প্রভাতী

কুবের চাকরী পেলেন

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

সংস্কৃতে ‘কোষাধ্যক্ষ’ শব্দের একটি অর্থ হল কুবের৷ পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী দেবতাদের কাছে ছিল প্রচুর ধনরত্ন৷ এই ধনরত্ন তাঁরা ৰেশীর ভাগই সংগ্রহ করেছিলেন সমুদ্র মন্থনকালে সমুদ্রের তলদেশ থেকে৷ এছাড়া সংগ্রহ করেছিলেন সুমেরুশিখর (উত্তর মেরু) থেকে মূল্যবান ধাতু ও কুমেরুশিখর (দক্ষিণ মেরু) থেকে মূল্যবান মণি–মাণিক্য প্রস্তরাদি৷ এই বিপুল ধনরত্নের রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে দাঁড়াল একটি সমস্যা৷ দেবতারা ছিলেন দারুণ ভোগলিপ্সু ও তৎসহ ক্ষমতালোভী৷ দেবতাদের দ্বারা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব ছিল না৷ তবে কি ওই বিপুল পরিমাণ ধনরাশির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অসুরের হাতে তুলে দেৰেন! না, তাও সম্ভব নয়, কারণ অসুরদের মধ্যে ত্যাগের স্পৃহা ছিল অত্যন্ত কম৷ তাদের ধ্যেয় প্রেয় সৰকিছুই ছিল ধনসংগ্রহ৷ তারা খরচ করতে চাইত না৷ দেবতারা ভাবলে সৰ সম্পদ যদি অসুরদের হাতে তুলে দেওয়া হয় তবে দরকার পড়লে দেবতারা যদি অসুরদের কাছে চিৎহস্ত করে তবে অসুররা কিন্তু উপুড়–হস্ত করৰে না অর্থাৎ চিরকালের জন্যে সৰ সম্পদ অসুরদের কুক্ষিগত হয়ে থাকবে৷ তবে কি এই সৰ ধনরত্ন মানুষদের হাতে তুলে দেবে! না, তাও সম্ভব নয়, কারণ মানুষ অত্যন্ত নির্মম জীৰ৷ তারা বন্য পশুপক্ষী মৃগকুলকে হত্যা করে খায়৷ কিন্তু এখানেই কি শেষ! শুধু কি তাই! তারা তাদের নিরীহ পোষমানা পশুপক্ষীকে কেটে খেয়ে চরম নিষ্ঠুরতার পরিচয় দেয়৷ তারা সম্পদ সম্পত্তির জন্য নিরীহ লোককে হত্যা করে৷ তাদের দয়ামায়া ৰলে কোনো জিনিসই নেই৷ তারা মুখে দয়া–মানবিকতার কথা ৰলে কিন্তু কার্যক্ষেত্রে অত্যন্ত নির্দয়৷ তাদের জুলুমে অত্যাচারের কষাঘাতে ৰহু নিরীহ জীব ধরাপৃষ্ঠ থেকে অদৃশ্য হয়েছে, ৰহু শস্যশ্যামল ভূমি মরুভূমিতে রূপান্তরিত হয়েছে, ৰহু শস্যসম্পদ সীজ কণ্টকের রূপ ধারণ করেছে৷ মানুষের মত নিষ্ঠুর জীব আর দ্বিতীয় নেই৷ এরা রাজনীতির নামে মানুষকে হত্যা করে...দেশত্যাগ করতে বাধ্য করে...এরা ধর্মের নামে নারীহরণ করে......নিরীহ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে তো বটেই, নিরীহ নারী–ৰৃদ্ধ–শিশুকেও হত্যা করতে পশ্চাদ্পদ হয় না...এরা মুখে হিউম্যানিজম বা মানবতার ৰুলি কপচায়, অথচ প্রতি পদ–বিক্ষেপে মানবতাকে কুঞ্চিকা ৰোধে পদদলিত করে পৈশাচিক আনন্দে উন্মত্ত হয়ে ওঠে৷ এই সেই মানুষ জাত যার কপটাচরণ তথা ভণ্ডামি দেবতা ও অসুর দুইকেই হার মানায়.... দুইকেই ভয়ে শিউরে তোলে৷ তাই মানুষকে যদি দেবতাদের সঞ্চিত বিত্তের রক্ষকের কাজে নিয়োগ করা হয় তাহলে মানুষ ওই সম্পদকে নিজের কুক্ষিগত রাখার জন্যে হয়তো বা দেবতাদের হত্যাও করবে৷ দেবতারা অমৃত খেয়ে অমর হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মানুষের অস্ত্রাঘাতে তাঁদের আহত তো হতে হৰে৷ তাই ধনসম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের ভার মানুষের হাতে দেওয়া যায় না৷ অতঃ কিং করণীয়ম্৷

দেবতারা দেখলেন তাঁদের মধ্যে এমন একজন দেবতা রয়েছেন যাঁকে সব দেৰতাই তাঁদের দেবতা ৰলে শ্রদ্ধা করেন, তাঁকে প্রণাম করেন, তাঁকে সৰাই মেনে চলেন৷ তিনি হলেন মহাদেব৷ ‘‘দেবতানাং দেবঃ ইত্যর্থে মহাদেবঃ’’৷ দেবতারা তখন কৈলাসে গিয়ে মহাদেবের দ্বারস্থ হলেন৷ পার্বতী তাদের তড়া* (*যে আউশ তাড়াতাড়ি পাকে রাঢ়ের কোথাও কোথাও বিশেষ করে অজয় অববাহিকায় তাকে তড়া আউশ বলে৷ ‘তড়া’ শব্দটি আসছে ‘ত্বরা’ থেকে৷ এই তড়া আউশ সম্পূর্ণতই নিম্নবিত্তেরা খেয়ে থাকেন৷) আউশ ধানের ভাত ও কলমী শাকের ঝোল পেট ভরে খাইয়ে পরিতৃপ্ত করে দিলেন৷ অতঃপর পার্বতী দেবতাদের শুধোলেন–‘‘কী উদ্দেশ্যে তোমাদের শুভাগমন ৰলবে কি’’

দেবতারা ৰললেন–‘‘আমরা আমাদের ধনসম্পদ শিবের হিফাজতে রেখে দিতে চাই৷’’ পার্বতী ৰললেন–‘‘শিৰের জিম্মায় রাখা মানেই তো আমার জিম্মায় রাখা৷ আমার সারাদিনে সাতশ’ কাজ৷ ৰারৰার সিন্দুকের চাবি আমি খুলতে লাগাতে পারব না৷ তাছাড়া আঁচলে চাবিগাছাটা ৰেঁধে রাখা সম্ভব নয়৷ জানোই তো আমাকে কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় তাই দেখছো তো কোমর ৰেঁধেই শাড়ী পরি...চাবি রাখব কোথায় তাই আমি শিবের পক্ষ থেকে ৰলছি তোমাদের প্রস্তাবে সম্মত নই৷’’ এমন সময় শিৰ ঘরে এলেন৷ দেবতারা নতজানু হয়ে তাঁর চরণ বন্দনা করলেন৷ শিৰ ৰললেন–কী চাস্ রে ব্যাটারা

দেবতারা ৰললেন–‘‘চাইবার তো কিছুই নেই৷ সবই তো দিয়েছেন আর না চাইতেই তো দিয়ে থাকেন৷ তাই চাইছি না কিছুই–একটা অনুরোধ আছে৷’’

শিৰ ৰললেন–‘‘ওসব আটঘাট–ৰাঁধা ভাষা আমি ৰুঝি না৷ আমার সঙ্গে সোজা ৰাংলায় কথা ৰল্৷’’

দেবতারা শিৰের চরণ চুম্বন করে ৰললেন–‘‘আমরা আকাশ থেকে, পাতাল থেকে, সুমেরু থেকে, কুমেরু থেকে সৎভাবে অসৎভাবে প্রচুর ধন সঞ্চয় করেছি..... ইনকাম ট্যাক্স ৰাঁচিয়ে, এক–নম্ৰরী, দু’–নম্ৰরী, তিন–নম্ৰরী খাতায় নানান ধরনের হিসেব লিখে কল্মষ–কলস উপচে ফেলেছি৷ এখন এই বিপুল ধনভাণ্ডার রাখি কোথায়! দেবতাদের কাছে রাখা যায় না কারণ দেবতারা লোভী৷ অসুরদের কাছে রাখা যায় না কারণ অসুররা অতিসঞ্চয়ী৷ মানুষের কাছে রাখা যায় না কারণ মানুষ নির্দয়৷ তাই আপনার শরণাপন্ন হয়েছি৷ তাই প্রভু, আপনি কিছু একটা করুন৷’’

শিৰ ৰললেন–‘‘কেন, অতীতে একটা ঘটনা হয়েছিল৷ জ্যোতির্ময় পরমপুরুষ সকল জীবের জন্যে ‘দ’ শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন৷ তোরা সে কথা কি ভুলে গেছিস!’’

দেবতারা ৰললে–‘‘শুনেছি মনে হয় তৰে এখন ঠিক ঠিক মনে পড়ছে না৷’’

শিৰ ৰললেন–পরমপুরুষ সর্বজীবের জন্যে একটি বাণী দিয়েছিলেন৷ সেটা ছিল ‘দ’৷ দেবতারা এই ‘দ’ শব্দের মানে নিয়েছিল ‘দমন করো’ অর্থে৷ সবাইকে যেন তেন প্রকারেণ দাবিয়ে রাখো৷ অস্ত্রশস্ত্রের সাহায্যে অ্যাটম বম্ব, মেগাটন বম্বের সাহায্যে, ভেটো ন্দ্বব্ধপ্সগ্গ প্রয়োগ করে নিজের তাঁবে রেখে দাও৷ বিশ্বকে কুক্ষিগত করে রেখে দাও ছলে ৰলে কৌশলে, সামে–দানে ভেদে–দণ্ডে দমন করে যাও৷ দমনকেই জীবনের মূলীভূত সত্য ৰলে মনে করো৷ অসুররা ছিল অতিসঞ্চয়ী৷ ওরা ভাবলে পরমপুরুষ ওদের ‘দ’ শব্দ দিয়েছেন দান করা অর্থে৷ সেই থেকে অসুররা সঞ্চয়বৃত্তি ছেড়ে দানবৃত্তি গ্রহণ করেছে৷ আর মানুষরা ‘দ’–এর মানে ধরে নিয়েছিল দয়া করো৷ মানুষ জাতটা ৰড় নির্দয় কিনা!

দেবতারা ৰললে–হে দেবাদিদেব, দেবতা–মানুষ–সুর সৰাই স্বধর্ম্মচ্যুত৷ এই অবস্থায় শুধু আপনিই আমাদের মুস্কিল আসান৷ আমাদের ধনসম্পদ আপনার জিম্মায় রেখে দিতে চাই৷

এমন সময় পার্বতী শিৰকে একটু আড়ালে ডেকে ৰললেন–‘‘ক্ষেপেছ গা! ওই ধনসম্পদ দেখাশোনা করবে কে! ধনসম্পদে আমাদের দরকার নেই৷ আমরা সুদ খাবও না, সুদে খাটাবও না৷ আর সরল সুদকষা, চক্রৰৃদ্ধি হারে সুদকষা কোনো অঙ্কই কষতে পারব না৷ তুমি সোজাসুজি দেবতাদের প্রস্তাব খারিজ করে দাও, নইলে আমি ভীষণ রেগে যাব কিন্তু......৷

তাছাড়া দেখছো তো কর্ত্তা, তুমি কতদিন আমাকে ৰলেছ–পার্বতী, আমি আমার উদ্ভাবিত তাণ্ডব নৃত্য নেচে চলেছি কিন্তু তুমি তোমার নিজস্ব ঘরানার ললিত্য নৃত্য নাচো না কেন মনে পড়ে, আমি প্রতিৰারই তোমাকে ৰলেছি–কর্ত্তা তুমি যখন নাচো তোমার গায়ের ঝাড়া খেয়ে সাপগুলো মাটিতে আছড়ে আছড়ে পড়ে৷ তখন কার্ত্তিকের ময়ূরটা ছুটে যায় সেগুলোকে গিলে খেতে৷ আমি থাকি ৰলেই তো ময়ূরটাকে দড়ি ৰেঁধে আটকে রাখি, আমিও যদি তোমার সঙ্গে ললিত নৃত্য জুড়ে দিতুম তাহলে কী তোমার একটা সাপও থাকত আমার হয়েছে কর্মফের, আমি দু’দণ্ড যে ললিত নৃত্য নাচব, পৃথিবীর দু’–চার জন মানুষকে প্রাণ–ভরে নাচ শেখাব তার জো নেই৷ এই অবস্থায় দেবতাদের ধনসম্পদ নিজের জিম্মায় নিই কী করে! তুমিই ৰলো! তুমি যখন দেবাদিদেব তখন তোমার আক্কেল তো মানুষ, অসুর, দেবতা তিনের চেয়ে অ...নে...ক গুণ ৰেশী৷’’

শিৰ ৰললেন–পার্বতী তুমি যা ৰলছ তা সবই ঠিক কথা... লাখ কথার এক কথা৷ আমি তো কোন ছার, একথা জজেও মানবে৷

শিৰ এসে সেই কথাটাই দেবতাদের বললেন৷ শুনে দেবতারা ৰললেন–‘‘মহারাজ, এই অর্থবিত্তের রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে আমরা আপনাকে তিলমাত্র কষ্ট দোৰ না, মাতা পার্বতীকে তো দোৰই না৷ সম্পদ আপনার নামে থাকুক৷ আপনার পাণিমুদ্রা (হাতের ছাপ) বাদে কেউ একটা কানাকড়িও এদিক ওদিক করতে পারৰে না৷ আর আপনার নামে সমস্ত রক্ষণাবেক্ষণ তথা দেখাশোনা করে যাৰেন আপনারই একজন সহকারী৷ আমরাই দেবতাদের মধ্যে থেকে একজন অনুগত সহকারী দিচ্ছি৷’’ পার্বতী ৰললেন–‘‘ওগো শুনছ, দেবতাদের মুখের চাউনি দেখে আমার মনটা যেন কেমন করছে৷ ছেলেগুলো যেন চিন্তাভাবনায় ভেঙ্গে পড়েছে৷ ওরা আমাদেরই তো ছেলে! যখন তোমার এজন্যে ৰাড়তি খাটনি হৰে না তখন এদের প্রস্তাবে রাজী হয়েই যাও৷ আমিও যতটুকু পারি সামলে দোৰ৷’’ দেবতারা তখন তাঁদের মধ্যে থেকে একজন নিয়ম–মানা ঐকান্তিকতা তথা আন্তরিকতাপূর্ণ দেবতাকে শিবের সহকারী রূপে দিলেন৷ সেই অতীত যুগ থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্বের সমস্ত ধনসম্পদ রাখা আছে কৈলাসশিখরের কাছাকাছি কোনো একটি জায়গায়, যে জায়গাটি দেবলোক–মর্ত্ত্যলোক দুইকেই ছুঁই–ছুঁই করছে৷ সেই শিবানুগত দেবতারই নাম কুবের৷ তাহলে তোমরা ৰুঝলে ‘কোষাধ্যক্ষ’ শব্দের আরেকটি অর্থ হ’ল ধনসম্পদের দেবতা কুবের৷

কৌশিক খাটুয়ার  কবিতা

 

(১)

ফুল বাগানে ব্যস্ত সভায়

চন্দ্রমল্লিকা ফুল,

গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে

হয় না তাদের ভুল৷

শীত-প্রতিনিধি ঢালে প্রেম-প্রীতি,

মনের কথাটি শুণিতে অতিথি

এসেছে কাননে না মানিয়া তিথি৷

চন্দ্রমল্লিকা বরণ ডালায়

অভ্যর্থনা ও স্বাগত জানায়,

জানায় ভক্তিপূর্ণ প্রণতি৷

 

(২)

কমল কলির সৌন্দর্যে মুগ্দ

উদ্ভাসিত দিবাকর,

নিয়মিত ভোরে দেখিবার তরে

আবির্ভূত ভাস্কর৷

যেথা অবগুণ্ঠিতা কুসুম কলি

ক্রমশঃ পাপড়ি মেলে,

সরোবরে তারা শতদল হয়ে

বিকশিত দলে দলে!

বিবেকানন্দ স্মরণে রাখি তাঁরে মননে

লেখক
শিবরাম চক্রবর্তী

বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের

          সারসত্তায় পাই,

ভারতআত্মার জাগরণেই

          মনে দিতেন ঠাঁই৷

আবার তিনি প্রগতিশীল

          মনেও ছিলেন ভারী,

তাই তো তিনি সত্যের ভাষণ

          করতেন সদাই জারি৷

খালি পেটে ধর্ম হয় না

          এই ছিল তার বাণী,

অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-স্বাস্থ্য

          গৃহ চাই একখানি৷

পদব্রজে ভারত ভ্রমণ

          করে তিনি দেখেন,

কত কষ্টে দেশবাসীরা

          দিনযাপনে থাকেন৷

তারই মাঝে জাত-পাত আর

(ধর্মের) গোঁড়ামিও বেশ ছিল,

ইংরেজরা সেই সুযোগে

          ধর্মান্তরে মন দিল৷

ভারতবর্ষের একটাই দোষ

          অন্যের দেশ যখন,

ভারতীয়দের বাহবা দিত

          চিনত তাঁদের তখন৷

তাই মনে হয় বিবেকানন্দ

প্রথম বিদেশ (আমেরিকা) যায়

হিন্দুধর্ম নিয়ে বত্তৃণতায়

          খুব প্রশংসা পায়৷

তারপরে সে দেশে ফিরতেই

          সবাই জড়িয়ে ধরে,

এরই ফলে হিন্দু ধর্মের

          ভিত মজবুত করে

বিবেকানন্দের বত্তৃণতায়

          এমনই জাদু ছিল,

ফেরার পথে এক রমনী (মার্গারেট)

          তার সাথী হ’ল৷

পরে তিনি দীক্ষা নিয়ে

          ভগিনী নিবেদিতা,

হয়ে বাঙলা ও ভারতমাতার

          গ্রহণ করলেন ছাতা৷

‘‘গোলোক বৃন্দাবন’’

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

গ্রামে যাত্রাগান চলছে৷ গীতাভিনয়*(সেকালে ভাল ৰাঙলায় যাত্রাকে ‘গীতাভিনয়’ বলা হত৷) হচ্ছে জমিদার বাড়ীর সামনেকার প্রকাণ্ড মাঠে৷ যার যা পার্ট সে পার্ট তো সে করছেই উপরন্তু সবাইকার চেষ্টা কোনোক্রমে জমিদারৰাৰুকে কিছুটা সন্তুষ্ট করে দিয়ে কিছু বখ্শিস আদায় করা৷ এই ধরনের ব্যাপার সেকালকার ৰাঙলায় খুব চলত৷ যার এলেম*(*মূল শব্দটি ‘ইল্ম্’ যার থেকে ‘আলিম্’ শব্দটি এসেছে৷) তেমন নেই সেও জমিদারের খোশামোদ করে দিয়ে বখশিসের ব্যবস্থা করে নিত৷ সেই যে গল্পে আছে না–

জাড়া গ্রামের ভোলা ময়রার সঙ্গে জনৈক জগুঠাকুরের কবির লড়াই হচ্ছে জাড়া গ্রামের জমিদার মধুসূদন বাঁড়ুজ্জের বাড়ীতে৷ জগুঠাকুর দেখলে, ভোলা ময়রার সঙ্গে সে এঁটে উঠবে না৷ তাই সে ঠিক করলে জমিদারৰাৰুকে খোশামোদ করেই দু’পয়সার ব্যবস্থা করে নেবে৷ পালার বাইরে গিয়েই ধুন ধরলে–

‘‘এ এক বৃন্দাবন রে ভাই এ এক বৃন্দাবন৷

হেথায় বাঁশী বাজানো লীলা করেন শ্রীমধুসূদন৷৷’’

ভোলা ময়রার নাকি তা সহ্য হয়নি৷ সে সঙ্গে সঙ্গে উত্তরে বলেছিল–

‘‘কেমন করে’ বললি জগা জাড়া গোলোক বৃন্দাবন৷

হেথা তুলসীমঞ্চ কোথায় পেলি সবই দেখি বাঁশের বন৷

বংশীধবনি শুনলি কোথায় ওরে মশায় করে ভনভন৷

কবি গা’বি পয়সা পাবি অত খোশামোদের কী কারণ’’৷৷

নববর্ষ কোথায় কখন কিভাবে

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

পয়লা জানুয়ারী আন্তর্জাতিক নববর্ষ৷ ইয়ূরোপে আজ নববর্ষ পালিত হয় পয়লা জানুয়ারী৷ কিন্তু এক সময় মার্চ মাসে নববর্ষ হতো৷

বাংলাতেও এখন যেমন বৈশাখ নববর্ষ অনুষ্ঠিত হয় প্রাচীনকালে হতো অগ্রহায়ণে৷

চীনা ও ইহুদীরা কোন নির্দিষ্ট দিনে নববর্ষ পালন করতো না৷ প্রাচীনকালে চান্দ্রবৎসর গণনার রীতি ছিল৷ সভ্যতার উন্মেষের সাথে সাথে সৌর আবর্ত্তনকে কেন্দ্র করে বছরের হিসেব শুরু হয়৷ সূর্যের হ্রাস বৃদ্ধি নেই৷ চন্দ্রকলার কিন্তু হ্রাসবৃদ্ধি আছে৷ আর এই সূর্য ও চন্দ্রের গতির তারতম্য হেতু কোন বছরে বারো, কোন বছরে তের মাস গোণা হয়৷ ফলে প্রাচীনকালে বিশেষতঃ চীনা ও ইহুদীরা নববর্ষ কোন নির্দিষ্ট দিনে পালন করতো না৷

আর্যরা উত্তরায়ন আরম্ভের দিনটিকে নববর্ষ মনে করতেন৷ উত্তরায়ন আরম্ভ হয় ২২শে ডিসেম্বর বা ৭ই পৌষ৷ তাই আর্যগণ ৭ই পৌষ নববর্ষ পালন করতেন৷ সেদিন তাঁরা সূর্যের পূজা ও যজ্ঞ করতেন৷

আজ থেকে ১৬০০ বছর আগে পৌষমাসের শেষ দিনে উত্তরায়ণ আরম্ভ হতো৷ অতএব ১লা মাঘ ছিল নববর্ষের দিন৷ সেদিনের পুণ্যতিথিটি সাগর সঙ্গমে স্নান অর্থাৎ মকর স্নানের মধ্য দিয়ে আজো পালিত হয়৷

‘হায়ণের অর্থ বৎসর’৷ অগ্র হচ্ছে প্রথম৷ অর্থাৎ বৎসরের প্রথম মাস৷ গীতায় অগ্রহায়ণকে বলা হয়েছে মার্গশীর্ষ৷ এককালে এই মার্গশীর্ষ বা অগ্রহায়ণ ছিল বছরের প্রথম মাস৷ মার্গ শীর্ষ নক্ষত্রে পূর্ণচন্দ্রের উদয় হলে সেই পূর্ণিমাকে বলে মার্গশীর্ষী পূর্ণিমা৷ এই মার্গশীর্ষী পূর্ণিমার জন্যেই মাসটির নাম মার্গশীর্ষ৷ অগ্রহায়ন মাসে সূর্যাস্তের পর এই নক্ষত্রে পূর্ণচন্দ্রের উদয় হয়৷ তাই এককালে অগ্রহায়ণই ছিল বছরের প্রথম মাস৷ ১লা অগ্রহায়ণ ছিল বছরের প্রথম দিন৷

১লা বৈশাখে ব্যবসায়ীদের হালখাতার উৎস খুঁজতে হলে যেতে হবে সেই মোগল আমলে৷ আকবরের আমল থেকে হিজরীসন অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন রাজস্ব আদায় করা হতো৷ প্রজারা তখন রাজস্ব স্বরূপ ফসল দিত৷ তাই আজকের হালখাতার তখন নাম ছিল ‘ফসলী’৷ সংস্কৃত ভাষায় এর নাম ছিল ‘পুণ্যাহ’৷ অর্থাৎ পুণ্যের দিন৷ পুণ্যের লোভে যাতে প্রজারা রাজস্ব দিতে আগ্রহী হয় তাই কি এই নামকরণ? তামিলরা তাদের নববর্ষ (পোঙ্গল) পালন করে মাঘের শুরুতে৷

নেপালে নববর্ষ হয় কার্ত্তিক পূর্ণিমার পরের দিন৷ প্রাচীন কালে চীনে পুরনো বছরের প্রতীক হিসাবে একটি কাগজের ড্রাগন তৈরী করে তাকে পোড়ানো হতো৷ অর্থাৎ আবাহন হতো এইভাবে৷

পশ্চিম আফ্রিকায় কিছু কিছু উপজাতির মধ্যে নতুন বছরের মঙ্গল কামনায় শস্য ক্ষেত্রে অবাধ মেলামেশা হয়৷

জাপানে নববর্ষের দিন দুটো পিঠে তৈরী হয়৷ একটি পিঠেপুরুষ অপরটি নারীরূপে কল্পিত হয়৷ আর এদের উভয়ের মধ্যে মিল ঘটানো হয়৷

খ্রীষ্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার ১লা জানুয়ারী নববর্ষ প্রচলন করেন৷ সীজার ছিলেন সুপ্রসিদ্ধ রোমীয় মহাবীর৷

যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধির মতে ইয়ূরোপে যে ১লা জানুয়ারী নববর্ষ দিবস পালিত হয় তা ভুল, হওয়া উচিৎ ২৩শে ডিসেম্বর৷ কারণ ঐদিন থেকে উত্তরায়ন শুরু৷ উত্তরায়ণের আরম্ভকাল থেকেই নববর্ষের শুরু৷

উত্তর ভারতে বর্ষ আরম্ভ (বিক্রম সংবত) হয় চৈত্র মাসের শুক্লা প্রতিপদে৷ ওই দিন সেখানে ধবজা রোপণের প্রথা আছে৷ উড়িষ্যায় চালু ছিল আমলী ও বিলায়তী অব্দ৷ আমলী অব্দ শুরু হত ভাদ্রমাসের শুক্লা দ্বাদশী থেকে আর বিলায়তী আশ্বিন থেকে৷ দক্ষিণ ভারতে বার্হস্পত্য বর্ষশুরু হয় বৈশাখ মাসের কৃষ্ণা প্রতিপদ থেকে৷ কেরলে কোল্লামবর্ষ আরম্ভ হয় ভাদ্রমাসের কৃষ্ণা নবমী থেকে৷ গুজরাতিরা দেওয়ালীর দিন নববর্ষ পালন করে৷ সেদিন তারা জুয়া খেলে নতুন বছরের ভাগ্য পরীক্ষা করে নেয়৷

আলোকের পথ ধরে

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

জাগরণ আসে বিভাবরী শেষে

আলোকের শুভ সূচনা,

নববর্ষের নবারুণ হাসে

সবই পরমপিতার রচনা৷

 

উন্নয়নে জাগে জনপদ

নববর্ষের কঠোর শপথ------

নব্যমানবতাবাদের প্রতিষ্ঠা,

নির্মূল হোক কায়েমী স্বার্থের

বিধবংসী অপচেষ্টা৷

জীবের সেবায় হয়ে নিয়োজিত,

সবারে চাই করিতে প্রীত৷

 

সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে

কঠোর সাধনে ব্রতী,

নবযৌবন সুচি করে মন

জনস্বার্থে অগগতি৷

 

এই ধরনীর জল ও বাতাসে

ফলে ভরা মধু ফুলের সুবাসে,

সকলের রবে সম অধিকার

সংবৎসর করিব প্রচার৷

 

বুভুক্ষের হোক উদর পূর্তি,

অজ্ঞের হোক জ্ঞানের স্ফূর্তি,

কুসংস্কার ভুলে কুসংস্কারাচ্ছন্ন

নবারুণালোকে হোক পরিচ্ছন্ন৷

জ্ঞান-বিজ্ঞান হোক সার্বজনীন,

উন্মুক্ত সবার তরে,

প্রাকৃতিক সম্পদ নয় ব্যাষ্টি অধীন,

ন্যায় বন্টন ঘরে ঘরে৷

 

ধবংস হোক সমাজ শত্রু----পুঁজিবাদ,

কেটে যাক দূর্ভাগ্যের কালো রাত৷

ষড়যন্ত্রের হোক চিরস্থায়ী লয়,

ন্যায়, ধর্মের চিরন্তন জয়,

প্রেরণা যোগায় আলোর উত্তরণে,

উদ্ধত শির আকাশ ছুঁয়েছে,

প্রস্তুত মোরা রণে৷

শুভ কাজে আছে নৈতিক বল,

এক ছত্রতলে নির্ভীক সেনা দল৷

প্রভু নির্দেশ রূপায়ণে ব্রতী,

চারিদিকে তার বহিছে হাওয়া

মঙ্গলময় গতি৷

 

হোক তাঁর আদর্শের জয়---

শিরোপরে চিরস্থায়ী

পরমপিতার বরাভয়৷

আর নয় কালক্ষয়,

ঘুচাইয়া সংশয়,

শুরু হোল অবিরাম সংগাম,

ধবংসাত্মক শক্তির ভবিষ্যতের চরম পরিণাম৷

পারস্পরিক ভ্রাতৃপ্রীতি

থাকুক অক্ষয়৷

নিত্য প্রভাতে উদ্বুদ্ধ করুক

নব্যমানবতার নব অরুণোদয়৷

হিন্দী মে ৰোলিয়ে

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

যে মানুষ হিন্দী ও ইংরেজী দু’য়ের কোনোটাই জানে না সে হিন্দী শুনে ভাবতে পারে ওটা ৰুঝি ইংরেজী৷ আবার ইংরেজী শুনে ভাবতে পারে ওটা ৰুঝি হিন্দী৷ বাঙলা–হিন্দীতে ‘গদি’ ও ‘গদ্দী’ নিয়ে এ রকম গণ্ডগোল হলেও হতে পারে৷ ‘‘মালিক গদ্দীমে হঁৈ ’’  বললে একজন ৰাংলাভাষী ভাবতে পারে মালিক ৰুঝি খাটের গদিতে শুয়ে আছে আর ৰাংলায় ‘মালিক গদিতে শুয়ে আছে’ শুনে বাংলা–না–জানা লোক ভাবতে পারে, ‘মালিক বোধ হয় দোকানের খাটে শুয়ে রয়েছে৷’ সেই যে গল্প জানো না৷ একবার একজন উৎকট রাষ্ট্রভাষাপ্রেমী পটনা ইষ্টিশানে পৌঁছলেন৷ তাঁকে যেতে হবে পটনা সেক্রেটারিয়েটে৷ কিন্তু তিনি তো ইংরেজীতে  ‘সেক্রেটারিয়েট’ বলবেন না৷ এমনকি ‘ইংরেজী’ শব্দটাও তিনি উচ্চারণ করবেন না৷ তিনি ইষ্টিশানে রিক্সাওয়ালাকে বললেন–‘‘সচিবালয় লে চলো জী’’৷ রিক্সাওয়ালাও খুব রাষ্ট্রভাষাপ্রেমী৷ সে তখনই  বললে –ক্যা সাহাৰ, আপ আংরেজীমে ‘সচিবালয়, সচিবালয়’  কর রহে হেঁ, হিন্দী মেঁ ৰোলিয়ে৷ ম্যাঁয় আংরেজী নেহীঁ সমঝ্তা হুঁ৷

রাষ্ট্রভাষাপ্রেমী নেতাটি ফ্যাসাদে পড়লেন৷ তিনি তখন ঘুরিয়ে নাক দেখাবার মত করে বললেন–‘‘সচিবালয় জী সচিবালয়, জিসকো কুছ্লোগ ভুলসে সেক্রেটারিয়েট (ইংরেজী তো তিনি বলবেন না) বী কহতে হেঁ৷’’

রিক্সাওয়ালা বললে–বহী ৰোলিয়ে–হিন্দীমে ৰোলিয়ে–সেক্রেটারিয়েট৷ আপ্ আংরেজীমে কিঁউ ‘সচিবালয়’ ‘সচিবালয়’ কহ্তে হেঁ

রাষ্ট্রভাষাপ্রেমী ভদ্রলোকটির মুসকিল–আশান হ’ল৷ তিনি যেন হাতে পূর্ণিমার চাঁদটি পেলেন৷

বাপ–বেটাকে নিয়ে সংসার৷ বাপ হাটে গেছে৷ বেটা বাপের জন্যে ভাত–ডাল–তরকারী রেঁধে রেখেছে৷ ৰাৰা খেতে বসে বলছে–রামচন্দ্র, রামচন্দ্র, ওরে রাউজা, দাইলনিতে কয় গণ্ডা মরিস্ দিস

বেটা বললে–সয় গণ্ডা৷  বাপ–দিৰারে কইসিলাম কয় গণ্ডা

বেটা–আজ্ঞা, আষ্ট গণ্ডা৷ বাপ–দিস কত

বেটা–আইজ্ঞা সয় গণ্ডা৷ বাপ–এ অন্ন কাউম্ না, এ অন্ন কাউম্ না৷

বেটা–এ্যাবার এ্যাডা ক্ষমা করেন, মাপ করেন৷ এক্কেরে কতা দিত্যাসি, এ্যামনডা আর অইবো না৷

বাপ–ত্র্যাতাযুগে যে রামচ ন্দ্র আসিল হ্যা পিতৃসত্য পালনের লাইগ্গা ১৪ বৎসর বনবাস গ্যাসিল৷ তুমি কলিযুগের রামচন্দ্র পিতৃ–আজ্ঞা লঙঘন করস্৷ দিবারে কইসিলাম কয় গণ্ডা মরিস

বেটা–আইজ্ঞা, আষ্ট গণ্ডা৷  বাপ–দিস কত

বেটা–সয় গণ্ডা৷  বাপ–তুমি পিতৃ–আজ্ঞা লঙঘন কর্স৷ এ অন্ন কাউম না, লাতি মাইর্যা তালা ৰাইঙ্গা ফ্যালাই দিমু৷

ও কী করে এসেছিল!

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

 

‘ইহ’ মানে ‘এই জগতে’৷ মনে রাখা দরকার ‘অত্র’ আর ‘ইহ’ এক জিনিস নয়৷ ‘অত্র’ মানে এখানে–এই স্থানে আর ‘ইহ’ ব্যবহূত হয় অনেক ব্যাপকার্থে......‘এই লোকে’/‘এই জগতে’৷ ‘ইহ’‘ঠক্’ প্রত্যয় করে আমরা পাচ্ছি ‘ঐহিক’ শব্দটি৷ তার বিপরীত শব্দ হচ্ছে ‘পরত্র’ থেকে ‘পারত্রিক’ ‘ইহলৌকিক’–বিপরীত শব্দ ‘পারলৌকিক’৷ ‘ইহলোক’–বিপরীত শব্দ ‘পরলোক’৷ ‘ইহ তিষ্ঠ’ না বলে ‘অত্র তিষ্ঠ’ বলা ৰেশী সঙ্গত হবে৷ ‘ইহ তিষ্ঠ’ মানে ‘এই জগতে থাকো’৷ আর ‘অত্র তিষ্ঠ’ মানে  ‘এইখানটিতে থাকো’৷ সুপ্রাচীনকাল থেকেই ‘ইহ’ শব্দটি অব্যয় রূপে ব্যবহূত হয়ে এসেছে৷

ইহলোক আর পরলোকের মধ্যে অনাদিকাল থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত থেকে যায় এক সূক্ষ্ম স্বর্ণরেখা৷

সে অনেক দিন হয়ে গেল৷ তখন দিল্লীতে নিজের ৰাড়ী ছিল না৷ থাকতুম কখনো হোটেলে, কখনো ভাড়া ৰাড়ীতে৷ সেবার হোটেলেই ছিলুম৷ সান্ধ্য–ভ্রমণ সেরে হোটেলে ফিরলুম রাত্রি প্রায় সাড়ে আটটায়৷ ৰাথরুমে গিয়ে ৰেসিনে হাত–মুখ ধুচ্ছি, হঠাৎ পেছন দিক থেকে শুনলুম আগেকার সুপরিচিত মিষ্টি আওয়াজ–‘কেমন আছো’ ভাবলুম–এ কী! এ যে আমার ছোটবেলাকার অতিপরিচিত দুলু পালিতের আওয়াজ! দুলু একাধারে আমার ঘনিষ্ঠ ৰন্ধু, আবার দূর সম্পর্কের আত্মীয়ও৷ দুলুর বাড়ী ছিল মগরার কাছে......অভিজাত পরিবারের ছেলে৷ দুলু পালিত, ব্রজগোপাল সান্ন্যাল ও আমার মধ্যে ছিল নিৰিড় ৰন্ধুত্ব৷ দুলু পালিত ও ব্রজ সান্ন্যাল ছিল অত্যন্ত রূপবান৷ ওদের মনের সৌন্দর্য ছিল আরও ৰেশী৷ পরোপকার ছিল তাদের সহজাত সংস্কার৷ কিন্তু এখানে এই হোটেলের ৰাথরুমে সেই দুলুর আওয়াজ কোত্থেকে এল! কী করেই বা এল! আমি স্বপ্ণও দেখছি না, সুস্থ শরীরে, সুস্থ মস্তিষ্কে ৰেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত–মুখ ধুচ্ছি–এ তো শোনার ভুল হতে পারে না, ভাবার ভুলও হতে পারে না!

দুলু এবার একটু অভিমানের সঙ্গে বললে–‘‘তুমি কি আমার ওপর রাগ করেছো আমার দিকে তাকাচ্ছো না কেন’’

হ্যাঁ, ৰলে রাখি, দুলু আমায় বড্ড ৰেশী ভালৰাসত৷ সে  আমাকে  ছোটবেলায় কয়েকবারই ৰলেছিল–যেমন কৃষ্ণলীলার সুদামা–কৃষ্ণের সম্ৰন্ধ তেমনই আমাদের সম্ৰন্ধ৷ সুদামা কৃষ্ণকে বড্ড ভালবাসত৷ কৃষ্ণও সুদামাকে খুব ভালবাসত৷ ও আমাকে বলত–‘‘দেখ, আমরা একে অন্যকে এত ৰেশী ভালৰাসব যে কৃষ্ণ–সুদামাকেও হার মানিয়ে দোৰ৷’’

আমি ৰলেছিলুম–‘‘আমি তেমন পারৰ কিন্তু তুমি কি তেমন পারৰে’’

ও ৰলেছিল–‘‘নিশ্চয় পারৰ, দেখে নিও!’’

আজ সেই দুলুর আওয়াজ পেলুম৷ আর সে অভিমানের সুরে ৰলছে–‘‘আমি তার দিকে তাকাচ্ছি না কেন!’’

আওয়াজ আসছিল যেন আমার পেছনের দিক থেকে৷ পেছনের দিকে দেওয়ালে তাকিয়ে দেখি, দেওয়ালের গায়ে দুলু আলোকোজ্জ্বল পূর্ণাবয়বে দাঁড়িয়ে রয়েছে, আর আমার দিকে চেয়ে আনন্দে হাসছে৷ আমি তাকাতেই  সে আনন্দে উচ্ছল হয়ে উঠে ৰললে–‘‘কেমন আছো তোমার জন্যে ক’দিন হ’ল আমার মনটা ছটফট করছিল৷ এখন তোমাকে কাছে পেয়ে ৰাঁচলুম৷’’

আমি ৰললুম–‘‘আমি ৰেশ ভালই আছি৷ এৰার কলকাতায় গিয়ে তোমার সঙ্গে দেখা করৰ৷’’

ও ৰললে–‘‘নিশ্চয়, নিশ্চয়৷’’ তারপর একটুখানি পরে ৰললে–‘‘আমাকে তোমার পছন্দমত কোনো কাজে লাগিয়ে নাও৷ এতে আমার  সুৰিধে হৰে এই যে, সৰ সময় তোমার কাছে থাকা যাৰে৷ যদি কখনো কাছে না–ও থাকা যায় অর্থাৎ কাজ নিয়ে বাইরে কোথাও যেতেও হয় তাহলেও মনে এই পরিতৃপ্তি থাকৰে যে তোমার কাজ করতেই বাইরে যাচ্ছি৷’’

আমি ৰললুম–‘‘তেমনটিই হৰে৷ আমি ক’দিনের মধ্যেই কলকাতায় ফিরছি৷’’

এমন সময় টেলিফোনের আহ্বান আসায় শোবার ঘরে চলে এলুম৷ ফোন ধরতেই ওদিক থেকে আওয়াজ এল–‘‘আমি ব্রজগোপাল সান্ন্যাল কলকাতা থেকে ৰলছি৷’’

ব্রজগোপাল আমার ছোটৰেলাকার ৰন্ধু৷ ও ভালভাবেই জানত, দুলু পালিত আমাকে ছাড়া থাকতেই পারে না....কতকটা যেন ত্ব–এর পাশে হু–এর মত৷

আমি ব্রজকে ৰললুম–‘‘কী ৰলছো’’

ব্রজ ৰললে–‘‘আমাদের ছোটৰেলাকার ৰন্ধু দুলু পালিত ক’দিন ধরেই বড্ড ৰেশী অসুস্থ৷ আমি এখন ওর ৰাড়ী থেকেই ফোন করছি৷’’

আমি ৰললুম–‘‘কী হয়েছে’’

ব্রজ ৰললে–‘‘কী হয়েছে ৰোঝা যাচ্ছে না৷ নাড়ীর গতি স্বাভাবিক, কোনো রোগ–ভোগ নেই, জ্বর–জ্বালাও নেই৷ ডাক্তার ৰলছে, কোনো রোগই ধরা পড়ছে না’’৷

আমি ৰললুম–‘‘তৰে কী হয়েছে’’

ব্রজ ৰললে–‘‘ও কেবল শুয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে আর তোমার কথা ৰলছে৷ ৰলছে কতদিন দেখা হয়নি, আবার কৰে দেখা হৰে কে জানে! পরিচিত কাউকে দেখলেই তাকে তোমার কথা জিজ্ঞেস করছে, আর ৰলছে, কৰে দেখা হবে কে জানে!’’

আমি ব্রজকে জানালুম যে, সব কাজকর্ম ফেলে রেখে আমি কালকের প্লেনেই  দিল্লী থেকে কলকাতা পৌঁছোচ্ছি৷ আর বিমান বন্দর থেকে সোজা ওর বাড়ীতেই যাৰ৷

ব্রজ আশ্বস্ত হয়ে ফোন ছেড়ে দিল৷ আমি আবার ৰাথরুমে গেলুম দেওয়ালের দুলুর সঙ্গে আরও কথা ৰলতে–সেই কোটপ্যান্টপরা আলোকোজ্জ্বল দুলু৷ ৰললুম–‘‘তারপরে ৰলো কী খৰর৷ এখন তাহলে ভালই আছো৷’’

ও বললে–‘‘ভাল ৰলে ভাল, খুব ভাল৷ তোমাকে কাছে পেয়ে কত যে ভাল লাগছে কী ৰলৰ৷ মনে হচ্ছে এমন ভালর মধ্যে মরাও ভাল৷’’ সেই যে কবি ৰলেছেন না–

‘‘এমন চাঁদের আলো মরি যদি সেও ভালো

 সে মরণ স্বর্গসমান৷’’

আমি ৰললুম–‘‘মরণের কথা–টথা ৰলবে না,

তাহলে আমি ভীষণ রেগে যাৰ৷ তোমাকে ৰকাঝকা করৰ৷ আমার মেজাজটা তো তুমি ভালভাৰেই জানো৷’’

ও ৰললে–‘‘তোমাকে আমি রাগতে দোৰ না, মরণের কথা ৰলৰ না৷’’

আমি ৰাথরুম থেকে হাত–মুখ ধুয়ে ফিরছি৷ ঘড়িতে তখন ন’টার ঢ়ং ঢ়ং আওয়াজ শুনলুম৷ আর দুলুর দিকে তাকাতেই দেখি, দুলুর চিত্র শাদা দেওয়ালে মিশে গেল৷ আমার খাবার সময় হয়েছে দেখেই ৰোধ হয় ও চলে গেল৷

শোবার ঘরে এলুম৷ কয়েক মিনিট পরে কলকাতা থেকে ফোন এল৷ আবার সেই ব্রজগোপাল সান্ন্যালের কন্ঠস্বর৷ ও ৰললে–‘‘তোমাকে অত্যন্ত দুঃসংবাদ জানাচ্ছি, আমাদের দুলু এইমাত্র ঠিক ন’টার সময় আমাদের ছেড়ে অন্যলোকে চলে গেল৷ ৰুঝলে, আমার সৰ কিছুই গোলমেলে ঠেকছে৷ ৰুঝতে পারছি না কোন্টা ইহলোক, কোন্টা পরলোক৷

প্রভু ক্ষমা কর তারে

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

আমি এ’ যুগের যিশু---

বিশ্বপিতার কোলে হাস্যরত

এক অপাপবিদ্ধ শিশু৷

যদি বিশ্ববাসী উচ্চঃস্বরে

দুষে মোরে নিরবধি,

আমারে চিনিতে না পেরে

ক্রশবিদ্ধ করে যদি,

তবু বলে যেতে চাই

ক্ষমা কর প্রভু, ক্ষমা কর আজ তারে,

শরীরে মননে আঘাত হানিল যারা

 নির্মম অবিচারে৷

চিনিতে পারেনি আমি কোন জন

চিনিতে চায়নি তার হৃদয় মনন,

তাই অনায়াসে অকারণে দুষে

কার মঙ্গল আনে?

 অপূরণীয় ভুল, নাই সমতুল

আজ এরা নাহি জানে৷

যেদিন জানিবে সময় ফুরাবে

অনুতাপে মন প্রতিবিধানে

সত্যের অপমানে!

ক্ষমা কর তারে, ক্ষমতার ভারে

যে হারায় ঔচিত্য বোধ,

চাই শুভবুদ্ধির উদয়, হিংসার লয়,

চাইনাকো প্রতিশোধ৷

 

হৃদিরেখা

লেখক
আচার্য গুরুদত্তানন্দ অবধূত

নাম গোত্র পরিচয়হীন

তুমি এক হৃদিরেখা

চলেছো সবে  মাধুরী বিলায়ে

দিয়ে ক্ষণিক দেখা৷

কার আদেশে আসিয়া ভবে

গড়ে তোল সংসার

নিঃশেষে প্রাণ বিলিয়ে চলো

মানে সবে তাই হার৷

কলা কৃষ্টি নৃত্যগীতে

হরষিত করি সবে

জাগাও তুমি চেতনা মনে

আসিয়া  এ ভবে৷

ভাবতরঙ্গে বহিয়া চিতে

শোনাও মাধুরী সুর

মদালসারূপে জাগিয়ে প্রাণে

আনো সমাজ ভোর৷

ঘনঘোর যত সরিয়া গিয়াছে

এল’ চাঁদনী রাত

রূপালী-রঙে সাজালে সবে

নহে আর অশ্রুপাত৷

নদের নিমাই ভাবস্রোতে মেতে

বাঁচালো মানবতা

তরুলতাদেরও বাঁচাতে হবে

নাশিতে দানবতা!