দিনে দিনে দুর্গাপূজার নিয়ে প্রতিযোগিতা তুঙ্গে উঠছে৷ কলকাতার এবার ৪০০০- এর বেশী জমজমাট দুর্গাপূজা হবে৷ স্বাভাবিকভাবে প্যাণ্ডেল তৈরীর প্রতিযোগিতাটাই প্রধান৷
এবারে কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে (নেবুতলা পার্ক) ৪০ (চল্লিশ) কোটি টাকার প্যাণ্ডেল করা হচ্ছে৷ বানানো হয়েছে কৈলাস পাহাড়৷ এখান থেকে সোণা ও রূপোর রথে করে দুর্গা মাকে আনা হবে পূজা মঞ্চে৷ এই পান্ডেলটি হবে ৪০ ফুট লম্বা ৪০ ফুট চওড়া, ৬০ ফুট উঁচু --- ৬ তলা বাড়ীর সমান৷ গত বছর ১২ কোটির মূল্যের ২৪ কেজি সোনার পোষাক ছিল মায়ের গায়ে৷ এবারে গত ১লা বৈশাখ দুর্গামায়ের আদলে বেলুন উড়িয়ে পূজার প্রস্তুতির সূচনা করা হয়েছিল৷
অন্যান্য প্যাণ্ডেলে এত বড় বাজেট না থাকলেও কোন কোন পূজা কমিটির ১০ কোটি টাকা বাজেট আছে৷ গতবারে মহানগরীতে ১২৩ কোটি টাকা পূজোর বাজেট ছিল বলে জানা গেছে৷
একটা পূজায় যখন এই বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় হচ্ছে, এদেখে কি মনে হয়, আমাদের দেশে টাকা নেই?
একদিকে এই বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় করে আলোর উৎসব৷ কিন্তু পাশাপাশি যে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে রয়েছে রাজ্যের বহু গ্রামাঞ্চল--- বহু অবহেলিত এলাকা আর তার সঙ্গে লক্ষ লক্ষ অবহেলিত মানুষ৷ তাদের জীবন যন্ত্রণার খবর কি রাখেন আমাদের এই আলোর রাজ্যের মানুষেরা?
এই অন্ধকার রাজ্যের মানুষ হ’ল ভারতের ২১.৯ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২৭ কোটি মানুষ যারা দারিদ্র্য সীমারেখার নিম্নে বাস করেন --- যাঁরা পেট ভরে খেতে পান না, যাদের প্রয়োজনীয় পরিধেয় বস্ত্র নেই, চিকিৎসার পয়সা নেই৷ দেশের লক্ষ লক্ষ যুব-যুবতীর কর্মসংস্থান নেই, তাই কর্মের সন্ধানে দিগ্ভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
এ রাজ্যের অধিকাংশ গ্রামের যুবক ছেলেরা এ রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে দক্ষিণ বা পশ্চিম ভারতে পাড়ি দিয়েছে কোনো একটা কাজের সন্ধানে৷
এই অবস্থায় কলকাতাসহ বড় বড় শহরের পূজা প্যান্ডেল করতে যে বিপুল টাকা খরচ হয়, কেবল আড়ম্বর দেখানোর জন্যে, তা যদি দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে বা মাঝারি মাপের শিল্পে ব্যয়িত হ’ত বা কোনও দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের কাজে ব্যয়িত হ’ত তাতে রাজ্যের অর্থনৈতিক চেহারা বদলে যেত৷