আনন্দনগর ঃ গত ৫ই মার্চ পুরুলিয়া জেলার আনন্দনগরে, যেখানে ১৯৬৭ সালের ৫ই মার্চ কম্যুনিষ্ট হার্মাদরা আনন্দমার্গের এই আশ্রমের ওপর আক্রমণ করে’ ৫জন সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীকে হত্যা করেছিল, সেই আনন্দনগরে ‘দধীচি দিবস’ পালিত হয়৷ এই উপলক্ষ্যে আনন্দমার্গের সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারী, কর্মী ও অনুগামীরা সারাদিন উপবাসে থাকেন৷ সকাল ৯–টায় আনন্দমার্গের সন্ন্যাসী–সন্ন্যাসিনী সহ সকলেই আনন্দনগরের ‘পাওয়ার হাউস’–এ অখণ্ড কীর্ত্তনে যোগদান করেন৷ তারপর সেখান থেকে কীর্ত্তন করতে করতে ‘দধীচি হিল’–এ আসেন৷ বলা বাহুল্য এই দধীচি হিলেই কমিউনিষ্ট নরপিশাচরা পঞ্চ দধীচিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল৷ এখানে পঞ্চ দধীচির স্মারক বেদী ঘিরে তাঁরা আরও কিছুক্ষণ কীর্ত্তন ও মিলিত সাধনার পর সবাই দাঁড়িয়ে দু’মিনিট নীরবতা পালন করে’ পঞ্চ দধীচির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন৷ তৎপরে আচার্য মোহনানন্দ অবধূত, আচার্য মুক্তানন্দ অবধূত, গোপাল নায়েক প্রমুখ দধীচি দিবসের ওপর বক্তব্য রাখেন৷
ওই ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী শ্রী গোপাল নায়েক কীভাবে ১৯৬৭ সালের ৫ই মার্চ কমিউনিষ্ট গুণ্ডারা আনন্দনগরের ওপর আক্রমণ করে’ আনন্দমার্গের পাঁচজন সন্ন্যাসী ও কর্মীকে খুন করেছিল সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেন৷ এরপর আচার্য মোহনানন্দ অবধূত বলেন, আজ থেকে ৫১বছর পূর্বে ১৯৬৭ সালের ৫ই মার্চ, আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের কেন্দ্রীয় আশ্রম আনন্দনগর যখন সবেমাত্র গড়ে উঠছে এই সময় আনন্দমার্গের আধ্যাত্মিক ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্যে মার্ক্সবাদী কম্যুনিষ্ট পার্টির গুণ্ডাবাহিনী আনন্দনগরের ওপর মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালায়৷ দানবদের সেই আক্রমণ থেকে আনন্দমার্গের নবনির্মিত আশ্রম ও আনন্দনগরে পাঠরত ছোট ছোট শিশু সহ আনন্দনগরবাসীদের রক্ষা করতে পাঁচজন সন্ন্যাসী নিরস্ত্রভাবে আক্রমণকারীদের বোঝাতে এগিয়ে যান৷ নৃশংস গুণ্ডারা কিন্তু তাঁদের কোনও কথা না শুণে তাঁদের ধারাল অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে খূন করে৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে মামলা হয়, পরে ওই মামলার রায়ে আনন্দনগরে হামলা ও খুনের দায়ে স্থানীয় বিডিও অশোক চক্রবর্তী সহ ১৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়, যার মধ্যে ৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়৷
আনন্দনগর নিজ পুরসভার চেয়ারম্যান আচার্য মুক্তানন্দ অবধূত বলেন, আনন্দমার্গের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী নিপীড়িত মানবতাকে রক্ষার জন্যে যে সর্বানুসূ্যত দর্শন তথা আদর্শ দিয়েছেন তা–ই এই আনন্দমার্গ৷ আর এই আনন্দমার্গের মহান আদর্শকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্যে তিনি এই আনন্দনগরের প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ তাই এখানে তিনি অনাথ শিশুদের জন্যে শিশুসদন, প্রতিবন্ধী শিশুদের গড়ে তোলার জন্যে আনন্দমার্গ একাডেমী অফ লাইট (অমল), দুঃস্থ রোগীদের জন্যে হোমিওপ্যাথি, এলোপ্যথি, আয়ূর্বেদিক, আকুপাংচার প্রভৃতি সমস্ত ধরণের চিকিৎসাকেন্দ্র, কিণ্ডারগার্টেন এথকে শুরু করে প্রাইমারী স্কুল, সেকেণ্ডারী ও হায়ার সেকেণ্ডারী স্কুল, কলেজ, এছাড়াও কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, চা বাগান, আঙুরের ক্ষেত, বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্পকেন্দ্র প্রভৃতি নানান বহুমুখী কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন৷ আনন্দমার্গের এই সর্বাত্মক সেবাযজ্ঞকে সহ্য করতে না পেরে কম্যুনিষ্ট গুণ্ডাদের নেতৃত্বে সমস্ত পাপশক্তি মিলিত হয়ে আনন্দমার্গকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু পাপশক্তির সেই ষড়যন্ত্র সফলও হয়নি৷
যারা আনন্দমার্গকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল সেই সিপিএম আজ নিশ্চিহ্ণ হতে চলেছে৷ কিন্তু আনন্দমার্গের বিজয়রথ এগিয়ে চলেছে৷ আনন্দমার্গের বিশ্ব জুড়ে এই সেবাযজ্ঞ কেউ রুখতে পারবে না৷
আচার্য মুক্তানন্দজী বলেন, ‘আনন্দমার্গের মহান আদর্শকে রূপায়িত করবার জন্যে তথা নিপীড়িত মানবতার মুক্তির জন্যে আজ প্রতিটি আনন্দমার্গীকে নোতুন করে শপথ নিতে হবে৷
অন্যান্য স্থানে দধীচি দিবস পালন
* কলকাতার ভি. আই. পি. নগরে অবস্থিত আনন্দমার্গের প্রধান কার্যালয়েও এদিন এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে যথারীতি দধীচি দিবস পালিত হয়৷ সন্ধ্যায় অখণ্ড কীর্ত্তন ও মিলিত সাধনার শেষে আচার্য সুতীর্থানন্দ অবধূত, যিনি ৫ই মার্চের ঘটনার সময় নিজে উপস্থিত ছিলেন, সেদিনকার সেই নৃশংস ঘটনার বিবরণ দেন৷ তিনি বলেন, আনন্দমার্গের সুমহান আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিটি আনন্দমার্গীকে সমস্ত প্রকার বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে প্রাণপণ সংগ্রামের শপথ নিতে হবে৷
* নোতুন পৃথিবী কার্যালয়েও এদিন যথারীতি দধীচি দিবস পালিত হয়৷ কীর্ত্তন ও সাধনার পর দধীচি দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত৷ নোতুন পৃথিবীর জেনারেল ম্যানেজার আচার্য সুপ্রভানন্দ অবধূত, স্বপন সাহা প্রমুখ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷
* মেদিনীপুর, পাঁশকুড়া, কাঁথি, পুরুলিয়া, বর্ধমান, সিউড়ী, কান্দি, রায়গঞ্জ, করণদিঘী, বালুরঘাট, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, গুয়াহাটি, শিলচর, আগরতলা, টাটানগর প্রভৃতি বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানাচ্ছেন ওখানকার আনন্দমার্গের আশ্রমে গভীর ভক্তি–শ্রদ্ধার সঙ্গে যথারীতি দধীচি দিবস পালন করা হয়েছে৷ প্রকৃতপক্ষে দেশ বিদেশের সমস্ত আনন্দমার্গ আশ্রমেই এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়েছে৷