অনন্য প্রাউট (পঞ্চম পর্ব)

লেখক
 জিজ্ঞাসু

প্রাউট দর্শনের নানা বৈশিষ্ট্য আছে৷ আজ প্রগতিশীল শব্দের প্রাউটিস্টিক ব্যাখ্যা বুঝে নেবার চেষ্টা করব৷ তার পূর্বে জানবো এই বিষয়ে ধনতান্ত্রিক জড়বাদী ব্যাখ্যা কী বলে৷ পুরাতন সব কিছুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, জড়ভোগবাদকে বেলাগাম প্রশ্রয়, তারজন্য মানব অধিকার ও স্বাধীনতার দাবি চলছে দেশে দেশে৷ গান তৈরী হচ্ছে, ‘‘আমাকে আমার মত থাকতে দাও’’৷ যে যেমন ইচ্ছা ব্যষ্টিগত জীবনযাপন করবে ৷ তাতে অন্যের অসুবিধা হলে হবে৷ তাদের কথা আমরা আমাদের নিয়ে মত্ত থাকি বা যা ইচ্ছা করি, আমরা তো কারো ক্ষতি করছিনা৷ এই চিন্তার বশবর্তী হয়ে কিছু দেশের সরকার তো নারী-পুরুষের দেহ ব্যবসাকেও স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে৷ সরকারের ট্যাক্স পেলেই হ’ল --- মদ তৈরী ও বিক্রির ঢালাও লাইসেন্স, নাইট ক্লাব, নারীদের আধা উলঙ্গ পোশাক এসব প্রগতির চিহ্ণ, আধুনিক ফ্যাশান ৷ কম্যুনিষ্ট দর্শনে প্রগতিশীল মানেও ওই পূর্ব সূরীদের মতই ভোগবাদ, তবে সব কিছু লুকিয়ে চুরিয়ে৷ বাইরের বত্তৃণতায় গরীবের কষ্টে এক বুক কেঁদে দিয়ে ঘরে গিয়ে কৈ মাছের পাতুরি নাহলে খাবার নিয়ে তুলকালাম করবে৷ প্রকাশ রাস্তায় রিকশা ওয়ালার পাশে বসে চা খেয়ে নেবে এটা ওদের প্রগতিশীল বিপ্লবী মুখোস৷ এঙ্গেলস্ এর লেখা ‘‘দ্বন্দ্বাত্মক বস্তুবাদ’’ প্রগতিশীলতার শেষ কথা এইভাবে আছে ‘‘কম্যুনিজম ইজ দা ফাইনাল সিন্থেসিস অর্থাৎ সমাজের নাকি চরম উন্নতির অবস্থা৷ এবার প্রাউট-এর মতে কোন্টি প্রগতিশীল চিন্তা সেটা বুঝে নেওয়া যাক৷ প্রাচীনকালের মানুষ অজ্ঞতা অসহায়তা অক্ষমতার কারণে উলঙ্গ বা আধা উলঙ্গ থাকতে বাধ্য হত৷ আজকের দিনে দেহকে আবৃত রাখাই শালীনতার পরিচায়ক৷ তা না করে এখন যদি কেউ স্বাধীনতার নামে শরীরের বিশেষ অংশ প্রদর্শন করতেই বিশেষভাবে পোশাক তৈরী করে, সেটা পরে নির্লজ্জের মত সমাজে ঘুরে বেড়ায় তাকে প্রগতিশীল বলব না৷ তাকে বরং পিছিয়ে থাকাই বলব৷ দারিদ্র্যের কারণে দেহে কাপড় নেই, এর একটা যুক্তি পাই৷ কিন্তু সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে, শরীরের অংশবিশেষ প্রদর্শন কুৎসিত মানসিক বিকৃতি ছাড়া আর কিছু নয়৷ তেমনি মদ ও দামি নেশার জিনিসের উৎপাদনে বা নাইট ক্লাবে আড্ডাকে ঢালাও সরকারি অনুমোদন বা দেহকে নিয়েও ব্যবসা ব্যভিচার যত স্মার্টলিই করা হোক আর্টিষ্টিক ছাপমারা হোক তাকে প্রগতিশীল বলা যায় না৷ কারণ এরফলে মানুষের দেহমনে ব্যাধির পরিমাণ বেড়েই চলবে, চলছেও৷ এতে শান্তি নষ্ট, অর্থনষ্ট, সময় নষ্ট৷ সমাজের বৃহত্তর শোষিত মানুষ দারিদ্র্যের কারণে অসুস্থ হবে এমন সমাজ ব্যবস্থাকে প্রগতিশীল বলতে পারি না৷ প্রাউট দর্শনে প্রগতি মানে সীমাহীন বিস্তারিত চেতনার দিকে এগিয়ে যাবার ‘‘ছন্দায়িত গতি’’৷ যে গতির শেষ নেই , চরম অবস্থা বলে কিছু নেই৷ প্রগতি বা প্রকৃষ্ট গতি মানে অনন্ত বিকাশ , সীমাহীন উন্নতির জন্য বাহির ও অন্তর জগতে এক ভারসাম্যের গতি নিয়ে এগিয়ে চলা অন্ধকার থেকে আলোকর দিকে , অসুস্থতা থেকে সুস্থতার দিকে , অশান্তি থেকে শান্তির দিকে, অজানা থেকে জানার দিকে , ভয় থেকে প্রেমের দিকে,বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে অখণ্ড বোধের দিকে, দুর্নীতি থেকে নীতির দিকে, বিশৃঙ্খলা থেকে শৃঙ্খলার দিকে, অণু থেকে ভূমার দিকে , বহু থেকে একের দিকে৷ প্রাউটের চিন্তায় প্রগতিশীল মানুষ তাকে বলা যাবে, যিনি অসহায় মানুষ-পশু পাখী-তরুলতা কীটপতঙ্গ থেকে যাবতীয় অপ্রাণীন বস্তু ও শক্তিকেও যত্ন নিতে শিখবেন তাদের যথাযোগ্য সুরক্ষা দিতে যত্নবান হবেন৷