অশনি সংকেত ও মুক্তির পথ

লেখক
আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূ্ত

অর্থনীতিবিদের মতে বিশেষ করে ১৯৮০ সালে ভারতে অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু হবার পর এদেশে আর্থিক বৈষম্য প্রচুর বেড়েছে৷ ভারতে জাতীয় আয়ের ৫৬ শতাংশই উচ্চবিত্তদের হাতে, যারা হচ্ছে দেশের নাগরিকের মাত্র ১০ শতাংশ অর্থাৎ জাতীয় আয়ের অবশিষ্ট ৪৪ শতাংশের ভাগীদার দেশের বাকী ৯০ শতাংশ জনগণ৷ তাহলে ভাবুন দেশের কী উন্নয়ন হচ্ছে?

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম ‘অক্সফেম’-র রিপোর্টে প্রকাশ, পৃথিবীতে আট জন ধনকুবেরের কাছে যে সম্পদ আছে তা গোটা পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যার কাছে থাকা সম্পদের সমান৷ ভারতের ক্ষেত্রে দেশের ৫৮ শতাংশ সম্পদ আছে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের হাতে৷ মাত্র ৫৭ জন কোটিপতির কাছে যে সম্পদ আছে তা এদেশের ৭০ শতাংশ মানুষের কাছে থাকা সম্পদের সমান৷ যার ফলে অধিকাংশ মানুষই দারিদ্রের শিকার৷ সারা বিশ্ব জুড়ে ধনী-দরিদ্রের এই বৈষম্য ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে যা সমাজের শান্তি, সুস্থিতি, শৃঙ্খলার পক্ষে অশনি সংকেত৷ এভাবেও চলতে থাকলে অভাবী কর্মহীন মানুষের মনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ যে একদিন ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে পরিণত হবে সেটা সহজেই অনুমেয়৷ দীর্ঘদিনের শোষণ ও অন্যায় একসময় দাবানলের সৃষ্টি করবে, যা মানব সভ্যতার ধবংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে৷

তাহলে উপায় কী? এই ধবংসকে রোধ করার কী কোনও উপায় নেই? সমাজ কী এইভাবে ধবংসের অতল গভীরে তলিয়ে যাবে? আর আমরা নীরব দর্শকের মত ভাাগ্যের হাতে নিজেদের সমর্পণ করে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকব?

এটা ঠিক, আজ দেখা দিয়েছে এক ভয়ঙ্কর আদর্শগত শূন্যতা৷ কিন্তু বিশ্বপ্রকৃতির নিয়ম, শূন্যতা বেশী সময় স্থায়ী থাকে না৷ তাই ঠিক উপযুক্ত সময়েই এই শূন্যতা পূর্ণ করতে এলেন মহান দার্শনিক ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার, যিনি শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী রূপে সমধিক পরিচিত৷ তিনি একাধারে বিশ্বধর্ম ‘আনন্দমার্গে’র প্রবর্ত্তক, নব্যমানবতাবাদী শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারজনক, সাংসৃকতিক বিপ্লবের অগ্রদূত, প্রভাত সঙ্গীতের স্রষ্টা, নতুন যুগান্তকারী সামাজিক, অর্থনৈতিক দর্শন---প্রাউটের প্রবক্তা, ভাষাবিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক, বিশ্বব্যাপী সংঘটনের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্ব মানবতাবাদের বার্তাবহ৷ তাঁর প্রবর্ত্তিত সামাজিক-অর্থনৈতিক দর্শন ‘প্রাউট’ সমাজের অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বের সমস্ত সম্পদের সর্বাধিক উপযোগ ও যুক্তিসঙ্গত বণ্টনের পথ দেখিয়েছেন৷ তাঁর মূলতঃ সমবায় আদর্শের ওপর, অধারিত ব্লক ভিত্তিক পরিকল্পনা ত্রিস্তরীয় অর্থনৈতিক পরিকাঠামো সর্বাত্মক শোষণমুক্ত প্রগতিশীল সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার বাস্তব পথের নির্দেশনা দিচ্ছে৷ তিনি আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির পথ ধরে বিশ্বৈকতাবাদের প্রতিষ্ঠার নীতিতে বিশ্বাসী৷ বিশ্বরাষ্ট্রেরও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তাঁর রয়েছে৷ তাঁর মতে ‘মানব সমাজ এক ও অবিভাজ্য’৷ জাত-পাত-সম্প্রদায়গত বিভেদের সমস্ত প্রাচীর ভেঙ্গে তিনি সবাইকে নব্যমানবতাবাদের প্রতিষ্ঠার পথ দেখিয়েছেন, যে নব্যমানবতা একদিকে যেমন নিপীড়িত মানবতার শেষ আশ্রয়, সঙ্গে, সঙ্গে মেকী সভ্যতার ভয়ঙ্কর ষ্টীম রোলারের সামনে বিপন্ন পশুপক্ষী, তরুলতার নিরাপত্তার বলিষ্ঠ আশ্বাস৷

তাই আজকের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সমস্ত মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, বিশ্ব মানবতাকে বাঁচাতে, সমাজকে ধবংসের হাত থেকে রক্ষা করতে মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তথা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী সর্বানূসত দর্শন তথা সর্বাত্মক আদর্শকে জানুন৷ এর মধ্যে জীবনকে তথা সমাজকে সর্বাত্মক ধবংসের হাত থেকে বাঁচার তথা সর্বাত্মক প্রগতির পথের প্রকৃত সন্ধান পাবেন৷