বর্তমান ঝাড়খন্ডের অধিকাংশটাই বৃহত্তর বাঙলার অংশ৷ অর্থাৎ বাঙালীরাই ওখানকার আদি বাসিন্দা৷ বিশেষ করে ধানবাদ জেলা, হাজারিবাগ জেলার কসমার পেটারওয়াড়, গোলা , জেরিড়ি, রামগড় প্রভৃতি এলাকা, প্রাক্তন সাঁওতাল পরগণা ও প্রাক্তন সিংভূম জেলা, রাঁচী জেলার সিল্লি, সোনাহাতু , বুন্দু, তামার প্রভৃতি এলাকা পুরোপুরি বাঙালী অধ্যুষিত এলাকা৷ স্বাধীনতার আগে ওই স্থানগুলিতে সমস্ত সরকারী ও বেসরকারী কাজ বাংলা ভাষায় চলতো৷ স্কুল কলেজে বাংলাভাষায় পঠন-পাঠনও চলত৷ এই এলাকাগুলি একসময় বাঙলা সুবারই অর্ন্তভুক্ত ছিল৷ পরে এই এলাকাগুলিকে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তে বিহারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়৷ তখনও এখানকার বাংলা স্কুলগুলিতে বাংলায় পঠন পাঠন চলতো৷ ধীরে ধীরে এখানকার স্কুল-কলেজে বাংলা ভাষায় পড়াশোণার সুযোগ সংকুচিত হতে থাকল ৷ পরে বিহার থেকে ঝাড়খন্ড সৃষ্টি হ’লো৷ তারপর স্কুল কলেজে বাংলা পড়ানো বন্ধই হয়ে গেল৷ আগে রেল ষ্টেশনের সাইনবোর্ডে ষ্টেশনের নাম বাংলা, হিন্দী ও ইংরেজীতে লেখা থাকত৷ তারপর ধীরে ধীরে ধীরে বাংলাকে উঠিয়ে কেবল হিন্দি ও ইংরেজীতে ষ্টেশনের নাম লেখা হতে শুরু করল৷ ষ্টেশনের ঘোষণাও আগে এই এলাকার অনেক ষ্টেশনে হিন্দীর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাতেও হ’ত, পরে বাংলায় ঘোষণা বন্ধ করে দেওয়া হ’ল৷ এইভাবে এই এলাকার আদি বাসিন্দা বাঙালীদের মাতৃভাষা বাংলা শেখার সুযোগ, বিভিন্ন সরকারী কাজকর্ম বাংলায় করার সুযোগ সমস্তকিছুই কেড়ে নেওয়া হয়েছে৷
ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে ১৯৫৫ সালে রাঁচী রেল জংশনের সাইনবোর্ডে বাংলাতে ‘রাঁচী জং’ বলে লেখা ছিল, কিন্তু বর্তমানে বাংলায় নেই৷ কেবল হিন্দী ও ইংরেজীতে রয়েছে৷ ঝাড়খণ্ডে বাঙালীরা সংখ্যাগুরু হওয়া সত্ত্বেও ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচীতে বাংলা ব্রাত্য৷ এইভাবে সবক্ষেত্রেই বাঙালীদের মাতৃভাষাকে সমস্ত এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ণ করা হয়েছে৷ বাংলার বিরুদ্ধে হিন্দী সাম্রাজ্য ষড়যন্ত্রের এ এক জ্বলন্ত উদাহরণ৷