প্রাউট প্রবক্তার ভাষায়

সাহিত্য

বিশ্বে আজ সাহিত্য নামে যে জিনিসটি চলছে তার অধিকাংশই সাহিত্য নয়,---রচনা মাত্র৷ সাহিত্যিককে তার কলমের প্রতিটি আঁচড়েই বিরাট দায়িত্বৰোধের পরিচয় দিতে হবে৷ তাই সত্যিকারের সাহিত্যিক হতে গেলে কেবল ভাষা বা ভাব থাকলেই চলৰে না, তার চাইতে বেশী আরও কিছু চাই, প্রতিটি বস্তুর ভেতরে প্রবেশ করবার শক্তি---মন দিয়ে প্রতিটি মনকে নিজের মনে মিলিয়ে’ ফেলবার সাধনা৷ সোজা কথায় বলতে গেলে তাকে তত্ত্বদর্শী হতেই হৰে৷ জীবন সম্বন্ধে সামান্য ভাসা-ভাসা জ্ঞান নিয়ে ভাষার তুবড়ি ছুটিয়ে’ সাহিত্য তৈরী করা যায় না৷ বৈদিক ভাষায় সাহিত্যিককে কবি ৰলা হত৷ কারণ ‘কবি’ শব্দের অর্থ তত্ত্বদ্রষ্টা৷

নারী-অধিকার

নারী ও পুরুষ---উভয়েই একই পরম পিতার সন্তান৷ উভয়েই যেহেতু পরম পিতার সন্তান জীবনের অভিব্যক্তি ও স্বাধিকারের ক্ষেত্রে উভয়েরই সমান অধিকার৷ অস্তিত্ব মানে কেবল বেঁচে থাকাই নয়৷ পশুরাও তো ৰেঁচে থাকে! কিন্তু আমাদের কাছে জীবনের তাৎপর্য অনেক---অনেক ৰেশী৷

আমাদের কাছে জীবন হ’ল একটা মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে জীবনধারণ৷ শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সমস্ত সম্ভাবনা বিকাশের যে স্বাধীনতা তা অর্জনের প্রয়াসের মধ্যেই নিহিত রয়েছে জীবনের তাৎপর্য৷ কেবল ভালমন্দ কোন কিছু করার ছাড়পত্রকে প্রকৃত স্বাধীনতা ৰলে না৷

সামন্ততন্ত্র ও জমিদারী প্রথা

তোমরা যারা জমির খাজনা সংক্রান্ত বিধিব্যবস্থা নিয়ে পড়াশোণা করেছ তারা জান যে ভারতে পাঠান, মোগল, প্রাক্–ৰৌদ্ধ ও ৰৌদ্ধযুগে রাজাকে খাজনা দেওয়া হত সোণার বিনিময়ে৷ দশ–বিশটা গ্রামকে একত্র করে’ এক একটা  revenue village বা মৌজা তৈরী হত আর গ্রামবাসীদের মধ্যে একজনকে ক্ষমতা দেওয়া হত খাজনা সংগ্রহের৷ এই খাজনা বা কর আদায়কারীদের সরকার কোন পয়সাকড়ি দিত না, জমি দিত যা চাষ করে’ তারা জীবিকা নির্বাহ করত৷ তারা কৃষিক্ষেত্রে রাজা ও জনসাধারণের মধ্যে মধ্যস্বত্বভোগী (intermediaries) রূপে কাজ করত, আর ধীরে ধীরে এরাই শক্তিশালী জমিদারে পরিণত হ’ল৷ প্রাচীনকাল থেকেই এই মধ্যস্বত্বভোগীদের অস্তিত্ব ছিল৷ এদের বলা হত জমিদার, পত্তনি

যুক্তির রাজত্ব

এই সৌরজগৎ সম্পদ-প্রাচূর্যে ভরপুর৷ শুধুমাত্র মানুষই নয়, জীব জগতের খাওয়া-পরা তথা সর্বাত্মক বিকাশের জন্যে পর্যাপ্ত সম্পদ এখানে রয়েছে! কিন্তু আমাদের ক্রুটিপূণ চিন্তা বা দুর্বুদ্ধির জন্যেই আমরা বহু সমস্যার যথার্থ সমাধান খুঁজে পাইনি৷ আমাদের এ পৃথিবী যেন গুপ্তধন-ভাণ্ডার৷ বিশ্বের সমস্ত প্রাণীর রক্ষণাবেক্ষণ তথা তাদের পরিবর্ধনের জন্যে আমাদের এই লুকোনো সম্পদকে ভালভাবে কাজে লাগাতে হবে৷

আইন অমান্য আন্দোলন

তোমাদের কস্তুরী–মৃগনাভি প্রসঙ্গে বলেছিলুম যে, কস্তুরী–মৃগের দেহ–নিঃসৃত হর্মোন নাভিচক্রে জমা হয়ে যতই শক্ত হতে থাকে ততই তার সুগন্ধের মাত্রা বাড়তে থাকে৷ পরে শেষ পর্যন্ত সে যখন অতি মাত্রায় কঠোরতা প্রাপ্ত হয়, সুগন্ধ বাড়ে অত্যন্ত অধিক৷ এই অবস্থায় গন্ধমত্ত হরিণ গন্ধের খোঁজে ছুটতে ছুটতে শেষ পর্যন্ত ক্লান্ত, অবসন্ন হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়৷ যেমন বিশেষ বিশেষ অবস্থায় মদমত্ত মাতঙ্গ যদি উন্মাদ হয়ে যায় তখন সেই উন্মাদ অবস্থায় অল্প কিছুক্ষণ থাকার পরে মারা যায়৷ তবে সবাই উন্মাদ হয় না৷ যারা উন্মাদ হয় তারাও বেশী দিন উন্মাদ অবস্থায় বাঁচে না ৷ হাতীদের মধ্যে এই ধরনের মৃত্যু খুব বেশী ঘটে না......তবে ঘটে বৈকি৷ পাগলা

নোতুন করে ইতিহাস লেখা হোক

উদ্ভিদ জগৎ,জীব জগৎ ও মানব জগৎ---তিনটেতেই কতকগুলো সাধারণ গুণ রয়েছে, সাধারণ ধর্ম রয়েছে৷ এই সাধারণ বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম অনুযায়ী তাদের আপন আপন অস্তিত্ব বজায় রাখে৷ তাহলেও উদ্ভিদ জগৎ আর জীব জগৎ সম্পূর্ণ এক নয়৷ জীব জগতের জন্যে কতকগুলো বিশেষ কর্তব্য নির্দিষ্ট রয়েছে, কতকগুলো বিশেষ বৈশিষ্টেও তারা বৈশিষ্ট্যবান৷ এই কারণে উদ্ভিদ ও জীবের মধ্যে একটা স্পষ্ট পার্থক্যও রয়েছে৷ জীব জগতের যদি ওই বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য না থাকতো তা হলে তা’ দিকে আমরা জীব না ৰলে উদ্ভিদ ৰলতাম৷ উদ্ভিদ ও জীব-জন্তুর মধ্যে যে সমস্ত সাধারণ গুণ বা ধর্ম বর্তমান, মানুষের মধ্যেও সেই গুণ বা ধর্ম বর্তমান৷ মানুষের মধ্যে এর অতিরিক্ত গুণও রয়েছে৷ যদি

ধর্ম কী?

ক্রমবিবর্তনের চরম পরিণতি মানুষ অণুচৈতন্যের ব্যাপক স্ফূর্ত্তি-নিৰন্ধন অন্যান্য জীবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ৷ মানুষ তার এই স্ফূর্ত চৈতন্যের সাহায্যে ভাল-মন্দের পার্থক্য নির্ধারণে তথা বিপন্মুক্তির পথ অন্বেষণে সক্ষম৷ কোন জীবই দুঃখদুর্দশাক্লিষ্ট জীবন চায় না৷ বস্তুতঃ মানুষের স্বভাবই হচ্ছে আনন্দের অন্বেষণ করা৷ এখন দেখা যাক্‌ এই আনন্দ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে মানুষ কী করে, আর তাতে তা’ লব্ধ হয় কি না৷

সাম্প্রদায়িকতার ভয়াবহতা

মানুষ যে জাতপাত ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে যায় সেটা কি স্বাভাবিক, না কৃত্রিম স্বাভাবিক বিভাজন কোষ বিভাজনের মত – একটা কোষ যেমন দু’টো কোষে বিভাজিত হয়৷ কৃত্রিম বিভাজন এরকম নয়৷ কাজেই, মানুষের জাতি ও সম্প্রদায়গত ভেদকে কী বলা যাবে–স্বাভাবিক বিভাজন, না কৃত্রিম বিভক্তিকরণ বৈরী শক্তিগুলির মধ্যে কিছু দল আছে যেগুলো বিচ্ছিন্নতার মতাদর্শে চালিত হয় ও কিছু লোকও আছে যারা এই সব বিভেদকামী দলগুলির দ্বারা চালিত হয়৷ এই সমস্যার সমাধান কীভাবে সম্ভব হবে কীভাবে আমরা এই সব যুুযুধান দলগুলিকে একটা অচল সেকেলে ভাবাদর্শকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা থেকে নিবৃত্ত করতে পারব যা দেশকে খণ্ড বিখণ্ড করে দিতে পারে কী করা উচিত আমাদের স্বল্প

বাঙলার ভূুগোল-বিচিত্রা

ড্যাম, ড্যাইক, ব্যারাজ

সেচের খাল নৌ-চালনার জন্য নয়, তাতে জলও সব সময় থাকে না৷ প্রয়োজন বোধে স্লুইস্‌ গেট দিয়ে তাতে জল ছাড়া হয়৷ সেচের ছোট খালগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কানা খাল অর্থাৎ কিছুটা গিয়েই তাদের চলার পথ অবরুদ্ধ হয়ে যায়৷ এই সেচের খালকে ‘কুল্যা’ বলা হয়৷ নৌবহ খাল ও সেচের খালকে পৃথক ভাবে ৰোঝাবার জন্য নৌ-কুল্যা ও সেচ- কুল্যা ৰলা যেতে পারে৷

শিক্ষা ও নব্য-মানবতাবাদ

তোমরা জান যে সকল প্রাণীন সত্তারই অন্তর্নিহিত স্বভাব হল নিজেকে ভৌতিক ক্ষেত্রে বিস্তারিত করে দেওয়া, আর এই উদ্দেশ্যেই তাদের মৌলিক গুণের জন্যেই--উপরি-উক্ত বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক গুণছাড়া আর কীই বা ৰলা যেতে পারে--তারা অন্যের স্বার্থের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে, অপরাপর জীবেদের শোষণ করে৷ এই মাত্র ৰললুম যে মানুষই হোক বা অনুন্নত জীবজন্তুই হোক সকলেরই অন্তর্নিহিত ধর্ম হল এটাই মানুষের ক্ষেত্রে রয়েছে আরেকটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যাকে সহজাত বৈশিষ্ট্যও ৰলতে পারি--আর সেটা হল এই যে, সে স্বভাবগত ভাবেই তার মানস জগতের পরিধিকে বাড়িয়ে তুলতে চায়৷ তাই মানুষ তার ভৌতিক ক্ষুধাকে আধ্যাত্মিক ভাবনার দিকে-আধ্যাত্মিক এষণার দিকে পরিচালিত

প্রাউটের পঞ্চম মৌলিক সিদ্ধান্তের বিশেষত্ব

প্রাউটের পঞ্চম মৌলিক সিদ্ধান্ত নিম্নরূপ ঃ---

‘‘দেশ কাল পাত্রৈঃ উপযোগাঃ পরিবর্ত্তন্তে,

          তে উপযোগাঃ প্রগতিশীলাঃ ভবেয়ুঃ৷’’

---দেশ-কাল-পাত্রের পরিবর্ত্তন অনুযায়ী সমগ্র উপযোগ নীতির পরিবর্ত্তন হতে পারে আর এই উপযোগ হবে প্রগতিশীল স্বভাবের৷

রাজনীতি–সচেতন মধ্যবিত্ত, ছাত্র–যুব ও সাধারণ মানুষই বিপ্লব আনবে

আজ জীবনের সকল ক্ষেত্রেই নীতিহীনতার এক কালো ছায়া দ্রুত ঘনিয়ে আসছে ও তা মানুষের প্রগতির পথে দারুণ অন্তরায় সৃষ্টি করে চলেছে৷ নীতিহীনতার এই আবর্জনা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে চাই প্রচণ্ড শক্তিশালী নৈতিক বল৷ এই দুর্দান্ত নৈতিক বল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোন সরকারের কাছ থেকে আশা করা যায় না৷ এটা আমরা আশা করতে পারি অরাজনৈতিক পক্ষ থেকে৷ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোন দল বা নেতাদের খামখেয়ালী কাজকর্মকে বাধা দেওয়ার মতো নৈতিক বলের যদি সমাজে অভাব দেখা দেয়, তাহলে যে কোন সরকার–তা সে ফ্যাসীবাদী, সাম্রাজ্যবাদী, সাধারণতন্ত্রী, একনায়কতন্ত্রী, আমলাতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক, যাই হোক না কেন–সে সরকার অত্যাচারী হতে বাধ্য৷ সরকারের

বাঙলাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে গেলে যা করা প্রয়োজন

গমের সাথী ফসল হিসেবে পোস্তোর চাষও চলতে পারে৷ পোস্ত রাঢ়ের মানুষের প্রিয় খাদ্য৷ পোস্ত ফলের আঠা অহিফেন একটি সাংঘাতিক ধরণের মাদক দ্রব্য৷ অথচ এর বীজকোষের মধ্যস্থিত পোস্ত বীজ বা পোস্ত দানা একটি সাত্ত্বিক খাদ্য–রাঢ়বাসীর অতি প্রিয় ভোজ্য৷ দরিদ্র রাঢ় প্রতি বৎসর লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বাইরে থেকে এই পোস্ত আমদানী করে৷ রাঢ়ের কৃষ্ণমৃত্তিকা যদিও পোস্ত চাষের পক্ষে অত্যুত্তম নয়, তবুও রাঢ়ের গমের ক্ষেতের চারিপাশে সীমান্ত রেখা হিসেবে আল বরাবর পোস্ত লাগানো যেতে পারে৷ গমের সঙ্গে বিমিশ্র ফসল হিসেবেও চাষ করা যেতে পারে৷ পোস্ত একটি আবগারি বিভাগীয় পণ্য, তাই এর চাষের  জন্যে

ৰৃহত্তর ৰাঙলা

প্রায় ৫০০০ বছর আগে অষ্ট্রিক, মে৷ালিয়ন আর নিগ্রো রক্তের সংমিশ্রণ–জাত ৰাঙালী জনসমুদায় সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময় ৰাঙলার ভাষা ছিল সংস্কৃত, তাই ৰাংলাভাষারও পথনির্দেশক ভাষা হচ্ছে সংস্কৃত। প্রায় ১২০০ বছর আগে ৰাংলাভাষার এক রূপান্তরণ হয়েছিল। সেই সময় ৰাঙলা বলতে বোঝাত বর্তমানের পশ্চিমব৷, নেপালের ঝাঁপা জেলা, বিহারের পূর্বাংশ, সম্পূর্ণ ৰাঙলাদেশ আর বর্মা, মেঘালয়ের সমতল অংশ, প্রাগজ্যোতিষপুরের কিছু অংশ আর অসমের বরপেটা, কামরূপ ও নগাঁও। ৰৃহত্তর ৰাঙলার এই ছিল এলাকা। আজ ৰাঙালী বলতে ৰোঝায় দুই প্রকারের অভিব্যক্তি– ভারতীয় ৰাঙালী আর ৰাঙলাদেশী ৰাঙালী । এই দু’য়ের মধ্যে একটা সংহতিকরণ বা মিশ্রণ অবশ্যই হওয়া উচিত।

যোগাযোগের প্রাথমিক মাধ্যম হিসেবে স্থানীয় ভাষার ব্যবহার বাঞ্ছনীয়

কোন অঞ্চলের সরকারী বা বেসরকারী সংস্থা ও অফিসগুলিতে স্থানীয় ভাষাকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে৷

গণ উন্নয়ন প্রকল্পের কয়েকটি দিক

(এর আগে ‘অর্থনৈতিক ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার অ৷ হিসেবে স্থানীয় জনসাধারণের সার্বিক কর্মসংস্থান, সার্বিক শিল্প বিকাশ, বহির্পণ্যের আমদানী এড়িয়ে চলা ও যোগাযোগের প্রাথমিক মাধ্যম হিসেবে স্থানীয় ভাষার ব্যবহার নিয়ে প্রবক্তার বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছেঙ্গ এখন স্থানীয় ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ ও স্থানীয় সামাজিক–র্থনৈতিক দাবী সম্পর্কে প্রবক্তার কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হ’লঙ্গ        – সম্পাদক)

স্থানীয় ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম রূপে গ্রহণ ঃ

পুঁজিবাদ ও সাম্যবাদ (কম্যুনিজম)–– এদের মূলগত ত্রুটি

সাম্যবাদ ও পুঁজিবাদ মূলতঃ জড়বাদী দর্শন৷ উভয়েই জাগতিক আসক্তির মানসিকতাকে বাড়িয়ে দেয়৷ যার ফলে মানুষ অন্ধভাবে অর্থ, নাম, যশ, ক্ষমতা, প্রতিষ্ঠা ও প্রভাব–প্রতিপত্তির জন্যে ক্ষ্যাপা কুকুরের মত ছুটে চলে৷

নূ্যনতম প্রয়োজন ও সর্বাধিক সুখ–সুবিধা

আমাদের এই সমাজের অসংখ্য আকর্ষণ, আর সেই আকর্ষণে আকর্ষিত হওয়াই মানুষের স্বভাব৷ মানুষের এই স্বভাবকে প্রশ্রয় দিয়ে কম্যুনিজম সবাইকে সমান সম্পদ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ কিন্তু এই বিশ্বের জাগতিক সম্পদ সীমিত৷ তাই সকলকে কি সম পরিমাণ সম্পদ দেওয়া সম্ভব সম্ভব নয়৷ আর শুধু তাই নয়, সেই প্রচেষ্টাও আপাতদৃষ্টিতে মনোরঞ্জক এক ভণ্ডামি৷ এখন কম্যুনিজম মৃত্যুশয্যায়৷ কম্যুনিজম ছিল এক ‘ইজম্’ (মতবাদ)–বাগাড়ম্বরপূর্ণ ভাষার ফুলঝুরি৷

নূ্যনতম প্রয়োজন ও সর্বাধিক সুখ–সুবিধা

আমাদের এই সমাজের অসংখ্য আকর্ষণ, আর সেই আকর্ষণে আকর্ষিত হওয়াই মানুষের স্বভাব৷ মানুষের এই স্বভাবকে প্রশ্রয় দিয়ে কম্যুনিজম সবাইকে সমান সম্পদ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ কিন্তু এই বিশ্বের জাগতিক সম্পদ সীমিত৷ তাই সকলকে কি সম পরিমাণ সম্পদ দেওয়া সম্ভব সম্ভব নয়৷ আর শুধু তাই নয়, সেই প্রচেষ্টাও আপাতদৃষ্টিতে মনোরঞ্জক এক ভণ্ডামি৷ এখন কম্যুনিজম মৃত্যুশয্যায়৷ কম্যুনিজম ছিল এক ‘ইজম্’ (মতবাদ)–বাগাড়ম্বরপূর্ণ ভাষার ফুলঝুরি৷

সংবিধান সংশোধন

আজকের পৃথিবীতে সকল দেশের সংবিধানেরই কম–বেশী সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে৷ সংবিধান প্রসঙ্গে কতকগুলো বিশেষ বিশেষ সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে৷

ধর্ম কী?

ক্রমবিবর্তনের চরম পরিণতি মানুষ অণুচৈতন্যের ব্যাপক স্ফূর্ত্তি-নিবন্ধন অন্যান্য জীবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ৷ মানুষ তার এই স্ফূর্ত চৈতন্যের সাহায্যে ভাল-মন্দের পার্থক্য নির্ধারণে তথা বিপন্মুক্তির পথ অন্বেষণে সক্ষম৷ কোন জীবই দুঃখ দুর্দশাক্লিষ্ট জীবন চায় না৷ বস্তুতঃ মানুষের স্বভাবই হচ্ছে আনন্দের অন্বেষণ করা৷ এখন দেখা যাক্‌ এই আনন্দ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে মানুষ কী করে, আর তাতে তা’ লব্ধ হয় কি না৷

বিদ্বান ও শিক্ষিত

তাকেই Learned বা বিদ্বান বলব যে প্রচুর পড়াশোনা করেছে, যা পড়েছে তা ৰুঝেছে, সেটা মনে রেখেছে, ও সেগুলিকে কার্যেও রূপায়িত করেছে৷ কোনো শিক্ষিত (Educated) ও বিদ্বান মানুষের পুঁথিগত বিদ্যা থাকতে পারে বা নাও পারে, তেমনি প্রথাগত ভাবে বিদ্যার্জনকারী কোনো একজন মানুষ প্রকৃত শিক্ষিত হতেও পারে আবার নাও পারে৷ তাহলে সত্যিকারের বিদ্বান ও শিক্ষিত তাকেই বলব যার মধ্যে নিম্নোক্ত চারটি তত্ত্ব থাকতেই হবে, এদের মধ্যে একটিরও অভাব থাকলে তাকে বিদ্বান বলা যাবে না ঃ–

১৷ একটি দু’টি নয়, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর অনেক বই যত্নের সঙ্গে পড়তে হবে৷ অল্প পড়াশোনা করে বিদ্বান হওয়া যায় না৷

সদ্বিপ্র বোর্ড

আগে আমি বহুবার বলেছি যে যাঁরা আধ্যাত্মিক নীতিবাদ তথা ‘‘যম–নিয়ম’’ পালন করেন আর যাঁরা পরম চৈতন্য সত্তার প্রতি অনুরক্ত তাঁরাই হলেন সদ্বিপ্র৷ মানুষ সদ্বিপ্রকে চিনে নেবে তাঁর আদর্শ আচরণ, নিঃস্বার্থ সেবা, কর্ত্তব্যপরায়ণতা আর নৈতিক দৃঢ়তার মধ্যে দিয়ে৷ একমাত্র সদ্বিপ্ররাই নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করতে পারে আর সকলকে সর্বাত্মক প্রগতির পথে নিয়ে চলতে পারে৷ এই সদ্বিপ্ররা–যারা সঠিক জীবনাদর্শকে অনুসরণ করে আর যথাযথ সাধনা পদ্ধতির অনুশীলন করে–তারাই ভবিষ্যতে মানবসমাজের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত থাকবে৷

প্রসঙ্গ ঃ গণতান্ত্রিক নির্বাচন

ৰলা হয়, গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের জন্যে, জনগণের দ্বারা, জনগণের শাসন৷ শূদ্র যুগের পর গোষ্ঠীপতিদের হাতে ক্ষমতা স্থানান্তরিত হয়৷ কালক্রমে গোষ্ঠীপতিরা সামন্ত রাজা হয়ে পড়ে৷ রাজতন্ত্রের অত্যাচারের বিরুদ্ধ মনোভাব থেকে গণতান্ত্রিক মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে৷ গণতন্ত্রের ইতিহাস অতি প্রাচীন৷ কথিত হয় যে প্রাচীন ভারতবর্ষে লিচ্ছবী রাজবংশের সময়ে গণতন্ত্রের সূত্রপাত হয়৷ অত্যন্ত প্রাচীন সংঘটন ৰলে এতে কিছু বিকৃতি আসা মোটেই অস্বাভাবিক নয়৷

সমসমাজ তত্ত্ব

চলা জগতের ধর্ম৷ চলে চলেছে ৰলেই এই পৃথিবীর নাম ‘জগৎ’৷ ‘গম্‌’ ধাতুর উত্তর ‘ক্কিপ্‌’ প্রত্যয় করে ‘জগৎ’ শব্দ নিষ্পন্ন যার মানে হ’ল---চলা যার স্বভাব৷ ব্যষ্টিগত জীবনে যেমন চলতে হয় সমষ্টিগত তথা সামূহিক জীবনেও তেমনি চলতে হয়৷ কিন্তু এই যে চলা, এই চলার জন্যে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন আছে৷ একটা হচ্ছে চলার জন্যে একটা সম্প্রেষণ, পেছন থেকে একটা ধাক্কা৷ যখন চলাটা বন্ধ হয় তখন ধাক্কা দিয়ে ৰলতে হয়---চল চলতে হবৰে৷ দ্বিতীয়তঃ নিজে যে চলবে তার চলবৰার সামর্থ্য থাকা চাই অর্থাৎ চলার উপযুক্ত রসদ তার থাকা চাই৷ নইলে সে চলবে কী করে? আর তৃতীয় হচ্ছেঃ চলবে একটা লক্ষ্যের দিকে৷ এই তিনটে জিনিস চাই৷

সংস্কৃতি ও সভ্যতা

সাধারণতঃ ‘সমাজ’ বলতে নারী ও পুরুষের সমাহারকে বোঝায়৷ কিন্তু শব্দটির মূলগত তাৎপর্য তা নয়৷ প্রকৃত অর্থে ‘সমাজ’ বলতে বোঝায়, যেখানে সকলে একই কর্মবন্ধনে, সম্মিলিতভাবে এগিয়ে চলেছে---‘সমনাম্‌ এজতে’৷ আমরা কখনো কখনো বাসে, ট্রামে, ট্রেনে বহু লোককেই তো একত্রে দেখে থাকি৷ কিন্তু তা সমাজ পদবাচ্য নয়৷ একটা সর্বজনগ্রাহ্য আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যখন অনেক মানুষ একই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায় ও তাকে পাওয়ার জন্যে সক্রিয় হয়ে ওঠে তখনই তা সমাজ পদবাচ্য৷ ইংরেজী‘society’ শব্দটি ‘সমাজ’ শব্দের খাঁটি প্রতিশব্দ নয়৷ সামাজিক অগ্রগতি এক ধরণের সামাজিক কর্মেরই ফলশ্রুতি যেখানে পারষ্পরিক ঐক্যবন্ধন আরও বেশী সুদৃঢ় হয়ে সম্মিলিতভ

ইজম ও মানব প্রগতি

পূর্ব প্রকাশিতের পর  ইজমের কারণে মানুষে মানুষে সুসম্পর্ক বিপর্যস্ত হয়৷ একজন তথাকথিত হিন্দু মুসলমানকে বিশ্বাস করে না, তেমনি একজন তথাকথিত মুসলমান হিন্দুকে বিশ্বাস করে না কেননা তারা দু’জনেই নিজ নিজ ইজমে পরম বিশ্বাসী৷ ইজমের সঙ্গে লজ্জাৰোধের (shamefulness) ঘনিষ্ট সম্বন্ধ৷ যখনই কোন একটি জাতি বা শ্রেণী বা প্রদেশ বা গোষ্ঠী তাদের আত্ম সম্মান খোয়াবার আশঙ্কা করে, তখনই তারা লজ্জাৰোধের দ্বারা প্রেষিত হয়ে তাদের আত্ম সম্মান বাঁচানোর জন্যে যে কোন নীচ কাজ করতে পিছপা হয় না৷ ইজমের সম্মান রক্ষার খাতিরে অনেকে আবার নানারকম কৃত্রিম ও লোক দেখানো আচার আচরণের আশ্রয় নেয়, যদিও তাদের মনের ভিত

ইজম্ ও মানবপ্রগতি

ইজম্ (মতবাদ) কথাটার অর্থ কী যখন জাগতিক ও মানসিক ক্ষেত্রে ঙ্মকোনো বিষয়কে নিয়েৰ দেশ–কাল–পাত্রের মধ্যে সমান্তরলতা স্থাপিত হয় তখনই ইজমের জন্ম হয়৷ এই সমান্তরলতা না থাকার কারণে কোনো দেশ বা কোনো জনগোষ্ঠীর কাছে একটি নির্দিষ্ট ইজম্ অনুকূল হলেও তা সর্বকালে সব মানুষের কাছে গ্রহণীয় হয় না৷

সামন্ততন্ত্র ও জমিদারী প্রথা

তোমরা যারা জমির খাজনা সংক্রান্ত বিধিব্যবস্থা নিয়ে পড়াশোণা করেছ তারা জান যে ভারতে পাঠান, মোগল, প্রাক্–ৰৌদ্ধ ও ৰৌদ্ধযুগে রাজাকে খাজনা দেওয়া হত সোণার বিনিময়ে৷ দশ–বিশটা গ্রামকে একত্র করে’ এক একটা revenue village বা মৌজা তৈরী হত আর গ্রামবাসীদের মধ্যে একজনকে ক্ষমতা দেওয়া হত খাজনা সংগ্রহের৷ এই খাজনা বা কর আদায়কারীদের সরকার কোন পয়সাকড়ি দিত না, জমি দিত যা চাষ করে’ তারা জীবিকা নির্বাহ করত৷ তারা কৃষিক্ষেত্রে রাজা ও জনসাধারণের মধ্যে মধ্যস্বত্বভোগী (intermediaries) রূপে কাজ করত, আর ধীরে ধীরে এরাই শক্তিশালী জমিদারে পরিণত হ’ল৷ প্রাচীনকাল থেকেই এই মধ্যস্বত্বভোগীদের অস্তিত্ব ছিল৷ এদের বলা হত জমিদার, পত্তনিদ

কৃষি সমস্যা ও তার সমাধান প্রসঙ্গে

কৃষিভূমির সর্বাধিক ও সঙ্গত উপযোগিতা গ্রহণ, ও সকল কৃষিভূমির সুষ্ঠু পুনর্বিন্যাসের জন্যে সমবায়–প্রথাই অধিকতর কাম্য হওয়া উচিত৷

কৃষি কাজ যদি সমবায়–প্রথা অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয় তাহলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষি–জমিকে মিলিয়ে একটি বড় কৃষি–জমিতে পরিণত করা যাবে৷ তার ফলে সব কর্ষকেরই বিরাট সামূহিক লাভ হবে৷ এতে আলের জন্যে অযথা জমি নষ্ট হবে না, কৃষিযোগ্য ভূমির আয়তনও বাড়বে৷

ধন–সঞ্চয় সম্পর্কে প্রাউটের নীতি

প্রাউটের প্রথম সিদ্ধান্ত ঃ–

কোন ব্যষ্টিই সামবায়িক সংস্থার(collective body) সুস্পষ্ট অনুমোদন ছাড়া ভৌতিক সম্পদ সঞ্চয় করতে পারবে না৷

আমাদের চাহিদা তিন ধরনের–

  •  ভৌতিক(physical)
  • মানসিক(psychic)
  • আধ্যাত্মিক(spiritual)

অণুমন তার অনন্ত ক্ষুধা ভৌতিক উপাদান লাভের মাধ্যমেই তৃপ্ত করতে চায়, কিন্তু এই ভৌতিক সম্পদ যদিও বিপুল, তবুও অনন্ত নয়– সীমিত৷ ভৌতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক এই তিন স্তরের মধ্যে মানসিক ও আধ্যাত্মিক জগৎ অনন্ত৷ এই দুই স্তরে অণুমনের অনন্ত এষণার পরিতৃপ্তি হতে পারে৷ এতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দেবে না৷১০

অর্থনীতিতে গতিতত্ত্ব

এই মহাবিশ্বে চলমানতা মাত্রই সংকোচ–বিকাশী৷ জগতের কোনো কিছুই সরলরেখা ধরে’ চলে না৷ সংকোচ–বিকাশী গতিধারার জন্যেই প্রতিটি সত্তায় আভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ ও সমিতি সংঘটিত হয়ে চলেছে৷ এই সংকোচ–বিকাশী নীতির ফলেই সামাজিক–র্থনৈতিক জীবনের বিভিন্ন পর্বে (অধ্যায়ে/যুগে) ঘটে চলেছে উত্থান ও পতন৷ গতিধারার সংকোচন বা বিরতির স্তরটা যদি বেশী দীর্ঘায়ত হয়, তবে সমাজকেও প্রলম্বিত এক গতিহীনতার স্তর অতিক্রম করে’ এগোতো হয়৷ এক্ষেত্রে এমনও ঘটতে পারে যে, সমাজ তার গতিশীলতা একেবারেই খুইয়ে ফেলেছে, বা তার মৃত্যু ঘটেছে৷ বিরতির স্তরে যদি সমাজের অভ্যন্তরে গতিশক্তির অভাব ঘটে, তবে পরবর্ত্তী স্তরে তার স্বাভাবিক গতিধারা ক্রিয়াশীল নাও হতে পা

ভাবজড়তা থেকে সাবধান

সংরচনাগত অখণ্ডতার ব্যাপারে ৰলা যেতে পারে, সর্বোৎকৃষ্ট আকৃতি হচ্ছে ডিম্বাকৃতি৷ লাতিন ‘ওবাম’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে ডিম৷ তাই ‘ওবাল’ শব্দের অর্থ ডিমের মত অর্থাৎ পুরোপুরি না হলেও কিছুটা ডিমের মত৷ পুরোপুরি ডিম্বাকৃতি নয়, তৰে প্রায় ডিম্বাকৃতি৷ সকল জ্যোতিষ্কই এই আকৃতির৷ সংস্কৃতে তাই বিশ্বকে ৰলা হয় ব্রহ্মাণ্ড৷ ‘অণ্ড’ মানে ডিম৷ সংস্কৃত ‘অণ্ড’ শব্দ থেকে উর্দু ‘অল্ডা’ শব্দটি এসেছে৷ এখন, আমাদের এই বিশ্বটা খুৰই বড় কিন্তু অনন্ত নয় ও এর আকৃতিটা দেখতে ডিম্বাকার, অর্থাৎ এর একটা সীমারেখা আছে৷

প্রাউটের অর্থনীতি–ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

বিকেন্দ্রিত সামাজিক–র্থনৈতিক ব্যবস্থায় অতি সহজেই কৃষি ও শিল্পের আধুনিকীকরণ করা যায় ও তার উৎপাদিত দ্রব্যের বাজারও সহজে পাওয়া যায়৷ এইভাবে যদি সামাজিক–র্থনৈতিক অঞ্চলগুলি আপন আপন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিকাশ ঘটায় তাহলে বিভিন্ন অঞ্চলের মাথা পিছু আয়–বৈষম্য হ্রাস পাবে ও অনুন্নত অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে তাকে উন্নত অর্থনৈতিক অঞ্চলের সমপর্যায়ে আনা যাবে৷ প্রত্যেকেই অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ ভোগ করবে৷ যখন প্রত্যেকটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা আসবে তখন সমস্ত দেশই অতি দ্রুত অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করবে৷

সমবায়ই একমাত্র সমাধান

সমবায় সম্পর্কে অনেকের মনে প্রশ্ণ জাগতে পারে৷ কারণ আজ বেশীর ভাগ দেশেই সমবায় অসফল হয়েছে৷ এই উদাহরণের ওপর ভিত্তি করে’ সমবায়কে দোষারোপ করা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হবে না৷ কারণ সমবায়ের সাফল্যের যে অপরিহার্য তত্ত্ব তা বেশীর ভাগ দেশ সৃষ্টি করতে পারেনি৷ সমবায়ের সাফল্য নির্ভর করে মূলতঃ তিনটি তত্ত্বের ওপর–নীতিবাদ, কড়া তত্ত্বাবধান ত্রব্ভহ্মন্দ্বব্জ্লন্ব্দ্ ও জনগণের হদয় দিয়ে সমবায়কে গ্রহণ৷ এ তিন তত্ত্বের মধ্যে যেখানে যতটুকু রয়েছে সেখানে সমবায় ততটুকুই সাফল্য অর্জন করেছে৷ যেমন, ইজরায়েল চতুর্দিকে শত্রু বেষ্টিত হবার জন্যে ওখানকার জনগণের মধ্যে এক স্বয়ং–নির্ভরশীলতা চেতনা গড়ে’ উঠেছে–কারণ জনগণ মন–প্রাণ দিয়ে তাদের অ

সুভাষচন্দ্রের ‘কৌলালিক’ ভূমিকা

‘কুলাল’–এর একটি অর্থ হচ্ছে শিল্পগত বা ভাবগত বা আদর্শগত ব্যাপারে যাঁর বৈদগ্ধ্যিক  স্বাতন্ত্র্য রয়েছে ও যিনি তদনুযায়ী পরিকল্পনা করে এগিয়ে চলেছেন৷ এই ধরণের স্বাতন্ত্র্য বা পরিকল্পনা–মুখরতা ভীত হয়ে অনেকেই–বিশেষ করে বিরুদ্ধবাদী মতবাদের বাহকেরা অনেক সময় অযথা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন ও কুলালের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন৷ এ ব্যাপারে বিচারকের বা সমালোচকের তটস্থ ৰুদ্ধি নিয়েই গবেষণা চালাতে হৰে৷

সমাজের কল্যাণে সকল শ্রেণীর মানুষের উপযোগ গ্রহণ

সমাজের উন্নতি বা প্রগতি ব্যষ্টি–বিশেষের একক প্রচেষ্টায় হয় না, বা হতে পারে না৷ কেউ দেয় মস্তিষ্ক, কেউ দেয় হাত, কেউ পা৷ তাই সুবিচার করতে গেলে পা–কে হীন আর মাথাই সর্বস্ব অথবা মাথাটার কোন দাম নেই–বুদ্ধিজীবী মাত্রেই শোষক, আর যারা গায়ে গতরে খেটে চলেছে তারাই সবকিছু–এই দুই প্রকার চিন্তাধারাই সমান বিপজ্জনক৷ আসল কথাটা হচ্ছে কে নিজের সামর্থ্য কতখানি কাজে লাগিয়েছে সেইটাই বিচার করে’ দেখা৷ সমুদ্র বাঁধতে গিয়ে হনুমানের পর্বত বয়ে আনা, আর কাঠবেড়ালীর নুড়ি বয়ে আনা তত্ত্বগত বিচারে তুল্যমূল্য৷ কারও আন্তরিকতাতেই আমরা সন্দেহ রাখতে পারি না, অবজ্ঞাও করতে পারি না৷ নিজের সম্পদ যে যথাযথভাবে খাটায়নি সে যদি, যে নিজের সম্প

বাঙলার সমস্যা - প্রাউট প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর অর্থনীতি বিষয়ক বিভিন্ন  পুস্তকে যা বলেছেন, সেগুলির সংকলন আলোচ্য বিষয় 

ইংরেজ রাজত্বের প্রথম দিকে ইংরেজ ব্যবসায়ীরা বাঙলার বাজার দখল করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী বাঙলার শিল্প ধ্বংস করে’ দিল৷ নিজেদের মালিকানায় ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি খুলে সেখানে স্থানীয় শিল্পপতি ও দক্ষ কর্মীদের কাজ করতে বাধ্য করলো৷ ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী বাঙালীদের ঠকিয়ে ও লুঠপাট করে’ কাঁচামাল সংগ্রহ করতো৷ যে সমস্ত বাঙালীরা কুটির শিল্পের মালিক ছিল তারা কোম্পানী থেকে কাঁচামাল কিনতে, ও তৈরী মাল কোম্পানীর কাছে বেচতে বাধ্য থাকতো৷ কোম্পানী চড়া দামে কাঁচামাল বেচতো, আর ২৫ শতাংশ কম দরে তৈরী মাল কিনতো৷ কোম্পানির বিরোধিতা করলে হাতে হাতকড়া পরিয়ে জনসমক্ষে চাবুক মারা হ’ত৷ তাঁতীরা যাতে মিহি কাপড় বুনতে না পারে

মানব প্রগতি

এই পরিদৃশ্যমান বিশ্বে রয়েছে তিনটি স্তর–আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক বা কারণ৷ এছাড়া রয়েছে একটা মানসাতীত স্তর৷ আবার মানবীয় অস্তিত্বেও রয়েছে তিনটি স্তর–স্থূল, সূক্ষ্ম ও কারণ৷ এ ছাড়া রয়েছে এক প্রতিফলিত চৈতন্য৷ এই চৈতন্যের স্তরে বিকাশের কোন প্রশ্ণ নেই, কারণ আত্মা হ’ল গুণাতীত অতীন্দ্রিয় সত্তা৷ যেখানে রয়েছে অপূর্ণতা ও নশ্বরতা সেখানেই রয়েছে বিকাশের সুযোগ৷ অপূর্ণতা থেকে পূর্ণতার দিকে গতিই হ’ল প্রগতি৷ মানসাতীত স্তরে কোন প্রগতি নেই, কারণ তা’ পূর্ণ ও শাশ্বত৷ কেবল মানসিক স্তরে এই প্রগতির পূর্ণ সুযোগ রয়েছে৷ স্থূল শরীর যে পাঞ্চভৌতিক উপাদানে তৈরী সেই পাঞ্চভৌতিক উপাদান ভূমধ্যসাগরের স্থূল অভিব্যক্তি ছাড়া

সর্বাধিক শিল্প বিকাশ

প্রাউট অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাসী৷ তাই একস্থানের উন্নতি না করে’ সর্বত্র যাতে সমানভাবে প্রগতি হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে স্থানীয় সম্পদ ও শক্তি সামর্থ্যকে প্রথমে নিয়োগ করার পরিকল্পনা নিতে হবে৷ স্থানীয় এলাকায় কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতা, ও ওই এলাকার মানুষদের ভোগ্যপণ্যের প্রয়োজন অনুসারে সর্বাধিক শিল্প বিকাশ প্রয়োজন৷ এই নীতি বহিরাগতদের হাত থেকে অর্থনৈতিক ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের হাতে তুলে দেবে৷ এইভাবে ওই সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রভূত বিকাশ সম্ভব হবে৷ প্রাউটের অর্থনীতি অনুসারে কৃষির মত অধিকাংশ শিল্পই উৎপাদক–সমবায় ও উপভোক্তা–সমবায়ের দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত

নূ্যনতম প্রয়োজন ও সর্বাধিক সুখ–সুবিধা

আমাদের এই সমাজের অসংখ্য আকর্ষণ, আর সেই আকর্ষণে আকর্ষিত হওয়াই মানুষের স্বভাব৷ মানুষের এই স্বভাবকে প্রশ্রয় দিয়ে কম্যুনিজম সবাইকে সমান সম্পদ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ কিন্তু এই বিশ্বের জাগতিক সম্পদ সীমিত৷ তাই সকলকে কি সম পরিমাণ সম্পদ দেওয়া সম্ভব? সম্ভব নয়৷ আর শুধু তাই নয়, সেই প্রচেষ্টাও আপাতদৃষ্টিতে মনোরঞ্জক এক ভণ্ডামি৷ এখন কম্যুনিজম মৃত্যুশয্যায়৷ কম্যুনিজম ছিল এক ‘ইজম্’ (মতবাদ)–বাগাড়ম্বরপূর্ণ ভাষার ফুলঝুরি৷

নব্যমানবতাবাদের ৩ সোপান

মানুষ চলতে শুরু করেছে যখন, নিজের কথাটা যতটা ভেবেছে, অন্যের কথাটা ততটা ভাবেনি৷ অন্য মানুষের কথাও ভাবেনি, আর মনুষ্যেতর জীব জন্তুর কথাও ভাবেনি,গাছপালার কথাও ভাবেনি৷ অথচ একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলে দেখা যাবে যে, নিজের কাছে নিজের অস্তিত্ব যতটা প্রিয়, প্রত্যেকের কাছে তাদের নিজের নিজের অস্তিত্ব ততটাই প্রিয়৷ আর সব জীবের এই নিজ অস্তিত্বপ্রিয়তাকে যথাযোগ্য মূল্য না দিলে সামগ্রিক ভাবে মানবিকতার বিকাশ অসম্ভব৷ মানুষ যদি ব্যষ্টি বা পরিবার,জাত বা গোষ্ঠীর কথা ভাবলো, সামগ্রিক ভাবে মানুষের কথা না ভাবলো–সেটা অবশ্যই ক্ষতিকর৷ ট্টকিন্তু মানুষ যদি সামগ্রিকভাবে জীবজগৎ, উদ্ভিদ জগতের কথা না ভাবলো সেটা কি ক্ষতিকর নয় মানবি

সামাজিক-অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ

গন্ধহারিণূঙীষ্ ঞ্চগন্ধহারিণী৷ সভ্যতার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনে জেগেছিল শিল্প সৃষ্টির এষণা ও প্রেষণা৷ এষণাই প্রেষণাকে ডেকে আনে৷ সভ্যতার প্রথম ধাপে শিল্পমাত্রই ছিল কুটির শিল্প৷ নারী–পুরুষ–বালক–ব্ নির্বিশেষে সবাই শিল্প রচনায় হাত লাগাত৷ পরে দেখা গেল কিছু  শিল্প গ্রামে গ্রামে করা যায় না.....করতে হয় কিছু সংখ্যক গ্রাম নিয়ে৷ তা না হলে তাদের একদিকে যেমন বাজারের ঘাটতি পড়ে, অন্যদিকে তেমনি শিল্পীর সংখ্যাতেও অভাব দেখা দেয়৷ তখন মানুষ প্রথম শিল্পায়োগ বা কারখানায়* যেতে শুরু করল৷ এখানে প্রসঙ্গতঃ একটা কথা বলে’ রাখি৷ শিল্প যত বেশী কুটীর–শিল্প হয়, শিল্প যত বিকেন্দ্রীকৃত হয় মানুষের সুবিধা তত বেশী৷ এতে য

বানিজ্যে সমবায়

ব্যবসায় ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা দিয়ে কেবল করধার্যের ক্ষেত্রে কঠোরতা করা যে সাফল্যজনক হয় না তা’ অধিকাংশ রাষ্ট্রেরই জানা আাছে৷ আজকের পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রেই বিক্রয়কর, ক্রয়কর, আয়কর, অতিলাভ কর প্রভৃতি ৰাৰদ সরকারের যা’ আয় হ’য়ে থাকে তা’ ন্যায্য–প্রাপ্যের এটি অতিক্ষুদ্র ভগ্ণাংশ মাত্র৷ কর আদায়কারী কর্মচারীদের চাইতে কর যারা ফাঁকি দেয় তারা অনেক ৰেশী ৰুদ্ধিমান, অনেক ৰেশী অভিজ্ঞ৷ সমস্বার্থের ভিত্তিতে তারা ৰেশ একতাৰদ্ধও ৰটে, কিন্তু কর আদায়কারীরা একতাৰদ্ধ নয়, তাদের মধ্যে ৰখরা নিয়ে সংষর্ঘ থাকে, তাদের মধ্যে নীতিগত ভেদ থাকে, তাদের মধ্যে বিশ্বাস–ঘাতকতা থাকে, তাই অতিরিক্ত কর–ধার্য করে’ বৈশ্য

কৃষিকে ধাপে ধাপে সমবায়ের আওতায় আনতে হবে

চতুর্থ স্তরে, কৃষি–জমির মালিকানাস্বত্ব নিয়ে আর কোন বিরোধ বা সংশয়ের কোন অবকাশ থাকবে না৷ এমনি ভাবে স্তরে স্তরে কৃষি–জমির সামাজিকীকরণ করে’ ফেলার নীতি অনুসরণ করার ফলে মানুষও ক্ষুদ্র ব্যষ্টিস্বার্থের দ্বারা পরিচালিত না হয়ে সামূহিক স্বার্থের দ্বারা প্রেষিত হবার শিক্ষা লাভ করবে৷ মানুষের এই মানসিক বিস্তার ও দৃষ্টিকোণের পরিবর্ত্তন সমাজের বুকে এক সুষ্ঠু অনুকূল পরিবেশও গড়ে তুলবে৷ অবশ্য সমাজের বুকে সামূহিক মনস্তত্ত্বের এমন পরিবর্ত্তন আনা রাতারাতি সম্ভব হবে না৷ এ পরিবর্ত্তন আসবে ধীরে ধীরে মানুষের মনস্তত্ত্বের ক্রমঃ–রূপান্তরণের মধ্য দিয়ে৷১৩

দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলো

এই পৃথিবীতে সারা বিশ্বে হাওয়া আমাদের অনুকূলে৷ বর্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ মানবতার জন্যে কোনো কিছু করার এটাই উপযুক্ত সময়৷ এই সন্ধিক্ষণে এক মুহূর্ত একশত বৎসরের সমান৷ তাই বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগাও৷ প্রবল উৎসাহের সঙ্গে তোমার কর্তব্য করে যাও৷ তোমাদের কাজের গতিকে দ্রুততর করতেই  হবে৷

ৰুদ্ধি আর জাগতিকতা–এই দু’টির মধ্যে অচ্ছেদ্য সম্পর্ক  একটি ছাড়া আর একটির অস্তিত্ব থাকতেই পারে না৷ আরকোনো জড় বস্তু যেমন জল, তার নিজস্ব ৰুদ্ধি নেই৷ জড়বস্তু ভূমাসত্তার ইচ্ছায় পরিচালিত হয়৷ কিন্তু প্রতিটি জীবিত  সত্তার অণুমন আছে৷ তাই মানুষ পরমপুরুষ ছাড়া থাকতে পারেনা৷

তোমাদের জীবনব্রত

মানুষ শুধুমাত্র তার জ্ঞান, ৰুদ্ধি অথবা সামাজিক মর্যাদা দিয়ে একটা মহান আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে না৷ একমাত্র নিজের আচরণের মাধ্যমেই সে এটা করতে পারে৷ আধ্যাত্মিক সাধনার দ্বারাই মানুষের আচরণের পরিশুদ্ধতা আসে৷ এর জন্যে তার তথাকথিত উঁচু বংশে জন্মগ্রহণ করার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী নেবার দরকার নেই৷ এতে বরং তার মনে একটা মিথ্যা অহংৰোধ তৈরী হতে পারে যা শেষপর্যন্ত তার আচরণের পরিশীলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে৷

রাজনীতি–সচেতন মধ্যবিত্ত, ছাত্র–যুব ও সাধারণ মানুষই বিপ্লব আনবে

আজ জীবনের সকল ক্ষেত্রেই নীতিহীনতার এক কালো ছায়া দ্রুত ঘনিয়ে আসছে ও তা মানুষের প্রগতির পথে দারুণ অন্তরায় সৃষ্টি করে চলেছে৷ নীতিহীনতার এই আবর্জনা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে চাই প্রচণ্ড শক্তিশালী নৈতিক বল৷ এই দুর্দান্ত নৈতিক বল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোন সরকারের কাছ থেকে আশা করা যায় না৷ এটা আমরা আশা করতে পারি অরাজনৈতিক পক্ষ থেকে৷ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোন দল বা নেতাদের খামখেয়ালী কাজকর্মকে বাধা দেওয়ার মতো নৈতিক বলের যদি সমাজে অভাব দেখা দেয়, তাহলে যে কোন সরকার–তা সে ফ্যাসীবাদী, সাম্রাজ্যবাদী, সাধারণতন্ত্রী, একনায়কতন্ত্রী, আমলাতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক, যাই হোক না কেন–সে সরকার অত্যাচারী হতে বাধ্য৷ সরকারের

জড়তার মুক্তি

গত পরশু সন্ধ্যায় রেণেশাঁ ক্লাবের সভায় আলোচ্য বিষয় ছিল ‘‘ বুদ্ধির মুক্তি’’৷ কারো কারো মনে প্রশ্ণ জাগতে পারে---মুক্তি তো মানুষের জন্যে প্রয়োজন৷ বুদ্ধির মুক্তি আবার কী রকম কথা৷ বুদ্ধি জিনিসটা হ’ল অমূর্ত বা ভাববাচক৷ যা অমূর্ত যা ভাববাচক তার আবার মুক্তি কী!

পশ্চাৎপদ শ্রেণীর উন্নয়ন

বিশ্বের বিভিন্ন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করা আমাদের আশু কর্ত্তব্য৷ যেহেতু বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন সামাজিক–র্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলি পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন পূর্ত্তির প্রতি ও সামগ্রিকভাবে সমাজের উন্নতির প্রতি নজর না দিয়ে সমাজের এক বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে’ চলেছে, সেইজন্যেই পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক অবদমনের শিকার হচ্ছে৷

মাতৃভাষা

মাতৃভাষা লতে কী বোঝায়? মাতৃভাষা হচ্ছে সেই ভাষা যাতে খোলামেলা পরিবেশে আমরা সহজে স্বচ্ছল ভাবে ও স্বতঃস্ফূর্ত্ত ভাবে আমাদের ভর্বা ব্যক্ত করতে পারি, যেমন ভাবে আমরা আমাদের মায়ের মত অন্তরঙ্গ জনের সঙ্গে কথোপথনের মধ্য দিয়ে ভাব বিনিময় করি৷ উদাহরণ স্বরূপ, পূর্ণিয়া জেলার একজন মানুষ তার নিকটতম ন্ধুর সঙ্গে অঙ্গিকা ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষাতে কথা বলবে না৷

মানব-প্রগতি

এই পরিদৃশ্যমান বিশ্বে রয়েছে  তিনটি স্তর--- আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক বা কারণ৷ এ ছাড়া রয়েছে  একটা মানসাতীত  স্তর৷  মানবীয়  অস্তিত্বেও তিনটি স্তর  রয়েছে --- স্থূল, সূক্ষ্ম ও কারণ৷ এ ছাড়া  এখানে  রয়েছে  এক প্রতিফলিত চৈতন্য৷  এই চৈতন্যের  স্তরে  বিকাশের  কোন প্রশ্ণ নেই৷ কারণ আত্মা গুণাতীত অতীন্দ্রিয় সত্তা৷  যেখানে  রয়েছে অপূর্ণতা  ও নশ্বরতা,  সেখানেই  রয়েছে  বিকাশের  সুযোগ৷ অপূর্ণতা থেকে পূর্ণতার  দিকে গতিই হ’ল প্রগতি৷ মানসাতীত  স্তরে  কোন প্রগতি নেই৷  কারণ তা পূর্ণ ও শাশ্বত৷ মানসিক স্তরে   এই প্রগতির পূর্ণ সুযোগ রয়েছে৷  স্থূল শরীর যে  পাঞ্চভৌতিক উপাদানে তৈরী সেই পাঞ্চভৌতিক  উপাদান ভূমামা

সমাজের কল্যাণে সকল শ্রেণীর মানুষের উপযোগ গ্রহণ

সমাজের উন্নতি বা প্রগতি ব্যষ্টি–বিশেষের একক প্রচেষ্টায় হয় না, বা হতে পারে না৷ কেউ দেয় মস্তিষ্ক, কেউ দেয় হাত, কেউ পা৷ তাই সুবিচার করতে গেলে পা–কে হীন আর মাথাই সর্বস্ব অথবা মাথাটার কোন দাম নেই–বুদ্ধিজীবী মাত্রেই শোষক, আর যারা গায়ে গতরে খেটে চলেছে তারাই সবকিছু–এই দুই প্রকার চিন্তাধারাই সমান বিপজ্জনক৷ আসল কথাটা হচ্ছে কে নিজের সামর্থ্য কতখানি কাজে লাগিয়েছে সেইটাই বিচার করে’ দেখা৷ সমুদ্র বাঁধতে গিয়ে হনুমানের পর্বত বয়ে আনা, আর কাঠবেড়ালীর নুড়ি বয়ে আনা তত্ত্বগত বিচারে তুল্যমূল্য৷ কারও আন্তরিকতাতেই আমরা সন্দেহ রাখতে পারি না, অবজ্ঞাও করতে পারি না৷ নিজের সম্পদ যে যথাযথভাবে খাটায়নি সে যদি, যে নিজের সম্প

জীবনধারণের নূ্যনতম প্রয়োজনপূর্ত্তি ও ক্রয়ক্ষমতার ক্রমবৃদ্ধির নিশ্চিততা

প্রত্যেকটি মানুষকে বোঝাতে হবে যে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ প্রত্যেকের সাধারণ সম্পত্তি৷ সবারই একে ভোগ করার জন্মগত অধিকার রয়েছে৷ এ অধিকারে হস্তক্ষেপ করা কখনোই চলবে না৷ তাই প্রত্যেককেই জীবনযাত্রার নিম্নতম মান দিতেই হবে৷

মানুষের যা সর্বনিম্ন প্রয়োজন তার ব্যবস্থা সবাইকার জন্যেই করতে হবে৷ অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসগৃহ, শিক্ষা এগুলির ব্যবস্থা সবাইকার জন্যেই করা অবশ্য কর্ত্তব্য৷ যে যুগের যেটা সর্বনিম্ন প্রয়োজন সেটার ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে৷ জীবনধারণের জন্যে নূ্যনতম প্রয়োজন–পূর্ত্তির নিশ্চিততাই মৌল জনস্বার্থ৷

নব্যমানবতাবাদের ৩ সোপান

মানুষ চলতে শুরু করেছে যখন, নিজের কথাটা যতটা ভেবেছে, অন্যের কথাটা ততটা ভাবেনি৷ অন্য মানুষের কথাও ভাবেনি, আর মনুষ্যেতর জীব জন্তুর কথাও ভাবেনি,গাছপালার কথাও ভাবেনি৷ অথচ একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলে দেখা যাবে যে, নিজের কাছে নিজের অস্তিত্ব যতটা প্রিয়, প্রত্যেকের কাছে তাদের নিজের নিজের অস্তিত্ব ততটাই প্রিয়৷ আর সব জীবের এই নিজ অস্তিত্বপ্রিয়তাকে যথাযোগ্য মূল্য না দিলে সামগ্রিক ভাবে মানবিকতার বিকাশ অসম্ভব৷ মানুষ যদি ব্যষ্টি বা পরিবার,জাত বা গোষ্ঠীর কথা ভাবলো, সামগ্রিক ভাবে মানুষের কথা না ভাবলো–সেটা অবশ্যই ক্ষতিকর৷ কিন্তু মানুষ যদি সামগ্রিকভাবে জীবজগৎ, উদ্ভিদ জগতের কথা না ভাবলো সেটা কি ক্ষতিকর নয় মানবিকতা

সমতট

প্রাচীন ৰাঙলা পাঁচটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল– রাঢ়, সমতট, ৰঙ্গ, ৰরেন্দ্র ও মিথিলা। মিথিলা বর্তমানে বিহারের অঙ্গভূত।

বঙ্গোপসাগরের বিশাল উপকূল এলাকা যাতে কোনো পাহাড়–পর্বত নেই কিন্তু যা পদ্মা ও ভাগীরথী নদীর বালুযুক্ত দোয়াঁশ মাটি দিয়ে তৈরী, ও যার মধ্যে অজস্র জলাশয়, যা খাল–বিল আর শাখানদীতে সমৃদ্ধ, সংস্কৃতে সেই অঞ্চলকে বলে ‘সমতট’, কথ্য ৰাংলায় বলে ‘বাগড়ী’। এই অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদ আর সমৃদ্ধ কৃষিসম্পদে পূর্ণ। এইজন্যে সমতটকে বলা হত ‘‘সোণার ৰাঙলা’’, যে কারণে বিখ্যাত ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন– ‘‘সুজলাং সুফলাং মলয়জ শীতলাং মাতরম্’’।

শোষণমুক্ত বিশ্বায়ন

দুটি অঞ্চল উন্নয়নের প্রায় সমস্তরে এসে পৌঁছলে তাদের পক্ষে এক–সঙ্গে মিলিত হয়ে বৃহত্তর সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে’ তোলা সম্ভব৷

দুই বা ততোধিক সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চল একসঙ্গে মিলিত হতে পারে যদি কয়েকটি শর্ত পূরণ হয়৷ শর্তগুলি হ’ল–

প্ত  সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলির অর্থনৈতিক

                  বৈষম্যের ক্রমাবসান৷

প্ত  বিজ্ঞান ও যোগাযোগের উন্নতি ৷

প্ত  প্রশাসনিক যোগ্যতা৷

প্ত  সামাজিক–সাংস্কৃতিক মেলামেশা৷

সামাজিক–র্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ

সভ্যতার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনে জেগেছিল শিল্প সৃষ্টির এষণা ও প্রেষণা৷ এষণাই প্রেষণাকে ডেকে আনে৷ সভ্যতার প্রথম ধাপে শিল্পমাত্রই ছিল কুটির শিল্প৷ নারী–পুরুষ–বালক–ব্ নির্বিশেষে সবাই শিল্প রচনায় হাত লাগাত৷ পরে দেখা গেল কিছু  শিল্প গ্রামে গ্রামে করা যায় না.....করতে হয় কিছু সংখ্যক গ্রাম নিয়ে৷ তা না হলে তাদের একদিকে যেমন বাজারের ঘাটতি পড়ে, অন্যদিকে তেমনি শিল্পীর সংখ্যাতেও অভাব দেখা দেয়৷ তখন মানুষ প্রথম শিল্পায়োগ বা কারখানায়* যেতে শুরু করল৷ এখানে প্রসঙ্গতঃ একটা কথা বলে’ রাখি৷ শিল্প যত বেশী কুটীর–শিল্প হয়, শিল্প যত বিকেন্দ্রীকৃত হয়, মানুষের সুবিধা তত বেশী৷ এতে যে শুধু আর্থিক সামর্থ্যকে চারি

ব্যষ্টিগত ও সামূহিক জীবনে নেশার সুদূরপ্রসারী কুফল

নেশার ত্রিদোষ ঃ নেশার জিনিস আমরা তাকেই বলি যার তিনটি লক্ষণ–(১) নিয়মিত সময়ে নেশার জিনিস না পেলে মন উশ্খুশ্ করে, কোন কাজে মন বসে না৷ (২) নেশার জোর যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ সে ৰুদ্ধিভ্রষ্ট অবস্থায় থাকে ও স্থায়ীভাবে নেশা করতে থাকলে, ৰুদ্ধিভ্রষ্টতাও স্থায়ী হয়ে যায়৷ (৩) নেশার তৃতীয় দোষ হচ্ছে যকৃত, কন্ঠ, কিডনী অবশ্যই তাতে আক্রান্ত হয়৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোষ্ঠৰদ্ধতা রোগও দেখা দেয়৷

প্রদমন, অবদমন ও দমন

কম্যুনিষ্ট রাষ্ট্রগুলিতে তোমরা প্রদমন, অবদমন ও দমনের একটা ত্রিভুজ পুরোপুরি কার্যকরী দেখতে পাবে৷ এই তিনটি ত্রুটির ওপর কম্যুনিজম আধারিত৷ কিন্তু এই তিনটি ত্রুটির মধ্যে সব চাইতে বেশি ঘটেছে দমন, তারপর ঘটেছে অবদমন ও সব চাইতে কম ঘটেছে প্রদমন৷ এই প্রদমন, অবদমন ও দমনের ফলে সৃষ্ট শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা থেকে জনসাধারণকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে৷ এই তিনটি মানসিক পীড়ন মানুষের মনকে ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে দিয়েছে৷

আদর্শ নেতৃত্ব

‘গজতা’ শব্দের অর্থ হ’ল হস্তীযূথ৷ তোমরা অনেকেই জান পৃথিবীর জীবসমূহ সমাজগতভাবে দু’টি ভাগে বিভক্ত –– এককচারী জীব ও যূথৰদ্ধ জীব৷ যেমন ধর আমাদের অতি পরিচিত ছাগল, মুর্গী৷ এরা এককচারী জীব৷ নিজের স্বার্থেই ব্যস্ত..... একেবারেই self centered। এরা সাধারণতঃ একে অপরের কোন কাজে লাগে না৷ একে অপরের বিপদে ছুটে এসে রুখে দাঁড়ায় না৷ এরা প্রভুভক্ত বা নিষ্ঠাবান–ও (sincere) নয়৷ এরা প্রভুর দুঃখে তিলমাত্র বিচলিত হয় না৷ যেখানে থাকে ....

সামাজিক মূল্য  ও  মানবিক  মৌল নীতি

বর্তমান যুগ ও মানবিক   মূল্য

বর্তমান যুগে জীবনের মূল্য নির্ধারিত হয় অর্থ দিয়ে৷ ‘‘যস্যাস্তি বিত্তম্‌ সঃ নরঃ কুলিনঃ সঃ পন্ডিতঃস শ্রুতবান্‌ গুণজ্ঞঃ স এব বত্তা স চ দর্শনীয়ঃ৷ সর্বে গুণাঃ কাঞ্চনমাশ্রয়ন্তি৷৷’’

নেতৃত্বের অভ্যুদয়

সমাজ–চক্রের পরিঘূর্ণনে, একটা বিশেষ যুগে তার পরবর্ত্তী যুগ আসার আগে একটা বিশেষ শ্রেণীর আধিপত্য থাকে, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে৷ এই বিশেষ শ্রেণী যখন রাজনৈতিক ক্ষমতায় থাকে, তাদের দ্বারা সমাজে শোষণ চলার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়৷ ইতিহাসের শিক্ষা এই যে, শোষণের সম্ভাবনাই শুধু নয়, যুগে যুগে এই শোষণের পুনরাবির্ভাব ঘটেছে৷

নূ্যনতম প্রয়োজন ও সর্বাধিক সুখ–সুবিধা

আমাদের এই সমাজের অসংখ্য আকর্ষণ, আর সেই আকর্ষণে আকর্ষিত হওয়াই মানুষের স্বভাব৷ মানুষের এই স্বভাবকে প্রশ্রয় দিয়ে কম্যুনিজম সবাইকে সমান সম্পদ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ কিন্তু এই বিশ্বের জাগতিক সম্পদ সীমিত৷ তাই সকলকে কি সম পরিমাণ সম্পদ দেওয়া সম্ভব? সম্ভব নয়৷ আর শুধু তাই নয়, সেই প্রচেষ্টাও আপাতদৃষ্টিতে মনোরঞ্জক এক ভণ্ডামি৷ এখন কম্যুনিজম মৃত্যুশয্যায়৷ কম্যুনিজম ছিল এক ‘ইজম্’ (মতবাদ)–বাগাড়ম্বরপূর্ণ ভাষার ফুলঝুরি৷

রাজনীতি–সচেতন মধ্যবিত্ত, ছাত্র–যুব ও সাধারণ মানুষই বিপ্লব আনবে

আজ জীবনের সকল ক্ষেত্রেই নীতিহীনতার এক কালো ছায়া দ্রুত ঘনিয়ে আসছে ও তা মানুষের প্রগতির পথে দারুণ অন্তরায় সৃষ্টি করে চলেছে৷ নীতিহীনতার এই আবর্জনা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে চাই প্রচণ্ড শক্তিশালী নৈতিক বল৷ এই দুর্দান্ত নৈতিক বল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোন সরকারের কাছ থেকে আশা করা যায় না৷ এটা আমরা আশা করতে পারি অরাজনৈতিক পক্ষ থেকে৷ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোন দল বা নেতাদের খামখেয়ালী কাজকর্মকে বাধা দেওয়ার মতো নৈতিক বলের যদি সমাজে অভাব দেখা দেয়, তাহলে যে কোন সরকার–তা সে ফ্যাসীবাদী, সাম্রাজ্যবাদী, সাধারণতন্ত্রী, একনায়কতন্ত্রী, আমলাতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক, যাই হোক না কেন–সে সরকার অত্যাচারী হতে বাধ্য৷ সরকারের

সর্বাধিক শিল্প–বিকাশ

প্রাউট অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাসী৷ তাই একস্থানের উন্নতি না করে’ সর্বত্র যাতে সমানভাবে প্রগতি হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে স্থানীয় সম্পদ ও শক্তি সামর্থ্যকে প্রথমে নিয়োগ করার পরিকল্পনা নিতে হবে৷ স্থানীয় এলাকায় কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতা, ও ওই এলাকার মানুষদের ভোগ্যপণ্যের প্রয়োজন অনুসারে সর্বাধিক শিল্প বিকাশ প্রয়োজন৷ এই নীতি বহিরাগতদের হাত থেকে অর্থনৈতিক ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের হাতে তুলে দেবে৷ এইভাবে ওই সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রভূত বিকাশ সম্ভব হবে৷ প্রাউটের অর্থনীতি অনুসারে কৃষির মত অধিকাংশ শিল্পই উৎপাদক–সমবায় ও উপভোক্তা–সমবায়ের দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত

অপুষ্টির বিরুদ্ধে যুদ্ধ

তোমরা (প্রাউটিষ্টরা) যেহেতু সমগ্র বিশ্বের দায়িত্ব নিয়েছ তাই অপুষ্টি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করাও তোমার পবিত্র কর্ত্তব্যের মধ্যে পড়ে৷ অপুষ্টির মূল কারণ বিশ্বে আর্থিক ব্যবস্থায় ধনসম্পদের অসন্তুলন৷ প্রাউট এর চিরস্থায়ী সমাধান৷ তবে এজন্যে খাদ্যাভাব সমস্যার আশু সমাধান জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে৷ তুমি এজন্যে কী করছ?

তোমরা এ ব্যাপারে তোমার গুরুদায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারো না৷ সমগ্র বিশ্ব তোমাদের দিকে কাতর নয়নে তাকিয়ে আছে৷ এটা আমাদের পবিত্র কর্তব্য৷ আমাদের এই দায়িত্ব পালন করতেই হবে৷

পশ্চাৎপদ শ্রেণীর উন্নয়ন

বিশ্বের বিভিন্ন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করা আমাদের আশু কর্ত্তব্য৷ যেহেতু বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন সামাজিক–র্অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলি পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন পূর্ত্তির প্রতি ও সামগ্রিকভাবে সমাজের উন্নতির প্রতি নজর না দিয়ে সমাজের এক বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে’ চলেছে, সেইজন্যেই পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক অবদমনের শিকার হচ্ছে৷

প্রাউট ও নব্যমানবতাবাদ

অস্তিত্বের সকল ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান গতিশীলতার দ্রুতি থাকতেই হবে৷ গতির দ্রুতিই জীবনের মূল পরিচয় বহন করে৷ মানুষের দৈহিক সংরচনা পাঞ্চভৌতিক কিন্তু মানব জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে পরমপুরুষ ত্রব্ভহ্মব্জন্দ্বপ্পন্ ড্রুব্ধন্ব্ধম্ভগ্গ৷ সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমেই আমাদের যেতে হবে৷

প্রাউটের মূলেও রয়েছে এই গতিশীলতা৷ প্রাউট হচ্ছে একটি সামাজিক–র্অর্থনৈতিক দর্শন যা মানবজাতিকে অপূর্ণতা থেকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে৷ পরমপুরুষের দিকে এগিয়ে চলা সকলের পক্ষেই একটা বিরামহীন প্রক্রিয়া৷ এই প্রক্রিয়ার অন্তে তুমি পরমপুরুষের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে৷

সামাজিক–অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ

সভ্যতার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনে জেগেছিল শিল্প সৃষ্টির এষণা ও প্রেষণা৷ এষণাই প্রেষণাকে ডেকে আনে৷ সভ্যতার প্রথম ধাপে শিল্পমাত্রই ছিল কুটির শিল্প৷ নারী–পুরুষ–বালক–ব্ নির্বিশেষে সবাই শিল্প রচনায় হাত লাগাত৷ পরে দেখা গেল কিছু  শিল্প গ্রামে গ্রামে করা যায় না.....করতে হয় কিছু সংখ্যক গ্রাম নিয়ে৷ তা না হলে তাদের একদিকে যেমন বাজারের ঘাটতি পড়ে, অন্যদিকে তেমনি শিল্পীর সংখ্যাতেও অভাব দেখা দেয়৷ তখন মানুষ প্রথম শিল্পায়োগ বা কারখানায়* যেতে শুরু করল৷ এখানে প্রসঙ্গতঃ একটা কথা বলে’ রাখি৷ শিল্প যত বেশী কুটীর–শিল্প হয়, শিল্প যত বিকেন্দ্রীকৃত হয় মানুষের সুবিধা তত বেশী৷ এতে যে শুধু আর্থিক সামর্থ্যকে চারিদ

দেশপ্রেমিকের প্রতি

‘নেশন’ শব্দের অর্থ প্রকৃত ব্যাখ্যা কী--- এ নিয়ে মতভেদের অন্ত নেই৷ কেউ বলেন,মানবগোষ্ঠী একই রাষ্ট্রের বাসিন্দা তারাই একটা নেশন৷ অবশ্য রাষ্ট্র বা দেশকে সমার্থক ধরলেও ‘নেশন’ নিয়ে বিতর্ক এখানেই শেষ হয় না৷ কেউ কেউ বলেন নেশন গড়ে ওঠে সমভাষিতার ওপরে, কেউ বা বলেন এক ধরনের আচার ব্যবহার, একই জীবনযাত্রা প্রণালী, একই ঐতিহ্য, একই রক্তধারা, একই ধর্মমত প্রভৃতির একটি বা একাধিক তত্ত্বের মিশ্রণে গড়ে ওঠে ‘নেশন’৷

স্থানীয় জনসাধারণের সার্বিক কর্মসংস্থান 

প্রথমেই কোন এলাকায় স্থানীয় জনসাধারণের শতকরা একশ’ ভাগের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকা উচিত৷ সমস্ত মানুষের নূ্যনতম চাহিদা, অর্থাৎ অন্ততপক্ষে উপযুক্ত খাদ্য, বস্ত্র, আবাস, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত হওয়া উচিত৷ জনগণের ১০০ শতাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার মাধ্যমেই তাদের এই মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে–দান–খয়রাতির মাধ্যমে নয়৷ আজকের দুনিয়ায় বেকারত্ব এক জটিল সমস্যা আর স্থানীয় মানুষের ১০০ শতাংশের কর্মসংস্থানের নীতিই এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ৷ স্থানীয় জনসাধারণের শতকরা একশ’ ভাগের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রাউট স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় বিশ্বাসী৷ স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা

বাঙলার নববর্ষ

এই পৃথিবীতে নিষ্ফল কোনো কিছুই নয়–সব কিছুই  ফলবান৷ একটা মানুষ চলতে চলতে হোঁচট খেয়ে পড়লো৷ তাও অর্থহীন নয়৷ একটা মানুষ হেসে উঠলো, সেটাও অর্থহীন নয়৷ ‘ইতি হসতি ইত্যর্থে ইতিহাসঃ’৷ এইভাবেই হাসি–কান্নার ভেতর দিয়ে মানুষ এগিয়ে চলেছিলো–এই কথাটা যে বলে তার নাম ইতিহাস৷

‘‘ধর্মার্থকামমোক্ষার্থ নীতিবাক্যসমন্বিতং৷

পুরাবৃত্তকথাযুক্তং ইতিহাসঃ প্রচক্ষ্যতে৷৷’’

বাঙলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন

আজকাল অনেক জায়গাতেই গভীর নলকূপের সাহায্যে জল তুলে চাষ করা হয়, এটা বিজ্ঞান সম্মত নয়, কারণ যত পরিমাণ জল তোলা হয়, তত পরিমাণ জল ওই গভীরতায় ফিরে যেতে পারে না৷ রোদের তাপে অনেকটা বাষ্প হয়ে যায়, আর কিছুটা গাছপালারা টেনে নেয়৷ এর ফলে জল–তল হু হু করে নেবে যায়৷ মালদা, নদীয়া ও অন্যান্য জেলায় যেভাবে গভীর নলকূপ ব্যবহার করা হচ্ছে তা যদি বন্ধ না করা হয় তাহলে জল–তল এত নেবে যাবে যে ভবিষ্যতে সেচের জলের অভাবে সমস্ত ফসল ও গাছপালা মরে যাবে৷ চাষীদের এই সমস্যা সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে৷ নদীর জলকে সেচের কাজে লাগানোটাই সর্বোত্তম উপায়৷৪৭

অর্থনৈতিক গণতন্ত্র

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, ‘জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্যে, জনগণের সরকার’৷ কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে গণতন্ত্র হ’ল ‘মবোক্রেসী’, কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার নিয়ন্ত্রিত হয় ‘মব–সাইকোলজি’(জনতা–মনস্তত্ত্ব)–র দ্বারা৷

যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবেই গণতন্ত্র সার্থক হবে, নচেৎ জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্যে, জনগণের শাসনের মানে দাঁড়াবে ‘বোকার দ্বারা, বোকার জন্যে, বোকার শাসন’৷

সম্পদের সর্বাধিক উপযোগ

বিশ্বের যাবতীয় জাগতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সম্পদের সর্বাধিক উপযোগ গ্রহণ করতে হবে, ও যুক্তিসঙ্গত বণ্টন করতে হবে৷

স্থূল জগতে, সূক্ষ্ম জগতে ও কারণ জগতে যা কিছু সম্পদ নিহিত আছে তার উৎকর্ষ সাধন করতে হবে জীব কল্যাণে৷ ক্ষিতি–প–তেজ–মরুৎ্– পঞ্চতত্ত্বের যেখানে যা কিছু লুকানো সম্পদ রয়েছে তা ষোল আনা সদ্ব্যবহারের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এর উৎকর্ষ সাধিত হবে৷ জল–স্থল–ন্তরীক্ষ তোলপাড় করে’ মানুষকে প্রয়োজনের উপাদান খুঁজে বের করে’ নিতে হবে–তৈরী করে’ নিতে হবে৷

আজকের বিভিন্ন সমস্যাসমূহ ও তাদের সমাধান

বস্তুতঃ উন্নত ধরণের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার অর্থই দ্রুত যান্ত্রিকীকরণ৷ প্রাচীনপন্থীরা এই যাত্রিকীকরণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মুখর৷ মোদ্দা কথাটা এই যে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামোয় যাত্রিকীকরণের অর্থ-ই জনসাধারণের অধিকতর দুঃখ---অধিকতর বেকারী৷ এজন্যেই প্রাচীনপন্থীরা এর বিরোধী৷ পুঁজিবাদকে না হটিয়ে জনকল্যাণ করতে গেলে যান্ত্রিকীকরণের বিরোধিতা করতেই হবে৷ কারণ যন্ত্রের উৎপাদিকা শক্তি দ্বিগুণ ৰেড়ে গেলে মনুষ্য শক্তির প্রয়োজন ঠিক অর্ধেকে নেৰে যায়, আর তাই পুঁজিবাদীরা তখন াপকভাবে কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করে৷ অল্পসংখ্যক আশাবাদী ৰলতে পারেন, ‘‘অবস্থার চাপে পড়ে মানুষ এই উদ্বৃত্ত শ্রমিক দলকে ভিন্ন কাজে নিয়

সংবিধান সংশোধন

আজকের পৃথিবীতে সকল দেশের সংবিধানেরই কম–বেশী সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে৷ সংবিধান প্রসঙ্গে কতকগুলো বিশেষ বিশেষ সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে৷

ৰৃহত্তর ৰাঙলা

প্রায় ৫০০০ বছর আগে অষ্ট্রিক, মঙ্গোলিয়ন আর নিগ্রো রক্তের সংমিশ্রণ–জাত ৰাঙালী জনসমুদায় সৃষ্টি হয়েছিল৷ সেই সময় ৰাঙলার ভাষা ছিল সংস্কৃত, তাই ৰাংলাভাষারও পথনির্দেশক ভাষা হচ্ছে সংস্কৃত৷ প্রায় ১২০০ বছর আগে ৰাংলাভাষার এক রূপান্তরণ হয়েছিল৷ সেই সময় ৰাঙলা বলতে বোঝাত বর্তমানের পশ্চিমবঙ্গ, নেপালের ঝাপা জেলা, বিহারের পূর্বাংশ, সম্পূর্ণ ৰাঙলাদেশ আর বর্মা, মেঘালয়ের সমতল অংশ, প্রাগজ্যোতিষপুরের কিছু অংশ আর অসমের বরপেটা, কামরূপ ও নগাঁও৷ ৰৃহত্তর ৰাঙলার এই ছিল এলাকা৷ আজ ৰাঙালী বলতে ৰোঝায় দুই প্রকারের অভিব্যক্তি– ভারতীয় ৰাঙালী আর ৰাঙলাদেশী ৰাঙালী ৷ এই দু’য়ের মধ্যে একটা সংহতিকরণ বা মিশ্

যোগাযোগের প্রাথমিক মাধ্যম হিসেবে স্থানীয় ভাষার ব্যবহার বাঞ্ছনীয়

কোন অঞ্চলের সরকারী বা বেসরকারী সংস্থা ও অফিসগুলিতে স্থানীয় ভাষাকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে৷

বাঙলার সম্ভাবনা

শিরোনামে লিখিত বিষয়ের ওপর প্রাউট প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর বিভিন্ন পুস্তকে যা বলেছেন, সেগুলিকে সংকলিত করে’ তুলে ধরেছেন বিশিষ্ট প্রাউটিষ্ট আচার্য ত্র্যম্বকেশ্বরানন্দ অবধূত৷

(চার)

বস্ত্র উৎপাদন

আঁশ তৈরীর যেখানে  যে ধরণের কাঁচামাল পাওয়া যায়, ও যেখানে যে ধরণের জলবায়ু সেখানে সেই ধরণের পোষাক মানুষ পরে থাকে৷ বাঙালীস্তানের পটভূমিতে এই ব্যাপারটা দেখা যেতে পারে৷

বাঙালীস্তানে মূলতঃ চার ধরণের কাঁচামাল পাওয়া যায়–তুলো, তুঁতজাত রেশম,  তুঁতজাত নয় এমন রেশম ও অন্যান্য৷

তুলো

জড়তার মুক্তি

গত পরশু সন্ধ্যায় রেনেসাঁ ক্লাবের সভায় আলোচ্য ৰিষয় ছিল ‘‘ৰুদ্ধির মুক্তি’’৷ কারো কারো মনে প্রশ্ণ জাগতে পারে-মুক্তি তো মানুষের জন্যে প্রয়োজন৷ ৰুদ্ধির মুক্তি আবার কী রকম কথা৷ ৰুদ্ধি জিনিসটা হ’ল অমূর্ত বা ভাববাচক৷ যা অমূর্ত, যা ভাববাচক তার আবার মুক্তি কী৷ এই প্রসঙ্গে আমার অভিমত হ’ল---হ্যাঁ, ৰুদ্ধিরও মুক্তির প্রয়োজন আছে বৈকি৷ এই জগতে যা কিছু রয়েছে---জড়, ভাব, চেতন, সকলেরই মুক্তি চাই৷ মুক্তি না ঘটলে বস্তু বা ব্যষ্টির স্বাভাবিক স্ফূরণ ঘটে না অর্থাৎ যার মধ্যে যে গুণ রয়েছে, যে সামর্থ্য রয়েছে সেই গুণ বা সামর্থ্যের পূর্ণ বিকাশ, পূর্ণ অভিপ্রকাশ যদি দেখতে চাই তাহলে সেই ব্যষ্টি বা বস্তুর মুক্তি অপরিহার্য৷<

শিল্পে সমবায়

বিশ্বের কোন জীবকেই আমরা উপেক্ষা করতে পারি না৷ বিশ্বের এক অংশের শিল্পোন্নয়ন অন্য অংশের দারিদ্র্য বা বেকারীকে ভালভাবে দূর করতে পারে না৷ তাই শিল্প–ব্যবস্থা যতদূর সম্ভব বিকেন্দ্রীকরণ নীতি অনুযায়ীই করা উচিত৷

শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ ঃ কোন একটি দেশ বা জেলা যদি অত্যধিক শিল্পোন্নত হয়, তাতে অপরাপর অংশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোন রকম সুবিধা হয় না৷ তাই শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ দরকার৷ কিন্তু মূল শিল্প থাকবে কেন্দ্রীকৃত৷ উদাহরণস্বরূপ, সুতাকল শিল্প হবে কেন্দ্রীকৃত–যাকে কেন্দ্র করে’ বিকেন্দ্রীকরণ পদ্ধতিতে গড়ে’ উঠবে বস্ত্রবয়ন শিল্প৷

কৃষি জমিতে সারের ব্যবহার প্রসঙ্গে

সুদূর অতীতে অতিকায় জানোয়ারেরা মৃত্যু সন্নিকট ৰুঝলে পূর্ব নির্দিষ্ট স্থানে চলে যেত৷ বন্য হাতীর এখনও এই স্বভাব আছে৷ এইসব স্থানে সঞ্চিত পশুর হাড় কালের বিবর্ত্তনে ক্যালসিয়াম সালফেট বা ক্যালসিয়াম কার্বোনেটে রূপান্তরিত হয়েছে৷ যেখানে যেখানে ক্রেটাসিয়াস যুগের বৃহৎ জানোয়ারেরা যূথৰদ্ধভাবে বাস করত সেখানে চুণাপাথর পাওয়া যাবে৷ উদাহরণস্বরূপ অসমে চুণাপাথর ও পেট্রোলিয়াম পাওয়া যাবে৷ এই বিশাল আকৃতির জানোয়ারের দেহের চর্বি পেট্রোলিয়ামে আর হাড় চুণাপাথরে রূপান্তরিত হয়েছে৷ চুণাপাথর দিয়ে যেমন ভালজাতের সিমেণ্ট তৈরী হবে তেমনি জমিতে এর ব্যবহার করলে কমলানেবুর মিষ্টত্ব ৰেড়ে যাবে৷ রাঢ়ের ঝালদা, জয়পুর অঞ্চলে এই চুণাপাথর দ

আদর্শ সংবিধানের জন্যে প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রসঙ্গে

সমাজচক্রের পরিবর্ত্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের দায়িত্ব ও কর্ত্তব্য পালনের প্রয়োজনে মানুষের সমাজে কিছু সংস্থার উদ্ভব হয়৷ তাদের মধ্যে রাষ্ট্র হ’ল একটা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা৷ একটা বিশেষ অঞ্চলে বসবাসকারী কোন জনগোষ্ঠী নিজের মঙ্গল ও উন্নতির প্রয়োজনে নিজেদের শাসন পরিচালনার জন্যে যে সংস্থার সৃষ্টি করে তাই হ’ল রাষ্ট্র৷ এই সংস্থা খুবই শক্তিশালী কারণ দেশের সার্বভৌম ক্ষমতা তারই হাতে ন্যস্ত৷

মানবিক মৌলনীতি

মানবিক মৌল সিদ্ধান্ত বা ণ্ড্রব্ভপ্প্ত্রু ন্তুত্রব্জস্তুনুত্রপ্ত হ্মব্জনুন্তুন্হ্মপ্তন্দ্ হ’ল  ব্দন্প্ত্লন্দ্বব্জ প্তনুনুন্ধ ত্ব্ন্দ্বব্ধভ্রন্দ্বন্দ্বু ব্ধড়ন্দ্ব হ্মব্দম্ভন্তুড়প্স–ব্দ্ স্তু ব্দহ্মন্ব্জন্ব্ধব্ভ্ত্রপ্ ব্দব্ধব্জ্ত্রব্ধ্ত্র প্সন্দ্র ড়ব্ভপ্প্ত্রু ন্দ্বপ্রন্ব্দব্ধন্দ্বুন্ত্.

পরিকল্পনার মৌল নীতি

যাঁরা বিভিন্ন স্তরে যোজনা পর্ষদের সঙ্গে সংযুক্ত সেই ধরণের বড় বড় অর্থনীতিবিদদের কোন পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে যে কয়েকটি বিষয়ের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত সেগুলি হ’ল–

* উৎপাদনের ব্যয়

* উৎপাদন–ক্ষমতা

* ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা

* সামূহিক প্রয়োজনীয়তা৷

এবার উপরি–উক্ত বিষয়গুলির প্রত্যেকটিকে নিয়ে আলোচনা করা যাক৷

উৎপাদন–ব্যয়

নব্যমানবতাবাদের ৩ সোপান

মানুষ চলতে শুরু করেছে যখন, নিজের কথাটা যতটা ভেবেছে, অন্যের কথাটা ততটা ভাবেনি৷ অন্য মানুষের কথাও ভাবেনি, আর মনুষ্যেতর জীব জন্তুর কথাও ভাবেনি,গাছপালার কথাও ভাবেনি৷ অথচ একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলে দেখা যাবে যে, নিজের কাছে নিজের অস্তিত্ব যতটা প্রিয়, প্রত্যেকের কাছে তাদের নিজের নিজের অস্তিত্ব ততটাই প্রিয়৷ আর সব জীবের এই নিজ অস্তিত্বপ্রিয়তাকে যথাযোগ্য মূল্য না দিলে সামগ্রিক ভাবে মানবিকতার বিকাশ অসম্ভব৷ মানুষ যদি ব্যষ্টি বা পরিবার,জাত বা গোষ্ঠীর কথা ভাবলো, সামগ্রিক ভাবে মানুষের কথা না ভাবলো–সেটা অবশ্যই ক্ষতিকর৷ কিন্তু মানুষ যদি সামগ্রিকভাবে জীবজগৎ, উদ্ভিদ জগতের কথা না ভাবলো সেটা কি ক্ষতিকর নয় মানবিকতা

ভাবজড়তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম

‘‘কেবলং শাস্ত্রমাশ্রিত্য ন কর্ত্তব্যঃ বিনির্ণয়ঃ৷

যুক্তিহীনবিচারে তু ধর্মহানিঃ প্রজায়তে’’৷৷

শাস্ত্রে লেখা আছে, তাই মানতে হবে–এই ধরণের নির্দেশ গ্রহণযোগ্য নয়৷ কারণ, যিনি শাস্ত্র তৈরী করেন তিনি কেমন ধরণের লোক তাও তো দেখতে হবে৷ যিনি যুক্তির দ্বারা পরমপুরুষের মহিমা প্রতিষ্ঠিত করেন তাঁকে মানা যেতে পারে৷ আর যেখানে যুক্তি নেই, কেবল পরমাত্মার দোহাই দিয়ে আপন মতবাদকে প্রচার করতে চায় সেটা গ্রহণযোগ্য নয়৷ কেননা, তাতে মানুষের প্রগতি রুদ্ধ হয়ে যায়, কারণ সেটা নিছক ভাবজড়তা৷ যা যুক্তিবিচারবিবর্জিত ন্প্তপ্তপ্সন্ধন্ন্তুত্র, যা অবিবেকপূর্ণ তেমন কিছু মানলে তাতে ধর্মহানি হয়ে থাকে৷

পাপ, পুণ্য ও অপরাধ

পাপ বা পুণ্য–দেশ, কাল, পাত্রভেদে মানসিক বিকৃতিরই নাম বিশেষ৷ যে ধরনের বিকৃতিকে এক দেশে বা এককালে একজন পাত্র বলছে পাপ, অন্যদেশে বা অন্যকালে বা অন্য একজন পাত্র বলছে পুণ্য৷ তাই ব্যষ্টি–বিশেষের, কাল–বিশেষের পাপ–পুণ্যের ধারণাকে চরম বলে’ মনে করার পেছনে কোন যুক্তি নেই৷

ভাবজড়তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম

ধর্মমতের উপর ভিত্তি ক’রে তৈরী হয়েছে পাপ–পুণ্যের খসড়া, তৈরী হয়েছে বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন দণ্ডসংহিতা ও শাস্ত্র৷ নিজেদের কায়েমী স্বার্থের দুরভিসন্ধিতে সেই সব শাস্ত্রকে অপৌরুষেয় বলে প্রচার করা হয়েছে৷ তাই মানুষের থেকে তথাকথিত শাস্ত্র বর্ণিত দেববাণীর দাম অনেক বেশী৷ মানুষ সেই বাণীর, সেই ব্যবস্থার অবমাননা বা বিরুদ্ধাচরণ করলে তাকে পেতে হবে কঠোর শাস্তি৷ বিজাতীয় মানুষকে স্পর্শ করা মহাপাপ৷ সমাজ থেকে তাকে হ’তে হবে বিতাড়িত সেই পাপের জন্যে৷ শাস্ত্রমতে হয়তো প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে, সে প্রায়শ্চিত্ত কখনও কখনও তার প্রাণহানিরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ কেউ যদি এই কঠোর শাস্তি থেকে একটু শৈথিল্য প্রার্থনা করে, সমাজগুরুরা তা

অর্থনৈতিক মন্দা প্রসঙ্গে

শোষণ যখন চরম বিন্দুতে গিয়ে পৌঁছায়, সমাজের গতিশীলতা ও গতিবেগও তখন প্রায় শূন্যাঙ্কে পৌঁছে যায়৷ এমন পরিস্থিতিতে, শোষণের সেই চরমাবস্থায় সমাজের বুকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়৷ ভৌতিক জগতের ক্ষেত্রে এই বিস্ফোরণটা হয় জড়াত্মক, আর মানসিক অধিক্ষেত্রে বিস্ফোরণটা হয় মানসিক বা ভাবাত্মক৷ এ ভাবেই অবস্থাভেদে বিস্ফোরণগুলি ঘটে চলে৷ এই যে মন্দা এটা আসলে সমাজের বুকে শোষণ বা দমন–প্রদমন–ব ফলশ্রুতি৷ সমাজতান্ত্রিক দেশ বা পুঁজিবাদী দেশ উভয় রাষ্ট্রেরই অর্থনৈতিক পরিভূতে মন্দা আসতে বাধ্য–কারণ উভয় দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যেই অন্তর্নিহিত রয়েছে এক গভীর জড়তা৷

নব্যমানবতাবাদের ৩ সোপান

মানুষ চলতে শুরু করেছে যখন, নিজের কথাটা যতটা ভেবেছে, অন্যের কথাটা ততটা ভাবেনি৷ অন্য মানুষের কথাও ভাবেনি, আর মনুষ্যেতর জীব জন্তুর কথাও ভাবেনি,গাছপালার কথাও ভাবেনি৷ অথচ একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলে দেখা যাবে যে, নিজের কাছে নিজের অস্তিত্ব যতটা প্রিয়, প্রত্যেকের কাছে তাদের নিজের নিজের অস্তিত্ব ততটাই প্রিয়৷ আর সব জীবের এই নিজ অস্তিত্বপ্রিয়তাকে যথাযোগ্য মূল্য না দিলে সামগ্রিক ভাবে মানবিকতার বিকাশ অসম্ভব৷ মানুষ যদি ব্যষ্টি বা পরিবার,জাত বা গোষ্ঠীর কথা ভাবলো, সামগ্রিক ভাবে মানুষের কথা না ভাবলো–সেটা অবশ্যই ক্ষতিকর৷ কিন্তু মানুষ যদি সামগ্রিকভাবে জীবজগৎ, উদ্ভিদ জগতের কথা না ভাবলো সেটা কি ক্ষতিকর নয় মানবিকতা

শোষণমুক্ত বিশ্বায়ন

দুটি অঞ্চল উন্নয়নের প্রায় সমস্তরে এসে পৌঁছলে তাদের পক্ষে এক–সঙ্গে মিলিত হয়ে বৃহত্তর সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে’ তোলা সম্ভব৷

দুই বা ততোধিক সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চল একসঙ্গে মিলিত হতে পারে যদি কয়েকটি শর্ত পূরণ হয়৷ শর্তগুলি হ’ল–

প্ত  সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলির অর্থনৈতিক

                  বৈষম্যের ক্রমাবসান৷

প্ত  বিজ্ঞান ও যোগাযোগের উন্নতি ৷

প্ত  প্রশাসনিক যোগ্যতা৷

প্ত  সামাজিক–সাংস্কৃতিক মেলামেশা৷

সমাজের কল্যাণে সকল শ্রেণীর মানুষের উপযোগ গ্রহণ

সমাজের উন্নতি বা প্রগতি ব্যষ্টি–বিশেষের একক প্রচেষ্টায় হয় না, বা হতে পারে না৷ কেউ দেয় মস্তিষ্ক, কেউ দেয় হাত, কেউ পা৷ তাই সুবিচার করতে গেলে পা–কে হীন আর মাথাই সর্বস্ব অথবা মাথাটার কোন দাম নেই–বুদ্ধিজীবী মাত্রেই শোষক, আর যারা গায়ে গতরে খেটে চলেছে তারাই সবকিছু–এই দুই প্রকার চিন্তাধারাই সমান বিপজ্জনক৷ আসল কথাটা হচ্ছে কে নিজের সামর্থ্য কতখানি কাজে লাগিয়েছে সেইটাই বিচার করে’ দেখা৷ সমুদ্র বাঁধতে গিয়ে হনুমানের পর্বত বয়ে আনা, আর কাঠবেড়ালীর নুড়ি বয়ে আনা তত্ত্বগত বিচারে তুল্যমূল্য৷ কারও আন্তরিকতাতেই আমরা সন্দেহ রাখতে পারি না, অবজ্ঞাও করতে পারি না৷ নিজের সম্পদ যে যথাযথভাবে খাটায়নি সে যদি, যে নিজের সম্প

পশ্চাৎপদ শ্রেণীর উন্নয়ন

বিশ্বের বিভিন্ন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করা আমাদের আশু কর্ত্তব্য৷ যেহেতু বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন সামাজিক–অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলি পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন পূর্ত্তির প্রতি ও সামগ্রিকভাবে সমাজের উন্নতির প্রতি নজর না দিয়ে সমাজের এক বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে’ চলেছে, সেইজন্যেই পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক অবদমনের শিকার হচ্ছে৷

আদর্শ সংবিধানের জন্যে প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রসঙ্গে

সমাজচক্রের পরিবর্ত্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের দায়িত্ব ও কর্ত্তব্য পালনের প্রয়োজনে মানুষের সমাজে কিছু সংস্থার উদ্ভব হয়৷ তাদের মধ্যে রাষ্ট্র হ’ল একটা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা৷ একটা বিশেষ অঞ্চলে বসবাসকারী কোন জনগোষ্ঠী নিজের মঙ্গল ও উন্নতির প্রয়োজনে নিজেদের শাসন পরিচালনার জন্যে যে সংস্থার সৃষ্টি করে তাই হ’ল রাষ্ট্র৷ এই সংস্থা খুবই শক্তিশালী কারণ দেশের সার্বভৌম ক্ষমতা তারই হাতে ন্যস্ত৷

বিশ্বায়নের লক্ষ্যে আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধি

বর্তমানে ছোট ছোট রাষ্ট্র অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে সংগ্রাম করে’ চলেছে৷ মানুষ ছোট ছোট রাষ্ট্র অপেক্ষা বড় বড় সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে’ তুলে সকলের কল্যাণ নিশ্চিত করতে আগ্রহী৷ সংকীর্ণ সেণ্টিমেণ্ট ধীরে ধীরে সরে’ যাচ্ছে৷ মানুষের মনে বিশ্বৈকতাবাদী ভাবধারার উদয় হচ্ছে৷ যে সমস্ত অন্ধ বিশ্বাস ও ভাবজড়তা এতদিন সমাজের অনেকের শ্বাসরুদ্ধ করে’ রেখেছিল আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার বিকাশ তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে৷ যুক্তি–বিচার ও ‘সর্বজনহিতায়’ ভাবনাকে মানবতা এখন গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে৷ তাই প্রাউট বর্তমান পৃথিবীর সামাজিক–অর্থনৈতিক প্রবণতা অনুসারে সর্বত্র স্বয়ং–সম্পূর্ণ অঞ্চল (unit) গড়ে

শোষণের বহুবিধ রূপ

লোকে প্রায়ই বলে থাকে যে বিশেষ কোনো ব্যষ্টি অথবা বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা ভীষণভাবে শোষিত হচ্ছে৷ শোষণ বলতে তারা এটাই ৰোঝে যে এইসব লোকেরা অর্থনৈতিক  স্তরে শোষিত হচ্ছে৷ কিন্তু যদি আমরা এই বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করি তাহলে আমরা উপলব্ধি করব যে শোষণ শুধুমাত্র অর্থনৈতিক স্তরেই সংঘটিত হচ্ছে না, মানবাস্তিত্বের অন্যান্য স্তরেও বিভিন্ন রূপে বিচিত্র ভাবে তার অস্তিত্ব রয়েছে৷ যখন আধিভৌতিক স্তরে (physical stratum) শোষণ হয় তখন সেটা যে সব ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক হবে এমন নয় এটা প্রায়ই সামাজিক ও অনেক ক্ষেত্রে অপ্রত্যক্ষভাবে সামাজিক হয়ে থাকে৷ দৃষ্টান্ত–স্বরূপ বলা যায় কায়েমী স্বার্থবাহকেরা কোনো একটা পর্যায়ে জনমানস

পাপ, পুণ্য ও অপরাধ

সংশোধনমূলক ব্যবস্থা

সংশোধনমূলক ব্যবস্থাতে অপরাধী–তা’ সে যে রকমের হীন অপরাধেই লিপ্ত হেক্ না কেন, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করার মত কোন কিছু খুঁজে পাবে না৷ বিচারের ত্রুটি থেকে গেলেও সেক্ষেত্রে তার কোন ক্ষতি হবে না, যদি সে অপরাধী হয় সেক্ষেত্রেও সংশোধনমূলক ব্যবস্থায় সে যেমন উপকৃত হবে, সে যদি অপরাধী না হয় তাহলেও সংশোধনমূলক ব্যবস্থায় তার উপকার ছাড়া অপকার হবে না৷ এতে সমাজ উপকৃত হবে, ও অসৎ বৃত্তিসম্পন্ন ব্যষ্টিকে সৎ পথে নিয়ে যাবার সমাজসম্মত সুযোগ পাবে৷

প্রাউটের দৃষ্টিকোন থেকে : ত্রিপুরার উন্নয়ন

ত্রিপুরায় দুই প্রকারের ধান হয়– আউশ আর বোরো চাষ৷ অসমের দুটি প্রধান নদী উপত্যকা হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র আর বরাক উপত্যকা৷ বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ ব্লকে বাঁশের মান খুব ভাল, একে কাগজ শিল্পে ব্যবহার করা উচিত৷ মিষ্টি আলু আর সুগার বিটের চাষও এ এলাকায় হতে পারে৷ এখানে বছরে চারটি ফসল হওয়া উচিত৷ আনারস থেকে পরিধানের জন্যে কৃত্রিম তন্তু, ওষুধ, জ্যাম–জেলি প্রস্তুত করা উচিত৷ কলাগাছ ও কলাগাছের পাতা ইত্যাদিকে কাজে লাগানো উচিত আর কলাগাছ পুড়িয়ে সোডিয়াম আর সোডিয়াম নাইট্রেট সংগ্রহ করে নিয়ে সাবান শিল্পে ব্যবহূত হওয়া উচিত৷ অসম আর ত্রিপুরায় কাঁটাল খুব ভাল হয়, এর সঙ্গে মধু আর প্রাকৃতিক প্যারাফিনে

ধন–সঞ্চয় সম্পর্কে প্রাউটের নীতি

প্রাউটের প্রথম সিদ্ধান্ত ঃ–

কোন ব্যষ্টিই সামবায়িক সংস্থার (collective body) সুস্পষ্ট অনুমোদন ছাড়া ভৌতিক সম্পদ সঞ্চয় করতে পারবে না৷

আমাদের চাহিদা তিন ধরনের–

                ণ্ড্র ভৌতিক (physical)

                ণ্ড্র মানসিক (psychic)

                ণ্ড্র আধ্যাত্মিক (spiritual)

প্রাউটের দৃষ্টিকোন থেকে : শিক্ষানীতি

প্রাউট অনুযায়ী শিক্ষার লক্ষ্য হ’ল–‘‘সা বিদ্যা যা বিমুক্তয়ে’’৷ শিক্ষা হ’ল তাই যা বিমুক্তি অর্থাৎ স্থায়ী মুক্তি প্রদান করে৷ শিক্ষার প্রকৃত অর্থ হ’ল ত্রিভৌমিক বিকাশ–মানবীয় অস্তিত্বের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক এই তিনস্তরেই একসঙ্গে ও সমানভাবে উন্নতি৷ এর ফলে ব্যষ্টিত্বের সুসামঞ্জস্যপূর্ণ অগ্রগতি সংসাধিত হয়৷ এই  শিক্ষা প্রসুপ্ত মানবীয় সম্ভাবনাকেও জাগিয়ে তোলে যাতে করে তার যথার্থ উপযোগ সম্ভবপর হয়৷ প্রকৃত শিক্ষিত তাকেই বলব যিনি প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেছেন, তা অনেক বেশী মনে রেখেছেন ও নিজের বৈবহারিক জীবনে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছেন৷

গণ–অর্থনীতি ও মানস–অর্থনীতি

আজকের অধিকাংশ অর্থনীতিবিদই মানস–অর্থনীতি আর গণ–অর্থনীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ অপরিচিত–আর তাই তাঁদের বর্ত্তমান অর্থনৈতিক ধ্যান–ধারণায় অর্থনীতির এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ শাখাই কোন স্থান পায়নি৷

কোনো অর্থনীতিকে উন্নত অর্থনীতি Developed Economy অভিধায় অভিহিত করতে গেলে তাতে থাকবে চারটি মুখ্য ধারা–

প্ত গণ–অর্থনীতি (People’s Economy)

প্ত সাধারণ অর্থনীতি (Psycho-Economy)

প্ত মানসভৌম–র্থনীতি (Psycho-Economy)

প্ত বাণিজ্যিক–র্থনীতি (Commercial Economy)

রাজনীতি–সচেতন মধ্যবিত্ত, ছাত্র–যুব ও সাধারণ মানুষই বিপ্লব আনবে

আজ জীবনের সকল ক্ষেত্রেই নীতিহীনতার এক কালো ছায়া দ্রুত ঘনিয়ে আসছে ও তা মানুষের প্রগতির পথে দারুণ অন্তরায় সৃষ্টি করে চলেছে৷ নীতিহীনতার এই আবর্জনা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে চাই প্রচণ্ড শক্তিশালী নৈতিক বল৷ এই দুর্দান্ত নৈতিক বল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোন সরকারের কাছ থেকে আশা করা যায় না৷ এটা আমরা আশা করতে পারি অরাজনৈতিক পক্ষ থেকে৷ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোন দল বা নেতাদের খামখেয়ালী কাজকর্মকে বাধা দেওয়ার মতো নৈতিক বলের যদি সমাজে অভাব দেখা দেয়, তাহলে যে কোন সরকার–তা সে ফ্যাসীবাদী, সাম্রাজ্যবাদী, সাধারণতন্ত্রী, একনায়কতন্ত্রী, আমলাতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক, যাই হোক না কেন–সে সরকার অত্যাচারী হতে বাধ্য৷ সরকারের

ভাবজড়তা থেকে সাবধান

সংরচনাগত অখণ্ডতার ব্যাপারে ৰলা যেতে পারে, সর্বোৎকৃষ্ট আকৃতি হচ্ছে ডিম্বাকৃতি৷ লাতিন ‘ওবাম’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে ডিম৷ তাই ‘ওবাল’ শব্দের অর্থ ডিমের মত অর্থাৎ পুরোপুরি না হলেও কিছুটা ডিমের মত৷ পুরোপুরি ডিম্বাকৃতি নয়, তৰে প্রায় ডিম্বাকৃতি৷ সকল জ্যোতিষ্কই এই আকৃতির৷ সংস্কৃতে তাই বিশ্বকে ৰলা হয় ব্রহ্মাণ্ড৷ ‘অণ্ড’ মানে ডিম৷ সংস্কৃত ‘অণ্ড’ শব্দ থেকে উর্দু ‘অল্ডা’ শব্দটি এসেছে৷ এখন, আমাদের এই বিশ্বটা খুৰই বড় কিন্তু অনন্ত নয় ও এর আকৃতিটা দেখতে ডিম্বাকার, অর্থাৎ এর একটা সীমারেখা আছে৷

সম-সমাজ তত্ত্ব

চলা জগতের ধর্ম৷ চলে চলেছে বলেই এই পৃথিবীর নাম জগৎ৷ ‘গম’ ধাতুর উত্তর ক্কিপ্‌ প্রত্যয় করে ‘জগৎ’ শব্দ নিষ্পন্ন যার মানে হ’ল---চলা যার স্বভাব৷ ব্যষ্টিগত জীবনে যেমন চলতে হয় সমষ্টিগত তথা সামূহিক জীবনেও তেমনি চলতে হয়৷ কিন্তু এই যে চলা, এই চলার জন্যে তিনটে জিনিসের প্রয়োজন আছে৷ একটা হচ্ছে---চলার জন্যে একটা সম্প্রেষণ, পেছন থেকে একটা ধাক্কা৷ যখন চলাটা বন্ধ হয় তখন ধাক্কা দিয়ে বলতে হয় চল চলতে হবে৷ দ্বিতীয়তঃ নিজে যে চলবে তার চলার সামর্থ্য থাকা চাই অর্থাৎ চলার উপযুক্ত রসদ তার থাকা চাই৷ নইলে সে চলবে কী করে? আর তৃতীয় হচ্ছে ঃ চলছে একটা লক্ষ্যের দিকে৷ এই তিনটে জিনিস চাই৷

ভাবজড়তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম

ধর্মমতের উপর ভিত্তি ক’রে তৈরী হয়েছে পাপ–পুণ্যের খসড়া, তৈরী হয়েছে বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন দণ্ডসংহিতা ও শাস্ত্র৷ নিজেদের কায়েমী স্বার্থের দুরভিসন্ধিতে সেই সব শাস্ত্রকে অপৌরুষেয় বলে প্রচার করা হয়েছে৷ তাই মানুষের থেকে তথাকথিত শাস্ত্র বর্ণিত দেববাণীর দাম অনেক বেশী৷ মানুষ সেই বাণীর, সেই ব্যবস্থার অবমাননা বা বিরুদ্ধাচরণ করলে তাকে পেতে হবে কঠোর শাস্তি৷ বিজাতীয় মানুষকে স্পর্শ করা মহাপাপ৷ সমাজ থেকে তাকে হ’তে হবে বিতাড়িত সেই পাপের জন্যে৷ শাস্ত্রমতে হয়তো প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে, সে প্রায়শ্চিত্ত কখনও কখনও তার প্রাণহানিরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ কেউ যদি এই কঠোর শাস্তি থেকে একটু শৈথিল্য প্রার্থনা করে, সমাজগুরুরা তা

অর্থনৈতিক মন্দা প্রসঙ্গে

শোষণ যখন চরম বিন্দুতে গিয়ে পৌঁছায়, সমাজের গতিশীলতা ও গতিবেগও তখন প্রায় শূন্যাঙ্কে পৌঁছে যায়৷ এমন পরিস্থিতিতে, শোষণের সেই চরমাবস্থায় সমাজের বুকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়৷ ভৌতিক জগতের ক্ষেত্রে এই বিস্ফোরণটা হয় জড়াত্মক, আর মানসিক অধিক্ষেত্রে বিস্ফোরণটা হয় মানসিক বা ভাবাত্মক৷ এ ভাবেই অবস্থাভেদে বিস্ফোরণগুলি ঘটে চলে৷ এই যে মন্দা এটা আসলে সমাজের বুকে শোষণ বা দমন–প্রদমন–ব ফলশ্রুতি৷ সমাজতান্ত্রিক দেশ বা পুঁজিবাদী দেশ উভয় রাষ্ট্রেরই অর্থনৈতিক পরিভূতে মন্দা আসতে বাধ্য–কারণ উভয় দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যেই অন্তর্নিহিত রয়েছে এক গভীর জড়তা৷

বিদ্বান ও শিক্ষিত

তাকেই Learned বা বিদ্বান বলব যে প্রচুর পড়াশোনা করেছে, যা পড়েছে তা ৰুঝেছে, সেটা মনে রেখেছে, ও সেগুলিকে কার্যেও রূপায়িত করেছে৷ কোনো শিক্ষিত (Educated) ও বিদ্বান মানুষের পুঁথিগত বিদ্যা থাকতে পারে বা নাও পারে, তেমনি প্রথাগত ভাবে বিদ্যার্জনকারী কোনো একজন মানুষ প্রকৃত শিক্ষিত হতেও পারে আবার নাও পারে৷ তাহলে সত্যিকারের বিদ্বান ও শিক্ষিত তাকেই বলব যার মধ্যে নিম্নোক্ত চারটি তত্ত্ব থাকতেই হবে, এদের মধ্যে একটিরও অভাব থাকলে তাকে বিদ্বান বলা যাবে না ঃ–

১৷ একটি দু’টি নয়, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর অনেক বই যত্নের সঙ্গে পড়তে হবে৷ অল্প পড়াশোনা করে বিদ্বান হওয়া যায় না৷

দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলো

এই পৃথিবীতে সারা বিশ্বে হাওয়া আমাদের অনুকূলে৷ বর্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ মানবতার জন্যে কোনো কিছু করার এটাই উপযুক্ত সময়৷ এই সন্ধিক্ষণে এক মুহূর্ত একশত বৎসরের সমান৷ তাই বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগাও৷ প্রবল উৎসাহের সঙ্গে তোমার কর্তব্য করে যাও৷ তোমাদের কাজের গতিকে দ্রুততর করতেই  হবে৷

ৰুদ্ধি আর জাগতিকতা–এই দু’টির মধ্যে অচ্ছেদ্য সম্পর্ক  একটি ছাড়া আর একটির অস্তিত্ব থাকতেই পারে না৷ আরকোনো জড় বস্তু যেমন জল, তার নিজস্ব ৰুদ্ধি নেই৷ জড়বস্তু ভূমাসত্তার ইচ্ছায় পরিচালিত হয়৷ কিন্তু প্রতিটি জীবিত  সত্তার অণুমন আছে৷ তাই মানুষ পরমপুরুষ ছাড়া থাকতে পারেনা৷

বিদ্বান ও শিক্ষিত

তাকেই Learned  বা বিদ্বান বলব যে প্রচুর পড়াশোনা করেছে, যা পড়েছে তা ৰুঝেছে, সেটা মনে রেখেছে, ও সেগুলিকে কার্যেও রূপায়িত করেছে৷ কোনো শিক্ষিত (Educated) ও বিদ্বান মানুষের পুঁথিগত বিদ্যা থাকতে পারে বা নাও পারে, তেমনি প্রথাগত ভাবে বিদ্যার্জনকারী কোনো একজন মানুষ প্রকৃত শিক্ষিত হতেও পারে আবার নাও পারে৷ তাহলে সত্যিকারের বিদ্বান ও শিক্ষিত তাকেই বলব যার মধ্যে নিম্নোক্ত চারটি তত্ত্ব থাকতেই হবে, এদের মধ্যে একটিরও অভাব থাকলে তাকে বিদ্বান বলা যাবে না ঃ–

১৷ একটি দু’টি নয়, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর অনেক বই যত্নের সঙ্গে পড়তে হবে৷ অল্প পড়াশোনা করে বিদ্বান হওয়া যায় না৷

প্রদমন, অবদমন ও দমন

কম্যুনিষ্ট রাষ্ট্রগুলিতে তোমরা প্রদমন, অবদমন ও দমনের একটা ত্রিভুজ পুরোপুরি কার্যকরী দেখতে পাবে৷ এই তিনটি ত্রুটির ওপর কম্যুনিজম আধারিত৷ কিন্তু এই তিনটি ত্রুটির মধ্যে সব চাইতে বেশি ঘটেছে দমন, তারপর ঘটেছে অবদমন ও সব চাইতে কম ঘটেছে প্রদমন৷ এই প্রদমন, অবদমন ও দমনের ফলে সৃষ্ট শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা থেকে জনসাধারণকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে৷ এই তিনটি মানসিক পীড়ন মানুষের মনকে ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে দিয়েছে৷

ভুমি সংস্কার

জমিদারী প্রথার বেশ কয়েকটি ত্রুটিই এই প্রথার অত্যধিক সমালোচিত হওয়ার  কারণ৷ প্রথমতঃ, চাষীরা যে জমি চাষ করতো সেই জমির ওপর তার কোন অধিকার ছিল না, ছিল কেবল চাষ করার অধিকার৷ দ্বিতীয়তঃ, জমিদাররা বিশাল পরিমাণ জমি তাদের নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে রেখে দিত৷ তৃতীয়তঃ, জমিদাররা যে খাজনা আদায় করতো তার অনেক কম সরকারের কাছে জমা করতো৷

সমবায়ই একমাত্র সমাধান

সমবায় সম্পর্কে অনেকের মনে প্রশ্ণ জাগতে পারে৷ কারণ আজ বেশীর ভাগ দেশেই সমবায় অসফল হয়েছে৷ এই উদাহরণের ওপর ভিত্তি করে’ সমবায়কে দোষারোপ করা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হবে না৷ কারণ সমবায়ের সাফল্যের যে অপরিহার্য তত্ত্ব তা বেশীর ভাগ দেশ সৃষ্টি করতে পারেনি৷ সমবায়ের সাফল্য নির্ভর করে মূলতঃ তিনটি তত্ত্বের ওপর–নীতিবাদ, কড়া তত্ত্বাবধান (Supervision) ও জনগণের হদয় দিয়ে সমবায়কে গ্রহণ৷ এ তিন তত্ত্বের মধ্যে যেখানে যতটুকু রয়েছে সেখানে সমবায় ততটুকুই সাফল্য অর্জন করেছে৷ যেমন, ইজরায়েল চতুর্দিকে শত্রু বেষ্টিত হবার জন্যে ওখানকার জনগণের মধ্যে এক স্বয়ং–নির্ভরশীলতা চেতনা গড়ে’ উঠেছে–কারণ জনগণ মন–প্রাণ দিয়ে তাদের অর্থনীতিকে মজ

বিজ্ঞান হোক সেবা ও কল্যাণের জন্যে

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই অর্থাৎ আনুমানিক দশ লক্ষ বছর আগে– পৃথিবীতে মানবজাতি আসার ঊষালগ্ণ থেকেই–বিজ্ঞানের সঙ্গে মানুষের জীবন অচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত৷ যতদিন পর্যন্ত একজন মানুষও থাকবে ততদিন বিজ্ঞানের যুগ থাকবে৷

জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সর্বাত্মক জয়লাভের ইচ্ছা মানুষের মধ্যে আদিম ও অনন্ত প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয়–জীবনের সকল ক্ষেত্রে ছোট হয়ে বাঁচাটা মানুষের পক্ষে অভাবনীয়৷ অনন্তকাল ধরে’প্রকৃতির আজ্ঞাবহ ভৃত্য হিসেবে বাঁধাধরা পথে চলার ধারণা কোনদিনই তার মনঃপুত নয়৷ যেহেতু তাকে টিকে থাকতে হয় আপাতঃ প্রতিকূল স্থূল জগতে, তাই তমোগুণী প্রকৃতিকে জয় করতে গিয়েই উদ্ভব হয়েছে Science বা ভৌতিক বিজ্ঞানের৷

বাংলা ভাষা ও তার উপভাষা

বাঙলা ভাষায় মুখ্যতঃ বারটি উপভাষা (dialect) রয়েছে৷ সেই উপভাষা ও তাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলি নিম্নরূপ–

(১) মধ্যরাঢ়ীয় বাংলা ঃ

(ক) নলহাটি, মুরারই বাদে বীরভূম জেলা

(খ) কান্দি মহকুমা

(গ) সাঁওতাল পরগণা জেলার দুমকা, জামতুড়া ও দেওঘর মহকুমা

(ঘ) বর্দ্ধমান জেলার দুর্গাপুর ও আসানসোল মহকুমা

(ঙ) ধানবাদ জেলা (পশ্চিমে পরেশনাথ পাহাড় পর্যন্ত)

(চ) পুরুলিয়া জেলা

(ছ) গিরিডি জেলার অংশবিশেষ

(জ) রাঁচী জেলার পূর্বাংশ–সিল্লি, সোণাহাতু, বুন্দু ও তমাড়

(ঝ) সিংভূম জেলার উত্তর–পূর্বাংশ

(ঞ) কাঁথি এলাকা বাদে মেদিনীপুর জেলা

আজকের বিভিন্ন সমস্যাসমূহ ও তাদের সমাধান

বস্তুতঃ উন্নত ধরণের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার অর্থই দ্রুত যান্ত্রিকীকরণ৷ প্রাচীনপন্থীরা এই যাত্রিকীকরণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মুখর৷ মোদ্দা কথাটা এই যে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামোয় যাত্রিকীকরণের অর্থ-ই জনসাধারণের অধিকতর দুঃখ---অধিকতর বেকারী৷ এজন্যেই প্রাচীনপন্থীরা এর বিরোধী৷ পুঁজিবাদকে না হটিয়ে জনকল্যাণ করতে গেলে যান্ত্রিকীকরণের বিরোধিতা করতেই হবে৷ কারণ যন্ত্রের উৎপাদিকা শক্তি দ্বিগুণ বেড়ে গেলে মনুষ্য শক্তির প্রয়োজন ঠিক অর্ধেকে নেবে যায়, আর তাই পুঁজিবাদীরা তখন বাপকভাবে কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করে৷ অল্পসংখ্যক আশাবাদী লতে পারেন, ‘‘অবস্থার চাপে পড়ে মানুষ এই উদ্বৃত্ত শ্রমিক দলকে ভিন্ন কাজে নিয়

অর্থনৈতিক মন্দা প্রসঙ্গে

শোষণ যখন চরম বিন্দুতে গিয়ে পৌঁছায়, সমাজের গতিশীলতা ও গতিবেগও তখন প্রায় শূন্যাঙ্কে পৌঁছে যায়৷ এমন পরিস্থিতিতে, শোষণের সেই চরমাবস্থায় সমাজের বুকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়৷ ভৌতিক জগতের ক্ষেত্রে এই বিস্ফোরণটা হয় জড়াত্মক, আর মানসিক অধিক্ষেত্রে বিস্ফোরণটা হয় মানসিক বা ভাবাত্মক৷ এ ভাবেই অবস্থাভেদে বিস্ফোরণগুলি ঘটে চলে৷ এই যে মন্দা এটা আসলে সমাজের বুকে শোষণ বা দমন–প্রদমন–ব ফলশ্রুতি৷ সমাজতান্ত্রিক দেশ বা পুঁজিবাদী দেশ উভয় রাষ্ট্রেরই অর্থনৈতিক পরিভূতে মন্দা আসতে বাধ্য–কারণ উভয় দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যেই অন্তর্নিহিত রয়েছে এক গভীর জড়তা৷

নব্যমানবতাবাদ

মানুষ চলতে শুরু করেছে যখন, নিজের কথাটা যতটা ভেবেছে, অন্যের কথাটা ততটা ভাবেনি৷ অন্য মানুষের কথাও ভাবেনি, আর মনুষ্যেতর জীব জন্তুর কথাও ভাবেনি,গাছপালার কথাও ভাবেনি৷ অথচ একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলে দেখা যাবে যে, নিজের কাছে নিজের অস্তিত্ব যতটা প্রিয়, প্রত্যেকের কাছে তাদের নিজের নিজের অস্তিত্ব ততটাই প্রিয়৷ আর সব জীবের এই নিজ অস্তিত্বপ্রিয়তাকে যথাযোগ্য মূল্য না দিলে সামগ্রিক ভাবে মানবিকতার বিকাশ অসম্ভব৷ মানুষ যদি ব্যষ্টি বা পরিবার,জাত বা গোষ্ঠীর কথা ভাবলো, সামগ্রিক ভাবে মানুষের কথা না ভাবলো–সেটা অবশ্যই ক্ষতিকর৷ কিন্তু মানুষ যদি সামগ্রিকভাবে জীবজগৎ, উদ্ভিদ জগতের কথা না ভাবলো সেটা কি ক্ষতিকর নয় মানবিকতা

জড়তার মুক্তি

গত পরশু সন্ধ্যায় রেণেশাঁ ক্লাবের সভায় আলোচ্য বিষয় ছিল ‘‘বুদ্ধির মুক্তি’’৷ কারো কারো মনে প্রশ্ণ জাগতে পারে---মুক্তি তো মানুষের জন্যে প্রয়োজন৷ দ্ধির মুক্তি আবার কী রকম কথা৷ বুদ্ধি জিনিসটা হ’ল অমূর্ত বা ভাববাচক৷ যা অমূর্ত যা ভাববাচক তার আবার মুক্তি কী!

শিক্ষার পদ্ধতি

শিক্ষাদানের পদ্ধতি  কীরকম হওয়া উচিত তা চিরকালেরই এক জটিল প্রশ্ণ৷ মানুষের মনের ওপর পরিবেশের প্রভাব অপরিসীম৷ যে পরিবেশে একজন জন্মায়, বেড়ে ওঠে, তার প্রভাব জীবনের শেষক্ষণ পর্যন্ত সেই মানুষটির ওপর কার্যকরী থাকে৷ একজন যেভাবে শিক্ষা পেল সেই অনুযায়ী তার মানসিক সংরচনাও তৈরী হয়৷ আর মানুষের জীবনে শারীরিক সামর্থ্যের চেয়ে মানসিক ক্ষমতার প্রভাব অনেকগুণ বেশী শক্তিশালী ৷

তোমাদের জীবনব্রত

মানুষ শুধুমাত্র তার জ্ঞান, ৰুদ্ধি অথবা সামাজিক মর্যাদা দিয়ে একটা মহান আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে না৷ একমাত্র নিজের আচরণের মাধ্যমেই সে এটা করতে পারে৷ আধ্যাত্মিক সাধনার দ্বারাই মানুষের আচরণের পরিশুদ্ধতা আসে৷ এর জন্যে তার তথাকথিত উঁচু বংশে জন্মগ্রহণ করার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী নেবার দরকার নেই৷ এতে বরং তার মনে একটা মিথ্যা অহংৰোধ তৈরী হতে পারে যা শেষপর্যন্ত তার আচরণের পরিশীলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে৷

নেতৃত্বের অভ্যুদয়

সমাজ–চক্রের পরিঘূর্ণনে, একটা বিশেষ যুগে তার পরবর্ত্তী যুগ আসার আগে একটা বিশেষ শ্রেণীর আধিপত্য থাকে, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে৷ এই বিশেষ শ্রেণী যখন রাজনৈতিক ক্ষমতায় থাকে, তাদের দ্বারা সমাজে শোষণ চলার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়৷ ইতিহাসের শিক্ষা এই যে, শোষণের সম্ভাবনাই শুধু নয়, যুগে যুগে এই শোষণের পুনরাবির্ভাব ঘটেছে৷

পরিবেশ বিজ্ঞান ঃ অরণ্যকে বাঁচাতেই হবে

পরিবেশ বিজ্ঞানকে Ecology) মানুষ স্বার্থের প্রেষণায় প্রতি পদে উপেক্ষা করে চলেছে৷ আমাদের মনে রাখা দরকার যে আকাশ-বাতাস-পাখী-বন্যজন্তু-সরীসৃপ-কীটপতঙ্গ-মাছ- জলজজীব-জলজউদ্ভিদ- সমুদ্র সবাইকার সঙ্গে সবাইকার অচ্ছেদ্য সম্পর্ক৷ মানুষ সেই অভিন্ন মহাসমাজের একটি অংশ মাত্র৷ কাউকে বাদ দিয়ে কেউ টিকতে পারবে না৷ মানুষও পারবে না৷ নির্র্বেধের মত অরণ্য ধবংস করে, বন্য পশুকে হত্যা করে, মৎস্যকুল ও পক্ষীকুলকে নির্মূল করে মানুষের কোন স্বার্থই সাধিত হবে না৷ এ পৃথিবীতে যে আসে সে যায়--- কেবল প্রকৃতি নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত পৃথিবীতে বেঁচে থাকে৷  মানুষের এই নির্বুদ্ধিতার জন্যে অনেক কিছুই প্রকৃতি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব

সামাজিক–অর্থনৈতিক গোষ্ঠীবদ্ধতা

বর্তমানে ছোট ছোট রাষ্ট্র অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে সংগ্রাম করে’ চলেছে৷ মানুষ ছোট ছোট রাষ্ট্র অপেক্ষা বড় বড় সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে’ তুলে সকলের কল্যাণ নিশ্চিত করতে আগ্রহী৷ সংকীর্ণ সেণ্টিমেণ্ট ধীরে ধীরে সরে’ যাচ্ছে৷ মানুষের মনে বিশ্বৈকতাবাদী ভাবধারার উদয় হচ্ছে৷ যে সমস্ত অন্ধ বিশ্বাস ও ভাবজড়তা এতদিন সমাজের অনেকের শ্বাসরুদ্ধ করে’ রেখেছিল আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার বিকাশ তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে৷ যুক্তি–বিচার ও ‘সর্বজনহিতায়’ ভাবনাকে মানবতা এখন গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে৷ তাই প্রাউট বর্তমান পৃথিবীর সামাজিক–অর্থনৈতিক প্রবণতা অনুসারে সর্বত্র স্বয়ং–সম্পূর্ণ অঞ্চল (unit) গড়ে’ তোলার নীতিতে বিশ্বাসী৷ এই

পরিকল্পনার মৌল নীতি

যাঁরা বিভিন্ন স্তরে যোজনা পর্ষদের সঙ্গে সংযুক্ত সেই ধরণের বড় বড় অর্থনীতিবিদদের কোন পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে যে কয়েকটি বিষয়ের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত সেগুলি হ’ল–

* উৎপাদনের ব্যয়

* উৎপাদন–ক্ষমতা

* ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা  

* সামূহিক প্রয়োজনীয়তা৷

এবার উপরি–উক্ত বিষয়গুলির প্রত্যেকটি নিয়ে আলোচনা করা যাক৷

উৎপাদন–ব্যয়

চারটি সামূহিক মনস্তত্ত্ব

শূদ্র–মনস্তত্ত্ব

ব্যষ্টি মানসের তর৷ যেখানে জড়ের তরে৷র সে৷ তাল রেখে চলবার চেষ্টা করছে, কিন্তু তাকে আত্মসাৎ করবার চেষ্টা করছে না, সে ক্ষেত্রে তার এই তাল রেখে চলবার প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যষ্টি–মানসকেও জড়–ভাবাত্মক করে’ দেয়ঙ্গ জড়–ভাবের ভাবুক এই ব্যষ্টি–মানস–স্বভাবতঃই যাতে তমোগুণী অন্ধকার বেশী, তাকেই বলি শূদ্রঙ্গ এদের দ্বারা কোনো কিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, কারণ স্থূলতম তর৷ জড়তর৷ই এদি’কে নিয়ন্ত্রণ করেঙ্গ

ক্ষাত্র–মনস্তত্ত্ব

নব্যমানবতাবাদের ৩ সোপান

মানুষ চলতে শুরু করেছে যখন, নিজের কথাটা যতটা ভেবেছে, অন্যের কথাটা ততটা ভাবেনি৷ অন্য মানুষের কথাও ভাবেনি, আর মনুষ্যেতর জীব জন্তুর কথাও ভাবেনি,গাছপালার কথাও ভাবেনি৷ অথচ একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলে দেখা যাবে যে, নিজের কাছে নিজের অস্তিত্ব যতটা প্রিয়, প্রত্যেকের কাছে তাদের নিজের নিজের অস্তিত্ব ততটাই প্রিয়৷ আর সব জীবের এই নিজ অস্তিত্বপ্রিয়তাকে যথাযোগ্য মূল্য না দিলে সামগ্রিক ভাবে মানবিকতার বিকাশ অসম্ভব৷ মানুষ যদি ব্যষ্টি বা পরিবার,জাত বা গোষ্ঠীর কথা ভাবলো, সামগ্রিক ভাবে মানুষের কথা না ভাবলো–সেটা অবশ্যই ক্ষতিকর৷ কিন্তু মানুষ যদি সামগ্রিকভাবে জীবজগৎ, উদ্ভিদ জগতের কথা না ভাবলো সেটা কি ক্ষতিকর নয় মানবিকতা

হিম যুগ আসছে

ইতিহাস এগিয়ে চলে তরঙ্গায়িত ছন্দে ঊহ–বোহের দোলায়৷ সে চলে আর চলে তারপর দেয় একটা লাফ, আবার সে চলে, আবার দেয় লাফ৷ এই গতিতেই সে চলতে থাকে৷ কিন্তু হঠাৎ এক সময় তার এই চলনটা যায় বদলে৷ তার গতিতে আসে অতিরিক্ত দ্রুতি৷ সে তখন চলতে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে৷ শুরু হয় নোতুন যুগের সূচনা৷ আমরা এখন এ রকমই এক বিরাট পরিবর্ত্তনের প্রবেশদ্বারে এসে উপস্থিত হয়েছি৷ না, আমরা শুধুমাত্র এক নোতুন যুগের প্রবেশদ্বারেই উপস্থিত হইনি৷ আমরা সেই প্রবেশদ্বার অতিক্রম করেও ফেলেছি৷ বস্তুতঃ আমরা এখন একটা নোতুন যুগের মধ্য দিয়ে চলেছি৷ তোমরা কি তা অনুভব করতে পারছ?

বস্ত্র উৎপাদন

আঁশ তৈরীর যেখানে  যে ধরণের কাঁচামাল পাওয়া যায়, ও যেখানে যে ধরণের জলবায়ু সেখানে সেই ধরণের পোষাক মানুষ পরে থাকে৷ বাঙালীস্তানের পটভূমিতে এই ব্যাপারটা দেখা যেতে পারে৷

বাঙালীস্তানে মূলতঃ চার ধরণের কাঁচামাল পাওয়া যায়–তুলো, তুঁতজাত রেশম,  তুঁতজাত নয় এমন রেশম ও অন্যান্য৷

তুলো

সমতট

প্রাচীন ৰাঙলা পাঁচটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল– রাঢ়, সমতট, ৰঙ্গ, ৰরেন্দ্র ও মিথিলা৷ মিথিলা বর্তমানে বিহারের অঙ্গীভূত৷

বঙ্গোপসাগরের বিশাল উপকূল এলাকা যাতে কোনো পাহাড়–পর্বত নেই কিন্তু যা পদ্মা ও ভাগীরথী নদীর বালুযুক্ত দোয়াঁশ মাটি দিয়ে তৈরী, ও যার মধ্যে অজস্র জলাশয়, যা খাল–বিল আর শাখানদীতে সমৃদ্ধ, সংস্কৃতে সেই অঞ্চলকে বলে ‘সমতট’, কথ্য ৰাংলায় বলে ‘বাগড়ী’৷ এই অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদ আর সমৃদ্ধ কৃষিসম্পদে পূর্ণ৷ এইজন্যে সমতটকে বলা হত ‘‘সোণার ৰাঙলা’’, যে কারণে বিখ্যাত ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন– ‘‘সুজলাং সুফলাং মলয়জ শীতলাং মাতরম্’’৷

শিক্ষার পদ্ধতি

শিক্ষাদানের পদ্ধতি  কীরকম হওয়া উচিত তা চিরকালেরই এক জটিল প্রশ্ণ৷ মানুষের মনের ওপর পরিবেশের প্রভাব অপরিসীম৷ যে পরিবেশে একজন জন্মায়, বেড়ে ওঠে, তার প্রভাব জীবনের শেষক্ষণ পর্যন্ত সেই মানুষটির ওপর কার্যকরী থাকে৷ একজন যেভাবে শিক্ষা পেল সেই অনুযায়ী তার মানসিক সংরচনাও তৈরী হয়৷ আর মানুষের জীবনে শারীরিক সামর্থ্যের চেয়ে মানসিক ক্ষমতার প্রভাব অনেকগুণ বেশী শক্তিশালী ৷

প্রাউট প্রসঙ্গে প্রবচন (১)

জ্ঞান দুই ধরনের –– ৰুদ্ধি সঞ্জাত জ্ঞান ও ঐশ্বরীয় অনুভূতি সঞ্জাত জ্ঞান৷ ৰৌদ্ধিক জ্ঞান যেহেতু অভিজ্ঞতা সঞ্জাত সেহেতু তা আপেক্ষিকতার দোষে দুষ্ট৷ সেইজন্যেই ৰৌদ্ধিক জ্ঞানকে চরম জ্ঞানের দাবীদার বলা চলে না৷ ঐশ্বরীয় অনুভূতি সঞ্জাত জ্ঞানই চেতনাসম্পৃক্ত৷ এই জ্ঞানই সমস্ত কিছুকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে সমর্থ –– তাই ঐশ্বরীয় অনুভূতি সঞ্জাত জ্ঞানই চরমজ্ঞান৷

বিজ্ঞান হোক সেবা ও কল্যাণের জন্যে

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই অর্থাৎ আনুমানিক দশ লক্ষ বছর আগে– পৃথিবীতে মানবজাতি আসার ঊষালগ্ণ থেকেই–বিজ্ঞানের সঙ্গে মানুষের জীবন অচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত৷ যতদিন পর্যন্ত একজন মানুষও থাকবে ততদিন বিজ্ঞানের যুগ থাকবে৷

জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সর্বাত্মক জয়লাভের ইচ্ছা মানুষের মধ্যে আদিম ও অনন্ত প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয়–জীবনের সকল ক্ষেত্রে ছোট হয়ে বাঁচাটা মানুষের পক্ষে অভাবনীয়৷ অনন্তকাল ধরে’ প্রকৃতির আজ্ঞাবহ ভৃত্য হিসেবে বাঁধাধরা পথে চলার ধারণা কোনদিনই তার মনঃপুত নয়৷ যেহেতু তাকে টিকে থাকতে হয় আপাতঃ প্রতিকূল স্থূল জগতে, তাই তমোগুণী প্রকৃতিকে জয় করতে গিয়েই উদ্ভব হয়েছে Science বা ভৌতিক বিজ্ঞানের৷

ৰৃহত্তর ৰাঙলা

প্রায় ৫০০০ বছর আগে অষ্ট্রিক, মঙ্গোলিয়ন আর নিগ্রো রক্তের সংমিশ্রণ–জাত ৰাঙালী জনসমুদায় সৃষ্টি হয়েছিল৷ সেই সময় ৰাঙলার ভাষা ছিল সংস্কৃত, তাই ৰাংলাভাষারও পথনির্দেশক ভাষা হচ্ছে সংস্কৃত৷ প্রায় ১২০০ বছর আগে ৰাংলাভাষার এক রূপান্তরণ হয়েছিল৷ সেই সময় ৰাঙলা বলতে বোঝাত বর্তমানের পশ্চিমবঙ্গ, নেপালের ঝাপা জেলা, বিহারের পূর্বাংশ, সম্পূর্ণ ৰাঙলাদেশ আর বর্মা, মেঘালয়ের সমতল অংশ, প্রাগজ্যোতিষপুরের কিছু অংশ আর অসমের বরপেটা, কামরূপ ও নগাঁও৷ ৰৃহত্তর ৰাঙলার এই ছিল এলাকা৷ আজ ৰাঙালী বলতে ৰোঝায় দুই প্রকারের অভিব্যক্তি– ভারতীয় ৰাঙালী আর ৰাঙলাদেশী ৰাঙালী ৷ এই দু’য়ের মধ্যে একটা সংহতিকরণ বা মিশ্রণ অবশ্যই হওয়া উচিত৷

প্রাউটের অর্থনীতি–ব্যবস্থার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের ওপর নিম্নে আলোকপাত করা হচ্ছে

নূ্যনতম প্রয়োজন ও ক্রয়ক্ষমতার গ্যারান্টী ঃ

প্রাউট প্রতিটি মানুষকে জীবন–ধারণের নূ্যনতম প্রয়োজন–অন্ন, বস্ত্র, আবাস, চিকিৎসা ও শিক্ষা–প্রদানের নিশ্চিততার (গ্যারান্টী) পক্ষপাতী৷ নূ্যনতম প্রয়োজনপূর্তির গ্যারান্টী দানের পর যে উদ্বৃত্ত সম্পদ থাকবে তা যাঁরা বিশেষ দক্ষতার অধিকারী বা বিশেষ গুণ–সম্পন্ন যেমন চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়র বৈজ্ঞানিক প্রভৃতির মধ্যে বন্টন করতে হবে, কারণ সমাজের সামূহিক উন্নয়নে এঁদের বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছে৷

বাণিজ্যে সমবায়

ব্যবসায় ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা দিয়ে কেবল করধার্যের ক্ষেত্রে কঠোরতা করা যে সাফল্যজনক হয় না তা’ অধিকাংশ রাষ্ট্রেরই জানা আােছ৷ আজকের পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রেই বিক্রয়কর, ক্রয়কর, আয়কর, অতিলাভ কর প্রভৃতি ৰাৰদ সরকারের যা’ আয় হ’য়ে থাকে তা’ ন্যায্য–প্রাপ্যের এটি অতিক্ষুদ্র ভগ্ণাংশ মাত্র৷ কর আদায়কারী কর্মচারীদের চাইতে কর যারা ফাঁকি দেয় তারা অনেক ৰেশী ৰুদ্ধিমান, অনেক ৰেশী অভিজ্ঞ৷ সমস্বার্থের ভিত্তিতে তারা ৰেশ একতাৰদ্ধও ৰটে, কিন্তু কর আদায়কারীরা একতাৰদ্ধ নয়, তাদের মধ্যে ৰখরা নিয়ে সংষর্ঘ থাকে, তাদের মধ্যে নীতিগত ভেদ থাকে, তাদের মধ্যে বিশ্বাস–ঘাতকতা থাকে, তাই অতিরিক্ত কর–ধার্য করে’ বৈশ্য

প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র

এ পৃথিবীতে পুরোপুরি স্ব–নির্ভর কেউ নয়৷ প্রত্যেকেই কোন না কোন ভাবে অন্যের ওপর নির্ভরশীল৷ প্রত্যেকেই নিজের অপূর্ণতা অন্যের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে পূরণ করে’ নেয়৷ যখনই কোন বিরাট জনগোষ্ঠী এইভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে নিজেদের অপূর্ণতা পূর্ণ করার চেষ্টা করে, তখনই তাকে আমরা ‘সমাজ’ বলে’ থাকি৷ সামবায়িক প্রচেষ্টার দ্বারা সমস্ত সমস্যার সমাধানের মধ্যেই যথার্থ সমাজ প্রতিষ্ঠার তাৎপর্য্য৷ 

অর্থনৈতিক গণতন্ত্র

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, ‘জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্যে, জনগণের সরকার’ঙ্গ কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে গণতন্ত্র হ’ল ‘মবোক্রেসী’, কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার নিয়ন্ত্রিত হয় ‘মব–সাইকোলজি’(জনতা–মনস্তত্ত্ব)–র দ্বারা।

যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবেই গণতন্ত্র সার্থক হবে, নচেৎ জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্যে, জনগণের শাসনের মানে দাঁড়াবে ‘বোকার দ্বারা, বোকার জন্যে, বোকার শাসন’*

পরিবেশ বিজ্ঞান ঃ অরণ্যকে বাঁচাতেই হবে

পরিবেশ বিজ্ঞানকে Ecology) মানুষ স্বার্থের প্রেষণায় প্রতি পদে উপেক্ষা করে চলেছে৷ আমাদের মনে রাখা দরকার যে আকাশ - বাতাস - পাখী - বন্যজন্তু - সরীসৃপ -কীটপতঙ্গ-মাছ-জলজজীব-জলজউদ্ভিদ-সমুদ্র সবাইকার সঙ্গে সবাইকার অচ্ছেদ্য সম্পর্ক৷ মানুষ সেই অভিন্ন মহাসমাজের একটি অংশ মাত্র৷ কাউকে বাদ দিয়ে কেউ টিকতে পারবে না৷ মানুষও পারবে না৷ নির্র্বেধের মত অরণ্য ধবংস করে, বন্য পশুকে হত্যা করে, মৎস্যকুল ও পক্ষীকুলকে নির্মূল করে মানুষের কোন স্বার্থই সাধিত হবে না৷ এ পৃথিবীতে যে আসে সে যায়--- কেবল প্রকৃতি নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত পৃথিবীতে বেঁচে থাকে৷  মানুষের এই নির্বুদ্ধিতার জন্যে অনেক কিছুই প্রকৃতি নির্দিষ্ট সময় পর

চারটি মনস্তত্ত্বের আধিপত্যের যুগ–বৈশিষ্ট্য

অর্থাৎ বৈশ্য–যুগেই বস্তুর বৈবহারিক মূল্য সবচাইতে কমে’ যায়৷ বস্তু স্ব–ভাবে বা টাকার অঙ্কে ক্রমশঃ স্থানু হয়ে পড়তে থাকে৷ বৈশ্য যুগে এইটেই সব চেয়ে বড় অভিশাপ৷ কারণ ভোগ্য বস্তুর গতিশীলতা যেখানে যত কম, বা অন্য ভাষায় বলতে গেলে, বিশেষ বিশেষ প্রকোষ্ঠে তার স্থিতিশীলতা যত বেশী, ততই তা জনসাধারণের পক্ষে অধিকতর ক্ষতির কারণ হতে থাকে৷

অপুষ্টির বিরুদ্ধে যুদ্ধ

প্রাউট–প্রবক্তার তোমরা (প্রাউটিষ্টরা) যেহেতু সমগ্র বিশ্বের দায়িত্ব নিয়েছ তাই অপুষ্টি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করাও তোমার পবিত্র কর্ত্তব্যের মধ্যে পড়ে৷ অপুষ্টির মূল কারণ বিশ্বে আর্থিক ব্যবস্থায় ধনসম্পদের অসন্তুলন৷ প্রাউট এর চিরস্থায়ী সমাধান৷ তবে এজন্যে খাদ্যাভাব সমস্যার আশু সমাধান জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে৷ তুমি এজন্যে কী করছ?

তোমরা এ ব্যাপারে তোমার গুরুদায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারো না৷ সমগ্র বিশ্ব তোমাদের দিকে কাতর নয়নে তাকিয়ে আছে৷ এটা আমাদের পবিত্র কর্তব্য৷ আমাদের এই দায়িত্ব পালন করতেই হবে৷

কৃষিকে ধাপে ধাপে সমবায়ের আওতায় আনতে হবে

সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি–জমির মালিকানাস্বত্ব নিয়ে আর কোন বিরোধ বা সংশয়ের কোন অবকাশ থাকবে না৷ এমনি ভাবে স্তরে স্তরে কৃষি–জমির সামাজিকীকরণ করে’ ফেলার নীতি অনুসরণ করার ফলে মানুষও ক্ষুদ্র ব্যষ্টিস্বার্থের দ্বারা পরিচালিত না হয়ে সামূহিক স্বার্থের দ্বারা প্রেষিত হবার শিক্ষা লাভ করবে৷ মানুষের এই মানসিক বিস্তার ও দৃষ্টিকোণের পরিবর্ত্তন সমাজের বুকে এক সুষ্ঠু অনুকূল পরিবেশও গড়ে তুলবে৷ অবশ্য সমাজের বুকে সামূহিক মনস্তত্ত্বের এমন পরিবর্ত্তন আনা রাতারাতি সম্ভব হবে না৷ এ পরিবর্ত্তন আসবে ধীরে ধীরে মানুষের মনস্তত্ত্বের ক্রমঃ–রূপান্তরণের মধ্য দিয়ে৷

কৃষি সমস্যা ও তার সমাধান প্রসঙ্গে

কৃষিভূমির সর্বাধিক ও সঙ্গত উপযোগিতা গ্রহণ, ও সকল কৃষিভূমির সুষ্ঠু পুনর্বিন্যাসের জন্যে সমবায়–প্রথাই অধিকতর কাম্য হওয়া উচিত৷

কৃষি কাজ যদি সমবায়–প্রথা অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয় তাহলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষি–জমিকে মিলিয়ে একটি বড় কৃষি–জমিতে পরিণত করা যাবে৷ তার ফলে সব কর্ষকেরই বিরাট সামূহিক লাভ হবে৷ এতে আলের জন্যে অযথা জমি নষ্ট হবে না, কৃষিযোগ্য ভূমির আয়তনও বাড়বে৷

সংস্কৃতি ও সভ্যতা

সাধারণতঃ ‘সমাজ’ বলতে নারী ও পুরুষের সমাহারকে বোঝায়৷ কিন্তু শব্দটির মূলগত তাৎপর্য তা নয়৷ প্রকৃত অর্থে ‘সমাজ’ বলতে বোঝায়, যেখানে সকলে একই কর্মবন্ধনে, সম্মিলিতভাবে এগিয়ে চলেছে---‘সমনাম্‌ এজতে’৷ আমরা কখনো কখনো বাসে, ট্রামে, ট্রেনে বহু লোককেই তো একত্রে দেখে থাকি৷ কিন্তু তা সমাজ পদবাচ্য নয়৷ একটা সর্বজনগ্রাহ্য আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যখন অনেক মানুষ একই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায় ও তাকে পাওয়ার জন্যে সক্রিয় হয়ে ওঠে তখনই তা সমাজ পদবাচ্য৷ ইংরেজী‘society’ শব্দটি ‘সমাজ’ শব্দের খাঁটি প্রতিশব্দ নয়৷ সামাজিক অগ্রগতি এক ধরণের সামাজিক কর্মেরই ফলশ্রুতি যেখানে পারষ্পরিক ঐক্যবন্ধন আরও বেশী সুদৃঢ় হয়ে সম্মিলিতভ

সভ্যতা, বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক প্রগতি

আজকের আলোচনার বিষয় হ’ল, সভ্যতা, বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক প্রগতি৷ মানুষের বিভিন্ন ভাবের অভিব্যক্তির সামূহিক নাম ‘কালচার’ বা ‘সংস্কৃতি’৷ শুরুতেই আমি তোমাদের ৰলে রাখছি, গোটা মানুষ জাতির সংস্কৃতি একটাই৷

দ্বন্দ্বাত্মক ভৌতিকতাবাদ ও গণতন্ত্র

নৈতিকতা ঃ গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্যে নৈতিকতা দ্বিতীয় মূল উপাদান৷ নীতির অভাবে লোকে বোট বিক্রী করে৷ পৃথিবীতে এমন কতকগুলি দেশ আছে যেখানে বোট কেনাবেচা হয়৷ আমরা কি একে গণতন্ত্র ৰলতে পারি? এটা কি প্রহসন নয়? তাই যতক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত জনসংখ্যার শতকরা একান্ন জন লোক নৈতিক অনুশাসনকে কঠোরভাবে না মানছে ততক্ষণ পর্যন্ত গণতন্ত্রের সাফল্য অসম্ভব যেখানে দুর্নীতিপরায়ণেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকৰে সেখানে তাদের মধ্যে থেকেই অবশ্যম্ভাবীরূপে নেতা নির্বাচিত হৰে৷

সামাজিক–অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ

 সভ্যতার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনে জেগেছিল শিল্প সৃষ্টির এষণা ও প্রেষণা৷ এষণাই প্রেষণাকে ডেকে আনে৷ সভ্যতার প্রথম ধাপে শিল্পমাত্রই ছিল কুটির শিল্প৷ নারী–পুরুষ–বালক–ব্ নির্বিশেষে সবাই শিল্প রচনায় হাত লাগাত৷ পরে দেখা গেল কিছু  শিল্প গ্রামে গ্রামে করা যায় না.....করতে হয় কিছু সংখ্যক গ্রাম নিয়ে৷ তা না হলে তাদের একদিকে যেমন বাজারের ঘাটতি পড়ে, অন্যদিকে তেমনি শিল্পীর সংখ্যাতেও অভাব দেখা দেয়৷ তখন মানুষ প্রথম শিল্পায়োগ বা কারখানায়* যেতে শুরু করল৷ এখানে প্রসঙ্গতঃ একটা কথা বলে’ রাখি৷ শিল্প যত বেশী কুটীর–শিল্প হয়, শিল্প যত বিকেন্দ্রীকৃত হয়, মানুষের সুবিধা তত বেশী৷ এতে যে শুধু আর্থিক সামর্থ্যকে চার

প্রাউট ও নব্যমানবতাবাদ

অস্তিত্বের সকল ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান গতিশীলতার দ্রুতি থাকতেই হবে৷ গতির দ্রুতিই জীবনের মূল পরিচয় বহন করে৷ মানুষের দৈহিক সংরচনা পাঞ্চভৌতিক কিন্তু মানব জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে পরমপুরুষ (Supreme Entity)৷ সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমেই আমাদের যেতে হবে৷

প্রাউটের মূলেও রয়েছে এই গতিশীলতা৷ প্রাউট হচ্ছে একটি সামাজিক–অর্থনৈতিক দর্শন যা মানবজাতিকে অপূর্ণতা থেকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে৷ পরমপুরুষের দিকে এগিয়ে চলা সকলের পক্ষেই একটা বিরামহীন প্রক্রিয়া৷ এই প্রক্রিয়ার অন্তে তুমি পরমপুরুষের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে৷

গণ-অর্থনীতি ও মানস-অর্থনীতি

আজকের অধিকাংশ অর্থনীতিবিদই মানস-অর্থনীতি আর গণ-অর্থনীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ অপরিচিত–আর তাই তাঁদের বর্ত্তমান অর্থনৈতিক ধ্যান–ধারণায় অর্থনীতির এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ শাখাই কোন স্থান পায়নি৷

কোনো অর্থনীতিকে উন্নত অর্থনীতি (Developed Economy) অভিধায় অভিহিত করতে গেলে তাতে থাকবে চারটি মুখ্য ধারা–

প্ত গণ-অর্থনীতি (People’s Economy)

প্ত সাধারণ অর্থনীতি (General Economy)

প্ত মানসভৌম-অর্থনীতি (Psycho-Economy)

প্ত বাণিজ্যিক-অর্থনীতি (Commercial Economy)

পরিকল্পনার মৌল নীতি

যাঁরা বিভিন্ন স্তরে যোজনা পর্ষদের সঙ্গে সংযুক্ত সেই ধরণের বড় বড় অর্থনীতিবিদদের কোন পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে যে কয়েকটি বিষয়ের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত সেগুলি হ’ল–

* উৎপাদনের ব্যয়   

* উৎপাদন–ক্ষমতা

* ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা 

* সামূহিক প্রয়োজনীয়তা৷

এবার উপরি–উক্ত বিষয়গুলির প্রত্যেকটি নিয়ে আলোচনা করা যাক৷

উৎপাদন–ব্যয়

মানব প্রগতি

এই পরিদৃশ্যমান বিশ্বে রয়েছে তিনটি স্তর–আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক বা কারণ৷ এছাড়া রয়েছে একটা মানসাতীত স্তর৷ আবার মানবীয় অস্তিত্বেও রয়েছে তিনটি স্তর–স্থূল, সূক্ষ্ম ও কারণ৷ এ ছাড়া রয়েছে এক প্রতিফলিত চৈতন্য৷ এই চৈতন্যের স্তরে বিকাশের কোন প্রশ্ণ নেই, কারণ আত্মা হ’ল গুণাতীত অতীন্দ্রিয় সত্তা৷ যেখানে রয়েছে অপূর্ণতা ও নশ্বরতা সেখানেই রয়েছে বিকাশের সুযোগ৷ অপূর্ণতা থেকে পূর্ণতার দিকে গতিই হ’ল প্রগতি৷ মানসাতীত স্তরে কোন প্রগতি নেই, কারণ তা’ পূর্ণ ও শাশ্বত৷ কেবল মানসিক স্তরে এই প্রগতির পূর্ণ সুযোগ রয়েছে৷ স্থূল শরীর যে পাঞ্চভৌতিক উপাদানে তৈরী সেই পাঞ্চভৌতিক উপাদান ভূমধ্যসাগরের স্থূল অভিব্যক্তি ছাড়া

ধন–সঞ্চয় সম্পর্কে প্রাউটের নীতি

প্রাউটের প্রথম সিদ্ধান্ত ঃ–

কোন ব্যষ্টিই সামবায়িক সংস্থার (collective body) সুস্পষ্ট অনুমোদন ছাড়া ভৌতিক সম্পদ সঞ্চয় করতে পারবে না৷

আমাদের চাহিদা তিন ধরনের–

            * ভৌতিক (physical)

            * মানসিক (psychic)

            * আধ্যাত্মিক (spiritual)

অণুমন তার অনন্ত ক্ষুধা ভৌতিক উপাদান লাভের মাধ্যমেই তৃপ্ত করতে চায়, কিন্তু এই ভৌতিক সম্পদ যদিও বিপুল, তবুও অনন্ত নয়– সীমিত৷ ভৌতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক এই তিন স্তরের মধ্যে মানসিক ও আধ্যাত্মিক জগৎ অনন্ত৷ এই দুই স্তরে অণুমনের অনন্ত এষণার পরিতৃপ্তি হতে পারে৷ এতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দেবে না৷

সংবিধান সংশোধন

আজকের পৃথিবীতে সকল দেশের সংবিধানেরই কম–বেশী সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে৷ সংবিধান প্রসঙ্গে কতকগুলো বিশেষ বিশেষ সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে৷

প্রদমন, অবদমন ও দমন

কম্যুনিষ্ট রাষ্ট্রগুলিতে তোমরা প্রদমন, অবদমন ও দমনের একটা ত্রিভুজ পুরোপুরি কার্যকরী দেখতে পাবে৷ এই তিনটি ত্রুটির ওপর কম্যুনিজম আধারিত৷ কিন্তু এই তিনটি ত্রুটির মধ্যে সব চাইতে বেশি ঘটেছে দমন, তারপর ঘটেছে অবদমন ও সব চাইতে কম ঘটেছে প্রদমন৷ এই প্রদমন, অবদমন ও দমনের ফলে সৃষ্ট শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা থেকে জনসাধারণকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে৷ এই তিনটি মানসিক পীড়ন মানুষের মনকে ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে দিয়েছে৷

আজকের বিভিন্ন সমস্যাসমূহ ও তাদের সমাধান

বস্তুতঃ উন্নত ধরণের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার অর্থই দ্রুত যান্ত্রিকীকরণ৷ প্রাচীনপন্থীরা এই যাত্রিকীকরণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মুখর৷ মোদ্দা কথাটা এই যে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামোয় যাত্রিকীকরণের অর্থ-ই জনসাধারণের অধিকতর দুঃখ---অধিকতর বেকারী৷ এজন্যেই প্রাচীনপন্থীরা এর বিরোধী৷ পুঁজিবাদকে না হটিয়ে জনকল্যাণ করতে গেলে যান্ত্রিকীকরণের বিরোধিতা করতেই হবে৷ কারণ যন্ত্রের উৎপাদিকা শক্তি দ্বিগুণ বেড় গেলে মনুষ্য শক্তির প্রয়োজন ঠিক অর্ধেকে নেবে যায়, আর তাই পুঁজিবাদীরা তখন বাপকভাবে কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করে৷ অল্পসংখ্যক আশাবাদী লতে পারেন, ‘‘অবস্থার চাপে পড়ে মানুষ এই উদ্বৃত্ত শ্রমিক দলকে ভিন্ন কাজে নিয়ো

গণতান্ত্রিক নির্বাচন

বলা হয়, গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের জন্যে, জনগণের দ্বারা, জনগণের শাসন৷ শূদ্র যুগের পর গোষ্ঠীপতিদের হাতে ক্ষমতা স্থানান্তরিত হয়৷ কালক্রমে গোষ্ঠীপতিরা সামন্ত রাজা হয়ে পড়ে৷ রাজতন্ত্রের অত্যাচারের বিরুদ্ধ মনোভাব থেকে গণতান্ত্রিক মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে৷ গণতন্ত্রের ইতিহাস অতি প্রাচীন৷ কথিত হয় যে প্রাচীন ভারতবর্ষে লিচ্ছবী রাজবংশের সময়ে গণতন্ত্রের সূত্রপাত হয়৷ অত্যন্ত প্রাচীন সংঘটন বলে এতে কিছু বিকৃতি আসা মোটেই অস্বাভাবিক নয়৷

ব্লক–ভিত্তিক পরিকল্পনা

প্রাউটের যে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা মেসিনারি, তা মুখ্যতঃ কাজ করবে কেন্দ্রীয় স্তরে, রাজ্য স্তরে, জেলা স্তরে ও ব্লক স্তরে (অবশ্য ওয়ার্লড গব্ণমেন্ট প্রতিষ্ঠার পরে গ্লোব্যাল স্তরেও এই পরিকল্পনা মেসিনারী কাজ করবে)৷ ব্লক স্তরে যে পরিকল্পনা মেসিনারি কাজ করবে, প্রাউটের অর্থনীতিতে তাই হবে সর্বনিম্ন পরিকল্পনা সংস্থা৷ অর্থনৈতিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের জন্যে পরিকল্পনাকে নীচের থেকে ওপরের দিকে নিয়ে যেতে হবে৷ সেটাই হচ্ছে নীতি৷২ অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে হতে হবে ব্লক ভিত্তিক৷৭

সমাজের কল্যাণে সকল শ্রেণীর মানুষের উপযোগ গ্রহণ

সমাজের উন্নতি বা প্রগতি ব্যষ্টি–বিশেষের একক প্রচেষ্টায় হয় না, বা হতে পারে না৷ কেউ দেয় মস্তিষ্ক, কেউ দেয় হাত, কেউ পা৷ তাই সুবিচার করতে গেলে পা–কে হীন আর মাথাই সর্বস্ব অথবা মাথাটার কোন দাম নেই–বুদ্ধিজীবী মাত্রেই শোষক, আর যারা গায়ে গতরে খেটে চলেছে তারাই সবকিছু–এই দুই প্রকার চিন্তাধারাই সমান বিপজ্জনক৷ আসল কথাটা হচ্ছে কে নিজের সামর্থ্য কতখানি কাজে লাগিয়েছে সেইটাই বিচার করে’ দেখা৷ সমুদ্র বাঁধতে গিয়ে হনুমানের পর্বত বয়ে আনা, আর কাঠবেড়ালীর নুড়ি বয়ে আনা তত্ত্বগত বিচারে তুল্যমূল্য৷ কারও আন্তরিকতাতেই আমরা সন্দেহ রাখতে পারি না, অবজ্ঞাও করতে পারি না৷ নিজের সম্পদ যে যথাযথভাবে খাটায়নি সে যদি, যে নিজের সম্প

পূর্বার্দ্র তত্ত্ব

পশ্চিমবঙ্গ, ৰাঙলাদেশ, ত্রিপুরা ও অসম সমন্বিত ভারতের পূর্বাঞ্চলের এই বিশাল ভূভাগটি জলবায়ুর দিক থেকেও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ৷ সমগ্র অঞ্চলের জলবায়ুই উষ্ণ ও আর্দ্র৷ সমুদ্র কাছাকাছি বলে শীত–গ্রীষ্মও ততটা প্রখর নয়৷ তথাপি এর পশ্চিম অংশের সঙ্গে পূর্বাংশের জলবায়ু–গত কিছুটা পার্থক্য আছে৷ পশ্চিমাংশের সমভূমিতে গ্রীষ্মে ১২০ ০ফারেনহাইট পর্যন্ত উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় আবার শীতকালে উষ্ণতা ৫৫০ফারেনহাইটে নেমে আসে৷ কিন্তু পূর্বাংশে অর্থাৎ ত্রিপুরা–সমে জলবায়ু অপেক্ষাকৃত সিক্ত ও আর্দ্র৷ পশ্চিমের রাঢ় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেখানে গড়ে ৫০ –৫৫  সেখানে পূর্বাঞ্চলের অসম–মেঘালয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের গড় পরিমাণ ৫০৮ ৷ উত্তরে দার্জিলিং

বাংলা ভাষা ও তার উপভাষা

বাঙলা ভাষায় মুখ্যতঃ বারটি উপভাষা স্তুন্ত্রপ্তন্দ্বন্তুব্ধ রয়েছে৷ সেই উপভাষা ও তাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলি নিম্নরূপ–

(১) মধ্যরাঢ়ীয় বাংলা ঃ

(ক) নলহাটি, মুরারই বাদে বীরভূম জেলা

(খ) কান্দি মহকুমা

(গ) সাঁওতাল পরগণা জেলার দুমকা, জামতুড়া ও দেওঘর মহকুমা

(ঘ) বর্দ্ধমান জেলার দুর্গাপুর ও আসানসোল মহকুমা

(ঙ) ধানবাদ জেলা (পশ্চিমে পরেশনাথ পাহাড় পর্যন্ত)

(চ) পুরুলিয়া জেলা

(ছ) গিরিডি জেলার অংশবিশেষ

(জ) রাঁচী জেলার পূর্বাংশ–সিল্লি, সোণাহাতু, বুন্দু ও তমাড়

(ঝ) সিংভূম জেলার উত্তর–পূর্বাংশ

উন্নয়ন পরিকল্পনা

প্রাচীন পৃথিবীতে  রাষ্ট্রিক ও বৈবসায়িক লেনদেনে প্রচলিত ছিল স্বর্ণমান৷ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই বিত্তমান (bullion) ছিল স্বর্ণের৷ তবে কোন কোন দেশে রৌপ্যও ছিল৷ যে সকল দেশে স্বর্ণমান ছিল তারা কেউ কেউ রৌপ্য বিত্তমানকে স্বীকৃতি দিত, কেউ বা দিত না৷ স্বর্ণমানের দেশ রৌপ্য–মানকে স্বীকৃতি না দিলে বিত্তমানগত তারতম্যের দরুণ মুদ্রাগত লেনদেন সম্ভব ছিল না৷ তাই সেই সকল দেশের মধ্যে বিনিময় বাণিজ্য (barter trade) চলত৷

‘‘কুরঙ্গ বদলে লবঙ্গ নিব, কুমকুম বদলে চুয়া,

গাছফল বদলে জাইফল পাব, বহেড়ার বদলে গুবা৷’’

সদ্বিপ্র বোর্ড

আগে আমি বহুবার বলেছি যে যাঁরা আধ্যাত্মিক নীতিবাদ তথা ‘‘যম–নিয়ম’’ পালন করেন আর যাঁরা পরম চৈতন্য সত্তার প্রতি অনুরক্ত তাঁরাই হলেন সদ্বিপ্র৷ মানুষ সদ্বিপ্রকে চিনে নেবে তাঁর আদর্শ আচরণ, নিঃস্বার্থ সেবা, কর্ত্তব্যপরায়ণতা আর নৈতিক দৃঢ়তার মধ্যে দিয়ে৷ একমাত্র সদ্বিপ্ররাই নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করতে পারে আর সকলকে সর্বাত্মক প্রগতির পথে নিয়ে চলতে পারে৷ এই সদ্বিপ্ররা–যারা সঠিক জীবনাদর্শকে অনুসরণ করে আর যথাযথ সাধনা পদ্ধতির অনুশীলন করে–তারাই ভবিষ্যতে মানবসমাজের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত থাকবে৷

সামাজিক সুবিচার ঃ নারী

অধিকাংশ জীবের মত মানুষের সমাজেও নারীরা শারীরিক বিচারে পুরুষের চাইতে দুর্বল৷ স্নায়ুর দুর্বলতার জন্যে মনও তাদের কিছুটা দুর্বল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাজের কাছে তাদের মূল্য পুরুষের চাইতে এক পাইও কম নয়৷ স্বার্থপর পুরুষ কিন্তু এই মূল্যবোধের অপেক্ষা না রেখে নারীর দুর্বলতার সুযোগটুকুই ষোল আনা নিয়েছে ও নিচ্ছে৷ মুখে মাতৃজাতি বলে’ ঘোষণা করলেও আসলে তাদের অবস্থাটা করে’ রেখেছে ঠিক গৃহপালিত গোরু–ভেড়ার মত৷ একথা খুবই সত্যি যে কতকগুলি বিশেষ ক্ষেত্রে যোগ্যতার অভাবের ফলেই নারীরা ধীরে ধীরে তার অধিকার বা স্বাধীনতা খুইয়ে বসেছে, আর এই জন্যেই যাঁরা বিশেষ বিশেষ কতকগুলি যোগ্যতাকেই অধিকার প্রাপ্তির একমাত্র চাবিকাঠি হিস

পরিকল্পনার মৌল নীতি

যাঁরা বিভিন্ন স্তরে যোজনা পর্ষদের সঙ্গে সংযুক্ত সেই ধরণের বড় বড় অর্থনীতিবিদদের কোন পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে যে কয়েকটি বিষয়ের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত সেগুলি হ’ল–

* উৎপাদনের ব্যয়

* উৎপাদন–ক্ষমতা

* ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা

* সামূহিক প্রয়োজনীয়তা৷

এবার উপরি–উক্ত বিষয়গুলির প্রত্যেকটি নিয়ে আলোচনা করা যাক৷

উৎপাদন–ব্যয়

স্থানীয় জনসাধারণের সার্বিক কর্মসংস্থান 

প্রথমেই কোন এলাকায় স্থানীয় জনসাধারণের শতকরা একশ’ ভাগের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকা উচিত৷ সমস্ত মানুষের ন্যূনতম চাহিদা, অর্থাৎ অন্ততপক্ষে উপযুক্ত খাদ্য, বস্ত্র, আবাস, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত হওয়া উচিত৷ জনগণের ১০০ শতাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার মাধ্যমেই তাদের এই মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে–দান–খয়রাতির মাধ্যমে নয়৷ আজকের দুনিয়ায় বেকারত্ব এক জটিল সমস্যা আর স্থানীয় মানুষের ১০০ শতাংশের কর্মসংস্থানের নীতিই এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ৷ স্থানীয় জনসাধারণের শতকরা একশ’ ভাগের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রাউট স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় বিশ্বাসী৷ স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা

উন্নয়ন পরিকল্পনা

প্রাচীন পৃথিবীতে  রাষ্ট্রিক ও বৈবসায়িক লেনদেনে প্রচলিত ছিল স্বর্ণমান৷ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই বিত্তমান (bullion) ছিল স্বর্ণের৷ তবে কোন কোন দেশে রৌপ্যও ছিল৷ যে সকল দেশে স্বর্ণমান ছিল তারা কেউ কেউ রৌপ্য বিত্তমানকে স্বীকৃতি দিত, কেউ বা দিত না৷ স্বর্ণমানের দেশ রৌপ্য–মানকে স্বীকৃতি না দিলে বিত্তমানগত তারতম্যের দরুণ মুদ্রাগত লেনদেন সম্ভব ছিল না৷ তাই সেই সকল দেশের মধ্যে বিনিময় বাণিজ্য (ত্ব্ত্রব্জব্ধন্দ্বব্জ ব্ধব্জ্ত্রস্তুন্দ্ব) চলত৷

‘‘কুরঙ্গ বদলে লবঙ্গ নিব, কুমকুম বদলে চুয়া,

গাছফল বদলে জাইফল পাব, বহেড়ার বদলে গুবা৷’’

বিশ্বায়নের লক্ষ্যে আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধি

বর্তমানে ছোট ছোট রাষ্ট্র অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে সংগ্রাম করে’ চলেছে৷ মানুষ ছোট ছোট রাষ্ট্র অপেক্ষা বড় বড় সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে’ তুলে সকলের কল্যাণ নিশ্চিত করতে আগ্রহী৷ সংকীর্ণ সেণ্টিমেণ্ট ধীরে ধীরে সরে’ যাচ্ছে৷ মানুষের মনে বিশ্বৈকতাবাদী ভাবধারার উদয় হচ্ছে৷ যে সমস্ত অন্ধ বিশ্বাস ও ভাবজড়তা এতদিন সমাজের অনেকের শ্বাসরুদ্ধ করে’ রেখেছিল আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার বিকাশ তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে৷ যুক্তি–বিচার ও ‘সর্বজনহিতায়’ ভাবনাকে মানবতা এখন গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে৷ তাই প্রাউট বর্তমান পৃথিবীর সামাজিক–অর্থনৈতিক প্রবণতা অনুসারে সর্বত্র স্বয়ং–সম্পূর্ণ অঞ্চল ব্ভুন্ব্ধগ্গ গড়ে’ তোলার নীতিতে বিশ্বা

রাজনীতি–সচেতন মধ্যবিত্ত, ছাত্র–যুব ও সাধারণ মানুষই বিপ্লব আনবে

আজ জীবনের সকল ক্ষেত্রেই নীতিহীনতার এক কালো ছায়া দ্রুত ঘনিয়ে আসছে ও তা মানুষের প্রগতির পথে দারুণ অন্তরায় সৃষ্টি করে চলেছে৷ নীতিহীনতার এই আবর্জনা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে চাই প্রচণ্ড শক্তিশালী নৈতিক বল৷ এই দুর্দান্ত নৈতিক বল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোন সরকারের কাছ থেকে আশা করা যায় না৷ এটা আমরা আশা করতে পারি অরাজনৈতিক পক্ষ থেকে৷ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোন দল বা নেতাদের খামখেয়ালী কাজকর্মকে বাধা দেওয়ার মতো নৈতিক বলের যদি সমাজে অভাব দেখা দেয়, তাহলে যে কোন সরকার–তা সে ফ্যাসীবাদী, সাম্রাজ্যবাদী, সাধারণতন্ত্রী, একনায়কতন্ত্রী, আমলাতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক, যাই হোক না কেন–সে সরকার অত্যাচারী হতে বাধ্য৷ সরকারের

ধন–সঞ্চয় সম্পর্কে প্রাউটের নীতি

প্রাউটের প্রথম সিদ্ধান্ত ঃ–

কোন ব্যষ্টিই সামবায়িক সংস্থার ন্তুপ্সপ্তপ্তন্দ্বন্তুব্ ত্ব্প্সস্তুম্ভগ্গ সুস্পষ্ট অনুমোদন ছাড়া ভৌতিক সম্পদ সঞ্চয় করতে পারবে না৷১১

আমাদের চাহিদা তিন ধরনের–

            ণ্ড্র ভৌতিক হ্মড়ম্ভব্দন্ন্তুত্রপ্ত্

            ণ্ড্র মানসিক হ্মব্দম্ভন্তুড়ন্ন্তুগ্গ্

            ণ্ড্র আধ্যাত্মিক ব্দহ্মন্ব্জন্ব্ধব্ভ্ত্রপ্

বিজ্ঞান হোক সেবা ও কল্যাণের জন্যে

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই অর্থাৎ আনুমানিক দশ লক্ষ বছর আগে– পৃথিবীতে মানবজাতি আসার ঊষালগ্ণ থেকেই–বিজ্ঞানের সঙ্গে মানুষের জীবন অচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত৷ যতদিন পর্যন্ত একজন মানুষও থাকবে ততদিন বিজ্ঞানের যুগ থাকবে৷১৬

জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সর্বাত্মক জয়লাভের ইচ্ছা মানুষের মধ্যে আদিম ও অনন্ত প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয়–জীবনের সকল ক্ষেত্রে ছোট হয়ে বাঁচাটা মানুষের পক্ষে অভাবনীয়৷ অনন্তকাল ধরে’ প্রকৃতির আজ্ঞাবহ ভৃত্য হিসেবে বাঁধাধরা পথে চলার ধারণা কোনদিনই তার মনঃপুত নয়৷ যেহেতু তাকে টিকে থাকতে হয় আপাতঃ প্রতিকূল স্থূল জগতে, তাই তমোগুণী প্রকৃতিকে জয় করতে গিয়েই উদ্ভব হয়েছেScience বা ভৌতিক বিজ্ঞানের৷

সভ্যতা, বিজ্ঞ ান ও আধ্যাত্মিক প্রগতি

আজকের আলোচনার বিষয় হ’ল, সভ্যতা, বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক প্রগতি৷ মানুষের বিভিন্ন ভাবের অভিব্যক্তির সামূহিক নাম ‘কালচার’ বা ‘সংস্কৃতিক’৷ শুরুতেই আমি তোমাদের লে রাখছি, গোটা মানুষ জাতির সংস্কৃতিক একটাই৷

সামাজিক–অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ

সভ্যতার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনে জেগেছিল শিল্প সৃষ্টির এষণা ও প্রেষণা৷ এষণাই প্রেষণাকে ডেকে আনে৷ সভ্যতার প্রথম ধাপে শিল্পমাত্রই ছিল কুটির শিল্প৷ নারী–পুরুষ–বালক–ব্ নির্বিশেষে সবাই শিল্প রচনায় হাত লাগাত৷ পরে দেখা গেল কিছু  শিল্প গ্রামে গ্রামে করা যায় না.....করতে হয় কিছু সংখ্যক গ্রাম নিয়ে৷ তা না হলে তাদের একদিকে যেমন বাজারের ঘাটতি পড়ে, অন্যদিকে তেমনি শিল্পীর সংখ্যাতেও অভাব দেখা দেয়৷ তখন মানুষ প্রথম শিল্পায়োগ বা কারখানায়* যেতে শুরু করল৷ এখানে প্রসঙ্গতঃ একটা কথা বলে’ রাখি৷ শিল্প যত বেশী কুটীর–শিল্প হয়, শিল্প যত বিকেন্দ্রীকৃত হয়, মানুষের সুবিধা তত বেশী৷ এতে যে শুধু আর্থিক সামর্থ্যকে চারি

সামাজিক–অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ

সভ্যতার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনে জেগেছিল শিল্প সৃষ্টির এষণা ও প্রেষণা৷ এষণাই প্রেষণাকে ডেকে আনে৷ সভ্যতার প্রথম ধাপে শিল্পমাত্রই ছিল কুটির শিল্প৷ নারী–পুরুষ–বালক–ব্ নির্বিশেষে সবাই শিল্প রচনায় হাত লাগাত৷ পরে দেখা গেল কিছু  শিল্প গ্রামে গ্রামে করা যায় না.....করতে হয় কিছু সংখ্যক গ্রাম নিয়ে৷ তা না হলে তাদের একদিকে যেমন বাজারের ঘাটতি পড়ে, অন্যদিকে তেমনি শিল্পীর সংখ্যাতেও অভাব দেখা দেয়৷ তখন মানুষ প্রথম শিল্পায়োগ বা কারখানায়* যেতে শুরু করল৷ এখানে প্রসঙ্গতঃ একটা কথা বলে’ রাখি৷ শিল্প যত বেশী কুটীর–শিল্প হয়, শিল্প যত বিকেন্দ্রীকৃত হয়, মানুষের সুবিধা তত বেশী৷ এতে যে শুধু আর্থিক সামর্

শিল্পে সমবায়

বিশ্বের কোন জীবকেই আমরা উপেক্ষা করতে পারি না৷ বিশ্বের এক অংশের শিল্পোন্নয়ন অন্য অংশের দারিদ্র্য বা বেকারীকে ভালভাবে দূর করতে পারে না৷ তাই শিল্প–ব্যবস্থা যতদূর সম্ভব বিকেন্দ্রীকরণ নীতি অনুযায়ীই করা উচিত৷১১

শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ ঃ কোন একটি দেশ বা জেলা যদি অত্যধিক শিল্পোন্নত হয়, তাতে অপরাপর অংশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোন রকম সুবিধা হয় না৷ তাই শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ দরকার৷ কিন্তু মূল শিল্প থাকবে কেন্দ্রীকৃত৷ উদাহরণস্বরূপ, সুতাকল শিল্প হবে কেন্দ্রীকৃত–যাকে কেন্দ্র করে’ বিকেন্দ্রীকরণ পদ্ধতিতে গড়ে’ উঠবে বস্ত্রবয়ন শিল্প৷

আজকের বিভিন্ন সমস্যাসমূহ ও তাদের সমাধান

বস্তুতঃ উন্নত ধরণের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার অর্থই দ্রুত যান্ত্রিকীকরণ৷ প্রাচীনপন্থীরা এই যাত্রিকীকরণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মুখর৷ মোদ্দা কথাটা এই যে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামোয় যাত্রিকীকরণের অর্থ-ই জনসাধারণের অধিকতর দুঃখ---অধিকতর বেকারী৷ এজন্যেই প্রাচীনপন্থীরা এর বিরোধী৷ পুঁজিবাদকে না হটিয়ে জনকল্যাণ করতে গেলে যান্ত্রিকীকরণের বিরোধিতা করতেই হবে৷ কারণ যন্ত্রের উৎপাদিকা শক্তি দ্বিগুণ বেড়ে গেলে মনুষ্য শক্তির প্রয়োজন ঠিক অর্ধেকে নেবে যায়, আর তাই পুঁজিবাদীরা তখন াপকভাবে কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করে৷ অল্পসংখ্যক আশাবাদী লতে পারেন, ‘‘অবস্থার চাপে পড়ে মানুষ এই উদ্বৃত্ত শ্রমিক দলকে ভিন্ন কাজে নিয়ো

পুঁজিবাদ ও সাম্যবাদ (কম্যুনিজম) – এদের মূলগত ত্রুটি

সাম্যবাদ ও পুঁজিবাদ মূলতঃ জড়বাদী দর্শন৷ উভয়েই জাগতিক আসক্তির মানসিকতাকে বাড়িয়ে দেয়৷ যার ফলে মানুষ অন্ধভাবে অর্থ, নাম, যশ, ক্ষমতা, প্রতিষ্ঠা ও প্রভাব–প্রতিপত্তির জন্যে ক্ষ্যাপা কুকুরের মত ছুটে চলে৷

অর্থকে সচল রাখো

অর্থের মূল্য বেড়ে চলে তার চলমানতায় অর্থাৎ টাকা যত হাত ঘুরতে থাকে ততই তার মূল্য বাড়তে থাকে৷ টাকা যত সিন্ধুকে ন্ধ থাকবে তত মরচে পড়বে, ছাতা ধরবে, তার মূল্য তত কমে যেতে থাকবে৷ এইটাই অর্থনীতির মৌলিক কথা৷ এই জনকল্যাণের কথা ভেবে কৌশীদ ব্যবস্থা রাখতে হয় ও জনগণের সামগ্রিক আর্থিক উন্নতির কথা ভাবতে গেলে কৌশীদ ব্যবস্থা অপরিহার্য হয়ে যায়৷keep the wagons moving এর মতkeep coins (money) moving- কথাটা সমভাবে সত্য৷ তবে কৌশীদকে এ ব্যাপারে দু’টি জিনিসের দিকে নজর রাখতে হবে৷ একটা হচ্ছে কৌশীদ ব্যবস্থা এমন যেন না হয় যার রাক্ষুসী ক্ষুধায় সাধারণ মানুষের জীবন কুশীদ যোগাতেই বিপর্যস্ত হয়ে না পড়ে......পৃথিবীর অধিকাংশ দে

মহাসংকল্প দিবস

আমাদের আস্তিত্বিক সম্ভাবনার সবটাই অণুচৈতন্য থেকে উৎসারিত৷ ভৌতিক স্তরে তা’ জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে কাজ করে৷ মানসিক স্তরে তা’ চিত্তবৃত্তির মাধ্যমে কাজ করে আর আধ্যত্মিক স্তরে তা মানসাধ্যাত্মিক পদ্ধতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে এগিয়ে চলে৷ এ সমস্ত কিছু মিলেই তৈরী করছে জীবের আস্তিত্বিক প্রাণিনতা৷

এখন প্রশ্ণ হচ্ছে, এই যে আস্তিত্বিক প্রাণিনতা এর উৎসটা কী এটা কী ভাবপ্রবণতা(sentiment), যুক্তি(logic), লক্ষ্য(desideratum), অথবা কর্মৈষণা(actional faculty)?

যুক্তির রাজত্ব

এই সৌরজগৎ সম্পদ-প্রাচুর্যে ভরপুর৷ শুধুমাত্র মানুষই নয়, জীব জগতের খাওয়া-পরা তথা সর্বাত্মক বিকাশের জন্যে পর্যাপ্ত সম্পদ এখানে রয়েছে৷ কিন্তু আমাদের ত্রুটিপূর্ণ চিন্তা বা দুুদ্ধির জন্যেই আমরা বহু সমস্যার যথার্থ সমাধান খুঁজে পাইনি৷ আমাদের এ পৃথিবী যেন গুপ্তধন-ভাণ্ডার৷ বিশ্বের সমস্ত প্রাণীর রক্ষণাবেক্ষণ তথা তাদের পরিবর্ধনের জন্যে আমাদের এই লুকোনো সম্পদকে ভালভাবে কাজে লাগাতে হবে৷

রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শোষণ

রাজনৈতিক শোষণ ঃ আবার দেখো, যেটা মানস–রাজনৈতিক শোষণ হ্মব্দম্ভন্তুড়প্স–হ্ম্ অথবা রাজনৈতিক স্তরের শোষণ, সেটা কীরকম ভাবে হয়৷ একটা জনগোষ্ঠী আরেকটা জনগোষ্ঠীর ওপর সবলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে৷ তাদের পেছনে মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে যে, ওই শোষিত জনগোষ্ঠী বা শোষিত দেশ (এখানে দেশের চেয়েও জনগোষ্ঠী বড় কথা)–ওই ভূমিটাকে আমি কাঁচামালের যোগানদার হিসেবে নোব কাঁচামাল তৈরী হবে আমার এক্তিয়ারের মধ্যে, আর ওই শোষিত ভূমিটাকে আমার তৈরী মালের বাজার হিসাবে পাবো৷ যে সমস্ত জনগোষ্ঠী আর্থিক দিক থেকে অনুন্নত, তারা শক্তিশালী জনগোষ্ঠী অথবা শক্তিশালী দেশের কাছে মাথা বিকিয়ে দিতে বাধ্য হয়–হয় শক্তির অভাবের জন্যে, ভীতম্মন্যতা

আইন অমান্য আন্দোলন

তোমাদের কস্তুরী–মৃগনাভি প্রসঙ্গে বলেছিলুম যে, কস্তুরী–মৃগের দেহ–নিঃসৃত হর্মোন নাভিচক্রে জমা হয়ে যতই শক্ত হতে থাকে ততই তার সুগন্ধের মাত্রা বাড়তে থাকে৷ পরে শেষ পর্যন্ত সে যখন অতি মাত্রায় কঠোরতা প্রাপ্ত হয়, সুগন্ধ বাড়ে অত্যন্ত অধিক৷ এই অবস্থায় গন্ধমত্ত হরিণ গন্ধের খোঁজে ছুটতে ছুটতে শেষ পর্যন্ত ক্লান্ত, অবসন্ন হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়৷ যেমন বিশেষ বিশেষ অবস্থায় মদমত্ত মাতঙ্গ যদি উন্মাদ হয়ে যায় তখন সেই উন্মাদ অবস্থায় অল্প কিছুক্ষণ থাকার পরে মারা যায়৷ তবে সবাই উন্মাদ হয় না৷ যারা উন্মাদ হয় তারাও বেশী দিন উন্মাদ অবস্থায় বাঁচে না ৷ হাতীদের মধ্যে এই ধরনের মৃত্যু খুব বেশী ঘটে না......তবে ঘটে বৈকি৷ পাগলা

নব্যমানবতাবাদের ৩ সোপান

মানুষ চলতে শুরু করেছে যখন, নিজের কথাটা যতটা ভেবেছে, অন্যের কথাটা ততটা ভাবেনি৷ অন্য মানুষের কথাও ভাবেনি, আর মনুষ্যেতর জীব জন্তুর কথাও ভাবেনি,গাছপালার কথাও ভাবেনি৷ অথচ একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলে দেখা যাবে যে, নিজের কাছে নিজের অস্তিত্ব যতটা প্রিয়, প্রত্যেকের কাছে তাদের নিজের নিজের অস্তিত্ব ততটাই প্রিয়৷ আর সব জীবের এই নিজ অস্তিত্বপ্রিয়তাকে যথাযোগ্য মূল্য না দিলে সামগ্রিক ভাবে মানবিকতার বিকাশ অসম্ভব৷ মানুষ যদি ব্যষ্টি বা পরিবার,জাত বা গোষ্ঠীর কথা ভাবলো, সামগ্রিক ভাবে মানুষের কথা না ভাবলো–সেটা অবশ্যই ক্ষতিকর৷ কিন্তু মানুষ যদি সামগ্রিকভাবে জীবজগৎ, উদ্ভিদ জগতের কথা না ভাবলো সেটা কি ক্ষতিকর নয় মানবিকতা

সৈদ্ধান্তিক তত্ত্ব ও প্রয়োগ-ভৌমিক তত্ত্ব

যে সিদ্ধান্ত প্রয়োগভূমি থেকে আত্মপ্রকাশ করে তাকে স্বল্পায়াসেই বাস্তবে রূপায়িত করা যায়, সে সিদ্ধান্ত অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে তবে তা প্রচেষ্টা, সময় ও সংযোগের ওপর নির্ভরশীল কিন্তু যখন প্রয়োগের দিকটা সিদ্ধান্ত তৈরী করার পরে আসে, তখন তা বাস্তবে রূপায়িত হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে

সর্বাধিক শিল্প–বিকাশ

প্রাউট অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাসী৷ তাই একস্থানের উন্নতি না করে’ সর্বত্র যাতে সমানভাবে প্রগতি হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে স্থানীয় সম্পদ ও শক্তি সামর্থ্যকে প্রথমে নিয়োগ করার পরিকল্পনা নিতে হবে৷ স্থানীয় এলাকায় কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতা, ও ওই এলাকার মানুষদের ভোগ্যপণ্যের প্রয়োজন অনুসারে সর্বাধিক শিল্প বিকাশ প্রয়োজন৷ এই নীতি বহিরাগতদের হাত থেকে অর্থনৈতিক ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের হাতে তুলে দেবে৷ এইভাবে ওই সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রভূত বিকাশ সম্ভব হবে৷ প্রাউটের অর্থনীতি অনুসারে কৃষির মত অধিকাংশ শিল্পই উৎপাদক–সমবায় ও উপভোক্তা–সমবায়ের দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত

বৃহত্তর বাঙলা

প্রায় ৫০০০ বছর আগে অষ্ট্রিক, মঙ্গোলিয়ন আর নিগ্রো রক্তের সংমিশ্রণ–জাত বাঙালী জনসমুদায় সৃষ্টি হয়েছিল৷ সেই সময় বাঙলার ভাষা ছিল সংস্কৃত, তাই বাংলাভাষারও পথনির্দেশক ভাষা হচ্ছে সংস্কৃত৷ প্রায় ১২০০ বছর আগে বাংলাভাষার এক রূপান্তরণ হয়েছিল৷ সেই সময় বাঙলা বলতে বোঝাত বর্তমানের পশ্চিমবঙ্গ, নেপালের ঝাপা জেলা, বিহারের পূর্বাংশ, সম্পূর্ণ বাঙলাদেশ আর বর্মা, মেঘালয়ের সমতল অংশ, প্রাগজ্যোতিষপুরের কিছু অংশ আর অসমের বরপেটা, কামরূপ ও নগাঁও৷ বৃহত্তর বাঙলার এই ছিল এলাকা৷ আজ বাঙালী বলতে বোঝায় দুই প্রকারের অভিব্যক্তি– ভারতীয় বাঙালী আর বাঙলাদেশী বাঙালী ৷ এই দু’য়ের মধ্যে একটা সংহতিকরণ বা মিশ্রণ অবশ্যই হওয়া উচিত৷

অর্থনৈতিক মন্দা

তোমরা জান অর্থনৈতিক জগতে মোদ্দা কথা হচ্ছে দু’টো । একটা হচ্ছে মুদ্রাকে বহতা রাখতে হবে, টাকাকে যতটুকু সময় অচল অবস্থায় রাখছ অর্থাৎ তার ক্রয়ক্ষমতাকে যতটুকু সময়ের জন্যে কাজে লাগাচ্ছ না, বুঝতে হবে ততক্ষণ তুমি আর্থিক জগতের ক্ষতি করে’ চলেছ । দ্বিতীয় কথা হচ্ছে টাকা প্রত্যক্ষ্যভাবে ও টাকার সুদ অপ্রত্যক্ষভাবে ধনকেন্দ্রিক  বৈষম্য ডেকে আনতে পারে যদি তা সন্তুলিত ভারসাম্যের একক হবার যোগ্যতা হারায় । আর্থিক জগতের এই মূল দুটি কথা আংশিকভাবে বিস্মৃত হলে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা (Economic Depression) দেখা দেবে ।

মানুষের সমাজ ও নীতিবাদ

 নীতি হচ্ছে একটা living force যার সাধনা মানসসত্তাকে অধিকতর মননশীলতার মাধ্যমে চরম সূক্ষ্মত্বে — পরমাপ্রজ্ঞায় সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে। সেখান থেকে মানুষকে আর কোথাও নিয়ে যাবার প্রশ্ন থাকেনা—সেখান পর্যন্ত নিয়ে যাবার  প্রেরণা দিতে পারলে তবেই ‘নীতি’ নাম সার্থক হয়ে ওঠে ।

জাতি, ভাষা, ধর্মমত ও সংস্কৃতিতে বিশ্বজনীনতা

আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হ’ল ‘‘জাতি(race)ভাষা প্রভৃতিতে বিশ্বজনীনতা’’ যদিও মানুষের ভাষা, বর্ণ ইত্যাদিতে কিছু কিছু আপাত বৈষম্য রয়েছে, তথাপি মানুষের এই সকল অপরিহার্য বিষয়গুলি কিন্তু এসেছে একই উৎস থেকে, এইসব এসেছে সেই একক সত্তা পরমপুরুরুষ থেকে । ভাষাগত বৈষম্য,  বর্ণগত বৈসম্, জাতিগত বৈষম্য আছে ঠিকই, কিন্তু এই সবই বাহ্য ও আপাতদৃষ্ট । মুখের ভাষা নয়, আসলে হৃদয়ের ভাষা, সেন্টিমেন্টের ভাষাই শুণতে হবে ।

সামাজিক-অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ

সভ্যতার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনে জেগেছিল শিল্প সৃষ্টির এষণা ও প্রেষণা। এষণাই প্রেষণাকে ডেকে আনে। সভ্যতার প্রথম ধাপে শিল্পমাত্রেই ছিল কুটির শিল্প। নারী-পুরুষ-বালক-বালিকা নির্বিশেষে সবাই শিল্প রচনায় হাত লাগাত। পরে দেখা গেল কিছু শিল্প গ্রামে গ্রামে করা যায় না...

অর্থকে সচল রাখো

অর্থের মূল্য বেড়ে চলে তার চলমানতায় অর্থাৎ টাকা যত হাত ঘুরতে থাকে ততই তার মূল্য বাড়তে থাকে। টাকা যত সিন্ধুকে বন্ধ থাকবে তত মরচে পড়বে, ছাতা ধরবে, তার মূল্য কমে যেতে থাকবে। এইটাই অর্থনীতির মৌলিক কথা।এই জনকল্যাণের কথা ভেবে কৌশীদব্যবস্থা রাখতে হয় ও জনগণের সামগ্রিক আর্থিক উন্নতির কথা ভাবতে গেলে কৌশীদব্যবস্থা অপরিহার্য হয়ে যায়। Keep the wagons moving এর মত ক keep coins (money) moving--কথাটা সমভাবে সত্য। তবে কৌশীদকে এ ব্যাপারে দুটি জিনিসের দিকে নজর রাখতে হবে। একটা হচ্ছে কৌশীদব্যবস্থা এমন যেন না হয় যার রাক্ষসী ক্ষুধায় সাধারণ মানুষের জীবন কুশীদ যোগাতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে......

পরিকল্পনার মৌল নীতি

যাঁরা বিভিন্ন স্তরে যোজনা পর্ষদের সঙ্গে সংযুক্ত সেই ধরণের বড় বড় অর্থনীতি-বিদদের কোন পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে যে কয়েকটি বিষয়ের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত সেগুলি হল–

* উৎপাদনের ব্যয়       * উৎপাদন–ক্ষমতা

* ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা     * সামূহিক প্রয়োজনীয়তা৷

এবার উপরি–উক্ত বিষয়গুলির প্রত্যেকটি নিয়ে আলোচনা করা যাক৷

উৎপাদন–ব্যয়

অপুষ্টির বিরুদ্ধে যুদ্ধ

তোমরা (প্রাউটিষ্টরা) যেহেতু সমগ্র বিশ্বের দায়িত্ব নিয়েছ তাই অপুষ্টি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করাও তোমার পবিত্র কর্ত্তব্যের মধ্যে পড়ে৷ অপুষ্টির মূল কারণ বিশ্বে আর্থিক ব্যবস্থায় ধনসম্পদের অসন্তুলন৷ প্রাউট এর চিরস্থায়ী সমাধান৷ তবে এজন্যে খাদ্যাভাব সমস্যার আশু সমাধান জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে৷ তুমি এজন্যে কী করছ?

তোমরা এ ব্যাপারে তোমার গুরুদায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারো না৷ সমগ্র বিশ্ব তোমাদের দিকে কাতর নয়নে তাকিয়ে আছে৷ এটা আমাদের পবিত্র কর্তব্য৷ আমাদের এই দায়িত্ব পালন করতেই হবে৷

পূর্বার্দ্র তত্ত্ব

পশ্চিমবঙ্গ, বাঙলাদেশ, ত্রিপুরা ও অসম সমন্বিত ভারতের পূর্বাঞ্চলের এই বিশাল ভূভাগটি জলবায়ুর দিক থেকেও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ৷ সমগ্র অঞ্চলের জলবায়ুই উষ্ণ ও আর্দ্র৷ সমুদ্র কাছাকাছি বলে শীত–গ্রীষ্মও ততটা প্রখর নয়৷ তথাপি এর পশ্চিম অংশের সঙ্গে পূর্বাংশের জলবায়ু–গত কিছুটা পার্থক্য আছে৷ পশ্চিমাংশের সমভূমিতে গ্রীষ্মে ১২০0 ফারেনহাইট পর্যন্ত উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় আবার শীতকালে উষ্ণতা ৫৫0  ফারেনহাইটে নেমে আসে৷ কিন্তু পূর্বাংশে অর্থাৎ ত্রিপুরা–সমে জলবায়ু অপেক্ষাকৃত সিক্ত ও আর্দ্র৷ পশ্চিমের রাঢ় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেখানে গড়ে ৫০ –৫৫ ইঞ্চি  সেখানে পূর্বাঞ্চলের অসম–মেঘালয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের গড় পরিমাণ ৫০৮ ইঞ্চি ৷ উত

সাম্প্রদায়িকতার ভয়াবহতা

মানুষ যে জাতপাত ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে যায় সেটা কি স্বাভাবিক, না কৃত্রিম? স্বাভাবিক বিভাজন কোষ বিভাজনের মত – একটা  কোষ যেমন দু’টো কোষে বিভাজিত হয়৷ কৃত্রিম বিভাজন এরকম নয়৷ কাজেই, মানুষের জাতি ও সম্প্রদায়গত ভেদকে কী বলা যাবে–স্বাভাবিক বিভাজন, না কৃত্রিম বিভক্তিকরণ? বৈরী শক্তিগুলির মধ্যে কিছু দল আছে যেগুলো বিচ্ছিন্নতার মতাদর্শে চালিত হয় ও কিছু লোকও আছে যারা এই সব বিভেদকামী দলগুলির দ্বারা চালিত হয়৷ এই সমস্যার সমাধান কীভাবে সম্ভব হবে? কীভাবে আমরা এই সব যুযুধান দলগুলিকে একটা অচল সেকেলে ভাবাদর্শকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা থেকে নিবৃত্ত করতে পারব যা দেশকে খণ্ড বিখণ্ড করে দিতে পারে? কী করা উচিত?

জাতি, ভাষা, ধর্মমত ও সংস্কৃতিতে বিশ্বজনীনতা

আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হ’ল ‘‘জাতি race), ভাষা প্রভৃতিতে বিশ্বজনীনতা’’৷ যদিও মানুষের ভাষা, বর্ণ ইত্যাদিতে কিছু কিছু আপাত বৈষম্য রয়েছে, তথাপি মানুষের এই সকল অপরিহার্য বিষয়গুলি কিন্তু এসেছে একই উৎস থেকে, এইসব এসেছে সেই একক সত্তা পরমপুরুষ থেকে৷ ভাষাগত বৈষম্য, বর্ণগত বৈষম্য, জাতিগত বৈষম্য আছে ঠিকই, কিন্তু এই সবই বাহ্য ও আপাতদৃষ্ট৷ মুখের ভাষা নয়, আসলে হৃদয়ের ভাষা, সেণ্টিমেণ্টের ভাষাই শুণতে হবে৷

শোষণমুক্ত বিশ্বায়ন

দুটি অঞ্চল উন্নয়নের প্রায় সমস্তরে এসে পৌঁছলে তাদের পক্ষে এক–সঙ্গে মিলিত হয়ে বৃহত্তর সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে’ তোলা সম্ভব৷

দুই বা ততোধিক সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চল একসঙ্গে মিলিত হতে পারে যদি কয়েকটি শর্ত পূরণ হয়৷ শর্তগুলি হ’ল–

প্রদমন, অবদমন ও দমন

কম্যুনিষ্ট রাষ্ট্রগুলিতে তোমরা প্রদমন, অবদমন ও দমনের একটা ত্রিভুজ পুরোপুরি কার্যকরী দেখতে পাবে৷ এই তিনটি ত্রুটির ওপর কম্যুনিজম আধারিত৷ কিন্তু এই তিনটি ত্রুটির মধ্যে সব চাইতে বেশি ঘটেছে দমন, তারপর ঘটেছে অবদমন ও সব চাইতে কম ঘটেছে প্রদমন৷ এই প্রদমন, অবদমন ও দমনের ফলে সৃষ্ট শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা থেকে জনসাধারণকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে৷ এই তিনটি মানসিক পীড়ন মানুষের মনকে ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে দিয়েছে৷

সুভাষচন্দ্রের ‘কৌলালিক’ ভূমিকা

পরমশ্রদ্ধেয় শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর ‘শব্দ চয়নিকা’ (জ্ঞানকোষ) গ্রন্থে ‘কুলাল’ শব্দ ও তার বিভিন্ন অর্থ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুর ‘কৌলালিক’ ভূমিকা সম্পর্কে যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তা তুলে দেওয়া হ’ল৷১১৯

পরিকল্পনার মৌল নীতি

যাঁরা বিভিন্ন স্তরে যোজনা পর্ষদের সঙ্গে সংযুক্ত সেই ধরণের বড় বড় অর্থনীতিবিদদের কোন পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে যে কয়েকটি বিষয়ের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত সেগুলি হ’ল–

  • উৎপাদনের ব্যয় প্ত উৎপাদন–ক্ষমতা
  • ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা প্ত সামূহিক প্রয়োজনীয়তা৷

এবার উপরি–উক্ত বিষয়গুলির প্রত্যেকটি নিয়ে আলোচনা করা যাক৷

উৎপাদন–ব্যয়

পরিকল্পনার মৌল নীতি

যাঁরা বিভিন্ন স্তরে যোজনা পর্ষদের সঙ্গে সংযুক্ত সেই ধরণের বড় বড় অর্থনীতিবিদদের কোন পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে যে কয়েকটি বিষয়ের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত সেগুলি হ’ল–

* উৎপাদনের ব্যয়       * উৎপাদন–ক্ষমতা

* ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা     * সামূহিক প্রয়োজনীয়তা৷

এবার উপরি–উক্ত বিষয়গুলির প্রত্যেকটি নিয়ে আলোচনা করা যাক৷

উৎপাদন–ব্যয়

বৃহত্তর বাঙলা

প্রায় ৫০০০ বছর আগে অষ্ট্রিক, মঙ্গোলিয়ন আর নিগ্রো রক্তের সংমিশ্রণ–জাত বাঙালী জনসমুদায় সৃষ্টি হয়েছিল৷ সেই সময় বাঙলার ভাষা ছিল সংস্কৃত, তাই বাংলাভাষারও পথনির্দেশক ভাষা হচ্ছে সংস্কৃত৷ প্রায় ১২০০ বছর আগে বাংলাভাষার এক রূপান্তরণ হয়েছিল৷ সেই সময় বাঙলা বলতে বোঝাত বর্তমানের পশ্চিমবঙ্গ, নেপালের ঝাঁপা জেলা, বিহারের পূর্বাংশ, সম্পূর্ণ বাঙলাদেশ আর বর্মা, মেঘালয়ের সমতল অংশ, প্রাগজ্যোতিষপুরের কিছু অংশ আর অসমের বরপেটা, কামরূপ ও নগাঁও৷ বৃহত্তর বাঙলার এই ছিল এলাকা৷ আজ বাঙালী বলতে বোঝায় দুই প্রকারের অভিব্যক্তি– ভারতীয় বাঙালী আর বাঙলাদেশী বাঙালী ৷ এই দু’য়ের মধ্যে একটা সংহতিকরণ বা মিশ্রণ অবশ্যই হওয়া উচিত৷

উন্নয়ন পরিকল্পনা

প্রাচীন পৃথিবীতে  রাষ্ট্রিক ও বৈবসায়িক লেনদেনে প্রচলিত ছিল স্বর্ণমান৷ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই বিত্তমান (bullion) ছিল স্বর্ণের৷ তবে কোন কোন দেশে রৌপ্যও ছিল৷ যে সকল দেশে স্বর্ণমান ছিল তারা কেউ কেউ রৌপ্য বিত্তমানকে স্বীকৃতি দিত, কেউ বা দিত না৷ স্বর্ণমানের দেশ রৌপ্য–মানকে স্বীকৃতি না দিলে বিত্তমানগত তারতম্যের দরুণ মুদ্রাগত লেনদেন সম্ভব ছিল না৷ তাই সেই সকল দেশের মধ্যে বিনিময় বাণিজ্য (barter trade) চলত৷

‘‘কুরঙ্গ বদলে লবঙ্গ নিব, কুমকুম বদলে চুয়া,

গাছফল বদলে জাইফল পাব, বহেড়ার বদলে গুবা৷’’

শিক্ষা প্রসঙ্গে কিছু বক্তব্য

শিক্ষার পদ্ধতি

শিক্ষাদানের পদ্ধতি  কীরকম হওয়া উচিত তা চিরকালেরই এক জটিল প্রশ্ণ৷ মানুষের মনের ওপর পরিবেশের প্রভাব অপরিসীম৷ যে পরিবেশে একজন জন্মায়, বেড়ে ওঠে, তার প্রভাব জীবনের শেষক্ষণ পর্যন্ত সেই মানুষটির ওপর কার্যকরী থাকে৷ একজন যেভাবে শিক্ষা পেল সেই অনুযায়ী তার মানসিক সংরচনাও তৈরী হয়৷ আর মানুষের জীবনে শারীরিক সামর্থ্যের চেয়ে মানসিক ক্ষমতার প্রভাব অনেকগুণ বেশী শক্তিশালী ৷

শোষণের বহুবিধ রূপ

লোকে প্রায়ই বলে থাকে যে বিশেষ কোনো ব্যষ্টি অথবা বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা ভীষণভাবে শোষিত হচ্ছে৷ শোষণ বলতে তারা এটাই ক্ষোঝে যে এইসব লোকেরা অর্থনৈতিক  স্তরে শোষিত হচ্ছে৷ কিন্তু যদি আমরা এই বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করি তাহলে আমরা উপলব্ধি করব যে শোষণ শুধুমাত্র অর্থনৈতিক স্তরেই সংঘটিত হচ্ছে না, মানবাস্তিত্বের অন্যান্য স্তরেও বিভিন্ন রূপে বিচিত্র ভাবে তার অস্তিত্ব রয়েছে৷ যখন আধিভৌতিক স্তরে (physical stratum) শোষণ হয় তখন সেটা যে সব ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক হবে এমন নয় এটা প্রায়ই সামাজিক ও অনেক ক্ষেত্রে অপ্রত্যক্ষভাবে সামাজিক হয়ে থাকে৷ দৃষ্টান্ত–স্বরূপ বলা যায় কায়েমী স্বার্থবাহকেরা কোনো একটা পর্যায়ে জনমা

সমবায়ই একমাত্র সমাধান

সমবায় সম্পর্কে অনেকের মনে প্রশ্ণ জাগতে পারে৷ কারণ আজ বেশীর ভাগ দেশেই সমবায় অসফল হয়েছে৷ এই উদাহরণের ওপর ভিত্তি করে’ সমবায়কে দোষারোপ করা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হবে না৷ কারণ সমবায়ের সাফল্যের যে অপরিহার্য তত্ত্ব তা বেশীর ভাগ দেশ সৃষ্টি করতে পারেনি৷ সমবায়ের সাফল্য নির্ভর করে মূলতঃ তিনটি তত্ত্বের ওপর–নীতিবাদ, কড়া তত্ত্বাবধান (Supervision) ও জনগণের হদয় দিয়ে সমবায়কে গ্রহণ৷ এ তিন তত্ত্বের মধ্যে যেখানে যতটুকু রয়েছে সেখানে সমবায় ততটুকুই সাফল্য অর্জন করেছে৷ যেমন, ইজরায়েল চতুর্দিকে শত্রু বেষ্টিত হবার জন্যে ওখানকার জনগণের মধ্যে এক স্বয়ং–নির্ভরশীলতা চেতনা গড়ে’ উঠেছে–কারণ জনগণ মন–প্রাণ দিয়ে তাদের অর্থনীতিকে মজ

শোষণমুক্ত বিশ্বায়ন

দুটি অঞ্চল উন্নয়নের প্রায় সমস্তরে এসে পৌঁছলে তাদের পক্ষে এক–সঙ্গে মিলিত হয়ে বৃহত্তর সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে’ তোলা সম্ভব৷

দুই বা ততোধিক সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চল একসঙ্গে মিলিত হতে পারে যদি কয়েকটি শর্ত পূরণ হয়৷ শর্তগুলি হ’ল–

উন্নয়ন পরিকল্পনা

প্রাচীন পৃথিবীতে  রাষ্ট্রিক ও বৈবসায়িক লেনদেনে প্রচলিত ছিল স্বর্ণমান৷ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই বিত্তমান (bullion)  ছিল স্বর্ণের৷ তবে কোন কোন দেশে রৌপ্যও ছিল৷ যে সকল দেশে স্বর্ণমান ছিল তারা কেউ কেউ রৌপ্য বিত্তমানকে স্বীকৃতি দিত, কেউ বা দিত না৷ স্বর্ণমানের দেশ রৌপ্য–মানকে স্বীকৃতি না দিলে বিত্তমানগত তারতম্যের দরুণ মুদ্রাগত লেনদেন সম্ভব ছিল না৷ তাই সেই সকল দেশের মধ্যে বিনিময় বাণিজ্য (barter trade)চলত৷

‘‘কুরঙ্গ বদলে লবঙ্গ নিব, কুমকুম বদলে চুয়া,

গাছফল বদলে জাইফল পাব, বহেড়ার বদলে গুবা৷’’

বিজ্ঞান হোক সেবা ও কল্যাণের জন্যে

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই অর্থাৎ আনুমানিক দশ লক্ষ বছর আগে– পৃথিবীতে মানবজাতি আসার ঊষালগ্ণ থেকেই–বিজ্ঞানের সঙ্গে মানুষের জীবন অচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত৷ যতদিন পর্যন্ত একজন মানুষও থাকবে ততদিন বিজ্ঞানের যুগ থাকবে৷

জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সর্বাত্মক জয়লাভের ইচ্ছা মানুষের মধ্যে আদিম ও অনন্ত প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয়–জীবনের সকল ক্ষেত্রে ছোট হয়ে বাঁচাটা মানুষের পক্ষে অভাবনীয়৷ অনন্তকাল ধরে’ প্রকৃতির আজ্ঞাবহ ভৃত্য হিসেবে বাঁধাধরা পথে চলার ধারণা কোনদিনই তার মনঃপুত নয়৷ যেহেতু তাকে টিকে থাকতে হয় আপাতঃ প্রতিকূল স্থূল জগতে, তাই তমোগুণী প্রকৃতিকে জয় করতে গিয়েই উদ্ভব হয়েছেScience বা ভৌতিক বিজ্ঞানের৷

সংস্কৃতি ও সভ্যতা

সাধারণতঃ ‘সমাজ’ বলতে নারী ও পুরুষের সমাহারকে বোঝায়৷ কিন্তু শব্দটির মূলগত তাৎপর্য তা নয়৷ প্রকৃত অর্থে ‘সমাজ’ বলতে বোঝায়, যেখানে সকলে একই কর্মবন্ধনে, সম্মিলিতভাবে এগিয়ে চলেছে---‘সমনাম্ এজতে’৷ আমরা কখনো কখনো বাসে, ট্রামে, ট্রেনে বহু লোককেই তো একত্রে দেখে থাকি৷ কিন্তু তা সমাজ পদবাচ্য নয়৷ একটা সর্বজনগ্রাহ্য আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যখন অনেক মানুষ একই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায় ও তাকে পাওয়ার জন্যে সক্রিয় হয়ে ওঠে তখনই তা সমাজ পদবাচ্য৷ ইংরেজী‘society’ শব্দটি ‘সমাজ’ শব্দের খাঁটি প্রতিশব্দ নয়৷ সামাজিক অগ্রগতি এক ধরণের সামাজিক কর্মেরই ফলশ্রুতি যেখানে পারষ্পরিক ঐক্যবন্ধন আরও বেশী সুদৃঢ় হয়ে সম্মিলিতভা

বৃহত্তর বাঙলা

প্রায় ৫০০০ বছর আগে অষ্ট্রিক, মঙ্গোলিয়ন আর নিগ্রো রক্তের সংমিশ্রণ–জাত বাঙালী জনসমুদায় সৃষ্টি হয়েছিল৷ সেই সময় বাঙলার ভাষা ছিল সংস্কৃত, তাই বাংলাভাষারও পথনির্দেশক ভাষা হচ্ছে সংস্কৃত৷ প্রায় ১২০০ বছর আগে বাংলাভাষার এক রূপান্তরণ হয়েছিল৷ সেই সময় বাঙলা বলতে বোঝাত বর্তমানের পশ্চিমবঙ্গ, নেপালের ঝাঁপা জেলা, বিহারের পূর্বাংশ, সম্পূর্ণ বাঙলাদেশ আর বর্মা, মেঘালয়ের সমতল অংশ, প্রাগজ্যোতিষপুরের কিছু অংশ আর অসমের বরপেটা, কামরূপ ও নগাঁও৷ বৃহত্তর বাঙলার এই ছিল এলাকা৷ আজ বাঙালী বলতে ক্ষোঝায় দুই প্রকারের অভিব্যক্তি– ভারতীয় বাঙালী আর বাঙলাদেশী বাঙালী ৷ এই দু’য়ের মধ্যে একটা সংহতিকরণ বা মিশ্রণ অবশ্যই হওয়া উচিত৷

স্থানীয় জনসাধারণের সার্বিক কর্মসংস্থান 

প্রথমেই কোন এলাকায় স্থানীয় জনসাধারণের শতকরা একশ’ ভাগের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকা উচিত৷ সমস্ত মানুষের নূ্যনতম চাহিদা, অর্থাৎ অন্ততপক্ষে উপযুক্ত খাদ্য, বস্ত্র, আবাস, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত হওয়া উচিত৷ জনগণের ১০০ শতাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার মাধ্যমেই তাদের এই মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে–দান–খয়রাতির মাধ্যমে নয়৷ আজকের দুনিয়ায় বেকারত্ব এক জটিল সমস্যা আর স্থানীয় মানুষের ১০০ শতাংশের কর্মসংস্থানের নীতিই এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ৷ স্থানীয় জনসাধারণের শতকরা একশ’ ভাগের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রাউট স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় বিশ্বাসী৷ স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা

সামাজিক সুবিচার ঃ নারী

অধিকাংশ জীবের মত মানুষের সমাজেও নারীরা শারীরিক বিচারে পুরুষের চাইতে দুর্বল৷ স্নায়ুর দুর্বলতার জন্যে মনও তাদের কিছুটা দুর্বল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাজের কাছে তাদের মূল্য পুরুষের চাইতে এক পাইও কম নয়৷ স্বার্থপর পুরুষ কিন্তু এই মূল্যবোধের অপেক্ষা না রেখে নারীর দুর্বলতার সুযোগটুকুই ষোল আনা নিয়েছে ও নিচ্ছে৷ মুখে মাতৃজাতি বলে’ ঘোষণা করলেও আসলে তাদের অবস্থাটা করে’ রেখেছে ঠিক গৃহপালিত গোরু–ভেড়ার মত৷ একথা খুবই সত্যি যে কতকগুলি বিশেষ ক্ষেত্রে যোগ্যতার অভাবের ফলেই নারীরা ধীরে ধীরে তার অধিকার বা স্বাধীনতা খুইয়ে বসেছে, আর এই জন্যেই যাঁরা বিশেষ বিশেষ কতকগুলি যোগ্যতাকেই অধিকার প্রাপ্তির একমাত্র চাবিকাঠি হিস

বাঙলার কয়েকটি অঞ্চলের উন্নয়ন সম্পর্কে কিছু বক্তব্য

সমতট

প্রাচীন বাঙলা পাঁচটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল– রাঢ়, সমতট, বঙ্গ, বরেন্দ্র ও মিথিলা.  মিথিলা বর্তমানে বিহারের অঙ্গভূত।

বঙ্গোপসাগরের বিশাল উপকূল এলাকা যাতে কোনো পাহাড়–পর্বত নেই কিন্তু যা পদ্মা ও ভাগীরথী নদীর বালুযুক্ত দোয়াঁশ মাটি দিয়ে তৈরী, ও যার মধ্যে অজস্র জলাশয়, যা খাল–বিল আর শাখানদীতে সমৃদ্ধ, সংস্কৃতে সেই অঞ্চলকে বলে ‘সমতট’, কথ্য বাংলায় বলে ‘বাগড়ী’। এই অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদ আর সমৃদ্ধ কৃষিসম্পদে পূর্ণ। এইজন্যে সমতটকে বলা হত ‘‘সোণার বাঙলা’’, যে কারণে বিখ্যাত ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন– ‘‘সুজলাং সুফলাং মলয়জ শীতলাং মাতরম্’’।

প্রগতির আধার

এই পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব হয়েছে আজ থেকে প্রায় দশ লাখ বছর আগে৷ তখন থেকেই মানুষের মনে সুখপ্রাপ্তির এষণা ছিল, আজও আছে, সর্বদা থাকবে৷ এই সুখপ্রাপ্তির এষণার দ্বারা অর্থাৎ একটা মানসিক অভীপ্সার দ্বারা–যার পূর্ত্তির জন্যে মানুষ চেষ্টাশীল হয়–প্রেষিত হয়ে সুদূর অতীতে ধর্ম জীবনে পদার্পণ করেছিল৷ এই এষণা কেবল মানুষের মধ্যেই রয়েছে, জন্তু–জানোয়ারের মধ্যে নেই ৷  তবে হ্যাঁ, যে সব জন্তু–জানোয়ার মানুষের সংস্পর্শে বাস করে, মানুষের সঙ্গে যাদের একটা বোঝাপড়া হয়েছে তাদের মধ্যেও অল্প পরিমাণে এই এষণা রয়েছে৷ কিন্তু স্ফুটতরভাবে রয়েছে কেবল মানুষের মধ্যে৷ এই এষণা মানুষের মধ্যে রয়েছে বলেই তার নাম মানুষ৷ ‘মানুষ’ শব্দের

বৃহত্তর বাঙলা

প্রায় ৫০০০ বছর আগে অষ্ট্রিক, মঙ্গোলিয়ন আর নিগ্রো রক্তের সংমিশ্রণ–জাত বাঙালী জনসমুদায় সৃষ্টি হয়েছিল৷ সেই সময় বাঙলার ভাষা ছিল সংসৃক্ত, তাই বাংলাভাষারও পথনির্দেশক ভাষা হচ্ছে সংসৃক্ত৷ প্রায় ১২০০ বছর আগে বাংলাভাষার এক রূপান্তরণ হয়েছিল৷ সেই সময় বাঙলা বলতে বোঝাত বর্তমানের পশ্চিমবঙ্গ, নেপালের ঝাপা জেলা, বিহারের পূর্বাংশ, সম্পূর্ণ বাঙলাদেশ আর বর্মা, মেঘালয়ের সমতল অংশ, প্রাগজ্যোতিষপুরের কিছু অংশ আর অসমের বরপেটা, কামরূপ ও নগাঁও৷ বৃহত্তর বাঙলার এই ছিল এলাকা৷ আজ বাঙালী বলতে বোঝায় দুই প্রকারের অভিব্যক্তি– ভারতীয় বাঙালী আর বাঙলাদেশী বাঙালী ৷ এই দু’য়ের মধ্যে একটা সংহতিকরণ বা মিশ্রণ অবশ্যই হওয়া উচিত৷

সংবিধান সংশোধন

আজকের পৃথিবীতে সকল দেশের সংবিধানেরই কম–বেশী সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে৷ সংবিধান প্রসঙ্গে কতকগুলো বিশেষ বিশেষ সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে৷

রাজনীতি–সচেতন মধ্যবিত্ত, ছাত্র–যুব ও সাধারণ মানুষই বিপ্লব আনবে

আজ জীবনের সকল ক্ষেত্রেই নীতিহীনতার এক কালো ছায়া দ্রুত ঘনিয়ে আসছে ও তা মানুষের প্রগতির পথে দারুণ অন্তরায় সৃষ্টি করে চলেছে৷ নীতিহীনতার এই আবর্জনা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে চাই প্রচণ্ড শক্তিশালী নৈতিক বল৷ এই দুর্দান্ত নৈতিক বল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোন সরকারের কাছ থেকে আশা করা যায় না৷ এটা আমরা আশা করতে পারি অরাজনৈতিক পক্ষ থেকে৷ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোন দল বা নেতাদের খামখেয়ালী কাজকর্মকে বাধা দেওয়ার মতো নৈতিক বলের যদি সমাজে অভাব দেখা দেয়, তাহলে যে কোন সরকার–তা সে ফ্যাসীবাদী, সাম্রাজ্যবাদী, সাধারণতন্ত্রী, একনায়কতন্ত্রী, আমলাতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক, যাই হোক না কেন–সে সরকার অত্যাচারী হতে বাধ্য৷ সরকারের

দেশপ্রেমিকদের প্রতি (অংশবিশেষ)

রাজনীতি আমার ব্যবসাও নয়, পেশাও নয়৷ আমি ইতিহাসের এক সাধারণ ছাত্র মাত্র৷ ভারতবর্ষে যে ভয়াবহ চিত্র আমার চোখের সামনে ভেসে আসছে মুখ ফুটে তা’ প্রকাশ করা আমার কর্তব্য মনে করছি, তাতে ভবিষ্যতের ঐতিহাসিকরা আমাকে দোষ না দেন৷ যাঁরা দেশনেতা এ ব্যাপারে তাঁদের দায়িত্ব সর্বাধিক৷ তাঁরা দেশকে ডোবাতেও পারেন, বাঁচাতেও পারেন৷ মুখে যাই বলা হোক না কেন, আসলে সরকারী বা বেসরকারী, রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সকল সংস্থারই নীতি নির্ধারণ করে থাকেন মুষ্টিমেয় দু’চারজন৷ তাঁরাই সেই সংস্থার নেতা৷

জাতি, ভাষা, ধর্মমত ও সংস্কৃতিতে  বিশ্বজনীনতা

আজকের আলোচ্য বিষয়বস্তু হল ‘‘জাতি race), ভাষা, ধর্মমত ও সংস্কৃতিতে বিশ্বজনীনতা৷’’ যদিও মানুষের ভাষা,  বর্ণ  ইত্যাদির ক্ষেত্রে কিছু আপাতঃ বৈষম্য রয়েছে তথাপি মানুষের  এই সকল অপরিহার্য বিষয়গুলি  কিন্তু এসেছে একই  উৎস থেকে- সবই এসেছে সেই একক সত্যা পরমপুরুষ থেকে৷ ভাষাগত বৈষম্য  বর্ণগত বৈষম্য , জাতিগত বৈষম্য আছে ঠিকই কিন্তু এসবই বাহ্য আপাতঃদৃষ্ট৷ মুখের ভাষা নয়, আসলে হৃদয়ের ভাষা, সেন্টিমেন্টের ভাষায় শুণতে হবে৷

শোষণের বহুবিধ রূপ

লোকে প্রায়ই বলে থাকে যে বিশেষ কোনো ব্যষ্টি অথবা বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা ভীষণভাবে শোষিত হচ্ছে৷ শোষণ বলতে তারা এটাই বোঝে যে এইসব লোকেরা অর্থনৈতিক স্তরে শোষিত হচ্ছে৷ কিন্তু যদি আমরা এই বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করি তাহলে আমরা উপলব্ধি করব যে শোষণ শুধুমাত্র অর্থনৈতিক স্তরেই সংঘটিত হচ্ছে না, মানবাস্তিত্বের অন্যান্য স্তরেও বিভিন্ন রূপে বিচিত্র ভাবে তার অস্তিত্ব রয়েছে৷ যখন আধিভৌতিক স্তরে (physical stratum) শোষণ হয় তখন সেটা যে সব ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক হবে এমন নয় এটা প্রায়ই সামাজিক ও অনেক ক্ষেত্রে অপ্রত্যক্ষভাবে সামাজিক হয়ে থাকে৷ দৃষ্টান্ত–স্বরূপ বলা যায় কায়েমী স্বার্থবাহকেরা কোনো একটা পর্যায়ে জনমানসে

পশ্চাৎপদ শ্রেণীর উন্নয়ন

বিশ্বের বিভিন্ন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করা আমাদের আশু কর্ত্তব্য৷ যেহেতু বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলি পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন পূর্ত্তির প্রতি ও সামগ্রিকভাবে সমাজের উন্নতির প্রতি নজর না দিয়ে সমাজের এক বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে’ চলেছে, সেইজন্যেই পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক অবদমনের শিকার হচ্ছে৷

গণ–অর্থনীতি ও মানস–অর্থনীতি

আজকের অধিকাংশ অর্থনীতিবিদই মানস–অর্থনীতি আর গণ–অর্থনীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ অপরিচিত–আর তাই তাঁদের বর্ত্তমান অর্থনৈতিক ধ্যান–ধারণায় অর্থনীতির এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ শাখাই কোন স্থান পায়নি৷

কোনো অর্থনীতিকে উন্নত অর্থনীতি (Developed Economy) অভিধায় অভিহিত করতে গেলে তাতে থাকবে চারটি মুখ্য ধারা–

প্ত গণ–অর্থনীতি People’s Economy)

প্ত সাধারণ অর্থনীতি (General Economy)

প্ত মানসভৌম–অর্থনীতি (Psycho-Economy)

প্ত বাণিজ্যিক–অর্থনীতি (Commercial Economy)

স্থানীয় জনসাধারণের সার্বিক কর্মসংস্থান

প্রথমেই কোন এলাকায় স্থানীয় জনসাধারণের শতকরা একশ’ ভাগের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকা উচিত৷ সমস্ত মানুষের নূ্যনতম চাহিদা, অর্থাৎ অন্ততপক্ষে উপযুক্ত খাদ্য, বস্ত্র, আবাস, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত হওয়া উচিত৷ জনগণের ১০০ শতাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার মাধ্যমেই তাদের এই মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে–দান–খয়রাতির মাধ্যমে নয়৷ আজকের দুনিয়ায় বেকারত্ব এক জটিল সমস্যা আর স্থানীয় মানুষের ১০০ শতাংশের কর্মসংস্থানের নীতিই এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ৷ স্থানীয় জনসাধারণের শতকরা একশ’ ভাগের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রাউট স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় বিশ্বাসী৷ স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা

পৃথিবীর জলসম্পদের সংরক্ষণ

পূর্ব প্রকাশিতের পর

নদী

তিন ধরনের নদী হয় –– বরফগলা জলে পুষ্ট নদী, বৃষ্টির জলে পুষ্ট নদী, আর ভূ–গর্ভস্থ জলে পুষ্ট নদী৷ প্রথমটির ক্ষেত্রে যখন তাপমাত্রা বাড়ে তখন নদীতে বন্যা হয়, আর বাকী দু’ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ঋতু অনুযায়ী যখন ভারী বৃষ্টিপাত হয় তখন বন্যা হয়৷ অবশ্য তাপমাত্রা বেশী বাড়লে এই ধরনের নদী শুকিয়েও যায়৷

পৃথিবীর জলসম্পদের সংরক্ষণ

শুরুতে পৃথিবী গ্রহে বিরাজ করত চরম নীরবতা–কোনো জীবিত সত্তাতো ছিলই না, এমনকি গাছপালাও জন্মায়নি৷ লক্ষ কোটি বছর ধরে এই অবস্থা চলেছিল৷ তারপর পৃথিবী অনেক ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলে উপযুক্ত ভাবে তৈরী হ’ল৷ এরপরে এক স্তরে পৃথিবীর বুকে নেবে এল বৃষ্টিধারা, শুরু হ’ল ঝড়ঝঞ্ঝা৷ এইভাবে ক্রম–পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে জীবনের উদ্ভব হ’ল৷ বৃষ্টির ফলেই কার্বণ পরমাণুতে প্রাণশক্তি সঞ্চারিত হ’ল৷ কার্বণ পরমাণু–সমন্বিত প্রোটোপ্লাজমিক সংঘর্ষ–সমিতি জন্ম দিল এই প্রাণ শক্তির৷

বাঙলার সম্ভাবনা

শিরোনামে লিখিত বিষয়ের ওপর প্রাউট প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর বিভিন্ন পুস্তকে যা বলেছেন, সেগুলিকে সংকলিত করে’ তুলে ধরেছেন বিশিষ্ট প্রাউটিষ্ট আচার্য ত্র্যম্বকেশ্বরানন্দ অবধূত৷

বস্ত্র উৎপাদন

আঁশ তৈরীর যেখানে  যে ধরণের কাঁচামাল পাওয়া যায়, ও যেখানে যে ধরণের জলবায়ু সেখানে সেই ধরণের পোষাক মানুষ পরে থাকে৷ বাঙালীস্তানের পটভূমিতে এই ব্যাপারটা দেখা যেতে পারে৷

বাঙালীস্তানে মূলতঃ চার ধরণের কাঁচামাল পাওয়া যায়–তুলো, তুঁতজাত রেশম,  তুঁতজাত নয় এমন রেশম ও অন্যান্য৷

তুলো

মানব প্রগতি

এই পরিদৃশ্যমান বিশ্বে রয়েছে তিনটি স্তর–আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক বা কারণ৷ এছাড়া রয়েছে একটা মানসাতীত স্তর৷ আবার মানবীয় অস্তিত্বেও রয়েছে তিনটি স্তর–স্থূল, সূক্ষ্ম ও কারণ৷ এ ছাড়া রয়েছে এক প্রতিফলিত চৈতন্য৷ এই চৈতন্যের স্তরে বিকাশের কোন প্রশ্ণ নেই, কারণ আত্মা হ’ল গুণাতীত অতীন্দ্রিয় সত্তা৷ যেখানে রয়েছে অপূর্ণতা ও নশ্বরতা সেখানেই রয়েছে বিকাশের সুযোগ৷ অপূর্ণতা থেকে পূর্ণতার দিকে গতিই হ’ল প্রগতি৷ মানসাতীত স্তরে কোন প্রগতি নেই, কারণ তা’ পূর্ণ ও শাশ্বত৷ কেবল মানসিক স্তরে এই প্রগতির পূর্ণ সুযোগ রয়েছে৷ স্থূল শরীর যে পাঞ্চভৌতিক উপাদানে তৈরী সেই পাঞ্চভৌতিক উপাদান ভূমধ্যসাগরের স্থূল অভিব্যক্তি ছাড়া

বাঙলার সম্ভাবনা

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

ধানের জমির আগাছা তুলে ফেলে তবেই তরল সার দিতে হবে, তা না হলে আগাছাই সার টেনে নেবে৷ ঠিক তেমনি পায়রা ফসলের বীজ ছড়ানোর আগেই তরল সার ব্যবহার করতে হবে, তা না হলে ধানের জন্যে দেওয়া সার পায়রা ফসল টেনে নেবে৷ ধানে ফুল আসার পরই পায়রা ফসলের চাষ করতে হবে, তা না হলে মাছের চলাফেরা ব্যাহত হবে, আর মাছের আকার ছোট হবে, ধানের উৎপাদনও কম হবে৷

বাঙলার সম্ভাবনা

আজকাল অনেক জায়গাতেই গভীর নলকূপের সাহায্যে জল তুলে চাষ করা হয়, এটা বিজ্ঞান সম্মত নয়, কারণ যত পরিমাণ জল তোলা হয়, তত পরিমাণ জল ওই গভীরতায় ফিরে যেতে পারে না৷ রোদের তাপে অনেকটা বাষ্প হয়ে যায়, আর কিছুটা গাছপালারা টেনে নেয়৷ এর ফলে জল–তল হু হু করে নেবে যায়৷ মালদা, নদীয়া ও অন্যান্য জেলায় যেভাবে গভীর নলকূপ ব্যবহার করা হচ্ছে তা যদি বন্ধ না করা হয়, তাহলে জল–তল এত নেবে যাবে যে ভবিষ্যতে সেচের জলের অভাবে সমস্ত ফসল ও গাছপালা মরে যাবে৷ চাষীদের এই সমস্যা সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে৷ নদীর জলকে সেচের কাজে লাগানোটাই সর্বোত্তম উপায়৷

বাঙলার সম্ভাবনা

বাঙালীস্তানের অন্তর্গত রাঢ়ের শিলাস্তরে আমরা সব রকমের শিলা বৈচিত্র্য পাই৷ যেমন–

(১) প্রাচীন কঠিন শিলা–যেখানে পাচ্ছি সোণা–রূপা–তাঁবা–পার্ প্রভৃতি৷

(২) আগ্ণেয় শিলা–যেখানে পাচ্ছি কোয়ার্জ ও কিছু কিছু বিশেষ ধরণের প্রস্তর৷

(৩) প্রাচীন পাললিক শিলা বা মৃত প্রস্তর–যেখানে পাচ্ছি কয়লা ও উন্নতমানের বালি৷

পূর্ব রাঢ় সমুদ্রত্থিত, তাই কয়লা হবার মত অরান্যানী পূর্ব রাঢ়ে ছিল না৷ তবে পূর্ব রাঢ়ে যে সকল স্থানে সারগাসো সমুদ্র (sargasso sea) ছিল সেখানে খনিজ তেল পাবার সম্ভাবনা আছে৷

বিজ্ঞান হোক সেবা ও কল্যাণের জন্যে

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই অর্থাৎ আনুমানিক দশ লক্ষ বছর আগে– পৃথিবীতে মানবজাতি আসার ঊষালগ্ণ থেকেই–বিজ্ঞানের সঙ্গে মানুষের জীবন অচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত৷ যতদিন পর্যন্ত একজন মানুষও থাকবে ততদিন বিজ্ঞানের যুগ থাকবে।

জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সর্বাত্মক জয়লাভের ইচ্ছা মানুষের মধ্যে আদিম ও অনন্ত প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয়–জীবনের সকল ক্ষেত্রে ছোট হয়ে বাঁচাটা মানুষের পক্ষে অভাবনীয়৷ অনন্তকাল ধরে’ প্রকৃতির আজ্ঞাবহ ভৃত্য হিসেবে বাঁধাধরা পথে চলার ধারণা কোনদিনই তার মনঃপুত নয়৷ যেহেতু তাকে টিকে থাকতে হয় আপাতঃ প্রতিকূল স্থূল জগতে, তাই তমোগুণী প্রকৃতিকে জয় করতে গিয়েই উদ্ভব হয়েছে Science বা ভৌতিক বিজ্ঞানের৷

দ্বন্দ্বাত্মক ভৌতিকতাবাদ ও গণতন্ত্র

পূর্ব প্রকাশিতের পর

নৈতিকতা ঃ গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্যে নৈতিকতা দ্বিতীয় মূল উপাদান৷ নীতির অভাবে লোকে বোট বিক্রী করে৷ পৃথিবীতে এমন কতকগুলি দেশ আছে যেখানে বোট কেনাবেচা হয়৷ আমরা কি একে গণতন্ত্র লতে পারি? এটা কি প্রহসন নয়? তাই যতক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত জনসংখ্যার শতকরা একান্ন জন লোক নৈতিক অনুশাসনকে কঠোরভাবে না মানছে ততক্ষণ পর্যন্ত গণতন্ত্রের সাফল্য অসম্ভব যেখানে দুর্নীতিপরায়ণেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে সেখানে তাদের মধ্যে থেকেই অবশ্যম্ভাবীরূপে নেতা নির্বাচিত হবে৷

প্রসঙ্গ ঃ গণতান্ত্রিক নির্বাচন

বলা হয়, গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের জন্যে, জনগণের দ্বারা, জনগণের শাসন৷ শূদ্র যুগের পর গোষ্ঠীপতিদের হাতে ক্ষমতা স্থানান্তরিত হয়৷ কালক্রমে গোষ্ঠীপতিরা সামন্ত রাজা হয়ে পড়ে৷ রাজতন্ত্রের অত্যাচারের বিরুদ্ধ মনোভাব থেকে গণতান্ত্রিক মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে৷ গণতন্ত্রের ইতিহাস অতি প্রাচীন৷ কথিত হয় যে প্রাচীন ভারতবর্ষে লিচ্ছবী রাজবংশের সময়ে গণতন্ত্রের সূত্রপাত হয়৷ অত্যন্ত প্রাচীন সংঘটন লে এতে কিছু বিকৃতি আসা মোটেই অস্বাভাবিক নয়৷

অর্থনৈতিক গণতন্ত্র

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, ‘জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্যে, জনগণের সরকার’ঙ্গ কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে গণতন্ত্র হ’ল ‘মবোক্রেসী’, কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার নিয়ন্ত্রিত হয় ‘মব–সাইকোলজি’ (জনতা–মনস্তত্ত্ব)–র দ্বারা।

যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবেই গণতন্ত্র সার্থক হবে, নচেৎ জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্যে, জনগণের শাসনের মানে দাঁড়াবে ‘বোকার দ্বারা, বোকার জন্যে, বোকার শাসন’*।

পূর্বাদ্র তত্ত্ব

পশ্চিমবঙ্গ, বাঙলাদেশ, ত্রিপুরা ও অসম সমন্বিত ভারতের পূর্বাঞ্চলের এই বিশাল ভূভাগটি জলবায়ুর দিক থেকেও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ৷ সমগ্র অঞ্চলের জলবায়ুই উষ্ণ ও আর্দ্র৷ সমুদ্র কাছাকাছি বলে শীত–গ্রীষ্মও ততটা প্রখর নয়৷ তথাপি এর পশ্চিম অংশের সঙ্গে পূর্বাংশের জলবায়ু–গত কিছুটা পার্থক্য আছে৷ পশ্চিমাংশের সমভূমিতে গ্রীষ্মে ১২০০ ফারেনহাইট পর্যন্ত উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় আবার শীতকালে উষ্ণতা ৫৫০ ফারেনহাইটে নেমে আসে৷ কিন্তু পূর্বাংশে অর্থাৎ ত্রিপুরা–সমে জলবায়ু অপেক্ষাকৃত সিক্ত ও আর্দ্র৷ পশ্চিমের রাঢ় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেখানে গড়ে ৫০ –৫৫  সেখানে পূর্বাঞ্চলের অসম–মেঘালয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের গড় পরিমাণ ৫০৮ ৷ উত্তরে দার্জিলি

কৃষি সমস্যা ও তার সমাধান প্রসঙ্গে

কৃষিভূমির সর্বাধিক ও সঙ্গত উপযোগিতা গ্রহণ, ও সকল কৃষিভূমির সুষ্ঠু পুনর্বিন্যাসের জন্যে সমবায়–প্রথাই অধিকতর কাম্য হওয়া উচিত৷

কৃষি কাজ যদি সমবায়–প্রথা অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয় তাহলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষি–জমিকে মিলিয়ে একটি বড় কৃষি–জমিতে পরিণত করা যাবে৷ তার ফলে সব কর্ষকেরই বিরাট সামূহিক লাভ হবে৷ এতে আলের জন্যে অযথা জমি নষ্ট হবে না, কৃষিযোগ্য ভূমির আয়তনও বাড়বে৷

শোষণের ছলা–কলা

(শিরোনামে লিখিত বিষয়ের ওপর প্রাউট প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর বিভিন্ন পুস্তকে যা বলেছেন, সেগুলিকে সংকলিত করে’ তুলে ধরেছেন বিশিষ্ট প্রাউটিষ্ট আচার্য ত্র্যম্বকেশ্বরানন্দ অবধূত৷)

বুদ্ধির অপব্যবহার করে’ শোষণ নানা যুগে নানা ভাবে হয়েছে৷ বর্তমান যুগে কীভাবে হচ্ছে তার কয়েকটা চিত্র এঁকেছেন দার্শনিক শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার৷

জড়তার মুক্তি

গত পরশু সন্ধ্যায় রেণেশাঁ ক্লাবের সভায় আলোচ্য বিষয় ছিল ‘‘বুদ্ধির মুক্তি’’৷ কারো কারো মনে প্রশ্ণ জাগতে পারে---মুক্তি তো মানুষের জন্যে প্রয়োজন৷ বুদ্ধির মুক্তি আবার কী রকম কথা৷ বুদ্ধি জিনিসটা হ’ল অমূর্ত বা ভাববাচক৷ যা অমূর্ত যা ভাববাচক তার আবার মুক্তি কী!

প্রাউটের অর্থনীতি–ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

বিকেন্দ্রিত সামাজিক–অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অতি সহজেই কৃষি ও শিল্পের আধুনিকীকরণ করা যায় ও তার উৎপাদিত দ্রব্যের বাজারও সহজে পাওয়া যায়৷ এইভাবে যদি সামাজিক–র্থনৈতিক অঞ্চলগুলি আপন আপন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিকাশ ঘটায় তাহলে বিভিন্ন অঞ্চলের মাথা পিছু আয়–বৈষম্য হ্রাস পাবে ও অনুন্নত অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে তাকে উন্নত অর্থনৈতিক অঞ্চলের সমপর্যায়ে আনা যাবে৷ প্রত্যেকেই অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ ভোগ করবে৷ যখন প্রত্যেকটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা আসবে তখন সমস্ত দেশই অতি দ্রুত অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করবে৷

প্রাউটের অর্থনীতি–ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

প্রাউটের অর্থনীতি–ব্যবস্থার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের ওপর নিম্নে আলোকপাত করা হচ্ছে ঃ

নূ্যনতম প্রয়োজন ও ক্রয়ক্ষমতার গ্যারান্টী ঃ

প্রাউট প্রতিটি মানুষকে জীবন–ধারণের নূ্যনতম প্রয়োজন–অন্ন, বস্ত্র, আবাস, চিকিৎসা ও শিক্ষা–প্রদানের নিশ্চিততার (গ্যারান্টী) পক্ষপাতী৷ নূ্যনতম প্রয়োজনপূর্তির গ্যারান্টী দানের পর যে উদ্বৃত্ত সম্পদ থাকবে তা যাঁরা বিশেষ দক্ষতার অধিকারী বা বিশেষ গুণ–সম্পন্ন যেমন চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়র বৈজ্ঞানিক প্রভৃতির মধ্যে বন্টন করতে হবে, কারণ সমাজের সামূহিক উন্নয়নে এঁদের বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছে৷

সম্পদের সর্বাধিক উপযোগ

বিশ্বের যাবতীয় জাগতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সম্পদের সর্বাধিক উপযোগ গ্রহণ করতে হবে, ও যুক্তিসঙ্গত বণ্ঢন করতে হবে৷

স্থূল জগতে, সূক্ষ্ম জগতে ও কারণ জগতে যা কিছু সম্পদ নিহিত আছে তার উৎকর্ষ সাধন করতে হবে জীব কল্যাণে৷ ক্ষিতি–অপ–তেজ–মরুৎ্– পঞ্চতত্ত্বের যেখানে যা কিছু লুকানো সম্পদ রয়েছে তা ষোল আনা সদ্ব্যবহারের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এর উৎকর্ষ সাধিত হবে৷ জল–স্থল–অন্তরীক্ষ তোলপাড় করে’ মানুষকে প্রয়োজনের উপাদান খুঁজে বের করে’ নিতে হবে–তৈরী করে’ নিতে হবে৷

ধনসঞ্চয় সম্পর্কে প্রাউটের নীতি

কোন ব্যষ্টিই সামবায়িক সংস্থার (collective body) সুস্পষ্ট অনুমোদন ছাড়া ভৌতিক সম্পদ সঞ্চয় করতে পারবে না৷

 

আমাদের চাহিদা তিন ধরনের–

  • ভৌতিক (physical)
  • মানসিক (psychic)
  • আধ্যাত্মিক (spiritual)

অণুমন তার অনন্ত ক্ষুধা ভৌতিক উপাদান লাভের মাধ্যমেই তৃপ্ত করতে চায়, কিন্তু এই ভৌতিক সম্পদ যদিও বিপুল, তবুও অনন্ত নয়– সীমিত৷ ভৌতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক এই তিন স্তরের মধ্যে মানসিক ও আধ্যাত্মিক জগৎ অনন্ত৷ এই দুই স্তরে অণুমনের অনন্ত এষণার পরিতৃপ্তি হতে পারে৷ এতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দেবে না৷

‘‘যাকে নিয়ে মোদের গর্ব এই সেই বাঙালী পূর্বাকাশে নূতন করে জ্বালাবে দীপালী’’

কোচ  ঃ  কুচ+ঘ=কোচ৷ ‘কুচ্’ ধাতুর অর্থ হ’ল আকর্ষণ করা, আশ্রয় দেওয়া, আশ্রয় দেওয়ার মত আকর্ষণ করা৷ যেমন শৈলোপকন্ঠ, যেমন সাগরবেলা , যেমন তরঙ্গ–কান্তার, যেমন হরিৎমেখলা৷ বরেন্দ্র রাঢ় তৈরী হবার বহু পরে হলেও অক্ষশিষ্ট বাঙলা যখন তৈরী হয়েছিল....সেও আজকের কথা নয়৷ সেও কয়েক লক্ষ বছর হয়ে গেছে৷ হয়তো সে সময়টা মানুষের আসার কিছুটা পরেই৷ তবে তা খুক্ষ বেশী পরে নয়৷ ওলিগোসিন ও মেসাজোয়িক এজের মধ্যবর্তী কোন একটা সময়ে নিশ্চয়ই ৷ পশ্চিম রাঢ়ের নদীগুলির দ্বারা বাহিত পলি বালিতে তৈরী হ’ল প্রথমে পূর্ব বরেন্দ্র রাঢ়, ও তার পরে পশ্চিম বরেন্দ্র রাঢ় ও পূর্ব রাঢ়ের নদীগুলির দ্বারা বাহিত পলি বালিতে দক্ষিণ দিক থেকে তৈরী হয়েছিল মেন স

সামাজিক মূল্য ও মানবিক মৌল নীতি

পূর্ব প্রকাকশিতের পর

আমাদের বক্তব্য হ’ল, মানুষকে নীচ করে, মানবতাকে অবহেলা করে, তাকে কখনও শ্রেষ্ঠ বলে মেনে নেওয়া যায় না৷ শাস্ত্র তৈরী করে মানুষ নিজের জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলার জন্যে৷ শাস্ত্র শাসন করবে নিশ্চয়ই, কিন্তু সে শাসন কখনও মানুষকে কবর দেবার জন্যে নয়৷ মানুষকে তার ন্ধন থেকে মুক্ত করে সবার উৎস সেই পরম সত্তার সাথে মিলিয়ে দেওয়াতেই শাস্ত্রের সার্থকতা৷ শাস্ত্র মানুষের টুঁটি টিপে হত্যা করবে, শুধু বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে জীবনের স্বাভাবিক গতিটুকুকে রুদ্ধ করে দেবে---মানুষের সমাজে তা কখনও সমর্থন করা যায় না৷

সামাজিক মূল্য  ও  মানবিক  মৌল নীতি

বর্তমান যুগ ও মানবিক মূল্য

বর্তমান যুগে জীবনের মূল্য নির্ধারিত হয় অর্থ দিয়ে৷ ‘‘যস্যাস্তি বিত্তম্ সঃ নরঃ কুলিনঃ সঃ পন্ডিতঃস শ্রুতবান্ গুণজ্ঞঃ স এব বত্তা স চ দর্শনীয়ঃ৷ সর্বে গুণাঃ কাঞ্চনমাশ্রয়ন্তি৷৷’’

সামাজিক মূল্য ও মানবিক মৌল নীতি

সুদুর অতীত থেকে একে একে বিবর্তনের ধাপ পেরিয়ে নামুষ আজকের এই পরিবেশে এসে পৌঁছেছে৷ তার এই অবিরল যাত্রা কিন্তু একক নিঃসঙ্গ যাত্রা নয়৷ সে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে তার সমাজকেও৷ অতীতের সেই অবিকশিত অনুন্নত অবস্থাতেও মানুষ বাস করত বিভিন্ন গোষ্ঠীতে দলবদ্ধ  হয়ে৷ এর কারণ, মানুষ পারে না একা বাস করতে পারে না তার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খোরাক সংগ্রহ করতে৷ সমষ্টি ব্যতিরেকে ব্যষ্টির অস্তিত্ব রক্ষা করা অসম্ভব কারণ মানুষ এক সামাজিক জীব৷ মানুষের কথা ভাবতে গেলে স্বভাবতই তার সমাজও এসে পড়ে, তাই মানুষের অস্তিত্বের দু’টি দিক---একটা সে নিজে তার ব্যষ্টির অস্তিত্ব আর দ্বিতীয়টি হ’ল সে সমাজের সদস্য---তার সমষ্টিগত অস্তিত্ব৷ এই

শোষণ করা চলবে না

আমি ইতোপূর্বেই বলেছি যে মানুষের মধ্যে যতটা সামর্থ্য রয়েছে মানুষ তার খুব অল্প অংশই কাজে লাগায়৷ লতে গেলে তার সামর্থ্যের শতকরা এক ভাগও প্রয়োগ করে না৷ আর সমাজ যাদের মহাপুরুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, দেখা যায় তারাও বড় জোর শতকরা দশভাগ সামর্থ্যের উপযোগ নেয় আর বাকী শতকরা নববই ভাগ অব্যবহৃত থেকেই যায়৷ সাধারণ ভাবে লতে গেলে, মানুষ তার সামর্থ্যের নববই ভাগই কাজে লাগায় না৷ স্থূল ব্যষ্টি যারা তারা তো তাদের অন্তর্নিহিত সামর্থ্যের অর্ধেকটা কেবল শুয়ে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়৷ বাকি সামর্থ্যের খুব অল্প ভাগই সে প্রকৃত কাজে লাগায়৷

এ্যাটম ব্যোম কি মানবসভ্যতাকে ধবংস করতে পারে?

কিছুদিন আগে জনৈক সাংবাদিক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘এ্যাটম বোমের বিধবংসী কার্যকারিতা সম্বন্ধে ও মানুষ জাতির ওপর তার ভবিষ্যৎ প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে আপনার মত কী?’’ সাধারণতঃ সাংবাদিকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক থাকে না৷ কিন্তু আমি এই প্রশ্ণের উত্তর দিয়েছিলুম৷ এই প্রশ্ণের উত্তরে লেছিলুম ‘‘এ্যাটম বোমের শক্তির চেয়ে মানুষের শক্তি অনেক বেশী৷ সুতরাং এ্যাটম বোমে মানুষকে শেষ করে দেবে--- এরকম ভাবা মানে মানুষের মনীষাকে, মানুষের মানসিক শক্তিকে অপমান করা৷ কারণ, মানুষ এ্যাটম বোমেকে তৈরী করেছে৷ মানুষ এ্যাটম বোমের স্রষ্টা৷ সুতরাং মানুষকে কি এ্যাটম বোমে ধবংস করতে পারে?

জড়তার মুক্তি

গত পরশু সন্ধ্যায় রেনেসাঁ ক্লাবের সভায় আলোচ্য ষিয় ছিল ‘‘বুদ্ধির মুক্তি’’৷ কারো কারো মনে প্রশ্ণ জাগতে পারে-মুক্তি তো মানুষের জন্যে প্রয়োজন৷ বুদ্ধির মুক্তি আবার কী রকম কথা৷ বুদ্ধি জিনিসটা হ’ল অমূর্ত বা ভাববাচক৷ যা অমূর্ত, যা ভাববাচক তার আবার মুক্তি কী৷ এই প্রসঙ্গে আমার অভিমত হ’ল---হ্যাঁ, বুদ্ধিরও মুক্তির প্রয়োজন আছে বৈকি৷ এই জগতে যা কিছু রয়েছে---জড়, ভাব, চেতন, সকলেরই মুক্তি চাই৷ মুক্তি না ঘটলে বস্তু বা ব্যষ্টির স্বাভাবিক স্ফূরণ ঘটে না অর্থাৎ যার মধ্যে যে গুণ রয়েছে, যে সামর্থ্য রয়েছে সেই গুণ বা সামর্থ্যের পূর্ণ বিকাশ, পূর্ণ অভিপ্রকাশ যদি দেখতে চাই তাহলে সেই ব্যষ্টি বা বস্তুর মুক্তি অপরিহার্য৷

সৈদ্ধান্তিক তত্ত্ব ও প্রয়োগভূমি তত্ত্ব

যে সিদ্ধান্ত প্রয়োগভূমি থেকে আত্মপ্রকাশ করে তাকে স্বল্পায়াসেই বাস্তবে রূপায়িত করা যায়৷ সে সিদ্ধান্ত অবশ্যই বাস্তাবায়িত হবে, তবে তা প্রচেষ্টা, সময় ও সংযোগের ওপর নির্ভরশীল৷ কিন্তু যখন প্রয়োগের দিকটা সিদ্ধান্ত তৈরী করার পরে আসে, তখন বাস্তবে রপায়িত হতেও পারে আবার নাও হতে পারে৷

এই ধরণের সৈদ্ধান্তিক তত্ত্বের ব্যর্থতার চারটি কারণ৷ কারণগুলি নিম্নে প্রদত্ত হ’ল ঃ

প্রদমন, অবদমন ও দমন

কম্যুনিষ্ট রাষ্ট্রগুলিতে তোমরা প্রদমন, অবদমন ও দমনের একটা ত্রিভুজ পুরোপুরি কার্যকরী দেখতে পাবে৷ এই তিনটি ত্রুটির ওপর কম্যুনিজম আধারিত৷ কিন্তু এই তিনটি ত্রুটির মধ্যে সব চাইতে বেশি ঘটেছে দমন, তারপর ঘটেছে অবদমন ও সব চাইতে কম ঘটেছে প্রদমন৷ এই প্রদমন, অবদমন ও দমনের ফলে সৃষ্ট শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা থেকে জনসাধারণকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে৷ এই তিনটি মানসিক পীড়ন মানুষের মনকে ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে দিয়েছে৷

দ্বন্দ্বাত্মক ভৌতিকতাবাদ ও গণতন্ত্র

পূর্ব প্রকাশিতের পর

নৈতিকতা ঃ গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্যে নৈতিকতা দ্বিতীয় মূল উপাদান৷ নীতির অভাবে লোকে বোট বিক্রী করে৷ পৃথিবীতে এমন কতকগুলি দেশ আছে যেখানে বোট কেনাবেচা হয়৷ আমরা কি একে গণতন্ত্র লতে পারি? এটা কি প্রহসন নয়? তাই যতক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত জনসংখ্যার শতকরা একান্ন জন লোক নৈতিক অনুশাসনকে কঠোরভাবে না মানছে ততক্ষণ পর্যন্ত গণতন্ত্রের সাফল্য অসম্ভব যেখানে দুর্নীতিপরায়ণেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে সেখানে তাদের মধ্যে থেকেই অবশ্যম্ভাবীরূপে নেতা নির্বাচিত হবে৷

দ্বন্দ্বাত্মক ভৌতিকতাবাদ ও গণতন্ত্র

পূর্ব প্রকাশিতের পর

এখন গণতন্ত্রের কথায় আসা যাক৷ লা হয়, গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের জন্যে, জনগণের দ্বারা, জনগণের শাসন৷ শূদ্র যুগের পর গোষ্ঠীপতিদের হাতে ক্ষমতা স্থানান্তরিত হয়৷ কালক্রমে গোষ্ঠীপতিরা সামন্ত রাজা হয়ে পড়ে৷ রাজতন্ত্রের অত্যাচারের বিরুদ্ধ মনোভাব থেকে গণতান্ত্রিক মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে৷ গণতন্ত্রের ইতিহাস অতি প্রাচীন৷ কথিত হয় যে প্রাচীন ভারতবর্ষে লিচ্ছবী রাজবংশের সময়ে গণতন্ত্রের সূত্রপাত হয়৷ অত্যন্ত প্রাচীন সংঘটন লে এতে কিছু বিকৃতি আসা মোটেই অস্বাভাবিক নয়৷

প্রাউট-প্রবক্তার ভাষায় দ্বন্দ্বাত্মক ভৌতিকতাবাদ ও গণতন্ত্র

সমাজের অগ্রগতি ত্রয়ীর সমন্বয়---থীসিস, এ্যাণ্টিথীসিস ও সিনথীসিস৷ যখন কোন বিশেষ তত্ত্ব সমাজের কল্যাণ---সাধনে অসমর্থ হয়, তখন ওই প্রচলিত তত্ত্বের বিরুদ্ধে এ্যাণ্টিথীসিস তৈরী হয় ও এই দুই বিরুদ্ধ শক্তির পারস্পরিক সংঘর্ষ ও সংসক্তির(cohesion) ফলে আসে এক লব্ধি(resultant)৷ এই লব্ধি বা ফলকে বলা হয় সংশ্লেষণ(synthesis)৷ সমাজকল্যাণ সংশ্লেষণের অবস্থাতেই সম্ভব---এটা কি সত্য?

স্থানীয় জনসাধারণের সার্বিক কর্মসংস্থান

প্রথমেই কোন এলাকায় স্থানীয় জনসাধারণের শতকরা একশ’ ভাগের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকা উচিত৷ সমস্ত মানুষের নূ্যনতম চাহিদা, অর্থাৎ অন্ততপক্ষে উপযুক্ত খাদ্য, বস্ত্র, আবাস, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত হওয়া উচিত৷ জনগণের ১০০ শতাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার মাধ্যমেই তাদের এই মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে–দান–খয়রাতির মাধ্যমে নয়৷ আজকের দুনিয়ায় বেকারত্ব এক জটিল সমস্যা আর স্থানীয় মানুষের ১০০ শতাংশের কর্মসংস্থানের নীতিই এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ৷ স্থানীয় জনসাধারণের শতকরা একশ’ ভাগের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রাউট স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় বিশ্বাসী৷ স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা

কৃষি বিপ্লব

পূর্ব প্রকাশিতের পর

ভারতবর্ষের সমস্যা কিন্তু অন্য ধরণের৷ এখানে কৃষিব্যবস্থা তথা শিল্পবিপ্লবের উন্নতি করবার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে৷ সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার হয়নি লে তার এত অভাব৷ মূলতঃ ভারতের অর্থনৈতিক সমস্যা দ্বিবিধ৷

ভাবজড়তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম

ধর্মমতের উপর ভিত্তি ক’রে তৈরী হয়েছে পাপ–পুণ্যের খসড়া, তৈরী হয়েছে বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন দণ্ডসংহিতা ও শাস্ত্র৷ নিজেদের কায়েমী স্বার্থের দুরভিসন্ধিতে সেই সব শাস্ত্রকে অপৌরুষেয় বলে প্রচার করা হয়েছে৷ তাই মানুষের থেকে তথাকথিত শাস্ত্র বর্ণিত দেববাণীর দাম অনেক বেশী৷ মানুষ সেই বাণীর, সেই ব্যবস্থার অবমাননা বা বিরুদ্ধাচরণ করলে তাকে পেতে হবে কঠোর শাস্তি৷ বিজাতীয় মানুষকে স্পর্শ করা মহাপাপ৷ সমাজ থেকে তাকে হ’তে হবে বিতাড়িত সেই পাপের জন্যে৷ শাস্ত্রমতে হয়তো প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে, সে প্রায়শ্চিত্ত কখনও কখনও তার প্রাণহানিরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ কেউ যদি এই কঠোর শাস্তি থেকে একটু শৈথিল্য প্রার্থনা করে, সমাজগুরুরা তা

কৃষি বিপ্লব

কোন দেশের অর্থনীতির বিকাশ নির্ভর করে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকের সামবায়িক শ্রমদানের ওপর৷ এই কারণেই প্রাচীন গৃহস্থালী অর্থনীতি থেকে ধীরে ধীরে শ্রমবিভাজন অবস্থার উদ্ভব হয়৷ শ্রমিক, কর্ষক, ছুতোর, কামার, স্বর্ণকার, কুমার, বৈদ্য, কেরাণী প্রভৃতি প্রতেক্যের কার্যের মূল্যই অর্থনীতির সামূহিক বিকাশে সমান৷ প্রাচীন ভারতের অর্থনীতিতে সামবায়িক প্রচেষ্ট-ভিত্তিক ব্যবস্থার জন্যে এক স্থিতিস্থাপক অর্থনীতি বিদ্যমান ছিল৷ বৈদিক যুগে ভারতীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বর্ণাশ্রমের ওপর ভিত্তি গড়ে উঠেছিল ও এই চতুবর্ণ নিজ নিজ কর্ম সুষ্ঠু ভাবে করে যেত৷ একটি বিশেষ শাখা কৃষিকাজ করতে, বাকীরা করতো অন্য কাজ ৷ সাই মিলে আজকার মতো কৃষিক্ষেত্

অর্থনৈতিক গণতন্ত্র

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, ‘জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্যে, জনগণের সরকার’ কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে গণতন্ত্র হ’ল ‘মবোক্রেসী’, কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার নিয়ন্ত্রিত হয় ‘মব–সাইকোলজি’(জনতা–মনস্তত্ত্ব)–র দ্বারা।

যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবেই গণতন্ত্র সার্থক হবে, নচেৎ জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্যে, জনগণের শাসনের মানে দাঁড়াবে ‘বোকার দ্বারা, বোকার জন্যে, বোকার শাসন’।২

মানব-প্রগতি

এই পরিদৃশ্যমান বিশ্বে রয়েছে  তিনটি স্তর--- আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক বা কারণ৷ এ ছাড়া রয়েছে  একটা মানসাতীত  স্তর৷  মানবীয়  অস্তিত্বেও তিনটি স্তর  রয়েছে --- স্থূল, সূক্ষ্ম ও কারণ৷ এ ছাড়া  এখানে  রয়েছে  এক প্রতিফলিত চৈতন্য৷  এই চৈতন্যের  স্তরে  বিকাশের  কোন প্রশ্ণ নেই৷ কারণ আত্মা গুণাতীত অতীন্দ্রিয় সত্তা৷  যেখানে  রয়েছে অপূর্ণতা  ও নশ্বরতা,  সেখানেই  রয়েছে  বিকাশের  সুযোগ৷ অপূর্ণতা থেকে পূর্ণতার  দিকে গতিই হ’ল প্রগতি৷ মানসাতীত  স্তরে  কোন প্রগতি নেই৷  কারণ তা পূর্ণ ও শাশ্বত৷ মানসিক স্তরে   এই প্রগতির পূর্ণ সুযোগ রয়েছে৷  স্থূল শরীর যে  পাঞ্চভৌতিক উপাদানে তৈরী সেই পাঞ্চভৌতিক  উপাদান ভূমামা

জাতি, ভাষা, ধর্মমত ও সংস্কৃতিতে বিশ্বজনীনতা

আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হ’ল ‘‘জাতি (race), ভাষা প্রভৃতিতে বিশ্বজনীনতা’’৷ যদিও মানুষের ভাষা, বর্ণ ইত্যাদিতে কিছু কিছু আপাত বৈষম্য রয়েছে, তথাপি মানুষের এই সকল অপরিহার্য বিষয়গুলি কিন্তু এসেছে একই উৎস থেকে, এইসব এসেছে সেই একক সত্তা পরমপুরুষ থেকে৷ ভাষাগত বৈষম্য, বর্ণগত বৈষম্য, জাতিগত বৈষম্য আছে ঠিকই কিন্তু এই সই বাহ্য ও আপাতদৃষ্ট৷ মুখের ভাষা নয়, আসলে হৃদয়ের ভাষা, সেণ্টিমেণ্টের ভাষাই শুণতে হবে৷

সভ্যতা, বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক প্রগতি

আজকের আলোচনার বিষয় হ’ল, সভ্যতা, বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক প্রগতি৷ মানুষের বিভিন্ন ভাবের অভিব্যক্তির সামূহিক নাম ‘কালচার’ বা ‘সংস্কৃতি’৷ শুরুতেই আমি তোমাদের লে রাখছি, গোটা মানুষ জাতির সংস্কৃতি একটাই৷

সম-সমাজ তত্ত্ব 

চলা জগতের ধর্ম৷ চলে চলেছে বলেই  এই পৃথিবীর নাম জগৎ৷ ‘গম’ ধাতুর উত্তর ক্কিপ্ প্রত্যয় করে ‘জগৎ’ শব্দ নিষ্পন্ন যার মানে হ’ল--- চলা যার  স্বভাব৷ ব্যষ্টিগত জীবনে হয় যেমন চলতে সমষ্টিগত তথা সামুহিক জীবনেও তেমনি চলতে হয়৷ কিন্তু এই যে চলা, এই চলার জন্যে তিনটে জিনিসের প্রয়োজন আছে৷ একটা হচ্ছে--- চলার জন্যে একটা সম্প্রেষণ, পেছন থেকে একটা ধাক্কা যখন চলাটা বন্ধ হয় তখন ধাক্কা দিয়ে বলতে হয় চল্, চলতে হবে৷ দ্বিতীয়তঃ নিজে যে চলবে  তার চলবার সামর্থ্য থাকা চাই অর্থাৎ চলার উপযুক্ত রসদ তার থাকা চাই৷  নইলে সে চলবে কী করে? আর তৃতীয়ত হচ্ছে ঃ চলছে  একটা লক্ষ্যের দিকে৷ এই তিনটে জিনিস চাই৷

সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণ

পূর্ব প্রকাশিতের পর

গণতন্ত্রের আওতায় এই ধরণের আদর্শের প্রতিষ্ঠা মোটেই সম্ভব নয়, কেন না সেখানে বোটপাবার জন্যে চোর, ডাকাত তথা নানান ধরণের সমাজ-বিরোধী মানুষের দ্বারস্থ হতে হয়৷ জাতিভেদ, প্রাদেশিকতা, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদির ধুয়া তুলে সমর্থ ও যোগ্য প্রার্থীদের পরাজিত করা হয় আর যারা রাজনীতি, শাসন পরিচালনা, শিক্ষা, দ্ধিমত্তা, নীতি ইত্যাদি বিষয়ে একেবারে অনভিজ্ঞ, তারাই প্রতিনিধিদের ভাগ্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব পেয়ে থাকে৷

সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণ

পূর্ব প্রকাশিতের পর

কিন্তু অল্পদিন পরে যখন তারা বিজ্ঞানের প্রয়োগ বা ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন তারা সেই সমস্ত বস্তুর বিরুদ্ধে সমালোচনা বা ঘৃণা প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয় ও যে সমস্ত বস্তু তারা ্বাধ্য হয়ে ব্যবহার করত, এখন সেগুলোর ব্যবহার তাদের পক্ষে সহজ হয়ে ওঠে, কারণ পুরাতন বস্তুর দুষ্প্রাপ্যতা বা স্বল্পতা হেতু, তারা ক্রমেই নোতুন দ্রব্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়৷

সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণ

জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সর্বাত্মক জয়লাভের ইচ্ছা মানুষের মধ্যে আদিম ও অনন্ত৷ প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয়---জীবনের সকল ক্ষেত্রে ছোট হয়ে বাঁচাটা মানুষের পক্ষে অভাবনীয়৷ অনন্তকাল ধরে প্রকৃতির আজ্ঞাবহ ভৃত্য হিসেবে বাঁধাধরা পথে চলার ধারণা কোনদিনই তার মনঃপুত নয়৷ তবে সে যে অনেক সময় প্রকৃতির নিয়মমাফিক চলে জানতে হবে, সেটা, নিতান্তই অবস্থার চাপে পড়ে৷ আর সেটা হচ্ছে তার পর্যাপ্ত পরিমাণ বুদ্ধি বা Intellect ও Stamina-র অভাব৷ তার সর্ব সাধনা হচ্ছে কেবল এইসমস্ত অভ্যন্তরীণ দুলতাগুলোকে দূর করার প্রচেষ্টার নামান্তর মাত্র৷ মনোজগতের অপূর্ণতা দূর করার জন্যে তাই সে অহরহই আদর্শগত সংঘর্ষকে অভ্যর্থনা জানায় ও জন্ম দেয় নোতুন

পরিকল্পনার মৌল নীতি

যাঁরা বিভিন্ন স্তরে যোজনা পর্ষদের সঙ্গে সংযুক্ত সেই ধরণের বড় বড় অর্থনীতিবিদদের কোন পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে যে কয়েকটি বিষয়ের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত সেগুলি হ’ল–

* উৎপাদনের ব্যয়  * উৎপাদন–ক্ষমতা

* ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা    * সামূহিক প্রয়োজনীয়তা৷

এবার উপরি–উক্ত বিষয়গুলির প্রত্যেকটি নিয়ে আলোচনা করা যাক৷

উৎপাদন–ব্যয়

শোষণমুক্ত বিশ্বায়ন

দুটি অঞ্চল উন্নয়নের প্রায় সমস্তরে এসে পৌঁছলে তাদের পক্ষে এক–সঙ্গে মিলিত হয়ে বৃহত্তর সামাজিক–র্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে’ তোলা সম্ভব৷

দুই বা ততোধিক সামাজিক–র্থনৈতিক অঞ্চল একসঙ্গে মিলিত হতে পারে যদি কয়েকটি শর্ত পূরণ হয়৷ শর্তগুলি হ’ল–

প্ত  সামাজিক–র্থনৈতিক অঞ্চলগুলির অর্থনৈতিক

                  বৈষম্যের ক্রমাবসান৷

প্ত  বিজ্ঞান ও যোগাযোগের উন্নতি ৷

প্ত  প্রশাসনিক যোগ্যতা৷

প্ত  সামাজিক–সাংসৃক্তিক মেলামেশা৷

সদবিপ্র বোর্ড

আগে আমি বহুবার বলেছি যে যাঁরা আধ্যাত্মিক নীতিবাদ তথা ‘‘যম–নিয়ম’’ পালন করেন আর যাঁরা পরম চৈতন্য সত্তার প্রতি অনুরক্ত তাঁরাই হলেন সদবিপ্র৷ মানুষ সদবিপ্রকে চিনে নেবে তাঁর আদর্শ আচরণ, নিঃস্বার্থ সেবা, কর্ত্তব্যপরায়ণতা আর নৈতিক দৃঢ়তার মধ্যে দিয়ে৷ একমাত্র সদবিপ্ররাই নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করতে পারে আর সকলকে সর্বাত্মক প্রগতির পথে নিয়ে চলতে পারে৷ এই সদবিপ্ররা–যারা সঠিক জীবনাদর্শকে অনুসরণ করে আর যথাযথ সাধনা পদ্ধতির অনুশীলন করে–তারাই ভবিষ্যতে মানবসমাজের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত থাকবে৷

গণতন্ত্র ও সদ্বিপ্রতন্ত্র

নানারকম শাসন পদ্ধতি রয়েছে, আর তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশী প্রশংসিত৷

গণ + তন্ + ত্রৈ + ড = গণতন্ত্র৷ ‘তন্ত্র’ শব্দের অর্থ হ’ল নিয়ন্ত্রিতভাবে বা বিধিবদ্ধ পদ্ধতিতে কোন কিছুকে বাড়িয়ে দেওয়া৷ আবার তং  ত্রৈ  ড করেও ‘তন্ত্র’৷ এখানে ‘তন্ত্র’ শব্দের অর্থ হচ্ছে জড়তা থেকে মুক্ত করা৷ ‘ত’ মানে জড়তা৷ ‘গণতন্ত্র’ মানে গণতার সাহায্যে মানুষকে জড়তা থেকে মুক্ত করা, অথবা বিধিবদ্ধভাবে তাদের জন্যে ত্রাণের রাস্তা তৈরী করে’ দেওয়া৷ ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি’–র যথার্থ প্রতিভু না হলেও মোটামুটি অর্থে চলতে পারে৷

রাঢ়ের সভ্যতা

মানুষের উদ্ভব পৃথিবীতে কয়েকটি বিশেষ বিশেষ বিন্দুতে হয়েছিল৷ কে আগে আর কে পরে–এই নিয়ে বিশদ আলোচনা না করেও বলতে পারি, রাঢ়ভূমিতে মানুষের উদ্ভব অতি প্রাচীন৷ এর চেয়ে প্রাচীনতর মনুষ্য–নিবাসের কোন সন্ধান পাওয়া যায় না৷ পৃথিবীতে যখন অরণ্য এল রাঢ়ের এই কঠিন শিলা, বিবর্তিত শিলা, আগ্ণেয় শিলা ও পাললিক শিলার ওপরে জন্ম নিল নিবিড় অরণ্য৷ সেই অরণ্যই একদিন মানুষ–জনপদ রাঢ়কে প্রাণ–সুধা জুগিয়েছিল, এই অরণ্যই রাঢ়ের নদীগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করত৷ ওই অরণ্যই বরফ–ঢাকা পাহাড়গুলি ক্ষয়ে যাবার পরে আকাশের মেঘকে ডেকে আনত রাঢ়ভূমিতে৷ রাঢ়ভূমিতে পর্জন্যদেবের কৃপাবর্ষণ হ’ত অফুরন্ত, অঢেল৷ এই আমাদের রাঢ়ভূমি–অনেক সৃষ্টি–স্থিতি–লয়ের জীবন্ত

নেতৃত্বের অভ্যুদয়

সমাজ–চক্রের পরিঘূর্ণনে, একটা বিশেষ যুগে তার পরবর্ত্তী যুগ আসার আগে একটা বিশেষ শ্রেণীর আধিপত্য থাকে, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে৷ এই বিশেষ শ্রেণী যখন রাজনৈতিক ক্ষমতায় থাকে, তাদের দ্বারা সমাজে শোষণ চলার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়৷ ইতিহাসের শিক্ষা এই যে, শোষণের সম্ভাবনাই শুধু নয়, যুগে যুগে এই শোষণের পুনরাবির্ভাব ঘটেছে৷

প্রাউট ও নব্যমানবতাবাদ

অস্তিত্বের সকল ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান গতিশীলতার দ্রুতি থাকতেই হবে৷ গতির দ্রুতিই জীবনের মূল পরিচয় বহন করে৷ মানুষের দৈহিক সংরচনা পাঞ্চভৌতিক কিন্তু মানব জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে পরমপুরুষ (Supreme Entity)। সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমেই আমাদের যেতে হবে৷

প্রাউটের মূলেও রয়েছে এই গতিশীলতা৷ প্রাউট হচ্ছে একটি সামাজিক–অর্থনৈতিক দর্শন যা মানবজাতিকে অপূর্ণতা থেকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে৷ পরমপুরুষের দিকে এগিয়ে চলা সকলের পক্ষেই একটা বিরামহীন প্রক্রিয়া৷ এই প্রক্রিয়ার অন্তে তুমি পরমপুরুষের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে৷

সম-সমাজ তত্ত্ব 

চলা জগতের ধর্ম৷ চলে চলেছে বলেই  এই পৃথিবীর নাম জগৎ৷ ‘গম’ ধাতুর উত্তর ক্কিপ্ প্রত্যয় করে ‘জগৎ’ শব্দ নিষ্পন্ন যার মানে হ’ল--- চলা যার  স্বভাব৷ ব্যষ্টিগত জীবনে যেমন চলতে হয়, সমষ্টিগত তথা সামুহিক জীবনেও তেমনি চলতে হয়৷ কিন্তু এই যে চলা, এই চলার জন্যে তিনটে জিনিসের প্রয়োজন আছে৷ একটা হচ্ছে--- চলার জন্যে একটা সম্প্রেষণ, পেছন থেকে একটা ধাক্কা যখন চলাটা বন্ধ হয় তখন ধাক্কা দিয়ে বলতে হয় চল্, চলতে হবে৷ দ্বিতীয়তঃ নিজে যে চলবে  তার চলবার সামর্থ্য থাকা অর্র্থৎ চলার উপযুক্ত রসদ তার থাকা চাই৷  নইলে সে চলবে কী করে? আর তৃতীয়ত হচ্ছে ঃ চলছে  একটা লক্ষ্যের দিকে৷ এই তিনটে জিনিস চাই৷

সামাজিক–অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ

সভ্যতার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনে জেগেছিল শিল্প সৃষ্টির এষণা ও প্রেষণা৷ এষণাই প্রেষণাকে ডেকে আনে৷ সভ্যতার প্রথম ধাপে শিল্পমাত্রই ছিল কুটির শিল্প৷ নারী–পুরুষ–বালক নির্বিশেষে সবাই শিল্প রচনায় হাত লাগাত৷ পরে দেখা গেল কিছুশিল্প গ্রামে গ্রামে করা যায় না.....করতে হয় কিছু সংখ্যক গ্রাম নিয়ে৷ তা না হলে তাদের একদিকে যেমন বাজারের ঘাটতি পড়ে, অন্যদিকে তেমনি শিল্পীর সংখ্যাতেও অভাব দেখা দেয়৷ তখন মানুষ প্রথম শিল্পায়োগ বা কারখানায়* যেতে শুরু করল৷ এখানে প্রসঙ্গতঃ একটা কথা বলে’ রাখি৷ শিল্প যত বেশী কুটীর–শিল্প হয়, শিল্প যত বিকেন্দ্রীকৃত হয়, মানুষের সুবিধা তত বেশী৷ এতে যে শুধু আর্থিক সামর্থ্যকে চারিদিকে

পৃথিবীর জলসম্পদের সংরক্ষণ

পূর্ব প্রকাশিতের পর

সর্বশ্রেষ্ঠ সেচ পদ্ধতি

সেচের জন্যে সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হ’ল –– পুকুর–খাল–বাঁধ, জলাশয়, আর জলাধারের মাধ্যমে ভূ–পৃষ্ঠের জলকে সংরক্ষণ করা৷

রাা ও ওড়িষ্যার উদাহরণ নেওয়া যাক্৷ এই দুই অঞ্চলের সম্ভাবনাকে ঠিকমত কাজে লাগানো হয়নি বা তার উপযুক্ত বিকাশেরও ব্যবস্থা করা হয়নি৷ এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সম্পদ হ’ল ভূ–গর্ভস্থ সম্পদ যা ঠিকমত ব্যবহারে আনা উচিত ছিল, কিন্তু বাস্তবে এ সম্পর্কে কিছুই করা হয়নি৷ জমির ক্ষমতাকেও যথোপযুক্ত ভাবে কাজে লাগানো উচিত ছিল, কিন্তু তাও অবহেলার শিকার হয়ে রয়ে গেছে৷

পৃথিবীর জলসম্পদের সংরক্ষণ

পূর্ব প্রকাশিতের পর

খরার কারণ সমূহ

খরা কেন হয়? এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলি কী কী? এর তিনটি প্রধান কারণ হ’ল নিম্নরূপ ঃ–

প্রথম, ব্যাপকভাবে গাছপালা ও বন ধ্বংস করা৷ দ্বিতীয়, সমুদ্র ও মহাসাগরের ওপর নিম্নচাপ তৈরী হওয়ার প্রাকৃতিক নিয়ম৷ আর তৃতীয় কারণ হ’ল সূর্য সহ অন্যান্য জ্যোতিষ্ক্, যেমন–ধূমকেতু–নেবুলা বা গ্যালাক্সির কৌণিক গতির হঠাৎ পরিবর্তন৷

পৃথিবীর জলসম্পদের সংরক্ষণ

শুরুতে পৃথিবী গ্রহে বিরাজ করত চরম নীরবতা–কোনো জীবিত সত্তাতো ছিলই না, এমনকি গাছপালাও জন্মায়নি৷ লক্ষ কোটি বছর ধরে এই অবস্থা চলেছিল৷ তারপর পৃথিবী অনেক ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলে উপযুক্ত ভাবে তৈরী হ’ল৷ এরপরে এক স্তরে পৃথিবীর বুকে নেবে এল বৃষ্টিধারা, শুরু হ’ল ঝড়ঝঞ্ঝা৷ এইভাবে ক্রম–পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে জীবনের উদ্ভব হ’ল৷ বৃষ্টির ফলেই কার্বণ পরমাণুতে প্রাণশক্তি সঞ্চারিত হ’ল৷ কার্বণ পরমাণু–সমন্বিত প্রোটোপ্লাজমিক সংঘর্ষ–সমিতি জন্ম দিল এই প্রাণ শক্তির৷

বাঙলার সমস্যা

(শিরোনামে লিখিত বিষয়ের ওপর প্রাউট প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর বিভিন্ন পুস্তকে যা বলেছেন, সেগুলিকে সংকলিত করে’ তুলে ধরেছেন বিশিষ্ট প্রাউটিষ্ট আচার্য ত্র্যম্বকেশ্বরানন্দ অবধূত৷)

অর্থনৈতিক গণতন্ত্র

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, ‘জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্যে, জনগণের সরকার’৷ কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে গণতন্ত্র হ’ল ‘মবোক্রেসী’, কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার নিয়ন্ত্রিত হয় ‘মব–সাইকোলজি’(জনতা–মনস্তত্ত্ব)–র দ্বারা৷

যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবেই গণতন্ত্র সার্থক হবে, নচেৎ জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্যে, জনগণের শাসনের মানে দাঁড়াবে ‘বোকার দ্বারা, বোকার জন্যে, বোকার শাসন’*৷

ভাষার ক্ষেত্রে অবদমন চলবে না

ভাষা মানুষের অন্তরের ভাব প্রকাশের এক শক্তিশালী মাধ্যম৷ এই ভাষা মানুষের প্রাণীন সম্পদ–যা তার প্রাণধর্ম অর্থাৎ সত্তাগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কিত৷ নিজস্ব মাতৃভাষায় একজন যেমন স্বচ্ছন্দে ও সাবলীল ভাবে নিজের ভাবকে প্রকাশ করতে পারে তেমনটি অন্য কোন ভাষায় পারে না৷ মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলতে সে অসুবিধা বোধ করে৷ প্রতিনিয়তই যদি অন্য ভাষায় কথা বলিয়ে এরূপ অস্বচ্ছন্দ বোধ করতে তাকে বাধ্য করান হয়, তবে তার প্রাণশক্তি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে–ক্রমশ প্রাণশক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে৷ এই রকম পরিস্থিতিতে সেই ব্যষ্টি বা ব্যষ্টি সমূহের মধ্যে এক মনস্তাত্ত্বিক সংকট দেখা দেবে৷ প্রথমেই তার মধ্যে দেখা দেবে এক ধরণের হীন

প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র

এ পৃথিবীতে পুরোপুরি স্ব–নির্ভর কেউ নয়৷ প্রত্যেকেই কোন না কোন ভাবে অন্যের ওপর নির্ভরশীল৷ প্রত্যেকেই নিজের অপূর্ণতা অন্যের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে পূরণ করে’ নেয়৷ যখনই কোন বিরাট জনগোষ্ঠী এইভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে নিজেদের অপূর্ণতা পূর্ণ করার চেষ্টা করে, তখনই তাকে আমরা ‘সমাজ’ বলে’ থাকি৷ সামবায়িক প্রচেষ্টার দ্বারা সমস্ত সমস্যার সমাধানের মধ্যেই যথার্থ সমাজ প্রতিষ্ঠার তাৎপর্য্য৷ 

সংবিধান সংশোধন

আজকের পৃথিবীতে সকল দেশের সংবিধানেরই কম–বেশী সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে৷ সংবিধান প্রসঙ্গে কতকগুলো বিশেষ বিশেষ সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে৷

সমাজের কল্যাণে সকল শ্রেণীর মানুষের উপযোগ গ্রহণ

সমাজের উন্নতি বা প্রগতি ব্যষ্টি–বিশেষের একক প্রচেষ্টায় হয় না, বা হতে পারে না৷ কেউ দেয় মস্তিষ্ক্, কেউ দেয় হাত, কেউ পা৷ তাই সুবিচার করতে গেলে পা–কে হীন আর মাথাই সর্বস্ব অথবা মাথাটার কোন দাম নেই–বুদ্ধিজীবী মাত্রেই শোষক, আর যারা গায়ে গতরে খেটে চলেছে তারাই সবকিছু–এই দুই প্রকার চিন্তাধারাই সমান বিপজ্জনক৷ আসল কথাটা হচ্ছে কে নিজের সামর্থ্য কতখানি কাজে লাগিয়েছে সেইটাই বিচার করে’ দেখা৷ সমুদ্র বাঁধতে গিয়ে হনুমানের পর্বত বয়ে আনা, আর কাঠবেড়ালীর নুড়ি বয়ে আনা তত্ত্বগত বিচারে তুল্যমূল্য৷ কারও আন্তরিকতাতেই আমরা সন্দেহ রাখতে পারি না, অবজ্ঞাও করতে পারি না৷ নিজের সম্পদ যে যথাযথভাবে খাটায়নি সে যদি, যে নিজের সম্

আদর্শ সংবিধানের জন্যে প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রসঙ্গে

সমাজচক্রের পরিবর্ত্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের দায়িত্ব ও কর্ত্তব্য পালনের প্রয়োজনে মানুষের সমাজে কিছু সংস্থার উদ্ভব হয়৷ তাদের মধ্যে রাষ্ট্র হ’ল একটা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা৷ একটা বিশেষ অঞ্চলে বসবাসকারী কোন জনগোষ্ঠী নিজের মঙ্গল ও উন্নতির প্রয়োজনে নিজেদের শাসন পরিচালনার জন্যে যে সংস্থার সৃষ্টি করে তাই হ’ল রাষ্ট্র৷ এই সংস্থা খুবই শক্তিশালী কারণ দেশের সার্বভৌম ক্ষমতা তারই হাতে ন্যস্ত৷

ভাষার ক্ষেত্রে অবদমন চলবে না

ভাষা মানুষের অন্তরের ভাব প্রকাশের এক শক্তিশালী মাধ্যম৷ এই ভাষা মানুষের প্রাণীন সম্পদ–যা তার প্রাণধর্ম অর্থাৎ সত্তাগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কিত৷ নিজস্ব মাতৃভাষায় একজন যেমন স্বচ্ছন্দে ও সাবলীল ভাবে নিজের ভাবকে প্রকাশ করতে পারে তেমনটি অন্য কোন ভাষায় পারে না৷ মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলতে সে অসুবিধা বোধ করে৷ প্রতিনিয়তই যদি অন্য ভাষায় কথা বলিয়ে এরূপ অস্বচ্ছন্দ বোধ করতে তাকে বাধ্য করান হয়, তবে তার প্রাণশক্তি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে–ক্রমশ প্রাণশক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে৷ এই রকম পরিস্থিতিতে সেই ব্যষ্টি বা ব্যষ্টি সমূহের মধ্যে এক মনস্তাত্ত্বিক সংকট দেখা দেবে৷ প্রথমেই তার মধ্যে দেখা দেবে এক ধরণের হীন

সুভাষচন্দ্রের ‘কৌলালিক’ ভূমিকা

(পরমশ্রদ্ধেয় শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর ‘শব্দ চয়নিকা’ (জ্ঞানকোষ) গ্রন্থে ‘কুলাল’ শব্দ ও তার বিভিন্ন অর্থ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুর ‘কৌলালিক’ ভূমিকা সম্পর্কে যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তা তুলে দেওয়া হ’ল৷)

চারটি সামূহিক মনস্তত্ত্ব

শূদ্র–মনস্তত্ত্ব

ব্যষ্টি মানসের তর৷ যেখানে জড়ের তরে৷র সে৷ তাল রেখে চলবার চেষ্টা করছে, কিন্তু তাকে আত্মসাৎ করবার চেষ্টা করছে না, সে ক্ষেত্রে তার এই তাল রেখে চলবার প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যষ্টি–মানসকেও জড়–ভাবাত্মক করে’ দেয়৷ জড়–ভাবের ভাবুক এই ব্যষ্টি–মানস–স্বভাবতঃই যাতে তমোগুণী অন্ধকার বেশী, তাকেই বলি শূদ্র৷ এদের দ্বারা কোনো কিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, কারণ স্থূলতম তর৷ জড়তর৷ই এদি’কে নিয়ন্ত্রণ করে৷

ক্ষাত্র–মনস্তত্ত্ব

শিল্পে সমবায়

বিশ্বের কোন জীবকেই আমরা উপেক্ষা করতে পারি না৷ বিশ্বের এক অংশের শিল্পোন্নয়ন অন্য অংশের দারিদ্র্য বা বেকারীকে ভালভাবে দূর করতে পারে না৷ তাই শিল্প–ব্যবস্থা যতদূর সম্ভব বিকেন্দ্রীকরণ নীতি অনুযায়ীই করা উচিত৷

শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ ঃ কোন একটি দেশ বা জেলা যদি অত্যধিক শিল্পোন্নত হয়, তাতে অপরাপর অংশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোন রকম সুবিধা হয় না৷ তাই শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ দরকার৷ কিন্তু মূল শিল্প থাকবে কেন্দ্রীকৃত৷ উদাহরণস্বরূপ, সুতাকল শিল্প হবে কেন্দ্রীকৃত–যাকে কেন্দ্র করে’ বিকেন্দ্রীকরণ পদ্ধতিতে গড়ে’ উঠবে বস্ত্রবয়ন শিল্প৷

পশ্চাৎপদ শ্রেণীর উন্নয়ন

বিশ্বের বিভিন্ন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করা আমাদের আশু কর্ত্তব্য৷ যেহেতু বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন সামাজিক–অনৈতিক ব্যবস্থাগুলি পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন পূর্ত্তির প্রতি ও সামগ্রিকভাবে সমাজের উন্নতির প্রতি নজর না দিয়ে সমাজের এক বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে’ চলেছে, সেইজন্যেই পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক অবদমনের শিকার হচ্ছে৷

যোগাযোগের প্রাথমিক মাধ্যম হিসাবে স্থানীয় ভাষার ব্যবহার বাঞ্ছনীয়

কোন অঞ্চলের সরকারী বা বেসরকারী সংস্থা ও অফিসগুলিতে স্থানীয় ভাষাকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে ভাষা মানুষের অন্তরের ভাব প্রকাশের এক শক্তিশালী মাধ্যম৷ এই ভাষা মানুষের প্রাণীন সম্পদ–যা তার প্রাণধর্ম, অর্থাৎ সত্তাগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কিত৷ নিজস্ব মাতৃভাষায় একজন যেমন স্বচ্ছন্দে ও সাবলীলভাবে নিজের ভাবকে প্রকাশ করতে পারে, তেমনটি অন্য কোন ভাষায় পারে না৷ মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলতে সে অসুবিধা বোধ করে৷ প্রতিনিয়তই যদি অন্য ভাষায় কথা বলিয়ে এরূপ অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে তাকে বাধ্য করান হয়, তবে তার প্রাণশক্তি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে–ক্রমশ প্রাণশক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে৷ এই রকম পরিস্থিতিত

পৃথিবীর চারটি মৌলিক জনগোষ্ঠী

পৃথিবীতে মৌলিক জনগোষ্ঠী আছে চারটি–ককেশীয়, মঙ্গোলীয়, অষ্ট্রিক ও নিগ্রো৷ অনেকে অবশ্য সেমিটিক জনগোষ্ঠীকে এর মধ্যে ফেলতে চান না৷ তাদের মতে সেমেটিকরা আলাদা জনগোষ্টী, এরা মধ্যপ্রাচ্যের লোক৷ আবার কারো কারো মতে এরা ককেশীয় ও নিগ্রোদের বিমিশ্রণ৷ ককেশীয়দের তিনটি শাখা রয়েছে–(১) নর্ডিক (ত্ত্বপ্সব্জস্তুন্ন্তু), (২) এ্যালপাইন (ট্টপ্তহ্মনুন্দ্ব), (৩) ভূমধ্যসাগরীয়৷ ‘নর্ডিক’ কথাটার অর্থ হচ্ছে ‘উত্তুরে’৷ লাতিন ‘নর্ড’ (ত্ত্বপ্সব্জস্তু) কথাটা থেকে ‘নর্ডিক’ শব্দটি এসেছে৷ এ্যালপাইনরা বেশী উত্তরেও নয়, আবার বেশী দক্ষিণেও নয় অর্থাৎ এরা মধ্যদেশীয়, আল্প্স্ পর্বতের সানুদেশের বাসিন্দা৷

প্রাউটের অর্থনীতি–ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

বিকেন্দ্রিত সামাজিক–অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অতি সহজেই কৃষি ও শিল্পের আধুনিকীকরণ করা যায় ও তার উৎপাদিত দ্রব্যের বাজারও সহজে পাওয়া যায়৷ এইভাবে যদি সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলি আপন আপন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিকাশ ঘটায় তাহলে বিভিন্ন অঞ্চলের মাথা পিছু আয়–বৈষম্য হ্রাস পাবে ও অনুন্নত অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে তাকে উন্নত অর্থনৈতিক অঞ্চলের সমপর্যায়ে আনা যাবে৷ প্রত্যেকেই অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ ভোগ করবে৷ যখন প্রত্যেকটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা আসবে তখন সমস্ত দেশই অতি দ্রুত অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করবে৷

প্রাউটের অর্থনীতি–ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

বিকেন্দ্রিত সামাজিক–অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অতি সহজেই কৃষি ও শিল্পের আধুনিকীকরণ করা যায় ও তার উৎপাদিত দ্রব্যের বাজারও সহজে পাওয়া যায়৷ এইভাবে যদি সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলি আপন আপন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিকাশ ঘটায় তাহলে বিভিন্ন অঞ্চলের মাথা পিছু আয়–বৈষম্য হ্রাস পাবে ও অনুন্নত অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে তাকে উন্নত অর্থনৈতিক অঞ্চলের সমপর্যায়ে আনা যাবে৷ প্রত্যেকেই অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ ভোগ করবে৷ যখন প্রত্যেকটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা আসবে তখন সমস্ত দেশই অতি দ্রুত অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করবে৷

বাঙলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন (দুই)

আজকাল অনেক জায়গাতেই গভীর নলকূপের সাহায্যে জল তুলে চাষ করা হয়, এটা বিজ্ঞান সম্মত নয়, কারণ যত পরিমাণ জল তোলা হয়, তত পরিমাণ জল ওই গভীরতায় ফিরে যেতে পারে না৷ রোদের তাপে অনেকটা বাষ্প হয়ে যায়, আর কিছুটা গাছপালারা টেনে নেয়৷ এর ফলে জল–তল হু হু করে নেবে যায়৷ মালদা, নদীয়া ও অন্যান্য জেলায় যেভাবে গভীর নলকূপ ব্যবহার করা হচ্ছে তা যদি বন্ধ না করা হয় তাহলে জল–তল এত নেবে যাবে যে ভবিষ্যতে সেচের জলের অভাবে সমস্ত ফসল ও গাছপালা মরে যাবে৷ চাষীদের এই সমস্যা সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে৷ নদীর জলকে সেচের কাজে লাগানোটাই সর্বোত্তম উপায়৷৪৭

বাঙলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন

বাঙালী নামধেয় জনগোষ্ঠী হঠাৎ জেগে ওঠা, নোতুন একটা বাউন্ডারী পাওয়া রাষ্ট্রকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠী নয়৷ এর রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভাঙ্গাগড়া অনেকবার হয়েছে, কিন্তু জনগোষ্ঠীটা অনেকদিনের৷ বর্তমান বাঙালী নামধেয় জনগোষ্ঠীর বয়স তিন হাজার বছরের চেয়ে বেশী৷

সমবায়ই একমাত্র সমাধান

সমবায় সম্পর্কে অনেকের মনে প্রশ্ণ জাগতে পারে৷ কারণ আজ বেশীর ভাগ দেশেই সমবায় অসফল হয়েছে৷ এই উদাহরণের ওপর ভিত্তি করে’ সমবায়কে দোষারোপ করা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হবে না৷ কারণ সমবায়ের সাফল্যের যে অপরিহার্য তত্ত্ব তা বেশীর ভাগ দেশ সৃষ্টি করতে পারেনি৷ সমবায়ের সাফল্য নির্ভর করে মূলতঃ তিনটি তত্ত্বের ওপর–নীতিবাদ, কড়া তত্ত্বাবধান ত্রব্ভহ্মন্দ্বব্জ্লন্ব্দ্ ও জনগণের হদয় দিয়ে সমবায়কে গ্রহণ৷ এ তিন তত্ত্বের মধ্যে যেখানে যতটুকু রয়েছে সেখানে সমবায় ততটুকুই সাফল্য অর্জন করেছে৷ যেমন, ইজরায়েল চতুর্দিকে শত্রু বেষ্টিত হবার জন্যে ওখানকার জনগণের মধ্যে এক স্বয়ং–নির্ভরশীলতা চেতনা গড়ে’ উঠেছে–কারণ জনগণ মন–প্রাণ দিয়ে তাদের অ

শোষণের ছলা–কলা

শিরোনামে লিখিত বিষয়ের ওপর প্রাউট প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর বিভিন্ন পুস্তকে যা বলেছেন, সেগুলিকে সংকলিত করে’ তুলে ধরেছেন বিশিষ্ট প্রাউটিষ্ট আচার্য ত্র্যম্বকেশ্বরানন্দ অবধূত৷

বুদ্ধির অপব্যবহার করে’ শোষণ নানা যুগে নানা ভাবে হয়েছে৷ বর্তমান যুগে কীভাবে হচ্ছে তার কয়েকটা চিত্র এঁকেছেন দার্শনিক শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার৷

মানবিক মৌলনীতি

মানবিক মৌল সিদ্ধান্ত বা Human cardinal principle  হ’ল  a silver lining between the psycho-spiritual and spiritual strata of human existence ৷ আধ্যাত্মিক স্তর ও মানসাধ্যাত্মিক স্তর–এ দু’য়ের যে মিলনক্ষেত্র তাকেই বলি মৌল মানবিক স্তর৷ মানুষের অস্তিত্ব ত্রিমুখী, ত্রিধারা সমন্বিত–দৈহিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক৷ এই ত্রিমুখী অস্তিত্বের মধ্যে দৈহিক ক্ষেত্রের সীমা অনেকে পেরিয়ে উঠতে পারে না৷ স্থূল ভোগই তাদের একমাত্র ধ্যেয় হয়ে পড়ে৷ তাদের বলব দানব বা পশুশ্রেণীভুক্ত৷ নিজেদের জৈব বৃত্তির তাড়নায় তারা সর্বদা প্রেষিত হয়৷ জীবনের সূক্ষ্ম অনুভূতি, সূক্ষ্ম অভিব্যক্তি, সুস্থ অনুশীলন তাদের নাগালের বাইরে৷ তারা জানে শুধ

ত্রিপুরার অর্থনৈতিক উন্নয়ন

সভ্যতার ঊষালগ্ণ থেকেই ত্রিপুরা ৰাঙলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ প্রাচীনত্বের দিক থেকে রাঢ়ের পরেই এর স্থান৷ গণ্ডোয়ানাল্যাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত একই মাটি, একই জল, একই মানুষ, ও একই ভাষা নিয়ে ৰাঙালীরা এখানে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই বসবাস করে আসছেন৷ পাঁচশ বছর আগেও ত্রিপুরার নাম ছিল ‘শ্রীভূম’৷ ত্রিপুরা নাম খুব বেশী দিনের পুরনো নয়৷  বর্তমান ত্রিপুরা, নোয়াখালী, পার্বত্য ত্রিপুরা, কাছাড়, মণিপুর, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ও আরাকান রাজ্যের কিয়দংশ নিয়ে ছিল ‘শ্রীভূম’৷ ভারতীয় প্রাচীন  নথিপত্রে শ্রীভূমকে ‘উপৰঙ্গ’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে৷ শ্রীভূম বা উপৰঙ্গের আদিম অধিবাসী সবই ৰাঙালী৷ ব্যতিক্রম শুধু টিপ্রা–রা৷ প্রায় সাড়

ৰৃহত্তর ৰাঙলা

প্রায় ৫০০০ বছর আগে অষ্ট্রিক, মে৷ালিয়ন আর নিগ্রো রক্তের সংমিশ্রণ–জাত ৰাঙালী জনসমুদায় সৃষ্টি হয়েছিল৷ সেই সময় ৰাঙলার ভাষা ছিল সংসৃক্ত, তাই ক্ষাংলাভাষারও পথনির্দেশক ভাষা হচ্ছে সংসৃক্ত৷ প্রায় ১২০০ বছর আগে ক্ষাংলাভাষার এক রূপান্তরণ হয়েছিল৷ সেই সময় ৰাঙলা বলতে বোঝাত বর্তমানের পশ্চিমব৷, নেপালের ঝাপা জেলা, বিহারের পূর্বাংশ, সম্পূর্ণ ৰাঙলাদেশ আর বর্মা, মেঘালয়ের সমতল অংশ, প্রাগজ্যোতিষপুরের কিছু অংশ আর অসমের বরপেটা, কামরূপ ও নগাঁও৷ ক্ষৃহত্তর ৰাঙলার এই ছিল এলাকা৷ আজ ৰাঙালী বলতে ক্ষোঝায় দুই প্রকারের অভিব্যক্তি– ভারতীয় ৰাঙালী আর ৰাঙলাদেশী ৰাঙালী ৷ এই দু’য়ের মধ্যে একটা সংহতিকরণ বা মিশ্রণ অবশ্যই হওয়া উচিত৷

নব্যমানবতাবাদের ৩ সোপান

মানুষ চলতে শুরু করেছে যখন, নিজের কথাটা যতটা ভেবেছে, অন্যের কথাটা ততটা ভাবেনি৷ অন্য মানুষের কথাও ভাবেনি, আর মনুষ্যেতর জীব জন্তুর কথাও ভাবেনি,গাছপালার কথাও ভাবেনি৷ অথচ একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলে দেখা যাবে যে, নিজের কাছে নিজের অস্তিত্ব যতটা প্রিয়, প্রত্যেকের কাছে তাদের নিজের নিজের অস্তিত্ব ততটাই প্রিয়৷ আর সব জীবের এই নিজ অস্তিত্বপ্রিয়তাকে যথাযোগ্য মূল্য না দিলে সামগ্রিক ভাবে মানবিকতার বিকাশ অসম্ভব৷ মানুষ যদি ব্যষ্টি বা পরিবার,জাত বা গোষ্ঠীর কথা ভাবলো, সামগ্রিক ভাবে মানুষের কথা না ভাবলো–সেটা অবশ্যই ক্ষতিকর৷ কিন্তু মানুষ যদি সামগ্রিকভাবে জীবজগৎ, উদ্ভিদ জগতের কথা না ভাবলো সেটা কি ক্ষতিকর নয় মানবিকতা

স্থানীয় জনসাধারণের সার্বিক কর্মসংস্থান 

প্রথমেই কোন এলাকায় স্থানীয় জনসাধারণের শতকরা একশ’ ভাগের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকা উচিত৷ সমস্ত মানুষের নূ্যনতম চাহিদা, অর্থাৎ অন্ততপক্ষে উপযুক্ত খাদ্য, বস্ত্র, আবাস, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত হওয়া উচিত৷ জনগণের ১০০ শতাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার মাধ্যমেই তাদের এই মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে–দান–খয়রাতির মাধ্যমে নয়৷ আজকের দুনিয়ায় বেকারত্ব এক জটিল সমস্যা আর স্থানীয় মানুষের ১০০ শতাংশের কর্মসংস্থানের নীতিই এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ৷ স্থানীয় জনসাধারণের শতকরা একশ’ ভাগের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রাউট স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় বিশ্বাসী৷ স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা

সর্বাধিক শিল্প–বিকাশ

প্রাউট অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাসী৷ তাই একস্থানের উন্নতি না করে’ সর্বত্র যাতে সমানভাবে প্রগতি হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে স্থানীয় সম্পদ ও শক্তি সামর্থ্যকে প্রথমে নিয়োগ করার পরিকল্পনা নিতে হবে৷ স্থানীয় এলাকায় কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতা, ও ওই এলাকার মানুষদের ভোগ্যপণ্যের প্রয়োজন অনুসারে সর্বাধিক শিল্প বিকাশ প্রয়োজন৷ এই নীতি বহিরাগতদের হাত থেকে অর্থনৈতিক ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের হাতে তুলে দেবে৷ এইভাবে ওই সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রভূত বিকাশ সম্ভব হবে৷ প্রাউটের অর্থনীতি অনুসারে কৃষির মত অধিকাংশ শিল্পই উৎপাদক–সমবায় ও উপভোক্তা–সমবায়ের দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত

রাজনীতি–সচেতন মধ্যবিত্ত, ছাত্র–যুব ও সাধারণ মানুষই বিপ্লব আনবে

আজ জীবনের সকল বেত্রেই নীতিহীনতার এক কালো ছায়া দ্রুত ঘনিয়ে আসছে ও তা মানুষের প্রগতির পথে দারুণ অন্তরায় সৃষ্টি করে চলেছে৷ নীতিহীনতার এই আবর্জনা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে চাই প্রচণ্ড শক্তিশালী নৈতিক বল৷ এই দুর্দান্ত নৈতিক বল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোন সরকারের কাছ থেকে আশা করা যায় না৷ এটা আমরা আশা করতে পারি অরাজনৈতিক পক্ষ থেকে৷ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোন দল বা নেতাদের খামখেয়ালী কাজকর্মকে বাধা দেওয়ার মতো নৈতিক বলের যদি সমাজে অভাব দেখা দেয়, তাহলে যে কোন সরকার–তা সে ফ্যাসীবাদী, সাম্রাজ্যবাদী, সাধারণতন্ত্রী, একনায়কতন্ত্রী, আমলাতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক, যাই হোক না কেন–সে সরকার অত্যাচারী হতে বাধ্য৷ সরকারের নী

পরিকল্পনার মৌল নীতি

 

যাঁরা বিভিন্ন স্তরে যোজনা পর্ষদের সঙ্গে সংযুক্ত সেই ধরণের বড় বড় অর্থনীতিবিদদের কোন পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে যে কয়েকটি বিষয়ের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত সেগুলি হ’ল–

* উৎপাদনের ব্যয়

* উৎপাদন–ক্ষমতা

* ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা

* সামূহিক প্রয়োজনীয়তা৷

এবার উপরি–উক্ত বিষয়গুলির প্রত্যেকটিকে নিয়ে আলোচনা করা যাক৷

উৎপাদন–ব্যয়

প্রাউট–প্রবক্তার ভাষায় প্রদমন, অবদমন ও দমন

কম্যুনিষ্ট রাষ্ট্রগুলিতে তোমরা প্রদমন, অবদমন ও দমনের একটা ত্রিভুজ পুরোপুরি কার্যকরী দেখতে পাবে৷ এই তিনটি ত্রুটির ওপর কম্যুনিজম আধারিত৷ কিন্তু এই তিনটি ত্রুটির মধ্যে সব চাইতে বেশি ঘটেছে দমন, তারপর ঘটেছে অবদমন ও সব চাইতে কম ঘটেছে প্র

অর্থনৈতিক মন্দা প্রসঙ্গে

শোষণ যখন চরম বিন্দুতে গিয়ে পৌঁছায়, সমাজের গতিশীলতা ও গতিবেগও তখন প্রায় শূন্যাঙ্কে পৌঁছে যায়৷ এমন পরিস্থিতিতে, শোষণের সেই চরমাবস্থায় সমাজের বুকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়৷ ভৌতিক জগতের ক্ষেত্রে এই বিস্ফোরণটা হয় জড়াত্মক, আর মানসিক অধিক্ষেত্রে বিস্ফোরণটা হয় মানসিক বা ভাবাত্মক৷ এ ভাবেই অবস্থাভেদে বিস্ফোরণগুলি ঘটে চলে৷ এই যে মন্দা এটা আসলে সমাজের বুকে শোষণ বা দমন–প্রদমন–ব ফলশ্রুতি৷ সমাজতান্ত্রিক দেশ বা পুঁজিবাদী দেশ উভয় রাষ্ট্রেরই অর্থনৈতিক পরিভূতে মন্দা আসতে বাধ্য–কারণ উভয় দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যেই অন্তর্নিহিত রয়েছে এক গভীর জড়তা৷

ভাবজড়তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম

ধর্মমতের উপর ভিত্তি ক’রে তৈরী হয়েছে পাপ–পুণ্যের খসড়া, তৈরী হয়েছে বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন দণ্ডসংহিতা ও শাস্ত্র৷ নিজেদের কায়েমী স্বার্থের দুরভিসন্ধিতে সেই সব শাস্ত্রকে অপৌরুষেয় বলে প্রচার করা হয়েছে৷ তাই মানুষের থেকে তথাকথিত শাস্ত্র বর্ণিত দেববাণীর দাম অনেক বেশী৷ মানুষ সেই বাণীর, সেই ব্যবস্থার অবমাননা বা বিরুদ্ধাচরণ করলে তাকে পেতে হবে কঠোর শাস্তি৷ বিজাতীয় মানুষকে স্পর্শ করা মহাপাপ৷ সমাজ থেকে তাকে হ’তে হবে বিতাড়িত সেই পাপের জন্যে৷ শাস্ত্রমতে হয়তো প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে, সে প্রায়শ্চিত্ত কখনও কখনও তার প্রাণহানিরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ কেউ যদি এই কঠোর শাস্তি থেকে একটু শৈথিল্য প্রার্থনা করে, সমাজগুরুরা তা

প্রাউট প্রসঙ্গে প্রবচন (২) - শ্রমিক সমস্যা

পৃথিবীর সর্বত্রই শ্রমিক সমস্যা এক দুরারোগ্য ব্যাধির আকার ধারণ করেছে৷ প্রাচীন কালে বোনাস বলে কিছু ছিল না৷ কিন্তু ক্ষৃহৎ শিল্প দয়া করে কিছু বোনাস দিত৷ কিন্তু বর্তমানে বোনাস পাওয়া শ্রমিকদের একটা অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে৷ লক্ষ্যণীয় এই যে, যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে বেশীর ভাগ জায়গায় সেই দল শ্রমিক আন্দোলন দাবিয়ে রাখে, আর যখন ক্ষমতায় থাকে না, তখন শ্রমিক আন্দোলন সমর্থন করে৷ উদাহরণস্বরূপ কমিউনিষ্ট পার্টি ভারতের স্ট্রাইক সমর্থন করে, আর (তৎকালীন) সোভিয়েত রাশিয়ায় তা দাবিয়ে রাখতো৷

প্রাউট প্রসঙ্গে প্রবচন (১)

জ্ঞান দুই ধরনের –– ৰুদ্ধি সঞ্জাত জ্ঞান ও ঐশ্বরীয় অনুভূতি সঞ্জাত জ্ঞান৷ ক্ষৌদ্ধিক জ্ঞান যেহেতু অভিজ্ঞতা সঞ্জাত সেহেতু তা আপেক্ষিকতার দোষে দুষ্ট৷ সেইজন্যেই ক্ষৌদ্ধিক জ্ঞানকে চরম জ্ঞানের দাবীদার বলা চলে না৷ ঐশ্বরীয় অনুভূতি সঞ্জাত জ্ঞানই চেতনাসম্পৃক্ত৷ এই জ্ঞানই সমস্ত কিছুকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে সমর্থ –– তাই ঐশ্বরীয় অনুভূতি সঞ্জাত জ্ঞানই চরমজ্ঞান৷

গোর্খাল্যাণ্ড আন্দোলন প্রসঙ্গে

গোর্খাল্যাণ্ড আন্দোলন যা পশ্চিমৰঙ্গের উত্তরাংশের কয়েকটি জেলা দাবী করছে, তা আজ  এক চরম অবস্থায় পৌঁছেছে৷ গোর্খা, যারা রাজ্যের বাইরে থেকে এসেছে, তারা ভারতের নাগরিকত্বের সুযোগ নিয়ে এখন একটি পৃথক রাজ্য দাবী করছে৷

সামাজিক–অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ

সভ্যতার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনে জেগেছিল শিল্প সৃষ্টির এষণা ও প্রেষণা৷ এষণাই প্রেষণাকে ডেকে আনে৷ সভ্যতার প্রথম ধাপে শিল্পমাত্রই ছিল কুটির শিল্প৷ নারী–পুরুষ–বালক–ব্ নির্বিশেষে সবাই শিল্প রচনায় হাত লাগাত৷ পরে দেখা গেল কিছু  শিল্প গ্রামে গ্রামে করা যায় না.....করতে হয় কিছু সংখ্যক গ্রাম নিয়ে৷ তা না হলে তাদের একদিকে যেমন বাজারের ঘাটতি পড়ে, অন্যদিকে তেমনি শিল্পীর সংখ্যাতেও অভাব দেখা দেয়৷ তখন মানুষ প্রথম শিল্পায়োগ বা কারখানায়* যেতে শুরু করল৷ এখানে প্রসঙ্গতঃ একটা কথা বলে’ রাখি৷ শিল্প যত বেশী কুটীর–শিল্প হয়, শিল্প যত বিকেন্দ্রীকৃত হয়, মানুষের সুবিধা তত বেশী৷ এতে যে শুধু আর্থিক সামর্থ্যকে চারি

দেশপ্রেমিকের প্রতি

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

কিন্তু নেতারা কি তা করতে পারবে বা করতে চাইবে? যদি তারা এমনটি করতে পারে তাহলে খুব ভাল৷  তবে বর্তমানে অধিকাংশ নেতাই মুখে যত বড় লম্বা-চওড়া বুলি বলুক না কেন, আসলে তারা পঁুজিবাদী অথবা জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে পঁুজিবাদেরই দালালি করে চলেছে৷ জনসাধারণ ক্রমশই ঃ তাদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে৷ যাই হোক, বর্তমান নেতারা শোষণ বিরোধী সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে---  এ ধরণের ভরসা আমরা ঠিক করে উঠতে পারছি না৷ তারা এই মজবুত সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে একতাবদ্ধ করবার চেষ্টা করবে না৷

রাষ্ট্র ভাষা

রাষ্ট্র ভাষার মত একটা বিতর্কমূলক বিষয়ের অবতারণা করা খুবই হঠকারিতার কাজ হয়েছে এতে রাষ্ট্রীয় ঐক্য তো বাড়েই নি, বরং তার বৈপরীত্যে অনৈক্যের মাত্রা বহুলাংশে বেড়ে গেছে৷

কেউ কেউ আবার সমগ্র ভারতবর্ষের জন্যে একটি লিপি প্রবর্তনের কথা ভাবছেন৷ এটা কি আদৌ বৈবহারিক বা বাঞ্ছনীয়? সমগ্র পাকিস্তানে উর্দুলিপি প্রবর্তনের পরিণাম কি তারা ভূলে গেছেন? (পাকিস্তানের ন্যাশানাল সেন্টিমেন্ট তবু তো ভারতের চেয়ে ঢের বেশী মজবুত ছিল)৷ যে ভারতবর্ষে রাষ্ট্রীয়তাবাদ একটি নির্দিষ্ট রূপই পরিগ্রহ করেনি সেই ভারতবর্ষ সম্বন্ধে কী-ই বা বলা যায়!

দেশপ্রেমিকের প্রতি

ব্রিটিশি-বিরোধী সেন্টিমেন্টের ফলে ঊনবিংশ শতাব্দীতে যখন প্রথম ভারতীয় নেশন গড়ে উঠল, ভারতবর্ষের নেতাদের উচিত ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রাম না করে অর্থনৈতিক সংগ্রাম করা। অর্থনৈতিক সংগ্রামে হিন্দু-মসলমান-পাঞ্জাবী-মারাঠি ভেদ না থাকায় সকল ভারতবাসীই একযোগে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে পারত ও সেই সংগ্রামের ফলে সারা ভারতবর্ষে দেখা দিত একটা শোষণ বিরোধী সেন্টিমেন্ট। সেই সেন্টিমেন্ট ভারতবাসীকে নেশন হিসাবে আরও মজবুত করে গড়ে তুলতে পারত। সংগ্রাম রাজনৈতিক স্বাধীনতায় না হওয়ায় ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে হিন্দুদের প্রজা হিসেবে আমাদের থাকতে হবে---মুসলমানদের মনে এরূপ হিন্দু-আতঙ্ক বা হিন্দু-ফোবিয়া উৎপন্ন হবার কোনো সুযোগ

দেশপ্রেমিকের প্রতি

নেশনশব্দের অর্থ প্রকৃত ব্যাখ্যা কী--- এ নিয়ে মতভেদের অন্ত নেই৷ কেউ বলেন,মানবগোষ্ঠী একই রাষ্ট্রের বাসিন্দা তারাই একটা নেশন৷ অবশ্য রাষ্ট্র বা দেশকে সমার্থক ধরলেও নেশন

ব্লক ভিত্তিক পরিকল্পনা

প্রাউটের যে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা মেসিনারি, তা মুখ্যতঃ কাজ করবে কেন্দ্রীয় স্তরে, রাজ্য স্তরে, জেলা স্তরে ও ব্লক স্তরে (অবশ্য ওয়ার্লড গব্ণমেন্ট প্রতিষ্ঠার পরে গ্লোব্যাল স্তরেও এই পরিকল্পনা মেসিনারী কাজ করবে)৷ ব্লক স্তরে যে পরিকল্পনা মেসিনারি কাজ করবে, প্রাউটের অর্থনীতিতে তাই হবে সর্বনিম্ন পরিকল্পনা সংস্থা৷ অর্থনৈতিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের জন্যে পরিকল্পনাকে নীচের থেকে ওপরের দিকে নিয়ে যেতে হবে৷ সেটাই হচ্ছে নীতি৷ অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে হতে হবে ব্লক ভিত্তিক৷

দুনিয়ার মানুষ এক হও

মানুষের ক্ষুধা  অনন্ত৷ এই অনন্ত ক্ষুধাকে সে যদি জাগতিক ভোগ্য বস্তুর দিকে ছুটিয়ে দেয় তাহলে মানুষে-মানুষে সংঘর্ষ বাধবেই৷ কারণ জাগতিক সম্পদ সীমিত৷ একজনের প্রাচুর্য ঘটলে অন্যের অভাব দেখা দেবে৷ মানুষের এই ক্ষুধা মানস তথা অধ্যাত্ম সম্পদেই মেটাতেই হবে৷ ব্রহ্ম অকৃপণভাবে অনন্ত মানস তথা অধ্যাত্ম সম্পদ মানুষের সামনে সাজিয়ে রেখেছেন৷ মানুষকে

বিশ্বসমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ

প্রকৃত অধ্যাত্মদর্শনই বিশ্বসমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ৷ সে বিচারে আনন্দমার্গের আদর্শকে লতে পারি স্পর্শমণি৷ কবি কল্পনার স্পর্শমণি যেমন স কিছুকেই সোণায় পরিণত করে দেয় আনন্দমার্গের দর্শনও ঠিক তেমনি যে সমস্যার ওপরেই প্রয়োগ করা হোক না কেন ন্যায়-ধর্মসম্মত সদুত্তর সে অবশ্যই বের করে দেয়৷

ক্রান্তি ও বিক্রান্তি

সকল গতিই সঙ্কোচ-বিকাশী৷ শক্তি সম্প্রয়োগের দ্বারা সঙ্কোচকে আরো সঙ্কুচিত করে দিলে পরবর্তী বিকাশে উল্লম্ফন দেখা দেয়৷ এই উল্লম্ফিত বিকাশের ফলে সৃষ্ট ক্রান্তিকে বিপ্লব লাই সঙ্গত৷ ঠিক তেমনি শক্তি সম্প্রয়োগের দ্বারা বিকাশকে দীর্ঘায়িত করে দিলে পরবর্তী সঙ্কোচে অধিক পরিমাণ ঝিমুনি দেখা দেয়৷

সমাজচক্র

সমাজচক্র ঘুরে চলেছে৷ শূদ্র যুগের পরে এসেছে সর্দারদের যুগ অর্থাৎ ক্ষাত্র যুগ, তারপরে বিপ্রযুগ, তারপর বৈশ্য যুগ আর তারপর শূদ্র বিপ্লবের পরে চক্রের দ্বিতীয় পরিক্রান্তিতে আসে নূতন ক্ষাত্র যুগ---যে ক্ষত্রিয়রা শূদ্র বিপ্লবে নেতৃত্ব করেছিল তাদের যুগ৷ চক্র এইভাবেই ঘুরে চলবে৷ নিছক আদর্শবাদ প্রচার করে এর ঘোরা থামানো যাবে না৷ একটি যুগের পর অপর যুগটি ক্রমবিন্যস্ত হয়ে রয়েছে৷ একটি যুগের গমনের পরে অন্যের আগমনের নাম দিতে পারি ক্রান্তি৷ একটির শেষ অন্যটির শুরু এই যুগসন্ধির অবস্থাকে লতে পারি যুগসংক্রান্তি৷ শূদ্র-অভ্যুত্থানের পর থেকে পরবর্তী শূদ্র-অভ্যুত্থান পর্যন্ত চক্রের সম্পূর্ণ পরিক্রমণের নাম দিতে পারি পরি

বাঙলার নববর্ষ

আমরা  পৃথিবীর–পৃথিবী আমাদের দেশ৷ আরও ভালভাবে বলতে গেলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডই আমাদের দেশ৷ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এক কোণে পৃথিবী নামে যে ছোটো গ্রহটা আছে–সেই পৃথিবীর এক কোণে বাঙালী নামে যে জনগোষ্ঠী আছে সেই জনগোষ্ঠীও অতীতের অন্ধকার থেকে এগোতে এগোতে, তার অন্ধকারের নিশা শেষ হয়ে গেছে, তার জীবনে নোতুন সূর্যোদয় এসেছে৷ এবার তাকে এগিয়ে চলতে হবে৷ চলার পথে বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই৷ কমা, কোলন, সেমিকোলনের কোনো যতি চিহ্ণ নেই৷ তাকে এগিয়ে চলতে হবে৷ এগিয়ে সে চলেছে, চলবে৷ চলটাই তার জীবন–ধর্ম, অস্তিত্বের প্রমাণ, অস্তিত্বের প্রতিভূ হ’ল চলা৷ কেউ যদি চলতে চলতে থেমে যায়, বুঝতে হবে সে জীবনের ধর্মকে খুইয়ে বসেছে৷ সব কিছুই চলছে

শিক্ষা-ব্যবস্থা ও দলীয় রাজনীতি

দলীয় রাজনীতির হাত থেকে শিক্ষা-ব্যবস্থাকে সযত্নে মুক্ত রাখা দরকার৷ শিক্ষা-ব্যবস্থার আর্থিক দায়িত্ব রাষ্ট্রের কিন্তু পঠন-পাঠন,পাঠরীতি তথা পাঠ্য-নির্বাচনের একচ্ছত্র অধিকার শিক্ষাব্রতীদেরই থাকা উচিত৷ রাষ্ট্র এই শিক্ষাব্রতীগণকে বা শ্বিবিদ্যালয়কে পরামর্শ দিতে পারে---হুকুম করতে পারে না, কোনো প্রস্তাব বিচার-বিবেচনার

পুলিশ-মিলিটারীর প্রয়োজনীয়তা

বিদ্যা-অবিদ্যার সংগ্রাম চিরকালই চলৰে৷ সুতরাং কম-ৰেশী পুলিশ-মিলিটারীর প্রয়োজন চিরদিনই থাকৰে৷ তবে হ্যাঁ, বিশ্বরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে সে প্রয়োজন কমে যাৰে৷ বিদ্যা-অবিদ্যার সংগ্রাম থাকায় শ্রেণী-সংঘাত কম-ৰেশী চিরকালই চলৰে৷ তাই শ্রেণীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে হাত-পা ছড়িয়ে নাক ডাকিয়ে আয়েসের সঙ্গে ঘুমোৰে---এ ধরণের কল্পনা যারা করে থাকেন, তাঁ

দলীয় রাজনীতি

মানবীয় ঐক্যকে  যারা বাধা  দিচ্ছে বা বাধা দেবার চেষ্টা করে তাদের মধ্যে দলীয় রাজনীতি অন্যতম l  বস্তুতঃ এই দলীয় রাজনীতি জিনিসটা রোগজীবাণুর চাইতেও ভয়ঙ্কর । এতে ধীরে ধীরে মানব মনের সমস্ত সুকুমারবৃত্তি, সমস্ত সরলতা তথা সেবাপরায়ণতা সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এতে ব্যষ্টির যোগ্যতার চাইতে দলীয় তকমার মর্যাদা শীতে,

গবেষণাগার-শিশু

বিজ্ঞান দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছেএগিয়েই চলেছে,এগিয়ে যাবেও বিজ্ঞানের নিন্দা করে কেউ তার অগ্রগতি রোধ করতে পারবে না যে সে ধরণের চেষ্টা করতে যাবে সে নিজেই পেছিয়ে পড়বে---বর্তমান জগৎ থেকে বাতিল হয়ে যাবে মানুষ৷ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মানুষের আয়ুকে অবশ্যই দীর্ঘায়িত করতে

জন্মনিয়ন্ত্রণ

পৃথিবীর জনসংখ্যা দ্রুত বেড় চলেছে৷ অনেকেই এতে রীতিমত শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন৷ পুঁজিবাদী দেশগুলিতে এজন্যে শঙ্কিত হবার যথেষ্ট কারণও রয়েচে৷ যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মানেই জনগণের অধিকতর দারিদ্র্য৷ কিন্তু সামূহিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হবার কোন কারণ নেই৷ সামগ্রিক জনসংখ্যার আহার্য বা বাসস্থানের টান পড়লে তারা মিলিত প্রচেষ্টায় অনাবাদী অঞ্চলে নূতন শস্যক্ষেত্র গড়ে তুলবে

বিশশ্বৈকতাবাদ

ব্যষ্টিগত জীবনে মানুষের মন যত উদার বা পরিব্যাপ্ত হতে থাকে ততই সে উপজাতীয় মনোভাব, সাম্প্রদায়িকতা, প্রাদেশিকতা প্রভৃতির ঊধের্ব উঠতে থাকে৷ অনেককে বলতে শুণি জাতীয়তাবাদ (nationalism) জিনিসটা বেশ ভাল---তাতে কোনো সংকীর্ণতা নেই৷ কিন্তু কথাটা কি ঠিক?

ক্ষমা

সামগ্রিক দৃষ্টির অভাবই অধিকাংশ অনর্থের মূল সৎ মানুষ দুলের ওপর করে চলেছে অত্যাচার-অবিচার৷ সবল মানব-গোষ্ঠী দুর্বল মানবগোষ্ঠীর ওপর করে চলেছে শোষণ৷ এ অবস্থায় সৎ মানুষ মাত্রেরই কর্তব্য অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা৷ নৈতিক উপদেশ কবে কাজ দেবে তার জন্য অনন্তকাল বসে থাকা চলে না৷ তাই সৎব্যষ্টিগণকেও সংঘবদ্ধ হতে হবে৷ দানবদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্যে প্রস্তুতিও চালিয়ে যেতে হবে৷৷ সামূহিক জীবনের ওপর অথবা কোনো মানব-গোষ্ঠীর ওপর যারা নির্যাতন চালায় তাদের ক্ষমা করা চলে না৷ সে ক্ষেত্রে ক্ষমা শুধু দুর্বলতাই নয়, তাতে অন্যায় প্রশ্রিত হয়---অন্যায়কারী বেপরোয়া হয়ে ওঠে৷ ব্যষ্টিগত জীবনে কোন নির্দোষ ব্যষ্টির ওপর অসা

এজমালী সম্পত্তি

বিশ্ব-হ্মাণ্ডের প্রতিটি অণু-পরমাণুও সকল জীবের এজমালী সম্পত্তি৷ নীতিগতভাবে এটা মেনে নিতেই হবে, আর এ কথাটা স্বীকার করার পরে এদেশী ও বিদেশী, অমুকের অমুক দেশের নাগরিক হবার যোগ্যতা আছে আর অমূকের নেই অথবা রাষ্ট্রীয় অধিকার অমূক সম্প্রদায় এতখানি, তার চাইতে কম পাবে বা পাবেনা---এ ধরণের কথাগুলো আর বলা চলে না৷ বস্তুতঃ এ ধরণের কথায় উৎকটভাবে কায়েমী স্বার্থবাদই ফুটে ওঠে৷ এক দেশের মানুষ ভূমির অভাবে বা খাদ্যের অভাবে ক্লেশ পাক, অন্যদেশে থাকুক প্রচুর পতিত জমি বা প্রচুর খাদ্য---এ অবস্থাটাও এক ধরণের পুঁজিবাদ ছাড়া আর কী!

শান্তি

আজকের বিশ্বে শান্তি শান্তি বলে চোঁচানো একটা রীবাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কিন্তু চেঁচিয়ে কোন কাজের কাজ হবে কি?

পণ-প্রথা

পণ-প্রথা সামাজিক অবিচারের আরেকটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত! মানুষের সমাজ পুস্তকটিতে লেছি এই পণপ্রথার কারণ মুখ্যতঃ দুইটি---একটি অর্থনৈতিক ও আরেকটি নারী-পুরুষের সংখ্যাগত তারতম্য আর্থিক ব্যাপারে নারীর পুরুষনির্ভরশীলতা কমে যাবার সঙ্গে সঙ্গে পণপ্রথার উগ্রতা থাকবে না৷ কিন্তু এই কার্যকে ত্বরান্বিত করবার জন্যে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে উন্নত আদর্শবাদ প্রচারেরও প্রয়োজন রয়েছে৷ আমাদের ছেলেমেয়েরা চাল-ডাল-নুন-তেল বা গোরু-ছাগল নয় যে তাদের নিয়ে হাটে-বাজারে দর কষাকষি চলবে৷

মালিকানা

মানুষের সকল কর্মেই মানবতার স্পর্শ থাকা উচিত৷ কাউকে বঞ্চিত না করার মনোভাব যার আছে সে তাই ন্যায়তঃ ধর্মতঃ সম্পত্তির ব্যষ্টিগত মালিকানা মেনে নিতে পারে না৷ বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক কাঠামোটা কিন্তু মানবিক অধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয়৷ মানবিক অধিকারকে স্বীকার করতে হলে তাই বিপ্লবাত্মক পরিবর্তনের জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে, ও এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাতে হবে ভূসম্পত্তি, শিল্প, বাণিজ্য সব কিছুর সাধারণীকরণ এই বিপ্লবের একটি অতিবৃহৎ অঙ্গ৷ এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীকরণ শব্দটি আমি ইচ্ছা করেই বললুম না জমির মালিক জমিদার নয়, কারখানার মালিক তথাকথিত শিল্পপতিও নয়---একথাগুলো যতখানি সত্য, লাঙ্গল যার জমি তার, হাতুড়ী যার

সমবায়

শিল্প, কৃষি, বাণিজ্য সব কিছুই যতদূর সম্ভব সমবায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই পরিচালিত হওয়া দরকার৷ এজন্যে প্রয়োজন বোধে সমবায় সংস্থাগুলিকে বিশেষ বিশেষ ধরণের সুবিধা দিতে হবে---রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করতে হবে ও ধীরে ধীরে বিশেষ বিশেষ ধরণের কৃষি, শিল্প বা বাণিজ্য ক্ষেত্র থেকে ব্যষ্টিগত মালিকানা বা ব্যষ্টিগত পরিচালনা-ব্যবস্থা রহিত করতে হবে৷

ট্রেড ইউনিয়ন

শ্রমজীবীর স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে ট্রেড-ইউনিয়ন আন্দোলনের প্রয়োজন অনস্বীকার্য৷ তবে এই আন্দোলন যাতে ঠিক খাতে বইতে পারে তার জন্যে উপর্যুক্ত ব্যবস্থার দরকার৷ সাধারণতঃ দেখা যায় এই আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণকারীরা শ্রমজীবীদের তাদের দাবী-দাওয়া তথা অধিকার সম্বন্ধে যতটা সচেতন করে দিতে চান সেই তুলনায় তাঁরা তাদের দায়িত্ব সম্বন্ধে সচেতন করবার কাজে কিছুই করেন না৷ এ অবস্থা দূর করবার প্রকৃষ্ট পন্থাই হচ্ছে যে শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কর্মীদের অধিকার স্পষ্টভাবে স্বীকার করে নেওয়া৷ এ ব্যাপারে কেবল আদর্শবাদ প্রচার করে গেলে বা অধিক নীতিকথা শোণাতে থাকলে বিশেষ কিছু ফল হবে না৷ ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন সমূহের

নারীর প্রতি সামাজিক অবিচার

সমাজে বিভিন্ন ধরণের পাপাচারকে দেখে যারা শিউরে ওঠেন আর বলেন, ---গেল সব গেল৷ ধর্ম গেল, নীতি গেল, তাঁদের বোঝা উচিত এই তথাকথিত সবগেল কথাটার পেছনে যে কারণগুলো রয়েছে তার অন্যতম কারণ হচ্ছে সামাজিক অবিচার৷

সংস্কৃতি

মানুষ জাতের সংস্কৃতি একটাই৷ অনেক কালচারের কথা আমি মানতেই রাজী নই৷ হ্যাঁ, তবে এই মাত্র বলা যেতে পারে যে মানুষ জাতের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে নাচে-গানে উচ্চারণে তথা উৎসবাদি অনুষ্ঠানে স্থানীয় বৈচিত্র্য আছে, এই স্থানীয় বৈচিত্র্য বা আচার ব্যবহারের তারতম্যকে সংস্কৃতি গত ভেদ বলে মেনে নেওয়া চলে না ৷

পোষাক

বিশ্ব-ভাষার তুলনায় বিশ্ব-লিপির প্রয়োজন অনেক কম, আর বিশ্ব-পোশাকের কোনো প্রয়োজনই নেই৷ শুধু বিশ্ব-পোশাক কেন বিভিন্ন রাষ্ট্রের জাতীয় পোশাক থাকলেও কোন কিছু থাকা আমার মতে অবাঞ্ছনীয়৷

বিশ্বলিপি

বিশ্ব-জনের সাধারণ সুবিধার জন্যে একটি বিশ্ব-ভাষার প্রয়োজন যতখানি, একটি সাধারণ বিশ্ব-লিপির প্রয়োজন সে তুলনায় কিছুই নয়৷ তবে হ্যাঁ, পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা একই লিপিতে লিখিত হলে ভাষা শিক্ষায় যে কিছুটা সুবিধা হবে একথা অনস্বীকার্য৷ বিশ্বের প্রচলিত লিপিগুলির মধ্যে রোমান লিপিই সব চেয়ে বেশী বিজ্ঞানসম্মত৷ তবে প্রচলিত সমস্ত ভাষাতে এই লিপির ব্যবহার করতে কতকগুলি বাস্তব অসুবিধা দেখা দেবে৷ তাছাড়া স্থানীয় লিপিগুলির প্রতি মানুষের একটা দুলতাও আছে৷ আমার মনে হয় বিভিন্ন ভাষায় রোমান লিপি গ্রহণ করা বা না-করাটা সেই ভাষা-ভাষা জন-গোষ্ঠীর ওপরে ছেড়ে দেওয়াই ভাল৷ তবে বিশ্ব-লিপি হিসেবে রোমান লিপিটি যত শীতে সংখ্যক

ভাষার সমস্যা ও সমাধান

যান্ত্রিক প্রগতির সঙ্গে সঙ্গে দেশকালের ওপর মানুষের আধিপত্য ক্রমশই বেড়ে যেতে থাকে আর তাই একটি বিশ্বরাষ্ট্রের প্রয়োজনও মানুষ মর্মে মর্মে অনুভব করবে ৷ ক্রমশ মানুষকে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে বেশী পরিমাণ মেলামেশা করতে হবে ও এই মেলা-মেশার খাতিরে একে-অন্যকে ভালভাবে বুঝবার চেষ্টাও করতে হবে ৷ মানুষজাতের অজস্র ভাষা৷ প্রতিটিই আমাদের ভাষা---আমাদের সকলকার ভাষা৷ এখানে আমার ভাষা---তোমার ভাষা বা দেশী-ভাষা বিদেশীভাষা --- এ জাতীয় মনোভাব অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ৷ এতটুকু মাত্র বলা যেতে পারে যে আমাদের অনেকগুলি ভাষা আছে, তবে তার মধ্যে মাত্র একটি বা কয়েকটি ভাষায় আমি নিজেকে ব্যক্ত করতে পারি৷

পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামোয় যান্ত্রিকীকরণের সমস্যা ও সমাধান

বস্তুতঃ উন্নত ধরণের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার অর্থই দ্রুত যান্ত্রিকীকরণ৷ প্রাচীনপন্থীরা এই যাত্রিকীকরণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মুখর৷ মোদ্দা কথাটা এই যে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামোয় যাত্রিকীকরণের অর্থ-ই জনসাধারণের অধিকতর দুঃখ---অধিকতর বেকারী৷ এজন্যেই প্রাচীনপন্থীরা এর বিরোধী৷ পুঁজিবাদকে না হটিয়ে জনকল্যাণ করতে গেলে যান্ত্রিকীকরণের বিরোধিতা করতেই হবে৷ কারণ যন্ত্রের উৎপাদিকা শক্তি দ্বিগুণ বেড়ে গেলে মনুষ্য শক্তির প্রয়োজন ঠিক অর্ধেকে নেবে যায়, আর তাই পুঁজিবাদীরা তখন ব্যাপকভাবে কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করে৷ অল্পসংখ্যক আশাবাদী বলতে