আগরতলা (ত্রিপুরা) ঃ আগরতলার কলেজটিলাতে অবস্থিত আনন্দমার্গ সুকলে মহাসমারোহে সুবর্ণ-জয়ন্তী উৎসব (৫০ বৎসর পূর্ত্তি) পালিত হয়৷ ৫ দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ২৯শে অক্টোবর রক্তদান শিবিরে ৩০ জন রক্তদান করেন৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এখানকার রামকৃষ্ণ মিশনের সেক্রেটারী স্বামী হতকামনানন্দ মহারাজ৷
৩০শে অক্টোবর আনন্দমার্গ সুকলের সুবর্ণ-জয়ন্তী উৎসব উপলক্ষ্যে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়৷ তাতে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সংবাদ মাধ্যম থেকে ৩০ জন সাংবাদিক উপস্থিত হয়েছিলেন৷
৩রা নভেম্বর যাঁদের উদ্যোগে এই আনন্দমার্গ সুকলের সূচনা হয়েছিল, তাঁদের সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়৷ যেমন তাঁদের মধ্যে ছিলেন রাখালরাজ দত্ত, বিধুভূষণ দাস, দেবব্রত দত্ত প্রমুখ৷
এদিন সন্ধ্যায় টাউন হলে ‘আনন্দমার্গের আদর্শ ও শিক্ষাব্যবস্থা’র ওপর এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়৷ আগরতলার বহু বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী এই আলোচনা সভায় যোগ দেন৷ আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য রাখেন আনন্দমার্গের প্রবীণ সন্ন্যাসী আচার্য-হরাত্মানন্দ অবধূত৷ তিনি বলেন, আনন্দমার্গের মুখ্য উদ্দেশ্যই হ’ল--- আদর্শ মানুষ তৈরী করা৷ আজকের সমাজে সবচেয়ে বড় অভাব সৎ, নীতিবাদী, সেবাব্রতী ও সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামী এই ধরণের মানুষ৷ আনন্দমার্গে এই ধরণের মানুষকেই বলা হয় সদ্বিপ্র৷ এই ধরণের সদ্বিপ্র গোষ্ঠী সমাজের সমস্ত প্রকার সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম৷ আনন্দমার্গের সাধনা পদ্ধতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার মূখ্য উদ্দেশ্যই হল সদ্বিপ্র চরিত্রের মানুষ তৈরী করা৷
সভায় দ্বিতীয় বক্তা ছিলেন আগরতলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস-চ্যান্সেলার ডঃ অরুণ উদয় সাহা৷ তিনি আগরতলায় আনন্দমার্গ সুকলের গৌরবময় ইতিহাস বর্ণনা করে দাবী রাখেন, সরকার যেন এখানে আনন্দমার্গের কলেজ করার অনুমতি দেন৷ কারণ আনন্দমার্গের শিক্ষাব্যবস্থা হ’ল আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা৷
এরপর আগরতলার জনপ্রিয় দৈনিক ‘স্যন্দন’ পত্রিকার সম্পাদক সুবল কুমার দত্ত৷ তিনি আনন্দমার্গের শিক্ষাব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেন৷
এরপর আগরতলা ‘রাওয়া’ শিল্পী গোষ্ঠী ও আনন্দমার্গ সুকলের ছাত্র-ছাত্রারা এক মনোজ্ঞ সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান করেন৷ উদ্বোধনী সঙ্গীত (প্রভাত সঙ্গীত) পরিবেশন করেন, আনন্দমার্গ সুকলের ছাত্র-ছাত্রাবৃন্দ৷ ত্রিপুরায় বিখ্যাত গায়ক ও গায়িকা অমর ঘোষ ও পুষ্পিতা চক্রবর্তী প্রভাত সঙ্গীত পরিবেশন করেন৷ এছাড়া বাংলাদেশ থেকে আগত অর্জুন বিশ্বাসও সঙ্গীত পরিবেশন করে দর্শকদের মনোরঞ্জন করেন৷
৪থ দিনও আনন্দমার্গের আদর্শ ও শিক্ষাব্যবস্থার ওপর আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়৷ এই আলোচনা সভায় আচার্য হরাত্মানন্দ অবধূত সমাজে শিক্ষার চরম অবক্ষয়ের ওপর বক্তব্য রাখেন৷ এই অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর বহুমূখী পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি আলোকপাত করেন৷ আরও যাঁরা বক্তব্য রাখেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন এম.বি.বি কলেজ, আগরতলার অধ্যাপক ডঃ দিলীপ কুমার সরকার, স্থানীয় এম.এল .এ গোপাল চন্দ্র রায়, মহাত্মা গান্ধী হায়ার সেকেন্ডডারী সুকলের হেডমাস্টার পরিমল মজুমদার, ডিষ্ট্রিক্ট এডুকেশন অফিসার এ.কে. রিয়াং প্রমুখ৷ প্রত্যেকেই তাঁদের বক্তব্যে আনন্দমার্গের শিক্ষাব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেন৷
৫ম দিনের অনুূষ্ঠানে স্থানীয় বিধায়ক গোপালচন্দ্র রায় মহাশয় সুকলের জন্যে দুটি বড় পানীয় জলের ফিল্টার দান করেন৷
এদিনের অনুষ্ঠানে আনন্দমার্গ সুকলের প্রায় দুই শতাধিক প্রাক্তন শিক্ষক ও ছাত্র যোগদান করেছিলেন৷ সুকলের বিভিন্ন বিভাগে যারা কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তাদের মধ্যে এদিন পুরস্কার বিতরণেরও ব্যবস্থা করা হয়৷ উপরিলিখিত বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যষ্টিবর্গ ছাত্র-ছাত্রাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন৷
এই ৫দিনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মৃদুল মজুমদার৷ স্থানীয় দূরদর্শন চ্যানেলে (পি.টি.২৪) আনন্দমার্গের এই সমগ্র অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হয়৷ সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আচার্য বিবেকরঞ্জনানন্দ অবধূত৷