বাঁকুড়ার দুর্লভপুরে
নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ গত ২৩, ২৪ ও ২৫শে জুন বাঁকুড়া জেলার দুর্লভপুরে আনন্দমার্গের এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়৷ এটি ছিল মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া ডায়োসিসের জন্যে ফার্স্ট ডায়োসিস সেমিনার৷ এতে দুই মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলা শতাধিক আনন্দমার্গী যোগ দান করেন৷ এই সেমিনারে সাধনা, ঈশ্বরকেন্দ্রিক দর্শনের শ্রেষ্ঠত্ব, যৌগিক জীবনচর্যা ও সুস্বাস্থ্য, প্রাউটের বহুমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেন৷ আচার্য সুতীর্থানন্দ অবধূত, আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত৷ আচার্য সুতীর্থানন্দ অবধূত সাধনার ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, শাক্ত, বৈষ্ণব ও শৈব----সাধনার তিনটি স্তর৷ সাধককে প্রথমে তাঁর মনের স্থূল প্রবৃত্তির সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়৷ এজন্যে মনের শক্তি অর্জন করতে হয়৷ সাধনার এই অংশকে বীরাচার সাধনাও বলা হয়৷ কারণ বীরের মত প্রকৃতির বিরুদ্ধে তাকে লড়াই করতে হয়৷ এই অবস্থাকে বলা হয় সাধনা সমর৷ এটা হ’ল সাধনার শাক্ত স্তর৷ এই লড়াইয়ের পর সাধন যখন প্রকৃতিকে জয় করে ব্রহ্মরসে মগ্ণ হওয়ার সাধনা করে নিজের মানস তরঙ্গকে (স্বরস) পরমপুরুষের মনের অর্থাৎ ভূমা মনের তরঙ্গের সঙ্গে একীভূত করার সাধনায় লিপ্ত হয় একে বলা হয় বৈষ্ণবীয় ভাব৷ বৈষ্ণবীয় ভাবের এই সাধনাই হ’ল রাসলীলা৷ অর্থাৎ পরমপুরুষের লীলারসের তরঙ্গে নেচে চলা৷ এরপর সাধক যখন পরমপুরুষের সঙ্গে তার মনকে মিলিয়ে দিয়ে নির্বিকল্প সমাধি লাভ করে তার এই ভাবটি হ’ল শৈব ভাব৷
আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত প্রাউটের বহুমুখী পরিকল্পনার ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, মানুষের জীবনের লক্ষ্য ব্রহ্ম সম্প্রাপ্তি ঠিকই, কিন্তু তার জন্যে সমাজের অনুকূল পরিবেশ চাই৷ মানুষ যদি তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে জীবনের নূ্যনতম চাহিদা পূরণ করতে না পারে তাহলে সে জীবনের সার্থকতা অর্জনের জন্যে সাধনা করবে কী করে? অন্ন চিন্তাতেই মানুষকে সবসময় বিব্রত থাকতে হবে৷ সূক্ষ্ম আধ্যাত্মিক চিন্তা করা আর তার পক্ষে সম্ভব হবে না৷
তাই সমাজে যাতে প্রতিটি মানুষ তার জীবনের নূ্যনতম চাহিদা পূরণের গ্যারাণ্টি পায় ও তার জন্যে উপযুক্ত ক্রয়ক্ষমতা অর্জন করতে পারে, তার সঙ্গে সময়ের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে তার ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করার সুযোগ পায় তার জন্যে মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার যিনি আনন্দমার্গের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী নামে সমধিক পরিচিত তিনি এক যুগান্তকারী প্রাউট দর্শন দিয়েছেন৷ এই প্রাউট দর্শন অনুসরণ করে চললে দেশনেতা বা দেশনেত্রীরা সমাজের মূল সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যাগুলির সুষ্ঠু সমাধান করতে সক্ষম হবেন৷
তিন দিন ধরে এই সেমিনারে ক্লাস ছাড়াও অন্যান্য কর্মসূচীর মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য ২৪শে জুন আনন্দমার্গীদের বর্নাঢ্য মিছিল৷ মিছিলটি দুর্গাপুর বাজারে এসে পৌঁছলে এখানে এক পথসভা অনুষ্ঠিত হয়৷ এই পথসভায় আনন্দমার্গের আদর্শ ও জনকল্যাণমূলক বহুমুখী কর্মসূচীর ওপর বক্তব্য রাখেন আচার্য অমৃতবোধানন্দ অবধূত, অবধূতিকা আনন্দ অন্বেষা আচার্যা, শুভেন্দু ঘোষ প্রমুখ৷ প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন আচার্য মন্ত্রেশ্বরানন্দ অবধূত৷ তিনি বলেন, আনন্দমার্গের আদর্শ পূর্ণাঙ্গ আদর্শ৷ অর্থাৎ সমাজের সমস্ত প্রকার সমস্যারই সমাধান আনন্দমার্গের এই পূর্ণাঙ্গ আদর্শে রয়েছে৷ এই সেমিনারটির মুখ্য দায়িত্বে ছিলেন আচার্য সর্বজ্ঞানানন্দ অবধূত৷
ঠাকুরগঞ্জে
নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ গত ৩০শে জুন, ১লা ও ২রা জুলাই বিহারের কিষাণগঞ্জ জেলার ঠাকুরগঞ্জস্থিত আনন্দমার্গ স্কুলে ফর্াস্ট ডায়োসিস সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ এই সেমিনারে কিষাণগঞ্জ, কাটিহার, মালদা, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা থেকে আগত আনন্দমার্গের দুই শতাধিক ভক্ত প্রতিনিধি ও সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনী অংশগ্রহণ করেন৷ সেমিনারের আলোচ্য বিষয় ছিল যোগ সাধনার মাধ্যমে সর্বদৈহিক সুস্থতা, আধ্যাত্মিক বিকাশ, ঈশ্বরকেন্দ্রিক দর্শনের শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রাউট দর্শনের বহুমুখী সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রভৃতি৷ উপরিউক্ত বিষয়গুলির ওপর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন কলিকাতা থেকে আগত সংঘের প্রবীণ কর্মী আচার্য তন্ময়ানন্দ অবধূত ও আচার্য সর্বেশ্বরানন্দ অবধূত৷ সেই সাথে প্রভাত সঙ্গীত, কীর্ত্তন, সামূহিক সাধনা, প্রাত্যহিক প্রভাতফেরী ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি খুবই আনন্দময় হয়ে ওঠে৷
এই উপলক্ষ্যে ১লা জুলাই সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঠাকুরগঞ্জ বয়েজ হাইস্কুল ও ঠাকুরগঞ্জ গার্ল্স হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রা ও শিক্ষকদের সমাবেশে যোগবিজ্ঞানের ওপর আকর্ষণীয় আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়৷ বিভিন্ন যোগাসনের ওপর ডেমোনোষ্ট্রেশনও দেওয়া হয়৷ ফলে উপস্থিত সকলের মধ্যে যোগভ্যাস শেখার বিষয়ে দারুণ উৎসাহের সঞ্চার হয়৷
ওই দিন বিকেলে ঠাকুরগঞ্জ শহরে আনন্দমার্গী ভক্তবৃন্দের এক বর্ণাঢ্য মিছিল পথ পরিক্রমা করে৷ পুরোনুষ্ঠানটি সফলভাবে সঞ্চালন করেন স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল আচার্য অর্পণানন্দ অবধূত ও কিষাণগঞ্জের ভুক্তিপ্রধান শ্রী সুমন ভারতী৷
নিউ আলিপুরদুয়ারে
নিজস্ব সংবাদদাতা: নিউ আলিপুরদুয়ার ,নিউ শোভাগঞ্জঃ গত ৩০শে জুন শুক্রবার থেকে ২রা জুন রবিবার, তিনদিন ধরে আলিপুর দুয়ার ও জলপাইগুড়ি ডায়োসিস এর ফার্ষ্ট ডায়োসিস সেমিনার অনুষ্ঠিত হ’ল নিউশোভাগঞ্জের (নিউআলিপুর দুয়ার) আনন্দমার্গ সুকলে৷ ৩০ শে জুন শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মানবমুক্তির মহামন্ত্র ‘াা নাম কেবলম্’ অখন্ড সংকীর্ত্তন--- মিলিত সাধনা গুরুপূজা ও স্বাধ্যায়ের পর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়৷ সেমিনারে প্রশিক্ষক ছিলেন--- আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের বিশিষ্ট সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনী--- আচার্য সুতীর্থানন্দ অবধূত, আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত ও অবধূতিকা আনন্দ করুণা আচার্য্যা৷ তাঁরা সেমিনারের তিন দিন ধরে আনন্দমার্গ দর্শনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন৷ সেমিনারে ২৫০ অধিক আনন্দমার্গী যোগদান করেন৷
সেমিনারের দ্বিতীয়দিনে স্থানীয় হাসপাতালে আনন্দমার্গের সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীবৃন্দ প্রায় ৩০০ জন রোগীর মধ্যে ফলের প্যাকেট বিতরণ করেন৷ অপরাহ্ণে কীর্ত্তন সহ একটি বর্র্ণঢ্য শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে নিউ শোভাগঞ্জের জনবহুল স্থানে পথ সভা করে৷ পথসভায় সভাপতির আসন গ্রহণ করেন আনন্দমার্গের বিশিষ্ট সদস্য শ্রী প্রাণেশ্বর লাহিড়ী, প্রধান বক্তা আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত--- ‘‘আনন্দমার্গ এক সর্র্বত্মক জীবনাদর্শ’’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন৷ ‘আনন্দমার্গের শিক্ষা’ বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন তরুণ শিক্ষাব্রতী শ্রী পুলক রায়৷ অবধূতিকা আনন্দ রসপ্রভা আচার্যার বক্তব্যের বিষয়ে ছিল ‘মানব ধর্ম’৷ নারীর মর্র্যদার ওপর বক্তব্য রাখেন৷ অবধূতিকা আনন্দ কৃষ্ণপ্রভা আচার্য , আচার্য শুভমিত্রানন্দ অবধূতের বক্তব্যের বিষয় ছিল--- ‘আমাদের জীবনে আনন্দমার্গের প্রয়োজনীয়তা কী?’’এরপর পথসভায় বক্তব্য রাখেন সভাপতি শ্রী প্রাণেশ্বর লাহিড়ি৷
পথসভায় উদ্বোধনী সঙ্গীত ‘সবারে করি আহ্বান..’..... প্রভাত সঙ্গীত পরিবেশন করেন রাওয়া শিল্পী--- ব্রহ্মচারিণী গীতশ্রী আচার্যা, ব্রহ্মচারিণী দেবলীনা আচার্যা, শ্রীমতী সুস্মিতা নায়েক ও দেবলীনা মোদক৷ তবলায় সহযোগিতা করেন আচার্য সেবাব্রতানন্দ অবধূত ৷ সমাপ্তি সঙ্গীত ‘আজ এগিয়ে চলো সকল মানুষ ভাই’ পরিবেশন করে পথসভার কাজ শেষ হয়৷ পথসভাটি সঞ্চালনা করেন আচার্য প্রমথেশানন্দ অবধূত৷
সেমিনারের তৃতীয় দিনে স্থানীয় তিনজন বিশিষ্ট চিকিৎসকের সহযোগিতায় একটি ‘‘মেডিকেল ক্যাম্প’’ -এ ৭৫ জন রোগীকে বিনামূল্যে পরীক্ষা করে ঔষধ দেওয়া হয়৷
অবধূতিকা আনন্দ করুণা আচার্যা , অবধূতিকা আনন্দ বিশোকা আচার্যা, অবধূতিকা আনন্দ রসপ্রভা আচার্যা প্রমুখের অক্লান্ত শ্রমে সেমিনারটি সুন্দর ভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে৷
গুয়াহাটিতে
নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ গত ২৩ থেকে ২৫শে জুন অসমের গুয়াহাটিতে জয়ানগর আনন্দমার্গ আশ্রমে আনন্দমার্গের সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়৷ শিলং সার্কেলের আনন্দমার্গের এই প্রথম ডায়োসিস স্তরের সেমিনারে প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আচার্য সুধাক্ষরানন্দ অবধূত ও আচার্য বোধিসত্তানন্দ অবধূত৷ এই সেমিনার প্রায় দেড়শতাধিক আনন্দমার্গী যোগদান করেছিলেন৷
ডিমাপুরে সেমিনার
গুয়াহাটি : গত ৩০শে জুন, ১লা ও ২রা জুলাই নাগাল্যান্ডের রাজধানী ডিমাপুরের আনন্দমার্গ আশ্রমে ত্রিদিবস ব্যাপী সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়৷ লামডিং ও কোহিমা ডায়োসিসের প্রায় ৭৫জন আনন্দমার্গী এই সেমিনার উপস্থিত ছিলেন৷ এই সেমিনারে প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আচার্য সুধাক্ষরানন্দ অবধূত ও আচার্য বোধিসত্তানন্দ অবধূত৷