ত্রিপুরায় আগামী ১৮ই ফেব্রুয়ারী বিধানসভা নির্বাচন৷ তার সঙ্গে সঙ্গে মেঘালয় ও নাগাল্যাণ্ডের বিধানসভা নির্বাচন ২৭শে ফেব্রুয়ারী৷ তিন রাজ্যের বোট গণনা ৩রা মার্চ৷
নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে আগরতলায় ‘আমরা বাঙালী’ ত্রিপুরা রাজ্য সচিব হরিগোপাল দেবনাথ এক প্রেস বার্তায় বলেছেন, ত্রিপুরায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ‘আমরা বাঙালী’ ২৪ টি আসনে প্রার্থী দিচ্ছে৷ তিনি আমরা বাঙালীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, আমরা বাঙালী ভেদাভেদের রাজনীতি করে না৷ আমাদের আদর্শ আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির পথ ধরে বিশ্বৈকতাবাদের প্রতিষ্ঠা৷ আমরা ত্রিপুরার পাহাড়বাসী বাঙালী, যাদেরকে উপজাতি বলা হচ্ছে, আর সমতলবাসী বাঙালী--- সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একসাথে সবার উন্নয়ন চাই৷ তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরায় অতীতের কংগ্রেসী অপশাসন ও বর্তমানে বামফ্রণ্ট তথা সিপিএমের কুশাসনের ফলশ্রুতিতে
বর্তমান এ রাজ্যের ৬৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে৷ এখানে স্পষ্ট প্রমাণিত যে পুঁজিবাদ ও মার্কসবাদের মাধ্যমে রাজ্যের জনগণের উন্নয়ন সম্ভব হবে না৷ একমাত্র মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘প্রাউট’ দর্শনের পথে অর্থনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এ রাজ্যের ভয়াবহ দারিদ্র্য ও বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব৷ আর এই পথেই রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হবে৷ আমরা বাঙালী প্রদত্ত প্রেস বার্তায় আরও বলা হয়েছে ঃ গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোতে নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম৷ তাই আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্ মুহূর্তে ‘আমরা বাঙালী’ দলের পক্ষ থেকে আপনাদের সুবিবেচনার জন্যে কিছু কথা বলতে চাইছি৷
এরাজ্যে ‘আমরা বাঙালী’-র নোতুন সমাজ গড়ার আন্দোলন চলছে৷ বিগত শতাব্দীর প্রায় সত্তরের দশক থেকে সূদূর প্রাচীনকাল থেকে প্রাকৃতিক সম্পদে ত্রিপুরা সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাপূর্ণ থাকা সত্ত্বেও উপযুক্ত পরিচালনা ও পরিকল্পনার অভাবে রাজ্যবাসীর অর্থনৈতিক দৈন্যদশার মাত্রা কেবল বেড়েই চলেছে৷ অতীতের কংগ্রেস অপশাসনের ও বর্তমান বামফ্রন্ট তথা সি.পি. আই (এম) দলের কুশাসনে আজও রাজ্যের জনসংখ্যার শতকরা ৬৭ ভাগ জনসাধারণ বি.পি.এল-এর অন্তর্ভুক্ত৷ অথচ সি.পি.এম দলের বড় মাপের নেতারাও জোর গলায় বলছেন, উন্নয়নের নাকি স্বর্ণযুগ চলছে৷ বস্তুতঃ ক্ষমতালোভী কংগ্রেস, কম্যুনিস্ট প্রমুখ রাজনীতিবিদদের দিশাহীন রাজনীতি , কপটাচারিতা,দুর্বৃত্তায়ন ইত্যাদি কারণে ও প্রয়োজনীয় সদিচ্ছার ও উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাবেই বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষাগত ইত্যাদি বিষয়ে ত্রিপুরা পিছিয়ে পড়েছে৷ একই কারণে রাজ্যের পাহাড় অঞ্চল আজ উত্তাল৷ দাবী উঠেছে রাজ্য ভাঙার ৷
এ প্রসঙ্গে ‘আমরা বাঙালী’ দলের সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে যে, মহান দার্শনিক ও সমাজতত্ত্ববিদ শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার-বিরচিত পূর্রাঙ্গ ও প্রয়োগভৌমিক তত্ত্ব ‘প্রাউট’দর্শনের সুপারিশ মত আজ সামগ্রিক মানবতার স্বার্থে ও মানবসমাজের সামুহিক কল্যাণে, বিশ্লেষণের অর্থাৎ ভেদাভেদের রাজনীতি ছেড়ে সংশ্লেষণের অর্থাৎ বিশ্বৈকতাবাদের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের এগিয়ে চলা প্রয়োজন৷ এজন্যেই ‘প্রাউট’ চায় অর্থনৈতিক গণতন্ত্র অর্থাৎ জনগণের হাতে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তুলে দেওয়া ৷ তাই ‘আমরা বাঙালী-র চিন্তাধারা হচ্ছে, প্রতিটি মানুষের খাদ্য,বস্ত্র, বাসস্থান,শিক্ষা ও চিকিৎসার পূর্ণ গ্যারান্টির ব্যবস্থা করে তুলতে হবে ও এজন্যে রাজ্যের সমতল বাসী ও পাহাড়বাসী নির্বিশেষে সমস্ত রাজ্যবাসীর ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে পুঁজিবাদ জড়ভিত্তিক মার্কসবাদ ও হিন্দিসাম্রাজ্যবাদের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে৷ ‘আমরা বাঙালী’ চায় শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায়, অত্যাচার, বিভেদ ও কুসংস্কার রুখতে নীতিবাদ ,আধ্যাত্মিকতা, নব্য -মানবতাবাদ ও বিশ্বৈকতাবাদের প্রতিষ্ঠা৷ আর সেজন্যেই চায় উৎকৃষ্ট উপায় উদ্ভাবন, প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও তারই বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সার্বিক প্রয়াস৷ আসন্ন নির্বাচনে তাই ‘আমরা বাঙালী’র উদাত্ত আহ্বান---আসুন সকলে মিলে আমরা এক নোতুন ত্রিপুরা গড়ে তুলি৷
আমরা বাঙালীর দাবী সমূহ---
১) প্রতিটি মানুষের জন্যে খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা- চিকিৎসার পূর্ণ গ্যারান্টি৷
২) প্রতিটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নিশ্চিততার লক্ষ্যে ব্লকভিত্তিক সুসন্তুলিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা৷
৩) রাজ্যভাগের চিন্তা ছেড়ে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা৷
৪) কৃষিকে শিল্পের মর্র্যদা দান ও রাজ্যে সেচ ব্যবস্থার আশু উন্নয়ন৷
৫) রাজ্যের কাঁচামাল ও শ্রমশক্তির পূর্ণ উপযোগ গ্রহণ ও এগুলো সহ অর্থের বহিঃস্রোত বন্ধ করা৷
৬) স্থানীয় মানুষের ১০০ শতাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা৷
৭) শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে নৈরাজ্য দূর করা৷
৮) শিক্ষা হবে সম্পূর্ণ ব্যয়মুক্ত (ফ্রি) ও রাজনীতির কবলমুক্ত৷
৯) নারী নির্র্যতন, ধর্ষন, পণ ও যৌতুক প্রথার প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন৷
১০) সমাজে ড্রাগ, মাদকাদি, তামাকজাত দ্রব্যাদির বিপনন বন্ধ করা৷
১১) যৌনাচার প্রশয়কারী সমস্ত অসংসৃকতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা৷
১২) ভারতে বসবাসকারী একজন বাঙালীকেও বিদেশী বলা চলবে না৷
১৩) খুন, সন্ত্রাস, অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারী, চাকুরিজীবীদের অতিরিক্ত বেতন-ভাতা প্রদান আর বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিরোধে ব্যবস্থা অবলম্বন৷
১৪) সমকাজে সম মর্র্যদা ও লিঙ্গভেদের অবসান৷