উপস্থিত ৰুদ্ধি
‘তন্’ ধাতুর অর্থ হ’ল ৰেড়ে যাওয়া, অভিব্যক্ত হওয়া৷ যে মানুষ তার ভাবধারাকে নাচে–গানে অভিনয়ে–আবৃত্তিতে অভিব্যক্ত করতে পারে তার জন্যে ‘তন্’ ধাতুর উত্তর ড প্রত্যয় করে ‘ত’ শব্দ ব্যবহূত হয়৷ তাই এক্ষেত্রে ‘ত’–শব্দের একটি অর্থ হ’ল ণট বা অভিনেতা৷
অভিনেতার মধ্যেও অনেক সময় অদ্ভুত রকমের উপস্থিত ৰুদ্ধি দেখা যায়৷ সে বিচারে তিনি দু’দিক দিয়েই ‘ত’৷ অভিনয় জগতের ‘ত’–এদের উপস্থিত–ৰুদ্ধি সম্ৰন্ধে বা উপস্থিত ৰুদ্ধির স্বভাব সম্ৰন্ধে অনেক গল্প প্রচলিত আছে৷ দু’একটি গল্প তোমাদের শোনাচ্ছি ঃ
সেটা তখন ইংরেজ আমল৷ আমি তখন দিনাজপুরে৷ উত্তর ৰাঙলার অন্যান্য শহরের মত দিনাজপুরও একটি মাঝারি রকমের ছিমছাম শহর ছিল৷ শহরটি ছিল আমার খুব প্রিয়৷ দিনাজপুর–বাসীর স্বভাবের একটি বৈশিষ্ট্য আমার খুবই ভাল লাগত৷ ওঁরা*(*ওনারা, যেনারা, তেনারা শব্দগুলি গ্রাম্য দোষে দুষ্ট৷ ওঁরা, যাঁরা, তাঁরা–ই শুদ্ধ ওনারা, যেনারা, তেনারা না লেখাই ভাল৷) ছিলেন খুবই নাচ–গান–ভিনয় প্রিয়৷ সেকালে স্থায়ী অভিনয়মঞ্চ কোলকাতার বাইরে আর কোনো শহরেই ৰড় একটা ছিল না৷ কিন্তু দিনাজপুরে তা–ও ছিল৷ কয়েকজন স্থানীয় অভিনেতা তখন রীতিমত প্রথিতযশা হয়ে পড়েছেন৷ কেবল শহরেই নয়, গ্রামাঞ্চলের দিকেও থিয়েটারের রমরমা৷ সেই সময়টায় ওই দিকটায় ‘সীতা’ নাটকটি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে৷ সীতার ভূমিকায় অভিনয় করে যিনি দু’হাতে যশ কুড়িয়েছিলেন, তাঁর নাম ছিল সম্ভবতঃ আব্দুল লতিফ৷
সীতা নাটকের অভিনয় চলছে৷ শহরে হাজার হাজার গোরুর গাড়ীর ভীড়৷ গ্রামের লোক ঝেঁটিয়ে এসেছে অভিনয় দেখতে৷ হাতে পাট বেচার তাজা টাকা৷ দরকার পড়লে অভিনয়ের জন্যে ৰেশ কিছু খরচ করতেও তৈরী৷
অভিনয় চলছে৷ নাটক তার চরম স্তরে ন্তুপ্তন্প্প্ত্রপ্রগ্গ এসে পৌঁছেছে৷ এবার সীতার পাতাল প্রবেশ৷ ধরিত্রী মাতাকে সম্বোধন করে সীতাকে যা বলতে হবে তার মোদ্দা কথা হচ্ছে–‘‘মাতঃ বসুন্ধরে, দ্বিধা হও, আমি তোমার স্নেহময় অঙ্গে স্থানলাভ করি’’৷ আব্দুল লতিফে.র নাটকের ভাব ষোল আনাই জানা, ভাষাও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঠোঁটস্থ৷ এই বিশেষ স্থানটিতে সীতা ধরিত্রী মাতাকে সম্ৰোধন করে যা বলবেন তার ভাবটিও তাঁর জানা আছে৷ কিন্তু ভাষা একটু গোলমেলে হয়ে গেছে৷ সেই মাহেন্দ্রক্ষণে ‘‘মাতঃ বসুন্ধরে’’ বলার পরই স্মারকের হ্মব্জপ্সপ্পহ্মব্ধন্দ্ এসে গেল দারুণ কাশি৷ সে কাশির চোটে আর কথা বলতে পারছে না অথচ সীতা তো আর তার প্রত্যাশায় মুখ ৰন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না৷ সে তখন উপস্থিত ৰুদ্ধি প্রয়োগ করে বললে–‘‘মাতঃ বসুন্ধরে, তুই ফাঁক হ, মুই ভিতরত্ ঢুকিম্’’৷
দেখলুম, এ জিনিসটা শ্রোতারা সহজেই গ্রহণ করলেন৷ নাটকের কিছুমাত্র রসভঙ্গ হ’ল না৷