অসমের ইতিহাস

লেখক
হরনাথ মাহাত

অসম ১৮২৬ সালে অহম রাজা ও আরাকান রাজাদের হাত থেকে ব্রিটিশ শাসনে আসে৷ তার আগের ইতিহাসে যাচ্ছি না৷ ইংরেজরা প্রথমে এই রাজ্যটি বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মধ্যে রেখেছিল৷ ওই সময় থেকে সরাসরি কাজে নিয়োগের জন্য পূর্ববঙ্গ থেকে শিক্ষিত বাঙালিদের (মূলতঃ হিন্দু) আনা শুরু হয়৷

 চা বাগান পত্তন হওয়ার পর ক্লারিকাল সার্ভিসের ক্ষেত্রেও একই ধারা বজায় থাকে৷ অপর দিকে অসমের রেভিনিউ বাড়ানোর জন্য কৃষি উৎপাদন বাড়াতে পূর্ববাংলার কৃষকদের (মূলতঃ মুসলমান) নিয়ে এসে এককালীন ২ টাকা খোরাকি ভাতা দিয়ে বসানো শুরু হয়৷ অহম ও অন্য জনজাতি-গুলি অনগ্রসর জুম প্রথায় চাষ করতো৷ অসমের কৃষিকাজ ও কৃষির বিকাশে এই বঙ্গবাসী কৃষকদের বিশেষ অবদান আছে৷ এইভাবে অসমে বাংলাভাষী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে৷ চা বাগানের শ্রমিকের কাজে নিয়ে আসা হয় বিহার (ঝাড়খন্ড) , মধ্যপ্রদেশ (ছত্রিশগড়) থেকে আদিবাসীদের৷

১৮৩৮ সালে ইংরেজির সঙ্গে বাংলা ভাষাকেও অসমে অফিসিয়াল ল্যাংগুয়েজ করা হয়৷

১৮৭৩ সালে অসমকে পৃথক প্রদেশ করা হয় ৷ এই সঙ্গে বাংলাভাষী শ্রীহট্ট জেলাকে অসমের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়৷ বাংলা ও অসমের মধ্যে গভীর আদান প্রদান গড়ে ওঠে৷ অহম সমাজের মধ্য থেকে এই সময় আনন্দরাম, ঢেকিয়াল ফুকন, হেমচন্দ্র বড়ুয়া, গনাভিরাম বড়ুয়ার মতন সংস্কারকরা বেরিয়ে আসেন৷ তাঁদের চেষ্টায় অসমিয়া ভাষার বিকাশে স্যার আশুতোষ মুখার্জী ও ভাষাচার্য্য সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় প্রভূত সহায়তা করেন৷

১৮৮৫ সালে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হবার পর স্বাধীনতা আন্দোলনে ক্রমশঃ অসমের জনসাধারণও অংশগ্রহণ করতে থাকে৷ ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলন ও বিশেষ করে ১৯৪২ এর আগস্ট আন্দোলনে অসমের অংশগ্রহণ উল্লেখ্যযোগ্য৷ শহিদ কনকলতা বড়ুয়া ও ভৃগুমণি ফুকনের বীরত্বগাথার কাহিনী সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ কুশল কোনোয়ারের ফাঁসি হয়৷ দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন অসমে কংগ্রেস ছিল প্রধান রাজনৈতিক দল৷ কিন্তু কংগ্রেসের ভিতরে ও বাইরে গড়ে উঠছিল তীব্র অসমীয়া জ্যাত্যাভিমানি শক্তি, যারা মনে করতো আর এখনো মনে করে বাঙালী ও বাংলা ভাষা অসমীয়া ভাষা সংস্কৃতিকে গ্রাস করে নেবে৷

এই উগ্র অসমীয়া শক্তির চাপে স্বাধীনতা ও দেশভাগের সময় ১৯৪৭ এর অক্টোবরে অসমের মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদোলুই এক ছাত্র সমাবেশে বলেন, নিঃসন্দেহে অসম অসমিয়াদের জন্য৷ মুখ্যমন্ত্রী এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন ‘অসম যদি হয় অসমিয়াদের জন্য তাহলে ভারতবর্ষটা কাদের জন্য?

৭ই, মে, ১৯৪৯ তারিখে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বরদলুই প্রধানমন্ত্রী নেহরুকে চিঠি দিয়ে বলেন ‘পূর্ববঙ্গ থেকে আগত বাঙালি উদ্বাস্তুদের অসমে পুনর্বাসন দিলে রাজ্যের জমির উপর চাপ বাড়বে ৷ সেই সময় ১৮ই মে এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী নেহেরু জানান, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অসমে জমি অনুযায়ী জনসংখ্যার ঘনত্ব কম৷ তাই এখানেই অসমের সীমান্তবর্তী পূর্ববঙ্গের মানুষরা আসলে তাদের পুনর্বাসন দিতে হবে৷ জমি বন্টনের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দেয়’ স্থানীয় মানুষজন ও উদ্বাস্তুদের অসমে পুনর্বাসন দিতে হবে৷ জমি বন্টনের ক্ষেত্রেও কেন্দ্র সরকার জানিয়ে দেয় স্থানীয় মানুষজন ও উদ্বাস্তুদের মধ্যে উদ্বৃত্ত খাস জমি ৫০ঃ৫০ হারে বিলি করতে হবে৷ সমস্ত ক্ষেত্রেই পন্ডিত নেহেরুর উদ্বাস্তুদের পক্ষে গৃহীত কড়া মনোভাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার প্যাটেল সমর্থন করেন৷ কারণ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে বঙ্গ বিভাগের এটাই ছিল শর্ত৷  উদ্বাস্তু সরকারি কর্মচারীদের অসম সরকার চাকরি দিলে স্থানীয়রা চাকরি পাবে না বলে শ্রী বরদলুই-এর এই বক্তব্যও নেহেরু গ্রহণ করেননি৷  হতাশ অসমীয়া উগ্রপন্থীরা প্রথম ১৯৫০ সালে বাঙালিদের ওপর প্রবল আক্রমণ চালায়৷ কয়েক হাজার বাঙালি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ছেড়ে পশ্চিম বাংলা ও বরাক উপতক্যায় আশ্রয় গ্রহণ করে৷ আবারও ১৯৬০ সালে অসমীয়া জাত্যভিমানি শক্তি বাঙালিদের ওপর আক্রমণ শুরু করে৷ এদের চাপে অসম সরকার ১৯৬১ সালে বিধানসভায় রাজ্যভাষা বিল পাস করে যাতে অসমিয়াকে রাজ্যের একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়৷ এরই বিরুদ্ধে বাংলাভাষীদের তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলনের আন্দোলনকারীদের ওপর ১৯মে , ১৯৬১ অসম রাইফেলস গুলি চালায় যার ফলে ১১ জন শহীদ হন৷ এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ হয়৷ এই গুলিচালনা সরকারের নীতি নয় বলা সত্ত্বেও অসমের বিমলাপ্রসাদ চালিহার মন্ত্রিসভা তীব্রনিন্দার সম্মুখীন হয়৷ সারা দেশে এর প্রভাব পড়ে ৷ ওই সময়ে দুর্র্গপুরে সর্বভারতীয় কংগ্রেস অধিবেশনে পন্ডিত নেহরুসহ কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ কাছাড়ে ভাষা শহীদদের প্রতিশ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন করেন৷ কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট মন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী অসমে যান৷ তিনি অসম সরকারকে জানান বরাক উপতক্যার তিনজেলার প্রধান সরকারি ভাষা বাংলা যা এখনও জারি আছে৷

১৯৭৭ সালে কংগ্রেস সারা দেশের মতন অসমেও ক্ষমতা হারায়৷ ক্ষমতায় আসে জনতাপার্টি৷ যার মধ্যে ছিল জনসংঘ (বিজেপি), সোসালিস্ট প্রভৃতি দল৷ এতদিনে অসমীয়া জাত্যভিমানি শক্তি সম্পূর্ণ নিজেদের একটি সংগঠন পেলো৷ এই জনতা দলের জঠরেই জন্ম নিল অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) ও অসমগণ পরিষদ (অগপ)৷ এদের নেতৃত্বে শুরু হল নোতুন করে ‘বঙ্গাল খ্যাদা’৷ ইন্ডিয়ান অয়েল -এর নবীন ইঞ্জিনিয়ার রবি মিত্রকে হত্যা করা হল৷ শুরু হল চূড়ান্ত অরাজক অবস্থা৷

জনতা দলের শিথিল শাসনে আসু ও অগপ’র লাগাতর আক্রমণে বাঙালি হিন্দু ও মুসলমানদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসে৷ প্রচার করা হয় ৷ সকলেই নাকি অনুপ্রবেশকারী৷ এই প্রচার এখনো চলছে৷ ১৯৮৩ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি অসমের নেলিতে এক ভয়াবহ আক্রমণে দুই সহস্রাধিক সংখ্যালঘুকে হত্যা করা হয়৷ তখন ওখানে রাষ্ট্রপতির শাসন ছিল৷ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাঙালিদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য এই হত্যাকান্ড সংগঠিত করা হয়৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও ১৯৮৩-র নির্র্বচনে কংগ্রেস জয়লাভ করে৷ হিতেশ্বর সাইকিয়া মুখ্যমন্ত্রী হন৷

অসমে স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য অত্যন্ত উদার মনোভাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি ১৯৮৬ সালের আসু’র সঙ্গে অসম চুক্তি সম্পাদন করেন৷ নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরা হয়৷ নতুন করে ১৯৮৬তে নির্র্বচন করার জন্য সাইকিয়া পদত্যাগ করেন৷ অগপ ক্ষমতায় আসে৷ কিন্তু এই সরকার তথাকথিত বিদেশি চিহ্ণিত করতে ব্যর্থ হয়৷ ১৯৯১ সালে পুনরায় নির্বাচনে হিতেশ্বর সাইকিয়ার নেতৃত্ব কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে৷ ১৯৯৬ সালে তাঁর মৃত্যু দেশের পক্ষে এক বিরাট ক্ষতি৷ তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদ দিয়ে অহম প্রাদেশিকতা ও সাম্প্রদায়িকতাকে পর্যুদস্ত করেছিলেন৷

১৯৯৬ সালে পুনরায় অগপ সরকারি ক্ষমতায়  এসে ২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকে৷ কিন্তু এবারও তারা বিদেশি চিহ্ণিত করতে ব্যর্থ হয়৷ পরবর্তী কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ২০০১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন৷ এই সময় কালে তিনি অসমে শান্তি-শৃঙ্খলা ও ধর্মীয় ও ভাষিক সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা মোটামুটি বজায় রেখেছিলেন৷ ১৯৭১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে তিনি নাগরিক পঞ্জিকরণের কাজ শুরু করেছিলেন৷ কিন্তু তাঁর জন্য সমাজে অস্থিরতা ও অশান্তি সৃষ্টি হয়নি৷ কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রচারকে বিশেষ একটা উৎসাহ দেওয়া হয়নি৷ তাঁদের শাসনামলেই শিলচরে অসম কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি স্থাপিত হয়৷

২০১৪ সালের লোকসভা নির্র্বচনের প্রাক্কালে নরেন্দ্র মোদি প্রচার চালান, ক্ষমতায় এলে তাঁরা সব বিদেশীকে (পড়ুন মুসলমান) বিতাড়ণ করবেন, ছিটমহল বিনিময় হতে দেবেন না ইত্যাদি৷ বিজেপি ভালো ফল করে৷ ক্ষমতায় এসে কিন্তু মোদিকে ছিটমহল বিনিময় করতে হয়েছে৷ ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অসমে বিজেপি, অগপ ও বোরো উগ্রপন্থীদের রামধনু জোট ক্ষমতায় এসেছে৷ বদরুদ্দিন আজমলের ইউডিএফ বাঙালি মুসলমান দল৷ এরা বহু আসনে প্রার্থী দেয়৷ কংগ্রেসের সঙ্গে ভোট বিভাজনের ফলে বিজেপির প্রতি মোহগ্রস্থ হয়ে ওই রামধনু জোটকে ভোট দেয়৷ কিন্তু সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে যে নাগরিক পঞ্জিকরণের কাজ চলে তার প্রাথমিক তালিকায় তিনপুরুষের বাসিন্দাদের নামও বাদ পড়ে৷ অসমীয়া জাত্যভিমানীদের মতে বাংলাভাষী মানেই অনুপ্রবেশকারী ও বাংলাদেশী৷ এদের মতে ১৯৭১ সালকে যে ভিত্তিবর্ষ ধরা হয়েছে তা আইন নয়, একটি চুক্তির (১৯৮৬ সালের অসম চুক্তি) গেজেট নোটিফিকেশন মাত্র৷ সংবিধান যেদিন গৃহীত হয়েছে সেদিন (১৯৪৯ এর ২৬ নভেম্বর) যারা এই ভূখণ্ডে ছিলেন তারা বা তাদের বংশধররা নাগরিক, এটাই আইন৷ অথচ সুপ্রিমকোর্ট বলেছে নাগরিক পঞ্জিকরণ হবে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ মধ্যরাতকে ভিত্তি করে৷

কার্যত নাগরিক পঞ্জিকরণ আদৌ ১৯৭১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে হচ্ছে না৷ জমির দলিল, পূর্বপুরুষের ১৯৫১ সালের ভোটার লিস্টে নাম আছে কি না, আবেদনকারী প্রকৃতই তার / তাদের বংশধর কি না, ব্যর্থ সার্টিফিকেট (সেটিও আবার জন্মানো মাত্র সংগৃহিত হতে হবে, পরে সংগৃহিত হলে হবে না) পেশ করতে হবে৷

এখন মোদি সরকার আর.এস.এস এর পরামর্শে ভারতের নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ (সংশোধনী) বিল এনে বাঙালিদের মধ্যে ধর্মীয় বিভাজনের কৌশল এনেছে ৷

এবার বিজেপির জোটসঙ্গী অগপ, বোরো ও অন্যান্য গোষ্ঠী জানিয়ে দিয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেবার চেষ্টা হলে তারা জোট ত্যাগ করবে৷ মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালও বলেছেন তিনিও এই বিল মানবেন না ও প্রয়োজনে পদত্যাগ করবেন৷ এদের বক্তব্য , এই বিল এর দ্বারা অনুপ্রবেশ কারী হিন্দু বাঙালিদের নাগরিকত্ব ও বৈধতা দেওয়া হলে এরফলে অসমীয়ারা চিরতরে সংখ্যালঘু হয়ে যাবে৷

এই পরিস্থিতিতে ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায় অসমের বাঙালিদের ভাষাভিত্তিক পরিচয় পাল্টে অসমীয়া হবার পরমর্শ দিয়েছেন৷ এরকম পরামর্শ পাকিস্তানী শাসকরা বাংলাদেশে বঙ্গবাসীদের দিয়ে বলেছিল তোমরা উর্দু ভাষাকে তোমাদের মাতৃভাষা বলে গ্রহণ কর৷

এবার অসম সরকার ২৫বৈশাখ কবিগুরুর জন্মদিনে সুকল, কলেজে ছুটি দেয়নি৷ গত বছরও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে তা বাতিল করেছিল৷ রাজ্যের এক মন্ত্রী বলেছেন রবীন্দ্রনাথ বাঙালি কবি, অসমে তার জন্মদিন কেন পালন করা হবে? কোনও দেশের কোনও সরকার তাদের জাতীয় সংগীতের স্রষ্টাকে এমনভাবে অপমান করেনি৷

অবস্থা এমন যে, ভাষা আন্দোলনের ধাত্রীভূমি শিলচরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপ পাল ‘দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে’ রাজ্যের ডেপুটি স্পিকার পদ ছেড়েছেন৷

এদিকে সন্দেহজনক ভোটার (ডাউটফুল ভোটার) বলে বেশ কিছু মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছে৷ অমানবিক পরিবেশ৷ আশ্চর্যের বিষয় পরিবারের একজন সন্দেহজনক বলে বন্দি৷ কিন্তু অন্যরা মুক্ত৷

নাগরিকপঞ্জিকরণের্ দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশিত হবার পর দেখা যাচ্ছে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গিয়েছে৷ তাদের প্রায় সবাই বাঙালি৷ এদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষই রয়েছেন৷ আসু ও গণ সংগ্রাম পরিষদ- এর সদস্যরা নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেছে৷

যাদের নাম বাদ গেল তাঁরা কোথায় যাবেন? বাংলাদেশ এদের গ্রহণ করবে? এর উত্তর হচ্ছে, না৷ এরা কি তাহলে রাষ্ট্রহীন হয়ে থাকবেন ? রোহিঙ্গাদের মতন?

ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সম্মিলিত সংখ্যালঘু পরিষদের সম্পাদক রানা সেনগুপ্ত এক বিবৃতিতে বলেছেন ভারতে নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য ধর্মকে ভিত্তি করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা অতীব বিপজ্জনক ৷ এই কাজ বাংলাদেশের ইসলামিক মৌলবাদী শক্তির হাতকে শক্তিশালী করবে৷

আর বিজেপির স্থানীয় নেতা দিলীপ ঘোষ আস্ফালন করে বলেছেন তাঁরা নাকি এই বঙ্গেও নাগরিক পঞ্জিকরণ করবেন ও সবাইকে মেরে বার করে দেবেন৷ এই দলটি কেন্দ্রে ৪ বছর হলো ক্ষমতায় এসে ভাষা, ধর্ম, বর্ণের ভিত্তিতে দেশজুড়ে বিভাজন সৃষ্টি করেছে৷ একটি শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীল দেশকে অস্থিতিশীলতা বিবাদ ও সংঘাতের লীলাভূমিতে পরিণত করেছে৷

১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি  ভারতবর্ষে ক্ষমতায় এসে এই কাজটি করেছিল৷