করে সে দেখল আলোটা তার কাছে এসে থেমে গেছে৷ সে চমকে উঠল৷ আলোর পিছনে ছিল বয়স্ক ভদ্রলোক৷ তিনি সৈকতকে তার নাম ও আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন৷ সৈকত তার সব কথা ভদ্রলোককে খুলে বলল৷ সেই ভদ্রলোক তাকে সঙ্গে করে তাঁর বাড়ীতে নিয়ে যান এ দিকে তার বাবা মার অবস্থা খুবই শোচনীয়৷ তার বাবা মা পুলিশে খবর দেয়৷ পত্রপত্রিকায় নিখোঁজ বিজ্ঞাপন দেয়৷ কিন্তু সন্ধান মিলে না৷ সৈকত কিন্তু আদৌ বাবা মার কথা ভাবছিল না৷ সে সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে আনন্দেই দিন কাটাচ্ছিল৷ ভদ্রলোকটাও তাকে খুব আদর করত৷ কারণ তার কোন সন্তান ছিল না৷ সন্ধানে কিছুদিন কেটে গেল৷ তারপর খোঁজ পেয়ে সৈকতকে নিতে চাইলে সে যেতে  চাইল না৷ জিজ্ঞেস করা হল সে বলল বাড়ীতে আমার আদর নেই, শুধু অবহেলা৷ সেখানে আমি যাব না৷ আমি এ বাড়িতেই থাকব৷ তখন সৈকতের বাবা মা বুঝতে পারে সৈকত কোন দুঃখে এসব করছে৷ তারা সৈকতকে আরও সঙ্গ,আরও আদর দিতে থাকে৷