সম্পাদকীয়

বঞ্চিত বাঙলা

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

বাঙলার প্রতি বঞ্চনার বহর দিন দিন বাড়ছে৷ দিল্লির মসনদে শাসক পরিবর্তন হলেও বাঙলার প্রতি দিল্লির বৈষম্যমূলক আচরণের কোন পরিবর্তন হয়নে৷ বাম আমলেও এই একই অভিযোগে সংসদে সরব হতো বাম সাংসদরা৷ নরেন মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ঘটিত হওয়ার পর অনেকে ভেবে ছিল এবার বুঝি বাঙলার প্রতি দিল্লির দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে৷ কিন্তু এই জায়গায় নেহেরু থেকে নরেন্দ্রমোদি সরকারী নীতির কোন পরিবর্তন হয়নি৷ ১০০দিনের কাজ, গ্রামীন আবাস যোজনা, গ্রামীন সড়ক যোজনা–বঞ্চনার তালিকা আর দীর্ঘ না করেও বলা যায় পূর্বতন সব সরকারের পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে গেছে গত ১২ বছরে মোদি জমানার বঞ্চনা৷

মহাপ্রয়াণ দিবসের শপথ

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

২১শে অক্টোবর৷ শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী মহাপ্রয়াণ দিবস৷ ১৯৯০ সালের ২১শে অক্টোবর তিনি স্থূল শরীর ত্যাগ করেছিলেন৷ তাই স্থূল দেহগত বিচারে এটা তাঁর মহাপ্রয়াণ দিবস৷ কিন্তু সূক্ষ্ম বিচারে তথা আধ্যাত্মিক বিচারে তাঁর মহাপ্রয়াণের প্রশ্ণই ওঠে না৷ আধ্যাত্মিক বিচারে তিনি শাশ্বত চৈতন্য সত্তা–পরম আনন্দঘন সত্তা৷ তা তাঁর ভক্ত সাধকেরা সর্বদাই অনুভব করেন–মনকে আধ্যাত্মিক স্তরে উন্নীত করে’৷ তাঁরা অনুভব করেন, তিনি সবার অন্তর্লোকে সদা আনন্দমূর্ত্তিরূপে বিরাজিত৷

মানুষের সাংবিধানিক অধিকার

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও একটি স্বাধীন দেশের মানুষ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারলো না৷ ধনকুবেরদের শোষণে জর্জরিত ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের দমন-পীড়নে স্বাধীন দেশের নাগরিক সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও অর্জন করতে পারলো না৷

সীমাহীন অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক বিভাজন ও রাজনৈতিক সংঘাতে প্রতিনিয়ত পদদলিত হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার৷ পরিতাপের বিষয় এই যে শাসক দলের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদতে এগুলি হয়ে চলেছে৷ অথচ শাসক দলেরই প্রধান দায়িত্ব সংবিধানের অঙ্গীকারগুলি পালন করা৷ মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত করা৷

প্রগতির পথকে বাধা মুক্ত করতে হবে

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

বর্তমানে দেশজুড়ে চুরি–ছিনতাই, সমাজের ওপরের স্তর থেকে নীচু স্তর পর্যন্ত দুর্নীতি, প্রতারণা, ব্যভিচার – সর্বত্র এই যে অপরাধ প্রবণতা তা শান্তিপ্রিয় সমাজ হিতৈষী মানুষের চরম দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কীভাবে সমাজের মানুষের এই অপরাধ প্রবণতা রোধ করা যায় এ নিয়ে অনেকে অনেক গবেষণা করছেন – কিন্তু কোনোকিছু স্থির করতে পারছেন না৷ অনেকে জিজ্ঞেস করছেন – এ ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য কী সেই উত্তর দিতেই এবারের সম্পাদকীয়ের অবতারণা৷

‘বন্ধু হে নিয়ে চলো’

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

‘বন্ধু হে নিয়ে চলো’--- এ আহ্বান কোন মধ্য রাতের অন্ধকারে অসার আন্দোলনের আকুতি নয়, তমসাবৃত নিশীথের কালো যবনিকা ভেদ করে আলোর ঝরণাধারার পানে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঐকান্তিক এষণা, আশাহত ব্যথিত মনের আন্তরিক আকুতি৷

মানব সমাজের পরতে পরতে আজ দারিদ্র, শোষণ, বঞ্চনা, নিপীড়নের সকরুণ চিত্র৷ অর্থনৈতিক বৈষম্য, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন সমাজকে কুরে কুরে খাচ্ছে৷ অপর দিকে নগ্ণ চলচ্চিত্র, অশ্লীল সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষকে নৈতিক অধোগতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে শোষকের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র৷ নিরীহ সাধারণ মানুষ আজ সর্বগ্রাসী নররূপী দানবের করুণার পাত্র হয়ে কায়ক্লেশে জীবন যাপন করছে৷

আর.জি.কর--- সমস্যা ও সমাধান

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

আর.জি.কর কোন বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়৷ সারা দেশে, শুধু দেশ কেন সমগ্র মানব সমাজে অহরহ ঘটে চলেছে এই ধরণের নারকীয় ঘটনা৷ অর্থনৈতিক বৈষম্য, সাংস্কৃতিক অবক্ষয়, সামাজিক ভেদবিদ্বেষ নৈতিক অধঃপতনে মানব সমাজ এক জটিল সমস্যার সম্মুখীন৷ এই সমস্যার আশু সমাধান না করলে মানবজাতির অস্তিত্বই বিপন্ন হবে৷

অপরাধ প্রবণতা---চরমদণ্ড সমাধান নয়

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

শুধু আর.জি.কর নয়, সারা দেশেই নারী নির্যাতন ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে চলেছে৷ আর.জি.কর নিয়ে লাগাতার আন্দোলন চলছে, এই আন্দোলন যে অপরাধীর মনে কোন রেখাপাত করেনি, বা তাকে সৎপথে ফিরে আসার কোন কোন প্রেরণা দেয়নি তার প্রমাণ সারা দেশে আর.জি.কর নিয়ে আন্দোলন চলাকালীন পাল্লা দিয়ে ধর্ষন নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ আর.জি.কর আন্দোলন যারা করছে তাদের অনেকেরই তিলত্তমাকে নিয়ে তিলমাত্র ভাবনা চিন্তা নেই৷ তারা অনেকে অনেক জ্বালা বুকে নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে ধর্ষনজনিত অপরাধ থেকে সমাজকে মুক্তি দিতে নয়, তাদের লক্ষ্য রাজ্য শাসক দলের বিনাশ, তাতে যদি আর.জি.করের মত ঘটনা আরও দু-চারটে ঘটে ঘটুক৷ তাতে শূন্যের জ্বালা কিছুটা প্রশমিত হব

আর.জি.কর-----কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বা একমাত্র ঘটনা নয়৷ সারা দেশজুড়ে বছরে ২৫ থেকে ৩৫ হাজার বিভিন্নভাবে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে৷ এই ধরণের ঘটনায় দেশের অনেক প্রদেশের থেকে পশ্চিমবঙ্গ অনেক পিছনের সারিতে আছে৷ তবু আর.জি.কর নিয়ে এতো সরগোলের কারণ বাঙালীর সামাজিক সাংস্কৃতিক চেতনা৷ আর.জি.করের ঘটনা বাঙালী চেতনায় আঘাত দিয়েছে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ অপরাধীর কঠোর সাজার দাবী তুলেছে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ৷ এই ধরণের ঘটনার পর এই দাবী শুণতে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে৷ রাজপথে মোমবাতি জ্বলবে, রাজনৈতিক দলের ক্যাডার কর্মীরা ঝাণ্ডা নিয়ে পথে নামবে এও স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে, দূরদর্শনের পর্দায় সান্ধ্য বাসরে আসর জমবে

মানব ধর্মের সাধনায় রত হওয়ার দিন---শ্রাবণী পূর্ণিমা

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

১৯৩৯ সালের শ্রাবণী পূর্ণিমাতে মহান দার্শনিক ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার (পরবর্তীকালে যিনি শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তি নামে পরিচিত হয়েছেন) কলিকাতায় গঙ্গার তীরে কাশি মিত্র ঘাটে কুখ্যাত ডাকাত কালীচরণ কে মানব ধর্মের সাধনায় দীক্ষিত করে সৎ পথে ফিরিয়ে এনেছিলেন৷ তরুণ প্রভাত রঞ্জন সরকার তখন বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র ছিলেন৷ কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তখন কলিকাতার কাশীমিত্র ঘাট এলাকার ত্রাস৷ ডাকাত কালীচরণ বা কালী ডাকাত নামেই এলাকার সবাই জানত৷ তরুণ প্রভাতরঞ্জন সরকার প্রত্যহ অপরাহ্ণে কাশীমিত্র ঘাটে সান্ধ্য ভ্রমণে আসতেন৷ সেদিনও এসেছিলেন---দিনটি ছিল ২৯শে আগষ্ট মঙ্গলবার,শ্রাবণী পূর্ণিমা৷ গঙ্গার তীরে একটি বটগাছের নীচে ব

শ্রাবণী পূর্ণিমার কথা

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

তারকব্রহ্ম শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী আবির্ভূত হলেন এমন এক যুগসন্ধিক্ষণে যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে, দ্বিতীয় আর এক বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে৷ পৃথিবীতে সর্বপ্রকারের মূল্যবোধ হয়েছে ধ্বংসপ্রাপ্ত৷ সত্য, শিব, সুন্দর হয়েছে অস্বীকৃত৷ নানা ধর্মমত ও রাজনৈতিক মতবাদ–প্রচারিত ভাব–জড়তা (ডগ্মা) মানব–সমাজকে করেছে খণ্ডবিখণ্ড, রক্তাক্ত, কলুষিত, কলহপ্রবণ ও পরমত–সহিষ্ণু৷ শিক্ষা হারিয়ে বসেছে তার মূল উদ্দেশ্য৷ আর যার জন্যে এত সব সমারোহ, এত সব আয়োজন, এত সব ঢ়ক্কানিনাদ–সমাজের সেই কেন্দ্রবিন্দু, সেই মধ্যমণি মানুষ হয়েছে চরমভাবে উপেক্ষিত ও পরিত্যক্ত৷ মানব ধর্মের সাধনা ছেড়ে মানুষ ছুটে চলেছে সহজ ধর্মের পথে, ভোগের পথ