অসমে আগামী ৩০শে জুলাই পূর্ণাঙ্গ নাগরিকপঞ্জীর খসড়া প্রকাশিত হতে চলেছে৷ গত ৩১শে ডিসেম্বর আংশিক নাগরিকপঞ্জীর খসড়া প্রকাশের পর দেখা যায় ১ কোটি ৩৯ লক্ষ বাঙালীর নাম নাগরিকপঞ্জী থেকে বাদ পড়েছে৷ নাগরিকপঞ্জী থেকে নাম বাদ দেওয়া মানেই সরকারীভাবে তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা৷
ইতোপূর্বে লক্ষ লক্ষ বাঙালীকে ডি-ভোটার (ডাউটফুল ভোটার) বলে চিহ্ণিত করে তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে৷ আর ডিটেনশন ক্যাম্প মানেই চরম নির্যাতনের শিকার হওয়া৷ অর্থাৎ পরিষ্কার ভাষায় তখন বলা হচ্ছে, তোমরা এদেশে অবাঞ্ছিত---তোমাদের এদেশে কোনও অধিকার নেই৷
আগামী ৩০শে জুলাই জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর পূর্ণাঙ্গ খসড়া প্রকাশিত হওয়ারপর যাদের নাম বাদ পড়বে (লক্ষ লক্ষ বাঙালীর নাম নাগরিকপঞ্জী থেকে যে বাদ পড়ছেই তাতে কোনও সন্দেহ নেই) তারা যাতে চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে তেমন কিছু অঘটন না ঘটায়, তাই তার জন্যে তাদের প্রতি আগাম আশ্বাস বাণী শোনাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং থেকে শুরু করে অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানুয়াল বা প্রতীক হাজেলার নেতৃত্বাধীন নাগরিকপঞ্জী কর্তৃপক্ষ৷ আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে খসড়া নাগরিকপঞ্জী প্রকাশের পর যাদের নাম বাদ পড়বে তাদের আবেদন করার যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হবে৷ আবেদন, পুনর্বিবেচনা এসব কিছুর পরে আগামী ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জী৷ সরকারের পক্ষ থেকে এখন যতই আশ্বাস দেওয়া হোক আগামী ৩০শে জুলাই খসড়া চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জী প্রকাশের পর যাদের নাম বাদ পড়বে তাদের যে চূড়ান্ত হয়রানির মধ্যে পড়তে হবে তাতে কোনও সন্দেহই নেই৷
কারণ এখনই খবর পাওয়া যাচ্ছে গত ৩১শে ডিসেম্বর প্রকাশিত আংশিক খসড়া নাগরিকপঞ্জী থেকে যাদের নাম বাদ গেছে অনেক জায়গাতেই সীমান্ত পুলিশ তাদের হাতে ‘বিদেশী’ নোটিশ ধরিয়ে দিয়ে তাদের নানানভাবে নির্যাতন করছে৷
স্বাধীনতার পর বার বার বিভিন্ন অজুহাতে অসম থেকে বাঙালী বিতাড়নের হুজুগ তুলেছে অসমের ব্রহ্মপুত্র এলাকার একটি মহল---যারা উগ্র জাতীয়তাবাদের কালো চশমা পরে পরিবেশকে উত্তপ্ত করতে সদা প্রস্তুত৷ তারা বহুবার বাঙালীদের ওপর জঙ্গী আক্রমণ চালিয়েছে, বাঙালীদের ঘরবাড়ী জ্বালিয়েছে৷ বাঙালীদের গণ হত্যার শিকার হতে হয়েছে৷
এটা বিস্ময়জনক যে, অসমে বাঙালীদের ওপর এইভাবে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ও ক্রমান্বয়ে নির্যাতনের পরও পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা ভারতের বাঙালীরা ও বাঙালী নেতা-নেত্রীবৃন্দ মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছেন কেন? কেন দল-মত-সম্প্রদায় নির্বিশেষে এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে একসঙ্গে গর্জে উঠছেন না৷ একমাত্র বাঙালীদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদই অসম, মণিপুর সহ সমস্ত পূর্বাঞ্চলে বাঙালী নির্যাতনের অবসান ঘটাতে পারে৷