আমাদের অতি পবিত্র আনন্দনগরের উন্নয়নের জন্য সকলে এগিয়ে আসুন

লেখক
প্রভাত খাঁ

আনন্দমার্গের তীর্থক্ষেত্র হলো পুরুলিয়ার আনন্দনগর ৷ এখানেই মার্গগুরুদেব শ্রদ্ধেয় বাবা শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী আনন্দমার্গের আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন৷ এখানেই তিনি মার্গের সেবামূলক কাজের বিভিন্ন দিকের কর্মকাণ্ডগুলিকে বাস্তবায়িত করেন৷ এর আয়তন প্রায় প্রাচীন কলকাতা নগরীর মতো৷ বনজঙ্গল-কাঁকর-পাথরে ভরা প্রায় জনমানব শূন্য দিনের বেলায় শিয়াল ডাকা স্থানে তাঁর কর্মকাণ্ড শুরু করেন৷

এই পাণ্ডব বর্জিত স্থানে তিনি তাঁর অদম্য প্রচেষ্টায় তাঁর পরম ভক্তদের নিয়ে বিরাট আশ্রম নির্র্মণ করেন মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে৷ এখানে ফল, ফুলের বাগান, দুগ্দ প্রকল্প, প্রাথমিক-মাধ্যমিক, বিদ্যালয়-মহাবিদ্যালয়,আভা সেবা সদন, কুষ্ঠাশ্রম, মহিলাদের জন্য পৃথক বিদ্যালয়, অভিভাবক হীন ছেলে ও মেয়েদের জন্য বাসগৃহ অর্থাৎ হোম, পড়ুয়াদের জন্য হোস্টেল ইত্যাদি যেমন প্রতিষ্ঠা করেন ঠিক তেমনই অতিথিশালা , কার্যালয় রাস্তাঘাট যা দরকার সবকিছুই প্রতিষ্ঠা করেন সমস্ত বাধাবিপত্তিকে উপেক্ষা করে ৷ সাধনার জন্য জাগৃতি গৃহ, এমনকি দেশ-বিদেশের দুপ্রাপ্য ফল ও ফুলের গাছ রোপণ করেন আশ্রমকে সারা পৃথিবীর দর্শনার্থীদের মনে এক বিশ্বৈকতাবোধকে জাগ্রত করা জন্য৷ ২৪ ঘন্টার মধ্যে তিনি প্রায় ১৮ ঘন্টা কাজ করতেন৷

তিনি আনন্দনগরে আনন্দমার্গের লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করার যে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করার ইচ্ছা পোষণ করতেন সেগুলি সবই বাস্তবায়িত করার কাজে হাত দেন৷ এমনকি বিভিন্ন ধরণের কুটিরশিল্প ও স্থাপন করেন অল্প সময়ের মধ্যে৷ তিনি চা ও কফি বাগানও তৈরী করেন৷ এমন কি নানাধরণের পশুপক্ষীর বিচরণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেন৷ রাতের অন্ধকার দূরীকরণের জন্যে বিরাট বিরাট জেনারেটার-এর সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আলোর অভাব পূরণেরও ব্যবস্থা করেন৷

তাঁর সৃষ্ট আনন্দনগর সারা পৃথিবীর মানুষকে বিশেষ করে মার্গের ভক্তবৃন্দকে আকৃষ্ট করে৷ যার দরুণ এই স্থানটি আনন্দমার্গের আশ্রমের কারণে খুবই জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে৷

বর্তমানে আরো অনেক কিছুর উন্নতি হয়েছে৷ আশ্রমের বর্তমান কর্মকর্তাগণ আনন্দনগরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তোলার আয়োজন করেছেন কারণ সেটি হলে আনন্দমার্গের যে সার্থক পূর্র্ণঙ্গ শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকল্পনা তাঁর ছিল সেটি বাস্তাবায়িত হবে৷

আনন্দমার্গের শিক্ষা, ত্রাণ, জনকল্যাণমূলক যে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি আছে তার দ্বারা বাংলা , ভারত ও সমগ্র পৃথিবীর জনগণ অদূর ভবিষতে অত্যন্ত উপকৃত হবেন৷ এর দ্বারা সারা পৃথিবীতে এক সার্বিক নবজাগরণ ঘটার সম্ভাবনা আছে৷ দৃঢ়তার সঙ্গে বলি বাবা এসেছিলেন সমগ্র পৃথিবীর মানুষের মধ্যে এক বিশ্বৈকতাবোধের জাগরণ ঘটাতে৷ সেটি মূলতঃ সার্থক শিক্ষা, ত্রাণ ও সেবার মাধ্যমেই করা সম্ভব ৷ আজ বলতে দ্বিধা নেই সারা পৃথিবীতে মানবিক মূল্যবোধ উদ্বুদ্ধ সার্থক শিক্ষিত মানুষেরই দারুণ অভাব৷ সবই আছে নেই শুধু কিছু সংস্কারমুক্ত উদার বিশ্ববোধে উদ্বুদ্ধ মানুষ যাঁরা কুসংস্কার , জাত-পাত এর ঊধের্ব উঠে হতভাগ্য পিছিয়ে পড়া কোটি কোটি মানুষকে এগিয়ে নিয়ে চলার পথ দেখাবে৷

সারা পৃথিবী বর্তমানে অধিকাংশে রাষ্ট্রনেতা ও নেত্রীগণ নিজ নিজ স্বার্থ সিদ্ধিতে মশগুল৷ প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র যা মানুষকে বাঁচার পথ দেখাবে সেদিকে কোন রাষ্ট্র নেতানেত্রীর লক্ষ্যই নেই৷ ‘‘শোষণের উপর সমৃদ্ধিটাই যেন তাঁদের জীবনের লক্ষ্য৷ এতে সামগ্রিক উন্নতি পদে পদে ব্যাহত হচ্ছে ও হবে৷

পৃথিবী দাঁড়িয়ে আছে যে ঐক্যের মধ্যে বৈচিত্র্যকে আঁকড়ে আজ সেই ঐক্যকেই পদে পদে আঘাত করা হচ্ছে বিচ্ছিন্ন সংকীর্ণ মতবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে৷ সার্থক শিক্ষা পারে নব্যমানবতাবোধ কে জাগ্রত করতে সারা পৃথিবীতে ৷ ‘‘সংগচ্ছধবং’’ মন্ত্র যা সুদূর অতীতে ভারতের মুনীঋষিদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল সেই মন্ত্রের ধারক বাহক হ’ল আনন্দমার্গ৷

মহান বিশ্বস্রষ্টা তো চান সবাই অর্থাৎ সৃষ্টির সকল জীবজন্তু গাছপালা ও সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ একত্রিত হয়ে মিলে মিশে তাঁর সুন্দর সৃষ্টিকে রক্ষা করুক ও আনন্দের পথে এগিয়ে যাক৷ এই মহান আদর্শের বার্ত্তাবহ হলো বাবার সৃষ্ট আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ৷ পরমারাধ্য বাবা আজ স্থূল শরীরে আমাদের মধ্যে নেই কিন্তু তাঁর আশীর্বাদ আমাদের সঙ্গে আছে৷ আমরা তাঁর অতিপ্রিয় আনন্দনগরকে সার্বিক জনকল্যাণে সার্থক করে তুলতে পারি৷ বাবা বলতেন---‘‘আমি আনন্দ নগরের আনন্দমূর্ত্তিজী৷’’

তাই আমাদের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র আনন্দনগরের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ করে যে কাজগুলি আজ হয়নি সেগুলি যাতে গড়ে ওঠে তারজন্য সকলের সকল প্রকার সাহয্যের অতি প্রয়োজন৷ আশা করবো এই মহান কাজে সকলে মুক্ত হস্তে অতি সত্বর সাহায্যের হাত বাড়াবেন৷ মনে রাখতে হবে--- ‘‘শুভস্য শীঘ্রম’’৷