গত ১লা ও ২রা সেপ্ঢেম্বর টাটুয়াড়াতে বাবা নাম কেবলম্ মহামন্ত্রের অখণ্ড কীর্ত্তন অনুষ্ঠিত হয়৷ স্থানীয় বিশিষ্ট আনন্দমার্গী চক্রধর কুমার ও শ্রীকান্ত কুমার অন্যান্য আনন্দমার্গীদের সহযোগিতায় এই অখণ্ড কীর্ত্তন পরিচালন করেন৷ অখণ্ড কীর্ত্তনের পর কীর্ত্তন মহিমা ও ভক্তি মাহাত্ম্যের ওপর বক্তব্য রাখেন আচার্য শিবপ্রেমানন্দ অবধূত৷
এছাড়া আচার্য সংশুদ্ধানন্দ অবধূতের পরিচালনায় বিশেষ সদাব্রত অনুষ্ঠান হয়৷ এতে সহস্রাধিক ভক্ত ও গ্রামবাসীকে মধ্যাহ্ণভোজনে আপ্যায়িত করা হয়৷
গুড়িডি ঃ ২রা সেপ্ঢেম্বর জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে এখানে তিন ঘণ্টা ব্যাপী কীর্ত্তন ও মিলিত সাধনা অনুষ্ঠিত হয়৷ এরপর কৃষ্ণ সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আচার্য নারায়ণানন্দ অবধূত বলেন, কৃষ্ণের দুই ভূমিকা ঃ ব্রজের কৃষ্ণ ও পার্থসারথী কৃষ্ণ৷ ব্রজের কৃষ্ণের ভূমিকায় কৃষ্ণ নির্গুণা ভক্তি, রাগানুগা ও রাগাত্মিকা ভক্তির মাহাত্ম্য প্রকাশ করছেন৷ আর পার্থসারথী কৃষ্ণের ভূমিকায় অধর্মের নাশ ও ধর্মের প্রতিষ্ঠায় পরমপুরুষের চরণে আত্মসমর্পণ করে অধর্মের নাশ ও ধর্মের প্রতিষ্ঠার জন্যে কর্মযোগে উদ্বুদ্ধ করেছেন৷
এই অনুষ্ঠানের পর সবাই নিকটস্থ কুন্তীভ্যালী তে গিয়ে সেখানে কীর্ত্তন ও কৃষ্ণের সম্পর্কে আলোচনা করেন৷ আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় বাবা বলেছেন, এই কুন্তীভ্যালীতে মহাসম্ভূতি শিব ও কৃষ্ণ দুজনেই পদচারণা করেছেন---দুজনেরই পদধূলিতে ধন্য হয়েছিল এই ভূমি৷
আনন্দনগর ঃ আনন্দনগরের বকুলবিতানে শ্রাবণী পূর্ণিমা উৎসব পালিত হয়৷ এই উপলক্ষ্যে যথারীতি প্রভাতসঙ্গীত পরিবেশন, অখণ্ড বাবা নাম কেবলম্ কীর্ত্তন, মিলিত সাধনা ও মিলিত গুরুপূজা অনুষ্ঠিত হয়৷ এরপরে শ্রাবণী পূর্ণিমার ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আচার্য মুক্তানন্দ অবধূত বলেন---১৯৩৯ সালের শ্রাবণী পূর্ণিমার পুণ্য তিথিতে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী, যখন তাঁর বয়স মাত্র ১৮ বছর, তখন তিনি কলকাতার কাশীমিত্র ঘাটে এক ভয়ঙ্কর ডাকাত কালিচরণকে দীক্ষা দান করে তাঁর জীবনের পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন৷ তিনি এরপর সন্ন্যাসী কালিকানন্দে পরিবর্তিত হয়েছিলেন৷ সেদিন মার্গগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী যে বীজ বপন করেছিলেন পরবর্তীকালে তা এক সুবিশাল মহীরুহে পরিণত হয়ে আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘে পরিণত হয়ে সারা বিশ্বজুড়ে তার অগণিত শাখা - প্রশাখা বিস্তার করেছে৷
ডামরুঘুটু ঃ গত ২১ ও ২২ শে আগষ্ট ডামরুঘুটু গ্রামে ২৪ ঘন্টাব্যাপী অখন্ড কীর্ত্তন অনুষ্ঠিত হয়৷ আনন্দনগর এলাকার বিভিন্ন গ্রামে প্রতিমাসেই এই একই তারিখে অখণ্ড কীর্ত্তন অনুষ্ঠিত হয়৷ গ্রামটি আদিবাসী অধ্যুষিত৷ গ্রামের অর্ধেকের বেশী মানুষ আনন্দমার্গের সাধনায় দীক্ষিত৷ পাশে আনন্দমার্গের মহিলা শাখা উমা নিবাস অবস্থিত৷ এখানে আনন্দমার্গ পরিচালিত মেয়েদের একটি চিল্ড্রেন হোম (অনাথ আশ্রম) ও জুনিয়র হাইসুকল আছে৷ এই গ্রামে রাজু সোরেন নামে এক বিশিষ্ট আনন্দমার্গী ছিলেন, যিনি নানান্ কুসংস্কার ও সমাজের কুপ্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন ও পরবর্তীকালে তিনি সিপিএম পার্টির গুণ্ডাদের হাতে নিহত হয়েছিলেন৷ তাঁরই স্মৃতিতে গ্রামে একটি আনন্দমার্গ প্রাইমারী সুকল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ ওই স্কুলের হলঘরে অখণ্ড বাবা নাম কেবলম্ কীর্ত্তন অনুষ্ঠিত হয়৷ এই কীর্ত্তনে নিকটবর্তী হোম ও হোষ্টেলের মেয়েরা, ডামরুঘুটু গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বণিত, নিকটবর্তী সঙ্গীত বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপ্যাল আনন্দ তপঃশীলা আচার্যা, হাইস্কুলের প্রিন্সিপ্যাল অবধূতিকা আনন্দ-ব্রতীশা আচার্যা, রাঢ় হোষ্টেলের দিদি---সবাই এই কীর্ত্তনে যোগদান করেন৷
এছাড়া আচার্য শিবপ্রেমানন্দ অবধূত, আচার্য সুবোধানন্দ অবধূত প্রমুখও কীর্ত্তনে অংশ গ্রহণ করেন৷
অখন্ড কীর্ত্তন ও মিলিত সাধনার পর স্বাধ্যায় শেষে কীর্ত্তনের ওপর বক্তব্য রাখেন আচার্য মুক্তানন্দ অবধূত , আচার্য নারায়ণানন্দ অবধূত, অবধূতিকা আনন্দ সুমিতা আচার্যা প্রমুখ৷
অনুষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন রেঙ্গু সোরেন, বিজয় সোরেন, ঠাকুর দাস কিসুক, সমীর কিসুক প্রমুখ৷ এই কীর্ত্তন অনুষ্ঠানে আচার্য সংশুদ্ধানন্দ অবধূতের উদ্যোগে মাস ফিডিং কর্মসূচীও গ্রহণ করা হয়৷