এদেশে কিছু হোক আর না হোক সংসদীয় গণতন্ত্রে ঢাক পেটাবার জন্য যখন যারা কি কেন্দ্রে আর কি রাজ্য শাসনে আসে তারা গদীতে বসেই নোতুন নোতুন উন্নয়নের ফিরিস্তি ছাড়ে যা দেখে এদেশের জনগণ বিশেষ করে যে দলের শাসন কায়েম হয় তারা সেই সব নিয়ে বাজার গরম করে৷ আর তারাই হয়ে যায় দেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক অর্থাৎ শাসক দলের সমর্থক, কর্মী, বিশেষ করে ক্যাডার৷ দল তাদের ছেড়ে রেখেছে৷ জনসংযোগ তারাই করে৷ তাই তারাই হয় দণ্ডমুণ্ডের কর্র্ত্ত৷ শুধু তাই নয় পুলিশ প্রশাসন তো তাদের হাতে তাই তারাই সর্বদা তিলকে তাল করে আর তালকে তিল করে, যেটি দলীয় স্বার্থে প্রয়োজন তাই করেই চলে৷ যখন দল উল্টে যায় তখন তারা আর হালে পানি পায় না৷ তখনই মিথ্যার ঝুড়ি খুলে ভালো মন্দ যাই হোক আর ঘটুক তার সব কিছুকে দলীয় স্বার্থে বিরোধিতা করে৷ এটাই গণতান্ত্রিক শাসনের মূল কথা৷
৭১ বছর হলো সেই দিল্লীর লাল কেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রীর লম্বা চওড়া বত্তৃতা আমরা শুনতে অভ্যস্ত ৷ তার সঙ্গে রাষ্ট্রপতির বাণী যেটা ক্যাবিনেটের তৈরী তাও আমরা কর্ণে শুণি৷ এটা নিয়ম মাফিক হয়েই চলেছে৷
ঠিক তেমনই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের বাণী শুণি ও সংবাদপত্রে দেখি৷
প্রথম প্রথম যখন বয়সটা কম ছিল, তখন মনে মনে কিছু আশার আলো যেন মনে ভাসতো৷ যতো বয়স হতে লাগলো দেখলুম সবই অন্ধকার৷ দিক বিদিক সব শূন্য৷ মনে হলো কলেজ-এর জীবন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে৷ চাকুরীর কোন সন্ধান পাওয়া গেল না৷ কারণ পরিবারের কেউই কোথাও চাকরী করেননি৷ চাষীর বাড়ির সন্তান আমরা শেষে কাজ একটা জুটলো সেটি শিক্ষকতা৷ মাহিনার কথা না বলাই ভালো৷ যাইহোক এভাবেই জীবন কাটলো৷ আজ প্রায় ২২/২৩ বছর অবসর প্রাপ্ত গ্রামের স্কুলের শিক্ষক৷
পরিবর্ত্তন অনেক হয়েছে৷ দেশ টুকরো টুকরো হয়ে লক্ষ লক্ষ নিরীহ হতভাগ্য মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ও হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্য দিয়ে দেশ নাকি স্বাধীন হয়েছে৷ আমরা নাকি স্বাধীন নাগরিক হয়েছি৷ আর্থিক ও সামাজিক উন্নতিটা সাধারণের কতোটুকু হয়েছে? সেটা হলো গণ্ডায় গণ্ডায় রাজনৈতিক দল এর জন্ম হয়েছে৷ আজ সেই সবের কিছু বিশ্লেষণ করা দরকার বলে মনে করি৷ এখন তো সর্বত্র নেতা ও নেত্রীর আর ক্যাডারের ছড়াছড়ি৷ প্রত্যেক দলই দেশের ভালো করতে চায় কিন্তু সকলে মিলে মিশে নয়৷ সেই ভালো কাজটা এক এক দল সবটাই শুধু একলা করবে৷ কেন্দ্র ও রাজ্যের সব আসন সেই দল একাই অধিকার করে দেশের শাসক হওয়া চাই ৷ তাই দেখা গেল দিল্লির গদীতে কংগ্রেস বসেই জওহরলাল নেহেরু তাঁর পরিবার তন্ত্রকে কায়েম করতে পুরাতন বয়স্ক কংগ্রেসীদের অবসর নিতে নির্দেশ দিলেন৷ তাই হলো৷ তিনি ইউপি প্রদেশের আয়তন বাড়িয়ে প্রায় ৮০ জন এমপির আসন ঠিক করে বসলেন৷ ধীরে ধীরে কংগ্রেস ভাঙ্গতে লাগলো৷ দক্ষিণ ভারত উত্তর ভারতের হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার জবাব দিল৷ আঞ্চলিক দল গড়ে উঠতে লাগলো৷ গান্ধীজীকে ছবি করে রাখা হলো৷ জওহরের নরম পন্থীরাই দেশ শাসন করে চল্লো৷ জওহরলাল ইন্দিরাকে তৈরী করলেন নেত্রী হিসাবে৷ তিনি কংগ্রেস দল ভেঙ্গে রাজ্যে রাজ্যে নব কংগ্রেস গড়ে তুললেন৷ সেই নব কংগ্রেস আজ ইন্দিরা কংগ্রেস৷ এই কংগ্রেস ভেঙ্গে রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেস হয়েছে৷
এ রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস৷ এটি সেই কংগ্রেস থেকেই বেরিয়ে আসা দল৷ জওহরলালের যে নীতি তা হলো তীব্র নেতাজী বিরোধিতা ৷ এই কংগ্রেস প্রথম থেকে কমিউনিষ্ট দলের সঙ্গে একটা সম্পর্ক রেখেই গদী রক্ষা করে চলেছে৷ এই দল এই বাংলার বামফ্রন্টের বাইরে থেকে সমর্থন নিয়ে টিকে ছিল ৷ আজ কংগ্রেস জনগণের আস্থা হারিয়েছে অধিকাংশ রাজ্যে৷ বর্ত্তমানে কেন্দ্রে বিজেপি হাজির হয়েছে৷ জনতা দল ভেঙ্গে বিজেপি হয়েছে ৷ ২০১৯ শে লোকসভা নির্বাচন ৷ অটল বিহারী বাজপেয়ী যেভাবে তাঁর সৃষ্ট বিজেপিকে দিল্লীর তক্তে বসিয়ে ২৪ দলের সমর্থন নিয়ে শাসন চালিয়েছেন, একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে মোদি সেটা চালাতে পারছেন বলে মনে হয় না৷ যে কটি কাজ তিনি করেছেন সবকটিতে তিনি দেশের গরীব মানুষের চরম আর্থিক, সামাজিক, মানসিক ক্লেশের কারণ হয়েছেন৷ বর্তমানে টাকার মান আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একেবারে নেমে গেছে৷ চরম বেকার সমস্যায় কাতর৷ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চরম মূল্যবৃদ্ধিতে আর খনিজ তেলের অত্যধিক দাম বৃদ্ধিতে দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে! মোদি সরকার এরই মধ্যে দেশের শ্রীবৃদ্ধি দেখছেন৷ হ্যাঁ, শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে, মুষ্টিমেয় ধনী গোষ্ঠীর যারা বর্তমান সরকারের বশংবদ৷ তাঁদের সৃষ্ট এন.আর.সি সারা দেশে বিশেষ করে উত্তরপূর্ব ভারতের বাঙালীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে৷ অসমে ৪০ লক্ষ বাঙালী এর শিকার৷ এ কেমন গণতন্ত্র? সকলেই অখণ্ড ভারতবর্ষের মাটির সন্তান ৷ এটা এরা ভোলে কী করে ? ভারতবর্ষে জাত-পাত-সাম্প্রদায়িক সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়েই তো এরা আজ দিল্লির ক্ষমতা দখল করেছেন!
সারা ভারত আজ আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকেও চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে৷ এই বাঙলায় তো দেখা যাচ্ছে সবক্ষেত্রেই ধবস নেমেছে৷ প্রায় সব সেতুতে ফাটল, অধিকাংশ হাসপাতালের নানা সমস্যা, বাজারগুলিতে আগুন৷ প্রশাসন তো অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থ! শিক্ষা ব্যবস্থাটা পঙ্গু ৷ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার করুণ দশা৷ আইন শৃঙ্খলা নড়বড়ে৷ খুন জখম লেগেই আছে! গণতন্ত্রের কী দুরবস্থা!
আজ বাংলার কল্যাণে সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে৷ শারদীয়া উৎসবে রাজ্যের কথা ভেবে উৎসবের বহর অর্থাৎ অহেতুক খরচ কমিয়ে রাজ্যের আর্থিক সংকটের কথা ভেবে সেই টাকার কিছু অংশ উন্নয়নের কাজে লাগাবার কথা ভাবাটা প্রয়োজন বলে মনে হয়৷ সেটাই হবে প্রকৃত মানবতার পূজা৷ যে অরাজকতা চারিদিকে চলছে সে ব্যাপারে উৎসবের কটা দিন নাগরিকদের খুবই সচেতন থাকা জরুরী যাতে অকারণে রাহাজানি না হয়৷ কটা পুলিশের কাজ নয় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করা৷ গণতন্ত্র-এর অর্থ এই নয় যে যার যা ইচ্ছা সে তাই করবে৷ রাজনৈতিক দলগুলিকে অবশ্যই সংযত হতে হবে সব ব্যাপারে ৷ বিরোধিতা করাটা সব ব্যাপারেই ঠিক বলে মনে হয় না৷
বর্তমানে এদেশে বাঙালী জনগোষ্ঠী রাজ্যে রাজ্যে বিশেষকরে অসমে চরম সংকটের এর মধ্যে আছে৷ সেখানে এন.আর.সি কালাকানুনের চাপে তারা প্রায় অর্ধমৃত হয়ে আছে৷ এমনকি আন্দামানে বাঙালীদের ওপর অত্যাচারও চলছে বিদেশী বলে৷ সেখানকার বাঙালী এম.পি.এর উপর হেনস্তা হয়েছে ৷ তাঁর গাড়ি ভাংচুর করেছে সন্ত্রাসবাদীরা৷ তাই বাঙালীদের খুবই সচেতন হতে হবে৷ কারণ একথা ভুললে চলবে না৷ যে সকলেই সেই অখণ্ড ভারতবর্ষে মাটির সন্তানদেরই বংশধর৷
- Log in to post comments