কলকাতার কাহিনী
পূর্ব প্রকাশিতের পর,
পূর্ব প্রকাশিতের পর,
গন্ধর্ব’ শব্দটি যদি পুংলিঙ্গে ব্যবহূত হয় (গন্ধর্বঃ) তার মানে হয় গন্ধর্ব অর্থাৎ নৃত্যে গীতে বাদ্যে দক্ষ এক প্রকারের দেবযোনি যা’ তেজ, মরুৎ আর ব্যোম এই তিনটি তত্ত্বে তৈরী অর্থাৎ যাতে ক্ষিতি ও অপ্ তত্ত্ব নেই, আর ক্ষিতি ও অপ্ তত্ত্ব না থাকায় সাধারণভাবে তা’ পরিদৃশ্য নয়৷ গন্ধর্ব–প্রেষিত ধ্বনি, রাগাত্মিকা অভিব্যক্তি শ্রুতিগ্রাহ্য, অনুভব্য কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় দৃশ্য নয়৷ মনকে নিজের ক্ষিতি, অপ্ তত্ত্ব থেকে বিচ্যুত করে সম্পূর্ণতঃ ঔর্ধ্বদৈহিক ভাবে নিষিক্ত করতে পারলে তবেই তা’ মানসলোকে দৃশ্য৷
গন্ধর্ব একটি দেবযোনি যা’ কতকটা অপ্সরা পর্যায়ভুক্ত৷
মুড়ি ঃ এটি একটি দেশজ ৰাংলা শব্দ৷ হিন্দুস্তানীতে ‘মুড়ি শব্দের অর্থ ৰড় নালী (big drain)৷ উত্তর ভারতের ‘মুড়ি’ শব্দটি পূর্বী মাগধী প্রাকৃতজাত ভাষাগুলিতেও প্রচলিত৷ পশ্চিমী মাগধীজাত ভাষাগুলিতে মুড়িকে ‘ফর্হী’ ৰলা হয়৷ ‘মুড়ি’ শব্দটির উদ্ভব নামধাতু থেকে৷ চিৰোতে গেলে যা মুড়্মুড়্ শব্দ করে তা হ’ল ‘মুড়ি’৷ অষ্ট্রিক ৰাংলায় আর একটি শব্দ রয়েছে তা হ’ল হুড়ুম যার মানে হচ্ছে ভাল খাবার৷ মুড়ি একটি মাঝারি দামের মুখরোচক খাদ্য৷ বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে মুড়ি প্রত্যেকটি তণ্ডুলভোজী দেশেই প্রচলিত৷ ভারতের ওড়িষ্যা, ৰাঙলা, অঙ্গদেশ, ছোটনাগপুর ও কেরলে (মালয়ালামে মুড়িকে ৰলা হয় ‘পোরী’) মুড়ির ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক৷ অতিরিক্ত মু
অনেকে ‘ন্যাজ’ না বলে বলে ‘লেজ’ বা ‘ল্যাজ’৷ কিন্তু সেটা ঠিক নয়৷ সংস্কৃত ‘ন্যুব্জ’ থেকে ভাষাতত্ত্বের বিশেষ নিয়মে ‘ন্যাজ’ হতে পারে, ‘লেজ’ বা ‘ল্যাজ’ হতে পারে না৷ কেননা মূল শব্দের বানানে দন্ত্য ‘ন’ রয়েছে৷ তার বিবর্ত্তিত রূপে ‘ল’ আসবে কোত্থেকে শব্দটা ‘লাঙ্গুল’ থেকেও আসে নি কারণ লাঙ্গুল–এ ‘জ’ অক্ষরটি নেই৷ এমনকি ‘দ’–ও নেই৷ অনেক সময় ‘দ’ বিবর্ত্তিত হয়ে ‘জ’ হয়ে যায়৷ ‘লাঙ্গুল’–এর তদ্ভব বাংলা শব্দ ‘নেঙ্গুন’৷ এই শব্দটি আমি বীরভূমের গ্রামে শুণেছি.......একটি ছড়ায় ঃ ‘‘ছুতোরে কাঠ কাটে/বগাতে নেঙ্গুন নাড়ে৷’’
‘জ্যোতিঃ’ বলতে সংস্কৃতে তিন রকম উচ্চারণ হতে পারে–যেমন ‘জ্যোতিস্’, ‘জ্যোতির্’ ও ‘জ্যোতিহ্’৷ সংস্কৃতের নিয়ম অনুযায়ী বিসর্গের পর স্বরবর্ণ থাকলে বিসর্গ লুপ্ত হয় কিন্তু বিসর্গের পর ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে বিসর্গ লোপ পায় না৷ যেমন ‘জ্যোতিঃকে বললুম’ বললে ‘জ্যোতিঃ’ বানানে বিসর্গ হবে কিন্তু জ্যোতিঃ ইন্দ্র হবে ‘জ্যোতিরিন্দ্র’ কারণ এটি সমস্তপদ৷ অনুরূপে ‘স্পষ্টতঃ’ বানানে বিসর্গ রাখতেই হবে, কারণ ‘তঃ’ হচ্ছে পঞ্চমী বিভক্তির দ্যোতক, কিন্তু ‘স্পষ্টতই’ লেখবার সময় বিসর্গটা না রাখাই ভাল কারণ বিসর্গের ঠিক পরেই স্বরবর্ণ রাখা ঠিক নয়৷ তাই ‘‘স্পষ্টতঃই’’ লেখা ভুল, স্পষ্টতই’ শুদ্ধ৷ এইভাবে ‘ক্রমশই’ শুদ্ধ, ‘ক্রমশঃই’ নয়৷ ‘প্রা
সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী মূল শব্দটায় যদি দ্বিত্ব থাকে তাহলে তজ্জাত শব্দের রেফ্–এর তলার ব্যঞ্জনে দ্বিত্ব রাখতেই হবে, যেমন ‘কার্ত্তিক’/বার্ত্তিক৷ যেহেতু মূল ‘কৃত্তিকা’ শব্দ থেকে এসেছে–‘কৃতিকা’ থেকে নয়, তাই ‘কার্ত্তিক’ বানানে দু’টো ‘ত’ রাখতেই হবে৷ তেমনি বার্ত্তিক, পরিবর্ত্তন, অনুবর্ত্তন ইত্যাদি৷ কিছুদিন আগে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্ত্তৃপক্ষ বানান সংস্কারের জন্যে একটি কমিটি তৈরী করেছিলেন৷ কমিটি এ ব্যাপারে আলোচনার পর কিছু মন্তব্য করেছিলেন ঠিকই কিন্তু এ বিষয়ে কেন সুস্পষ্ট নির্দেশ দেন নি৷
অনেকে ‘পাশ্চাত্ত্য’ বানান ‘পাশ্চাত্য’ লেখেন, সেটা ভুল৷ কেননা ‘পশ্চাৎ’ শব্দের উত্তর ‘ত্যায়ঙ্’ প্রত্যয় করে ‘পাশ্চাত্ত্য’ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে৷ তাতে রয়েছে ‘পশ্চাৎ’ শব্দের একটি ‘ত’ ও ‘ত্যায়ঙ্’ প্রত্যয়ের একটি ‘ত’৷ তাই ‘পাশ্চাত্ত্য’ বানানে দু’টো ‘ত’ লিখতে হবে৷
‘গম্’ ধাতু করণে ‘ডি’ প্রত্যয় করে ‘গো’ শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে যার ভাবারূঢ়ার্থ হচ্ছে যে বেশীর ভাগ সময় চলে থাকে৷ যোগারূঢ়ার্থে ‘গো’ মানে গোরু, ‘গো’ মানে ইন্দ্রিয়, ‘গো’ মানে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, ‘গো’ অর্থাৎ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যাঁর লীলাভাসে উদ্ভাসিত তিনি ‘গোবিন্দ’৷ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে যিনি পালন করে চলেছেন এই অর্থে পরমপুরুষের আর একটি নাম ‘গোপাল’৷ ‘গো’ মানে ইন্দ্রিয়৷ দেহাধারে এই ইন্দ্রিয় যার শক্তিতে প্রকাশিত এই অর্থেও তিনি গোবিন্দ৷ আবার ঠিক দেহাধারে ইন্দ্রিয় সমূহের যিনি পালক এই অর্থেও তিনি গোপাল, যেখানে গোধন অর্থাৎ ক্যাট্ল প্রতিপালিত হয়, তাদের বংশবৃদ্ধি ঘটে তা হ’ল গোকুল৷ এই ‘গো’ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গে ‘গবী’ রূপ
‘লক্ষ্য’ মানে উদ্দেশ্য, অভিসন্ধি (Intention, goal, desideratum, culminating point) ৷ ‘লক্ষ্য’ বানানে ‘য’–ফলা দিতেই হবে৷ ওই রকম ভাবে ‘উপলক্ষ্য’ বানানে ‘য’–ফলা দিতেই হবে৷ ‘য’–ফলা না দিয়ে শুধু ‘লক্ষ’ লিখলে তার মানে দাঁড়াবে ‘লাখ’৷ ‘য’–ফলা না দিয়ে শুধু ‘উপলক্ষ’ লিখলে তার মানে দাঁড়াবে ‘লাখের কাছাকাছি’–তবে লাখের চেয়ে কম৷ আজকাল য’–ফলাবিহীন ‘উপলক্ষ’–এর ছড়াছড়ি দেখছি৷ শিক্ষকদের এ ব্যাপারে একটু নজর দেওয়া উচিত৷
‘গর’ প্রত্যয়যুক্ত ফারসী শব্দ ‘সওদাগর’ অর্থাৎ যিনি সওদা বোঝেন৷ ‘জাদুগর’ অর্থে যিনি জাদু জানেন, বোঝেন৷ এখানে বলে রাখা ভাল যে কেউ কেউ ‘জাদুগর’ বানানের পরিবর্ত্তে ‘যাদুকর’ এইরকম বানান লেখেন৷ তাঁরা শব্দটিকে ‘যাদু’ শব্দের উত্তর কৃ অল্ করে দেখাতে চান৷ কিন্তু তা ঠিক নয়৷ ‘জাদু’ ফারসী শব্দ৷ ‘জাদু’ জানেন, বোঝেন এই অর্থে ফারসী প্রত্যয় ‘গর’ যুক্ত হয়ে হয়েছে ‘জাদুগর’৷ তাই ‘যাদুকর’ বানানের টিকি থেকে ন্যাজের ডগা পর্যন্ত ভুল৷ ‘জাদুগর’ শব্দের সংস্কৃত প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘বাজিকর’৷ ‘কর’ সংস্কৃত প্রত্যয়৷ ফারসীতে ‘কর’ প্রত্যয় নেই৷ ‘কার’ বলে যে শব্দটি রয়েছে তা প্রত্যয় নয়৷ ‘কার’ মানে ফারসীতে ‘কাজ’৷ ‘জাদু’ শব্দের সংস্কৃ
সে আজ অনেকদিন আগেকার কথা৷ সেটা সম্ভবতঃ খ্রীষ্টপূর্ব ৫৩৪ সাল৷ রাঢ়ের রাজকুমার বিজয় সিংহ জলপথে সিংহলে আসেন–সঙ্গে নিয়ে আসেন সাত শত–র মত অনুচর৷ তখন রাঢ়ের রাজধানী ছিল সিংহপুর (বর্তমানে হুগলী জেলার সিঙ্গুর)৷ আর বন্দর ছিল সিংহপুরেরই নিকটবর্তী একটি স্থানে৷ পরবর্তীকালে সেই স্থানটির নাম হয়ে যায় সিংহলপাটন (স্থানটি সিঙ্গুরেরই কাছে)৷ বিজয় সিংহ লঙ্কা জয় করেন৷ তিনি ও তাঁর অনুচরেরা স্থায়ীভাবে লঙ্কায় বসবাস করেন৷ এঁরাই হলেন বর্তমান সিংহলী জনগোষ্ঠীর পূর্ব–পুরুষ৷ এই সিংহলীরা চালচলনে রীতিনীতিতে, আচারে ব্যবহারে বাঙালীদের খুবই নিকট৷ মুখাবয়ব বাঙালীদের মতই৷ কথা না বললে
(মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর শব্দ চয়নিকা–২৬ খণ্ড গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে ‘নারীর মর্যাদা’ বিষয়ক অনেক কিছুই বলেছেন৷ ওই গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ সংকলিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে৷ –সম্পাদক)
এই যে এলাকাটায় আমরা রয়েছি এটা সুপ্রাচীন গণ্ডোয়ানাল্যাণ্ডের পূর্ব প্রত্যন্ত৷ একেবারে পূর্ব বলতে পারছি না কারণ একেবারে পূর্বে রয়েছে গণ্ডোয়ানাল্যাণ্ডের যে অংশ তাকে আজকের মানুষ রাঢ় বলে জেনে থাকে৷ এই গণ্ডোয়ানাল্যাণ্ডের পূর্বদিকের পাহাড়গুলো পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে সমান্তরালভাবে চলে গেছে৷ উত্তর দিকে কেবল রাজমহল পাহাড়টি সোজা পূর্বে না গিয়ে উত্তর–পূর্ব কোণে গিয়ে সাহেবগঞ্জের কাছে এসে গঙ্গায় পথ হারিয়েছে৷ গঙ্গাই বললুম যদিও এককালে ওখানে গঙ্গা ছিল না–ছিল সমুদ্র৷ তখন হিমালয়ই তৈরী হয়নি–গঙ্গা আসবে কোত্থেকে!
অবিভক্ত ৰাঙলার সবচেয়ে ৰড় বিল (ঝিল lake) ছিল চলনৰিল৷ এটি আংশিকভাৰে রাজশাহী ও আংশিকভাবে পাৰনা জেলায় অবস্থিত৷ বর্ষার এর আয়তন কোন কোন সালে ১৫০ বর্গমাইলের মত হয়ে যেত৷ ছড়ায় আছে---‘‘গ্রামের মধ্যে কলোম (মতান্তরে, কলোন), বিলের মধ্যে চলন৷’’ রাজশাহী জেলার কলোম গ্রামটি ছিল বাঙলার সৰচেয়ে ৰড় গ্রাম আর এই চলনবিল ছিল সৰ চেয়ে ৰড় হ্রদ৷ ৰাঙলার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও পশ্চিম ৰাঙলার সর্ববৃহৎ হ্রদ হচ্ছে মুর্শিদাৰাদ জেলার কাঁন্দি মহকুমায় অবস্থিত হিজলবিল৷ এই হিজলবিল, ৰড় হিজল ও ছোট হিজল এই দুই অংশে বিভক্ত৷ ময়ূরাক্ষী ও দ্বারকা নদীর অববাহিকায় ভাগীরথীর গা ঘেঁষে এর অবস্থিতি৷ নিকটবর্তী রেল-ইষ্টিশান হচ্ছে কাটোয়া-- আজিমগঞ্জ শাখা
প্রায় ৮০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর কোথাও কঠিন পদার্থ বলে কিছু ছিল না৷ গ্রহটি তখন ছিল এক জ্বলন্ত গ্যাসপিণ্ড৷ পৃথিবীর স্থলভাগ সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ২৩০ কোটি বছর আগে৷ টারসিয়ারি যুগের শেষাশেষি ও ক্রেটারিয়ান যুগের গোড়ার দিকে পৃথিবীর বুকে গণ্ডোয়ানাল্যাণ্ডের প্রথম উদ্ভব হয়েছিল৷ সে সময় পৃথিবীর মধ্যভাগ ছিল জলময়৷
ৰাঙলায় তথা ভারতের অনেক জায়গায় ‘ডহরি’ বলে অনেক গ্রাম বা জায়গা আছে৷ পুরোনো ৰাংলায় ‘ডহর’ কথাটি রাস্তা বা পথ অর্থে ব্যবহূত হ’ত৷ ‘ডহর’ একটি অষ্ট্রিক শব্দ৷ রাস্তার পাশে বেথো শাক*(সংস্কৃতে ‘বাস্তক’ আলুর জমিতে শীতকালে অনেক সময় আপনা থেকেই বেথোশাক জন্মায়৷ বালি বালি চকচকে পাতাযুক্ত এই শাক একটি জনপ্রিয় খাদ্য৷ মহাপ্রভু চৈতন্যদেব নাকি এই শাক খেতে দারুণ ভালবাসতেন৷ শচীদেবী শান্তিপুরে মহাপ্রভুকে এই শাকের ব্যঞ্জন খাইয়েছিলেন৷) অর্থাৎ ডহরের পাশে বেথো শাক রয়েছে, তাই তার নাম ‘বেথুয়াডহরি’৷ আর রাস্তার পাশে বাম ডান দিকে ডোবায় মোষ চরছে, তাই তার নাম মহিষাডহরি’৷ তার থেকে ‘মোষডহরি’৷ আজকাল আমরা ‘ডহর’ শব্দের প্রয়োগ বড় এক
ৰাঙলায় ‘বাথান’ নামেও অনেক জায়গা দেখতে পাওয়া যায়৷ ‘বাথান’ মানে যেখানে ব্যাপকভাবে গো–ধন (cattle) প্রতিপালিত হয়৷ কোন জায়গায় হয়তো অনেক গোরু বা অনেক মোষ প্রতিপালিত হ’ত৷ সেই সমস্ত স্থানের নাম হয়েছে গোরুবাথান, মহিষবাথান প্রভৃতি৷
‘চাবি’ শব্দটি আমরা পোর্তুগীজদের কাছ থেকে পেয়েছি৷ এঁদের ভাষায় ‘cha’–এর উচ্চারণ কতকটা ‘শ’–এর মত৷ তাই ‘চাবি’–কে আমি স্পেন ও পোর্তুগাল দু’য়েতেই ‘শাবি’ উচ্চারণ করতে শুনেছি৷ আজ এই ‘চাবি’ শব্দটি বাঙলা তথা সমগ্র উত্তর ভারতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত৷ অথচ আজ থেকে ৪৫০ বছর আগেও শব্দটির সঙ্গে এদেশের কারো পরিচয় ছিল না৷ উত্তর–ভারতে ‘চাবি’–কে বলা হত ‘কুঞ্জী’ আর বাঙলায় বলা হত ‘কাঠি’৷ তালা–চাবিকে রাঢ়ে এখনও কেউ কেউ ‘কুলুপ–কাঠি’ বলে থাকেন৷ এমনকি যাঁরা ‘চাবি’ বলেন তাঁরাও কেউ কেউ ‘চাবিকাঠি’ বলে থাকেন৷ বলেন–সিন্দুকটি তোমার চাবিকাঠিটি আমার৷ ‘কুঞ্জী’ শব্দটি এককালে উর্দু ভাষায় ব্যাপকভাবে চলত৷ আজ তার প্রভাব কমে এসেছে৷ সেই
ঢেঁকি ঃ ‘ঢেঁকি’ মানে ভারী বস্তু৷ প্রাচীনকালে আর্যরা যখন ভারতে এসেছিল তারা তখন যব, রাই ও অন্যান্য শস্যের খোসা ছাড়ানোর জন্যে উদূখল্ (উখ্ড়ি) ব্যবহার করত৷ ভারতের সাবেকী ৰাসিন্দারা ব্যবহার করত ঢেঁকি৷ উখ্ড়ি চালাতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন ঢেঁকিতে পাট দিতে গেলে তার চেয়ে অনেক কম শক্তির প্রয়োজন৷ তাই কালক্রমে, ঢেঁকি উদূখল্কে স্থানচূ্যত করলে৷ ঢেঁকির কোন সংস্কৃত প্রতিশব্দ নেই৷
ধানের তুষ ছাড়াবার অথবা ধান থেকে চিড়ে তৈরী করবার এক একটি দেশীয় যন্ত্রবিশেষ৷ ঢেঁকি একটি অনার্য উপকরণ৷
আগেই আমরা কুসুমপুর নিয়ে আলোচনা করেছি৷ বিম্বিসারের সময় অর্থাৎ ৰুদ্ধের সময় রাজগিরি বা গিরিব্রজ ছিল মগধের রাজধানী৷ সেখানে ছিল জলাভাব৷ রাজধানীতে জলের প্রাচুর্য থাকা দরকার৷ সেকালে গঙ্গা ও শোণ নদী যেখানে মিলত, ৰুদ্ধ সেখানে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন–এই স্থানটিতে মগধের রাজধানী হলে সব দিক দিয়ে সুবিধা হয়৷ সেখানে ৰুদ্ধের শিষ্যদের মধ্যে পাটলীপুত্ত্র নামে এক বণিক উপস্থিত ছিলেন৷ সেকালে মগধে নামকরণে পিতৃগত ও মাতৃগত কুলের একটা সমন্বয় ঘটেছিল৷ মায়ের নাম রূপসারি, তাই ছেলের নাম সারিপুত্ত মায়ের নাম মহামৌদগলী (মহামগ্গলি), তাই ছেলের নাম মহামৌদগ্ল্লন অরহণ (মহামগ্গল্লন)৷ তেমনি মায়ে নাম পাটলী তো পুত্ত্রর নাম পাটলীপুত্ত্র৷ এই
কোন বড় গাছের নীচেকার জায়গাকে ‘তলা’ বা ‘তলী’ বলা হয়৷ এই তলা বা তলী নিয়েও অনেক জায়গার নাম হয়৷ যেমন–নিমতলা, কেওড়াতলা, তালতলা (কলকাতা), আগরতলা (ত্রিপুরা), বাদামতলা ইত্যাদি ‘তলী’ দিয়ে যেমন–আমতলী, কুলতলী, ফুলতলী৷ কোন একটি স্থান কোন বিশেষ বস্তুতে বা কাজে ব্যবহূত হ’লে সেক্ষেত্রেও ‘তলা’ ব্যবহূত হয়৷ তবে এই ধরনের ক্ষেত্রে ‘তলী’ ব্যবহূত হয় না৷ যেমন–চণ্ডীতলা (হুগলী), কালীতলা, পঞ্চাননতলা (চন্দননগর), মাচানতলা (বাঁকুড়া), পোড়ামাতলা (নবদ্বীপ), ষষ্ঠীতলা (কৃষ্ণনগর), বুড়ো শিবতলা (চন্দননগর) প্রভৃতি৷ এছাড়া হাটতলা ও রথতলা তো অনেক জায়গাতেই রয়েছে৷
গ্রামের নাম অনেক সময় গুণগত কারণেও হয়ে থাকে৷ ৰাঙলার গ্রামেগঞ্জে প্রচুর সাপ রয়েছে৷ রাঢ়ে গোখরো সাপের সংখ্যা প্রচুর৷ রাঢ়ী ৰাংলায় এদের নাম ‘খরিস’৷ যাই হোক, যে গ্রামে সাপের সংখ্যা খুব বেশী তার নাম রাখা হয়েছিল সর্পলেহনা (বীরভূম)৷ এইরূপ মানভূম জেলায় রয়েছে ‘মণিহারা’, বাঁকুড়া জেলায় ‘মুকুটমণিপুর’ ইত্যাদি৷
‘ঢেঁকি’ মানে ভারী বস্তু৷ প্রাচীনকালে আর্যরা যখন ভারতে এসেছিল তারা তখন যব, রাই ও অন্যান্য শস্যের খোসা ছাড়ানোর জন্যে উদূখল্ (উখ্ড়ি) ব্যবহার করত৷ ভারতের সাবেকী ৰাসিন্দারা ব্যবহার করত ঢেঁকি৷ উখ্ড়ি চালাতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন ঢেঁকিতে পাট দিতে গেলে তার চেয়ে অনেক কম শক্তির প্রয়োজন৷ তাই কালক্রমে, ঢেঁকি উদূখল্কে স্থানচূ্যত করলে৷ ঢেঁকির কোন সংস্কৃত প্রতিশব্দ নেই৷
ধানের তুষ ছাড়াবার অথবা ধান থেকে চিড়ে তৈরী করবার এক একটি দেশীয় যন্ত্রবিশেষ৷ ঢেঁকি একটি অনার্য উপকরণ৷
উত্তুঙ্গ তরঙ্গমালায় বিক্ষুব্ধ এক মহাসমুদ্র৷ যে সমুদ্রের নাম নেই, গোত্র–পরিচয় নেই৷ কে নাম দেবে, কে এর পরিচিতি অন্যকে শোণাবে কারণ মানুষ যে তখন পৃথিবীতে আসেনি৷ সে আজ থেকে তিরিশ কোটি বৎসর আগেকার কথা৷*ঙ্মনৃতাত্ত্বিক দিক থেকে প্যালিজোয়িক যুগের কার্বোনিফারসের সময়কাল (যখন গাছপালার উদ্ভব হ’ল) ২৭০–৩৫০ কোটি বছর আগে৷–সম্পাদক৷ৰ পার্বত্য ঊষর ভূমি সম্বন্ধে বলবার মত, নাম নেবার মত কোন বৃক্ষরাজিও তখন পৃথিবীতে আসেনি৷**ঙ্মৰীজযুক্ত গাছের প্রথম উদ্ভব মেসোজোয়িক যুগের ট্রাইয়াসিক কালের (২১০–২৫০ কোটি বছর আগে)৷–সম্পাদকৰ এই নাম–না–জানা গিরিভূমিকেই পরবর্তীকালে নাম দেওয়া হয়েছিল ‘রাঢ় দেশ’৷ ‘রাঢ়’ শব্দটি প্রাচীন অষ্ট্রিক ভ
নারকোলের সংস্কৃত ভাষায় প্রচলিত নাম তিনটি (১) নারিকেল (এটি অন্তঃস্থ ‘ল’), (২) নালিকের (এটিও অন্তঃস্থ ‘ল’) ও (৩) কের৷ নারকোল পৃথিবীর বিষুবরেখায়, কর্কটক্রান্তীয় ও মকরক্রান্তীয় এলাকায় জন্মায়৷ নারকোলের প্রজাতি আছে অনেক রকমের৷ তবে বয়সঃসীমা ও উচ্চতার নারকোল যা আন্দাজ সাত বছর বয়সে ফল দেয়, দেয়ও মাঝারি পরিমাণে৷ ৰাঁচে আন্দাজ ৪০ বছর৷ গরিষ্ঠ প্রজাতির নারকোল ফল দেয় আন্দাজ ন’বছর বয়সে বাঁচে আন্দাজ ৭৫ বছর৷ ফল দেয় যথেষ্ট পরিমাণে৷ আজকালকার অধিক ফলনশীল নারকোল তিন বৎসর বয়সে ফলন দিতে শুরু করে৷ নারকোল উৎপাদনে পৃথিবীর প্রধান পাঁচটি দেশ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া,ফিলিপিন্স্,মালয়েশিয়া,শ্রীলঙ্কা ও ভারত৷ ভারতের নারকোল গাছ ও ফ
সম্প্রতি সিংভূম জেলার পটমদা থানার ভূলা–পাবনপুর গ্রামে ও তার পাশেই কমলপুর থানার বাঙ্গুরদা গ্রামে ও তার দক্ষিণ–পশ্চিম দিকে চাণ্ডিল থানার জায়দা গ্রামে জৈন যুগের বেশ কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে৷ তার সঙ্গে পাওয়া গেছে সেই যুগের বেশ কিছু ৰাংলা লিপি৷ এই লিপি অবশ্যই ১৭০০ বছর বা তার চেয়েও কিছু অধিক পুরোনো কারণ ওই সময়টাতেই রাঢ়ে শৈবাশ্রয়ী জৈনধর্মের স্বর্ণযুগ গেছে৷ ভগ্ণ মূর্তিগুলিও সমস্তই দিগম্বর জৈন দেবতাদের৷ যে লিপিমালা পাওয়া গেছে তা শুশুনিয়া লিপির চেয়ে পুরোনো তো বটেই, হর্ষবর্দ্ধনের শীলমোহরে প্রাপ্ত শ্রীহর্ষ লিপির চেয়েও পুরোনো হতে পারে৷ এই লিপি শ্রীহর্ষ লিপির স্বগোত্রীয় কিন্তু শ্রীহর্ষের চেয়েও বেশ পুরোনো৷
নম ঃ কোন শ্রেষ্ঠকে দেখে বা অনুভব করে শ্রেষ্ঠত্বের সামনে যে নতি স্বীকার করা হয় সেই নতি স্বীকারের রীতি-পদ্ধতিকে ৰলা হয় ‘নমঃমুদ্রা’৷ নমঃমুদ্রায় দুই হাত জোড় করা হয় অর্থাৎ দুই হাতের মধ্যমাঙ্গুলি ছুঁইয়ে দিতে হয় যাতে করে মনের একগ্রতা সূচ্যগ্র হয়ে লক্ষ্যের প্রতি যথাযথভাবে অভিব্যক্ত হতে পারে৷ এই নমঃ মুদ্রায় মানুষ শ্রেষ্ঠের সামনে নিজেকে অভিনিবিষ্ট করে নিজের ক্ষুদ্রতাকে সমর্পিত করে৷ এই বিনিময়ে শ্রেষ্ঠের শ্রেষ্ঠত্ব তার মানসিক জগৎকে পরামৃষ্ট করে৷ অর্থাৎ কাউকে নমঃমুদ্রার দ্বারা নতি বা প্রণতি জানালে যাঁকে প্রণতি জানানো হচ্ছে তার লাভ হয় না, লাভ হয় তার যে প্রণতি জানাচ্ছে৷ গুরুর নিকট নমো-মুদ্রা জানাবার বিধি
অভিজাত/সম্ভ্রান্ত–অনেকে বনেদি বা অভিজাত অর্থে ‘সম্ভ্রান্ত’ শব্দটি প্রয়োগ করে থাকেন৷ আসলে ‘সম্ভ্রান্ত’ মানে ‘সম্যক রূপে ভ্রান্ত’৷ মানে, যে বড় রকমের ভুল করে ফেলেছে৷ তাই অভিজাত অর্থে ‘সম্ভ্রান্ত’ শব্দের ব্যবহার রহিত হওয়া বাঞ্ছনীয়৷
ভৌতিক–‘ভুত’ (ন্ধড়প্সব্দব্ধ) সংক্রান্ত অর্থে ‘ভৌতিক’ শব্দ ব্যবহার না হওয়াই বাঞ্ছনীয়৷ বাংলায় যাকে ভুত বলি তার সংস্কৃত হচ্ছে ‘প্রেত’৷ প্রেত থেকে ‘প্রৈতিক’ শব্দ আসতে পারে যদিও তার ব্যবহার খুবই সীমিত৷ ন্ধড়প্সব্দব্ধ অর্থে ‘ভুত’ শব্দটা যদি রাখতেই হয় তাহলে তার বিশেষণ হোক ‘ভুতুড়ে’–ভৌতিক নয়৷ সংস্কৃত ‘ভূত’ শব্দের ‘ঠ’ ক্ বা ‘ষ্ণিক্’ প্রতয়্যান্ত বিশেষণ ভৌতিক’ (Physical)৷
এমনিতে যাঁরা চাষবাস নিয়ে থাকেন তাঁদের জন্যে সংস্কৃত ভাষায় বেশি প্রচলিত শব্দ দু’টি রয়েছে–কৃষীবল ও কর্ষক৷ ‘কর্ষক’ শব্দটি কৃষ ধাতু থেকে উৎপন্ন৷ যাঁরা এই কর্ষককে ‘কৃষক’ বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা না জেনেই এই ভুল করেছেন৷ আর যাঁরা আজও ‘কৃষক’ লেখেন তাঁরা ভুলকে ভুল না জেনেই লেখেন৷ আমরা ‘আকর্ষক’ ‘বিকর্ষক’ বলবার সময় ঠিক বলি কিন্তু কেন বুঝি না ‘কর্ষক’ বলবার সময় ভুল করে কৃষক বলে ফেলি৷
‘সংস্কৃতি’র বিপরীত শব্দ ‘অপকৃতি’ চলতে পারে, তবে ‘অপসংস্কৃতি’ চলতে পারে না৷ কারণ ‘সংস্কৃতি’ (সম্–কৃ ক্তিন্ ঞ্চ সংস্কৃতি যার মানে যা মানুষকে সূক্ষ্মত্বের দিকে, রুচিবোধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়) মানেই ‘কৃতি’–র উন্নতাবস্থায় অধিরোহণ৷ ‘অপ’ মানে অবনত অবস্থা৷ একসঙ্গে দু’টো চলবে কি করে! এ সোণার পাথর বাটি হয়ে গেল যে! আবার ‘অপকৃতি’–র মানে ‘কুকার্য’ও হয়৷ তাই সংস্কৃতির বিপরীত শব্দ হিসেবে বরং ‘অসংস্কৃতি’ শব্দটা চলতে পারে৷ কেননা ‘সম্’ উপসর্গ সাধারণতঃ ভাল বা শুভ অর্থে প্রযোজ্য হয়৷ তাই ‘অপসংস্কৃতি’ শব্দটি অশুদ্ধ৷
ও, আর/এবং–সংযোজক ‘ও’–এর পরিবর্ত্তে অনেকে প্রায়শঃ ‘এবং’ শব্দটির ব্যবহার করে থাকেন৷ কিন্তু ‘এবং’ মানে ‘ও’ নয়৷ ‘এবং’ বাংলা শব্দও নয় এটি একটি সংস্কৃত শব্দ, যার মানে ‘এইভাবে’, ‘এইরকমে’৷ যেমন, ‘এবং কুরু’ মানে এইভাবে করো৷ সুতরাং ‘ও’–র পরিবর্ত্তে ‘এবং’ প্রয়োগ করলে চলৰে না৷ পরিবর্ত্তে ‘ও’ বা ‘আর’ লিখলেই ভাল হয়৷
সরব/সোচ্চার–আজকাল বহু শিক্ষিত মানুষও ‘সরব’ (vocal) ৰোঝাতে গিয়ে ‘সোচ্চার’ কথাটা প্রায়শঃ লিখে থাকেন বা ৰলে থাকেন৷ শব্দটা আগাপাস্তলা ভুল৷ উচ্চারূণ>ঔচ্চার৷ ‘উচ্চার’ মানে ‘বিষ্ঠা’৷ ‘ঔচ্চার’ মানে ‘বিষ্ঠা সম্বন্ধীয়’৷ উচ্চারেণ সহ ইত্যর্থে ‘সোচ্চার’ (তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস) যার মানে হচ্ছে যিনি মলত্যাগ করেছেন কিন্তু এখনও জলশৌচ করেননি৷ মলত্যাগকালে কোঁথ দেওয়াকেও ‘উচ্চার’ ৰলা হয়৷ অতএব ‘সোচ্চার’ শব্দের আরেকটি মানে হ’ল যে মলত্যাগ করবার জন্যে কোঁথ দিচ্ছে৷ কেবল সংস্কৃত বা ৰাংলা ব্যাকরণেই নয়, ৰাংলা ভাষায় অন্য ভাষার যে সব শব্দ আছে সেগুলো একটু মানে ৰুঝে ব্যবহার করলে ভাল হয়৷
মুদ্রাঙ্কিত/মুদ্রিত–ছাপ মারার ফারসী হচ্ছে ‘মোহর’, সংস্কৃতে ‘মুদ্রাঙ্কন’৷ ৰই ছাপানোটাও কাগজে ছাপ মারা৷ তাই ৰই ছাপানোকেও ৰলতে হবে ‘মুদ্রাঙ্কন’, বা পুস্তক ‘মুদ্রাঙ্কিত’ হয়েছে৷ সংস্কৃত ‘মুদ্রিত’ মানে ‘মোদা’ বা ৰোজা বা ‘ৰন্ধ করা’৷ পুস্তক ‘মুদ্রিত হয়েছে’ মানে ৰইটাকে ৰন্ধ করা হয়েছে৷ অনেক ৰইয়েতে লেখা থাকে–‘‘অমুক প্রেস থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত৷’’ এরূপ না লেখাই উচিত৷ লেখা উচিত ‘‘অমুক প্রেস থেকে মুদ্রাঙ্কিত ও প্রকাশিত’’৷
যদিও সাধারণ অর্থে কদলী ৰলতে সব কলাকেই বোঝায় তবু বিশেষ অর্থে কদলী মানে কাঁচকলা আর রম্ভা মানে পাকা কলা৷ এখানে কাঁচ কলা ৰলতে আমরা সেই কলাকে ৰোঝাচ্ছি যা কাঁচা অবস্থায় তরকারি রেঁধে খাওয়া হয়, আর পাকা অবস্থায় খাওয়া হয় না৷ যে কলা কাঁচা অবস্থায় সাধারণতঃ খাওয়া যায় না, পাকা অবস্থায় খাওয়া যায় তাকে পাকা কলা বা রম্ভা ৰলে৷ এই রম্ভাকে কাঁচা অবস্থায় কাঁচা কলা (কাঁচকলা নয়) ৰলা হয়৷ ‘কদলী’ বা ‘কদলি’-তে দু’টো ৰানানই চলৰে৷ যে ‘ল’ রয়েছে সেটা হচ্ছে অন্তস্থ ‘ল’ Lra)৷ এই কদলী থেকে কলা ও কল (অসমীয়াতে) শব্দ এসেছে৷ যেহেতু ‘কদলী’র ‘ল’ অন্তস্থ ‘ল’ সেই কারণে ‘কলা’র ‘ল’ অন্তস্থ ‘ল’ Lra) হওয়াই উচিত৷ কিন্তু যেহেতু ৰাংলা ও অস
কোদণ্ড ঃ কঃ+দণ্ড = কোদণ্ড, যার ভাবারূঢ়ার্থ হ’ল জলের বা মাটির সঙ্গে সংযোগরক্ষাকারী দণ্ড৷ প্রাচীন সংস্কৃতে ‘ক’ শব্দের একটি অর্থ ছিল ধনুকের ছিলা, চাক বা চাপ যা সেই ছিলার সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলত৷ তাই ধনুকের চাক (চক্র বা arc)–কে বলা হ’ত কোদণ্ড৷
(মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর শব্দ চয়নিকা–২৬ খণ্ড গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে ‘নারীর মর্যাদা’ বিষয়ক অনেক কিছুই বলেছেন৷ ওই গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ সংকলিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে৷ –সম্পাদক)
‘কন্শ্’ ধাতু/ ‘কন্স্’ ধাতুর অর্থ প্রচণ্ডভাবে কামনা করা৷ এই অর্থে কন্স্+ অচ= কংশ (কনস+অচ্= কংস)শব্দ আমরা পাচ্ছি৷ একই অর্থে দু’টি ৰানানই চলৰে৷ ‘কংশ’ শব্দের ভাবারূঢ়ার্থ হচ্ছে ‘যে প্রচণ্ডভাবে কামনা-বাসনা করে, যোগারূঢ়ার্থে ‘কংশ’ ছিলেন কৃষ্ণের মাতুল তথা তৎকালীন শূরসেন রাজ্যের রাজা৷ তখন মথুরা ছিল শুরসেনের রাজধানী (এই শূরসেনের নাম আর একটা কারণে প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে, তা হচ্ছে শৌরসেনী প্রাকৃত ভাষার জন্যে৷ বৈদিক ভাষার তিরোভাবের পর যে সাতটি প্রাকৃত ভাষার উদ্ভব হয় তার অন্যতম শৌরসেনী প্রাকৃত৷ বর্তমান উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাংশে (এলাহাৰাদের পশ্চিমে), হরিয়াণা ও মধ্য প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে এই শৌরসেনী
অনেকে বনেদি বা অভিজাত অর্থে ‘সম্ভ্রান্ত’ শব্দটি প্রয়োগ করে থাকেন৷ আসলে ‘সম্ভ্রান্ত’ মানে ‘সম্যক রূপে ভ্রান্ত’৷ মানে, যে বড় রকমের ভুল করে ফেলেছে৷ তাই অভিজাত অর্থে ‘সম্ভ্রান্ত’ শব্দের ব্যবহার রহিত হওয়া বাঞ্ছনীয়৷
ভৌতিক–‘ভুত’ (ghost) সংক্রান্ত অর্থে ‘ভৌতিক’ শব্দ ব্যবহার না হওয়াই বাঞ্ছনীয়৷ বাংলায় যাকে ভুত বলি তার সংস্কৃত হচ্ছে ‘প্রেত’৷ প্রেত থেকে ‘প্রৈতিক’ শব্দ আসতে পারে যদিও তার ব্যবহার খুবই সীমিত৷ ন্ধড়প্সব্দব্ধ অর্থে ‘ভুত’ শব্দটা যদি রাখতেই হয় তাহলে তার বিশেষণ হোক ‘ভুতুড়ে’–ভৌতিক নয়৷ সংস্কৃত ‘ভূত’ শব্দের ‘ঠ’ ক্ বা ‘ষ্ণিক্’ প্রতয়্যান্ত বিশেষণ ভৌতিক’ (Physical)৷
এমনিতে যাঁরা চাষবাস নিয়ে থাকেন তাঁদের জন্যে সংস্কৃত ভাষায় বেশি প্রচলিত শব্দ দু’টি রয়েছে–কৃষীবল ও কর্ষক৷ ‘কর্ষক’ শব্দটি কৃষ ধাতু থেকে উৎপন্ন৷ যাঁরা এই কর্ষককে ‘কৃষক’ বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা না জেনেই এই ভুল করেছেন৷ আর যাঁরা আজও ‘কৃষক’ লেখেন তাঁরা ভুলকে ভুল না জেনেই লেখেন৷ আমরা ‘আকর্ষক’ ‘বিকর্ষক’ বলবার সময় ঠিক বলি কিন্তু কেন বুঝি না ‘কর্ষক’ বলবার সময় ভুল করে কৃষক বলে ফেলি৷
‘সংস্কৃতি’র বিপরীত শব্দ ‘অপকৃতি’ চলতে পারে, তবে ‘অপসংস্কৃতি’ চলতে পারে না৷ কারণ ‘সংস্কৃতি’ (সম্–কৃ ক্তিন্ ঞ্চ সংস্কৃতি যার মানে যা মানুষকে সূক্ষ্মত্বের দিকে, রুচিবোধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়) মানেই ‘কৃতি’–র উন্নতাবস্থায় অধিরোহণ৷ ‘অপ’ মানে অবনত অবস্থা৷ একসঙ্গে দু’টো চলবে কি করে! এ সোণার পাথর বাটি হয়ে গেল যে! আবার ‘অপকৃতি’–র মানে ‘কুকার্য’ও হয়৷ তাই সংস্কৃতির বিপরীত শব্দ হিসেবে বরং ‘অসংস্কৃতি’ শব্দটা চলতে পারে৷ কেননা ‘সম্’ উপসর্গ সাধারণতঃ ভাল বা শুভ অর্থে প্রযোজ্য হয়৷ তাই ‘অপসংস্কৃতি’ শব্দটি অশুদ্ধ৷
সংযোজক ‘ও’–এর পরিবর্ত্তে অনেকে প্রায়শঃ ‘এবং’ শব্দটির ব্যবহার করে থাকেন৷ কিন্তু ‘এবং’ মানে ‘ও’ নয়৷ ‘এবং’ বাংলা শব্দও নয় এটি একটি সংস্কৃত শব্দ, যার মানে ‘এইভাবে’, ‘এইরকমে’৷ যেমন, ‘এবং কুরু’ মানে এইভাবে করো৷ সুতরাং ‘ও’–র পরিবর্ত্তে ‘এবং’ প্রয়োগ করলে চলৰে না৷ পরিবর্ত্তে ‘ও’ বা ‘আর’ লিখলেই ভাল হয়৷
আজকাল বহু শিক্ষিত মানুষও ‘সরব’ (vocal) ৰোঝাতে গিয়ে ‘সোচ্চার’ কথাটা প্রায়শঃ লিখে থাকেন বা ৰলে থাকেন৷ শব্দটা আগাপাস্তলা ভুল৷ উচ্চারূণ > ঔচ্চার৷ ‘উচ্চার’ মানে ‘বিষ্ঠা’৷ ‘ঔচ্চার’ মানে ‘বিষ্ঠা সম্বন্ধীয়’৷ উচ্চারেণ সহ ইত্যর্থে ‘সোচ্চার’ (তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস) যার মানে হচ্ছে যিনি মলত্যাগ করেছেন কিন্তু এখনও জলশৌচ করেননি৷ মলত্যাগকালে কোঁথ দেওয়াকেও ‘উচ্চার’ ৰলা হয়৷ অতএব ‘সোচ্চার’ শব্দের আরেকটি মানে হ’ল যে মলত্যাগ করবার জন্যে কোঁথ দিচ্ছে৷ কেবল সংস্কৃত বা ৰাংলা ব্যাকরণেই নয়, ৰাংলা ভাষায় অন্য ভাষার যে সব শব্দ আছে সেগুলো একটু মানে ৰুঝে ব্যবহার করলে ভাল হয়৷
ছাপ মারার ফারসী হচ্ছে ‘মোহর’, সংস্কৃতে ‘মুদ্রাঙ্কন’৷ ৰই ছাপানোটাও কাগজে ছাপ মারা৷ তাই ৰই ছাপানোকেও ৰলতে হবে ‘মুদ্রাঙ্কন’, বা পুস্তক ‘মুদ্রাঙ্কিত’ হয়েছে৷ সংস্কৃত ‘মুদ্রিত’ মানে ‘মোদা’ বা ৰোজা বা ‘ৰন্ধ করা’৷ পুস্তক ‘মুদ্রিত হয়েছে’ মানে ৰইটাকে ৰন্ধ করা হয়েছে৷ অনেক ৰইয়েতে লেখা থাকে–‘‘অমুক প্রেস থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত৷’’ এরূপ না লেখাই উচিত৷ লেখা উচিত ‘‘অমুক প্রেস থেকে মুদ্রাঙ্কিত ও প্রকাশিত’’৷
কোন জায়গায় নোতুন প্রজা বন্দোবস্ত হলে অর্থাৎ নোতুনভাবে প্রজা বসানো হলে সেই জায়গাগুলোর নামের শেষে ‘বসান’ যুক্ত হয়৷ যেমন–রাজাবসান, নবাববসান, মুকুন্দবসান, নুয়াবসান (অনেকে ভুল করে ‘নয়াবসান’ বলে থাকেন–সেটা ঠিক নয়৷ দক্ষিণী রাঢ়ী ও উত্তরী ওড়িয়ায় নোতুনকে ‘নুয়া’ বা ‘নোয়া’ বলা হয়৷ ‘নয়া’ হচ্ছে হিন্দী শব্দ৷ বিহারের ভাষায় ‘নয়া’র পর্যায়বাচক শব্দ হচ্ছে ‘নয়্কা’ বা ‘নব্কা’৷ মেদিনীপুর জেলার নোয়াগ্রাম শহরটিকে আজকাল অনেকে ভুল করে নয়াগ্রাম বলে থাকে)৷
ওল একটি কন্দবিশেষ৷ ইংরেজীতেElephant roots লাতিন(Arum) শব্দটিও কতকটা এই অর্থে ব্যবহৃত হত৷ পূর্বভারতে ‘ওল’ শব্দটি সমধিক প্রচলিত৷ ভোজপুরীতে, মধ্যপ্রদেশে ও মহারাষ্ট্রে ‘ওল’ অর্থে ‘শূরণ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়৷ হিন্দীতে ‘ওল’-কে ৰলে ‘জমীঁকন্দ’৷ শব্দটি সম্ভবতঃ ‘জমীকন্দ’ থেকে এসেছে৷ চাষের ও আরণ্যক ভেদে ওল নানান ধরণের হলেও ও নানান আকার-আকৃতির হলেও সুপরিচিত ওল মোটামুটি বিচারে দু’ধরণের--- শাদা ও লাল৷ চর্চার মাধ্যমে তৈরী করা ওলে গলা ধরে না ও তা সুখাদ্য৷ ৰাঙলার জলপাইগুড়ি, কোচবিহার অঞ্চলের ওল খুবই ৰড় আকারের হয়৷ চর্চার দ্বারা উন্নীত ওলের চাষ বেশী হয় হাওড়া ও মেদিনীপুর জেলায়৷ হাওড়া জেলার সাঁতরাগাছীর ও মেদিনীপুর
উষ্ থকন্ (থক্) প্রত্যয় করে ‘ওষ্ঠ’ শব্দ নিষ্পন্ন হচ্ছে৷ স্বাভাবিক নিয়মে ৰানানটি হওয়া উচিত ছিল ‘ওস্থ’ কিন্তু ‘ষ’ মূর্ছ্য বর্ণ ও ‘থ’ দন্ত্য বর্ণ৷ তাই এতদুভয়ের সংযুক্তি হতে পারে না৷ এজন্যে ‘থ’-এর পরিবর্তে ‘ট’ বর্গের সংশ্লিষ্ট বর্ণ ‘ঠ’ ব্যবহৃত হয়ে শব্দটি হয়ে দাঁড়ায় ‘ওষ্ঠ’৷ ‘‘উষ ধাতুর অর্থ গরম করা৷ সঞ্চালনের দ্বারা যা উষ্ণতা সৃষ্টি করে তা-ই ‘ওষ্ঠ’৷ ওপরের ঠোটকে ৰলা হয় ‘ওষ্ঠ’ আর নীচেকার ঠোটকে ৰলা হয় ‘অধর’৷ এই ‘ওষ্ঠ’ শব্দ থেকেই হিন্দী ‘ওঠ’ শব্দটি এসেছে আর এসেছে ৰাংলা ‘ঠোট’ শব্দটি৷ উর্দু ‘হোঁট’ শব্দটিও এই ‘ওষ্ঠ’ শব্দ থেকেই এসেছে৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহী
ঋগ্বেদ মুখ্যতঃ স্তুতি সম্বন্ধীয় হলেও তাতেও অন্যান্য কথা ও কথনিকা রয়েছে৷ সেই সকল কথা ও কথনিকার সকল অংশ সমান আধ্যাত্মিক মূল্য বহন না করলেও তারা সুপ্রাচীন মানব ঐতিহ্যের প্রতিভূ......ক্রমঃদ্রুতিতে অগ্রসৃত মানব–মননের তথা সমাজ–সংরচনার একটি আলেখ্য৷ সেদিক দিয়ে বিচারে ঋগ্বেদ ভাষা, সাহিত্য ও অভিব্যক্তির জগতে বিশেষ মূল্য বহন করে৷ ঋগ্বেদীয় যুগে লিপি ছিল না সত্য কিন্তু ধবন্যাত্মক অক্ষর ও আক্ষরিক ব্যাহূতি তথা ধবনিবিক্ষেপ.....প্রক্ষেপ ও উপন্যাস–রীতি (উপস্থাপিত করবার পদ্ধতি) ছিল৷ ঋগ্বেদে বিভিন্ন অক্ষরের জন্যে স্বতন্ত্র উচ্চারণ–রীতিও প্রচলিত ছিল যা ঋগ্বেদের অনুগামীরা পরবর্তীকালে গুরুপ্রমুখাৎ শিখে নিতেন৷ আমা
প্রাচীন মহাযানী বৌদ্ধ ও পৌরাণিক হিন্দুদের যে সকল দেবতার সঙ্গে ধনুক থাকত তাদের কাউকে কাউকে চাপধারী বা কোদণ্ডধারী ৰলা হত৷ শিবের সম্বন্ধেও ৰলা হ’ত ‘কোদণ্ডদণ্ডপাশহস্ত্৷’ বামাচারী তান্ত্রিক দেবী তথা বৌদ্ধতন্ত্রে স্বীকৃতা যোড়শী বা রাজরাজেশ্বরী সম্বন্ধে (আধুনিক যুগের জগদ্ধাত্রী এরই একটি বিবর্তিত রূপ৷ জগদ্ধাত্রী পূজার ইতিহাস একটু পরে ৰলছি) ৰলা হয়েছে ‘পাশাঙ্কুশচাপধারিণী শিবা’৷
আকাট ঃ যা কাটা যায় না বা খণ্ডন করা যায় না৷ সংস্কৃতে ‘‘কাটা-র যথার্থ ক্রিয়া হচ্ছে ‘কর্ত্তন’, প্রাকৃতে ‘কট্টন’৷ এই ‘কট্টন’ থেকেই লৌকিক সংস্কৃত ‘অকাট্য’ শব্দ তৈরী হয়েছে৷ ঠিক যেমনভাবে ‘মীন’ শব্দটি, ‘পল্লী’ (‘গ্রাম’ অর্থে) শব্দটি গৃহীত হয়েছে, যেমনভাবে গৃহীত হয়েছে ‘রুজ্জু’, ‘গুৰাক্’ ‘পেরুকম্’ প্রভৃতি৷ সংস্কৃতে মুর্খদের সাধারণতঃ কয়েকটি ভাগে বিভাজিত করা যায়৷ তারা হচ্ছে আকাট মূর্খ ......গণ্ডমূর্খ.........নীরেট মূর্খ...........হস্তীমূর্খ........কেউ কেউ গো-মূর্খও ৰলে থাকেন৷ ‘গণ্ডমূর্খ’ মানে মূর্খতা যার গণ্ডদেশ পর্যন্ত পৌছে গেছে, যে কোন মুহূর্তে মুখ বিবর দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে৷ ‘নীরেট’ মানে যার ভেতরটা
কোকিল ঃ ‘ক’ শব্দের উত্তর ‘ইলচ্’ প্রত্যয় করে আমরা ‘কিল’ শব্দ পাচ্ছি৷ কে+কিল= কোকিল, যার মানে হচ্ছে ধবনির মাধ্যমে যে সত্তা তার পরিচিতি জানিয়ে থাকে৷ এটা হ’ল ভাবারাঢ়ার্থ৷ যোগারূঢ়ার্থে ‘কোকিল’ হচ্ছে একটি বিশেষ কৃষ্ণকায় পাখী৷ কোকিল>কোইল> কোয়েল৷ পর্যায়বাচক শব্দ হচ্ছে পিক, পরভৃত৷ ‘পিক বলতে কোকিলের কুহুধবনিকেও বোঝায়, আবার কোকিলকেও বোঝায়৷
তুলনীয় ঃ
‘‘পিক কিবা কুষে কুঞ্জে কুছ গায়
ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মধু বায়?’’
(ghost) সংক্রান্ত অর্থে ‘ভৌতিক’ শব্দ ব্যবহার না হওয়াই বাঞ্ছনীয়৷ বাংলায় যাকে ভুত বলি তার সংস্কৃত হচ্ছে ‘প্রেত’৷ প্রেত থেকে ‘প্রৈতিক’ শব্দ আসতে পারে যদিও তার ব্যবহার খুবই সীমিত৷ ন্ধড়প্সব্দব্ধ অর্থে ‘ভুত’ শব্দটা যদি রাখতেই হয় তাহলে তার বিশেষণ হোক ‘ভুতুড়ে’–ভৌতিক নয়৷ সংস্কৃত ‘ভূত’ শব্দের ‘ঠ’ ক্ বা ‘ষ্ণিক্’ প্রতয়্যান্ত বিশেষণ ভৌতিক’ (Physical)৷
অনেকে বনেদি বা অভিজাত অর্থে ‘সম্ভ্রান্ত’ শব্দটি প্রয়োগ করে থাকেন৷ আসলে ‘সম্ভ্রান্ত’ মানে ‘সম্যক রূপে ভ্রান্ত’৷ মানে, যে বড় রকমের ভুল করে ফেলেছে৷ তাই অভিজাত অর্থে ‘সম্ভ্রান্ত’ শব্দের ব্যবহার রহিত হওয়া বাঞ্ছনীয়৷
ছাপ মারার ফারসী হচ্ছে ‘মোহর’, সংস্কৃতে ‘মুদ্রাঙ্কন’৷ ৰই ছাপানোটাও কাগজে ছাপ মারা৷ তাই ৰই ছাপানোকেও ৰলতে হবে ‘মুদ্রাঙ্কন’, বা পুস্তক ‘মুদ্রাঙ্কিত’ হয়েছে৷ সংস্কৃত ‘মুদ্রিত’ মানে ‘মোদা’ বা ৰোজা বা ‘ৰন্ধ করা’৷ পুস্তক ‘মুদ্রিত হয়েছে’ মানে ৰইটাকে ৰন্ধ করা হয়েছে৷ অনেক ৰইয়েতে লেখা থাকে–‘‘অমুক প্রেস থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত৷’’ এরূপ না লেখাই উচিত৷ লেখা উচিত ‘‘অমুক প্রেস থেকে মুদ্রাঙ্কিত ও প্রকাশিত’’৷
আজকাল বহু শিক্ষিত মানুষও ‘সরব’ (vocal) ৰোঝাতে গিয়ে ‘সোচ্চার’ কথাটা প্রায়শঃ লিখে থাকেন বা ৰলে থাকেন৷ শব্দটা আগাপাস্তলা ভুল৷ উচ্চারূণঞ্চঔচ্চার৷ ‘উচ্চার’ মানে ‘বিষ্ঠা’৷ ‘ঔচ্চার’ মানে ‘বিষ্ঠা সম্বন্ধীয়’৷ উচ্চারেণ সহ ইত্যর্থে ‘সোচ্চার’ (তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস) যার মানে হচ্ছে যিনি মলত্যাগ করেছেন কিন্তু এখনও জলশৌচ করেননি৷ মলত্যাগকালে কোঁথ দেওয়াকেও ‘উচ্চার’ ৰলা হয়৷ অতএব ‘সোচ্চার’ শব্দের আরেকটি মানে হ’ল যে মলত্যাগ করবার জন্যে কোঁথ দিচ্ছে৷ কেবল সংস্কৃত বা ৰাংলা ব্যাকরণেই নয়, ৰাংলা ভাষায় অন্য ভাষার যে সব শব্দ আছে সেগুলো একটু মানে ৰুঝে ব্যবহার করলে ভাল হয়৷
সংযোজক ‘ও’–এর পরিবর্ত্তে অনেকে প্রায়শঃ ‘এবং’ শব্দটির ব্যবহার করে থাকেন৷ কিন্তু ‘এবং’ মানে ‘ও’ নয়৷ ‘এবং’ বাংলা শব্দও নয় এটি একটি সংস্কৃত শব্দ, যার মানে ‘এইভাবে’, ‘এইরকমে’৷ যেমন, ‘এবং কুরু’ মানে এইভাবে করো৷ সুতরাং ‘ও’–র পরিবর্ত্তে ‘এবং’ প্রয়োগ করলে চলৰে না৷ পরিবর্ত্তে ‘ও’ বা ‘আর’ লিখলেই ভাল হয়৷
‘সংস্কৃতি’র বিপরীত শব্দ ‘অপকৃতি’ চলতে পারে, তবে ‘অপসংস্কৃতি’ চলতে পারে না৷ কারণ ‘সংস্কৃতি’ (সম্–কৃ ক্তিন্ ঞ্চ সংস্কৃতি যার মানে যা মানুষকে সূক্ষ্মত্বের দিকে, রুচিবোধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়) মানেই ‘কৃতি’–র উন্নতাবস্থায় অধিরোহণ৷ ‘অপ’ মানে অবনত অবস্থা৷ একসঙ্গে দু’টো চলবে কি করে! এ সোণার পাথর বাটি হয়ে গেল যে! আবার ‘অপকৃতি’–র মানে ‘কুকার্য’ও হয়৷ তাই সংস্কৃতির বিপরীত শব্দ হিসেবে বরং ‘অসংস্কৃতি’ শব্দটা চলতে পারে৷ কেননা ‘সম্’ উপসর্গ সাধারণতঃ ভাল বা শুভ অর্থে প্রযোজ্য হয়৷ তাই ‘অপসংস্কৃতি’ শব্দটি অশুদ্ধ৷
এমনিতে যাঁরা চাষবাস নিয়ে থাকেন তাঁদের জন্যে সংস্কৃত ভাষায় বেশি প্রচলিত শব্দ দু’টি রয়েছে–কৃষীবল ও কর্ষক৷ ‘কর্ষক’ শব্দটি কৃষ ধাতু থেকে উৎপন্ন৷ যাঁরা এই কর্ষককে ‘কৃষক’ বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা না জেনেই এই ভুল করেছেন৷ আর যাঁরা আজও ‘কৃষক’ লেখেন তাঁরা ভুলকে ভুল না জেনেই লেখেন৷ আমরা ‘আকর্ষক’ ‘বিকর্ষক’ বলবার সময় ঠিক বলি কিন্তু কেন বুঝি না ‘কর্ষক’ বলবার সময় ভুল করে কৃষক বলে ফেলি৷
একটু আগেই বলেছি, ‘খর’ শব্দের একটি অর্থ ‘রাক্ষস’৷ যতদূর মনে হয় প্রাচীনকালের আর্যরা অষ্ট্রিক–নিগ্রোয়েড বা দ্রাবিড়গোষ্ঠীভুক্ত মানুষদের রাক্ষস বলে অভিহিত করতেন৷ কারণ, তাঁদের নিজেদের লেখাতেই ধরা পড়ে যে রাক্ষসদেরও উন্নতমানের সভ্যতা ছিল৷ তারা বড় বড় শহর–নগরীর পত্তন করেছিল....তারা ধর্মাচরণ করত....তারা শিবভক্ত ছিল....তারা শিবের আশীর্বাদে অমিত প্রতিভা ও শক্তিসম্পদের অধিকারী হয়েছিল৷ তাদের হেয় করবার জন্যে বিভিন্ন পুস্তকে তাদের সম্বন্ধে বহু অবাঞ্ছিত মন্তব্য কর হয়েছে৷ তবে হ্যাঁ, একথাটি ঠিকই যে তারা আর্যদের বেদ ও যাগ–যজ্ঞের বিরোধী ছিল৷ আর সম্ভবতঃ যজ্ঞে মূল্যবান খাদ্যবস্তুর অপচয় হ’ত বলে তারা কোথাও যজ্ঞানুষ্
শব্দটি মূলতঃ ফার্সী, ৰাংলা ভাষায় এসেছে মোগল যুগের গোড়ার দিকে--যার মানে ইংরেজীতেmirror, কাচ অর্থেও ‘আয়না’ শব্দের ব্যবহার উর্দু, ফার্সী, পঞ্জাৰী, ডোগরী, কশ্মীরী, পশ্তু ভাষায় রয়েছে৷ ‘আয়না’-র খাঁটি ৰাংলা শব্দ হচ্ছে ‘আরশী’ (আরশী একটি খাঁটি তদ্ভব শব্দ, এসেছে মূল শব্দ ‘আদর্শী’ থেকে৷ হিন্দতেও ‘আরসী’, মারাঠীতেও আরসী/আরসা৷ উত্তর ভারতে আরসীপ্রসাদ নামে লোক বিরল নয়৷ মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছেন--‘‘সরসী আরশী মোর’’৷
ভারত ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বহুজনপদের নামকরণ করা হয়েছে ‘পুর’, ‘নগর’ ইত্যাদি শব্দ যোগ করে৷ ছোট শহরকে সংস্কৃতে বলা হ’ত ‘পুর’ (প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি, ‘শহর’ শব্দটা কিন্তু ফার্সী), আর বড় বড় শহরকে বলা হত ‘নগর’৷ উভয়ের মধ্যে তফাৎ ছিল এই যে নগরের চারিদিক প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকত, সংস্কৃতে যাকে বলা হ’ত ‘নগরবেষ্টনীঁ’৷ এই নগরবেষ্টনীর মধ্যে যাঁরা বাস করতেন তাঁদের বলা হ’ত ‘নাগরিক’৷ আজকাল ‘নাগরিক’ শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে যে অর্থে ইংরেজী ‘সিটিজেন’ কথাটি ব্যবহার করা হচ্ছে তার সঙ্গে প্রাচীন ‘নাগরিক’ শব্দের কোন সম্পর্ক নেই কেননা ‘নাগরিক’ মানে নগরের বাসিন্দা, অন্যদিকে ‘সিটিজেন’ বলতে বোঝায় দেশের যে কোন অধিবাসী–তিনি ন
(মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর শব্দ চয়নিকা–২৬ খণ্ড গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে ‘নারীর মর্যাদা’ বিষয়ক অনেক কিছুই বলেছেন৷ ওই গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ সংকলিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে৷ –সম্পাদক)
শৈব প্রথা
ঘটোৎকচ মহাভারতের এক উজ্জ্বল চরিত্র৷ ‘কচ্’ ধাতুর অর্থ চক্চক্ করা Shine) ৷ ‘উৎকচ’ মানে সবকে ছাপিয়ে চকক্ করা৷ ঘটের মত বিরাট আকৃতির যে সত্তা পৌরুষে উজ্জ্বল সে-ই ‘ঘটোৎকচ’৷ যোগারাঢ়ার্থে ভীমের স্ত্রী হিঁড়িম্বার পু-ঘটোৎকচ৷ এই আদর্শনিষ্ঠ পিত্রনুরাগী মানুষটি কম বয়সেই অনেক কাজ করে গেছলেন৷ তাঁর চরিত্রটি আরও ভাস্বর হয়ে উঠেছিল যখন মহাভারতের (মহাভারত সত্য হলেও সব গল্প বা গল্পাংশ সত্য হতেও পারে, নাও হতে পারে) গল্পে বলা হচ্ছে, ঘটোৎকচ যখন মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছেন অর্থাৎ ধরাশায়ী হচ্ছেন তখন তিনি পাগুব নেতাদের উদ্দেশ্যে ৰলছেন, ‘‘তাকে অনুমতি দেওয়া হোক, তিনি কুরু সেনাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মরৰেন যাতে তার চাপে আরও
‘কল্প’ শব্দের দু’টি অর্থ---প্রথমটি ‘কালাকালবিনিশ্চয়’, দ্বিতীয়টি ‘ভাবাধিকরণবিনিশ্চয়্’৷
যে নদীর যে বৈশিষ্ট্য তা’ থেকে প্রাচীনকালে নদীর নামকরণ করা হ’ত৷ যেমন, যে নদীর জল কপোত অর্থাৎ পায়রার চোখের মত স্বচ্ছ তার নাম কপোতাক্ষ৷ যে নদীর জল ময়ূরের চোখের মত তার নাম ময়ূরাক্ষী যে নদীর উদরে দাম আছে তার নাম দামোদর৷ দামোদরের নীচে অঙ্গার বা কয়লার খনি থাকায় অগ্ণিবাচক ‘দাম’ শব্দটি ব্যবহূত হয়েছে৷ যে নদী হঠাৎ বন্যা এনে নিষ্ঠুরের মত জনপদের প্রভুত ক্ষতি সাধন করে তার নাম কসাই (ত্ব্ব্ভব্ধন্তুড়ন্দ্বব্জ)৷ এই ভয়ানক হিংস্রস্বভাব কসাই নদীকে বর্তমানে বেনারসী শাড়ী পরিয়ে দস্তুরমত বিবি সাজিয়ে ‘কংসাবতী’ নাম দেওয়া হয়েছে৷ মনে রাখা উচিত, কাঁসার সঙ্গে এই নদীর কোন সম্পর্ক নেই৷ ত’ ছাড়া কাঁসার সংস্কৃত হচ্ছে ‘কাংস্য’
কোন বড় গাছের নীচেকার জায়গাকে ‘তলা’ বা ‘তলী’ বলা হয়৷ এই তলা বা তলী নিয়েও অনেক জায়গার নাম হয়৷ যেমন–নিমতলা, কেওড়াতলা, তালতলা (কলকাতা), আগরতলা (ত্রিপুরা), বাদামতলা ইত্যাদি ‘তলী’ দিয়ে যেমন–আমতলী, কুলতলী, ফুলতলী৷ কোন একটি স্থান কোন বিশেষ বস্তুতে বা কাজে ব্যবহূত হ’লে সেক্ষেত্রেও ‘তলা’ ব্যবহূত হয়৷ তবে এই ধরনের ক্ষেত্রে ‘তলী’ ব্যবহূত হয় না৷ যেমন–চণ্ডীতলা (হুগলী), কালীতলা, পঞ্চাননতলা (চন্দননগর), মাচানতলা (বাঁকুড়া), পোড়ামাতলা (নবদ্বীপ), ষষ্ঠীতলা (কৃষ্ণনগর), বুড়ো শিবতলা (চন্দননগর) প্রভৃতি৷ এছাড়া হাটতলা ও রথতলা তো অনেক জায়গাতেই রয়েছে৷
আগেই আমরা কুসুমপুর নিয়ে আলোচনা করেছি৷ বিম্বিসারের সময় অর্থাৎ ৰুদ্ধের সময় রাজগিরি বা গিরিব্রজ ছিল মগধের রাজধানী৷ সেখানে ছিল জলাভাব৷ রাজধানীতে জলের প্রাচুর্য থাকা দরকার৷ সেকালে গঙ্গা ও শোণ নদী যেখানে মিলত, ৰুদ্ধ সেখানে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন–এই স্থানটিতে মগধের রাজধানী হলে সব দিক দিয়ে সুবিধা হয়৷ সেখানে ৰুদ্ধের শিষ্যদের মধ্যে পাটলীপু– নামে এক বণিক উপস্থিত ছিলেন৷ সেকালে মগধে নামকরণে পিতৃগত ও মাতৃগত কুলের একটা সমন্বয় ঘটেছিল৷ মায়ের নাম রূপসারি, তাই ছেলের নাম সারিপুত্ত মায়ের নাম মহামৌদগলী (মহামগ্গলি), তাই ছেলের নাম মহামৌদগ্ল্লন অরহণ (মহামগ্গল্লন)৷ তেমনি মায়ে নাম পাটলী তো পু–ের নাম পাটলীপু–৷ এই পাটলীপু–ই
বেলডাঙ্গা, নারকোলডাঙ্গা পটোলডাঙ্গা প্রভৃতি
পৌরাণিক কথানুযায়ী আজ থেকে প্রায় ৪০০০ বছর আগে বাংলায় সগর নামে এক রাজা ছিলেন৷ আজ যাকে বাংলার বদ্বীপ বলি অর্থাৎ ইংরেজ আমলের মুর্শিদাবাদের পূর্বাংশ (পশ্চিমাংশ রাঢ়), নদীয়া (বর্ত্তমান কুষ্ঠিয়া সহ), যশোর (বর্ত্তমান বনগ্রাম সমেত), ২৪ পরগণা, খুলনা, ফরিদপুর ও বাখরগঞ্জ জেলা নিয়ে হচ্ছে বাংলার বদ্বীপ বা ডেলটা (স্তুন্দ্বপ্তব্ধ্ত্র) বা বাগড়ি বা সমতট৷ এই সমতটের রাজা সগর ছিলেন বিরাট এক প্রভাবশালী রাজা৷ বঙ্গোপসাগরে ছিল তাঁর এক বিরাট নৌবাহিনী৷ বঙ্গোপসাগরে সর্বজনস্বীকৃত তাঁর প্রতিপত্তির দরুণ, সগর কর্ত্তৃক অধিকৃত এই অর্থে সগরূষ্ণ করে ‘সাগর’–যার মানে হচ্ছে সগর রাজার দ্বারা শাসিত জলাশয়৷ সগর রাজার পূর্বে বাংলায় পশ
লিচু ভারতে এসেছিল সম্ভবতঃ বৌদ্ধযুগে৷ ভারত ও চীন উভয়েরই দেশজ ফল হচ্ছে অংশুফলম৷ ফলটির অনেক নামের মধ্যে একটি নাম হচ্ছে অংশুফল্৷ এই আঁশফল গাছের পাতা দেখতে লিচু পাতার মত নয়–কিছুটা গোলাকার.......লিচুর চেয়ে একট ছোটও৷ গাছ কিন্তু লিচু গাছের চেয়ে অনেক বড় হয়.....বট, পাকুড়, অশ্বত্থের মত হয়ে যায় বীজ লিচুর চেয়ে কিছুটা ছোট কিছুটা চ্যাপ্ঢা হয়৷ ফল মিষ্টি হলেও তাতে উৎকট ঝাঁঝ ও গন্ধ থাকে৷ ছোটরা ভালবেসে খেলেও বড়রা পছন্দ করেন না৷ এই আঁশফল বাংলার একটি সাবেকি ফল–ব্যাঞ্জালাইটিস বর্গীয়৷ চীন এই আঁশফল নিয়ে চর্চা বা গবেষণা করে তৈরী করেছিল লিচু৷ বর্তমান পৃথিবীতে চীনের লিচুই সবচেয়ে বড় আকারের, অধিক রসযুক্ত ও সুস্বাদু৷ চী
সংস্কৃত আম্রঞ্ছপ্রাকৃতে, আম্ব/অম্বা৷ এর থেকে ৰাংলায় ‘আঁৰ’ শব্দটি এসেছে৷ উত্তর ভারতের অধিকাংশ ভাষাতেই এই ‘আম্ব’ বা ‘অম্বা’–জাত ‘আঁৰ’ শব্দটিই প্রচলিত৷ ওড়িষ্যায় আঁৰ (আঁৰ্–), মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের অংশবিশেষে আঁৰা, গুজরাতীতে অম্বো, মারাঠীতে আম্বা (‘পিকলে আম্বে’ মানে পাকা আঁৰ), পঞ্জাৰীতে আম্ব্ (আম্ব্ দ্য অচার), হিন্দীতে ও ৰাঙলার কোন কোন অংশে প্রচলিত ‘আম’ শব্দটি থেকেই ‘আঁৰ’ শব্দটি এসেছে৷ ব্যুৎপত্তিগত বিবর্ত্তনের বিচারে আমের চেয়ে আঁৰ বেশী শুদ্ধ৷ তবে একটি বিবর্ত্তিত শব্দ হিসেৰে আমকেও অশুদ্ধ ৰলা চলৰে না৷ ৰাঙলার মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী, কলিকাতা, ২৪ পরগণা, খুলনা ও যশোরের অংশবিশেষে ‘আঁৰ’ শব্দই প্রচলিত৷
সংস্কৃত আম্রঞ্ছপ্রাকৃতে, আম্ব/অম্বা৷ এর থেকে ৰাংলায় ‘আঁৰ’ শব্দটি এসেছে৷ উত্তর ভারতের অধিকাংশ ভাষাতেই এই ‘আম্ব’ বা ‘অম্বা’–জাত ‘আঁৰ’ শব্দটিই প্রচলিত৷ ওড়িষ্যায় আঁৰ (আঁৰ্–), মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের অংশবিশেষে আঁৰা, গুজরাতীতে অম্বো, মারাঠীতে আম্বা (‘পিকলে আম্বে’ মানে পাকা আঁৰ), পঞ্জাৰীতে আম্ব্ (আম্ব্ দ্য অচার), হিন্দীতে ও ৰাঙলার কোন কোন অংশে প্রচলিত ‘আম’ শব্দটি থেকেই ‘আঁৰ’ শব্দটি এসেছে৷ ব্যুৎপত্তিগত বিবর্ত্তনের বিচারে আমের চেয়ে আঁৰ বেশী শুদ্ধ৷ তবে একটি বিবর্ত্তিত শব্দ হিসেৰে আমকেও অশুদ্ধ ৰলা চলৰে না৷ ৰাঙলার মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী, কলিকাতা, ২৪ পরগণা, খুলনা ও যশোরের অংশবিশেষে ‘আঁৰ’ শব্দই প্রচলিত৷
‘ছদ্’ ধাতুর অর্থ আচ্ছাদন দেওয়া৷ যে বস্তু আচ্ছাদন দেয় তা–ই ‘ছত্র’৷ গুরুর ছত্রছায়ায় যে আশ্রিত তাকে ছত্র অণ করে ‘ছাত্র’ বলা হয়৷ ‘ছাত্র’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গে দু’টি রূপ রয়েছে–‘ছাত্রী’ ও ‘ছাত্রা’৷ ‘ছাত্রী’ মানে ‘ছাত্রের পত্নী’৷ তিনি নিজে পড়ুয়া হতেও পারেন, নাও হতে পারেন৷ ‘ছাত্রা’ মানে যিনি নিজে পড়ুয়া কিন্তু তিনি কারও স্ত্রী হতেও পারেন, নাও পারেন৷ (সূত্র ঃ ‘প্রভাতরঞ্জনের ব্যাকরণ বিজ্ঞান’)
সম্প্রতি সিংভূম জেলার পটমদা থানার ভূলা–পাবনপুর গ্রামে ও তার পাশেই কমলপুর থানার বাঙ্গুরদা গ্রামে ও তার দক্ষিণ–পশ্চিম দিকে চাণ্ডিল থানার জায়দা গ্রামে জৈন যুগের বেশ কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে৷ তার সঙ্গে পাওয়া গেছে সেই যুগের বেশ কিছু ৰাংলা লিপি৷ এই লিপি অবশ্যই ১৭০০ বছর বা তার চেয়েও কিছু অধিক পুরোনো কারণ ওই সময়টাতেই রাঢ়ে শৈবাশ্রয়ী জৈনধর্মের স্বর্ণযুগ গেছে৷ ভগ্ণ মূর্তিগুলিও সমস্তই দিগম্বর জৈন দেবতাদের৷ যে লিপিমালা পাওয়া গেছে তা শুশুনিয়া লিপির চেয়ে পুরোনো তো বটেই, হর্ষবর্দ্ধনের শীলমোহরে প্রাপ্ত শ্রীহর্ষ লিপির চেয়েও পুরোনো হতে পারে৷ এই লিপি শ্রীহর্ষ লিপির স্বগোত্রীয় কিন্তু শ্রীহর্ষের চেয়েও বেশ পুরোনো৷
‘খোল’ ধাতু + ‘অল্’ প্রত্যয় করে ‘খোল’ শব্দ পাচ্ছি৷ খো+ ‘ণ্বুল্’ (মতান্তরে ‘ক’) প্রত্যয়ের সাহায্যে ‘খোলক’ শব্দ পাচ্ছি৷ ‘খোলক’ শব্দের তদ্ভবে ‘খোলা’ শব্দ পাচ্ছি৷ ‘খোল্’ ধাতুর অর্থ খুঁড়িয়ে চলা৷ তাই ‘খোল’ মানে খোঁড়া (খঞ্জ বাlame)
‘খুড্’ ধাতুর সঙ্গে ‘ঘঞ্’ প্রত্যয় করে ‘খোল’ শব্দ পাচ্ছি! এতে ‘ড’-এর স্থলে ‘ল’-এর আগম হয়েছে৷ এক্ষেত্রেও ‘খোল’ শব্দের মানে খোঁড়া৷ ৰাংলা ‘খোড়া’ শব্দটি ‘খুড্’ ধাতু থেকে এসেছে৷ ‘খোলক’ শব্দের অর্থ---যুদ্ধে ব্যবহৃত বর্ম, শিরস্ত্রাণ প্রভৃতি অর্থাৎ যা শরীরের আবরণ হিসেৰে ব্যবহৃত হয়৷ ‘খোলক’ শব্দ থেকে তৈরী হয়েছে ৰাংলা ‘খোলা’ শব্দটি৷ এরও মানে আবরণ৷
ইতিহাস–প্রসিদ্ধ নগরী ছিল ‘রোমা’ ত্মপ্সপ্প্ত্রগ্গ৷ তাকে ভুল করে ‘রোম’ বলার সার্থকতা কোথায়? প্রপার নাউনকে এভাবে পরিবর্তন করা কি যুক্তিসঙ্গত? প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় ও পরবর্তীকালে আরবী ভাষায় যে শহরটিকে চিরকালই ‘কাহিরা’ বলে আসা হয়েছে তাকে ‘কাইরো’ বলব কোন যুক্তিতে? যে দেশটিতে আরবীতে ‘ফিলিস্তিন’ বলা হত ও হিব্রুতে বলা হয় ‘প্যালেষ্টাইন’ তাকে না হয় আমরা নিজেদের সুবিধামত যে কোন একটি নামেই ডাকতে পারি৷ কিন্তু যে শহরটি কলিচূণ ও কাতার দড়ির ব্যবসা উপলক্ষ্যে ‘কলিকাতা’ নাম পেয়েছিল তাকে তাড়াতাড়িতে বলতে গিয়ে কথ্য ভাষায় না হয় কলকাতা–ই বললুম, কিন্তু ইংরেজীতে ‘ক্যালকাটা’ (Calcutta) বলব কোন যুক্তিতে?
ফরাসীতে ইংল্যান্ডের দক্ষিণাংশে প্রাচীনকালে যে মস্তবড় শহরটিকে ‘লঁদ্রে’ (Londres, ফরাসী উচ্চারণ ‘লঁদ্রে’) বলা হত, স্ক্টল্যান্ডের মানুষেরা ঠিক উচ্চারণ না করতে পেরে অথবা অন্য যে কোন কারণেই হোক, শহরটিকে ‘লাণ্ডান’ Lundun বলতেন৷ আজ সেই ‘লাণ্ডান’ শব্দটি বিবর্ত্তিত হয়ে ‘লণ্ডন’ London হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ আমি বলছি না নতুনভাবে আবার শহরটিকে ‘লঁদ্রে’ বলা হোক৷ তবে শহরটির ইতিহাসে এই আসল নামটিকে অবশ্যই মনে রাখা দরকার৷ যে শহরটির আসল নাম সুদীর্ঘকাল ধরেই ছিল ‘মস্কোবা’ Moscova তাকে নিজেরা ঠিক উচ্চারণ করতে না পেরে যদি ‘মস্কো’ Moscow বলি সেটাকে খুব সঙ্গত কাজ বলে মনে করতে পারছি না৷ ইংরেজী বাদে বাংলা সহ অন্যান্য সব ভ
পাঠান–মোগল যুগে আগ্রা প্রদেশ ও অযোধ্যা প্রদেশের মিলিত নাম ছিল হিন্দোস্তান বা হিন্দোস্তাঁ (প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি যে ‘স্তান’ বা ‘স্তাঁ’ শব্দটি ফার্সী যার সংস্কৃত প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘স্থান’৷ উর্দ্দুতে এই ফার্সী রীতি অনুসরণ করা হয়৷
‘‘সারে জাঁহাঁসে আচ্ছা হিন্দোস্তাঁ হমারা
হম বুলবুলেঁ হেঁ ইসকী যহ্ গুলিস্তাঁ হমারা’’
লিচু ভারতে এসেছিল সম্ভবতঃ বৌদ্ধযুগে৷ ভারত ও চীন উভয়েরই দেশজ ফল হচ্ছে অংশুফলম৷ ফলটির অনেক নামের মধ্যে একটি নাম হচ্ছে অংশুফল্৷ এই আঁশফল গাছের পাতা দেখতে লিচু পাতার মত নয়–কিছুটা গোলাকার.......লিচুর চেয়ে একট ছোটও৷ গাছ কিন্তু লিচু গাছের চেয়ে অনেক বড় হয়.....বট, পাকুড়, অশ্বত্থের মত হয়ে যায় বীজ লিচুর চেয়ে কিছুটা ছোট কিছুটা চ্যাপ্ঢা হয়৷ ফল মিষ্টি হলেও তাতে উৎকট ঝাঁঝ ও গন্ধ থাকে৷ ছোটরা ভালবেসে খেলেও বড়রা পছন্দ করেন না৷ এই আঁশফল বাংলার একটি সাবেকি ফল–ব্যাঞ্জালাইটিস বর্গীয়৷ চীন এই আঁশফল নিয়ে চর্চা বা গবেষণা করে তৈরী করেছিল লিচু৷ বর্তমান পৃথিবীতে চীনের লিচুই সবচেয়ে বড় আকারের, অধিক রসযুক্ত ও সুস্বাদু৷ চী
‘ নহ্’ ধাতুর উত্তর ‘ভস্’প্রত্যয় করে আমরা ‘নভঃ’ শব্দটি পাচ্ছি৷ তারও মানে আকাশ বা ব্যোমতত্ত্ব বা ইথার ৷ এই ‘নহ্’ ধাতু থেকেই ‘নাভি’ শব্দটি পাচ্ছি৷ তাই ‘ন’ শব্দের একটি মানে নাভি বা নাই (নাইকুগুলী)*৷ নাভি> নাহি> নাই৷ অর্থাৎ ‘নাভি’ শব্দ থেকে বাংলা তত্ত্ব শব্দ ‘নাই’ এসেছে৷ আবার সংস্কৃত ‘নাস্তি’ শব্দ থেকে (নাস্তি> নাস্সি> নাহি> নাই) ‘নাই’ শব্দটি এসেছে৷ এই ‘নাস্তি’ থেকে মাগধী প্রাকৃতে এসেছিল নখি/নাখি ৰাংলার ‘নাই’ এই ‘‘নথি’’ বা ’’নাখি’’ থেকেও আসা স্বাভাবিক হাজার বছরের পুরোনো মগইী ভাষায় নখি/নাখি দুটো রূপই চলত৷ বর্তমান মৈথিলীতেও ‘নাহি’ রূপটি চলে৷ প্রাচীন ৰাংলাতে নাই’ শব্দের রূপ ছিল
জা+ মা+ তৃচ= জামাতৃ৷ ‘জা’ মানে জায়া অর্থাৎ পত্নী৷ ‘মা’ ধাতুর অর্থ গ্রহণ করা/ধারণ করা/ পরিমাণ দেওয়া/ সম্মান দেওয়া৷ যিনি পত্নী গ্রহণ করেছেন অর্থাৎ দার পরিগ্রহ করেছেন তিনি ‘জামাতৃ’---প্রথমার একবচনে ‘জামাতা’৷ জামাত > জামাআ> জামাএ> জামাই৷ ‘জামাতৃ’ শব্দের অন্য অর্থ ‘ৰর’ bridegroom), সহায়ক, বন্ধু৷ ‘জামাতা’ শব্দের অপর মানে সূর্যমুখী ফুল৷
প্রায় ৮০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর কোথাও কঠিন পদার্থ বলে কিছু ছিল না৷ গ্রহটি তখন ছিল এক জ্বলন্ত গ্যাসপিণ্ড৷ পৃথিবীর স্থলভাগ সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ২৩০ কোটি বছর আগে৷ টারসিয়ারি যুগের শেষাশেষি ও ক্রেটারিয়ান যুগের গোড়ার দিকে পৃথিবীর বুকে গণ্ডোয়ানাল্যাণ্ডের প্রথম উদ্ভব হয়েছিল৷ সে সময় পৃথিবীর মধ্যভাগ ছিল জলময়৷
‘কুক্’ ধাতুর অর্থ হ’ল খুঁটিয়ে দেখা বা ভালভাবে তাকানো৷ কুক্+ঘঞ্ করে পাচ্ছি ‘কোক’ শব্দটি৷ তাই ‘কোক’ শব্দের মানে যে ভালভাবে তাকিয়ে দেখে৷ দূর আকাশে ৰলাকা ভেসে আসছে সূদূর উত্তর এলাকা থেকে হিমালয় পার হয়ে ভারতে৷ নীচে কোন্ বৃক্ষবেষ্টিত জলাভূমিতে গত বৎসর সে বাসা ৰেঁধেছিল সেই বৃক্ষটিকে সু-উচ্চ নভ থেকে সে ঠিক চিনে নেয়৷ এই জন্যে এই আরণ্য পাখীগুলির সংস্কৃতে সাধারণ নাম ‘ৰলাকা’--- আরেকটি নাম ‘কোক’৷
‘ইন্দ্র’ মানে শ্রেষ্ঠ৷ বৈদিক ও পৌরাণিক কথানিকা অনুযায়ী দেবতাদের যিনি শ্রেষ্ঠ তাঁকে ‘ইন্দ্র’ বলা হত৷ ‘ইন্দ্র’ ঠিক কোন ব্যষ্টিবিশেষের নাম নয়, এটি একটি পদবিশেষ ইন্দ্রের স্ত্রীর নাম শচী৷ সেটা ব্যষ্টিবিশেষের নাম৷ পদাধিকারে ইন্দ্রের স্ত্রীলিঙ্গে ‘ইন্দ্রাণী’, বা ‘ইন্দ্রা’ (‘ইন্দিরা’ শব্দটি বৈয়াকরণিক বিচারে অশুদ্ধ)৷ ‘ইন্দ্র’ শব্দের অর্থ শ্রেষ্ঠ তাই ৰড় কূপকে সংস্কৃতে ৰলা হয় ইন্দ্রকূপ ইন্দ্রকূপ> ইন্দ্রউ> ইন্দরু> ইন্দার> ইনারা (বিহারের কোন কোন জায়গায় কথ্য ভাষায় ‘ইনারা’ ৰলা হয়৷) অরণ্যানী-শোভা শালবৃক্ষ৷ সে সুন্দর তার ঋজুতায়, দীর্ঘতায়, গাম্ভীর্যে৷ তাই শালেরও সংস্কৃত নাম ইন্দ্রবৃক্ষ৷ ‘ইন্দ্র
‘গৈ’ ধাতু শতৃ ত্রৈ তৃচ্ প্রত্যয় করে হয় ‘গায়ত্তৃ’–গানের দ্বারা যিনি (পুং) ত্রাণের ব্যবস্থা করে দেন৷ ‘গায়ত্তৃ’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ ‘গায়ত্ত্রী’৷ ‘গায়ত্ত্রী’ বেদের সপ্ত ছন্দের অন্যতম৷ বৈদিক সাতটি ছন্দ হচ্ছে–গায়ত্ত্রী, উষ্ণীক্, ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ, বৃহতি, জগতি ও পঙ্কক্তি৷ অনেকে ‘গায়ত্ত্রী’ বানানে একটি ‘ত’ ব্যবহার করেন অর্থাৎ বানান লেখেন ‘গায়ত্রী’৷ এটা ভুল৷ দুটো ‘ত’ দিয়ে লিখতেই হবে৷ একটি ‘ত’ ‘গায়ৎ’ শব্দের, অপর ‘ত’টি ‘ত্রৈ’ ধাতুর৷ এই ধরণের ভুল অনেকে ‘পু–’ সম্বন্ধেও করে থাকেন৷ পুৎ ত্রৈ ড ঞ্চ পু–৷ একটি ‘ত’ ‘পুৎ’ শব্দের, অপর ‘ত’–টি ‘ত্রৈ’ ধাতুর৷ এক্ষেত্রে ‘ত্র’ দিয়ে লিখলে ভুল হবে৷ ‘গায়ত্ত্রী’
যে শব্দ বা সংরচনা বৈয়াকরণিক বিচারে ভুল কিন্তু সেই ভুল দীর্ঘকাল ধর সাহিত্যে চলে আসছে তাকে স্বীকার করে নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না৷ এই স্বীকৃতি দেওয়া হয় কোথাও শব্দ বা সংরচনার লালিত্যের খাতিরে, আবার কোথাও বা উপরোধে ঢেঁকি গেলার মত অবস্থায় পড়ে৷ সংস্কূতে ‘অনাথিনী’ ‘প্রোষিত ভর্ত্তৃকা’ ‘বিপ্রলব্ধা’ প্রভৃতি শব্দগুলি এই ধরণেরই৷
লিপি বা অক্ষরের ক্ষেত্রেও এমানেশনের প্রভাব রয়েছে৷ আমরা আগেই বলেছি যে এক একটি ভাষা আনুমানিক এক হাজার বছর বাঁচে কিন্তু এক একটি লিপি বাঁচে আনুমানিক দু’ হাজার বছরের মত৷ যজুর্বেদের যুগের গোড়ার দিকে কোন লিপি ছিল না৷ শেষের দিকে অর্থাৎ আনুমানিক পাঁচ হাজার বছর আগে ভারতে লিপির আবিষ্কার হয়৷ অক্ষর আবিষ্কারের সময় ঋষিরা ভেবেছিলেন যে অ–উ–ম অর্থাৎ সৃষ্টি–স্থিতি–লয় নিয়ে এই জগৎ রয়েছে৷ কিন্তু ব্যক্ত জগৎটা হচ্ছে চৈতন্যের ওপর প্রকৃতির গুণপ্রভাবের ফল–ক্গনিটিব্ ফ্যাকাল্টির ঙ্মচৈতন্যসত্তারৰ ওপর বাইণ্ডিং ফ্যাকল্টির ঙ্মপরমা প্রকৃতিৰ আধিপত্যের ফল৷ অর্থাৎ এক্ষেত্রে পরমপুরুষ প্রকৃতির ৰন্ধনী শক্তির আওতায় এসে গেছেন৷ এই য
প্রাচীনকালে মানুষ গান গেয়েছিল বিহঙ্গের কাকলির অনুরণনে৷ মানুষের জন্মেতিহাসের প্রথম উষাতেই অর্থাৎ যে অরুণ রাগে মানুষ এই পৃথিবীতে এসেছিল সেই অরুণ রাগেই এসেছিল গানের রাগ........না–জানা সুরসপ্তকের সিঞ্জিনের মঞ্জুষিকা৷ সেই নাম–না–জানা রাগের সঙ্গে তাল মেশাবার জন্যে মানুষ বস্তুতে বস্তুতে ঠোকাঠুকি করত....জন্ম নিল সংঘাত–সঞ্জাত বাদ্যযন্ত্র৷ মৃদঙ্গ, তবলা, খোল, ঘটম্–এদের আদি রূপ এসেছিল৷ তারপর মানুষ এই ঠোকাঠুকি থেকে উদ্ভুত বাদ্যযন্ত্র থেকে নিজেদের মন ভরাবার জন্যে তৈরী করে রৈক্তিক সম্পদ৷ শূন্যতাকে আচ্ছাদন দিল চর্মের বা অন্য কোন মৃদু আবেষ্টনের.....এল বিভিন্ন ধরণের তালসৃষ্টিকারী বাদ্যযন্ত্র৷ মানুষের মন এত
‘কুণ্’ ধাতুূঘঞ্ প্রত্যয় করে আমরা ‘কোণ’ শব্দ পাচ্ছি৷ ‘কোণ’ শব্দের অর্থ হ’ল দুই বা ততোহধিকের মাঝখানে চাপা পড়ে যে ঠিক ভাবে ধবনি দিতে পারছে না.......যথাযথ ভাবে অভিব্যক্ত হচ্ছে না৷ যোগারূঢ়ার্থে ‘কোণ’ বলতে বুঝি দুইটি বাহু (ব্দন্স্তুন্দ্ব) যেখানে অভিন্ন (ন্তুপ্সপ্পপ্পপ্সু) বিন্দুতে মিলছে সেখানে ওই অভিন্ন বিন্দুকে ছুৃঁয়ে যে ভূম্যংশ (ন্ধপ্তন্দ্ব) তৈরী হচ্ছে তা’৷ জ্যামিতির কোণ–বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছিলেন আদি বিদ্বান প্রথম দার্শনিক মহর্ষি কপিল৷ তিনিই প্রথম বলেছিলেন একটি সমকোণী ত্রিভুজে মোট ১৮০ ডিগ্রী কোণ আছে ও সমত্রিকোণী ত্রিভুজে কোণগুলি ৬০ ডিগ্রী হয়ে থাকে৷ এ নিয়ে তিনি অতিরিক্ত কিছু বলেননি–হয়তো বা দা
(১) ‘ধা’ ধাতু অনেকগুলি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷ একটি হ’ল অধিকারে পাওয়া to own, to possess) দ্বিতীয় হ’ল ব্যবস্থা দেওয়া, তৃতীয় হ’ল দেখাশোনা করা বা তত্ত্বাবধান করা, চতুর্থ হ’ল প্রতিপালন করাto nourish)৷
কোন জায়গায় নোতুন প্রজা বন্দোবস্ত হলে অর্থাৎ নোতুনভাবে প্রজা বসানো হলে সেই জায়গাগুলোর নামের শেষে ‘বসান’ যুক্ত হয়৷ যেমন–রাজাবসান, নবাববসান, মুকুন্দবসান, নুয়াবসান (অনেকে ভুল করে ‘নয়াবসান’ বলে থাকেন–সেটা ঠিক নয়৷ দক্ষিণী রাঢ়ী ও উত্তরী ওড়িয়ায় নোতুনকে ‘নুয়া’ বা ‘নোয়া’ বলা হয়৷ ‘নয়া’ হচ্ছে হিন্দী শব্দ৷ বিহারের ভাষায় ‘নয়া’র পর্যায়বাচক শব্দ হচ্ছে ‘নয়্কা’ বা ‘নব্কা’৷ মেদিনীপুর জেলার নোয়াগ্রাম শহরটিকে আজকাল অনেকে ভুল করে নয়াগ্রাম বলে থাকে)৷
এই প্রসঙ্গে দু’চারটে কথা বলছি৷ তোমরা নিশ্চয়ই জান যে দুর্গাপূজা কোন প্রাচীন পূজা নয়৷ এমন কি, মুখ্যতঃ যে পুরাণের ওপর দুর্গাপূজা নির্ভরশীল সেই মার্কণ্ডেয় পুরাণও বৌদ্ধোত্তর যুগের৷ এ ই মার্কণ্ডেয় পুরাণ থেকে নির্বাচিত ৭০০ শ্লোককে বলা হয় দুর্গাসপ্তশতী বা শ্রীশ্রীচণ্ডী৷ অন্যান্য যে সকল গ্রন্থের ওপর নির্ভর করে বিশেষ বিশেষ স্থানে দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হয় সেগুলি হচ্ছে দেবীপূরাণ ও দুর্গাভক্তিতরঙ্গিণী৷ এরা কেউই ১৫০০ বছরের চেয়ে পুরোণো পুস্তক নয়৷ আর বলা বাহুল্য যে পাঠানযুগের পূর্বে বিভিন্ন শাস্ত্রে উল্লিখিত দুর্গা ছিল অষ্টভূজা৷ দশভূজা বা বাংলার এই শরৎকালীণ পূজার প্রবর্তন করেন বরেন্দ্রভূমির রাজশাহী জেলার তাহ
কঃ+দণ্ড=কোদণ্ড, যার ভাবারূঢ়ার্থ হ’ল জলের বা মাটির সঙ্গে সংযোগরক্ষাকারী দণ্ড৷ প্রাচীন সংস্কৃতে ‘ক’ শব্দের একটি অর্থ ছিল ধনুকের ছিলা, চাক বা চাপ যা সেই ছিলার সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলত৷ তাই ধনুকের চাক (চক্র বা arc)–কে বলা হ’ত কোদণ্ড৷
উৎ-যা+অনট্৷ ঊধর্ব দিকে বা ওপরের দিকে যে গতি তাকে উজান বলা হয়৷ নদীর স্বাভাবিক গতি পাহাড় থেকে সমুদ্রের দিকে অর্থাৎ ভাটির দিকে৷ নদীর গতি যদি সমুদ্র থেকে পাহাড়ের দিকে হয় অর্থাৎ তা যদি অস্বাভাবিক বা উল্টো হয় তবে তাকে বলা হবে উজান৷ নৌকো যখন ভাটির দিকে যায়, সে তখন স্রোতের টানেই এগোয়৷ তার সঙ্গে যদি বায়ু অনুকুল থাকে, তাহলে পাল তুলে দিলে তো কথাই নেই৷ মাঝি কেবল হাল ধরে বসে থাকলেই হল৷ দাঁড়িদের কাজ থাকে না বললেই চলে৷ সেই সময় লোকে গলা ছেড়ে সুদীর্ঘ টান দিয়ে যে গান গেয়ে থাকে সেই ভাটির দিকের গতিতে গাওয়া গানকে বাংলায় ‘ভাটিয়ালী’ বলা হয়ে থাকে৷ গতি সমুদ্র থেকে পাহাড়ের দিকে হয় অর্থাৎ উজানে হয়, তাহলে দাঁড়িদের অপ
চিচিঙ্গা
এটি একটি সরু লম্বা ধুন্দুল বর্গীয় সব্জী---গায়ে ডোরা কাটা৷ গুণের দিক দিয়ে তরকারীটি তামসিক--- মনস্থৈর্যের প্রতিকূল৷ সব্জীটিকে আমাদের কলকাতার বাংলায় বলা হয় চিচিঙ্গা৷ রাঢ়ের অধিকাংশ স্থানে লা হয় ‘হোপা’ ও াঙলার কোন কোন স্থানে ‘কুশ্যে’৷ সংসৃকতে প্রচলিত দুটি নাম ---গোশৃঙ্গ (গোরুর শিং-এর মত) ও কুসুম্ভ৷ প্রাচীনকালেও লোকে এর দুর্গুণের কথা জানত ও বুদ্ধিজীবী মানুষকে এই সব্জী খেতে নিষেধ করা হত৷
‘‘কুসুম্ভ-নালিকাশাক-ন্তাকং-পোতকীস্তথা৷
ভক্ষয়ন্ পতিতোহস্তু স্যাদপি বেদান্তগঃ দ্বিজঃ৷৷’’
‘গৃহচটক’ শব্দের অর্থ হল চড়ুই পাখী৷ চটক> চড> চডুই> চড়ুই৷ চটকী> চডহ> চডুই> চড়ুই ৷ বাঙলায় ‘চড়ুই’ ও ‘চড়ুই’ দুটি শব্দই চলে৷ আমাদের পশ্চিমরাঢ়ের গ্রামের মানুষ অনেকেই ‘চটই’বলে থাকে৷ ‘চটই’ শব্দটি ‘চটক’ শব্দ থেকে এসেছে৷ চড়ই কে বিহারের মগহী ভাষায় বলা হয় ‘গর্বৈয়া’৷ মৈথিলী ভাষায় ‘গর্বৈয়াও’ চলে ‘ফুদ্দিও’ চলে৷ ভোজপুরীতে বলা হয় ‘ফুরগুদ্দি’৷ অঙ্গিকা ভাষায় টিকটিকিকে বলে টিকটিকিয়া৷
চটক পাখী দুইভাগে বিভক্ত যারা পাকা বাড়িতে কার্নিশে ঘর বানায় তারা হল ‘গৃহচটক’ বা ‘চড়ুই পাখী’৷চ চড়ুই পাখী পায়রার মতো খড়কুটো দিয়ে ভালো ঘর তৈরী করতে পারে না৷ কিন্তু অধিকাংশ পাখী পারে৷
‘ছাত্র’ শব্দটির মানে শিক্ষার্থী বা বিদ্যার্থী৷ (আরবী ‘তালিব্-উল-ইলম’ ও ফার্সী ‘তালিব্-এ ইলম্’ মানে ও শিক্ষার্থী)৷ ‘ছাত্র’ শব্দটি এসেছে অন্য সূত্র থেকে৷ তোমরা কুম্ভমেলা বা অন্য কোন ড় ধরণের মেলায় গেলে আজও হয়তো দেখতে পার্ে মোহান্ত ধরণের এক একজন ড় সাধু একটি বিরাট ছাতার নীচেই বসে আছেন ও তাঁর শিষ্য ও সহকারীরা তাঁকে ঘিরে ওই ছাতার নীচেই বসে আছেন৷ ওই বড় বড় ছাতাগুলি (সং-ছত্র> ছত্ত> ছত্তা> ছাতা) একদিকে যেমন তাঁদের বৈশিষ্ট্যের পরিচায়ক অন্যদিকে তেমনি তারা রোদ ও অল্প বৃষ্টিপাত থেকে তাঁদের চিয়েও থাকে৷ প্রাচীনকালে তপের্ানে গুরুরা ওই ধরণের ছাতার নীচেই বসতেন আর শিষ্যরা তাঁদের ঘিরে ওই ছাতার নী
পৃথিবীতে মৌলিক জনগোষ্ঠী আছে চারটি–ককেশীয়, মঙ্গোলীয়, অষ্ট্রিক ও নিগ্রো৷ অনেকে অবশ্য সেমিটিক জনগোষ্ঠীকে এর মধ্যে ফেলতে চান না৷ তাদের মতে সেমেটিকরা আলাদা জনগোষ্টী, এরা মধ্যপ্রাচ্যের লোক৷ আবার কারো কারো মতে এরা ককেশীয় ও নিগ্রোদের বিমিশ্রণ৷ ককেশীয়দের তিনটি শাখা রয়েছে–(১) নর্ডিক (Nordic), (২) এ্যালপাইন (Alpine), (৩) ভূমধ্যসাগরীয়৷ ‘নর্ডিক’ কথাটার অর্থ হচ্ছে ‘উত্তুরে’৷ লাতিন ‘নর্ড’ (Nord) কথাটা থেকে ‘নর্ডিক’ শব্দটি এসেছে৷ এ্যালপাইনরা বেশী উত্তরেও নয়, আবার বেশী দক্ষিণেও নয় অর্থাৎ এরা মধ্যদেশীয়, আল্প্স্ পর্বতের সানুদেশের বাসিন্দা৷
রামচন্দ্র নাকি দুর্গাপূজা করেছিলেন--- তোমরা এ ধরণের একটা গল্পও শুণেছ বোধ হয়--- এটার প্রাসঙ্গিকতা কী, সেটা বলি৷ সে সম্বন্ধে বলতে গেলে আগে রামায়ণের কথা বলতে হয়৷ রামায়ণের গল্প ভারত,মালয়েশিয়া আর ইন্দোনেশিয়ার মানুষদের মুখে মুখে চলছে ..দু/চার হাজার বছর নয়, আজ অনেক হাজার বছর ধরে৷ তবে এই রামায়ণকে লিখিত রূপ প্রথম দিয়েছিলেন মহর্ষি বাল্মীকি৷ এই লিখিত রূপ যখন তিনি দিয়েছিলেন সেটা শিবের যুগের* অনেক পরে, বুদ্ধের যুগেরও পরে৷ তার দু’টো প্রমাণ আমাদের হাত রয়েছে৷ তার একটা প্রমাণ হচ্ছে,কোন্ বইটা কত পুরোনো সেটা তার ভাষা দেখে বোঝা যায়৷ ভাষাটা পুরোণো , তা হলে বইটাও পুরোণো৷ ভাষাটা নোতুন, তো বইটাও নোতুন৷ যা রামায়ণ
আমরা সাপকে যত ভীষণ জীব লেই মনে করি না কেন, সাপ আসলে একটি ভীরু স্বভাবের জীব৷ সে সব সময় আত্মরক্ষায় অতি তৎপর থাকে৷ কোন দিক থেকে নেউল (নকুল> নউ>নেউল বর্জিকা> বজ্জিআ> বেজি৷ বাংলায় নেউল ও বেঁজি দুটোই---এর প্রচলিত নাম,ইংরেজীতেmongoose) আসছে, কোন্ দিক থেকে ময়ূর আসছে সেই ভয়েই সে শশব্যস্ত৷ এই চার তাগিদেই সে সর্বদাই রণমুখী হয়ে ফোঁসফোঁস করে৷ কিন্তু দুই একটি ক্ষেত্র বাদে পালাবার সুযোগ পেলে সে তেড়ে না এসে পালিয়েই যায়৷ সাপের ন্যাজে পা পড়লে সে মৃত্যুভয়ে ভীত হয়েই মানুষকে কামড়ায়৷ নির্র্মেক ত্যাগের সময় কিছুকাল চামড়া পাতলা থাকায় সে অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে৷ তাই একটুতেই কামড়ায়৷ স্বভাবগতভাবে কেউটে
ঋগ্বেদীয় ভাষায় ‘ডপ’ একটি প্রাচীন ধাতু৷ সংস্কৃতে এর মানে জড়ো করা, জমিয়ে রাখা, স্তূপাকার করা প্রভৃতি৷ যে বিরাট পুরুষের মধ্যে গুণ-সমাবেশ দেখে মানুষ অবাক বিস্ময়ে বিস্ফারিত নেত্রে তাকিয়ে থাকত---লত, এঁর গুণের শেষ নেই, এঁর এত গুণ যে এঁকে গুণাতীত লাই সঙ্গত, ত্রিভুবনের সব গুণের এই একের মধ্যে সমাবেশ ও সমাহার ঘটেছে---তাই এই বিরাট পুরুষের জন্যে ‘ডপ্’ ধাতু +‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ড’ শব্দ পাচ্ছি তার মানে শিব৷ কবি পদ্মদন্ত’ লছেন---
‘‘অসিতগিরিসমং স্যাৎ কজ্জলং সিন্ধুপাত্রে৷
সুরতরুবরশাখা লেখনীপত্রমুর্বী৷৷
লিখতি যদি গৃহীত্বা সারদা সর্বকালম্৷
(১) ‘ট’ যে কেবল একটি বর্ণবিশেষ তা নয়৷ এটি একটি শব্দও বটে৷ অনেক শব্দের মতই এটিও একটি একাক্ষর শব্দ৷ ‘টস্’ ধাতুর মানে ‘তীক্ষ্ন আওয়াজ করা’৷ ধাতুটি মুখ্যতঃ পরস্মৈপদী হলেও ক্কচিৎ কোথাও কোথাও আত্মনেপদী ব্যবহারও দেখা যায়৷ মানুষ মুখ দিয়ে যে হুইস্লের মত আওয়াজ করে সেজন্যেও সংস্কৃতে ‘টস্’ ধাতু চলবে৷ এই অর্থে ‘টস্’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ট’ শব্দ পাচ্ছি তার ভাবারূঢ়ার্থ হচ্ছে ‘সহসা উত্থিত তীক্ষ্ন ধবনি’৷ আর যোগারূঢ়ার্থে হচ্ছে ‘ধনুক থেকে তির নিক্ষেপের সময় ধনুকের ছিলায় যে শব্দ সৃষ্ট হয় সেই শব্দটি’৷ ধনুকের ছিলার শব্দকে ‘ট’ লি আর তাই থেকেই আমরা পাই ‘টন্’+ কার= টঙ্কার/টংকার৷ তহলে ঝলে ‘ট’ শব্দের একটি অর্
এটি একটি প্রাচীন পারসিক শব্দ৷ হিন্দুস্তানীতেও ব্যবহৃত হয়৷ হিন্দুস্তানী থেকে বাংলায় এসেছে যার মানে ‘ছয়’-এর সমষ্টি (এক্কা, দোক্কা, তেক্কা, চউকা,পঞ্জা,ছক্কা)
‘অশ্বিনীনন্দন ধা তাতে রন৷
প্রাণ করে তার পঞ্জা ছক্কা৷৷’ ---দ্বিজেন্দ্রলাল
‘ছক্কা’ বলতে তাই ছয় দিকবিশিষ্ট ঘুঁটিকেও বোঝায়৷ ‘ছক’ শব্দ থেকেই প্রাচীন বাংলায় ‘ছঁচ’ ও বর্তমান বাংলায় ‘ছাঁচ’ মানেও একটি সীমায়িত বস্তু যার মধ্যে অপেক্ষাকৃত নরম বস্তু ফেললে সেই নরম বস্তুটি তদাকার প্রাপ্ত হয়, যেমন ‘সন্দেশের ছাঁচ’৷
উদ্/ওদ্+ অনট্ = ওদন ৷ ‘ওদন’ মানে যাকে ভেজানো হয়েছে৷ ধানের সংস্কৃত ‘ব্রীহি’, চালের সংস্কৃত ‘তণ্ডুল’ আর ভাতের সংস্কৃত ‘ওদন’৷ ভাত ভিজে জিনিস, তাই তার নাম হয়েছে ‘ওদন’৷ যে মানুষ সৎপথে থেকে অন্ন সংগ্রহ করেন বা অন্ন সংস্থান করেন তাঁর অন্ন পবিত্র অন্ন লে গণ্য হয়ে থাকে৷ কলহজীবী, মৃতকজীবী, পরপিণ্ডভোজী, ধর্মব্যবসায়ী ও সুযোগসন্ধানীর অন্ন অপবিত্র অন্ন লে গণ্য করা হয়ে থাকে৷ যারা মানুষে মানুষে কলহ াধিয়ে দিয়ে অর্থ উপার্জন করে তাদের লা হয় ‘কলহজীবী’৷ এই কলহজীবীর অন্ন অভক্ষ্য লে গণ্যও হয়ে থাকে৷ কারও মৃত্যুর সুযোগ নিয়ে যারা অর্থোপাজন করে (যেমন মৃতদেহকে পিণ্ডদান করে অর্থোপাজন, শ্রাদ্ধে পৌরোহিত্য করে অর্থোপাজ
ৰাংলায় আর একটা কথা রয়েছে ‘হাট’৷ সংস্কৃত ‘হট্ট’ শব্দ থেকে ‘হাট’ শব্দটি এসেছে৷ যেমন পাশাপাশি সাজানো অনেকগুলি হাট, সংস্কৃতে ‘হট্টমালা’৷ ‘হট্টমালার গল্প’ তোমরা অনেকেই নিশ্চয় পড়েছ৷ সংস্কৃতে ৰড় ৰড় হাটকে ৰলে ‘হট্টিক’৷ হট্টূ‘ষ্ণিক্’ প্রত্যয় করে ‘হট্টিক’৷ যদিও বৈয়াকরণিক বিচারে ‘হট্টিক’ মানে ছোট হাট হওয়া উচিত কিন্তু আসলে ৰড় হাট অর্থেই ‘হট্টিক’ শব্দটি ব্যবহার করা হ’ত৷ ‘হট্ট’–এর তদ্ভব ৰাংলা হচ্ছে ‘হাট’৷ যেমন রাজারহাট, বাগেরহাট, মাঝেরহাট প্রভৃতি৷ ‘হট্টিক’ শব্দের ৰাংলা ‘হাটি’৷ যেমন ‘নবহট্টিক’ থেকে ‘নৈহাটি’, ‘নলহট্টিক’ থেকে ‘নলহাটি’, ‘গুবাকহট্টিক’ থেকে ‘গৌহাটি’ (গুয়াহাটি) প্রভৃতি৷ দক্ষিণ ৰাংলায় হাটকে ‘হ
‘চিতা’ শব্দের উত্তর ‘ব্যঞ্’ প্রত্যয় করে ‘চৈত্য’ শব্দ নিষ্পন্ন হচ্ছে৷ ৌেদ্ধ যুগের প্রথা ছিল মহাপুরুষদের চিতাভস্ম সংগ্রহ করে তা একটি প্রস্তর পাত্রে (কোন কোন ক্ষেত্রে মৃৎপাত্রে) রাখা হত৷ ওই সংরক্ষিত চিতাভস্মকে লা হত ধাতু৷ এই ধাতুর ওপর সেকালে অনেক বড় বড় বৌদ্ধ বিহার ও সংঘারাম (শব্দটি সংস্কৃত ‘সংগ্রহম্’ থেকে আসা প্রাকৃত শব্দ৷ এই ‘সংঘারাম’ থেকে আবার ‘সংঘ’ শব্দটি এসেছে৷ মনে রাখা দরকার, ‘সংঘারাম’ ও ‘সংঘ’ শব্দ দুটির কোনটিই তৎসম শব্দ নয়, দুটোই প্রাকৃত৷ যাঁরা কখনো কখনো উক্তি করেন, ‘সংঘে শক্তিঃ কলৌযুগে’ তাঁরা জানেন কি জানি না যে এটি কোন সংস্কৃত উক্তি হ’ল না) তৈরী করা হত৷ চিতাভস্মের স্মৃতিতে নির্মিত এ
সংস্কৃত আম্র>প্রাকৃতে, আম্ব/অম্বা৷ এর থেকে ৰাংলায় ‘আঁৰ’ শব্দটি এসেছে৷ উত্তর ভারতের অধিকাংশ ভাষাতেই এই ‘আম্ব’ বা ‘অম্বা’–জাত ‘আঁৰ’ শব্দটিই প্রচলিত৷ ওড়িষ্যায় আঁৰ (আঁৰ্–), মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের অংশবিশেষে আঁৰা, গুজরাতীতে অম্বো, মারাঠীতে আম্বা (‘পিকলে আম্বে’ মানে পাকা আঁৰ), পঞ্জাৰীতে আম্ব্ (আম্ব্ দ্য অচার), হিন্দীতে ও ৰাঙলার কোন কোন অংশে প্রচলিত ‘আম’ শব্দটি থেকেই ‘আঁৰ’ শব্দটি এসেছে৷ ব্যুৎপত্তিগত বিবর্ত্তনের বিচারে আমের চেয়ে আঁৰ বেশী শুদ্ধ৷ তবে একটি বিবর্ত্তিত শব্দ হিসেৰে আমকেও অশুদ্ধ ৰলা চলৰে না৷ ৰাঙলার মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী, কলিকাতা, ২৪ পরগণা, খুলনা ও যশোরের অংশবিশেষে ‘আঁৰ’ শব্দই প্রচলিত
মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ব্যাকরণ বিজ্ঞান অনুসারে –
‘সৃজন’ শব্দটি ভুল, হবে ‘সর্জন’
তোমরা ভালভাবেই জান ’সৃজন’ শব্দটি ভুল৷ ‘সৃজ’ ধাতু ল্যুট করে পাই ‘সর্জন’–‘সৃজন’ নয়৷ কারও মধ্যে সৃজনী প্রতিভা থাকে না–থাকে সর্জনী–প্রতিভা৷ আমরা ‘উৎসর্জন’, ‘বিসর্জন’–এর ‘সর্জন’ শব্দটি ঠিকই ব্যবহার করি৷ কেবল শব্দটি উপসর্গ রহিত অবস্থায় থাকলে গোলমাল করে থাকি–বলে ফেলি ‘সৃজন’, ‘সৃজনী’৷ এবার থেকে ‘সৃজন’ শব্দটি ব্যবহার কোরো না৷
‘ছাত্রী’ শব্দটি ভুল, হবে ‘ছাত্রা’
পাঠান–মোগল যুগে আগ্রা প্রদেশ ও অযোধ্যা প্রদেশের মিলিত নাম ছিল হিন্দোস্তান বা হিন্দোস্তাঁ (প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি যে ‘স্তান’ বা ‘স্তাঁ’ শব্দটি ফার্সী যার সংস্কৃত প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘স্থান’৷ উর্দ্দুতে এই ফার্সী রীতি অনুসরণ করা হয়৷
‘‘সারে জাঁহাঁসে আচ্ছা হিন্দোস্তাঁ হমারা
হম বুলবুলেঁ হেঁ ইসকী যহ্ গুলিস্তাঁ হমারা’’
মানুষের উদ্ভব পৃথিবীতে কয়েকটি বিশেষ বিশেষ বিন্দুতে হয়েছিল৷ কে আগে আর কে পরে–এই নিয়ে বিশদ আলোচনা না করেও ৰলতে পারি, রাঢ়ভূমিতে মানুষের উদ্ভব অতি প্রাচীন৷ এর চেয়ে প্রাচীনতর মনুষ্য–নিবাসের কোন সন্ধান পাওয়া যায় না৷ পৃথিবীতে যখন অরণ্য এল রাঢ়ের এই কঠিন শিলা, বিবর্তিত শিলা, আগ্ণেয় শিলা ও পাললিক শিলার ওপরে জন্ম নিল নিবিড় অরণ্য৷ সেই অরণ্যই একদিন মানুষ–জনপদ রাঢ়কে প্রাণ–সুধা জুগিয়েছিল, এই অরণ্যই রাঢ়ের নদীগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করত৷ ওই অরণ্যই বরফ–ঢ়াকা পাহাড়গুলি ক্ষয়ে যাবার পরে আকাশের মেঘকে ডেকে আনত রাঢ়ভূমিতে৷ রাঢ়ভূমিতে পর্জন্যদেবের কৃপাবর্ষণ হ’ত অফুরন্ত, অঢ়েল৷ এই আমাদের রাঢ়ভূমি–অনেক সৃষ্টি–স্থিতি–লয়ের জীবন্ত
অনেকে মনে করে থাকেন যে, ‘গ্রৎস’ শব্দটি থেকে ‘গাছ’ কথাটি এসেছে আর ‘গ্রৎস’ মানে হচ্ছে, চলা যার স্বভাব৷ কিন্তু এ ধরনের মানে নেওয়া চলে না, কারণ গাছ কি কখনও চলাফেরা করে? এটি এক ধরনের বিপরীত অলঙ্কার হয়ে গেল৷ এ যেন সেই হাতে মল, পায়ে চুড়ি, কাণে নাকছাবি৷ এ প্রসঙ্গে কবীরের একটি উক্তির কথা মনে পড়ছে৷ সেখানে উল্টো কথা বলা হয়েছে৷ তবে তা’ আসলে উল্টো নয়–
‘‘চলতী কো সব গাড়ী কহে, জ্বলতী দুষকো খোয়া,
রঙ্গীকো নারঙ্গী কহে, যহ্ কবীর কা দোঁহা৷৷’’
ৰাংলায় ‘গাছা’, ‘গাছি’, ‘গাছিয়া’, (‘গেছে’)–এইসব নামে প্রচুর স্থান রয়েছে৷ ৰাংলা ভাষায় এই ‘গাছ’ কথাটার উৎস জানা দরকার৷ গাছের সংস্কৃত প্রতিশব্দ ‘বৃক্ষ’ কিন্তু তাই বলে ৰাংলা ‘গাছ’ শব্দটা সংস্কৃত ‘বৃক্ষ’ থেকে আসে নি বা ‘গাছ’ শব্দটার মূল কোন সংস্কৃত শব্দ নেই৷ ‘গাছ’ শব্দটা এসেছে মাগধী প্রাকৃত ‘গ্রৎস’ শব্দ থেকে৷ ‘গ্রৎস’ মানে যে নড়াচড়া করে না৷ গ্রৎসঞ্ছর্দ্ধমাগধ্ ‘গচ্ছ’ঞ্ছপুরোনো ৰাংলায় ‘গচ্ছা’ঞ্ছবর্তমান ৰাংলায় ‘গাছ’৷ বারশ’ বছরের পুরোনো ৰাংলা কবিতায় আছে–
‘‘ওগগ্র ভত্তা রম্ভা পত্তা গাইক্ক ঘিত্তা দুগ্ধ সজত্তা৷
নালি গচ্ছা মুল্লা মচ্ছা দীজ্জই কন্তা খাএ পুণ্যবন্তা৷’’
অনেক দিন ধরে কোন একটা কাজ করে চললে অথবা কোন কাজ না করলে মানুষের মনে কুসংস্কার দানা ৰাঁধে৷ তাই দেখা যায় যখন অক্ষর আবিষ্কৃত হয়েছিল তার পরেও মানুষ বেদ ও অন্যান্য শাস্ত্রাদিকে অক্ষরৰদ্ধ বা লিপিবদ্ধ করেনি৷ কেননা তারা মনে করত যে, যেহেতু পূর্বপুরুষেরা লেখেননি সেহেতু বেদকে অক্ষরের মধ্যে আৰদ্ধ করা অন্যায় ও অবাঞ্ছনীয়৷ আসলে তখন যে অক্ষরই আবিষ্কৃত হয়নি এ কথাটা তাঁরা বেমালুম ভুলে থেকেছিলেন৷ অনেক পরবর্ত্তীকালে উত্তর–পশ্চিম ভারতে কশ্মীরের পণ্ডিতেরা যখন সারদা লিপিতে লেখা শুরু করেন তখন তাঁরা দেখলেন চারটে বেদকে একসঙ্গে মুখস্থ রাখা অসম্ভব৷ শুধু তাই নয় ততদিন বেদের ১০৮ অংশের মধ্যে ৫২টাই লুপ্ত হয়ে গেছে৷ তাই তাঁর
‘কৃষক’ শব্দটি ভুল, হবে ‘কর্ষক’
এমনিতে যাঁরা চাষবাস নিয়ে থাকেন তাঁদের জন্যে সংস্কৃত ভাষায় বেশি প্রচলিত শব্দ দু’টি রয়েছে–কৃষীবল ও কর্ষক৷ ‘কর্ষক’ শব্দটি কৃষ ধাতু থেকে উৎপন্ন৷ যাঁরা এই কর্ষককে ‘কৃষক’ বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা না জেনেই এই ভুল করেছেন৷ আর যাঁরা আজও ‘কৃষক’ লেখেন তাঁরা ভুলকে ভুল না জেনেই লেখেন৷ আমরা ‘আকর্ষক’ ‘বিকর্ষক’ বলবার সময় ঠিক বলি কিন্তু কেন বুঝি না ‘কর্ষক’ বলবার সময় ভুল করে কৃষক বলে ফেলি৷
‘অপসংস্কৃতি’ শব্দটি ভুল, হবে ‘অসংস্কৃতি’
সেকালের বড় বড় জানোয়াররা অথর্ব হয়ে যেত তারা তখন একটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে ভূমিশয্যা গ্রহণ করত ও কয়েকদিন পরে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করত৷ কোন কোন পণ্ডিতের মতে ওইসকল স্থানে মৃত পশুর অস্থি ও বসা জমে যেত৷ স্থানটি সমুদ্রের নিকটবর্তী ত্রিজলা এলাকা হলে সমুদ্রগর্ভে বা ৰৃহৎ হ্রদগর্ভস্থ স্থানে যে জলপাক বা কুম্ভীপাক বা দহ সৃষ্টি হত শেষ পর্যন্ত তাদের দেহাবশেষ ওই দহে ঘুরপাক খেতে খেতে ভাসা দ্বীপে বা সারগাসো সী-তে (সরসাগর) পরিণত হত৷ এই সারগাসো সী বা সর-সাগরের উপরিস্থিত মাটি জলের বেশ গভীরেও যেত৷ অতীতে প্রাণীদেহ থেকে যেখানে সারগাসো সী তৈরী হত, বেশ কিছু পণ্ডিতের মতে আজ আমরা সেখানেই ভূ-গর্ভ থেকে তেল পাচ্ছি৷
পিরালী ছাড়া অন্য যে সব ব্রাহ্মণ গোড়ার দিককার কলকাতায় এসেছিলেন তাঁদের অনেকেই মহারাজ নন্দকুমারের ফাঁসির পর কলকাতা ছেড়ে হাওড়া জেলার ব্রাহ্মণ–প্রধান বৃহৎ গ্রাম বালীতে চলে যায়৷ (ইংরেজরা নৌ–চলাচলের সুবিধার জন্যে বালী গ্রামেই ভাগীরথী থেকে সরস্বতী নদী পর্যন্ত একটি সংযোজক খাল কাটান৷ এই খাল কাটার ফলে বালী গ্রামের উত্তরাংশ অবশিষ্ট গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ পরে হুগলী জেলা থেকে কেটে যখন নতুন হাওড়া জেলা তৈরী হয় তখন মূল বালী গ্রামটি নবগঠিত হাওড়া জেলার অন্তর্গত হয়, আর বিচ্ছিন্ন ওতোরপাড়া গ্রামটি হুগলী জেলাতেই থেকে যায়)৷ কলকাতায় ব্রহ্মহত্যা হয়েছিল বলে তাঁরা এই স্থান ত্যাগ করে গঙ্গার পশ্চিমকূলে (‘গঙ্গার প
দক্ষিণ বাংলায় প্রাচীনকালে হোগ্লা দিয়েই ম্যাড়াপ তৈরী করা হত৷ দক্ষিণ বাংলার নোনা জলে এককালে আপনা থেকেই প্রচুর হোগ্লা গাছ জন্মাত৷ ইংরেজরা যখন এদেশের দখল নিয়েছিলেন তখন দক্ষিণ বাংলায় বিশেষ করে খুলনা (তখন যশোরের অন্তর্গত ছিল), ২৪ পরগণা (তখন নদীয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল) ও মেদিনীপুর (তখন নাম ছিল হিজলী) হোগলা ও গোল গাছে ভর্ত্তি ছিল৷ ওই হোগ্লা ও গোলপাতা দিয়ে কেবল যে ম্যাড়াপ বা মণ্ডপ তৈরী হত তাই–ই নয়, দরিদ্র মানুষের ঘরও তৈরী হত৷ দক্ষিণ বাংলার নাবিকেরা যখন সমুদ্র যাত্রা করতেন তখন যেমন তাঁরা সঙ্গে করে জালা–ভর্ত্তি মিষ্টি জল নিয়ে যেতেন তেমনি নিয়ে যেতেন হোগলার স্তুপ যা শুধু নৌকোতেই নয় ভিন্ন দেশের, ভিন্ন মাটিতে
‘কৃষ্ণ’ শব্দের একটি অর্থ হ’ল মহর্ষি বেদব্যাস৷ মহর্ষি বেদব্যাস প্রয়াগে গঙ্গা–যমুনার সঙ্গমস্থলের নিকটে যমুনা থেকে উত্থিত একটি কৃষ্ণ দ্বীপে জালিক–কৈবর্ত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন৷ যমুনা নদীর নিকটস্থ মৃত্তিকা হ’ল কৃষ্ণ কর্পাস মৃত্তিকা (ব্ল্যাক কটন সয়েল)৷ এই জন্যে যমুনার জলকেও কালো রঙের বলে মনে হয়৷ যমুনার যে চরটিতে মহর্ষি ব্যাস জন্ম গ্রহণ করেন সেটিরও ছিল কৃষ্ণমৃত্তিকা৷ ভারতের ইতিহাসে ব্যাস নামে কয়েক জনই খ্যাতনামা পুরুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন (উত্তর মীমাংসার বাদরায়ণ ব্যাস)৷ তাঁদের থেকে পৃথক করার জন্যে এঁকে বলা হত কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস অর্থাৎ কালো রঙের দ্বীপের অধিবাসী ব্যাস৷ এই কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস মহাভার
চাল ঃ যা চেলে পাওয়া যায় (চালিয়া) তাকে ৰাংলায় আমরা ‘চাল’ ৰলি৷ চাল যে কেবল ধানেরই হয় তা নয়৷ ধনেকে টুকরো করে কুলোতে চেলে যা পাই তাকে আমরা ‘ধনের চাল’ ৰলি৷
যাতে করে চালা হয় অর্থাৎ চাল তৈরী করা হয় তা-ই ‘চালুনি’৷ আজকাল ৰাঙলার মানুষ গমের আটা খাচ্ছে৷ তাই চালুনি চেলে চালের ৰদলে চোখলা পাচ্ছে৷ তাই ‘চাল’, ‘চালুনি’ দুই-ই তাদের অর্থ হাহাতে বসেছে৷ সংস্কৃত ‘চল্’ ধাতুর উত্তর ণিজন্তে ‘অনট্’ প্রত্যয় করে ‘স্ত্রিয়াম্ ঈপ্’ করে ‘চালনী’ শব্দ নিষ্পন হতে পারে৷ ‘চালুনি’ এই ‘চালনী’ শব্দের বিকৃত রূপ হিসেৰে ধরা যেতে পারে৷ তাই ৰাংলায় চালুনি/চালুনী দু’টি ৰানানই চলতে পারে৷
তোমরা জান জীবজন্তুরা মুখ্যতঃ তৃণভোজী (graminivorous) ও মাংসভোজী (carnivorous) –এই দু’টি মুখ্য শাখায় বিভক্ত৷ তৃণভোজীদের দাঁতগুলো থাকে মুক্তোর মত ধবধবে শাদা ও সাজানো৷ যারা মাংসভোজী জীব তাদের দাঁতগুলি হয় খোঁচা খোঁচা, ঈষৎ হল্দেটে অথবা লালচে মেশানো হলদেটে৷ মুখের দুই পাশে থাকে মাংস কাটবার কর্ত্তন দন্ত (canine teeth)৷
ভারত ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বহুজনপদের নামকরণ করা হয়েছে ‘পুর’, ‘নগর’ ইত্যাদি শব্দ যোগ করে৷ ছোট শহরকে সংস্কৃতে বলা হ’ত ‘পুর’ (প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি, ‘শহর’ শব্দটা কিন্তু ফার্সী), আর বড় বড় শহরকে বলা হত ‘নগর’৷ উভয়ের মধ্যে তফাৎ ছিল এই যে নগরের চারিদিক প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকত, সংস্কৃতে যাকে বলা হ’ত ‘নগরবেষ্টনীঁ’৷ এই নগরবেষ্টনীর মধ্যে যাঁরা বাস করতেন তাঁদের বলা হ’ত ‘নাগরিক’৷ আজকাল ‘নাগরিক’ শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে যে অর্থে ইংরেজী ‘সিটিজেন’ কথাটি ব্যবহার করা হচ্ছে তার সঙ্গে প্রাচীন ‘নাগরিক’ শব্দের কোন সম্পর্ক নেই কেননা ‘নাগরিক’ মানে নগরের বাসিন্দা, অন্যদিকে ‘সিটিজেন’ বলতে বোঝায় দেশের যে কোন অধিবাসী–তিনি
সংস্কৃত আম্রঞ্ছপ্রাকৃতে, আম্ব/অম্বা৷ এর থেকে ৰাংলায় ‘আঁৰ’ শব্দটি এসেছে৷ উত্তর ভারতের অধিকাংশ ভাষাতেই এই ‘আম্ব’ বা ‘অম্বা’–জাত ‘আঁৰ’ শব্দটিই প্রচলিত৷ ওড়িষ্যায় আঁৰ (আঁৰ্–), মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের অংশবিশেষে আঁৰা, গুজরাতীতে অম্বো, মারাঠীতে আম্বা (‘পিকলে আম্বে’ মানে পাকা আঁৰ), পঞ্জাৰীতে আম্ব্ (আম্ব্ দ্য অচার), হিন্দীতে ও ৰাঙলার কোন কোন অংশে প্রচলিত ‘আম’ শব্দটি থেকেই ‘আঁৰ’ শব্দটি এসেছে৷ ব্যুৎপত্তিগত বিবর্ত্তনের বিচারে আমের চেয়ে আঁৰ বেশী শুদ্ধ৷ তবে একটি বিবর্ত্তিত শব্দ হিসেৰে আমকেও অশুদ্ধ ৰলা চলৰে না৷ ৰাঙলার মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী, কলিকাতা, ২৪ পরগণা, খুলনা ও যশোরের অংশবিশেষে ‘আঁৰ’ শব্দই প্রচলিত৷
একটু আগেই বলেছি, ‘খর’ শব্দের একটি অর্থ ‘রাক্ষস’৷ যতদূর মনে হয় প্রাচীনকালের আর্যরা অষ্ট্রিক–নিগ্রোয়েড বা দ্রাবিড়গোষ্ঠীভুক্ত মানুষদের রাক্ষস বলে অভিহিত করতেন৷ কারণ, তাঁদের নিজেদের লেখাতেই ধরা পড়ে যে রাক্ষসদেরও উন্নতমানের সভ্যতা ছিল৷ তারা বড় বড় শহর–নগরীর পত্তন করেছিল....তারা ধর্মাচরণ করত....তারা শিবভক্ত ছিল....তারা শিবের আশীর্বাদে অমিত প্রতিভা ও শক্তিসম্পদের অধিকারী হয়েছিল৷ তাদের হেয় করবার জন্যে বিভিন্ন পুস্তকে তাদের সম্বন্ধে বহু অবাঞ্ছিত মন্তব্য কর হয়েছে৷ তবে হ্যাঁ, একথাটি ঠিকই যে তারা আর্যদের বেদ ও যাগ–যজ্ঞের বিরোধী ছিল৷ আর সম্ভবতঃ যজ্ঞে মূল্যবান খাদ্যবস্তুর অপচয় হ’ত বলে তারা কোথাও যজ্ঞানুষ
‘কুণ্’ ধাতুূঘঞ্ প্রত্যয় করে আমরা ‘কোণ’ শব্দ পাচ্ছি৷ ‘কোণ’ শব্দের অর্থ হ’ল দুই বা ততোহধিকের মাঝখানে চাপা পড়ে যে ঠিক ভাবে ধবনি দিতে পারছে না.......যথাযথ ভাবে অভিব্যক্ত হচ্ছে না৷ যোগারূঢ়ার্থে ‘কোণ’ বলতে বুঝি দুইটি বাহু •side— যেখানে অভিন্ন •common— বিন্দুতে মিলছে সেখানে ওই অভিন্ন বিন্দুকে ছুঁয়ে যে ভূম্যংশ •angle— তৈরী হচ্ছে তা’৷ জ্যামিতির কোণ–বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছিলেন আদি বিদ্বান প্রথম দার্শনিক মহর্ষি কপিল৷ তিনিই প্রথম বলেছিলেন একটি সমকোণী ত্রিভুজে মোট ১৮০ ডিগ্রী কোণ আছে ও সমত্রিকোণী ত্রিভুজে কোণগুলি ৬০ ডিগ্রী হয়ে থাকে৷ এ নিয়ে তিনি অতিরিক্ত কিছু বলেননি–হয়তো বা দার্শনিক গূঢ়তত্ত্ব নিয়ে অত্য
লিচু ভারতে এসেছিল সম্ভবতঃ বৌদ্ধযুগে৷ ভারত ও চীন উভয়েরই দেশজ ফল হচ্ছে অংশুফলম৷ ফলটির অনেক নামের মধ্যে একটি নাম হচ্ছে অংশুফল্৷ এই আঁশফল গাছের পাতা দেখতে লিচু পাতার মত নয়–কিছুটা গোলাকার.......লিচুর চেয়ে একট ছোটও৷ গাছ কিন্তু লিচু গাছের চেয়ে অনেক বড় হয়.....বট, পাকুড়, অশ্বত্থের মত হয়ে যায় বীজ লিচুর চেয়ে কিছুটা ছোট কিছুটা চ্যাপ্ঢা হয়৷ ফল মিষ্টি হলেও তাতে উৎকট ঝাঁঝ ও গন্ধ থাকে৷ ছোটরা ভালবেসে খেলেও বড়রা পছন্দ করেন না৷ এই আঁশফল বাংলার একটি সাবেকি ফল–ব্যাঞ্জালাইটিস বর্গীয়৷ চীন এই আঁশফল নিয়ে চর্চা বা গবেষণা করে তৈরী করেছিল লিচু৷ বর্তমান পৃথিবীতে চীনের লিচুই সবচেয়ে বড় আকারের, অধিক রসযুক্ত ও সুস্বাদু৷ চী
দক্ষিণ বাংলায় প্রাচীনকালে হোগ্লা দিয়েই ম্যাড়াপ তৈরী করা হত৷ দক্ষিণ বাংলার নোনা জলে এককালে আপনা থেকেই প্রচুর হোগ্লা গাছ জন্মাত৷ ইংরেজরা যখন এদেশের দখল নিয়েছিলেন তখন দক্ষিণ বাংলায় বিশেষ করে খুলনা (তখন যশোরের অন্তর্গত ছিল), ২৪ পরগণা (তখন নদীয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল) ও মেদিনীপুর (তখন নাম ছিল হিজলী) হোগলা ও গোল গাছে ভর্ত্তি ছিল৷ ওই হোগ্লা ও গোলপাতা দিয়ে কেবল যে ম্যাড়াপ বা মণ্ডপ তৈরী হত তাই–ই নয়, দরিদ্র মানুষের ঘরও তৈরী হত৷ দক্ষিণ বাংলার নাবিকেরা যখন সমুদ্র যাত্রা করতেন তখন যেমন তাঁরা সঙ্গে করে জালা–ভর্ত্তি মিষ্টি জল নিয়ে যেতেন তেমনি নিয়ে যেতেন হোগলার স্তুপ যা শুধু নৌকোতেই নয় ভিন্ন দেশের, ভিন্ন মাটিতে
‘কৃষ্ণ’ শব্দের একটি অর্থ হ’ল মহর্ষি বেদব্যাস৷ মহর্ষি বেদব্যাস প্রয়াগে গঙ্গা–যমুনার সঙ্গমস্থলের নিকটে যমুনা থেকে উত্থিত একটি কৃষ্ণ দ্বীপে জালিক–কৈবর্ত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন৷ যমুনা নদীর নিকটস্থ মৃত্তিকা হ’ল কৃষ্ণ কর্পাস মৃত্তিকা (ব্ল্যাক কটন সয়েল)৷ এই জন্যে যমুনার জলকেও কালো রঙের বলে মনে হয়৷ যমুনার যে চরটিতে মহর্ষি ব্যাস জন্ম গ্রহণ করেন সেটিরও ছিল কৃষ্ণমৃত্তিকা৷ ভারতের ইতিহাসে ব্যাস নামে কয়েক জনই খ্যাতনামা পুরুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন (উত্তর মীমাংসার বাদরায়ণ ব্যাস)৷ তাঁদের থেকে পৃথক করার জন্যে এঁকে বলা হত কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস অর্থাৎ কালো রঙের দ্বীপের অধিবাসী ব্যাস৷ এই কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস মহাভার
সংস্কৃত আম্র । প্রাকৃতে আম্ব/অম্বা৷ এর থেকে ৰাংলায় ‘আঁৰ’ শব্দটি এসেছে৷ উত্তর ভারতের অধিকাংশ ভাষাতেই এই ‘আম্ব’ বা ‘অম্বা’–জাত ‘আঁৰ’ শব্দটিই প্রচলিত৷ ওড়িষ্যায় আঁৰ (আঁৰ্–, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের অংশবিশেষে আঁৰা, গুজরাতীতে অম্বো, মারাঠীতে আম্বা (‘পিকলে আম্বে’ মানে পাকা আঁৰ), পঞ্জাৰীতে আম্ব্ (আম্ব্ দ্য অচার), হিন্দীতে ও ৰাঙলার কোন কোন অংশে প্রচলিত ‘আম’ শব্দটি থেকেই ‘আঁৰ’ শব্দটি এসেছে৷ ব্যুৎপত্তিগত বিবর্ত্তনের বিচারে আমের চেয়ে আঁৰ বেশী শুদ্ধ৷ তবে একটি বিবর্ত্তিত শব্দ হিসেৰে আমকেও অশুদ্ধ ৰলা চলৰে না৷ ৰাঙলার মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী, কলিকাতা, ২৪ পরগণা, খুলনা ও যশোরের অংশবিশেষে ‘আঁৰ’ শব্দই প্রচলিত৷
‘গৃহচটক’ শব্দের অর্থ হল চড়ুই পাখী৷ চটক গ্গ চড গ্গ চডুই গ্গ চড়ুই৷ চটকী গ্গ চডইগ্গ চডুই গ্গ চড়ুই৷ বাঙলায় ‘চড়ুই’ ও ‘চড়ুই’ দুটি শব্দই চলে৷ আমাদের পশ্চিমরাঢ়ের গ্রামের মানুষ অনেকেই ‘চটই’বলে থাকে৷ ‘চটই’ শব্দটি ‘চটক’ শব্দ থেকে এসেছে৷ চড়ই কে বিহারের মগহী ভাষায় বলা হয় ‘গর্বৈয়া’৷ মৈথিলী ভাষায় ‘গর্বৈয়াও’ চলে ‘ফুদ্দিও’ চলে৷ ভোজপুরীতে বলা হয় ‘ফুরগুদ্দি’৷ অঙ্গিকা ভাষায় টিকটিকিকে বলে টিকটিকিয়া৷
চটক পাখী দুইভাগে বিভক্ত যারা পাকা বাড়িতে কার্নিশে ঘর বানায় তারা হল ‘গৃহচটক’ বা ‘চড়ুই পাখী’৷চ চড়ুই পাখী পায়রার মতো খড়কুটো দিয়ে ভালো ঘর তৈরী করতে পারে না৷ কিন্তু অধিকাংশ পাখী পারে৷
সংস্কৃত আম্রঞ্ছপ্রাকৃতে, আম্ব/অম্বা৷ এর থেকে ৰাংলায় ‘আঁৰ’ শব্দটি এসেছে৷ উত্তর ভারতের অধিকাংশ ভাষাতেই এই ‘আম্ব’ বা ‘অম্বা’–জাত ‘আঁৰ’ শব্দটিই প্রচলিত৷ ওড়িষ্যায় আঁৰ (আঁৰ্–), মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের অংশবিশেষে আঁৰা, গুজরাতীতে অম্বো, মারাঠীতে আম্বা (‘পিকলে আম্বে’ মানে পাকা আঁৰ), পঞ্জাৰীতে আম্ব্ (আম্ব্ দ্য অচার), হিন্দীতে ও ৰাঙলার কোন কোন অংশে প্রচলিত ‘আম’ শব্দটি থেকেই ‘আঁৰ’ শব্দটি এসেছে৷ ব্যুৎপত্তিগত বিবর্ত্তনের বিচারে আমের চেয়ে আঁৰ বেশী শুদ্ধ৷ তবে একটি বিবর্ত্তিত শব্দ হিসেৰে আমকেও অশুদ্ধ ৰলা চলৰে না৷ ৰাঙলার মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী, কলিকাতা, ২৪ পরগণা, খুলনা ও যশোরের অংশবিশেষে ‘আঁৰ’ শব্দই প্রচলিত৷
লিচু ভারতে এসেছিল সম্ভবতঃ বৌদ্ধযুগে৷ ভারত ও চীন উভয়েরই দেশজ ফল হচ্ছে অংশুফলম৷ ফলটির অনেক নামের মধ্যে একটি নাম হচ্ছে অংশুফল্৷ এই আঁশফল গাছের পাতা দেখতে লিচু পাতার মত নয়–কিছুটা গোলাকার.......লিচুর চেয়ে একট ছোটও৷ গাছ কিন্তু লিচু গাছের চেয়ে অনেক বড় হয়.....বট, পাকুড়, অশ্বত্থের মত হয়ে যায় বীজ লিচুর চেয়ে কিছুটা ছোট কিছুটা চ্যাপ্ঢা হয়৷ ফল মিষ্টি হলেও তাতে উৎকট ঝাঁঝ ও গন্ধ থাকে৷ ছোটরা ভালবেসে খেলেও বড়রা পছন্দ করেন না৷ এই আঁশফল বাংলার একটি সাবেকি ফল–ব্যাঞ্জালাইটিস বর্গীয়৷ চীন এই আঁশফল নিয়ে চর্চা বা গবেষণা করে তৈরী করেছিল লিচু৷ বর্তমান পৃথিবীতে চীনের লিচুই সবচেয়ে বড় আকারের, অধিক রসযুক্ত ও সুস্বাদু৷ চী
দক্ষিণ বাংলায় প্রাচীনকালে হোগ্লা দিয়েই ম্যাড়াপ তৈরী করা হত৷ দক্ষিণ বাংলার নোনা জলে এককালে আপনা থেকেই প্রচুর হোগ্লা গাছ জন্মাত৷ ইংরেজরা যখন এদেশের দখল নিয়েছিলেন তখন দক্ষিণ বাংলায় বিশেষ করে খুলনা (তখন যশোরের অন্তর্গত ছিল), ২৪ পরগণা (তখন নদীয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল) ও মেদিনীপুর (তখন নাম ছিল হিজলী) হোগলা ও গোল গাছে ভর্ত্তি ছিল৷ ওই হোগ্লা ও গোলপাতা দিয়ে কেবল যে ম্যাড়াপ বা মণ্ডপ তৈরী হত তাই–ই নয়, দরিদ্র মানুষের ঘরও তৈরী হত৷ দক্ষিণ বাংলার নাবিকেরা যখন সমুদ্র যাত্রা করতেন তখন যেমন তাঁরা সঙ্গে করে জালা–ভর্ত্তি মিষ্টি জল নিয়ে যেতেন তেমনি নিয়ে যেতেন হোগলার স্তুপ যা শুধু নৌকোতেই নয় ভিন্ন দেশের, ভিন্ন মাটিতে
‘কৃষ্ণ’ শব্দের একটি অর্থ হ’ল মহর্ষি বেদব্যাস৷ মহর্ষি বেদব্যাস প্রয়াগে গঙ্গা–যমুনার সঙ্গমস্থলের নিকটে যমুনা থেকে উত্থিত একটি কৃষ্ণ দ্বীপে জালিক–কৈবর্ত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন৷ যমুনা নদীর নিকটস্থ মৃত্তিকা হ’ল কৃষ্ণ কর্পাস মৃত্তিকা (ব্ল্যাক কটন সয়েল)৷ এই জন্যে যমুনার জলকেও কালো রঙের বলে মনে হয়৷ যমুনার যে চরটিতে মহর্ষি ব্যাস জন্ম গ্রহণ করেন সেটিরও ছিল কৃষ্ণমৃত্তিকা৷ ভারতের ইতিহাসে ব্যাস নামে কয়েক জনই খ্যাতনামা পুরুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন (উত্তর মীমাংসার বাদরায়ণ ব্যাস)৷ তাঁদের থেকে পৃথক করার জন্যে এঁকে বলা হত কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস অর্থাৎ কালো রঙের দ্বীপের অধিবাসী ব্যাস৷ এই কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস মহাভার
জল থেকে উঠেছে, খুব পুরোনো নয় এমন জনপদকে ‘ডাঙ্গা’ বলা হয়৷ পূর্ব রাঢ়ে ও ৰাগড়িতে এই ‘ডাঙ্গা’ শব্দ যুক্ত অনেক জায়গা রয়েছে৷ যেমন, ‘ৰেলডাঙ্গা’৷ কলকাতাতেই আছে ‘নারকোলডাঙ্গা’৷ বর্ত্তমানে কলকাতায় যে জায়গাটাকে কলেজ স্কোয়ার ৰলে সেই জায়গাটার আগেকার নাম ছিল পটোলডাঙ্গা অর্থাৎ সমুদ্রবক্ষ থেকে ডাঙ্গা জেগে উঠলে লোকে ওখানে পটোলের চাষ করত৷ যাই হোক, ‘ডাঙ্গা’ শব্দযোগে কোন জনপদের নাম দেখলেই ৰুঝে নিতে হৰে যে ওই জনপদটি জলের তলা থেকে উঠেছে৷ জলের দেশ নয়, সেখানে ‘ডাঙ্গা’ খুব কম পাওয়া যাৰে৷ অৰশ্য উঁচু জমি এই অর্থেও অনেক সময় ‘ডাঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহূত হয়৷ রাঢ়ের উঁচু জমি ৰলতে ‘ডাঙ্গাল’ শব্দটি আর নীচু জমি ৰোঝাতে ‘নামাল’ শব্
সে আজ অনেকদিন আগেকার কথা৷ সেটা সম্ভবতঃ খ্রীষ্টপূর্ব ৫৩৪ সাল৷ রাঢ়ের রাজকুমার বিজয় সিংহ জলপথে সিংহলে আসেন–সঙ্গে নিয়ে আসেন সাত শত–র মত অনুচর৷ তখন রাঢ়ের রাজধানী ছিল সিংহপুর (বর্তমানে হুগলী জেলার সিঙ্গুর)৷ আর বন্দর ছিল সিংহপুরেরই নিকটবর্তী একটি স্থানে৷ পরবর্তীকালে সেই স্থানটির নাম হয়ে যায় সিংহলপাটন (স্থানটি সিঙ্গুরেরই কাছে)৷ বিজয় সিংহ লঙ্কা জয় করেন৷ তিনি ও তাঁর অনুচরেরা স্থায়ীভাবে লঙ্কায় বসবাস করেন৷ এঁরাই হলেন বর্তমান সিংহলী জনগোষ্ঠীর পূর্ব–পুরুষ৷ এই সিংহলীরা চালচলনে রীতিনীতিতে, আচারে ব্যবহারে বাঙালীদের খুবই নিকট৷ মুখাবয়ব বাঙালীদের মতই৷ কথা না বললে কে বাঙালী কে সিংহলী চেনা দায়৷ সিংহলী ভাষা বাংলা
সেকালে মানুষ বাস করত মুখ্যতঃ বনভূমিতে উচ্চবৃক্ষের শীর্ষে – পাখীর বাসার মত বাসা তৈরী করে অথবা পর্বত দেহের গুহায়৷ পর্বত ও অরণ্যানী – দুয়েরই বৈদিক ভাষায় অন্যতম নাম গোত্র৷ গোড়ার দিকে এক–একটি গোত্রের প্রধান হতেন এক–একজন নারী – গোত্রমাতা৷ পরবর্ত্তীকালে এল পুরুষ–প্রাধান্যের যুগ৷ গোত্রপ্রধান হতে লাগলেন এক–একজন ঋষি (পুরুষ)৷ যে ঋষির কাছে অগ্ণি* থাকত সেই ঋষির গোত্রীয় মানুষেরা সেজন্যে বিশেষ গৌরববোধ করতেন৷ অগ্ণি–রক্ষাকারী ঋষিকে সাগ্ণিক বা অগ্ণিহোত্রী বলা হ’ত৷ অগ্ণিকে তারা দেবতা জ্ঞানে পূজা করত৷ তাই অগ্ণির সন্তুষ্টি বিধানের জন্যে উত্তম মানের আহার্য অগ্ণিকে আহুতি দিতেন৷ এই কাজকে তাঁরা ‘হবন’ বলতেন৷ এই হবন
ঋগ্বেদ মুখ্যতঃ স্তুতি সম্বন্ধীয় হলেও তাতেও অন্যান্য কথা ও কথনিকা রয়েছে৷ সেই সকল কথা ও কথনিকার সকল অংশ সমান আধ্যাত্মিক মূল্য বহন না করলেও তারা সুপ্রাচীন মানব ঐতিহ্যের প্রতিভূ......ক্রমঃদ্রুতিতে অগ্রসৃত মানব–মননের তথা সমাজ–সংরচনার একটি আলেখ্য৷ সেদিক দিয়ে বিচারে ঋগ্বেদ ভাষা, সাহিত্য ও অভিব্যক্তির জগতে বিশেষ মূল্য বহন করে৷ ঋগ্বেদীয় যুগে লিপি ছিল না সত্য কিন্তু ধবন্যাত্মক অক্ষর ও আক্ষরিক ব্যাহূতি তথা ধবনিবিক্ষেপ.....প্রক্ষেপ ও উপন্যাস–রীতি (উপস্থাপিত করবার পদ্ধতি) ছিল৷ ঋগ্বেদে বিভিন্ন অক্ষরের জন্যে স্বতন্ত্র উচ্চারণ–রীতিও প্রচলিত ছিল যা ঋগ্বেদের অনুগামীরা পরবর্তীকালে গুরুপ্রমুখাৎ শিখে নিতেন৷ আমা
লিচু ভারতে এসেছিল সম্ভবতঃ বৌদ্ধযুগে৷ ভারত ও চীন উভয়েরই দেশজ ফল হচ্ছে অংশুফলম৷ ফলটির অনেক নামের মধ্যে একটি নাম হচ্ছে অংশুফল্৷ এই আঁশফল গাছের পাতা দেখতে লিচু পাতার মত নয়–কিছুটা গোলাকার.......লিচুর চেয়ে একট ছোটও৷ গাছ কিন্তু লিচু গাছের চেয়ে অনেক বড় হয়.....বট, পাকুড়, অশ্বত্থের মত হয়ে যায় বীজ লিচুর চেয়ে কিছুটা ছোট কিছুটা চ্যাপ্ঢা হয়৷ ফল মিষ্টি হলেও তাতে উৎকট ঝাঁঝ ও গন্ধ থাকে৷ ছোটরা ভালবেসে খেলেও বড়রা পছন্দ করেন না৷ এই আঁশফল বাংলার একটি সাবেকি ফল–ব্যাঞ্জালাইটিস বর্গীয়৷ চীন এই আঁশফল নিয়ে চর্চা বা গবেষণা করে তৈরী করেছিল লিচু৷ বর্তমান পৃথিবীতে চীনের লিচুই সবচেয়ে বড় আকারের, অধিক রসযুক্ত ও সুস্বাদু৷ চী
শব্দ তৈরীর যে প্রবণতা মানুষের মধ্যে রয়েছে ভাষাশৈলী ও ভাষার বিবর্তনে তার মূল্য অপরিসীম৷ ভারত ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বহু জনপদের নামকরণ করা হয়েছে ‘পুর’, ‘নগর’ ইত্যাদি শব্দ যোগ করে৷ ছোট শহরকে সংস্কৃতে বলা হত ‘পুর’ (প্রসঙ্গত বলে রাখি, ‘শহর’ শব্দটা কিন্তু ফারসী)৷ আর বড় বড় শহরকে বলা হত ‘নগর’৷ উভয়ের মধ্যে তফাৎ ছিল এই যে নগরের চারিদিক প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকত, সংস্কৃতে যাকে বলা হত ‘নগর বেষ্টনী’৷ এই নগর বেষ্টনীর মধ্যে যাঁরা বাস করতেন তাঁদের বলা হ’ত ‘নাগরিক’৷ আজকাল নাগরিক শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে যে অর্থে ইংরেজী ‘সিটিজেন’ কথাটি ব্যবহার করা হচ্ছে তার সঙ্গে প্রাচীন ‘নাগরিক’ শব্দের কোন সম্পর্ক নেই৷ কেননা নাগর
ৰাঙলা তথা পূর্ব ভারতের একটি ক্ষুদ্রাকার পাখী হচ্ছে শ্যামা৷ ছোট এই পাখিটি দেখতে তেমন সুন্দর না হলেও এর কন্ঠস্বর আকর্ষক৷ এই পাখীটিরও নাম কালিকা৷ সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতায় আছে---
‘‘কোথায় ডাকে দোয়েল শ্যামা
ফিঙে গাছে গাছে নাচে রে,
কোথায় জলে মরাল চলে
মরালী তার পিছে পিছে৷৷’’
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের রচিত আমাদের প্রতিবেশী পশু ও পক্ষী গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত)
ৰাঙলার একটি ৰৃহৎ অংশ জলের দেশ৷ এই দেশের যে সমস্ত অঞ্চলে বড় বড় নদী বয়ে গেছে সে সমস্ত অঞ্চলে কোথাও কোথাও নদী বাঁক নিয়েছে (কিষাণগঞ্জ মহকুমায় এ ধরণের একটি স্থানের নামই হচ্ছে দীঘলবাঁক৷ নামেতেই স্থানটির পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে৷ অনেক শিক্ষিত ভদ্রলোককেও স্থানটির নাম উচ্চারণ করতে শুণেছি ‘ডিগাল ব্যাঙ্ক’) ও এরই ফলে বাঁকের কাছে জলের তলায় ঘুর্ণীর সৃষ্টি হয়েছে৷ এইসব জায়গা নৌকা বা জাহাজের পক্ষে বিপজ্জনক৷ যাইহোক, কৃষ্ণনগরের কাছে জলঙ্গী নদী যেখানে বাঁক (সংস্কৃত, বক্র>বাংক>বাঁকা)নিয়েছে সেখানেও নদীতে এইরূপ একটি ঘুর্ণী ছিল৷ সেকালে কলকাতা থেকে জলঙ্গী নদীর পথে পদ্মায় পৌঁছে সেখান থেকে ঢ়াকা যাওয়া হ’ত জলপথে৷ ওই ঘু
মিষ্টি কুমড়ো বা লাল কুমড়ো বাইরে থেকে এসেছে (ভারতের সাবেকী জিনিস নয়গ্গ৷ তাই এর পুরাণোক্ত বা সংস্কৃত কোন নাম নেই৷ এদেশে এসেছে আনুমানিক ৪০০ বছর আগে৷ এর ইংরেজী নাম ‘পাম্কিন’৷ ভারতের বিশেষ করে রাঢ়ের* মাটি লাল কুমড়োর পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় এর চাষ হু হু করে ৰেড়ে যাচ্ছে৷ যে ইয়ূরোপ থেকে একদিন লাল কুমড়ো এসেছিল, সেই ইয়ূরোপের চাষীরাই এখন শেওড়াফুলীর হাট থেকে লাল কুমড়োর ৰীজ কেনে৷ বিদেশ থেকে জলযানে অর্থাৎ ডিঙ্গি করে এসেছিল বলে রাঢ়ের কোন কোন অংশে একে ডিঙ্গি–লাউ বা ডিংলা বা ডিংলে বলে৷ এই লাউ কুমড়োকে কোথাও কোথাও মিষ্টি কুমড়ো, কোথাও বা সূয্যি কুমড়ো, আবার ময়মনসিং অঞ্চলে কোথাও কোথাও বিলাতী লাউও বলে৷
কিছুকাল আগেও কেউ কেউ বিধবা নারীর নামের সঙ্গে ‘শ্রীমতী’ বা ‘দেবী’ না লিখে ‘শ্রীমত্যা’ বা ‘দেব্যা’ লিখতেন৷ এরকম লেখা ব্যাকরণের দিক দিয়ে ত্রুটিপূর্ণ তো বটেই, নারীর পক্ষে মর্যাদা হানিকরও৷ কারণ, বিধবা কী এমন অপরাধ করেছে যে জন্যে তাঁর শ্রীমতীত্ব বা দেবীত্বকে এই ভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হবে বৈয়াকরণিক বিচারে ‘শ্রীমত্যা’ মানে ‘শ্রীমতীর দ্বারা’, ‘দেব্যা’ মানে ‘দেবীর দ্বারা’৷ অথবা–সধবা–বিধবা নির্বিশেষে সব নারীর নামের সঙ্গেই ‘শ্রীমতী’ বা ‘দেবী’ শব্দ ব্যবহূত হতে পারে৷ এতে কোন সামাজিক বাধাও নেই, আবার বৈয়াকরণিক আপত্তিও নেই৷ ইংরেজী ‘মিস’ ত্তন্ব্দব্দগ্গ শব্দের অনুকরণে বাঙলায় অধবা মেয়েদের নামের আগে যে ‘কুমারী’ শব্দ
মানুষের উদ্ভব পৃথিবীতে কয়েকটি বিশেষ বিশেষ বিন্দুতে হয়েছিল৷ কে আগে আর কে পরে–এই নিয়ে বিশদ আলোচনা না করেও ৰলতে পারি, রাঢ়ভূমিতে মানুষের উদ্ভব অতি প্রাচীন৷ এর চেয়ে প্রাচীনতর মনুষ্য–নিবাসের কোন সন্ধান পাওয়া যায় না৷ পৃথিবীতে যখন অরণ্য এল রাঢ়ের এই কঠিন শিলা, বিবর্তিত শিলা, আগ্ণেয় শিলা ও পাললিক শিলার ওপরে জন্ম নিল নিবিড় অরণ্য৷ সেই অরণ্যই একদিন মানুষ–জনপদ রাঢ়কে প্রাণ–সুধা জুগিয়েছিল, এই অরণ্যই রাঢ়ের নদীগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করত৷ ওই অরণ্যই বরফ–ঢ়াকা পাহাড়গুলি ক্ষয়ে যাবার পরে আকাশের মেঘকে ডেকে আনত রাঢ়ভূমিতে৷ রাঢ়ভূমিতে পর্জন্যদেবের কৃপাবর্ষণ হ’ত অফুরন্ত, অঢ়েল৷ এই আমাদের রাঢ়ভূমি–অনেক সৃষ্টি–স্থিতি–লয়ের জীবন্ত
‘‘আমাদের সেনা যুদ্ধ করেছে সজ্জিত চতুরঙ্গে
দশাননজয়ী রামচন্দ্রের প্রপিতামহের সঙ্গে৷’’
আমরা এই পত্রিকায় Vote’কে বোট লিখছি এই কারণে যে ইংরেজী V’ শব্দটির যথার্থ উচ্চারণ বাংলার অন্তস্থ-‘ব’৷ কিন্তু বর্তমান বাংলা বর্ণমালায় বর্গীয় - ব ও অন্তঃস্থ ‘ব’ একইভাবে লেখা হয়--- যা যুক্তিসঙ্গত নয়৷ কারণ বর্গীয় ‘ব’ --- অর্র্থৎ (প,ফ -এর পর যে ব’ তার উচ্চারণ ইংরেজী B’ -এর মতো৷ তাই মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের অভিমত, বর্গীয় ‘ব’--- কে ‘ৰ’ -এইভাবে লেখা উচিত, আর অন্তঃস্থ ‘ব’ কে ‘ব’ যেমন লেখা হয় সেভাবেই লেখা উচিত৷
সে আজ অনেকদিন আগেকার কথা৷ সেটা সম্ভবতঃ খ্রীষ্টপূর্ব ৫৩৪ সাল৷ রাঢ়ের রাজকুমার বিজয় সিংহ জলপথে সিংহলে আসেন–সঙ্গে নিয়ে আসেন সাত শত–র মত অনুচর৷ তখন রাঢ়ের রাজধানী ছিল সিংহপুর (বর্তমানে হুগলী জেলার সিঙ্গুর)৷ আর বন্দর ছিল সিংহপুরেরই নিকটবর্তী একটি স্থানে৷ পরবর্তীকালে সেই স্থানটির নাম হয়ে যায় সিংহলপাটন (স্থানটি সিঙ্গুরেরই কাছে)৷ বিজয় সিংহ লঙ্কা জয় করেন৷ তিনি ও তাঁর অনুচরেরা স্থায়ীভাবে লঙ্কায় বসবাস করেন৷ এঁরাই হলেন বর্তমান সিংহলী জনগোষ্ঠীর পূর্ব–পুরুষ৷ এই সিংহলীরা চালচলনে রীতিনীতিতে, আচারে ব্যবহারে বাঙালীদের খুবই নিকট৷ মুখাবয়ব বাঙালীদের মতই৷ কথা না বললে কে বাঙালী কে সিংহলী চেনা দায়৷ সিংহলী ভাষা বাংলা
ইতিহাস–প্রসিদ্ধ নগরী ছিল ‘রোমা’ ত্মপ্সপ্প্ত্রগ্গ৷ তাকে ভুল করে ‘রোম’ বলার সার্থকতা কোথায়? প্রপার নাউনকে এভাবে পরিবর্তন করা কি যুক্তিসঙ্গত? প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় ও পরবর্তীকালে আরবী ভাষায় যে শহরটিকে চিরকালই ‘কাহিরা’ বলে আসা হয়েছে তাকে ‘কাইরো’ বলব কোন যুক্তিতে? যে দেশটিতে আরবীতে ‘ফিলিস্তিন’ বলা হত ও হিব্রুতে বলা হয় ‘প্যালেষ্টাইন’ তাকে না হয় আমরা নিজেদের সুবিধামত যে কোন একটি নামেই ডাকতে পারি৷ কিন্তু যে শহরটি কলিচূণ ও কাতার দড়ির ব্যবসা উপলক্ষ্যে ‘কলিকাতা’ নাম পেয়েছিল তাকে তাড়াতাড়িতে বলতে গিয়ে কথ্য ভাষায় না হয় কলকাতা–ই বললুম, কিন্তু ইংরেজীতে ‘ক্যালকাটা’ (Calcutta) বলব কোন যুক্তিতে?
ফরাসীতে ইংল্যান্ডের দক্ষিণাংশে প্রাচীনকালে যে মস্তবড় শহরটিকে ‘লঁদ্রে’ (Londres), ফরাসী উচ্চারণ ‘লঁদ্রে’) বলা হত, স্কটল্যান্ডের মানুষেরা ঠিক উচ্চারণ না করতে পেরে অথবা অন্য যে কোন কারণেই হোক, শহরটিকে ‘লাণ্ডান’ (Lundun) বলতেন৷ আজ সেই ‘লাণ্ডান’ শব্দটি বিবর্ত্তিত হয়ে ‘লণ্ডন’ (Lundun) হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ আমি বলছি না নতুনভাবে আবার শহরটিকে ‘লঁদ্রে’ বলা হোক৷ তবে শহরটির ইতিহাসে এই আসল নামটিকে অবশ্যই মনে রাখা দরকার৷ যে শহরটির আসল নাম সুদীর্ঘকাল ধরেই ছিল ‘মস্কোবা’ (Moscova) তাকে নিজেরা ঠিক উচ্চারণ করতে না পেরে যদি ‘মস্কো’ (Moscow) বলি সেটাকে খুব সঙ্গত কাজ বলে মনে করতে পারছি না৷ ইংরেজী বাদে বাংলা সহ অন্যান্য
পাঠান–মোগল যুগে আগ্রা প্রদেশ ও অযোধ্যা প্রদেশের মিলিত নাম ছিল হিন্দোস্তান বা হিন্দোস্তাঁ (প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি যে ‘স্তান’ বা ‘স্তাঁ’ শব্দটি ফার্সী যার সংস্কৃত প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘স্থান’৷ উর্দ্দুতে এই ফার্সী রীতি অনুসরণ করা হয়৷
‘‘সারে জাঁহাঁসে আচ্ছা হিন্দোস্তাঁ হমারা
হম বুলবুলেঁ হেঁ ইসকী যহ্ গুলিস্তাঁ হমারা’’
(মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর শব্দ চয়নিকা–২৬ খণ্ড গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে ‘নারীর মর্যাদা’ বিষয়ক অনেক কিছুই বলেছেন৷ ওই গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ সংকলিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে৷ –সম্পাদক)
দেশজ শব্দে ‘ট’ যথাযথভাবেই বজায় থাকে৷ আর ‘ড’ বা ‘ড়’ মৌলিক শব্দ হিসেবেই থেকে যায়৷ যেমন, আজ ভুলোর সঙ্গে ভোঁদার আড়ি হয়ে গেল৷ ওরা বলছে, ওরা আর একসঙ্গে মার্ৰেল খেলবে না, একটা পেয়ারাও আর কামড়াকামড়ি করে খাবে না৷ গোপনে কান পেতে শোনাকেও আড়িপাতা বলে৷ এটিও বাংলা দেশজ শব্দ৷
তোমরা জান এমন কিছু কিছু জায়গা পৃথিবীতে রয়েছে যেখানে এককালে কোন বিশেষ মহান পুরুষ বাস করতেন অথবা যেখানে একাধিক মহাপুরুষের অবস্থিতি ছিল, যেখানে আজও লোকেরা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান৷ যেমন ধরো মুঙ্গের শহরের কষ্টহারিণী ঘাটে মিথিলার নামজাদা কবি বিদ্যাপতির সঙ্গে বাঙলার নামজাদা কবি চণ্ডীদাসের সাক্ষাৎকার হয়েছিল৷ সেই কষ্টহারিণী ঘাটটি আজ যে কেবল ধর্মপিপাসু মানুষেরই তীর্থক্ষেত্র তাই নয়, সাহিত্যের ব্যাপারেও যাঁরা একটু–আধটু উঁকি–ঝুঁকি মারেন তাঁরাও স্থানটিকে একবার দেখে যান......শোনা যায় সাক্ষাৎকারের সময় চণ্ডীদাস ছিলেন যুবক, বিদ্যাপতি ছিলেন বৃদ্ধ৷ উভয়ের মধ্যে বয়সের পার্থক্য ছিল অনুমানিক চল্লিশ বৎসর৷ বিদ্যাপতি
সাধারণতঃ দেখা যায় যাঁদের আর্থিক অবস্থা ভাল, বিশেষ করে যাঁরা ভাল ও পুষ্টিকর খাদ্য খান, তাঁদের বংশ ৰৃদ্ধি হয় না৷ তাঁদের বংশৰৃদ্ধির হার আশ্চর্যজনক ভাবে কমে যায়৷ মা ষষ্ঠীর কৃপা গরীবের ঘরে আর্থিক স্বচ্ছলতার দরুন কয়েকটি বিশেষ বর্গের ঘরে সন্তানের সংখ্যা খুব কম হয়ে থাকে৷ আর তাই পোষ্যপুত্র তাঁরাই গ্রহণ করেন৷ তোমরা খোঁজ নিলেই জানবে যে ৰড় ৰড় ধনীদের, রাজা–রাজড়াদের অনেকেই ছিলেন অপুত্রক৷ পোষ্য নিয়েই তাঁদের বংশধারা বজায় রাখতে হয়েছিল৷ যেকালে কায়স্থদের অবস্থা ভাল ছিল, সেকালে তাঁদের সংখ্যাৰৃদ্ধি ঘটত খুব কম৷ বণিকদের সংখ্যা ৰৃদ্ধি এখনও খুব কমই ঘটে থাকে৷ ৰড় ৰড় চাষীদেরও পুত্রকন্যার সংখ্যা কম৷ পৃথিবীর জ্ঞানী–গুণী
গঙ্গার উভয় তীরে উর্বর জমিতে গাজর খুব ভাল জন্মায়৷ আশ্বিন মাসে জমিতে চার বার চাষ দিয়ে গাজর লাগাতে হবে৷ শুকনো গোবর সার বা কম্পোস্ট ব্যবহার করতে হবে৷ বার ঘন্টা ৰীজকে জলে ভিজিয়ে রেখে তারপর শুকিয়ে নিয়ে জমিতে লাগাতে হবে৷ পৌষ মাসের শেষ সপ্তাহে বা মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহে গাজর তৈরী হয়ে যাবে৷ ব্রোকোলির মতই গাজর উষ্ণ আৰহাওয়ায় জন্মাবে তবে ৰীজ হবে না৷ তাই এ সম্বন্ধে গবেষণা হওয়া উচিত৷
শুধুমাত্র কুড়ি ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হলেই শিশলের পক্ষে যথেষ্ট৷ তাই শুষ্ক অঞ্চলে শিশল ভালই জন্মায়৷ শিশলের উৎপত্তি পূর্ব আফ্রিকায়৷ ৰাংলার বীরভূম জেলা থেকে শিশলের গাছ আনানো যেতে পারে৷ শিশল ক্যাকটাসের মত স্যাকুল্যান্ট প্রজাতির গাছ৷ গাছের নীচ থেকেই এক পুরু ও শক্ত দণ্ড ওপরে ওঠে আর তার মাথায় ফুল আসে৷ এর পাতা থেকে যে তন্তু পাওয়া যায় তা দিয়ে দড়ি তৈরী হয়৷ এখানে শিশল প্রচুর সংখ্যায় আছে৷
পথিতরু হিসেবে শিশল লাগানো উচিত বা রাস্তার ধারে বা নদীর তীরে অন্য ৰড় গাছের মধ্যিখানে বা জমির সীমানা-রেখায় লাগানো যেতে পারে৷ নদীর উভয় তীরে যেখানেই ভূমিক্ষয়ের সম্ভাবনা আছে সেখানেই শিশল গাছ লাগানো উচিত৷
কৌশিতকী ছিলেন মহর্ষি অগসেত্যর পত্নী৷ মহর্ষি অগস্ত্য তাঁর জীবন কাটিয়ে দিয়েছিলেন আদর্শের প্রচারে, মানবিকতার সম্প্রসারণে৷ তাঁকে এই কাজে প্রতি পলে বিপলে সাহায্য করে থাকতেন তাঁর স্ত্রী কৌশিতকী৷ কৌশিতকী ছিলেন অত্যন্ত বিদুষী মহিলা ও ব্যাপক মানব হৃদয়ের অধিকারিণী৷ কখনও অগস্ত্য তাঁকে নির্দেশনা দিয়ে কাজ করাতেন, কখনও বা তিনিও নব নব ভাব–তত্ত্ব উদ্ভাবনের দ্বারা মহর্ষি অগস্ত্যকে নির্দেশনা দিতেন৷ এই ভাবে উভয়ে মিলেমিশে কাজ করে গেছলেন মানব জীবনে দেবত্ব ভাবের উত্তরণের জন্যে৷
কোণূর্ক>কোণার্ক৷ ‘অর্ক’ মানে সূর্য্য৷ ‘কোণার্ক’ শব্দের একটি অর্থ হ’ল সূর্য্যরশ্মি৷ ‘কোণার্ক’ শব্দের অপর অর্থ হ’ল সৌরকরের প্রতিফলন বা প্রতিবিম্বন৷ সমুদ্রতীরস্থিত সুপ্রসিদ্ধ ‘কোণার্ক’ মন্দিরটিও একটি সৌর মন্দির৷ ভারতের বিভিন্ন স্থানে শাকদ্বীপী ব্রাহ্মণেরা (কেউ কেউ শাকল দ্বীপীও বলেন৷ এঁরা আসলে দক্ষিণ রাশিয়ার স্যাকডোনিয়া অর্থাৎ শাকদ্বীপ–এর অধিবাসী ছিলেন৷ পরে ধর্মগত চাপে তাঁরা দেশত্যাগী হতে বাধ্য হন ও ভারতে আশ্রয় নেন) ছিলেন জ্যোতিষ চর্চাকারী৷ এঁরা একাধারে ছিলেন জ্যোতিষী ও জ্যোতির্বিদ৷ গ্রহদেবতা সূর্য্য ছিলেন এঁদের উপাস্য অর্থাৎ ধর্মমতে এঁরা ছিলেন সৌর৷ ভারতের যে সকল অঞ্চলে এককালে যথেষ্ট সংখ্যা
‘কোরক’ শব্দের অপর অর্থ হ’ল গন্ধসার–ফার্সীতে ‘ঈৎর্’ (বাংলায় ‘আতর’ শব্দটি চলে)৷
চর ধাতুর অর্থ খেতে খেতে চলা৷ গোরু খেতে খেতে চলে৷ তাই আমরা বলি ‘‘গোরু চরছে’’৷ কিন্তু ‘মানুষ চলছে’৷ তোমরা যদি কখনো প্রকাশ্যে বা লুকিয়ে চানাচুর-ৰাদাম খেতে খেতে চল সেই অবস্থায় তোমরাও কিন্তু চরছ, লোকে জানুক বা না জানুক৷
সভ্যতার আদিযুগে মানুষের আজকালকার মত সকালের জলখাবার দুপুরের খাবার বিকেলের জলখাবার ও রাত্রির খাবার কোনও নির্দিষ্ট সময় ছিল না৷ ভোজ্য খাবারের কোনও নিশ্চিততাও ছিল না৷ তাই অনেক সময় তারা রাস্তায় খাদ্য সংগ্রহ করতে পারলে চলতে চলতেও খেত৷ তাই আজকের মানুষের তুলনায় সেকালের মানুষ বেশী চরত৷ সম্ভবতঃ সেই জন্যেই বেদে ‘চরৈবেতি’, ‘চরৈবেতি’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে৷
সংস্কৃত আম্রঞ্ছপ্রাকৃতে, আম্ব/অম্বা৷ এর থেকে ৰাংলায় ‘আঁৰ’ শব্দটি এসেছে৷ উত্তর ভারতের অধিকাংশ ভাষাতেই এই ‘আম্ব’ বা ‘অম্বা’–জাত ‘আঁৰ’ শব্দটিই প্রচলিত৷ ওড়িষ্যায় আঁৰ (আঁৰ্–), মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের অংশবিশেষে আঁৰা, গুজরাতীতে অম্বো, মারাঠীতে আম্বা (‘পিকলে আম্বে’ মানে পাকা আঁৰ), পঞ্জাৰীতে আম্ব্ (আম্ব্ দ্য অচার), হিন্দীতে ও ৰাঙলার কোন কোন অংশে প্রচলিত ‘আম’ শব্দটি থেকেই ‘আঁৰ’ শব্দটি এসেছে৷ ব্যুৎপত্তিগত বিবর্ত্তনের বিচারে আমের চেয়ে আঁৰ বেশী শুদ্ধ৷ তবে একটি বিবর্ত্তিত শব্দ হিসেৰে আমকেও অশুদ্ধ ৰলা চলৰে না৷ ৰাঙলার মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী, কলিকাতা, ২৪ পরগণা, খুলনা ও যশোরের অংশবিশেষে ‘আঁৰ’ শব্দই প্রচলিত৷
ৰাংলায় ‘গাছা’, ‘গাছি’, ‘গাছিয়া’, (‘গেছে’)–এইসব নামে প্রচুর স্থান রয়েছে৷ ৰাংলা ভাষায় এই ‘গাছ’ কথাটার উৎস জানা দরকার৷ গাছের সংস্কৃত প্রতিশব্দ ‘বৃক্ষ’ কিন্তু তাই বলে ৰাংলা ‘গাছ’ শব্দটা সংস্কৃত ‘বৃক্ষ’ থেকে আসে নি বা ‘গাছ’ শব্দটার মূল কোন সংস্কৃত শব্দ নেই৷ ‘গাছ’ শব্দটা এসেছে মাগধী প্রাকৃত ‘গ্রৎস’ শব্দ থেকে৷ ‘গ্রৎস’ মানে যে নড়াচড়া করে না৷ গ্রৎসঞ্ছর্দ্ধমাগধ্ ‘গচ্ছ’ঞ্ছপুরোনো ৰাংলায় ‘গচ্ছা’ঞ্ছবর্তমান ৰাংলায় ‘গাছ’৷ বারশ’ বছরের পুরোনো ৰাংলা কবিতায় আছে–
‘‘ওগগ্র ভত্তা রম্ভা পত্তা গাইক্ক ঘিত্তা দুগ্ধ সজত্তা৷
নালি গচ্ছা মুল্লা মচ্ছা দীজ্জই কন্তা খাএ পুণ্যবন্তা৷’’
একটু আগেই বলেছি, ‘খর’ শব্দের একটি অর্থ ‘রাক্ষস’৷ যতদূর মনে হয় প্রাচীনকালের আর্যরা অষ্ট্রিক–নিগ্রোয়েড বা দ্রাবিড়গোষ্ঠীভুক্ত মানুষদের রাক্ষস বলে অভিহিত করতেন৷ কারণ, তাঁদের নিজেদের লেখাতেই ধরা পড়ে যে রাক্ষসদেরও উন্নতমানের সভ্যতা ছিল৷ তারা বড় বড় শহর–নগরীর পত্তন করেছিল....তারা ধর্মাচরণ করত....তারা শিবভক্ত ছিল....তারা শিবের আশীর্বাদে অমিত প্রতিভা ও শক্তিসম্পদের অধিকারী হয়েছিল৷ তাদের হেয় করবার জন্যে বিভিন্ন পুস্তকে তাদের সম্বন্ধে বহু অবাঞ্ছিত মন্তব্য কর হয়েছে৷ তবে হ্যাঁ, একথাটি ঠিকই যে তারা আর্যদের বেদ ও যাগ–যজ্ঞের বিরোধী ছিল৷ আর সম্ভবতঃ যজ্ঞে মূল্যবান খাদ্যবস্তুর অপচয় হ’ত বলে তারা কোথাও যজ্ঞানুষ
(মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর শব্দ চয়নিকা–২৬ খণ্ড গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে ‘নারীর মর্যাদা’ বিষয়ক অনেক কিছুই বলেছেন৷ ওই গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ সংকলিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে৷ –সম্পাদক)
শৈব প্রথা
মেদিনীপুরের যেটা কথ্য বাংলা সেটা কিন্তু ৰাংলা ভাষার বেশ একটা পুরোনো রূপ৷ ৰাংলার সাংস্কৃতিক জীবনেও মেদিনীপুরের স্থান খুবই উচ্চে৷ শত লাঞ্ছনার ভেতর দিয়ে দিন কাটালেও মেদিনীপুরের মানুষের প্রাণের স্পন্দন কখনও থেমে যায়নি৷ প্রাক্–পাঠান যুগে তো বটেই, পাঠান যুগে ও মোগল যুগেও এমন কি ইংরেজ আমলের গোড়ার দিকেও সেখানে দেখেছি চুয়াড়–বিদ্রোহ–স্বাধীনতার প্রচণ্ড আন্দোলন, তারপর ’৪২ সালের প্রাণ–কাঁপানো নাড়া–দেওয়া আন্দোলন৷ এই মেদিনীপুরের পশ্চিম দিকটা, মানে ঝাড়গ্রাম মহকুমার কথ্য ভাষা মধ্য রাঢ়ীয় উপভাষা৷ ওরই লাগোয়া ময়ূরভঞ্জ ও সিংভূমেও ওই একই উপভাষার প্রচলন রয়েছে৷ এই মেদিনীপুরেরই দক্ষিণাংশে রসুলপুর নদীর মোহনা থেকে সু
‘অপসংস্কৃতি’ শব্দটি ভুল, হবে ‘অসংস্কৃতি’
‘সংস্কৃতি’র বিপরীত শব্দ ‘অপকৃতি’ চলতে পারে, তবে ‘অপসংস্কৃতি’ চলতে পারে না৷ কারণ ‘সংস্কৃতি’ (সম্–কৃ ক্তিন্ ঞ্চ সংস্কৃতি যার মানে যা মানুষকে সূক্ষ্মত্বের দিকে, রুচিবোধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়) মানেই ‘কৃতি’–র উন্নতাবস্থায় অধিরোহণ৷ ‘অপ’ মানে অবনত অবস্থা৷ একসঙ্গে দু’টো চলবে কি করে এ সোণার পাথর বাটি হয়ে গেল যে আবার ‘অপকৃতি’–র মানে ‘কুকার্য’ও হয়৷ তাই সংস্কৃতির বিপরীত শব্দ হিসেবে বরং ‘অসংস্কৃতি’ শব্দটা চলতে পারে৷ কেননা ‘সম্’ উপসর্গ সাধারণতঃ ভাল বা শুভ অর্থে প্রযোজ্য হয়৷ তাই ‘অপসংস্কৃতি’ শব্দটি অশুদ্ধ৷
‘ছাত্রী’ শব্দটি ভুল, হবে ‘ছাত্রা’
আমরা পৃথিবীর–পৃথিবী আমাদের দেশ৷ আরও ভালভাবে বলতে গেলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডই আমাদের দেশ৷ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এক কোণে পৃথিবী নামে যে ছোটো গ্রহটা আছে–সেই পৃথিবীর এক কোণে বাঙালী নামে যে জনগোষ্ঠী আছে সেই জনগোষ্ঠীও অতীতের অন্ধকার থেকে এগোতে এগোতে, তার অন্ধকারের নিশা শেষ হয়ে গেছে, তার জীবনে নোতুন সূর্যোদয় এসেছে৷ এবার তাকে এগিয়ে চলতে হবে৷ চলার পথে বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই৷ কমা, কোলন, সেমিকোলনের কোনো যতি চিহ্ণ নেই৷ তাকে এগিয়ে চলতে হবে৷ এগিয়ে সে চলেছে, চলবে৷ চলটাই তার জীবন–ধর্ম, অস্তিত্বের প্রমাণ, অস্তিত্বের প্রতিভূ হ’ল চলা৷ কেউ যদি চলতে চলতে থেমে যায়, বুঝতে হবে সে জীবনের ধর্মকে খুইয়ে বসেছে৷ সব কিছুই চলছে
আবার দেখো, যেটা মানস–রাজনৈতিক শোষণ হ্মব্দম্ভন্তুড়প্স–হ্ম্ অথবা রাজনৈতিক স্তরের শোষণ, সেটা কীরকম ভাবে হয়৷ একটা জনগোষ্ঠী আরেকটা জনগোষ্ঠীর ওপর সবলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে৷ তাদের পেছনে মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে যে, ওই শোষিত জনগোষ্ঠী বা শোষিত দেশ (এখানে দেশের চেয়েও জনগোষ্ঠী বড় কথা)–ওই ভূমিটাকে আমি কাঁচামালের যোগানদার হিসেবে নোব কাঁচামাল তৈরী হবে আমার এক্তিয়ারের মধ্যে, আর ওই শোষিত ভূমিটাকে আমার তৈরী মালের বাজার হিসাবে পাবো৷ যে সমস্ত জনগোষ্ঠী আর্থিক দিক থেকে অনুন্নত, তারা শক্তিশালী জনগোষ্ঠী অথবা শক্তিশালী দেশের কাছে মাথা বিকিয়ে দিতে বাধ্য হয়–হয় শক্তির অভাবের জন্যে, ভীতম্মন্যতার ফলে, অথবা আর্থ
মাতৃভাষা লতে কী বোঝায়? মাতৃভাষা হচ্ছে সেই ভাষা যাতে খোলামেলা পরিবেশে আমরা সহজে স্বচ্ছল ভাবে ও স্বতঃস্ফূর্ত্ত ভাবে আমাদের ভর্া ব্যক্ত করতে পারি, যেমন ভাবে আমরা আমাদের মায়ের মত অন্তরঙ্গ জনের সঙ্গে কথোপথনের মধ্য দিয়ে ভাব বিনিময় করি৷ উদাহরণ স্বরূপ, পূর্ণিয়া জেলার একজন মানুষ তার নিকটতম ন্ধুর সঙ্গে অঙ্গিকা ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষাতে কথা লর্ে না৷
কোণূর্কঞ্চকোণার্ক৷ ‘অর্ক’ মানে সূর্য্য৷ ‘কোণার্ক’ শব্দের একটি অর্থ হ’ল সূর্য্যরশ্মি৷ ‘কোণার্ক’ শব্দের অপর অর্থ হ’ল সৌরকরের প্রতিফলন বা প্রতিবিম্বন৷ সমুদ্রতীরস্থিত সুপ্রসিদ্ধ ‘কোণার্ক’ মন্দিরটিও একটি সৌর মন্দির৷ ভারতের বিভিন্ন স্থানে শাকদ্বীপী ব্রাহ্মণেরা (কেউ কেউ শাকল দ্বীপীও বলেন৷ এঁরা আসলে দক্ষিণ রাশিয়ার স্যাকডোনিয়া অর্থাৎ শাকদ্বীপ–এর অধিবাসী ছিলেন৷ পরে ধর্মগত চাপে তাঁরা দেশত্যাগী হতে বাধ্য হন ও ভারতে আশ্রয় নেন) ছিলেন জ্যোতিষ চর্চাকারী৷ এঁরা একাধারে ছিলেন জ্যোতিষী ও জ্যোতির্বিদ৷ গ্রহদেবতা সূর্য্য ছিলেন এঁদের উপাস্য অর্থাৎ ধর্মমতে এঁরা ছিলেন সৌর৷ ভারতের যে সকল অঞ্চলে এককালে যথেষ্ট সংখ্যা শ
‘কোরক’ শব্দের অপর অর্থ হ’ল গন্ধসার–ফার্সীতে ‘ঈৎর্’ (বাংলায় ‘আতর’ শব্দটি চলে)৷
আজ ককেশীয় রক্ত ও মঙ্গোলীয় রক্তের মিশ্রণ ঘটায় তাঁদের গাত্রবর্ণে পরিবর্তন অবশ্যই এসেছে, আকারে প্রকারে তফাৎ অবশ্যই এসেছে৷ কিন্তু মুখ্যতঃ আকারে রাঢ়ী৷ জাত–বাঙাঙ্গলীরা যদি হয় খাঁটি সোণা, তা হলে তথাকথিত উচ্চ–বর্ণীয়েরা বিশেষ করে কায়স্থরা সেই সোণার ওপর একটি চক্চকে ধরনের মিনের কাজ ন্দ্বুত্রপ্পন্দ্বপ্তন্দ্ব্ ন্ধপ্সপ্তস্তুগ্গ৷
কুলাল শব্দের আরেকটি অর্থ হচ্ছে-শিল্পগত বা ভাবগত বা আদর্শগত ব্যাপারে যাঁর বৈদগ্দ্যিক স্বাতন্ত্র রয়েছে ও যিনি তদ্ অনুযায়ী পরিকল্পনা করে এগিয়ে চলেছেন..............
ভারতের স্বাধীনতার প্রাক্কালে যে উদগ্র কুলাল চেতনা এখানকার জনমতকে আলোড়িত, আন্দোলিত ও প্রমথিত করেছিল সেটা ছিল রাজনৈতিক জগতে সুভাষ বোসের কৌলালিক ভূমিকা৷ যাঁরা বিচার-বিমর্শে নিরপেক্ষ হয়ে থাকতে ভালবাসেন তাঁদের আজ জিনিসটা অনুধাবন করার দিন এসেছে৷
প্রায় ৮০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর কোথাও কঠিন পদার্থ বলে কিছু ছিল না৷ গ্রহটি তখন ছিল এক জ্বলন্ত গ্যাসপিণ্ড৷ পৃথিবীর স্থলভাগ সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ২৩০ কোটি বছর আগে৷ টারসিয়ারি যুগের শেষাশেষি ও ক্রেটারিয়ান যুগের গোড়ার দিকে পৃথিবীর বুকে গণ্ডোয়ানাল্যাণ্ডের প্রথম উদ্ভব হয়েছিল৷ সে সময় পৃথিবীর মধ্যভাগ ছিল জলময়৷
ৰাংলা ভাষায় ৰহুল–প্রচলিত ‘গরজ’ শব্দটি আসলে ফারসী মূলজাত৷ শব্দটি ‘গরজ’ নয়–‘গর্জ্’৷ তোমরা ৰাংলা উচ্চারণে ঢ়েলে একে ‘গরজ’ করে নিয়েছ, যেমন তৰলা ৰাজাতে গিয়ে দ্রুত লয়কে ‘জলদ’ করে দিয়েছে৷ শব্দটি ‘জলদ’ নয়–‘জল্দ্’৷ উর্দু ফারসীতে প্রচলিত ‘খুদগর্জী’ শব্দের সঙ্গে তোমরা কেউ কেউ হয়তো পরিচিতও৷ শব্দটি ‘খুদগরজী’ নয়–‘খুদগর্জী’৷
‘গরজ’ অশুদ্ধ....‘গর্জ্’ শুদ্ধ, কিন্তু তাই ৰলে ‘ৰরজ’ অশুদ্ধ–‘ৰরোজ’ শুদ্ধ এমনটা ভেবে বসো না৷ তবে ৰানানে ‘ৰরোজ’ না লিখে ‘ৰরজ’ লেখাই সঙ্গত, কারণ শব্দটির উদ্ভব হয়েছে ৰরূজনূড এই সূত্র থেকে৷ এ ব্যাপারে সেই মজার পৌরাণিক গল্পটা জান তো৷
হাজরা ঃ বাংলায় ব্যবহূত ‘হাজরা’ শব্দটি একটা সামরিক র্যাঙ্ক বা পদবিশেষ৷ এক সহস্র (ফার্সীতে, ‘হজার’) সৈনিকের যিনি অধিপতি তিনি হলেন ‘হজারা’৷ ভুল করে একেই বলা হয় ‘হাজরা’৷ তেমনি আসলে ফার্সী শব্দটা হচ্ছে ‘হজারিবাগ’৷ বাংলায় যখন ‘হাজারিবাগ’ বলি তখন কিন্তু কাউকেই হাসতে দেখি না অর্থাৎ ভুল উচ্চারণটাই মেনে নেওয়া হয়েছে৷
বাঙলা তথা পূর্ব ভারতের একটি ক্ষুদ্রাকার পাখী হচ্ছে শ্যামা৷ ছোট এই পাখিটি দেখতে তেমন সুন্দর না হলেও এর কন্ঠস্বর আকর্ষক৷ এই পাখীটিরও নাম কালিকা৷ সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতায় আছে---
‘‘কোথায় ডাকে দোয়েল শ্যামা
ফিঙে গাছে গাছে নাচে রে,
কোথায় জলে মরাল চলে
মরালী তার পিছে পিছে৷৷’’
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের রচিত আমাদের প্রতিবেশী পশু ও পক্ষী গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত)
বর্তমানে সেমেটিক ভাষা হিব্রু ইস্রায়েলের সরকারী ভাষা, কিন্তু সেখানকার অধিবাসীদের ঘরের ভাষা নয়৷ এই ভাষাটির ইস্রায়েল দেশ থেকে মৃত্যু হয়েছিল বেশ কয়েক শতাব্দী পূর্বেই৷ তার পর থেকে বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী ইহুদীরা তাঁদের ধর্মভাষা ও সাংসৃক্তিক ভাষা হিসেবেও হিব্রুকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু আটপউরে ভাষা হিসেবে হিব্রুকে বাঁচানো যায়নি৷ সাম্প্রতিককালে তাঁরা বিভিন্ন দেশ থেকে এসে নিজেদের সাংসৃক্তিক ভাষা হিব্রুকে সরকারী ভাষা হিসেবে ব্যবহার করেছেন৷ দীর্ঘকালীন হিমনিদ্রার •hybernation— পর ভাষাটি আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে ও ধীরে ধীরে ঘরের ভাষাতেও পরিণত হতে চলেছে৷ সেমেটিক মুখ্য তিনটি ভাষা হচ্ছে–(১) অ
অনেক দিন ধরে কোন একটা কাজ করে চললে অথবা কোন কাজ না করলে মানুষের মনে কুসংস্কার দানা বাঁধে৷ তাই দেখা যায় যখন অক্ষর আবিষ্কৃত হয়েছিল তার পরেও মানুষ বেদ ও অন্যান্য শাস্ত্রাদিকে অক্ষরবদ্ধ বা লিপিবদ্ধ করেনি৷ কেননা তারা মনে করত যে, যেহেতু পূর্বপুরুষেরা লেখেননি সেহেতু বেদকে অক্ষরের মধ্যে আবদ্ধ করা অন্যায় ও অবাঞ্ছনীয়৷ আসলে তখন যে অক্ষরই আবিষ্কৃত হয়নি এ কথাটা তাঁরা বেমালুম ভুলে থেকেছিলেন৷ অনেক পরবর্ত্তীকালে উত্তর–পশ্চিম ভারতে কশ্মীরের পণ্ডিতেরা যখন সারদা লিপিতে লেখা শুরু করেন তখন তাঁরা দেখলেন চারটে বেদকে একসঙ্গে মুখস্থ রাখা অসম্ভব৷ শুধু তাই নয় ততদিন বেদের ১০৮ অংশের মধ্যে ৫২টাই লুপ্ত হয়ে গেছে৷ তাই তাঁর
সম্প্রতি সিংভূম জেলার পটমদা থানার ভূলা–পাবনপুর গ্রামে ও তার পাশেই কমলপুর থানার বাঙ্গুরদা গ্রামে ও তার দক্ষিণ–পশ্চিম দিকে চাণ্ডিল থানার জায়দা গ্রামে জৈন যুগের বেশ কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে৷ তার সঙ্গে পাওয়া গেছে সেই যুগের বেশ কিছু বাংলা লিপি৷ এই লিপি অবশ্যই ১৭০০ বছর বা তার চেয়েও কিছু অধিক পুরোনো কারণ ওই সময়টাতেই রাঢ়ে শৈবাশ্রয়ী জৈনধর্মের স্বর্ণযুগ গেছে৷ ভগ্ণ মূর্তিগুলিও সমস্তই দিগম্বর জৈন দেবতাদের৷ যে লিপিমালা পাওয়া গেছে তা শুশুনিয়া লিপির চেয়ে পুরোনো তো বটেই, হর্ষবর্দ্ধনের শীলমোহরে প্রাপ্ত শ্রীহর্ষ লিপির চেয়েও পুরোনো হতে পারে৷ এই লিপি শ্রীহর্ষ লিপির স্বগোত্রীয় কিন্তু শ্রীহর্ষের চেয়েও বেশ পুরোনো৷
ইতিহাস–প্রসিদ্ধ নগরী ছিল ‘রোমা’ Roma৷ তাকে ভুল করে ‘রোম’ বলার সার্থকতা কোথায়? প্রপার নাউনকে এভাবে পরিবর্তন করা কি যুক্তিসঙ্গত? প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় ও পরবর্তীকালে আরবী ভাষায় যে শহরটিকে চিরকালই ‘কাহিরা’ বলে আসা হয়েছে তাকে ‘কাইরো’ বলব কোন যুক্তিতে? যে দেশটিতে আরবীতে ‘ফিলিস্তিন’ বলা হত ও হিব্রুতে বলা হয় ‘প্যালেষ্টাইন’ তাকে না হয় আমরা নিজেদের সুবিধামত যে কোন একটি নামেই ডাকতে পারি৷ কিন্তু যে শহরটি কলিচূণ ও কাতার দড়ির ব্যবসা উপলক্ষ্যে ‘কলিকাতা’ নাম পেয়েছিল তাকে তাড়াতাড়িতে বলতে গিয়ে কথ্য ভাষায় না হয় কলকাতা–ই বললুম, কিন্তু ইংরেজীতে ‘ক্যালকাটা’ Calcutta বলব কোন যুক্তিতে?
পাঠান–মোগল যুগে আগ্রা প্রদেশ ও অযোধ্যা প্রদেশের মিলিত নাম ছিল হিন্দোস্তান বা হিন্দোস্তাঁ (প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি যে ‘স্তান’ বা ‘স্তাঁ’ শব্দটি ফার্সী যার সংস্কৃত প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘স্থান’৷ উর্দ্দুতে এই ফার্সী রীতি অনুসরণ করা হয়৷
‘‘সারে জাঁহাঁসে আচ্ছা হিন্দোস্তাঁ হমারা
হম বুলবুলেঁ হেঁ ইসকী যহ্ গুলিস্তাঁ হমারা’’
জলম্, নীরম, তোয়ম্, উদকম, কম্বলম, পানীয়াম–জলের এই ক’টি হল পর্যায়বাচক শব্দ৷ জল শব্দটিকে তৎসম রূপেই বাংলায় ব্যবহার করি৷ যার মানে– any kind of water (যে কোন প্রকারের জল)৷ ‘নীর’ মানে সেই জল যা অন্যকে দেওয়া যায় ‘তোয়’ মানে যে জল উপচে পড়ে ‘উদক’ মানে যে জল খুঁড়ে পাওয়া যায় ‘কম্বল’ মানে যে জল ওপর থেকে পড়ে ‘পানীয়’ মানে যে জল পান করবার যোগ্য, খাল–বিল–নালার জল নয়৷ বাংলা ভাষায় ‘জল’ ও ‘পানী’ দুটো শব্দই চলে৷ জল শব্দটি তৎসম, আর পানী শব্দ ‘পানীয়ম’–এর তদ্ভব রূপ৷ ‘জল’ মানে যে কোন জল–ড্রেনের জল, পুকুরের জল, ফিল্টার করা কলের জল–সবই৷ তবে স্তুব্জনুন্সনুন্ধ ভ্র্ত্রব্ধন্দ্বব্জ বললে তার জন্যে বাংলা হবে পানীয় জল বা পান
এর আগে আমি কয়েকবারই বলেছি যে মানুষের মত হাতীও যূথবদ্ধ জীব৷ হাতীর সবচেয়ে বড় শত্রু হ’ল সিংহ৷ হাতী চায় গহন অরণ্য৷ জায়গাটা ভিজে কি শুকনো তার অত বিচার নেই৷ তবে জলটা যেন নোনতা না হয়৷ আর জঙ্গল যেন বেশ ঘন হয়৷ সমতল ভূমি বা পাহাড় এ ধরণের বিচার হাতীর নেই৷ তবে কাছে পিঠে একটু জলাশয়ের তার প্রয়োজন৷ কারণ জলে নেবে ভালভাবে স্নান করা ও অনেকক্ষণ ধরে জলে খেলা করা হাতীর একটা স্বভাব৷ যে সব ফলে মাদকতা আছে অর্থাৎ খেলে একটু নেশা হয় হাতী সেসব ফলই ভালবাসে৷ আর ফল খাবার পরে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হাতী জলে নেবে পড়ে ও অনেকক্ষণ থাকে৷ আফ্রিকায় এক ধরনের লাল অতিমিষ্ট জাম হয় যা থেকে চেষ্টা করলে চীনী তৈরী করা যেতে পারে৷ ওই জাম হাতী
কৌশিতকী ছিলেন মহর্ষি অগসেত্যর পত্নী৷ মহর্ষি অগস্ত্য তাঁর জীবন কাটিয়ে দিয়েছিলেন আদর্শের প্রচারে, মানবিকতার সম্প্রসারণে৷ তাঁকে এই কাজে প্রতি পলে বিপলে সাহায্য করে থাকতেন তাঁর স্ত্রী কৌশিতকী৷ কৌশিতকী ছিলেন অত্যন্ত বিদুষী মহিলা ও ব্যাপক মানব হূদয়ের অধিকারিণী৷ কখনও অগস্ত্য তাঁকে নির্দেশনা দিয়ে কাজ করাতেন, কখনও বা তিনিও নব নব ভাব–তত্ত্ব উদ্ভাবনের দ্বারা মহর্ষি অগস্ত্যকে নির্দেশনা দিতেন৷ এই ভাবে উভয়ে মিলেমিশে কাজ করে গেছলেন মানব জীবনে দেবত্ব ভাবের উত্তরণের জন্যে৷
পরিবেশ বিজ্ঞানকে (Ecology) মানুষ স্বার্থের প্রেষণায় প্রতি পদে উপেক্ষা করে চলেছে আমাদের মনে রাখা দরকার যে আকাশ-বাতাস-পাখী-বন্যজন্তু-সরীসৃপ-কীটপতঙ্গ-মাছ- জলজ-জীব-জলজ-উদ্ভিদ- সমুদ্র সবাইকার সঙ্গে সবাইকার অচ্ছেদ্য সম্পর্ক মানুষ সেই অভিন্ন মহাসমাজের একটি অংশ মাত্র কাউকে বাদ দিয়ে কেউ টিকতে পারবে না মানুষও পারবে না নির্র্বেধের মত অরণ্য ধবংস করে, বন্য পশুকে হত্যা করে, মৎস্যকুল ও পক্ষীকুলকে নির্মূল করে মানুষের কোন স্বার্থই সাধিত হবে না এ পৃথিবীতে যে আসে সে যায়--- কেবল প্রকৃতি নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত পৃথিবীতে বেঁচে থাকে মানুষের এই নির্বুদ্ধিতার জন্যে অনেক কিছুই প্রকৃতি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাঁচব
গৃহচটক শব্দের অর্থ হল চড়ুই পাখী চটক> চড> চডাই> চড়াই চটকী> চডহ> চডুই> চড়ুই । বাঙলায় চটই ও চড়ুই দুটি শব্দই চলে । আমাদের পশ্চিমরাঢ়ের গ্রামের মানুষ অনেকেই চটইবলে থাকে । চটই শব্দটি চটক শব্দ থেকে এসেছে । চড়ই কে বিহারের মগহী ভাষায় বলা হয় গর্বৈয়া, মৈথিলী ভাষায় গর্বৈয়াও চলে ফুদ্দিও চলে । ভোজপুরীতে বলা হয় ফুরগুদ্দি ।অঙ্গিকা ভাষায় টিকটিকিকে বলে টিকটিকিয়া ।
চটক পাখী দুইভাগে বিভক্ত যারা পাকা বাড়িতে কার্নিশে ঘর বানায়। তারা হল গৃহচটক বা চড়ুই পাখী । চড়ুই পাখী পায়রার মতো খড়কুটো দিয়ে ভালো ঘর তৈরী করতে পারে না কিন্তু অধিকাংশ পাখী পারে ।
বাংলায় ‘গাছা’, ‘গাছি’, ‘গাছিয়া’, (‘গেছে’)–এইসব নামে প্রচুর স্থান রয়েছে৷ বাংলা ভাষায় এই ‘গাছ’ কথাটার উৎস জানা দরকার৷ গাছের সংস্কৃত প্রতিশব্দ ‘বৃক্ষ’ কিন্তু তাই বলে বাংলা ‘গাছ’ শব্দটা সংস্কৃত ‘বৃক্ষ’ থেকে আসে নি বা ‘গাছ’ শব্দটার মূল কোন সংস্কৃত শব্দ নেই৷ ‘গাছ’ শব্দটা এসেছে মাগধী প্রাকৃত ‘গ্রৎস’ শব্দ থেকে৷ ‘গ্রৎস’ মানে যে নড়াচড়া করে না৷ গ্রৎস> অর্দ্ধমাগধীতে ‘গচ্ছ’ > পুরোনো বাংলায় ‘গচ্ছা’ > বর্তমান বাংলায় ‘গাছ’৷ বারশ’ বছরের পুরোনো বাংলা কবিতায় আছে–
‘‘ওগগ্র ভত্তা রম্ভা পত্তা গাইক্ক ঘিত্তা দুগ্ধ সজত্তা৷
নালি গচ্ছা মুল্লা মচ্ছা দীজ্জই কন্তা খাএ পুণ্যবন্তা৷’’
মার্জার জাতীয় পশুর ঘ্রাণশক্তি বেশী । মাছ বা দুধ ভালোভাবে ঢাকা দেওয়া থাকলেও বিড়াল তার আশে-পাশে ঘুরঘুর করে । এই বস্তুটিকে সে দেখতে পায়নি কিন্তু গন্ধ পেয়েছে । বাঘ অনুকূল হাওয়া পেলে কয়েক মাইল দূরের গন্ধও পেয়ে যায়; সে বুঝতে পারে সেখানে কোন্ প্রাণী রয়েছে – মানুষ না বুনো-শোর, মোষ না কাঁকর হরিণ । মানুষের গন্ধগ্রহণ পরিভূর চেয়ে মার্জার বর্গীয় জীবের বিশেষ করে বাঘের গন্ধগ্রহণ পরিভূ বেশী । তাই ব্যাঘ্র শব্দটি আসছে বি-আ-ঘ্রা+ড প্রত্যয় করে, যার মানে হচ্ছে যার বিশেষ রূপ আঘ্রাণ শক্তি রয়েছে । ব্যাঘ্র > বাঘ্ঘ > বাগ্ঘ > বাগ/বাঘ ।
শীতপ্রধান দেশে বসবাসকারী কস্তুরীমৃগ, যার নাভিদেশে সঞ্চিত থাকে সুগন্ধিবিশেষ, দেখতে অত্যন্ত কদাকার । কিন্তু এদের দেহগ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হরমোন (গ্রন্থি-রস) নাভিতে ক্রমশঃ একত্রিত হতে থাকে ও তার জলীয় অংশ কমে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তা কাঠিন্যপ্রাপ্ত হয় । কঠিনতা যত বাড়তে থাকে সুগন্ধি তত বেশী উৎসারিত হতে থাকে । এই সুগন্ধের ফলে হরিণ (হরিণীর এই সুগন্ধ হয় না) পাগলের মত ঐ সুগন্ধের খোঁজে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটোছুটি করে বেড়ায় । সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না তার এই সুগন্ধের উৎস হ’ল তার নিজেরই নাভিকুণ্ডলী ।
“গন্ধে মাতি কস্তুরী ফিরে অন্বেষণ করি’
জানে না সে নাভি সুবাসে মাতায়
‘সংগঠন’ শব্দটি ভুল, হবে ‘সংঘটন’
সংস্কৃতে ‘গঠন’ বলে কোন শব্দই নেই–আছে ‘ঘটন’৷ এই ‘ঘটন’ শব্দ বিকৃত হয়ে ‘গঠন’ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তাই শুদ্ধভাবে লিখতে গেলে ‘সংঘটন’ লেখাই সমীচীন৷
সংঘটন শব্দটি (সম্–ঘট্ ল্যুট) আমরা এই ‘ঘট্’ধাতু থেকে পাচ্ছি যাকে ভুল করে আমরা ‘সংগঠন’ বলি বা লিখে থাকি৷ আবার এই ‘সংগঠন’–কে ঠিক ভেবে আমরা ‘সংগঠিত’, ‘গঠনাত্মক’, ‘সুসংগঠিত’,‘সংগঠনী শক্তি’, ‘গঠনমূলক কার্য’ প্রভৃতি শব্দগুলি অবলীলাক্রমে ব্যবহার করে থাকি৷ বুঝি না গোড়াতেই ভুল৷ ‘সংগঠন’ শব্দটি ভুল৷ আসলে ঠিক শব্দটি হ’ল ‘সংঘটন’৷ ঘটন>ঘডন>ঘড়ন>গড়ন৷ একটি কবিতাতেও দেখেছিলুম–
মানুষের উদ্ভব পৃথিবীতে কয়েকটি বিশেষ বিশেষ বিন্দুতে হয়েছিল৷ কে আগে আর কে পরে–এই নিয়ে বিশদ আলোচনা না করেও বলতে পারি, রাঢ়ভূমিতে মানুষের উদ্ভব অতি প্রাচীন৷ এর চেয়ে প্রাচীনতর মনুষ্য–নিবাসের কোন সন্ধান পাওয়া যায় না৷ পৃথিবীতে যখন অরণ্য এল রাঢ়ের এই কঠিন শিলা, বিবর্তিত শিলা, আগ্ণেয় শিলা ও পাললিক শিলার ওপরে জন্ম নিল নিবিড় অরণ্য৷ সেই অরণ্যই একদিন মানুষ–জনপদ রাঢ়কে প্রাণ–সুধা জুগিয়েছিল, এই অরণ্যই রাঢ়ের নদীগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করত৷ ওই অরণ্যই বরফ–ঢাকা পাহাড়গুলি ক্ষয়ে যাবার পরে আকাশের মেঘকে ডেকে আনত রাঢ়ভূমিতে৷ রাঢ়ভূমিতে পর্জন্যদেবের কৃপাবর্ষণ হ’ত অফুরন্ত, অঢেল৷ এই আমাদের রাঢ়ভূমি–অনেক সৃষ্টি–স্থিতি–লয়ের জীবন্ত
পৃথিবীতে মৌলিক জনগোষ্ঠী আছে চারটি–ককেশীয়, মঙ্গোলীয়, অষ্ট্রিক ও নিগ্রো৷ অনেকে অবশ্য সেমিটিক জনগোষ্ঠীকে এর মধ্যে ফেলতে চান না৷ তাদের মতে সেমেটিকরা আলাদা জনগোষ্টী, এরা মধ্যপ্রাচ্যের লোক৷ আবার কারো কারো মতে এরা ককেশীয় ও নিগ্রোদের বিমিশ্রণ৷ ককেশীয়দের তিনটি শাখা রয়েছে–(১) নর্ডিক (Nordic), (২) এ্যালপাইন (Alpine), (৩) ভূমধ্যসাগরীয়৷ ‘নর্ডিক’ কথাটার অর্থ হচ্ছে ‘উত্তুরে’৷ লাতিন ‘নর্ড’ (Nord) কথাটা থেকে ‘নর্ডিক’ শব্দটি এসেছে৷ এ্যালপাইনরা বেশী উত্তরেও নয়, আবার বেশী দক্ষিণেও নয় অর্থাৎ এরা মধ্যদেশীয়, আল্প্স্ পর্বতের সানুদেশের বাসিন্দা৷
বাংলায় ‘গাছা’, ‘গাছি’, ‘গাছিয়া’, (‘গেছে’)–এইসব নামে প্রচুর স্থান রয়েছে৷ বাংলা ভাষায় এই ‘গাছ’ কথাটার উৎস জানা দরকার৷ গাছের সংস্কৃত প্রতিশব্দ ‘বৃক্ষ’ কিন্তু তাই বলে বাংলা ‘গাছ’ শব্দটা সংস্কৃত ‘বৃক্ষ’ থেকে আসে নি বা ‘গাছ’ শব্দটার মূল কোন সংস্কৃত শব্দ নেই৷ ‘গাছ’ শব্দটা এসেছে মাগধী প্রাকৃত ‘গ্রৎস’ শব্দ থেকে৷ ‘গ্রৎস’ মানে যে নড়াচড়া করে না৷ গ্রৎস> অর্দ্ধমাগধীতে ‘গচ্ছ’>পুরোনো বাংলায় ‘গচ্ছা’>বর্তমান বাংলায় ‘গাছ’৷ বারশ’ বছরের পুরোনো বাংলা কবিতায় আছে–
‘‘ওগগ্র ভত্তা রম্ভা পত্তা গাইক্ক ঘিত্তা দুগ্ধ সজত্তা৷
নালি গচ্ছা মুল্লা মচ্ছা দীজ্জই কন্তা খাএ পুণ্যবন্তা৷’’
বাংলায় আর একটা কথা রয়েছে ‘হাট’৷ সংস্কৃত ‘হট্ট’ শব্দ থেকে ‘হাট’ শব্দটি এসেছে৷ যেমন পাশাপাশি সাজানো অনেকগুলি হাট, সংস্কৃতে ‘হট্টমালা’৷ ‘হট্টমালার গল্প’ তোমরা অনেকেই নিশ্চয় পড়েছ৷ সংস্কৃতে বড় বড় হাটকে বলে ‘হট্টিক’৷ হট্টূ‘ষ্ণিক্’ প্রত্যয় করে ‘হট্টিক’৷ যদিও বৈয়াকরণিক বিচারে ‘হট্টিক’ মানে ছোট হাট হওয়া উচিত কিন্তু আসলে বড় হাট অর্থেই ‘হট্টিক’ শব্দটি ব্যবহার করা হ’ত৷ ‘হট্ট’–এর তদ্ভব বাংলা হচ্ছে ‘হাট’৷ যেমন রাজারহাট, বাগেরহাট, মাঝেরহাট প্রভৃতি৷ ‘হট্টিক’ শব্দের বাংলা ‘হাটি’৷ যেমন ‘নবহট্টিক’ থেকে ‘নৈহাটি’, ‘নলহট্টিক’ থেকে ‘নলহাটি’, ‘গুবাকহট্টিক’ থেকে ‘গৌহাটি’ (গুয়াহাটি) প্রভৃতি৷ দক্ষিণ বাংলায় হাটকে ‘হ
কৃষক / কর্ষক
এমনিতে যাঁরা চাষবাস নিয়ে থাকেন তাঁদের জন্যে সংস্কৃত ভাষায় বেশি প্রচলিত শব্দ দু’টি রয়েছে–কৃষীবল ও কর্ষক৷ ‘কর্ষক’ শব্দটি কৃষ ধাতু থেকে উৎপন্ন৷ যাঁরা এই কর্ষককে ‘কৃষক’ বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা না জেনেই এই ভুল করেছেন৷ আর যাঁরা আজও ‘কৃষক’ লেখেন তাঁরা ভুলকে ভুল না জেনেই লেখেন৷ আমরা ‘আকর্ষক’ ‘বিকর্ষক’ বলবার সময় ঠিক বলি কিন্তু কেন বুঝি না ‘কর্ষক’ বলবার সময় ভুল করে কৃষক বলে ফেলি৷
অপসংস্কৃতি / অসংস্কৃতি
কর্ষক : এমনিতে যাঁরা চাষবাস নিয়ে থাকেন তাঁদের জন্যে সংস্কৃত ভাষায় বেশি প্রচলিত শব্দ দু’টি রয়েছে–কৃষীবল ও কর্ষক৷ ‘কর্ষক’ শব্দটি কৃষ ধাতু থেকে উৎপন্ন৷ যাঁরা এই কর্ষককে ‘কৃষক’ বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা না জেনেই এই ভুল করেছেন৷ আর যাঁরা আজও ‘কৃষক’ লেখেন তাঁরা ভুলকে ভুল না জেনেই লেখেন৷ আমরা ‘আকর্ষক’ ‘বিকর্ষক’ বলবার সময় ঠিক বলি কিন্তু কেন বুঝি না ‘কর্ষক’ বলবার সময় ভুল করে কৃষক বলে ফেলি৷
জলম্, নীরম, তোয়ম্, উদকম, কম্বলম, পানীয়াম–জলের এই ক’টি হল পর্যায়বাচক শব্দ৷ জল শব্দটিকে তৎসম রূপেই বাংলায় ব্যবহার করি৷ যার মানে– any kind of water (যে কোন প্রকারের জল)৷ ‘নীর’ মানে সেই জল যা অন্যকে দেওয়া যায় ‘তোয়’ মানে যে জল উপচে পড়ে ‘উদক’ মানে যে জল খুঁড়ে পাওয়া যায় ‘কম্বল’ মানে যে জল ওপর থেকে পড়ে ‘পানীয়’ মানে যে জল পান করবার যোগ্য, খাল–বিল–নালার জল নয়৷ বাংলা ভাষায় ‘জল’ ও ‘পানী’ দুটো শব্দই চলে৷ জল শব্দটি তৎসম, আর পানী শব্দ ‘পানীয়ম’–এর তদ্ভব রূপ৷ ‘জল’ মানে যে কোন জল–ড্রেনের জল, পুকুরের জল, ফিল্টার করা কলের জল–সবই৷ তবে drinking water বললে তার জন্যে বাংলা হবে পানীয় জল বা পানী৷ মনে রাখবে, যে কোন জ
বাংলায় আর একটা কথা রয়েছে ‘হাট’৷ সংস্কৃত ‘হট্ট’ শব্দ থেকে ‘হাট’ শব্দটি এসেছে৷ যেমন পাশাপাশি সাজানো অনেকগুলি হাট, সংসৃক্তে ‘হট্টমালা’৷ ‘হট্টমালার গল্প’ তোমরা অনেকেই নিশ্চয় পড়েছ৷ সংসৃক্তে বড় বড় হাটকে বলে ‘হট্টিক’৷ হট্টূ + ‘ষ্ণিক্’ প্রত্যয় করে ‘হট্টিক’৷ যদিও বৈয়াকরণিক বিচারে ‘হট্টিক’ মানে ছোট হাট হওয়া উচিত কিন্তু আসলে বড় হাট অর্থেই ‘হট্টিক’ শব্দটি ব্যবহার করা হ’ত৷ ‘হট্ট’–এর তদ্ভব বাংলা হচ্ছে ‘হাট’৷ যেমন রাজারহাট, বাগেরহাট, মাঝেরহাট প্রভৃতি৷ ‘হট্টিক’ শব্দের বাংলা ‘হাটি’৷ যেমন ‘নবহট্টিক’ থেকে ‘নৈহাটি’, ‘নলহট্টিক’ থেকে ‘নলহাটি’, ‘গুবাকহট্টিক’ থেকে ‘গৌহাটি’ (গুয়াহাটি) প্রভৃতি৷ দক্ষিণ বাংলায় হাটকে
ভারত ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বহুজনপদের নামকরণ করা হয়েছে ‘পুর’, ‘নগর’ ইত্যাদি শব্দ যোগ করে৷ ছোট শহরকে সংস্কৃতে বলা হ’ত ‘পুর’ (প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি, ‘শহর’ শব্দটা কিন্তু ফার্সী), আর বড় বড় শহরকে বলা হত ‘নগর’৷ উভয়ের মধ্যে তফাৎ ছিল এই যে নগরের চারিদিক প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকত, সংস্কৃতে যাকে বলা হ’ত ‘নগরবেষ্টনীঁ’৷ এই নগরবেষ্টনীর মধ্যে যাঁরা বাস করতেন তাঁদের বলা হ’ত ‘নাগরিক’৷ আজকাল ‘নাগরিক’ শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে যে অর্থে ইংরেজী ‘সিটিজেন’ কথাটি ব্যবহার করা হচ্ছে তার সঙ্গে প্রাচীন ‘নাগরিক’ শব্দের কোন সম্পর্ক নেই কেননা ‘নাগরিক’ মানে নগরের বাসিন্দা, অন্যদিকে ‘সিটিজেন’ বলতে বোঝায় দেশের যে কোন অধিবাসী–তিনি
ঔষধ রোগকে হত্যা করে৷ তাই হত্যাকারী অর্থে ‘থুর্ব’ ধাতু ড+করে যে ‘থ’ শব্দ পাই তার একটি যোগরূঢ়ার্থ হচ্ছে ঔষধ৷ এই ঔষধ যে কেবল শারীরিক রোগের ঔষধ তাই নয়, মানসিক রোগের ঔষধও৷ মানসিক রোগের যতরকম ঔষধ আছে তার একটা নাম হচ্ছে মানুষের মনে রসচেতনা জাগিয়ে তার মনকে হালকা করে দিয়ে ব্যথাভার সরিয়ে দেওয়া–চিন্তাক্লিষ্টতা অপনয়ন করা৷ এজন্যে প্রাচীনকালে এক ধরনের মানুষ থাকতেন যাঁরা মানুষের মনকে নানান ভাবে হাসিতে খুশীতে ভরিয়ে রাখতেন৷ মন ভাবে–ভাবনায় আনন্দোচ্ছল হয়ে উপচে পড়ত৷ এই ধরনের মানুষেরা শিক্ষিত বা পণ্ডিত থেকে থাকুন বা না থাকুন এঁরা মানব মনস্তত্ত্বে অবশ্যই পণ্ডিত হতেন৷ এঁদেরই বলা হত বিদুষক৷ বিদুষকের ভাববাচক বিশেষ
একটু আগেই বলেছি, ‘খর’ শব্দের একটি অর্থ ‘রাক্ষস’৷ যতদূর মনে হয় প্রাচীনকালের আর্যরা অষ্ট্রিক–নিগ্রোয়েড বা দ্রাবিড়গোষ্ঠীভুক্ত মানুষদের রাক্ষস বলে অভিহিত করতেন৷ কারণ, তাঁদের নিজেদের লেখাতেই ধরা পড়ে যে রাক্ষসদেরও উন্নতমানের সভ্যতা ছিল৷ তারা বড় বড় শহর–নগরীর পত্তন করেছিল....তারা ধর্মাচরণ করত....তারা শিবভক্ত ছিল....তারা শিবের আশীর্বাদে অমিত প্রতিভা ও শক্তিসম্পদের অধিকারী হয়েছিল৷ তাদের হেয় করবার জন্যে বিভিন্ন পুস্তকে তাদের সম্বন্ধে বহু অবাঞ্ছিত মন্তব্য কর হয়েছে৷ তবে হ্যাঁ, একথাটি ঠিকই যে তারা আর্যদের বেদ ও যাগ–যজ্ঞের বিরোধী ছিল৷ আর সম্ভবতঃ যজ্ঞে মূল্যবান খাদ্যবস্তুর অপচয় হ’ত বলে তারা কোথাও যজ্ঞানুষ
‘কোরক’ শব্দের অপর অর্থ হ’ল গন্ধসার–ফার্সীতে ‘ঈৎর্’ (বাংলায় ‘আতর’ শব্দটি চলে)৷
চাল - যা চেলে পাওয়া যায় (চালিয়া) তাকে বাংলায় আমরা ‘চাল’ লি৷ চাল যে কেবল ধানেরই হয় তা নয়৷ ধনেকে টুকরো করে কুলোতে চেলে যা পাই তাকে আমরা ‘ধনের চাল’ লি৷
যাতে করে চালা হয় অর্থাৎ চাল তৈরী করা হয় তা-ই ‘চালুনি’৷ আজকাল াঙলার মানুষ গমের আটা খাচ্ছে৷ তাই চালুনি চেলে চালের দলে চোখলা পাচ্ছে৷ তাই ‘চাল’, ‘চালুনি’ দুই-ই তাদের অর্থ হাহাতে বসেছে৷ সংস্কৃত ‘চল্’ ধাতুর উত্তর ণিজন্তে ‘অনট্’ প্রত্যয় করে ‘স্ত্রিয়াম্ ঈপ্’ করে ‘চালনী’ শব্দ নিষ্পন হতে পারে৷ ‘চালুনি’ এই ‘চালনী’ শব্দের বিকৃত রূপ হিসেবে ধরা যেতে পারে৷ তাই বাংলায় চালুনি/চালুনী দু’টি ানানই চলতে পারে৷
কোন জায়গায় নোতুন প্রজা বন্দোবস্ত হলে অর্থাৎ নোতুনভাবে প্রজা বসানো হলে সেই জায়গাগুলোর নামের শেষে ‘বসান’ যুক্ত হয়৷ যেমন–রাজাবসান, নবাববসান, মুকুন্দবসান, নুয়াবসান (অনেকে ভুল করে ‘নয়াবসান’ বলে থাকেন–সেটা ঠিক নয়৷ দক্ষিণী রাঢ়ী ও উত্তরী ওড়িয়ায় নোতুনকে ‘নুয়া’ বা ‘নোয়া’ বলা হয়৷ ‘নয়া’ হচ্ছে হিন্দী শব্দ৷ বিহারের ভাষায় ‘নয়া’র পর্যায়বাচক শব্দ হচ্ছে ‘নয়্কা’ বা ‘নব্কা’৷ মেদিনীপুর জেলার নোয়াগ্রাম শহরটিকে আজকাল অনেকে ভুল করে নয়াগ্রাম বলে থাকে)৷
সংস্কৃত আম্র > প্রাকৃতে, আম্ব/অম্বা৷ এর থেকে বাংলায় ‘আঁব’ শব্দটি এসেছে৷ উত্তর ভারতের অধিকাংশ ভাষাতেই এই ‘আম্ব’ বা ‘অম্বা’–জাত ‘আঁব’ শব্দটিই প্রচলিত৷ ওড়িষ্যায় আঁব (আঁব–), মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের অংশবিশেষে আঁবা, গুজরাতীতে অম্বো, মারাঠীতে আম্বা (‘পিকলে আম্বে’ মানে পাকা আঁব), পঞ্জাক্ষীতে আম্ব্ (আম্ব্ দ্য অচার), হিন্দীতে ও বাঙলার কোন কোন অংশে প্রচলিত ‘আম’ শব্দটি থেকেই ‘আঁব’ শব্দটি এসেছে৷ ব্যুৎপত্তিগত বিবর্ত্তনের বিচারে আমের চেয়ে আঁব বেশী শুদ্ধ৷ তবে একটি বিবর্ত্তিত শব্দ হিসেবে আমকেও অশুদ্ধ বলা চলক্ষে না৷ বাঙলার মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী, কলিকাতা, ২৪ পরগণা, খুলনা ও যশোরের অংশবিশেষে ‘আঁব’ শব্দই প্
‘কৃষক’ শব্দটি ভুল, হবে ‘কর্ষক’
এমনিতে যাঁরা চাষবাস নিয়ে থাকেন তাঁদের জন্যে সংস্কৃত ভাষায় বেশি প্রচলিত শব্দ দু’টি রয়েছে–কৃষীবল ও কর্ষক৷ ‘কর্ষক’ শব্দটি কৃষ ধাতু থেকে উৎপন্ন৷ যাঁরা এই কর্ষককে ‘কৃষক’ বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা না জেনেই এই ভুল করেছেন৷ আর যাঁরা আজও ‘কৃষক’ লেখেন তাঁরা ভুলকে ভুল না জেনেই লেখেন৷ আমরা ‘আকর্ষক’ ‘বিকর্ষক’ বলবার সময় ঠিক বলি কিন্তু কেন বুঝি না ‘কর্ষক’ বলবার সময় ভুল করে কৃষক বলে ফেলি৷
‘অপসংস্কৃতি’ শব্দটি ভুল, হবে ‘অসংস্কৃতি’
তোমরা জান এমন কিছু কিছু জায়গা পৃথিবীতে রয়েছে যেখানে এককালে কোন বিশেষ মহান পুরুষ বাস করতেন অথবা যেখানে একাধিক মহাপুরুষের অবস্থিতি ছিল, যেখানে আজও লোকেরা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান৷ যেমন ধরো মুঙ্গের শহরের কষ্টহারিণী ঘাটে মিথিলার নামজাদা কবি বিদ্যাপতির সঙ্গে বাঙলার নামজাদা কবি চণ্ডীদাসের সাক্ষাৎকার হয়েছিল৷ সেই কষ্টহারিণী ঘাটটি আজ যে কেবল ধর্মপিপাসু মানুষেরই তীর্থক্ষেত্র তাই নয়, সাহিত্যের ব্যাপারেও যাঁরা একটু–আধটু উঁকি–ঝুঁকি মারেন তাঁরাও স্থানটিকে একবার দেখে যান......শোনা যায় সাক্ষাৎকারের সময় চণ্ডীদাস ছিলেন যুবক, বিদ্যাপতি ছিলেন বৃদ্ধ৷ উভয়ের মধ্যে বয়সের পার্থক্য ছিল অনুমানিক চল্লিশ বৎসর৷ বিদ্যাপতি
আমরা পৃথিবীর–পৃথিবী আমাদের দেশ৷ আরও ভালভাবে বলতে গেলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডই আমাদের দেশ৷ এই বিশ্বক্ষ্রহ্মাণ্ডের এক কোণে পৃথিবী নামে যে ছোটো গ্রহটা আছে–সেই পৃথিবীর এক কোণে বাঙালী নামে যে জনগোষ্ঠী আছে সেই জনগোষ্ঠীও অতীতের অন্ধকার থেকে এগোতে এগোতে, তার অন্ধকারের নিশা শেষ হয়ে গেছে, তার জীবনে নোতুন সূর্যোদয় এসেছে৷ এবার তাকে এগিয়ে চলতে হবে৷ চলার পথে বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই৷ কমা, কোলন, সেমিকোলনের কোনো যতি চিহ্ণ নেই৷ তাকে এগিয়ে চলতে হবে৷ এগিয়ে সে চলেছে, চলবে৷ চলটাই তার জীবন–ধর্ম, অস্তিত্বের প্রমাণ, অস্তিত্বের প্রতিভূ হ’ল চলা৷ কেউ যদি চলতে চলতে থেমে যায়, বুঝতে হবে সে জীবনের ধর্মকে খুইয়ে বসেছে৷ সব কিছুই চল
পৃথিবীতে মৌলিক জনগোষ্ঠী আছে চারটি–ককেশীয়, মঙ্গোলীয়, অষ্ট্রিক ও নিগ্রো৷ অনেকে অবশ্য সেমিটিক জনগোষ্ঠীকে এর মধ্যে ফেলতে চান না৷ তাদের মতে সেমেটিকরা আলাদা জনগোষ্টী, এরা মধ্যপ্রাচ্যের লোক৷ আবার কারো কারো মতে এরা ককেশীয় ও নিগ্রোদের বিমিশ্রণ৷ ককেশীয়দের তিনটি শাখা রয়েছে–(১) নর্ডিক Nordic (২) এ্যালপাইন (alpine), (৩) ভূমধ্যসাগরীয়৷ ‘নর্ডিক’ কথাটার অর্থ হচ্ছে ‘উত্তুরে’৷ লাতিন ‘নর্ড’ (Nord) কথাটা থেকে ‘নর্ডিক’ শব্দটি এসেছে৷ এ্যালপাইনরা বেশী উত্তরেও নয়, আবার বেশী দক্ষিণেও নয় অর্থাৎ এরা মধ্যদেশীয়, আল্প্স্ পর্বতের সানুদেশের বাসিন্দা৷ নর্ডিকদের নাক উঁচু, চুল সোণালী, রঙ লাল ও আকারে দীর্ঘ৷ এ্যালপাইনরা অপেক্
‘গজতা’ শব্দের অর্থ হ’ল হস্তীযূথ৷ তোমরা অনেকেই জান পৃথিবীর জীবসমূহ সমাজগতভাবে দু’টি ভাগে বিভক্ত –– এককচারী জীব ও যূথবদ্ধ জীব৷ যেমন ধর আমাদের অতি পরিচিত ছাগল, মুর্গী৷ এরা এককচারী জীব৷ নিজের স্বার্থেই ব্যস্ত..... একেবারেই self centered. এরা সাধারণতঃ একে অপরের কোন কাজে লাগে না৷ একে অপরের বিপদে ছুটে এসে রুখে দাঁড়ায় না৷ এরা প্রভুভক্ত বা নিষ্ঠাবান–ও (sincere) নয়৷ এরা প্রভুর দুঃখে তিলমাত্র বিচলিত হয় না৷ যেখানে থাকে ....
(আগের সংখ্যার আলোচনার পর)
আজ ককেশীয় রক্ত ও মঙ্গোলীয় রক্তের মিশ্রণ ঘটায় তাঁদের গাত্রবর্ণে পরিবর্তন অবশ্যই এসেছে, আকারে প্রকারে তফাৎ অবশ্যই এসেছে৷ কিন্তু মুখ্যতঃ আকারে রাঢ়ী৷ জাত–বাঙাঙ্গলীরা যদি হয় খাঁটি সোণা, তা হলে তথাকথিত উচ্চ–বর্ণীয়েরা বিশেষ করে কায়স্থরা সেই সোণার ওপর একটি চক্চকে ধরনের মিনের কাজ (enameled gold)৷
খস আত্মন্ জন্ ড ঞ্চ খসাত্মজ৷ ‘খসাত্মজ’ শব্দের অর্থ রাক্ষসীপু––সে স্বয়ং রাক্ষস নাও হতে পারে৷ পুরাণে এই ধরনের কাহিনীও অনেক আছে৷ রাক্ষসী মাতার গর্ভে জন্মেছে উন্নত বুদ্ধির মানুষ বা দেবতা৷ কর্কটী রাক্ষসীর স্বামী অনুভসেন ছিলেন মানব ও রাজা৷ কর্কটী রাক্ষসী কর্কট অর্থাৎ ক্যান্সারের ঔষধ আবিষ্কার করেছিলেন৷ রাক্ষসীর পু– হলেও সুতনুক রাক্ষস ছিলেন না৷ তবু তাঁকে ‘খসাত্মজ’ বলা অবশ্যই চলবে৷ আসলে শাস্ত্রে ‘আত্মজ’ বলতে বোঝায় প্রথম সন্তানকে (পু– বা কন্যা)৷ অন্যান্য সন্তানকে ‘আত্মজ’ না বলে বলা হয় ‘কামজ’৷ এক্ষেত্রে দুঃখের সঙ্গেই বলতে হচ্ছে যে কর্কটী রাক্ষসীর আবিস্কৃত কর্কট রোগের (cancer) ঔষধ আজ বিস্মৃতির অন্তর
একটু আগেই বলেছি, ‘খর’ শব্দের একটি অর্থ ‘রাক্ষস’৷ যতদূর মনে হয় প্রাচীনকালের আর্যরা অষ্ট্রিক–নিগ্রোয়েড বা দ্রাবিড়গোষ্ঠীভুক্ত মানুষদের রাক্ষস বলে অভিহিত করতেন৷ কারণ, তাঁদের নিজেদের লেখাতেই ধরা পড়ে যে রাক্ষসদেরও উন্নতমানের সভ্যতা ছিল৷ তারা বড় বড় শহর–নগরীর পত্তন করেছিল....তারা ধর্মাচরণ করত....তারা শিবভক্ত ছিল....তারা শিবের আশীর্বাদে অমিত প্রতিভা ও শক্তিসম্পদের অধিকারী হয়েছিল৷ তাদের হেয় করবার জন্যে বিভিন্ন পুস্তকে তাদের সম্বন্ধে বহু অবাঞ্ছিত মন্তব্য কর হয়েছে৷ তবে হ্যাঁ, একথাটি ঠিকই যে তারা আর্যদের বেদ ও যাগ–যজ্ঞের বিরোধী ছিল৷ আর সম্ভবতঃ যজ্ঞে মূল্যবান খাদ্যবস্তুর অপচয় হ’ত বলে তারা কোথাও যজ্ঞানুষ
প্রায় ৮০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর কোথাও কঠিন পদার্থ বলে কিছু ছিল না৷ গ্রহটি তখন ছিল এক জ্বলন্ত গ্যাসপিণ্ড৷ পৃথিবীর স্থলভাগ সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ২৩০ কোটি বছর আগে৷ টারসিয়ারি যুগের শেষাশেষি ও ক্রেটারিয়ান যুগের গোড়ার দিকে পৃথিবীর বুকে গণ্ডোয়ানাল্যাণ্ডের প্রথম উদ্ভব হয়েছিল৷ সে সময় পৃথিবীর মধ্যভাগ ছিল জলময়৷
অনেকে ভাবে, বিতর্ক মানে তর্কসংক্রান্ত বা তর্কযুক্ত জিনিস৷ কথাটি আংশিকভাবে সত্য৷ বিশেষ ধরনের তর্ককে ‘বিতর্ক’ বলা হয়৷ কিন্তু এটাই ‘বিতর্ক’ শব্দের শেষ কথা নয়৷ ‘বিতর্ক’ মানে অতি জল্পন (অহেতুক বকবক করা)৷ এই বকবক করার সঙ্গে যদি বদ্মেজাজ বা প্রগল্ভতা সংযুক্ত থাকে তবে তা ‘বিতর্ক’ পর্যায়ভুক্ত–‘কষায়’ পর্যায়ভুক্ত হবে না৷ নীচে কয়েকটা বিভিন্ন স্বাদের বিতর্কের দৃষ্টান্ত দিচ্ছি–
সম্প্রতি সিংভূম জেলার পটমদা থানার ভূলা–পাবনপুর গ্রামে ও তার পাশেই কমলপুর থানার বাঙ্গুরদা গ্রামে ও তার দক্ষিণ–পশ্চিম দিকে চাণ্ডিল থানার জায়দা গ্রামে জৈন যুগের বেশ কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে৷ তার সঙ্গে পাওয়া গেছে সেই যুগের বেশ কিছু বাংলা লিপি৷ এই লিপি অবশ্যই ১৭০০ বছর বা তার চেয়েও কিছু অধিক পুরোনো কারণ ওই সময়টাতেই রাঢ়ে শৈবাশ্রয়ী জৈনধর্মের স্বর্ণযুগ গেছে৷ ভগ্ণ মূর্তিগুলিও সমস্তই দিগম্বর জৈন দেবতাদের৷ যে লিপিমালা পাওয়া গেছে তা শুশুনিয়া লিপির চেয়ে পুরোনো তো বটেই, হর্ষবর্দ্ধনের শীলমোহরে প্রাপ্ত শ্রীহর্ষ লিপির চেয়েও পুরোনো হতে পারে৷ এই লিপি শ্রীহর্ষ লিপির স্বগোত্রীয় কিন্তু শ্রীহর্ষের চেয়েও বেশ পুরোনো৷
কোন জায়গায় নোতুন প্রজা বন্দোবস্ত হলে অর্থাৎ নোতুনভাবে প্রজা বসানো হলে সেই জায়গাগুলোর নামের শেষে ‘বসান’ যুক্ত হয়৷ যেমন–রাজাবসান, নবাববসান, মুকুন্দবসান, নুয়াবসান (অনেকে ভুল করে ‘নয়াবসান’ বলে থাকেন–সেটা ঠিক নয়৷ দক্ষিণী রাঢ়ী ও উত্তরী ওড়িয়ায় নোতুনকে ‘নুয়া’ বা ‘নোয়া’ বলা হয়৷ ‘নয়া’ হচ্ছে হিন্দী শব্দ৷ বিহারের ভাষায় ‘নয়া’র পর্যায়বাচক শব্দ হচ্ছে ‘নয়্কা’ বা ‘নব্কা’৷ মেদিনীপুর জেলার নোয়াগ্রাম শহরটিকে আজকাল অনেকে ভুল করে নয়াগ্রাম বলে থাকে)৷
প্রাচীনকালে মানুষ গান গেয়েছিল বিহঙ্গের কাকলির অনুরণনে৷ মানুষের জন্মেতিহাসের প্রথম উষাতেই অর্থাৎ যে অরুণ রাগে মানুষ এই পৃথিবীতে এসেছিল সেই অরুণ রাগেই এসেছিল গানের রাগ........না–জানা সুরসপ্তকের সিঞ্জিনের মঞ্জুষিকা৷ সেই নাম–না–জানা রাগের সঙ্গে তাল মেশাবার জন্যে মানুষ বস্তুতে বস্তুতে ঠোকাঠুকি করত....জন্ম নিল সংঘাত–সঞ্জাত বাদ্যযন্ত্র৷ মৃদঙ্গ, তবলা, খোল, ঘটম্–এদের আদি রূপ এসেছিল৷ তারপর মানুষ এই ঠোকাঠুকি থেকে উদ্ভুত বাদ্যযন্ত্র থেকে নিজেদের মন ভরাবার জন্যে তৈরী করে রৈক্তিক সম্পদ৷ শূন্যতাকে আচ্ছাদন দিল চর্মের বা অন্য কোন মৃদু আবেষ্টনের.....এল বিভিন্ন ধরণের তালসৃষ্টিকারী বাদ্যযন্ত্র৷ মানুষের মন এত
‘কৃষ্ণ’ শব্দের একটি অর্থ হ’ল মহর্ষি বেদব্যাস৷ মহর্ষি বেদব্যাস প্রয়াগে গঙ্গা–যমুনার সঙ্গমস্থলের নিকটে যমুনা থেকে উত্থিত একটি কৃষ্ণ দ্বীপে জালিক–কৈবর্ত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন৷ যমুনা নদীর নিকটস্থ মৃত্তিকা হ’ল কৃষ্ণ কর্পাস মৃত্তিকা (ব্ল্যাক কটন সয়েল)৷ এই জন্যে যমুনার জলকেও কালো রঙের বলে মনে হয়৷ যমুনার যে চরটিতে মহর্ষি ব্যাস জন্ম গ্রহণ করেন সেটিরও ছিল কৃষ্ণমৃত্তিকা৷ ভারতের ইতিহাসে ব্যাস নামে কয়েক জনই খ্যাতনামা পুরুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন (উত্তর মীমাংসার বাদরায়ণ ব্যাস)৷ তাঁদের থেকে পৃথক করার জন্যে এঁকে বলা হত কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস অর্থাৎ কালো রঙের দ্বীপের অধিবাসী ব্যাস৷ এই কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস মহাভার
ইংরেজরা যখন এই দেশ দখল করেন তখন কলকাতা ছিল সুন্দরবনের উত্তর প্রত্যন্ত অংশ৷ মারাঠা আক্রমণের হাত থেকে কলকাতাকে বাঁচানোর জন্যে ইংরেজরা কলকাতার উত্তর–পূর্ব দিকে একটা খাল কেটেছিলেন যা ‘মারাঠা ডিচ্’ নামে পরিচিত৷ এই মারাঠা ডিচের সঙ্গে টলী সাহেব আদি গঙ্গাকে সংযুক্ত করে দেন৷ প্রাচীনকালে এই আদি গঙ্গা ছিল গঙ্গার মূল প্রবাহ ও সে বহে চলত বারুইপুরের মহাপ্রভুডাঙ্গার পাশ দিয়ে ছত্রশালের দিকে৷ মহাপ্রভু খড়দায় ভাগীরথীকে ডান হাতে রেখে বারুইপুরে বর্তমান মহাপ্রভুডাঙ্গায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ছত্রশালের কাছে গঙ্গা পার হয়ে পৌঁছুতেন শ্যামপুর৷ তারপর গোপীবল্লভপুরের পথ ধরে যেতেন পুরীর দিকে৷ এই টলী সাহেবের নামেই খালের এই
পৃথিবীতে মৌলিক জনগোষ্ঠী আছে চারটি–ককেশীয়, মঙ্গোলীয়, অষ্ট্রিক ও নিগ্রো৷ অনেকে অবশ্য সেমিটিক জনগোষ্ঠীকে এর মধ্যে ফেলতে চান না৷ তাদের মতে সেমেটিকরা আলাদা জনগোষ্টী, এরা মধ্যপ্রাচ্যের লোক৷ আবার কারো কারো মতে এরা ককেশীয় ও নিগ্রোদের বিমিশ্রণ৷ ককেশীয়দের তিনটি শাখা রয়েছে–(১) নর্ডিক •Nordic—, (২) এ্যালপাইন (Alpine), (৩) ভূমধ্যসাগরীয়৷ ‘নর্ডিক’ কথাটার অর্থ হচ্ছে ‘উত্তুরে’৷ লাতিন ‘নর্ড’ (Nord) কথাটা থেকে ‘নর্ডিক’ শব্দটি এসেছে৷ এ্যালপাইনরা বেশী উত্তরেও নয়, আবার বেশী দক্ষিণেও নয় অর্থাৎ এরা মধ্যদেশীয়, আল্প্স্ পর্বতের সানুদেশের বাসিন্দা৷
অনেকে মনে করে থাকেন যে, ‘গ্রৎস’ শব্দটি থেকে ‘গাছ’ কথাটি এসেছে আর ‘গ্রৎস’ মানে হচ্ছে, চলা যার স্বভাব৷ কিন্তু এ ধরনের মানে নেওয়া চলে না, কারণ গাছ কি কখনও চলাফেরা করে? এটি এক ধরনের বিপরীত অলঙ্কার হয়ে গেল৷ এ যেন সেই হাতে মল, পায়ে চুড়ি, কাণে নাকছাবি৷ এ প্রসঙ্গে কবীরের একটি উক্তির কথা মনে পড়ছে৷ সেখানে উল্টো কথা বলা হয়েছে৷ তবে তা’ আসলে উল্টো নয়–
‘‘চলতী কো সব গাড়ী কহে, জ্বলতী দুষকো খোয়া,
রঙ্গীকো নারঙ্গী কহে, যহ্ কবীর কা দোঁহা৷৷’’
অনেক দিন ধরে কোন একটা কাজ করে চললে অথবা কোন কাজ না করলে মানুষের মনে কুসংস্কার দানা বাঁধে৷ তাই দেখা যায় যখন অক্ষর আবিষ্কৃত হয়েছিল তার পরেও মানুষ বেদ ও অন্যান্য শাস্ত্রাদিকে অক্ষরবদ্ধ বা লিপিবদ্ধ করেনি৷ কেননা তারা মনে করত যে, যেহেতু পূর্বপুরুষেরা লেখেননি সেহেতু বেদকে অক্ষরের মধ্যে আবদ্ধ করা অন্যায় ও অবাঞ্ছনীয়৷ আসলে তখন যে অক্ষরই আবিষ্কৃত হয়নি এ কথাটা তাঁরা বেমালুম ভুলে থেকেছিলেন৷ অনেক পরবর্ত্তীকালে উত্তর–পশ্চিম ভারতে কশ্মীরের পণ্ডিতেরা যখন সারদা লিপিতে লেখা শুরু করেন তখন তাঁরা দেখলেন চারটে বেদকে একসঙ্গে মুখস্থ রাখা অসম্ভব৷ শুধু তাই নয় ততদিন বেদের ১০৮ অংশের মধ্যে ৫২টাই লুপ্ত হয়ে গেছে৷ তাই তাঁর
* কাচালঙ্কা বেশীদিন রাখতে হলে বোটা ছাড়িয়ে রাখুন৷
* কলাকে টাটকা রাখার জন্যে তাকে খবরের কাগজে জড়িয়ে ফ্রিজে রাখুন৷
* পাতলা কাপড় ভিজিয়ে তাতে কলাকে জড়িয়ে রাখলেও কলা তাজা থাকবে৷
* কাচকলা, নেবুকে প্রতিদিন অন্ততঃ কে ঘণ্টা করে জলে ভিজিয়ে রাখুন৷ বহুদিন তাজা থাকবে৷।
গোয়েন্দা গল্পে পোড়ো বাড়ির অন্ধকার চিলেকোঠায় বাদুড়ের পাখা ঝাপ্ঢানোর ঘটনা যখন আমরা পড়ি তখন অজান্তেই বুকের ভেতরটা ছম ছম করে ওঠে৷ বাদুড়ের মতো একটা নিরীহ প্রাণীকে নিয়ে কেন এই ভয়–তার কোনো যুৎসই উত্তর নেই৷ তবুও আমরা বদ লোকের বাঁকা হাসিকে নাম দিয়েছি বাদুড়ে হাসি৷ এমনকী ‘ব্যাট–ম্যান’ নামক সাড়া জাগানো একটা সিরিয়াল পর্যন্ত হয়ে গেছে টেলিভিশনে৷ তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, এই প্রাণীটির গুরুত্ব একেবারেই ফেলনা নয়৷
লিপি বা অক্ষরের ক্ষেত্রেও এমানেশনের প্রভাব রয়েছে৷ আমরা আগেই বলেছি যে এক একটি ভাষা আনুমানিক এক হাজার বছর বাঁচে কিন্তু এক একটি লিপি বাঁচে আনুমানিক দু’ হাজার বছরের মত৷ যজুর্বেদের যুগের গোড়ার দিকে কোন লিপি ছিল না৷ শেষের দিকে অর্থাৎ আনুমানিক পাঁচ হাজার বছর আগে ভারতে লিপির আবিষ্কার হয়৷ অক্ষর আবিষ্কারের সময় ঋষিরা ভেবেছিলেন যে অ–উ–ম অর্থাৎ সৃষ্টি–স্থিতি–লয় নিয়ে এই জগৎ রয়েছে৷ কিন্তু ব্যক্ত জগৎটা হচ্ছে চৈতন্যের ওপর প্রকৃতির গুণপ্রভাবের ফল–ক্গনিটিব্ ফ্যাকাল্টির ঙ্মচৈতন্যসত্তারক্ষ ওপর বাইণ্ডিং ফ্যাকল্টির ঙ্মপরমা প্রকৃতিক্ষ আধিপত্যের ফল৷ অর্থাৎ এক্ষেত্রে পরমপুরুষ প্রকৃতির ক্ষন্ধনী শক্তির আওতায় এসে গেছেন
দুহ্ + ক্ত = দুগ্ধ অর্থাৎ যা দোহন করে’ পাওয়া যায় তাই–ই দুগ্ধ৷ গোরুই হোক আর উট–ছাগল–মোষ–ভেড়া হোক, এদের দুধ দোহন করে পাওয়া যায়৷ প্রাচীনকালে গোরু যখন মানুষের পোষ মানেনি বা মানুষ তাদের বনজ অবস্থা থেকে গৃহপালিত পশু স্তরে টেনে আনতে পারেনি, তখন মানুষ প্রথম পুষেছিল ঘোড়াকে৷ ঘোড়া দ্রুতগামী পশু৷ দ্রুতগামী পশু দুধ দেয় অত্যন্ত কম৷ মানুষ সেকালে ঘোড়া পুষত তার পিঠে চড়ে লড়াই করবার জন্যে৷
কৃত্তিবাস ঃ কৃত্তি+বস+ঘঞ্৷ ভাবারূঢ়ার্থে ‘কৃত্তিবাস’ মানে কৃত্তি বা চর্মকে যিনি বসন রূপে ব্যবহার করেন৷ যোগারূঢ়ার্থে ‘কৃত্তিবাস’ বলতে বোঝায় শিবকেও কারণ তিনি ব্যাঘ্রাম্বর৷ তোমরা নিশ্চয়ই জান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম আদি পুরুষের নাম ছিল কৃত্তিবাস ওঝা৷ তাঁর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে বাংলার নবাব হুসেন শাহ্ (তিনি বাঙালী ছিলেন) তাঁকে ভূ–সম্পত্তি দান করেছিলেন, বাংলায় রামায়ণ লিখতে উৎসাহ দিয়েছিলেন ও অনুরোধ জানিয়েছিলেন৷ হুসেন শাহ্কে সঙ্গত ভাবেই বলা হয় বাংলা সাহিত্যের জনক (ফাদার অব্ বেঙ্গলি লিটারেচার)৷ কৃত্তিবাস ঠাকুর সম্ভবতঃ হুসেন শাহের জীবিতকালে রামায়ণ রচনা শেষ করতে পারেননি৷ শেষ করেছিলেন তৎপু
কোদণ্ড ঃ কঃ+দণ্ড = কোদণ্ড, যার ভাবাঢ়ার্থ হ’ল জলের বা মাটির সঙ্গে সংযোগরক্ষাকারী দণ্ড৷ প্রাচীন সংস্কৃতে ‘ক’ শব্দের একটি অর্থ ছিল ধনুকের ছিলা, চাক বা চাপ যা সেই ছিলার সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলত৷ তাই ধনুকের চাক (চক্র বা arc)–কে বলা হ’ত কোদণ্ড৷
প্রাচীনকালে মানুষ গান গেয়েছিল বিহঙ্গের কাকলির অনুরণনে৷ মানুষের জন্মেতিহাসের প্রথম উষাতেই অর্থাৎ যে অরুণ রাগে মানুষ এই পৃথিবীতে এসেছিল সেই অরুণ রাগেই এসেছিল গানের রাগ........না–জানা সুরসপ্তকের সিঞ্জিনের মঞ্জুষিকা৷ সেই নাম–না–জানা রাগের সঙ্গে তাল মেশাবার জন্যে মানুষ বস্তুতে বস্তুতে ঠোকাঠুকি করত....জন্ম নিল সংঘাত–সঞ্জাত বাদ্যযন্ত্র৷ মৃদঙ্গ, তবলা, খোল, ঘটম্–এদের আদি রূপ এসেছিল৷ তারপর মানুষ এই ঠোকাঠুকি থেকে উদ্ভুত বাদ্যযন্ত্র থেকে নিজেদের মন ভরাবার জন্যে তৈরী করে রৈক্তিক সম্পদ৷ শূন্যতাকে আচ্ছাদন দিল চর্মের বা অন্য কোন মৃদু আবেষ্টনের.....এল বিভিন্ন ধরণের তালসৃষ্টিকারী বাদ্যযন্ত্র৷ মানুষের মন এত
‘কুণ্’ ধাতু + ঘঞ্ প্রত্যয় করে আমরা ‘কোণ’ শব্দ পাচ্ছি৷ ‘কোণ’ শব্দের অর্থ হ’ল দুই বা ততোহধিকের মাঝখানে চাপা পড়ে যে ঠিক ভাবে ধবনি দিতে পারছে না.......যথাযথ ভাবে অভিব্যক্ত হচ্ছে না৷ যোগারূঢ়ার্থে ‘কোণ’ বলতে বুঝি দুইটি বাহু (side) যেখানে অভিন্ন (common) বিন্দুতে মিলছে সেখানে ওই অভিন্ন বিন্দুকে ছুঁয়ে যে ভূম্যংশ (angle) তৈরী হচ্ছে তা’৷ জ্যামিতির কোণ–বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছিলেন আদি বিদ্বান প্রথম দার্শনিক মহর্ষি কপিল৷ তিনিই প্রথম বলেছিলেন একটি সমকোণী ত্রিভুজে মোট ১৮০ ডিগ্রী কোণ আছে ও সমত্রিকোণী ত্রিভুজে কোণগুলি ৬০ ডিগ্রী হয়ে থাকে৷ এ নিয়ে তিনি অতিরিক্ত কিছু বলেননি–হয়তো বা দার্শনিক গূঢ়তত্ত্ব নিয়ে অত্য
সংস্কৃত আম্র>প্রাকৃতে, আম্ব/অম্বা৷ এর থেকে বাংলায় ‘আঁব’ শব্দটি এসেছে৷ উত্তর ভারতের অধিকাংশ ভাষাতেই এই ‘আম্ব’ বা ‘অম্বা’–জাত ‘আঁব’ শব্দটিই প্রচলিত৷ ওড়িষ্যায় আঁব (আঁব–), মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের অংশবিশেষে আঁব, গুজরাতীতে অম্বো, মারাঠীতে আম্বা (‘পিকলে আম্বে’ মানে পাকা আঁব), পঞ্জাক্ষীতে আম্ব্ (আম্ব্ দ্য অচার), হিন্দীতে ও বাঙলার কোন কোন অংশে প্রচলিত ‘আম’ শব্দটি থেকেই ‘আঁব’ শব্দটি এসেছে৷ ব্যুৎপত্তিগত বিবর্ত্তনের বিচারে আমের চেয়ে আঁব বেশী শুদ্ধ৷ তবে একটি বিবর্ত্তিত শব্দ হিসেক্ষে আমকেও অশুদ্ধ বলা চলবে না৷ বাঙলার মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী, কলিকাতা, ২৪ পরগণা, খুলনা ও যশোরের অংশবিশেষে ‘আঁব’ শব্দই প্রচল
বাঙলার একটি বৃহৎ অংশ জলের দেশ৷ এই দেশের যে সমস্ত অঞ্চলে বড় বড় নদী বয়ে গেছে সে সমস্ত অঞ্চলে কোথাও কোথাও নদী বাঁক নিয়েছে (কিষাণগঞ্জ মহকুমায় এ ধরণের একটি স্থানের নামই হচ্ছে দীঘলবাঁক৷ নামেতেই স্থানটির পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে৷ অনেক শিক্ষিত ভদ্রলোককেও স্থানটির নাম উচ্চারণ করতে শুণেছি ‘ডিগাল ব্যাঙ্ক’) ও এরই ফলে বাঁকের কাছে জলের তলায় ঘুর্ণীর সৃষ্টি হয়েছে৷ এইসব জায়গা নৌকা বা জাহাজের পক্ষে বিপজ্জনক৷ যাইহোক, কৃষ্ণনগরের কাছে জলঙ্গী নদী যেখানে বাঁক (সংস্কৃত, বক্র>বংক>বাঁকা) নিয়েছে সেখানেও নদীতে এইরূপ একটি ঘুর্ণী ছিল৷ সেকালে কলকাতা থেকে জলঙ্গী নদীর পথে পদ্মায় পৌঁছে সেখান থেকে ঢাকা যাওয়া হ’ত জলপথে৷ ওই ঘু
বেলডাঙ্গা, নারকোলডাঙ্গা পটোলডাঙ্গা প্রভৃতি
এই পৃথিবীতে নিষ্ফল কোনো কিছুই নয়–সব কিছুই ফলবান৷ একটা মানুষ চলতে চলতে হোঁচট খেয়ে পড়লো৷ তাও অর্থহীন নয়৷ একটা মানুষ হেসে উঠলো, সেটাও অর্থহীন নয়৷ ‘ইতি হসতি ইত্যর্থে ইতিহাসঃ’৷ এইভাবেই হাসি–কান্নার ভেতর দিয়ে মানুষ এগিয়ে চলেছিলো–এই কথাটা যে বলে তার নাম ইতিহাস৷
‘‘ধর্মার্থকামমোক্ষার্থ নীতিবাক্যসমন্বিতং৷
পুরাবৃত্তকথাযুক্তং ইতিহাসঃ প্রচক্ষ্যতে৷৷’’
সে আজ অনেকদিন আগেকার কথা৷ সেটা সম্ভবতঃ খ্রীষ্টপূর্ব ৫৩৪ সাল৷ রােের রাজকুমার বিজয় সিংহ জলপথে সিংহলে আসেন–সঙ্গে নিয়ে আসেন সাত শত–র মত অনুচর৷ তখন রােের রাজধানী ছিল সিংহপুর (বর্তমানে হুগলী জেলার সিঙ্গুর)৷ আর বন্দর ছিল সিংহপুরেরই নিকটবর্তী একটি স্থানে৷ পরবর্তীকালে সেই স্থানটির নাম হয়ে যায় সিংহলপাটন (স্থানটি সিঙ্গুরেরই কাছে)৷ বিজয় সিংহ লঙ্কা জয় করেন৷ তিনি ও তাঁর অনুচরেরা স্থায়ীভাবে লঙ্কায় বসবাস করেন৷ এঁরাই হলেন বর্তমান সিংহলী জনগোষ্ঠীর পূর্ব–পুরুষ৷ এই সিংহলীরা চালচলনে রীতিনীতিতে, আচারে ব্যবহারে বাঙালীদের খুবই নিকট৷ মুখাবয়ব বাঙালীদের মতই৷ কথা না বললে কে বাঙালী কে সিংহলী চেনা দায়৷ সিংহলী ভাষা বাংলা
‘নোতুন পৃথিবী’র ‘নোতুন’ বানানটি নিয়ে অনেকে প্রশ্ণ তোলেন৷
নিম্নে শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের বর্ণবিচিত্রা–১ম পর্ব পুস্তক থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি৷ এ থেকেই পাঠকবর্গ ‘নোতুন’ বানানটির তাৎপর্য বুঝতে পারবেন৷
আনন্দনগর থেকে সকাল বেলা বেরিয়ে ডিমডিহা পাহাড় ঘুরে আবার আনন্দনগর ফিরে আসতে, সুবোধদাদের বিকেল হয়ে গেছিল৷ তখনই প্রশ্ণ জাগলো মনে, আনন্দনগরই যদি এত বড় হয়, সে তুলনায় পুরুলিয়া জেলা কি বিশাল৷ আবার পুরুলিয়ার তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ যেন ডোবার পাশে হ্রদ৷ বড়র যেন শেষ নেই৷ পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় ভারত কত বিশাল ভাবা যায় না৷ আবার পৃথিবীর তুলনায় ভারত যেন মহাসমুদ্রে একটা তুচ্ছ দ্বীপ৷ এখানেই শেষ নয়৷ আমাদের এই বিশাল পৃথিবী যার তিন ভাগই জল আর একভাগ স্থলে আছে প্রায় দু’শত দেশ৷ অজস্র ভাষা, অসংখ্য প্রাণী, ততোধিক ফল–ফুল, বনানীর মহা বৈচিত্র্যের মহামিলন ক্ষেত্র৷ বিজ্ঞান বলছে এত বিশাল এই পৃথিবী যার একদিকে দিন হলে বিপরীত দিকে রা
যে নদীর সাক্ষী সে নিজে, তার ‘আমি’ বোধ৷ বহু কাল পূর্বে গ্রীক দার্শনিক হেরাক্লিটাস এর বিখ্যাত উক্তি, তুমি এক নদীতে দুর্বার নাইতে পার না : কারণ প্রতি ক্ষণে বহমান নদী স্থান বদলায়, যে জল তোমাকে এক লহমায় ছুঁয়ে গেল, চিরতরেই গেল, কোনদিন সেই ছঁুয়ে যাওয়া জলকে তুমি ফিরে পাবে না৷ নদী থাকবে, জল তরঙ্গও থাকবে কিন্তু অতীতের সেই জলকণা যারা তোমাকে ছঁুয়ে গেছিল, তারাতখন হারিয়ে গেছে৷ আছে শুধু নোতুন নদীর নোতুন জল, এক নিমেষের জন্য৷ আধুনিক দেহবিজ্ঞান মতে দেহ, মন ও অন্তর নদীর মতই বহমান৷ কিছু আগে যা ছিলনা, এখন তো আছে, আবার এখন যা আছে অল্প পরে তা থাকবে না৷ কিন্তু কোন স্থান তো শূন্য থাকবে না, অন্য কিছু সেই শূন্যস্
স্পষ্ট কথা প্রাচীনকালে ‘হিন্দু’ শব্দটি ছিল না৷ ‘হিন্দু’ শব্দটি হচ্ছে একটি ফার্সী শব্দ, যার মৌল অর্থ হচ্ছে সিন্ধু নদীর অববাহিকা অথবা তৎসন্নিহিত এলাকায় যে জনগোষ্ঠী বাস করে থাকেন৷ তা’ তাঁরা যে কোন ধর্মমতাবলম্বী হউন না কেন, তাঁরা সবাই হিন্দু৷ অর্থাৎ ‘হিন্দু’ শব্দটি সম্পূর্ণতই একটা দেশবাচক শব্দ৷ আজকাল যাঁদের হিন্দু বলি তাঁরা দেশবাচক অর্থে হিন্দু তো বটেই, ধর্মগত কারণে ‘আর্ষ’ মতাবলম্বী৷ কিন্তু বর্ত্তমানে যেহেতু আর্ষ মতের বদলেও ‘হিন্দু’ শব্দটা ব্যবহূত হচ্ছে তাই আজ যাঁরা তথাকথিত হিন্দু তাঁরা দেশবাচক অর্থেও হিন্দু মতগত বিচারেও হিন্দু৷ কিন্তু ভারতে যাঁরা তথাকথিত অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোক রয়েছেন তাঁর দে
‘ব্রাহ্মণ’ শব্দটির নানান ব্যাখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে৷ তবে মুখ্যতঃ এর অর্থ হ’ল ব্রহ্মজ্ঞ৷ মনে রাখা উচিত, বিপ্র ও ব্রাহ্মণ এক শব্দ নয়৷ ‘বিপ্র’ মানে ৰুদ্ধিজীবী (intellectual) আর ‘ব্রাহ্মণ’ শব্দের ব্যাখ্যায় ৰলা হয়েছে– ‘‘জন্মনা জায়তে শূদ্রঃ সংস্কারাৎ দ্বিজ উচ্যতে৷
বেদপাঠাৎ ভবেৎ বিপ্রঃ ব্রহ্ম জানাতি ব্রাহ্মণঃ’’৷৷
‘ঋষ্’ ধাতুর অনেকগুলি অর্থের মধ্যে একটি অর্থ হচ্ছে ঊধর্বগতি অর্থাৎ ওপরের দিকে ওঠা৷ কোন বাড়ীর একতলা থেকে ওপরে ওঠার জন্যে এই ‘ঋষ্’ ধাতু ব্যবহূত হয়৷ ‘ঋষ্’ ধাতুূ‘ইন্’ করে ‘ঋষি’ শব্দ পাচ্ছি যার ভাবারূূার্থ হচ্ছে যিনি ওপরের দিকে ওঠেন আর যোগারূূার্থ হচ্ছে উন্নতমানস.....উন্নতধী.....উন্নত ভাবনার পুরুষ৷ ‘ঋষি’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ ‘ঋষ্যা’ হলেও অভিন্নলিঙ্গ (ন্তুপ্সপ্পপ্পপ্সু ন্ধন্দ্বুস্তুন্দ্বব্জ) ‘ঋষি’ শব্দটিও চলতে পারে৷ অর্থাৎ কোন পুরুষকে যেমন ‘ঋষি’ বলা যায় কোন নারীকেও তেমনি ‘ঋষি’ বলা যেতে পারে আবার ‘ঋষ্যা’ তো চলতেই পারে উন্নত চেতনার মানুষদের ঋগ্বেদীয় যুগ থেকে ‘ঋষি’ বলে আসা হয়েছে৷ প্রতিটি মন্ত্র যেম
ঋগ্বেদ মুখ্যতঃ স্তুতি সম্বন্ধীয় হলেও তাতেও অন্যান্য কথা ও কথনিকা রয়েছে৷ সেই সকল কথা ও কথনিকার সকল অংশ সমান আধ্যাত্মিক মূল্য বহন না করলেও তারা সুপ্রাচীন মানব ঐতিহ্যের প্রতিভূ......ক্রমঃদ্রুতিতে অগ্রসৃত মানব–মননের তথা সমাজ–সংরচনার একটি আলেখ্য৷ সেদিক দিয়ে বিচারে ঋগ্বেদ ভাষা, সাহিত্য ও অভিব্যক্তির জগতে বিশেষ মূল্য বহন করে৷ ঋগ্বেদীয় যুগে লিপি ছিল না সত্য কিন্তু ধবন্যাত্মক অক্ষর ও আক্ষরিক ব্যাহৃতি তথা ধবনিবিক্ষেপ.....প্রক্ষেপ ও উপন্যাস–রীতি (উপস্থাপিত করবার পদ্ধতি) ছিল৷ ঋগ্বেদে বিভিন্ন অক্ষরের জন্যে স্বতন্ত্র উচ্চারণ–রীতিও প্রচলিত ছিল যা ঋগ্বেদের অনুগামীরা পরবর্তীকালে গুরুপ্রমুখাৎ শিখে নিতেন৷ আমা
কর্ষক
এমনিতে যাঁরা চাষবাস নিয়ে থাকেন তাঁদের জন্যে সংসৃক্ত ভাষায় বেশি প্রচলিত শব্দ দু’টি রয়েছে–কৃষীবল ও কর্ষক৷ ‘কর্ষক’ শব্দটি কৃষ ধাতু থেকে উৎপন্ন৷ যাঁরা এই কর্ষককে ‘কৃষক’ বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা না জেনেই এই ভুল করেছেন৷ আর যাঁরা আজও ‘কৃষক’ লেখেন তাঁরা ভুলকে ভুল না জেনেই লেখেন৷ আমরা ‘আকর্ষক’ ‘বিকর্ষক’ বলবার সময় ঠিক বলি কিন্তু কেন বুঝি না ‘কর্ষক’ বলবার সময় ভুল করে কৃষক বলে ফেলি৷
সর্জন
ৰাঙলার একটি ক্ষৃহৎ অংশ জলের দেশ৷ এই দেশের যে সমস্ত অঞ্চলে বড় বড় নদী বয়ে গেছে সে সমস্ত অঞ্চলে কোথাও কোথাও নদী বাঁক নিয়েছে (কিষাণগঞ্জ মহকুমায় এ ধরণের একটি স্থানের নামই হচ্ছে দীঘলবাঁক৷ নামেতেই স্থানটির পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে৷ অনেক শিক্ষিত ভদ্রলোককেও স্থানটির নাম উচ্চারণ করতে শুণেছি ‘ডিগাল ব্যাঙ্ক’) ও এরই ফলে বাঁকের কাছে জলের তলায় ঘুর্ণীর সৃষ্টি হয়েছে৷ এইসব জায়গা নৌকা বা জাহাজের পক্ষে বিপজ্জনক৷ যাইহোক, কৃষ্ণনগরের কাছে জলঙ্গী নদী যেখানে বাঁক (সংস্কৃত, বক্র>বংক>বাঁকা) নিয়েছে সেখানেও নদীতে এইরূপ একটি ঘুর্ণী ছিল৷ সেকালে কলকাতা থেকে জলঙ্গী নদীর পথে পদ্মায় পৌঁছে সেখান থেকে ঢাকা যাওয়া হ’ত জলপথে৷ ওই
আর্যদের বসতি স্থাপনের ফলে প্রয়াগ অঞ্চলটা শিক্ষা ও সংসৃক্তির গৌরবময় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল৷ তার অনেক কাল পরে পাঠান–মোগল যুগে এটা একটা ঘিঞ্জি শহরে পরিণত হয়েছিল আর তার সঙ্গে ছিল প্রতি বর্ষাতেই বন্যার তাণ্ডব৷ তাই পাঠান যুগে এরই অনতিদূরে আর একটি নতুন শহর তৈরী করা হ’ল যার নাম দেওয়া হ’ল আল্লাহ–আবাদ অর্থাৎ কিনা ত্ব্প্সস্তুন্দ্ব প্সন্দ্র ট্টপ্তপ্ত্ত্রড়–আল্লাহ্ যেখানে থাকেন৷ এই আল্লাহ্–আবাদ স্থানটিকে পরবর্ত্তীকালে শিয়ারা নাম দিয়েছিলেন ইলাহাবাদ৷ বর্ত্তমান হিন্দী ভাষায় শহরটিকে ইলাহাবাদ বলে৷ উর্দ্দু ভাষায় আল্লাহবাদ ও ইলাহাবাদ দুই নামই চলে৷ এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে রাখতে হবে, যে সমস্ত শহরের নামের শেষে ‘আব
ৰাংলায় আর একটা কথা রয়েছে ‘হাট’৷ সংসৃক্ত ‘হট্ট’ শব্দ থেকে ‘হাট’ শব্দটি এসেছে৷ যেমন পাশাপাশি সাজানো অনেকগুলি হাট, সংসৃক্তে ‘হট্টমালা’৷ ‘হট্টমালার গল্প’ তোমরা অনেকেই নিশ্চয় পড়েছ৷ সংসৃক্তে ৰড় ৰড় হাটকে ৰলে ‘হট্টিক’৷ হট্টূ‘ষ্ণিক্’ প্রত্যয় করে ‘হট্টিক’৷ যদিও বৈয়াকরণিক বিচারে ‘হট্টিক’ মানে ছোট হাট হওয়া উচিত কিন্তু আসলে ৰড় হাট অর্থেই ‘হট্টিক’ শব্দটি ব্যবহার করা হ’ত৷ ‘হট্ট’–এর তদ্ভব ৰাংলা হচ্ছে ‘হাট’৷ যেমন রাজারহাট, বাগেরহাট, মাঝেরহাট প্রভৃতি৷ ‘হট্টিক’ শব্দের ৰাংলা ‘হাটি’৷ যেমন ‘নবহট্টিক’ থেকে ‘নৈহাটি’, ‘নলহট্টিক’ থেকে ‘নলহাটি’, ‘গুবাকহট্টিক’ থেকে ‘গৌহাটি’ (গুয়াহাটি) প্রভৃতি৷ দক্ষিণ ৰাংলায় হাটকে ‘হ
পরিচয় ও প্রজাতি ঃ ছাঁচি কুমড়ো সাধারণতঃ মাটিতে হয় না৷ ঘরের চালাতে বা মাচাতে এই লতানে গাছটাকে তুলে দিতে হয়৷ এর জন্যে ছাঁচি কুমড়োকে গ্রাম–ৰাংলায় অনেকে চালকুমড়োও ৰলেন৷ এরও তিনটি ঋতুগত প্রজাতি রয়েছে৷ বর্ষাতী চালকুমড়োকে অবশ্যই মাচায় অথবা ঘরের চালে তুলে দিতে হয়৷ শীতের প্রজাতির ছাঁচি কুমড়োকে মাটিতেই ক্ষেড়ে যেতে দেওয়া হয়৷ তবে কেউ ইচ্ছে করলে মাচায় তুলে দিতে পারেন৷ গ্রীষ্মকালীন চালকুমড়ো মাটিতেই ক্ষেড়ে যেতে থাকে৷ (একেও) কেউ ইচ্ছে করলে মাচায় তুলে দিতে পারেন৷ তবে বর্ষাতী চালকুমড়োকে মাচায় তুলে দিতেই হবে, নইলে পোকার আক্রমণে ফলটি নষ্ট হবেই.....গাছও নষ্ট হবে৷
পাঠান–মোগল যুগে আগ্রা প্রদেশ ও অযোধ্যা প্রদেশের মিলিত নাম ছিল হিন্দোস্তান বা হিন্দোস্তাঁ (প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি যে ‘স্তান’ বা ‘স্তাঁ’ শব্দটি ফার্সী যার সংসৃক্ত প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘স্থান’৷ উর্দ্দুতে এই ফার্সী রীতি অনুসরণ করা হয়৷
‘‘সারে জাঁহাঁসে আচ্ছা হিন্দোস্তাঁ হমারা
হম বুলবুলেঁ হেঁ ইসকী যহ্ গুলিস্তাঁ হমারা’’
পাঠান–মোগল যুগে আগ্রা প্রদেশ ও অযোধ্যা প্রদেশের মিলিত নাম ছ
দক্ষিণ বাংলায় প্রাচীনকালে হোগ্লা দিয়েই ম্যাড়াপ তৈরী করা হত৷ দক্ষিণ বাংলার নোনা জলে এককালে আপনা থেকেই প্রচুর হোগ্লা গাছ জন্মাত৷ ইংরেজরা যখন এদেশের দখল নিয়েছিলেন তখন দক্ষিণ বাংলায় বিশেষ করে খুলনা (তখন যশোরের অন্তর্গত ছিল), ২৪ পরগণা (তখন নদীয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল) ও মেদিনীপুর (তখন নাম ছিল হিজলী) হোগলা ও গোল গাছে ভর্ত্তি ছিল৷ ওই হোগ্লা ও গোলপাতা দিয়ে কেবল যে ম্যাড়াপ বা মণ্ডপ তৈরী হত তাই–ই নয়, দরিদ্র মানুষের ঘরও তৈরী হত৷ দক্ষিণ বাংলার নাবিকেরা যখন সমুদ্র যাত্রা করতেন তখন যেমন তাঁরা সঙ্গে করে জালা–ভর্ত্তি মিষ্টি জল নিয়ে যেতেন তেমনি নিয়ে যেতেন হোগলার স্তুপ যা শুধু নৌকোতেই নয় ভিন্ন দেশের, ভিন্ন মাটিতে
‘কৃষ্ণ’ শব্দের একটি অর্থ হ’ল মহর্ষি বেদব্যাস৷ মহর্ষি বেদব্যাস প্রয়াগে গঙ্গা–যমুনার সঙ্গমস্থলের নিকটে যমুনা থেকে উত্থিত একটি কৃষ্ণ দ্বীপে জালিক–কৈবর্ত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন৷ যমুনা নদীর নিকটস্থ মৃত্তিকা হ’ল কৃষ্ণ কর্পাস মৃত্তিকা (ব্ল্যাক কটন সয়েল)৷ এই জন্যে যমুনার জলকেও কালো রঙের বলে মনে হয়৷ যমুনার যে চরটিতে মহর্ষি ব্যাস জন্ম গ্রহণ করেন সেটিরও ছিল কৃষ্ণমৃত্তিকা৷ ভারতের ইতিহাসে ব্যাস নামে কয়েক জনই খ্যাতনামা পুরুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন (উত্তর মীমাংসার বাদরায়ণ ব্যাস)৷ তাঁদের থেকে পৃথক করার জন্যে এঁকে বলা হত কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস অর্থাৎ কালো রঙের দ্বীপের অধিবাসী ব্যাস৷ এই কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস মহাভার
সে আজ অনেকদিন আগেকার কথা৷ সেটা সম্ভবতঃ খ্রীষ্টপূর্ব ৫৩৪ সাল৷ রাঢ়ের রাজকুমার বিজয় সিংহ জলপথে সিংহলে আসেন–সঙ্গে নিয়ে আসেন সাত শত–র মত অনুচর৷ তখন রােের রাজধানী ছিল সিংহপুর (বর্তমানে হুগলী জেলার সিঙ্গুর)৷ আর বন্দর ছিল সিংহপুরেরই নিকটবর্তী একটি স্থানে৷ পরবর্তীকালে সেই স্থানটির নাম হয়ে যায় সিংহলপাটন (স্থানটি সিঙ্গুরেরই কাছে)৷ বিজয় সিংহ লঙ্কা জয় করেন৷ তিনি ও তাঁর অনুচরেরা স্থায়ীভাবে লঙ্কায় বসবাস করেন৷ এঁরাই হলেন বর্তমান সিংহলী জনগোষ্ঠীর পূর্ব–পুরুষ৷ এই সিংহলীরা চালচলনে রীতিনীতিতে, আচারে ব্যবহারে বাঙালীদের খুবই নিকট৷ মুখাবয়ব বাঙালীদের মতই৷ কথা না বললে কে বাঙালী কে সিংহলী চেনা দায়৷ সিংহলী ভাষা বাংলা
প্রাচীনকালে মানুষ গান গেয়েছিল বিহঙ্গের কাকলির অনুরণনে৷ মানুষের জন্মেতিহাসের প্রথম উষাতেই অর্থাৎ যে অরুণ রাগে মানুষ এই পৃথিবীতে এসেছিল সেই অরুণ রাগেই এসেছিল গানের রাগ........না–জানা সুরসপ্তকের সিঞ্জিনের মঞ্জুষিকা৷ সেই নাম–না–জানা রাগের সঙ্গে তাল মেশাবার জন্যে মানুষ বস্তুতে বস্তুতে ঠোকাঠুকি করত....জন্ম নিল সংঘাত–সঞ্জাত বাদ্যযন্ত্র৷ মৃদঙ্গ, তবলা, খোল, ঘটম্–এদের আদি রূপ এসেছিল৷ তারপর মানুষ এই ঠোকাঠুকি থেকে উদ্ভুত বাদ্যযন্ত্র থেকে নিজেদের মন ভরাবার জন্যে তৈরী করে রৈক্তিক সম্পদ৷ শূন্যতাকে আচ্ছাদন দিল চর্মের বা অন্য কোন মৃদু আবেষ্টনের.....এল বিভিন্ন ধরণের তালসৃষ্টিকারী বাদ্যযন্ত্র৷ মানুষের মন এত
‘কুণ্’ ধাতু + ঘঞ্ প্রত্যয় করে আমরা ‘কোণ’ শব্দ পাচ্ছি৷ ‘কোণ’ শব্দের অর্থ হ’ল দুই বা ততোহধিকের মাঝখানে চাপা পড়ে যে ঠিক ভাবে ধবনি দিতে পারছে না.......যথাযথ ভাবে অভিব্যক্ত হচ্ছে না৷ যোগারূরার্থে ‘কোণ’ বলতে বুঝি দুইটি বাহু (side) যেখানে অভিন্ন (common) বিন্দুতে মিলছে সেখানে ওই অভিন্ন বিন্দুকে ছুঁয়ে যে ভূম্যংশ (angle) তৈরী হচ্ছে তা’৷ জ্যামিতির কোণ–বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছিলেন আদি বিদ্বান প্রথম দার্শনিক মহর্ষি কপিল৷ তিনিই প্রথম বলেছিলেন একটি সমকোণী ত্রিভুজে মোট ১৮০ ডিগ্রী কোণ আছে ও সমত্রিকোণী ত্রিভুজে কোণগুলি ৬০ ডিগ্রী হয়ে থাকে৷ এ নিয়ে তিনি অতিরিক্ত কিছু বলেননি–হয়তো বা দার্শনিক গূঢ়তত্ত্ব নিয়ে অত্য
প্রাউট–প্রবক্তা মহান দার্শনিক ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার ভাষাতত্ত্ব ও ব্যাকরণ বিজ্ঞানের ওপরও বহু অমূল্য পুস্তক রচনা করেছেন, যা কলকাতা, ঢাকা, কল্যাণী প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা অধ্যাপক সহ বিশিষ্ট ভাষাতাত্ত্বিক ও জ্ঞানী গুণীজনের দ্বারা বহুল প্রশংসিত৷ তাঁর রচিত ‘প্রভাতরঞ্জনের ব্যাকরণ বিজ্ঞানে’ তিনি বহু প্রচলিত বাংলা বানানের ভুলত্রুটি বা অর্থবিচ্যুতি দেখিয়ে সে সবের সংস্কার সাধনেও সচেষ্ট হয়েছেন৷ এ ধরনের কিছু বাংলা বানান সম্পর্কে তাঁর অভিমত তাঁর ভাষাতেই প্রকাশ করা হচ্ছে ঃ
ব্যক্তি/ব্যষ্টি
অনেক দিন ধরে কোন একটা কাজ করে চললে অথবা কোন কাজ না করলে মানুষের মনে কুসংস্কার দানা ক্ষাঁধে৷ তাই দেখা যায় যখন অক্ষর আবিষ্কৃত হয়েছিল তার পরেও মানুষ বেদ ও অন্যান্য শাস্ত্রাদিকে অক্ষরৰদ্ধ বা লিপিবদ্ধ করেনি৷ কেননা তারা মনে করত যে, যেহেতু পূর্বপুরুষেরা লেখেননি সেহেতু বেদকে অক্ষরের মধ্যে আৰদ্ধ করা অন্যায় ও অবাঞ্ছনীয়৷ আসলে তখন যে অক্ষরই আবিষ্কৃত হয়নি এ কথাটা তাঁরা বেমালুম ভুলে থেকেছিলেন৷ অনেক পরবর্ত্তীকালে উত্তর–পশ্চিম ভারতে কশ্মীরের পণ্ডিতেরা যখন সারদা লিপিতে লেখা শুরু করেন তখন তাঁরা দেখলেন চারটে বেদকে একসঙ্গে মুখস্থ রাখা অসম্ভব৷ শুধু তাই নয় ততদিন বেদের ১০৮ অংশের মধ্যে ৫২টাই লুপ্ত হয়ে গেছে৷ তাই তা
বাংলায় ‘গাছা’, ‘গাছি’, ‘গাছিয়া’, (‘গেছে’)–এইসব নামে প্রচুর স্থান রয়েছে৷ বাংলা ভাষায় এই ‘গাছ’ কথাটার উৎস জানা দরকার৷ গাছের সংসৃক্ত প্রতিশব্দ ‘বৃক্