সেকালের সরস্বতী পুজো
সরস্বতীর মূর্ত্তি পুজো বেশিদিনের ঘটনা নয়৷ এমনিতেই অন্যান্য দেবদেবীর তুলনায় সরস্বতীর রূপকল্পনা হয়েছে অনেক পরে৷ ষষ্ঠ কিংবা সপ্তম শতাব্দী থেকে তার শুরু৷ এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি বলেছেন---এই যে সর্বশুল্কা সরস্বতী পৌরাণিক দেবী, এঁর পুজোও কিন্তু ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল না৷ এমনকি পাঠান যুগেও ছিল না, এমনকি মোগলযুগেও ছিল না৷’’ (নমঃ শিবায় শান্তায়)৷
পশ্চিমবঙ্গে চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগে বই মাটির দোয়াত, শরের কলম, তালপাতার তাড়া, কাগজ ইত্যাদি পুজো হতো৷ পুজোর জন্য নিবেদিত হত বাংলা বা সংস্কৃত বই, ইংরেজি নয়৷ কারণ ইংরেজি ম্লেচ্ছভাষারূপে বিবেচিত হত৷ শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি বলেছেন--- ‘মোগলযুগে, পাঠান যুগে লোকে এই সর্বশুক্লা সরস্বতীর পুজো করতে গেলে বইয়ের পুজো করত, পুস্তকের পুজো করত৷ (নমঃ শিবায় শান্তায়)৷
‘সরস’ শব্দের আদিম অর্থ জ্যোতি৷ ‘সরস’ থেকে সরস্বান (সূর্য), তেমনি সরস্বতী, সরস্বতী জ্যোতির্ময়ী৷ আনন্দমূর্ত্তিজী বলেছেন---‘সরস্’ শব্দের মানে সাদারঙের আলো,শুভ্র জ্যোতিঃ৷....সরস্বতী মানে যার মধ্যে শাদারঙের জ্যোতিঃ আছে...৷’
আর দেবীর পুজোতেও তাই দেওয়া হয় শাদা চন্দন, শাদা ধান, শাদা ফুল ইত্যাদি৷ সবই শ্বেত উপচার৷ প্রসাদ ও শাদা৷ দই, খৈ, তিলে খাজা,খোয়াক্ষীর মাখন,নারকেল কুল ইত্যাদি৷ এছাড়া দেবীর শ্বেতপদ্মে অধিষ্ঠান,শ্বেতবস্ত্র পরিধান৷
বইয়ের মাধ্যমে সরস্বতী পুজো প্রসঙ্গে আনন্দমূর্ত্তিজী আরো বলেছেন---‘‘এখন ইংরেজ আমলের গোড়ার দিকে সাহেবরা সাহেবরা বললে--- টোমাডের এ্যাটো ডেবডেবী আছে, আর তোমরা সরস্বতী পূজা বুক দিয়ে কেন করো? Why books why not a Devi, why not a goddess)? এখন ওই ইংরেজ আমলের সর্বশুভ্রা সরস্বতীর মূর্ত্তি গড়ে পূজো করবার রীবাজ শুরু হলো এই কলকাতা শহরেই৷ ...মূর্ত্তি গড়ে পূজো করছে লোকে এই ইংরেজ যুগে৷ তার আগে এ পূজোটা ছিল ও না৷’’ (নমঃ শিবায় শান্তায়)
- Log in to post comments