ব্যাঙ্কে জনসাধারণের জমা করা টাকা পুঁজিপতিরা ঋণ নেয়, ব্যবসা করে, কলকারখানা খোলে, সেই থেকে তারা কোটি কোটি টাকা মুনাফা লুন্ঠন করে৷ তারপর নানান অজুহাত দেখিয়ে ব্যাঙ্কের ঋণ আর তারা শোধ করে না৷ এর ফলে ব্যাঙ্ক ধীরে ধীরে লাটে ওঠে৷ তাই দীর্ঘদিন থেকে জনসাধারণকে দেয় তাদের জমা টাকার ওপর সুদের হার ক্রমান্বয়ে কমিয়ে দিয়ে আসছে৷ আর ওই টাকা লুঠ করছে ধড়িবাজ পুঁজিপতিরা৷
সম্প্রতি যা নিয়ে সারা দেশে হৈ চৈ হচ্ছে--- পঞ্জাব ন্যাশানাল ব্যাঙ্ক থেকে এইভাবেই ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়েছে দুই জালিয়াত পুঁজিপতি৷ মজার ব্যাপার হোল--- ওরা একজন ভাগ্নে আর একজন তার মামা৷ ভাগ্নে নীরব মোদী বা মামা মেহুল চোক্সী৷ অনেক বছর ধরে এইভাবে ব্যাঙ্কের টাকা হাতানোর কারবার চলছে৷ কংগ্রেস যখন কেন্দ্রের ক্ষমতায় ছিল, তখন থেকেই৷ নরেন্দ্র মোদীর আমলে তো পুকুর চুরি চলেছে৷ সরকারের হুঁশ নেই৷ এইভাবে কারণ খুঁজতে গিয়ে ক্রমশঃ দেখা যাচ্ছে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরুচ্ছে৷ এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত এইসব ব্যাঙ্কেরই শীর্ষ স্থানীয় অফিসাররা৷ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও যে এর সঙ্গে জড়িত--- তারও অনেক আভাস পাওয়া যাচ্ছে৷ আসলে পুঁজিপতিরা অঢেল টাকা দিয়ে আমলাদেরও প্রশাসক গোষ্ঠীকে হাত করে আর তাদের সাহায্যেই কাজ হাসিল করে৷ এটাই তাদের রণকৌশল৷
নীরব মোদীদের ১১ হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক প্রতারণা মামলায় একে একে পঞ্জাব ন্যাশন্যাল ব্যাঙ্কের শীর্ষস্থানীয় অফিসার গোকুলনাথ শেট্টি, মনোজ খারাট সহ বেশ কিছু অফিসারকে এই প্রতারণা কাণ্ডে যোগসাজসের জন্যে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ ধৃতদের মধ্যে আছে নীরবের সংস্থা ‘ফায়ারষ্টার ইনটারন্যাশন্যালে’র প্রেসিডেন্ট বিপুল আম্বানী৷ বিপুল আম্বানী শিল্পপতি মুকেশ আম্বানী ও অনিল আম্বানীর খুড়তুত ভাই৷
বোঝাই যাচ্ছে, এই ঋণ খেলাপির রোগ সহ নানান্ অর্থ কেলেঙ্কারীর সঙ্গে জড়িত দু-একজন পুঁজিপতি নয়, এর বিস্তার অনেক ব্যাপক৷ আর ঋণ জালিয়াতির ঘটনা এটা নূতন নয়, এটা পুঁজিপতিগোষ্ঠীর বহু পুরোনো কৌশল৷
আসলে গোটা দেশের অর্থনীতিকে এমনকি দেশের শাসকগোষ্ঠীকেও পুঁজিপতিরা তাদের পকেটে পুরে নিচ্ছে৷ তারপর গোটা দেশকে নিয়ে পুতুল নাচ নাচাচ্ছে৷ ‘নাচায় পুতুল যথা দক্ষ বাজিকরে’৷
পুঁজিপতিরা তাদের বিপুল অর্থবলের সাহায্যে পেশীবল ও প্রশাসনকে অস্ত্র ও ঢাল দুই হিসেবেই ব্যবহার করে’ দেশের অর্থনীতি থেকে শুরু করে সংসৃকতি , পত্র-পত্রিকা, দূরদর্শন, শিক্ষা প্রভৃতি সবকিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করছে৷ লক্ষ্য কেবল মুনাফার পাহাড় রচনা৷
অধিক থেকে অধিকতর মুনাফা অর্জনের নেশায় উন্মত্ত পুঁজিপতিরা সমাজের সমস্ত মূল্যবোধ, নৈতিক, মানবিক, আধ্যাত্মিক তো বটেই --- সর্বক্ষেত্রে চরম অবক্ষয় ঘটিয়ে চলেছে৷ দেশজুড়ে আজ যে ভোগবাদের উন্মত্ততা এটা মূলতঃ পুঁজিপতিদের সর্র্বত্মক শোষণেরই ফল৷ আজ যা সারা দেশে মহামারীরূপে দেখা দিয়েছে৷ সারাদেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য---নুন,তেল , সাবান চাল ,ডাল, মশলা, পোষাক-পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক গুডস্ বা আধুনিক বিলাস দ্রব্য পর্যন্ত সবকিছুর মার্কেট দখল করে’ পুঁজিপতিরা তাদের দেশজোড়া শোষণের টানা জাল বিছিয়েছে৷ এই পরিবেশে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কটুকু বিষিয়ে গেছে৷ আজ তাই দেশজুড়ে চলছে ব্যাপক দুর্নীতি, শোষণ ও ব্যাভিচার৷
আজ সমাজকে বাঁচাতে গেলে এই সব জালিয়াতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেই হবে৷
এতটা অবশ্য সবাই বলছেন৷ প্রাউট-প্রবক্তা শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার কিন্তু বলছেন, এই পুঁজিবাদী যুগেরই (বৈশ্যযুগ) অবসান ঘটাতে হবে৷ আর এটাও আজ সবাই হাড়ে হাড়ে বুঝে গেছেন, এই পুঁজিবাদের অবসান জড়বাদ ভিত্তিক মাকর্সবাদের পথে অসম্ভব৷ কারণ, মার্কসবাদ তো নিজেই রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ, তার সঙ্গে ব্যষ্টি স্বাধীনতা হরণ৷ রাষ্ট্রীয়পুঁজিবা+একানায়কত= মার্ক্স- বাদ৷
এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হ’ল প্রাউটের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত নব্যমানবতাবাদ ভিত্তিক প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র তথা অর্থনৈতিক গণতন্ত্র৷ নিপীড়িত মানবতার এটাই প্রকৃতপক্ষে একমাত্র মুক্তির পথ৷
- Log in to post comments