ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই হলো বরাক উপত্যকায় বাঙালী জনগোষ্ঠীর একমাত্র বাঁচার পথ

লেখক
প্রভাত খাঁ

অত্যন্ত দুঃখের কথা এদেশের শিক্ষিত ব্যষ্টিগণ মনে হয় ভুলেই গেছেন সেই অষ্টাদশ শতাব্দীর ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের ইতিবৃত্ত৷ বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দোল্লা যখন মাত্র ১৮ বছরের তরুণ তাঁকে সরিয়ে পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজ এর সঙ্গে নাটক করে বিশ্বাসঘাতক সিপাহ সালার মিরজাফর সিংহাসন দখল করেন৷ আর বন্দী নবাব সিরাজকে নামাজে রত অবস্থায় মোহম্মদী বেগকে দিয়ে পৃষ্ঠ দেশে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করানো হয় মিরজাফরের পুত্র মিরনকে দিয়ে৷ যাঁর মৃত্যু ঘটে বজ্রাঘাতে ! সেই যে বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা সেটাই একনাগাড়ে চলে আসছে এই হতভাগ্য বাংলায় অদ্যাবধি৷

এই বিশ্বাসঘাতক ইংরেজ সরকার এই দেশের কিছু ইয়েসম্যান সংগ্রহ করে পৌনে দু’শত বছর শাসনে চরম শোষণ করে সারা ভারতবর্ষে তথা পৃথিবীতে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে আর ইংল্যাণ্ডকে সমৃদ্ধশালী করে গেছে৷ ভারতবর্ষে ঊনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণ, সহিংস ও অহিংস আন্দোলন, বিংশ শতাব্দীর নবজাগরণ, সহিংস ও অহিংস আন্দোলন, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চাপ, আই এন এ-র নেতাজী সুভাষের নেতৃত্বে ভারতবর্ষ আক্রমণ, সারা ভারতবর্ষে নৌবিদ্রোহ, রাজকর্মচারীদের ও পুলিশ বাহিনীতে অনাস্থা, সারদেশে স্বাধীনতা আন্দোলন এর ঢেউ, আর মুসলীমলীগের দাঙ্গা যা ইংরেজ এর সৃষ্ট যেটা হীতে বিপরীত হলো৷ সবমিলিয়ে ইংরেজদের বশংবদ লর্ড মাউন্টব্যাটন এর প্রিয়পাত্র মিঃ জিন্নাও জওহরলালকে রাজী করিয়ে ভারতবর্ষকে দ্বিখণ্ডিত করে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান করা হলো৷ যাতে করে চিরকাল এই ভূখণ্ডে সাম্প্রদায়িকতা বজায় থাকে৷ তারই পাকা বন্দোবস্ত করা হলো মিঃ র্যাডক্লিপকে দিয়ে ৷ আর সেই অখণ্ড অতীতের বাংলাকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় লক্ষ লক্ষ হিন্দুনরনারী শিশু হত্যা করিয়ে ও লক্ষ লক্ষ অসহায় হিন্দু নারী পুরুষ  শিশু নির্বিশেষে উদ্বাস্তু বানিয়ে ভারতে পাঠিয়ে ইংরেজ সরকার বাঙালী জনগোষ্ঠীকে ছিন্ন-ভিন্ন করে ভারত ছাড়ল৷ আজ সেই বাঙালী হিন্দু একনাগাড়ে দিল্লির হিন্দী সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা শোষিত ও নির্যাতীত হয়ে চলেছে সারা দেশে৷ ভাগ্যের একি ভয়ংকর পরিহাস! অতীতের সেই সুজলা সুফলা বঙ্গভূমি যার আয়তন ছিল পূর্বের ব্রহ্মদেশ অর্থাৎ মায়ারমার পশ্চিমে দ্বারভাঙ্গা (দুয়ারভঙ্গ) থেকে বর্ত্তমান বহারের মধ্যভাগ আর দক্ষিণে ঊড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ জেলা ছিল এই বৃহত্ত র বাংলার অংশ৷ তাছাড়া সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড নামে যে নোতুন রাজ্য হয়েছে তার অধিকাংশ জেলাই ছিল অতীতের বাঙলার অন্তর্ভুক্ত৷ অপরদিকে বর্ত্তমান অসমের সমগ্র দক্ষিণাংশটাই অর্র্থৎ বরাক উপতক্যাটাই ছিল বাঙলার ৷ বঙ্গভাষীরাই ছিল সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা৷ আজ যারা প্রায় ৪০ লক্ষ বাঙ্গালী এন.আর.সি নামে কালা কানুনে নাগরিকত্বহীন হয়ে পড়েছেন৷ তারা এই বাংলারই স্থায়ী বাসিন্দা! এদের কথা ভাবার সময় এসেছে সকল বাঙালী ভাই ও বোনদের৷ দূরদেশী ইংরেজ সরকার বাংলার আয়তন ছোট করে গভীর চক্রান্ত করে, যাতে সচেতন প্রতিবাদী বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন করতে না পারে তার জন্যে হিন্দী সাম্রাজ্যবাদীরা বদ্ধপরিকর৷ আজ প্রায় ৭১ বছর হলো এদেশ নামকেওয়াস্তে স্বাধীন হয়েছে৷ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেশের কোটি কোটি মানুষ পায়নি৷ মাত্র মোট জনসংখ্যার ১শতাংশ মানুষ দেশের সম্পদ ভোগ করছে৷ এদের তোষণ করে চলেছে গণতন্ত্রের নামে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির শাসকগণ৷ কারণ ঐ ১ শতাংশ ধনীরাই এদের পৃষ্ঠপোষক ও অভিভাবক বিশেষ৷ সাম্প্রদায়িকতা, জাতপাতের সুড়সুড়ি দিয়েই মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে ছলবল কৌশলে ডিভাইডএ্যণ্ডরুল চালিয়া যাচ্ছে৷ অত্যন্ত লজ্জার ও দুঃখের কথা সারা ভারতে বাঙালী জনগোষ্ঠীই আজ নানাভাবে সকলদিক থেকে অত্যাচারী শোষিত ও বঞ্চিত হয়ে কাল কাটাচ্ছে৷ চরম বেকার সমস্যা, নিরাপত্তাহীনতা, অশিক্ষা, খাদ্যাভাব ছাড়াও অন্য সমস্ত দিক থেকে দেশ ভুগছে, মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত৷ রাজনৈতিক দলগুলির একমাত্র লক্ষ্য হলো শাসন ক্ষমতা কায়েম করা৷ বোটকেন্দ্রীক উদ্দেশ্য সিদ্ধি তথা শাসন ক্ষমতা কায়েম করা ছাড়া এদের দেশ সেবার দিকে তিলমাত্র নজর নেই৷ লজ্জার কথা আজ ভারত স্বাধীন হয়েও ইংরেজ যারা চরম অত্যাচারী বিশ্বাসঘাতক তারাই যারা কমনওয়েলথ গড়েছে৷ সেই সংস্থার সদস্য! ডোমিলিয়ন স্ট্যাটাস এদের ঘাড়ে চাপিয়ে রেখেছে৷ চিরকালের মতো পঙ্গু করে দিয়েছে এরাই পশ্চিম গোষ্ঠী যারা ধণতন্ত্রের পূজারী৷

পড়ে পড়ে মার আর কতবছর খাবে হতভাগ্য বাঙালী জনগোষ্ঠী? অখণ্ড বাংলার স্থায়ী বাসিন্দা এরা ও এদের পূর্ব পুরুষরা৷ সরকারের এটা স্মরণে রাখা উচিত৷ অসমিয়া যাঁরা তাঁরা ইরাবতী নদীর তীরের বাসিন্দা৷ তাঁরাই বাহিরের দেশ থেকে আসে৷ অসমের ব্রহ্মপুত্র উপতক্যার অসমিয়াদের চেয়ে বরাক উপতক্যার হিন্দু ও মুসলমান বাঙালীদের সংখ্যা কোন অংশে কম নয়৷ বিজেপি স্থায়ী বাসিন্দাদের কোথায় পুষব্যাক করবে? এদের অনেককেই তো দেশ ভাগের সময় পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানো হয় শ্রীহট্টের ৪টি মহকুমা পাকিস্তানে ঢুকিয়ে৷ আবার পূবঃ পাকিস্তানের কট্টর বাদীরা জমি জমা কেড়ে নিয়ে যারা হিন্দু তাঁদের উদ্বাস্তু করে অসমে তাড়ায়৷ গত ১৯৭১ এর ডিসেম্বরে যে নোতুন বাংলাদেশ হয় আবার সেই কট্টর মুসলমানরা বাকি হিন্দুদের উদ্বাস্তু করে সে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয় যদিও শত্রুসম্পত্তি হস্তান্তর আইন সেখ হাসিনা করেন সেই আইন আমলারা নানা ছলা কলার জালে আটকিয়ে রেখে তাকে বাস্তবায়িত করার সুযোগ রাখেনি অদ্যাবধি৷

লক্ষ লক্ষ অসহায় হিন্দু ও অমুসলমান নিধন করে দাঙ্গায় ও সে দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু ও অমুসলমানকে উদ্বাস্তু করে তাড়িয়ে মাত্র সামান্য কটি হতো দরিদ্র মানুষ অমুসলমান আছে তাদের সংখ্যাখুবই নগণ্য৷

এদিকে এই বি.জে.পির কেন্দ্রীয় সরকারই তো বাংলাদেশে অবস্থিত হিন্দু অধ্যুষিত হিন্দু ছিটমহল হস্তান্তর করা হয় কিন্তু তার পরিবর্ত্তে ৪০ বর্গকিলোমিটার জমি বাংলাদেশকে দিতে হয়৷ পরিশেষে মানবিকতার দিক থেকে একটি ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত হল, বরাক উপতকা সহ আগেকার বাঙলার যে এলাকাগুলি বর্তমানে অসমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ওই সমস্ত এলাকাকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করাই সঙ্গত৷ এই এলাকাগুলি পুরোপুরি বাঙালী অধ্যুষিত৷ এগুলি বাঙলার নিজস্ব এলাকা৷ আর মনে রাখা উচিত বাঁচার জন্যে লড়াই করাটা সকলের ন্যায়সঙ্গত ও আইনসঙ্গত অধিকার৷ এখানকার বাঙালীদের লড়াইয়ের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের সমস্ত বাঙালীদের যুক্ত হওয়া উচিত৷