বিদ্যার কমলভবনে মত্তহস্তীর  দাপাদাপি

সংবাদদাতা
নিজস্ব প্রতিনিধি
সময়

বিদ্যার পীঠস্থান প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চবিদ্যালয় প্রায় সর্বত্রই বর্তমানে এমন সব কর্ম চলছে, যাতে বিদ্যাচর্চার পরিবেশটাই প্রায় পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে৷ আর তারই কারণে সারা দেশ জুড়ে দুর্নীতি, অনাচার, ব্যাভিচার প্রভৃতি ব্যাপকভাবে ঘটে চলেছে৷

গত ৩০শে নবেম্বর দক্ষিণ  কলকাতার রাণীকুঠির কাছে  জি . ডি . বিড়লা স্কুলে  সাড়ে চার বছরের এক মেয়ের ওপর দু’জন শিক্ষকের যৌন নির্যাতনের খবর সারা দেশের মানুষকে স্তম্ভিত করেছে৷ শিশুটির অভিভাবক এদিন সন্ধ্যায় থানায় ডায়রী করলে স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষককর্মীদের যাদবপুর থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ তাদের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকেই  তাদের ফটো দেখানো হয় অসুস্থ শিশুটিকে ৷  শিশুটিকে যৌন নির্যাতনের পর  এস.এস.কে.এম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল৷ হাসপাতালে শিশুটি অপরাধী দুইজন শিক্ষকের ফটো চিহ্ণিত করে ৷ হাসপাতালে চিকিৎসাকরা শিশুটিকে পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, তার ওপর যৌন নির্র্যতন করা হয়েছিল৷

স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল শর্মিলা নাথের কাছে অভিভাবকরা পরদিন এর কৈফিয়ৎ চাইলে তিনি অপরাধীদের আড়াল করার জন্যে এসব কিছুই না জানার ভান করেন ও ঘটনার সত্যতা মানতেই  চান না৷ অথচ মেয়েটি জানিয়েছে তাকে চকোলেটের লোভ দেখিয়ে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে সেখানে তাকে ২ জন শিক্ষক যৌন-নির্র্যতন করেছে৷ মেয়েটির বন্ধুদের কাছ থেকে মানা গেছে, বাথরুম থেকে বেরিয়ে মেয়েটি খুব কাঁদছিল৷ এসমস্ত খবর স্কুলের প্রধান শিক্ষক, অন্যান্য শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী বা আয়া কেউ জানতে পারেন নি--- এটা বিশ্বাসযোগ্য বলে অভিভাবকরা মনে  করছেন না৷  তাছাড়া, পরে উক্ত প্রিন্সিপ্যাল শর্মিলা নাথ তদন্তকারী পুলিশের অনেক  প্রশ্ণেরই উত্তর দেননি ও অনেক স্ববিরোধী কথাও বলেছেন৷ তাছাড়া একটা সাড়ে তিন বছরের শিশু মিথ্যা বলে না, এটা সকলের জানা৷ আইনও এই সত্যকে মান্যতা দেয়৷ তাছাড়া স্কুলের ছাত্র-ছাত্রাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব তো প্রিন্সিপ্যালেরই৷

এই পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলের শিশুর ওপর যৌন নির্যাতনের খবর জানার পর স্কুলের অভিভাবকরা অবিলম্বে দোষীকে গ্রেফতারের ও প্রিন্সিপ্যালকে  অপসারণের আন্দোলনে  সামিল হন৷  এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে  গ্রেফতার করা হলেও প্রিন্সিপ্যালের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ তবে ৬ দিন ধরে অভিভাবকদের তীব্র আন্দোলনের পরে প্রিন্সিপ্যাল শর্মিলা নাথকে আপাতত অধ্যক্ষের পদ থেকে অপসারণ করা হ’ল৷ এই কয়েকদিন ধরে বন্ধ থাকা স্কুলও খোলা হ’ল৷

তিনমাস আগে এম.পি বিড়লা স্কুলেও অনুরূপভাবে সাড়ে চার বছরের এক মেয়ের ওপর  যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল৷ ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের  এতদিন গ্রেফতার করা হয়নি৷ তা নিয়েই আবার এই স্কুলের সামনে বিক্ষোভ আন্দোলন ও পুলিশের লাঠিলার্জের ঘটনাও ঘটে৷ পরে পুলিশ এখানে অভিযুক্ত একজন শিক্ষাকর্মীকে  গ্রেফতার করে৷ অন্যজন এখনও অধরা থেকে গেছে৷

রাজ্যে অন্যান্য বহু স্কুলেরও ইদানিংকালে স্কুল ক্যাম্পাসের মধ্যে বা স্কুল ক্যাম্পাসের বাইরে ছাত্রীদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে৷  বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রার ওপরও  যৌননির্র্যতন  ও খুনের চেষ্টার কথা খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে৷

এভাবে দেখা যাচ্ছে. গোটা রাজ্যে--- শুধু রাজ্যে নয় গোটা দেশেই বিদ্যাশিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে কলুষিত হয়ে চলেছে৷