সম্পাদকীয়

এই আগ্রাসন রুখতে হবে

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

২০২৪-এ তৃতীয়বার দিল্লিতে ক্ষমতায় পুনর্বহাল বিজেপি৷ বাম কংগ্রেসের ব্যর্থতায় ও রাজ্যে তৃণমূলের বিরোধী দল ভাঙনের খেলার সুযোগ নিয়ে বিজেপি রাজ্যে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেও নবান্ন থেকে এখনও বহু দূরে৷ বিজেপির সাম্প্রদায়িক ও বাঙালী বিদ্বেষী রাজনীতি তার দলীয় কর্মসূচী৷ স্বাধীনতার আগে থেকে বহু চেষ্টা করেও বাঙলায় আর এস এস প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি৷ শ্যামাপ্রসাদের মতো ব্যষ্টিও বাঙলায় হিন্দুত্বের রাজনীতির শিকড় খুব গভীরে নিয়ে যেতে পারেনি৷ নেহেরু পটেলের উদ্বাস্তু পুনর্বাসন নিয়ে বাঙলার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, উদ্বাস্তুর ভারে জর্জরিত বাঙলাকে আর্থিক বঞ্চনা, তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের মাতৃভাষা বাংলার অধিকারের দাবী

ভাষা সন্ত্রাস---যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বিপদ সংকেত

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

তথাকথিত স্বাধীনতার জন্মলগ্ণ ১৫ই আগষ্ট মধ্যরাত থেকেই হিন্দি ও হিন্দুত্ব নিয়ে সক্রীয় হয়ে ওঠে হিন্দুত্ববাদীরা৷ এই হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ অসম্প্রদায়ীকতার মুখোশধারীরাও আছে৷ এরা হিন্দুত্ববাদী হলেও এদের শত্রু অন্য কোন সম্প্রদায় নয়৷ এদের মূল শত্রু বাঙালী জনগোষ্ঠী৷ কারণ এই হিন্দুত্ববাদীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক দেশীয় পুঁজিপতি গোষ্ঠী, যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় সুভাষচন্দ্রকে নিশ্চিহ্ণ করতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে শক্তি যুগিয়েছিল৷ আজ স্বাধীন ভারতে অর্থশক্তি রাষ্ট্রযন্ত্র দুটোই এই দেশীয় পুঁজিপতি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে৷ বাঙালীর ক্ষাত্রশক্তির পরিচয় ব্রিটিশ পেয়েছিল৷ দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তারা তাদের উত্তর

অকারণ হিন্দি প্রেম - অশুভ সংকেত

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

ভাষা মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যম৷ প্রত্যেকটি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সাহিত্য সংস্কৃতির ওপর মাতৃভাষার প্রভাব অস্বীকার করা যায় না৷ কোন জনগোষ্ঠীর প্রাণশক্তিকে যদি দুর্বল করতে হয়, তার প্রাণধর্মকে যদি নিষ্পেষিত করতে হয় তবে তার ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতিকে অবদমিত করে তার ওপর হীন রুচির নিম্নমানের অশ্লীল শিল্প সাহিত্য চলচ্চিত্র সংগীত চাপিয়ে দিতে হয়৷ স্বাধীনতার পর থেকেই দীর্ঘ ৭৭ বছর ধরে দিল্লির হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী সরকার বাঙলার উপর এই নীতি প্রয়োগ করে চলেছে৷

কদর্য রাজনীতি ছেড়ে অপরাধের উৎসে আঘাত হানতে হবে

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনও রয়েছে৷ সকল মানুষের জীবনেই রয়েছে কতকগুলি সাধারণ ও সহজাত বৃত্তি৷ স্বভাবগত ভাবে তাদের কেউ কেউ হয়তো মানুষকে বিকাশের পথে নিয়ে যায়, কেউ বা নিয়ে যায় অবনতির দিকে৷ যে বৃত্তি মানুষকে বিকাশের পথে নিয়ে যায় তাকে আমাদের উৎসাহ প্রদান করা উচিত৷ আর যে বৃত্তি মানুষকে অবনতির পথে নিয়ে যায় তাকে নিরুৎসাহিত করা উচিত৷ এই পৃথিবীর কোথাও কোথাও মানুষকে ব্যাপক নগ্ণচিত্র ও অশ্লীল সাহিত্যের মাধ্যমে নৈতিক অধোগতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ সাধারণ প্রতিবাদের মাধ্যমে একে প্রতিহত করা যাবে না যদি না পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের জন্যে আমরা সক্রিয়ভাবে কিছু করি৷ যদি বাস্তবোচিত আমরা কিছু করি তবে তা মানুষের মনে এক নূত

মাতৃভাষার অধিকার

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় পশ্চিমবঙ্গে ডব্ল বিএসসি পরীক্ষায় বাংলাভাষা বাধ্যতামূলক করা হবে৷ কিন্তু নবান্ন থেকে সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়৷ বাংলা ভাষা নিয়ে রাজ্য সরকারের এক পা এগোনো দু-পা পিছানো এই প্রথম নয়, এর আগেও সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার৷ কারণ এইরাজ্যে অনেক অ-বাংলা ভাষী আছে৷

প্রধান বিচারপতির উপলব্ধি ভারতীয় গণতন্ত্রের শেষ ভরসা

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

দেশে বিদেশে ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরূপ সমালোচনা হচ্ছে৷ সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ভারতীয় গণতন্ত্রকে স্বৈরাচারী গণতন্ত্র আখ্যায় ভূষিত করেছে৷ দেশেও বিরোধী কন্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করছে সরকার৷ বিচার বিভাগেও হস্তক্ষেপ করছে সরকার৷ বার বার বিরোধীদের কন্ঠে এই অভিযোগ উঠে আসছে৷ সরকার বিরোধী প্রচারের দায় বেশ কিছু সাংবাদিকও গ্রেপ্তার হয়৷ এককথায় গণমাধ্যমের এক অংশ আতঙ্কিত আর এক অংশ সরকারের অনুগত হয় কাজ করছে৷ বিচারমাধ্যম সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়৷ তবু উভয়ক্ষেত্রেই সৎ সাহসী ও নির্ভীক ব্যষ্টি এখনও আছেন যাঁরা সত্যকে আঁকড়ে ধরে চলছেন৷

বিপজ্জনক প্রবণতা

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে আমরা গর্ব করি৷ তবে ভারত শুধু বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই নয়৷ নানা ভাষাভাষী, পোষাক–পরিচ্ছদ, আচার–আচরণ, আহার––বিহার ও সাংস্কৃতিক অভিপ্রকাশের বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর দেশ ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্র৷ বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে মজবুত করতে ও জনগোষ্ঠীগুলির তথা রাষ্ট্রীয় সংহতি দৃঢ় করতে হলে কেন্দ্রীয় শাসককে প্রতিটি রাজ্যের প্রতি সমান নজর দিতে হবে৷ কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই কেন্দ্রের শাসক দল পক্ষপাত মূলক আচরণ করে আসছে৷ নরেন মোদি ক্ষমতায় আসার পর সেই প্রবণতা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে চলেছে৷ সম্প্রতি শির্ষ আদালত কেন্দ্রীয় এজেন্সীর ব্যবহার নিয়ে কেন্দ্রীয়

বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

ভাগ করো ভোগ করো--- সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসকের এই কৌশল স্বাধীনতা পরবর্ত্তী ভারতের দিল্লির শাসকের মগজেও রয়ে গেছে উত্তরাধিকার সূত্রে--- বিশেষ করে বাঙলার ক্ষেত্রে৷ পরাধীন ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনে যে রাজ্যটির অবদান সব থেকে বেশী, স্বাধীনতার মূল্য তাকেই দিতে হয়েছে সবথেকে বেশী, দেশভাগের বলি সেই বাঙালী স্বাধীনতার জন্মলগ্ণ থেকেই দিল্লির শাসকদের কাছে উপেক্ষিত৷ সে উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে হোক, আর্থিক উন্নয়ণের ক্ষেত্রে হোক, শিক্ষা সাহিত্য, সংস্কৃতির ক্ষেত্রেই হোক দিল্লির কাছ থেকে বঞ্চনা উপেক্ষা ছাড়া বাঙলা কিছু পায়নে৷ ন্যায্য পাওনাটুকুও বাঙলাকে দেওয়া হয়নে৷ এরজন্যে দিল্লির শাসকদের বিমাতৃসুলভ বৈষম্যমূলক

আক্রান্ত বাঙালী

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

রাজ্যে রাজ্যে আক্রান্ত বাঙালীরা৷ স্বাধীন ভারতে বাঙালীর ওপর আঘাত এই প্রথম নয়, বরং বলা যায় স্বাধীন ভারতের জন্মলগ্ণ থেকেই ভারতে বাঙালীদের প্রতি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো  আচরণ করা হচ্ছে৷ নেহেরু আমলে অসম ব্যতীত অন্য কোথাও দৈহিক আক্রমন না হলেও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাঙালীকে পঙ্গু করার চক্রান্ত ১৯৪৭ সালের মধ্যরাত থেকেই শুরু হয়েছে নেহেরুর হাত ধরেই৷ পরিতাপের বিষয় নেহেরুর বিশেষ বন্ধু বিধানচন্দ্র রায় মুখ্যমন্ত্রী থেকেও বাঙলার প্রতি দিল্লির বৈষম্যমূলক আচরণের কোন প্রতিবাদ করেননি তৎকালীন খ্যাতনামা সাংবাদিক রঞ্জিত রায় লিখলেন--- বিধান রায়ের আমল থেকেই বাঙলার অধঃপতনের শুরু৷ রঞ্জিত রায় সম্ভবত প্রথম সাংবাদিক

ধর্ম্মেন হীনাঃ পশুভিঃ সমানাঃ

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

ধর্ম---এই শব্দটা পৃথিবীতে যত রক্তপাত ঘটিয়েছে দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধেও সম্ববতঃ এত রক্তপাত হয়নি৷ বিজ্ঞান ও যুক্তি বিবর্জিত ধর্মান্ধদের সংঘাত মানুষকে পশুর চেয়ে নীচে নামিয়ে দেয়৷ অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের আচ্ছন্ন ধর্মের নামাবলি ভারতীয় উপমহাদেশের খণ্ডিত তিন রাষ্ট্রের দুর্গতির কারণ৷

ধর্ম নয়, ধর্মের বিকৃতরূপ যে সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয়, সেই সাম্প্রদায়িকতাই মানুষকে সংকীর্ণ গণ্ডীবদ্ধ দ্বিপদ জীবে পরিণত করেছে৷ মানুষ মনুষ্য ধর্ম ভুলে অন্ধবিশ্বাস ও কু-সংস্কারে আচ্ছন্ন ধর্মমতকে ধর্মের তকমা লাগিয়ে আঁকড়ে ধরেছে৷