অন্ধবিশ্বাস ভাবজড়তা---ধর্মীয় আবেগ---প্রশাসনিক অব্যবস্থা অমৃতের সন্ধানে গিয়ে পদপিষ্ট বহু মানুষ
২৮শে জানুয়ারী মধ্যরাত পার হয়ে গেছে৷ ইংরেজী ক্যালেণ্ডারে ২৯শে জানুয়ারী রাত্রি ১২টা ৩০ মিনিট৷ মাইকে প্রচার শুরু হলো---যে ঘুমোয় সে হেরে যায়৷ অমৃত পেতে হলে শুয়ে না থেকে স্নান করে নিন৷
শুরু হলো পুন্যসঞ্চয়ের হুড়োহুড়ি৷ প্রশাসনিক মতে তখন মহাকুম্ভে ৪কোটি পুন্যার্থীর সমাগম হয়েছে৷ জনস্রোত ধেয়ে গেল ত্রিবেণী সঙ্গমের দিকে৷ কে আগে যাবে তারই প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়৷ সেই জনস্রোতের ঢেউ না সামলাতে পেরে ভূপতিত হলো বহু মানুষ৷ তাকেই মাড়িয়ে চললো জনস্রোত, পদপিষ্ট হয়ে হতাহত হলো বহু মানুষ৷ এই ধরণের পরিচয়হীন জনস্রোতে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা কেউ দিতে পারে না৷ প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রশ্ণ তো উঠবেই৷ হতাহতের সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক থাকবে৷
কিন্তু আসল প্রশ্ণ সবাই এড়িয়ে গেছে৷ অমৃতের সন্ধানে এসে যারা না ফেরার দেশে চলে গেল তারা কোন পূণ্য সঞ্চয় করে নিয়ে গেল, আত্মীয় পরিজন হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে যারা ঘরে ফিরলো তাদের ধর্মের ভাণ্ডারে কতটা পুন্য সঞ্চয় হলো৷ নিন্দুকেরা বলতে শুরু করেছে, ধর্মব্যবসায়ীও রাষ্ট্রের পরিচালকদের এসব নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই৷ তাদের ধর্মের খাতা আর্থিক লাভ লোকসানের হিসেবে ভরা৷ উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণে যতটা অপটু, বিপর্যয়ের প্রমান লোপাটে ততটাই পটু৷ রাতে বিপর্যয়ের পর শাহি স্নান স্থগিত হয়ে যায়৷ শুরু সকাল ৭টায়৷ তার আগে অবশ্য ঘটনাস্থল নিপুন হাতের তুলিতে (ঝাড়ুতে) পরিষ্কার হয়ে গেছে৷ বিপর্যয়ের কোন চিহ্ণ আর ঘটনাস্থলে নেই৷ উত্তরপ্রদেশের সরকার সকাল থেকে ঘটনার কথা স্বীকার করতে চাইছিলো না৷ সরকারের দাবী পদপিষ্টের মতো ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল কিন্তু পরিস্থিতি সামলে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু ডিজিটাল যুগে সমাজ মাধ্যম, সংবাদ মাধ্যম রাত থেকেই প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে শুরু করে৷ সরকারও বাধ্য হয়ে ঘটনার কথা স্বীকার করে৷ ততক্ষণে যোগী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে গেছে ঘটনা ধামা চাপা দেওয়ার৷ রাজনীতির চাপান-উতর শুরু হয়েছে৷ কিন্তু তথাকথিত ধর্মের নামে এই দানবীয় উন্মাদনা আর কতদিন চলবে?